#নয়নতারা
পর্ব ৪৪
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা”।সবাই পাশে থাকবেন।
আশা করছি ইনশাহআল্লাহ নয়নতারা আবেদিতার কাছে কিছুই নয়।আপনাদের আরো বেশি ভালো লাগবে।
;;;;;
মেসেজ টা পড়েই তারা যেন লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে।হুট করে নাফিজ কি শুরু করেছে টা কি!নাফিজের এরকম রূপ তারা মেনে নিতে পারছে না।চুপচাপ গম্ভীর স্বভাবের মানুষটি যখন হুট করে এরকম পরিবর্তন হয়ে যায় এমন তো মনে হওয়ার ই কথা।
তারার ভাবনার মাঝেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।তারা এক মুহূর্ত দেরী না করে ফোন হাতে নিল।”ক্যাপ্টেন “নাম দেখেই তারার মুখে আরো একবার হাসি ফুটলো।ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলো তারা।
—-হ্যালো।
—-কি?এতক্ষণ লাগে কেন ফোন ধরতে?
—-আজব!আপনি ফোন করার সাথেই তো রিসিভ করলাম আমি।
—-কল দেওয়ার আগে রিসিভ করা যায় না?
—-আপনি কল না দিলে আমি কিভাবে রিসিভ করব শুনি?
—-কিভাবে আবার!উল্টা করে।
—-এই আপনি কি বলছেন বলুন তো?
—-নিজে একটু কল করা যায় না।সব সময় আমি কল করি।এ তো নিষ্ঠুর কেন তুমি?হ্যাঁ।একটু কল করলে কি বেশি টাকা খরচ হয় নাকি?
নাফিজের কথার মধ্যে বেশ অভিমানী সুর।তারা এবার হেসেই দিল জোরে জোরে।
—-এই তুমি হাসছো কেন?
—-হাসার মতো কথাই তো আপনি বললেন।
—-তারা।
—-হুম।
—-শোনো।
—-বলুন।
—-ও তারা।
—-আরে কি হয়েছে?
—-শোনো না।
—-কি?
—-এই।
—-বলুন।
—-এইইই।
—-এই আপনি বলবেন নাকি ফোন কাটবো আমি!
—-আই লাভ ইউ।
তারা থ মেরে দাড়িয়ে আছে নাফিজের কথা শুনে।হুটহাট করে এমন কথা কেউ বলে?ফোনের দিকে তাকাতেই তারা দেখে নাফিজ কল কেটে দিয়েছে।তারার প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে নাফিজের কথা মনে করে।
;;;;;
জানালা ধরে দাড়িয়ে বাইরে উঁকি দিচ্ছে তারা।চারিদিক পরিষ্কার হয়ে গেছে।ঘড়ির কাটাও সাতটা বেজে ছুইছুই।কিন্তু নাফিজের কোনো খোঁজ নেই।
—-কি হলো?আজ কেন আসেননি উনি?তবে কি উনি এখনো রেগে আছেন আমার উপর?না না তাহলে কাল কথা বললো কেন?উনি কি ব্যস্ত!না।আজ তো শুক্রবার।তাহলে?
তারার মনটাই খারাপ হয়ে গেল।
—-ঐ নাফিজের বউ কি করিস?
সৈকতের কথা শুনে পেছনে ফিরলো তারা।
—-এসব কি ভাইয়া?কি সব বলছো হ্যাঁ?
—-কি বলেছি?যা সত্যি তাই বলেছি।
—-এখনো বিয়ে হয়নি।
—-তো?তারা রে তারা তোর জন্য যে আজ কতো ভোল্টের শক অপেক্ষা করছে জানিস ও না তুই।
—-কেন?কি হয়েছে?
—-বাইরে হাঁটতে যাবি না?
—-আগে কি হয়েছে সেটা বলো?
—-আরে পরে শুনবি।চল একটু হাওয়া খেয়ে আসি।
—-না।
—-কেন?
—-যেতে ইচ্ছে করছে না।
—-তা করবে কেন?উনার পেয়ারি ক্যাপ্টেন তো আর নেই তাই না।
—-উহ!ভাইয়া।
—-চল বলছি।নাইলে কিন্তু তোর বিয়ে খাব না বলে দিলাম।
—-খেও না।
—-তুই যাবি?
—-চল চল যাচ্ছি।
তারা সৈকতের সাথে বের হতে যাবে তার আগেই গাসুর আগমন।
—-ও সকিনার বাপ।
গাসুর কথা শুনে বিস্ফারিত চোখে তাকালো সৈকত।আর তারা তো দাড়িয়ে দাঁড়িয়েই যেন হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।
—-এই তুমি আমাকে কি বললে?
—-সাকি ভাই।
—-গাসু তুমি কিন্তু প্রচন্ড ফাজিল।
—-আই জানি।আই ভালা মানুষ।
—-ফাজিল মানে ভালো তোমাকে কে বললো?
—-ম্যাডাম কইছে।ফাজিল মানে ভালা মানুষ, বজ্জাত মানে আস্ত ভালা মানুষ,বদমায়েশ মানে ফলমালিন মুক্ত ভালা মানুষ ।আই জানি।
—-কিহ!এগুলো তোমাকে চাচিমা বলেছে?
—-হ এক্কেরে।
সৈকত তারার দিকে ইশারা করলো।
—-এই তারা তোর মা পাগল হয়েছে জানিস?
—-না ভাইয়া।এই পাগলকে থামানোর জন্য এসব শিখিয়েছে।
—-তাই বল।
—-সাকি ভাই।
—-কি?
—-কন আমি ভালা মানুষ না?
—-হ্যাঁ তুমিই তো ভালো মানুষ।
—-আই নো আই এক্সিডেন্ট গার্ল ।
—-এক্সিডেন্ট!
—-হ তারা আফা।
—-এক্সিডেন্ট মানে দুর্ঘটনা।তুমি কি বলতে চাইছো গাসু?
—-উরি।আফা ঐ তো ঐ যে।খাতায় ভালা করলে গুডুর পাশে আরেকখান যেন কি লেহে স্যার!
—-ওরে।ওটা এক্সিলেন্ট।
—-ঐ তো।হ ঐখান।
—-নেও থামো।আমরা হাঁটতে যাচ্ছি।তুমি যাবে?
—-হ সাকি ভাই।আই ও যাইতাম মরনিং টক করতি।
—-গাসু ওটা টক না ওয়াল্ক।
—-ঐ হলি হলো একখান।আইচ্ছা আফা একখানা কতা কন দেহি।
—-কি?
—-ঐ কানাকুমড়ো ফুলচোরডারে আপনে কেন বিয়া করতেছেন?দুনিয়াতে এতো চুন্নি সাকচুন্নি থাকতে ঐ গাছবান্দরডা আপনের গলাতে কেন ঝুলতেছে?
গাসুর কথা শুনে তারা সৈকত দুজনেই হেসে উঠলো।
—-গাসু এসব কি কথা?
—-না আফা মুই মানতি পারলাম না।
—-কেন গাসু?নাফিজ তোমার কি ক্ষতি করছে?
—-হে মোরে কইছে আফার বাগান থেইকা সব থেইকা সুন্দর ফুলডারে ডাকাতি করব।তাইলে বুঝেন কততোবড় ঢেপাকল ঐ গাছবান্দর ডা।
—-গাসু ঢেপা কল কি?
—-অপরাধী। বুঝেন সাকি ভাই।
—-হ খুব বুঝলাম।তা ঐ গাছবান্দরডা সেই কাজ ই করছে।তিনি সত্যি সত্যি তোমাদের বাগানের সুন্দর ফুলটা ডাকাতি করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
—-হায় হায় কি কন?আমি আইজকে ই থানায় মামলা করুম ঐ গাছবান্দরডার নামে।তারা আফা আপনে কিন্ত সাক্ষী দিবেন?
—-তারা!তারা দেবে সাক্ষী?
গাসুর কথা শুনে সৈকত হা হয়ে গাসুর দিকে তাকিয়ে আছে।তারা মিটমিট করে হাসছে।গাসু সৈকতের কথায় মাথা নাড়িয়ে সায় দিল।
—-গাসু তুমি দেখছি চোরের ঘরে চুরি করতে যাচ্ছো?
—-কেমনে?
—-আহ গাসু।ভাইয়া তুমি যাবে?নাহলে এর কথা জীবনে শেষ হবে না।
—-আচ্ছা চল।গাসু তুমিও চলো।
;;;;;
মাহমুদা বেগম ফটো অ্যালবাম খুলে বসে আছেন।একটার পর একটা ছবি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছেন।
—-কি হলো?সকাল থেকে এগুলো নিয়ে বসেছো কেন?
—-অতীতের স্মৃতির পাতা উল্টাচ্ছিলাম।তারা কতো বড় হয়ে গেল না?
—-হুম।আমার তারা পাখিটা বেশি তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেল।
—-আমার ভয় হচ্ছে ওকে নিয়ে।
—-কেন?
—-ও সুখি হবে তো?
—-মাহমুদা!এতো কেন চিন্তা করো তুমি?তুমিই না দুদিন আগে বলতে আমার না থাকলে ওকে কে দেখবে?
—-বলতাম তো।কিন্তু ভয় হয় যে।
—-ভয় কি আমার কম হয় মাহমুদা?আমার মামোনির জন্য আমার ও খুব চিন্তা হয়।নাফিজ কে যতোটা দেখেছি খুব ভালো ছেলে।দেখো ও ভালো রাখবে তারা কে।
—-তাই যেন হয়।
মাহমুদা বেগমের ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।আব্রাহাম সাহেব মাহমুদা বেগমের কাঁধে হাত রেখে চিন্তা করতে নিষেধ করলেন।
;;;;;
—-আরে সৈকত ভাইয়া দাঁড়াও না।গাসু।
তারা ক্রাচ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে হাপাচ্ছে।সৈকত আর গাসু খুব দ্রুত পা চালিয়ে সামনে চলে গেছে।তারা তো আর ওদের মতো সুস্থ স্বাভাবিক না।তারা আর পেরে উঠেনি।
—- যাহ!কেউ দাঁড়ালো না।এরা কেন বোঝে না আমি এতো দ্রুত যেতে পারি না।কেউ অপেক্ষা করল না আমার জন্য।
তারার খুব কষ্ট হচ্ছে।চোখের কোনে পানি চলেই এসেছে।আসলেই তো যেই মানুষটা একা ঠিকভাবে চলতে পারেনা তার কষ্ট কতোটা।
—-তোমার অপেক্ষা শুধু আমার জন্য,
ওরা তো যাবেই,
যেতে দেও,
পিছে দেখো,
কেউ তো আছে হাত বাড়িয়ে,
মনের দরজা খুলে
তোমার অপেক্ষায়।
কন্ঠস্বর টা তারার কাছে খুব পরিচিত।তারা পেছনে ঘুরে দেখে নাফিজ মুচকি হেসে তারার দিকে হাত বাড়িয়ে দাড়িয়ে আছে।
—-ক্যাপ্টেন!
—-হুম আমি।এজন্য ওরা আগে চলে গেছে।
—-আপনি কখন আসলেন?
—-অনেকক্ষণ আগে।হাতটা ধরো।
তারা একবার নাফিজের দিকে তাকাচ্ছে একবার নাফিজের হাতের দিকে।তারার বড্ড সংকোচ হচ্ছে নাফিজের হাত টা ধরতে।তারার পরিস্থিতি বুঝতে পেরে নাফিজ ই তারার হাত ধরলো।
—-চলো।
—-কোথায়?
—-আপাতত ঐ দিকে।পরে না হয় হারিয়ে যাব তোমাকে নিয়ে অনেক দূরে।
নাফিজের কথায় তারার মুখে লজ্জা মাখা হাসি ফুটে উঠলো।
—-তারা,এখন লজ্জা পেও না।তোমার জন্য রাতে এমন কিছূ অপেক্ষা করছে যেটা কল্পনাও করতে পারবে না।খুব বেশি ভয়ানক সেটা।
চলবে————
ইনশাহআল্লাহ আগামী পর্বে কিছু ঘটতো?