#নোনাজল
#পর্ব_৭ (শেষ)
#লেখনীতে_তাহমিনা_মিনা
আসিফ কোর্টে মামলা করেছে ছেলেকে পাওয়ার জন্য। কিন্তু এখন মামলা চালাতে পারছে না। বর্তমানে সে বেকার। নীহারিকার করা অভিযোগের কারণে তাকে অফিস থেকেবের করে দিয়েছে। অফিসের গাড়িটাও নিয়ে নিয়েছে। সে অনেক জায়গায় চাকরির জন্য আবেদন করেছে। পরীক্ষাও দিয়েছে কয়েকটি জায়গায়। কিন্তু, লাভ হয়নি। এখন বাবার পেনশন এর টাকার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। স্বর্নার সাথে তার ডিভোর্স হয়ে গেছে। এমনকি সুনয়নাও ছেলের সব কাগজপত্র ঠিক করে ডিভোর্স পেপার এ সাইন করে দিয়েছে৷ আসিফ উকিলের টাকা পর্যন্ত দিতে পারছে না। তাই উকিল সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সে আর তার কেস লড়বে না। গত শুনানিতে আসিফ যায়নি কোর্টে। আর দুধের শিশুকে কেউ মায়ের থেকে আলাদাও করবে না। তারউপর আবার আসিফের চাকরি নেই। স্বর্নাও চলে গেছে। বাচ্চাটাকে দেখাশোনা করার জন্য কেউ নেই। পর্যাপ্ত টাকা-পয়সাও নেই। মামলা এখনও ঝুলে আছে। আসিফ যারপরনাই চেষ্টা করছে ছেলেকে পেতে। কারণ, সে সব হারিয়েছে। এখন বাকি আছে তার ছেলে। সে যদি ছেলেকেও হারায়, তবে ভবিষ্যতে তার আপন বলতে কেউ থাকবে না।
“তুমি কেন ডিভোর্স দিতে গেলে স্বর্না? তুমি তো ওকে ভালোবাসতে তাইনা?” একটু রাগি স্বরেই যেন বললো সুনয়না। যে মেয়ের কারণে তার সংসার ভাঙলো, সেই মেয়েও সেই সংসার করতে না পারায় খুশি হওয়ার কথা ছিল সুনয়নার। কিন্তু সে পারছে না। সে চেয়েছিল আসিফ আর স্বর্না যেন ভালো থাকে।একসাথে থাকে। কিন্তু, সেটা হলো না।
” আমি কোনো প্রতারকের সাথে থাকতে চাইনি আপু৷ তাই ডিভোর্স দিয়েছি। আমি আমার বাকি জীবন একাই কাটাতে পারবো ইনশাআল্লাহ। ” বলেই ঘুমন্ত শিশুটার দিকে তাকিয়ে উঠে চলে যায় সে নিজের পরবর্তী আশ্রয়স্থলে। সে চাইলে তারও একটা সন্তান হতো। একটা সুন্দর সংসার হতো৷ কিন্তু, সেটা জীবনেও আর সম্ভব নয়। তবে,এইবার সে মা হবে। একটা নয়,দুটো নয়, একসাথে শতশত বাচ্চার। একটা অনাথাশ্রম এ চাকরি নিয়েছে সে৷ স্বল্প বেতন আর খাবারের বিনিময়ে। সেখানে তাদের পড়াবেও সে। নিজের করা ভুলে সে এই অবস্থায় পড়েছে। তবুও,জীবন নিয়ে আফসোস নেই তার। সে ভালোই আছে।
নীহারিকার বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ের আগেই সে ছেলেকে সব জানিয়েছিল। ছেলেটা ওর স্বীকারোক্তির জন্য ওকে কিছু বলেনি বরং খুশিই হয়েছে। সুনয়নার সাথে এখনও যোগাযোগ রেখেছে সে। কোর্ট এর হেয়ারিং এ সে প্রতিবারই উপস্থিত হয়।
এর মধ্যে আসিফের বাবা ভয়ানক এক কাজ করে ফেলেছে। সে তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছে। আসিফের মা হয়তো কল্পনাও করেনি এমনটা সে করতে পারবে৷ তার এতো বছরের সাজানো সংসার টা সে নিজের কর্মফলের কারণেই নষ্ট করলো। এখন সে তার বাবার বাড়িতেই থাকে৷ প্রতিদিনের কাজগুলো করার সময় মনে হয়, ঐ মানুষটা তাকে কতটা ভালোবাসতো৷ তার সেই পুরোনো ভালোবাসার মানুষটা দেরিতে হলেও বিয়ে করেছে। সে এখন আদর্শ স্বামী এবং বাবা। তার জীবনে আসিফের মায়ের কোনো জায়গা নেই।
মামলা চলাকালীন একটা সময়ে আসিফ কেস তুলে নিয়েছে। সবাই হতবাক। আসিফ কাউকেই কোনো জবাব দেয়নি। পরবর্তীতে জানা গেছে, সে হাসপাতালে আছে। তার আয়ু খুব কম। স্বর্নার সাথে ডিভোর্স এর পর সে বেশ একা একা থাকতো৷ তাই মাঝে মাঝে শরীরের প্রয়োজনে নিষিদ্ধ পল্লীতে যেত। সেইখান থেকে সে এইচ আই ভি ভাইরাসের শিকার ৷ না পরিবার, না সমাজ, কাউকেই সে মুখ দেখাতে পারছে না এখন।
আর সুনয়না, সে নিজের জীবনকে আরো একটা সুযোগ দিয়েছে৷ নিজেরই স্কুলের এক সহকর্মী যার ওয়াইফ মেয়েকে জন্ম দেওয়ার সময় মারা গেছে, তাকে বিয়ে করেছে। মেয়েটাও মা পেয়েছে আর তার ছেলেটাও বাবার আদর, ভালোবাসা পাবে। তার স্বামী নামক মানুষটা তার প্রথম স্ত্রীকে অসম্ভব ভালোবাসে। কিন্তু এতে সুনয়নার খারাপ লাগে না। বরং তার মনে হয়, কেন আসিফ এমন হলো না? তাহলে আজ তাদের সবার জীবন এমন হতো না। কিন্তু পরমুহূর্তে যখন বাচ্চা মেয়েটা মা মা বলে জড়িয়ে ধরে, তখন মনে হয় আল্লাহই উত্তর পরিকল্পনাকারী।
পড়ন্ত বিকেলে পার্কের একপাশে বসে আছে স্বর্না। ইদানীং অনেক ভালো অনুভূতি হয় তার৷ তার অনেক বাচ্চা আছে। তাদেরকে সে ভালোবাসে। তবে,একটা ছেলে তাকে প্রায়ই বিয়ের প্রপোজাল দেয়।কিন্তু তার মনে থেকে যে বিশ্বাস নামক কথাটাই উঠে গেছে। কিভাবে বিশ্বাস করবে সে কাউকে? সে ভালোই আছে। ইদানীং মা ও ফোন ধরে৷ দুটো কি একটি ভালোমন্দ কথা বলে৷ বাবা,ভাই,বোনটার রাগও যে কমে এসেছে সে বুঝতে পারে৷ না হলে বোন কি আর তার নাম্বার ব্লকলিস্ট থেকে সরাতো?নাকি বাবা মাঝে মাঝে এই রাস্তা দিয়ে যেতো অযথাই? নাকি ভাইটা অকারণেই ফোন দিয়ে বলতো যে ভুলে ফোন চলে গেছে। হয়তো জড়তা কমেনি কিংবা আগামী দশবছরেও কমবে না, তবুও সে একটুকুতেই খুশি। কিন্তু, গভীররাতে কখনো নিজের ভালোবাসার মানুষের কথা মনে করে কিংবা কারও সংসার ভাঙার জন্য, কারো বাবাকে কেড়ে নেওয়ার জন্য আর নিজের ভাগ্যের জন্য কখন যে দু চোখ বেয়ে তার নিজেরই অগোচরে দু ফোটা #নোনাজল গড়িয়ে পড়ে, তার দায়ভার কে নেবে? সবাই তো নিজের জীবন নিয়ে এগিয়ে গেছে শুধু সেই এইভাবে আছে। তার সাথেই কেন এমন হলো? শুধুই নিজের কর্মফল?নাকি আরো অনেক কারণ, যার কারণে সবাই নিজেদের জীবনে এক তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিল?
সমাপ্তি
অসুস্থতা আর এডমিশন এর জন্য দেরিতে দিলাম।তার জন্য দুঃখিত।