#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ২২
২ দিন পর,,,,,,,,,
আজ ওরা সবাই ভার্সিটি যাবে।গাজিপুর থেকে ফিরেছে আজ দুদিন।এই দুদিন ভালোই কেটেছে।
তো ওরা যথা সময়ে ভার্সিটি এসে পৌছালো। ছেলেরা ভার্সিটির বটগাছ তলায় আড্ডা দিচ্ছে।আর মেয়েরা করিডোরে দারিয়ে কথা বলছে।
ওরা যখন আড্ডায় ব্যস্ত তখন হঠাৎ কোথা থেকে জুই এসে মেরাজকে জরিয়ে ধরে ন্যাকা গলায় বলতে লাগলো,,
—–” ওহ বেইব আই মিস্ড ইউ সো মাচ।তুমি এসেছো দুদিন আর আমার সাথে দেখা করলে না।”
সবাই বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।মনির বিরবির করে বলে,,
—–” বন্ধুর প্রেমিকা বলে কিছু বলিনা।একটা মেয়ে কিভাবে এতোটা বেসরমা নির্লজ্জ হতে পারে যে ভার্সিটি’র এতোগুলো মানুষের সামনে জরিয়ে ধরে।এই মেরাইজ্জারে আমার আছরাইতে মন চাচ্ছে।সালা প্রেম করবি তো ভালো দেখে কর।এমন বেহায়া মেয়ের সাথেই প্রেম করা লাগলো।”
আফরান হাসছে মনিরের কথা শুনে।
মনির বিরক্ত হয়ে তাকায় আফরানের দিকে।
এদিকে মিম রাগে চোখমুখ লাল করে রাকিয়ে আছে মেরাজের দিকে।
ওর চোখে পানি চলে আসছে।চোখের পানি লুকাতে না পেরে মিম ওইখান থেকে দৌড়ে চলে গেলো।
আলিফা বলে উঠে,
—–” কিরে এর আবার কি হলো?”
নূর কিছুটা চিন্তিত ভঙিতে বললো,
—–” আই থিংক মিম মেরাজ ভাইয়াকে ভালোবাসে!”
সাদু ভ্রু-কুচকে তাকালো।বলছে কি এরা মিম মেরাজ ভাইয়াকে ভালোবাসে।
আলিশা বলে,
—–” কিন্তু মেরাজ ভাইয়া তো ওই মেয়েটা কি জানি নাম হ্যা জুই ওকে লাভ করে তাহলে এখন কি হবে?”
—–” বাট আই থিংক এই জুই না ফুই এই মেয়ে মেরাজ ভাইয়াকে ভালোবাসে না।শুধু শুধু মেরাজ ভাইয়াকে ওর পিছে পিছে ঘুরাচ্ছে।” সাদু’র কথা সবাই ওর দিকে তাকায়।
নূর ঠোঁট উল্টে বললো,
—–” তাহলে তো আমাদের কেই কিছু একটা করতে হবে।মেরাজ ভাইয়ার লাইফটাকে আমরা কিছুতেই নষ্ট হতে দিবো না।আর যেখানে আমাদের বেস্টফ্রেন্ড উনাকে ভালোবাসে।”
আলিফা কিছু একটা ভেবে বললো,
—–” কিন্তু আমরা একা পারবো না।আমাদের উনাদের ও হেল্প নেওয়া লাগবে!”
সাদু দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
—–” উনিটা কে রে আলু?”
—–” ইয়ে মানে মানে ওইযে..” আলিফা লজ্জা পেয়ে আমতা আমতা করছে।
নূর এইবার আলিফাকে খোচা মেরে বলে,,
—–” কি হলো বল?”
আলিফা একটা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বলে,
—–” উনিটা হলো তোদের জিজু আরিফ।”
সবাই ‘ওহহোওওও’ বলে চিল্লিয়ে উঠলো।এতে আলিফা আরো লজ্জা পেয়ে বলে,,
—–” ধ্যত তোরাও না।”
আলিশা বলে,
—–” এইবার মিম এর কাছে যাওয়া উচিত আমাদের।”
সবাই ‘ হ্যা ‘ বলে যেই যেতে নিবে দেখে মিম নিজেই আসছে এইদিকে।ওরা ভালোভাবে খেয়াল করে দেখে।মিমের চেহারা ফুলে আছে চোখগুলো লাল হয়ে আছে।
সাদু ওর কাছে গিয়ে গালে হাত দিয়ে বললো,
—–” কিরে ঠিক আছিস তুই?”
—–” হ্যা হ্যা আমি ঠিক আছি আমার আবার কি হবে?” মিম জোরপূর্বক হেসে বললো।
আলিশা মৃদ্যু হেসে হাত ভাজ করে বললো,
—–” আমাদের বলদ পেয়েছিস? আমরা বুজিনা? আমাদের থেকে লুকাতে চাস?”
নূর বললো,,
—–” যতোই চাস আমাদের থেকে পারবি না লুকাতে আমরা সব বুঝি সো এইসব রং ডং করা বাদ দে।”
মিম ওদের কথা শুনে এইবার আর নিজেকে আটকাতে পারলো না।ঝাপিয়ে পড়লো সাদু’র বুকে।সাদু’ও পরম আদরে ওকে জরিয়ে ধরলো সাথে বাকিরাও ধরলো।মিম কাদঁতে কাদঁতে বললো,
—–” আমি জানিনা ওর সাথে ওই জুইকে দেখলে মনে হয় আমার কলিজাটায় কেউ ছুরি দিয়ে আঘাত করছে।এতো কষ্ট কেন হয় বলতো?আমার দম বন্ধ হয়ে আসে যখন উনাকে ওই মেয়ের সাথে দেখি।নিশ্বাস নিতে পারি না।কেন এমন লাগে?”
সাদু হালকা হেসে বললো,
—–” ভালোবাসিস বলেই এমন লাগে।”
মিম সাদুকে ছেরে অবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে।
—–” ভালোবাসি মানে?”
—–” মানে তুই মেরাজ ভাইয়াকে ভালোবাসিস তাই এতো কষ্ট লাগে।”
—–” ইম্পসিবল এটা কিভাবে সম্ভব উনার সাথে আমি সারাদিন ঝগরা করি। ”
—–” এটাই ভালোবাসা! উনাকে অন্যকারো সাথে দেখলে তোর কষ্ট লাগে।উনার সাথে কথা বললে তোর ভালো লাগে।হোক ঝগরা তবুও ভালো লাগে কথা বলতে।নিজেকে কেমন জানি পূর্ণ লাগে।আর উনি যদি কাছে না থাকে তাহলে নিজেকে কেমন যেন ফাকা লাগে।মনে হয় আমি বড্ড একা।” সাদু মনিরের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো।
মিম নিজের চোখ মুছে সাদু’দিকে তাকিয়ে বললো,
—–” তুই জানিস কিভাবে যে এইলক্ষন গুলোই ভালোবাসার?”
সাদু’র টনক পড়লো আসলেই তো সে জানে কিভাবে?কিন্তু তবুও উপরের কথাগুলো পুরাটাই ওর সাথে হয় মনির ওর কাছে না থাকলে ওর অনেক খারাপ লাগে।তবে কেন?
—–” কারন তুই ভাইকে ভালোবাসিস ভাবিজি।” নূরের কথায় সাদু ঘাবরে তাকায় ওর দিকে।আচ্ছা তবে কি সত্যি ও মনিরকে ভালোবাসে।
হ্যা ও ভালোবাসে মনিরকে।এইযে ওর সারাক্ষন মনিরকে নিয়ে ভাবতে ভালোলাগে।কথা বলতে ভালোলাগে।মনিরের দেওয়া স্বর্গীয় স্পর্শগুলো ওর রন্দ্রে রন্দ্রে সুখের শীতল হাওয়া বয়ে যায়।প্রতিটি ক্ষনে শুধু উনাকেই দেখতে মন চায়।এটাইতো ভালোবাসা।ভাবতেই সাদু’র গালগুলো লজ্জায় ফুলে লাল হয়ে যায়।
ওকে এইভাবে লজ্জা পেতে দেখে নূর সহ বাকিরা হেসে দেয়।
ওদের হাসি শুনে সাদু হাটা শুরু করে মাঠ বরাবর দিয়ে।
এদিকে ওরা পিছন থেকে চিল্লাচ্ছে।
—–” সাদু দারা! উফফ কথাশুনে যা।”
কে শুনে কার কথা সাদু যেতেই আছে।আচমকা একটা ইটের সাথে পা বেজে পরে যেতে নিতেই। সাদু আতকে উঠে দেয় একটা চিল্লান।
—–” আয়ায়ায়ায়া মাগো। বাচাও কেউ আমি মরে গেলে আমার জামাইয়ের কি হবে গো।আমার কোমড় ভাংলে আমি তো শেষ।”
—–” এইযে মিস চোখ খুলে দেখেন আপনি পড়েন নি।আর এইসব কি উল্টাপাল্টা বলছেন পরে গেলে কি কেউ মরে যায়।”
কারো গলার আওয়াঁজ পেয়ে সাদু চোখ পিটপিট করে তাকায়।দেখে একটা ছেলে ওর কোমড় জরিয়ে ধরে রেখেছে।সাদু তরিঘরি করে নিজেকে সামলে নিয়ে সোজা হয়ে দারালো। ভদ্রতার খাতিরে বললো,
—–” থ্যাংক্স! ”
ছেলেটি কেমন অদ্ভূতভাবে সাদু’র দিকে তাকানো।সাদু’র কথায় মৃদ্যু হেসে বললো,
—–” মেন্সন নট এতো সুন্দরি মেয়েকে পড়ে যাওয়া থেকে বাচাতে পেরে আমি ধন্য।”
মিমরাও এতোক্ষনে এসে পরেছে।সাদু’কে এইভাবে পরে যেতে দেখে ওরাও ভয় পেয়ে গেছে।
মনির আফরানদের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত ছিলো।সাদুকে এইভাবে মাঠের দিকে আসতে দেখে সেও এগিয়ে আসছিলো।আর যেই সাদু পরে যেতে নিচ্ছিলো।ও ‘ উম্মি ‘ বলে চিৎকার দিয়ে সাদুকে ধরার আগেই ওই ছেলেটা ওকে ধরে ফেললো।মনির তড়িঘড়ি করে দৌড়ে সাদু’র কাছে গেলো।আফরান রাও মনিরের পিছে পিছে দৌড়।ওর বোন ব্যাথা পেয়েছে কি-না ভাবতেই আফরান আর নিবির ছুট লাগালো।মনির গিয়েই একটানে সাদু’কে নিজের সাথে জরিয়ে নিলো।এদিকে সবাই অবাক হয়ে পরক্ষনে মুখ টিপে হাসছে।শুধু একজন বাদে ওই ছেলেটা মনির আর সাদু’র দিকে তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে আছে।
—–” তুমি ঠিক আছো তো কোথাও লাগেনি তো?” মনির অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
সাদু’র খুব শান্তি লাগছিলো মনিরের বুকে থাকতে।কিন্তু তাকিয়ে দেখে সবাই হাসছে।আর নূরতো রিতিমতো বিভিন্ন ইশারা ইংগিত দিচ্ছে।তাই ও না চাইতেও নিজেকে ছারিয়ে নিলো মনিরের বাহু ডোর থেকে।
আফরান আর নিবির ও জিজ্ঞেস করলো।
—–” পিকু বোন আমার তুই ঠিক আছিস তো?ব্যাথা পেলে বল আমরা বকা দিবো না প্রমিস।”
আফরান আর নিবির রিতিমতো সাদু’কে জ্যারা শুরু করে দিয়েছে।ওরা বলছে সাদু ব্যাথা পেয়েছে কিন্তু ওদের ভয়ে বলছে না। যদি ওরা বকা দেয়।
মনির ওদের সরিয়ে বললো,
—–” দেখি সর আমার ওর পা দেখতে দে।”
বলেই মনির হাটুগেরে সাদু’র সামনে বসে পরলো।যেই না সাদু’র পায়ে হাত দিতে যাবে।সাদু এক লাফে সরে গেলো।
—–” কি করছেন কি আপনি? পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন?”
মনির ভ্রুক্ষেপহীনভাবে বললো,
—–” তো পায়ে হাত দিলে কি?”
—–” নাহ নাহ! পায়ে হাত দিবেন না।আমি একদম ঠিক আছি কিছু হয়নি আমার।”
মনির সাদু’র কথা শুনে দাতে দাত চেপে দিলো এক রাম ধমক,
—–” ইডিয়ট! এইসব থার্ড ক্লাস চিন্তা ভাবনা করে থাকলে তুলে এক আছার দেবো।হাটা চলার ঠিক নেই।ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে হাটে।এখন আবার পরে গিয়েও দেখতে দেয় না ব্যাথা পেয়েছে কি-না।চুপ-চাপ আমার সামনে এসে দারাও।”
মনিরের ধমকে সাদু কাদো চেহারা নিয়ে তাকায় ওর ভাইদের দিকে।আফরান আর নিবির কাধ উচু করে ঠোঁট উল্টালো।মানে তারা কিছুই করতে পারবে না।
সাদু আর কি করবে মনিরের সামনে গিয়ে দারালো।তারপর মনির চেক করে দেখে না ঠিক আছে কোথাহ ব্যাথা পায় নি।
—–” যদি আর কোনদিন দেখি এইভাবে আকাশ পাতাল না দেখে এলোমেলোভাবে হাটতে তাহলে পা ভেংগে ঘরে বসিয়ে রাখবো একেবারে।”
মনিরের কথায় সাদু মিনমিনিয়ে বললো,
—–” হ্যা তারপর পা ভেংগে আপনার কোলে চরে সব জায়গায় যাবো।”
—–” তোমাকে কোলে নিয়ে হাটতে আমার অসুবিধে নেই।সো ফাউল চিন্তা বাদ দেও।”
মনির উঠে দারালো তার পর ওই ছেলেটার কাছে গিয়ে।হাসি মুখে হাত বারিয়ে দিয়ে বললো,
—–” থ্যাঙ্কিউ ওকে পরা থেকে বাচানোর জন্য।”
ছেলেটি মনির আর সাদু’র দিকে ক্ষুব্দ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।মনিরের কথায় স্বাভাবিক ভাবে দারালো।তারপর,,,,,
চলবে,,,,,,,,,
ভূলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কি থেকে কি লিখেছি জানিনা।মেডিসিন এর কারনে আমি কিছুই করতে পারি না।মাথা ঘুরায় শুধু।তবুও চেষ্টা করি লিখতে।এই পার্ট ৩ দিন লাগিয়ে লিখেছি।জানি ভালো হয়নি। প্লিজ কেউ মন খারাপ করবেননা।
আর হ্যা প্লিজ দোয়া করুন আমার জন্য।