নয়নতারা ৪৫

0
481

#নয়নতারা

পর্ব ৪৫

Suvhan Årag (ছদ্মনাম)

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা”।সবাই পাশে থাকবেন।

আশা করছি ইনশাহআল্লাহ নয়নতারা আবেদিতার কাছে কিছুই নয়।আপনাদের আরো বেশি ভালো লাগবে।

;;;;;

“তারা

রাতের স্বপ্ন গুলো খুব বেশি গভীর হয়,

একদম গভীরতায় ছেয়ে যায়।

এই গভীরতা তখন পূর্ণতা পায়

যখন শুদ্ধ মনটাও বড্ড বেহায়া হয়ে যায়,

এক টুকরো ভালোবাসার আসায়।”

—-কি রে তারা দাড়িয়ে আছিস কেন?ভেতরে যাবি না?

সৈকতের কথাতে ধ্যান ভাঙলো তারার।নাফিজের কথা গুলো তার মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে।একদম জটলা বেধে বসে আছে।তাই তো বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ও ভেতরে না ঢুকে বাইরে দাঁড়িয়ে সে কল্পনাতে মগ্ন।

—-তারা কি হলো তোর?

—-কিছু না।ভেতরে চলো।

ঘরের ভেতর ঢুকেই আরেক দফা শক খেলো তারা।হুট করে এতো মানুষ বাড়ি তে।তারা সোফার দিকে তাকিয়ে দেখে সৈকতের মা বাবা বসে আছে।তার অপর পাশে তারার বড় খালা আর ছোট খালাও আছে।কিন্তু হঠাৎ করে বাড়িতে এ তো লোকজন কেন?তারা উওর খুঁজে পাচ্ছে না।যতদূর মনে পড়ে আজ তার জন্মদিন ও না।তার জন্মদিনেই মূলত পুরো বাড়িটা গমগম করে।আব্রাহাম সাহেব খুব বড় করে উদযাপন করেন।তাহলে?

—-মামোনি দাড়িয়ে আছিস কেন?চল চল দেখ কারা এসেছে।

আব্রাহাম সাহেব এসে তারাকে নিয়ে সোফার দিকে গেলেন।

—-এই যে আমাদের আসল লোক চলে এসেছে।মামোনি সালাম দেও।

—-হুম।আসসালামু আলাইকুম।

তারা সবাই কে সালাম দিয়ে টুকটাক কথা বললো।

—-বাপি শোনো।

—-কি হয়েছে মা?

—-এক টু এদিকে আসোতো।

—-কেন?

—-আসো না।

—-আচ্ছা চলো।

তারা আব্রাহাম সাহেবকে নিয়ে রান্নাঘরে গেল।

—-কি হয়েছে মা?

—-বাপি বাড়িতে হঠাৎ এতো লোকজন কেন?কি হয়েছে?কালকে তো বলোনি এতো লোকজন আসবে।

—-আসলে মা আজ,,,,,।

আব্রাহাম সাহেবের কথা শেষ হওয়ার আগেই মাহমুদা বেগমের ডাক পড়লো।

বাইরে থেকে চেচিয়ে মাহমুদা বেগম বললেন,

—-তারা বাবা, কোথায় তুমি?এদিকে আসো তো।বাজার চলে এসেছে।

—-আসছি।

আব্রাহাম সাহেব মাহমুদা বেগমকে উওর দিয়ে তারার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।

—-আরে বাপি,,।

—-মা পরে আসছি।তোর মা ডাকছে।

—-যাহ।কি হয়েছে কিছুই বুঝলাম না।

তারা মুড অফ করে নিজের ঘরে চলে গেল।কি একটা অদ্ভুত ব্যাপার।হুট করে বাড়িতে এতো লোকজন।অথচ তারা কিছুই জানেনা।আজ সকাল অবধি ও বাড়ি ফাঁকা ছিল।মরনিং ওয়াল্ক থেকে আসার পর তারা যেন নিজের বাড়ি চিনতেই পারছে না।একদম বাড়ি ভর্তি মানুষ গমগম করছে।

;;;;;

—-এই তোর সাহস কম না তুই আবার আমার মিষ্টির ছবিতে হাত দিয়েছিস!

তানিয়ার হাত থেকে অ্যালবাম টা কেড়ে নিয়ে তানিয়াকে ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিলেন ফজলে শেখ।ব্যথায় কেদে উঠলো তানিয়া।

—-কি এমন করেছি আমি?ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল।

—-ও তাই বুঝি।তোর আবার ওকে দেখতেও ইচ্ছে করে!শয়তান ডাইনী একটা।তোর মতো মেয়ে মানুষ যেন কারোর পেটে না জন্মায়।মেয়ে হয়ে কিভাবে পেরেছিলি ঐ টুকু বাচ্চার ওপর দা দিয়ে আক্রমণ করতে।

—-কতোবার বলেছি আমার ভুল হয়ে গেছে।আপনি বলুন এই ভুলের জন্য কি আমি কম সাজা পাচ্ছি?

—-রাখ তোর ভুল।এটাকে ভুল বলেনা।পাপ করেছিস পাপ।আর কিসের ক্ষমা চাইছিস?তোর ক্ষমাতে কি আমার মিষ্টি ফিরে আসবে?

—-আপনিই বা কেন এতো কথা বলছেন?আপনি তো ওর আপন বাবা ছিলেন। আমি না হয় সৎ মা ছিলাম।আপনি কি করেছেন ওর সাথে?

—-যা করেছি সব তোর পাল্লায় পড়ে।

—-ও এখন তো সব আমার দোষ।আপনি কি ছোট বাচ্চা ছিলেন?সব সময় কেন একা আমাকে দোষ দেন আপনি?

তানিয়ার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন ফজলে শেখ।অ্যালবাম টা হাতে নিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লেন।

আসলেই তানিয়ার কথা ঠিক।তানিয়াও ভুল কিছু বলেনি।আফসোস আর আফসোস আছে শুধু আজ ফজলে শেখের কাছে।কিন্তু এই আফসোস যদি আরো কয়েকটা বছর আগে করতেন তিনি তাহলে হয়তো এভাবে পিতা হয়ে ও পিতৃহীন হয়ে থাকতে হতো না তাকে।

;;;;;

তারা হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় এসে বসেছে।এর মধ্যে হুড়মুড় করে ঘরে গাসু ঢুকে পড়লো।

—-আফাআআ।

গাসুর ডাক শুনে কেঁপে উঠলো তারা। বিরক্তি নিয়ে গাসুর দিকে তাকালো।

—-এগুলো কি গাসু?এভাবে কেউ ডাকে?তুমি জানো আমি কতো ভয় পেয়ে গেছি।

—-নো ডরাই আফা।নো ডরাই।কাহিনী একখানা ঘইটা গেছে গা।

—-কি হয়েছে?

—-আফা বাড়ির সামনে কেবল দুই ভ্যান ভইরা বাজার আসছে।মেজর সাব আনছে।এততো এততো মাংস,মাছ,আরো যেন কি কি।

—-সত্যি!

—-হ্যাঁ।

—-ও বাড়িতে মেহমান আছে এজন্য হয়তো।

—-না আফা তাই না।

—-তাহলে?

—-আইজ নাকি কি অনুষ্ঠান আছে।

—-অনুষ্ঠান!কিসের?

—-হ।এইরাম কি যেন শুনলাম ।সাকি ভাই কইতেছিল।আরো কইছে আপনেরে যেন না বলতাম।এর লিগে এতো এতো বাজার।আরো লোক আইতো।আরো জানেন কি হইছে?

—-কি হয়েছে?

—-মেজর সাব ইউনিট থেইকা দুইডা রানধুনি আনছে।হেরা নাকি আইজ রাধবো।

—-আমি তো বুঝতে পারছি না কিসের অনুষ্ঠান?

—-আই ও বুঝতেছি না।যাক আফা আপনে বহেন।আই যাইতাম।ম্যাডাম নিচে থাকতে কইছে।

গাসু আবার দৌড় দিয়ে বেরিয়ে গেল।তারা গালে হাত দিয়ে বসে আছে।গভীর চিন্তায় পড়ে গেল সে।কিসের অনুষ্ঠান হুট করে।সে কিছুই বুঝতে পারছে না।

ক্রিং,,,ক্রিং,,,ক্রিং,,,

ফোনের শব্দ হলো।তারা নিজের ধ্যান থেকে বেরিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করল।

—-আসসালামু আলাইকুম,বলুন ক্যাপ্টেন।

—-ওয়ালাইকুম আসসালাম।বাহ তুমি দেখছি কল হতেই রিসিভ করলে।আমার অপেক্ষা তে ছিলে নাকি?

—-না।আর আমার ফোনে কল লিস্ট ঘাটলে শুধু আপনার নাম্বার ই বের হবে।

—-কেন?

—-আপনি ছাড়া আর কারোর সাথে কথা হয় না যে এই জন্য।

—-ওহ।

—-হুম।

—-কি করছো?

—-কিছু না।এমনি বসে আছি।

—-কিছুই করছো না?

—-না।

—-আচ্ছা এখন রেস্ট নেও।এক টু পরে আস্তে আস্তে করবে।আজ অনেক কাজ তোমার।

—-কিসের কাজ?

—-আছে আছে।

—-আচ্ছা ক্যাপ্টেন শুনুন।

—-হুম।

—-আজ না অনেক মেহমান এসেছে আমাদের বাড়ি তে।

—-আসবেই তো।

—-কেন?আর আপনি এমন করে বলছেন আপনি যেন সব জানেন।

—-জানি জানি।শুধু তুমি কিছু জানো না।

—-আজব!সবাই সব জানে।আর আমি বসে আছি কেন?আমাকে কেউ কিছু বলছে না।আপনি বলুন না।

—-আচ্ছা বলছি।

—-হুম বলুন।

—-আই লাভ ইউ।

তারা নাফিজের কথা শুনে বোকা বনে গেল।এদিকে ফোনের এপারে নাফিজ জোরে জোরে হাসছে।

—-কি হলো তারা পাখি?চুপ করে গেলে কেন?

—-কথাই বলব না আপনার সাথে আমি।

—-আরে আরে শোনো না।

—-শুনব না।

—-শোনো।ভালোর জন্যই বলছি।এখন না শুনলে পরে নিজেই ফোন দেবে আমাকে।আমি কিন্তু একদম কল রিসিভ করব না।আগেই বলে দিলাম।

—-কি?

—-হাতে যেন আজ আমার নাম টা দেখি।গোটা গোটা অক্ষরে।

—-মানে?

—-আর ফোনে ক্যাপ্টেন নাম না দিয়ে হাসবেন্ড লিখে দিও।

নাফিজের শেষ কথাটা শুনে তারা বড়সড় শক খেল।

—-মানে!

—-আচ্ছা শোনো।তোমার কি ফুল পছন্দ?

—-আগে আমার উওর দিন।

—-না আগে আমারটা দেও।

—-না আমার টা।

—-ঠিকাছে আর কথা বলব না কখনো।

—-যাক বাবা।আমি আবার কি করলাম!

—-উওর দেও।

—-নয়নতারা।

—-এখন তো এতো পাব না।আরো ফুল লাগবে।

—-এতো ফুল কেন লাগবে?কি করবেন?

—-আছে আছে।এবার বলো দ্বিতীয় পছন্দ কোন ফুল?

—-সাদা গোলাপ।

—-আচ্ছা ঠিকাছে।রাখছি।

—-আরে আরে আমার উওর দিন।

—-আল্লাহ হাফেজ।

নাফিজ ফোন কেটে দিল।তারা আরেক দফা বোকা বনে বসে আছে।

তারার মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেল।সবাই কি আজ তাকে বোকা বানানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে না কি?এটাই বুঝতে পারছে না তারা।

;;;;;

বিকেলবেলা।

নিচ তলায় সবাই হৈ হুল্লোড় করছে।তারা নিজের ঘরে বসে আছে।সে ও নিচে গিয়েছিল।কিন্ত কেউ যেন তারাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।তারপর আবার তারার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে নাফিজের অন্য মেসেজ।

দুপুর বেলা নাফিজ মেসেজ দিয়েছিল তারাকে।

তাতে লেখা ছিল-“তারা পাখি,আজ সকাল তো তোমার যেভাবে কাটলো সেটাকে মনে রেখো।কাল সকালটা যেভাবে কাটতে চলেছে সেটাকেও কাটানোর প্রস্তুতি নেও।গতকাল রাতটা যেভাবে কাটিয়েছো আজকের রাতটা আরো অন্য ভাবে কাটানোর জন্য প্রস্তুত হও।তোমার জন্য তোমার প্রেমিক পুরুষ তোমার ক্যাপ্টেন বিশেষ কিছু ঘটাতে চলেছে।তুমি কল্পনা ও করতে পারবে না।”

এরপর তারা কয়েকবার নাফিজকে কল করেছিল।কিন্তু নাফিজ রিসিভ করে নি।

তারার ভাবনার মধ্যে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো মাহমুদা বেগম।সাথে একটা মেয়ে।

—-ম্যাডাম ওনাকে সাজাতে হবে?

—-হ্যাঁ ও আমার মেয়ে তারা।তুমি একটু বাইরে অপেক্ষা করো।আমি ওর সাথে কথা বলে নেই।

—-ঠিকাছে।

মেয়েটা বাইরে চলে গেলে মাহমুদা বেগম তারার পাশে গিয়ে বসলেন।

—-মা আমাকে সাজাবে কেন?

—-আজ যে আমার ছোট্ট মা টার বিয়ে।এই দিনটা না সাজলে হয়।

—-কিহ!

তারা যেন আকাশ থেকে পড়লো মাহমুদা বেগমের কথা শুনে।এতো বড় শক খাবে সে কল্পনা ও করতে পারেনি।

—-কি বলছো মা?কিসের বিয়ে?কার সাথে বিয়ে?

—-কেন?নাফিজের সাথে।

—-কিহ!কি বলছো কি মা।হুট করে।আমাকে তো কিছু বলোনি তোমরা।

—-আসলে মা কাল রাতেই নাফিজের মা বাবার সাথে কথা বলে এটা ঠিক করেছিলাম।ও পরিবার সম্পর্কে সৈকত সব খোঁজ খবর নিয়েছে।ওদের গ্রামের বাড়ি তোর ফুফুর বাসা থেকে দু গ্রাম পরে।ও নিজে খোঁজ নিয়েছে।দেখ মা তুমি আর নাফিজ যেভাবে কথা বলছো ফোনে টুকটাক যা চলাফেরা করছো এগুলো হারাম মা।এজন্য হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তোমার বাপি।আজ তোমাদের কাবিন করে রাখা হবে।তোমার পরীক্ষা শেষ হলে অনুষ্ঠান করব আমরা।এতে না তোমার সমস্যা হবে না নাফিজের।এজন্য আমাদের কাছের আত্মীয় স্বজন দের যা বলেছি।আর সবাই ও চলে এসেছে।

—-তুমি আমাকে এখন কেন বললে?কাল কেন জানাও নি?

—-তুমি একটুও টেনশন করতে পারো না মা।উল্টে অসুস্থ হয়ে পড়ো।এজন্য জানাই নি।

—-ক্যাপ্টেন জানে সব?

—-হ্যাঁ।ও তো সব জানে।ও আরো বললো তোমাকে সন্ধ্যার আগে জানাতে।

—-উনি বললো আর তুমি শুনলে!

—-রাগ করে না মা।তোমার তো এমনিতেই আপত্তি ছিল না।হয়তো হুট করে হচ্ছে সব।মাথা ঠান্ডা করো।সব ঠিক হয়ে যাবে।

—-হুম।

—-ঐ মেয়েটা তোমাকে মেহেদী পরিয়ে দেবে।সাজিয়ে দেবে।সন্ধ্যার পর পরই নাফিজরা চলে আসবে।রেডি হয়ে নেও।ঠিকাছে?

—-হুম।

মাহমুদা বেগম তারার মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলেন।

তারা তো রেগে লাল টমেটো হয়ে যাচ্ছে।

—-কততোবড় ফাজিল এই লোকটা।এই ছিল তোর মনে?কি করল?এইভাবে কেউ বিয়ে করে।আমি নিশ্চিত নিজেই লাফিয়েছে।না হলে বাপি কখনো এতো তাড়াহুড়ো করে কিছু করতো না।

;;;;;

মেহেদী রাঙা হাত দুটো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে তারা।পানি দিয়ে ধোয়ার পর হাত দুটো চকচক করছে।দু হাতের তালুতে ছোট্ট করে লেখা নাফিজ।নাফিজের নাম দেখে তারা আরো লজ্জায় রঙিন হয়ে গেল।

নিচ থেকে আওয়াজ হলো,”বর এসেছে।”

তারার বুকটা যেন কেঁপে উঠলো।

—-আফা বর আইছে গা।মুই দেইখা আসি ফুলচোরডা রে কিরাম লাগতেছে।

গাসু আর দেরী না করে দৌড় দিয়ে বেরিয়ে গেল।বিউটিশিয়ান মেয়েটা তারার চুল ঠিক করছে।তারা যেন কাঁপছে রীতিমতো।একঁটু আগেও তার এতো ভয় করছিল না।কিন্তু এখন?

বিয়ে মানে শুধু কবুল বলা নয়।এই কবুল বলেই একটা মেয়ে তার সমস্ত কিছু তুলে দেয় একজন অচেনা মানুষের কাছে।সারা জীবনের জন্য।পরিচিত হলেও এই সময় টা প্রত্যেক মেয়ের কাছেই চেনা মানুষ টা ও অচেনা হয়ে যায়।আর অচেনা হলে তো কথাই নেই।

একটু পরেই নাফিজের এক কাজিন একটা ল্যাগেজ নিয়ে ভেতরে ঢুকলো।

—-বাহ!মাশাল্লাহ।আমার ভাই তো দেখছি একটা ডানাকাটা পরী খুঁজে এনেছে।

মেয়েটি তারার পাশে গিয়ে বসলো।তারা একটু অবাক চোখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে।অচেনা হলে যা হয় আর কি।

—-ভাবি আমি তোমার ননদ।আমার নাম মিশকা।

—-ওহ।

—-নেও।তোমার বর লাল বেনারসি ও কিনেছে।লাল গাউন ও কিনেছে।

—-লাল গাউন!

—-হ্যাঁ।লাল বেনারসি কিনেছে এজন্য যাতে নাকি তোমার আফসোস না হয় তোমার বিয়েতে লাল বেনারসি পাও নি।আর গাউন কিনেছে তুমি পড়বে বলে।তোমার হাঁটতে অসুবিধা হবে এজন্য শাড়ি পড়াতে একদম নিষেধ করেছে।

তারা যেন আরো অবাক হলো মিশকার কথাতে।এতোটা ভেবেছে নাফিজ তাকে নিয়ে।নাফিজের প্রতি তারার ভালো লাগাটা যেন আরেক ধাপ বেড়ে গেল।

;;;;;

বর বেশে নিচে অপেক্ষা করছে নাফিজ।পাশে নাফিজের দু জন কলিগ আর একজন কাজিন বসা।সবাই হাসাহাসি করছে।ঠাট্টা করছে।তারার কাজিনরাও বেশ মজা করছে।কিন্ত নাফিজের সেদিকে নজর নেই।তার নজর বারবার সিঁড়ির দিকে।এতো মানুষের মাঝে নাফিজ অপেক্ষা করছে কখন তার প্রেয়সীকে সে বধূ বেশে দেখবে।

—-কি গো দুলাভাই তারার জন্য অপেক্ষা করছো বুঝি?

—-ইয়ে মানে সৈকত।

—-উহুম।আমি কিন্তু তারার বড়।সম্পর্কে বড়।ভাই বলো।

—-আচ্ছা সৈকত ভাইয়া।

—-আরে না সৈকত বলো।আমি তো মজা করছিলাম।ঐ যে চলে এসেছে।

সৈকত বেশ চেঁচিয়ে কথাটা বললো।সৈকতের সাথে সাথে সবাই সিঁড়ির দিকে তাকালো।নাফিজ তো হা হয়ে তাকিয়ে আছে।

লাল রঙের জর্জেট এর গাউন,নিচে গোল্ডেন রঙের মোটা ভারী লেস বসানো।গাউন টা অনেক কাজ করা।তারার মুখেও একদম হালকা মেকাপ।গায়ে হালকা গহনা।মাথায় গোল্ডেন রঙের হিজাব পড়া।আর লাল ওড়না টা সুন্দর করে মাথায় দেওয়া।মিশকা গাসুর সাথে তারা ধীরে ধীরে নামছে।সবাই হা হয়ে তারার দিকে তাকিয়ে আছে।

অবশেষে নাফিজের অপেক্ষার অবসান হলো।তারা কে নাফিজের পাশে বসানো হলো।নাফিজ এর চোখ শুধু তারার দিকে।একটু পর পর মাথা ঘুরিয়ে তারাকে দেখছে।এদিকে মানুষ যে এটা নিয়ে হাসাহাসি করছে সেটা নিয়ে তার যেন চিন্তাই নেই।তারা বেশ লজ্জা পাচ্ছে নাফিজের এমন আচরণে।আরো সবার কথা তো আছেই।

কবুল বলার সময় টা নাফিজ চোখ বুজে শুধু কল্পনা করেছিল।একটা ছোট্ট পরী তার নয়নতারা বাগানে খেলছিল।হুট করে সে যেন হোচট খেয়ে পড়ে গেল।আর তার ওঠার নাম নেই।একটু পর যেন সেখানে আরেকটা পরী উঠে দাড়ালো।কিন্তু এ যে সেই ছোট্ট পরীটা নয়।নাফিজের তারা পাখি।

;;;;;

বিদায়ের সময় তারাকে জড়িয়ে ধরে খুব কেদেছেন আব্রাহাম সাহেব আর মাহমুদা বেগম।তারা দুদিন বাদেই আবার আসবে।তবুও যেন তারা সান্ত্বনা পাচ্ছে না।

অবশেষে গাড়ি এসে থামলো নাফিজের কোয়াটারের সামনে।তারার হাত ধরে নাফিজ তারাকে নামালো।লতিফা বরন করলো ছেলে বউকে।

—-এবার আমার ঘরে চলো মা।

—-কিন্ত চাচি ভাবি এই পা নিয়ে আরো এতো ভারী সাজ।তিন তলা অবধি উঠবে কিভাবে?

মিশকা র কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল তারার।খুব কষ্ট হচ্ছে তার।এর মধ্যে নাফিজ এমন একটা কাজ করলো সবাই তাতে অবাক হলেও লতিফা বেশ খুশি হয়েছেন।

তারার হাত থেকে ক্রাচ টা সরিয়ে লতিফার হাতে দিয়ে নাফিজ তারাকে কোলে তুলে নিল।

—-বিয়ে করেছি দুজনে সারাজীবন একসাথে পথ চলব বলে।একে অপরের পাশে থাকব বলে।তাই এই চলাটাও দুজনে একসাথে চলব।

নাফিজ আর কাউকে তোয়াক্কা না করে তারাকে কোলে নিয়ে সিঁড়ির দিকে গেল।নাফিজের এমন কথাতে তারার খুশিতে চোখ ছলছল করে উঠলো।তবে কি সত্যি সত্যি সে তাকে পেল যাকে সে চেয়েছে।

;;;;;

সাদা রঙের গোলাপ আর নয়নতারা ফুল মিক্স করে সাজানো পুরো ঘর।ভিতরে ছোটো ছোটো লাইটিং।অসম্ভব সুন্দর লাগছে পুরো ঘর টাকে।তারা বিছানার মাঝখানে বসে আছে।এদিক ওদিক চোখ বুলাচ্ছে।এজন্য হয় তো নাফিজ তাকে জিজ্ঞেস করেছিল প্রিয় ফুল নিয়ে।নাফিজের এখনো আসার নাম নেই।

হুট করে দরজা খোলার আওয়াজ হলো।তারা কিছুটা কেঁপে উঠলো।সাথে সাথে দরজার দিকে তাকালো।নাফিজ দরজাটা লক করে তারার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল।

বিছানার দিকে এগিয়ে গেল নাফিজ।

“অবশেষে অপেক্ষার অবসান হলো,

তোমাকে বলেছিলাম না

কোনো এক বিকেলে

আমরা দুজনে

হব কপোত-কপোতী ”

(আজ কে যে বলবে ছোটো পার্ট তাকে রাতে দশটা পিপড়া কামড়ে দেবে বলে দিলাম ?)

চলবে———-

তারপর যারা বলছিলেন সৈকত কে নিয়ে লেখিকা প্যাচ দেবে।এখন কি বলবেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here