#নীলাম্বরে_জোছনা
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৯
রতন সাহেবের ক্রোধ আরো বেড়ে গেলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে। আমার বাড়িতে পা ‘রাখার সাহস হলো কি করে!
‘আমি জানি আমি যা অন্যায় করেছি তার কোন ক্ষমা নেই!শুধু একবার আমার মেয়েটাকে দেখেই চলে যাবো। শুধু একবার।
‘রেবেবকা বেগম সামনে এসে, বলেন, আপনাদের পারিবারিক কোলহ। এর মধ্যে কিছু বলা হয়তো অযৌক্তিক তবুও বলছি, যদি কিছুটা সময় আমাকে দিতে পারেন! যদি মাথা ঠান্ডা করে একটু কথাটা শুনতেন।
‘রতন সাহেব বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলেন। রুনা বেগম কাজের মেয়েকে ডেকে আনিয়ে সব ক্লিন করতে বললেন।
‘আমাকে একটা সুযোগ দিন ভাবি! আমি শুধু মেয়েটাকে চোখের দেখা দেখেই চলে যাবো।
‘এই যে আঘাত এই যে ঝড় এসব কেন হচ্ছে জানেন! আপনার মেয়ের জন্য! সেই ছোট থেকে আমাদের ঘাড়ে বসে বসে খেয়েছে। আর ওই যে মানুষটা যে আপনার জন্ম দেয়া মেয়ের জন্য নিজের স্ত্রীর গায়ে হাত দিতে দ্বিতীয় বার ভাবলো না। যেই মানুষটা নিজের মেয়ের চেয়ে আপনার মেয়েকে ভালোবাসতো। সেই মানুষটার ভালোবাসা উপেক্ষা করে আপনার মেয়ে উড়াল দিয়েছে। মানুষ না ঠিকি বলে, বাবা, মা’ ছাড়া ছেলে মেয়েরা কখনো মানুষ হয়না! এরা হয় অমানুষ।
‘আদুরী কিছুক্ষণ আগেই বাসায় ঢুকেছে। নিজের মায়ের মুখের ভাষা শুনে বলে, মা’ তোমার কাছ থেকে এমন কথা আশাকরিনি। মানহা তোমাকে কি ডাকতো মনে আছে! মামিমা। নিজের মেয়ের নামে এসব বলছো! তাহলে বলতেই হয় তুমি কখনো ভালো মা হয়ে উঠতে পারোনি তাই তোমার মেয়ে ভালো হয়নি!
আর হ্যা আপনাকে চিনতে আমার ভুল না হলে! আপনি সেই মানুষটা, যে নিজের মেয়েকে অন্যের কাছে ফেলে রেখে চলে গেছেন! তা এতো বছর পর হঠাৎ করে মেয়ের প্রতি দরদ উতলে পরছে কেন?
‘আমি এক অসহায় বাবা, আমি সে অধিকারে আসিনি। সেই সাহস বা যোগ্যতা কোনটাই আমার নেই! শুধু একবার মেয়েটাকে চোখের দেখা দেখেই চলে যাবো।
রেবেকা বেগম আদুরীর হাত ধরে বলে,আমি জানিনা তুমি কে! তবে আমার মেয়ের মতই। দেখো মা’ মানুষ যখন ভুল করে তখন সেটাকে ভুল মনে হয় না! কিন্তু প্রকৃতি যখন সে ভুলের শাস্তি ফিরিয়ে দেয়, সুদে আসলে, তখন মানুষ তার নিজের ভুল বুঝতে পারে। তাই শেষবারের মত তার ভুলটাকে সাইডে রেখে একবার তার দৃষ্টি শীতল করার সুযোগ দাও মা। এই যে মানুষটা ওনার হৃদয় বাবা ডাক শোনার জন্য তৃষ্ণায় ছটফট করছে। এই তৃষ্ণা নিয়েই হয়তো এ পৃথিবী ত্যাগ করতে হবে মানুষটার।এরচেয়ে বড় শাস্তি আর কি আছে বলো! শুধু চোখের দেখা দেখতে দাও মেয়েটাকে।
‘নিশ্চয়ই আপনি ওনার দ্বিতীয় স্ত্রী!আন্টি সব ভুলের ক্ষমা হয়না।যদিও ক্ষমা করা না করা পুরোটা মানহার উপর ডিপেন্ড করে। তবে এই মূহুর্তে ওনার চক্ষু শীতল হবে না। মানহা আর বাংলাদেশে নেই!
‘নেই মানে! আমার মেয়েটা কোথায়?
‘যার কথা আজ এতে বছর পরে মনে পরলো, সেই মেয়েটা হয়তো সবার কাছ থেকে কষ্ট পেয়ে সব সময় আপনার কথাই মনে করতো! কিন্তু তার তো এখানে আপন বলতে কেউ নেই। তাই কানাডা চলে গেছে।
‘রেবেকা বেগম ঠান্ডা মাথায় বললে,মা তুমি আমাকে ওর পুরো ঠিকানা দাও। আমরা ভিসা প্রসেসিং করে ওর কাছে যাবো। টাকা তো আল্লাহ তায়ালা আমাদের কম দেননি!
আদুরী ঠিকানা লিখে দিলো।
‘রাহাত সাহেব আর রেবেকা বেগম চলে গেলেন।
তারা চলে যেতেই আদুরী নিজের মা’কে উদ্দেশ্য করে বলে, শুনেছি পিঠের চামড়া কখনো পেটে লাগে না। আজ চোখেও দেখে নিলাম। একটা কুকুর ও যদি লালন করতে! তবে এতো বছরে সেটার জন্য ও মায়া হয়ে যেতো। আর মানহা তো একটা জলজ্যান্ত মানুষ। কি না করেছে আমাদের জন্য। সব সময় তোমার মেয়ে হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে! তুমি মা’ হওয়ার যোগ্য না।
✨
আরহাম, মিফতাজকে বলছে, তুই আগে কেন এই কথাগুলো বললিনা!
‘যাদের কাছে নিজের ভালো খারাপ প্রমাণ করতে হয়! তারা কখনো কি আমার নিজের ছিলো! মানুষ শুধু মাত্র নিজের মানুষের কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে চায়!
‘আমার কথা না হয় বাদই দিলাম, কিন্তু। মানহাকে তো তুই সবটা বলতে পারতি।
‘ওই একটা মানুষ, যাকে আমি সবটা বলতে চেয়েছি। কিন্তু সে নিজের মত ভেবে নিয়র কখনো সেটা শুনতে চায়নি! আসলে আমরা যাদেরকে নিজের মানুষ, প্রিয় মানুষ ভাবি!তারা আমাদের ততটা নিজের মানুষ হয়তো কখনো ভাবেনি!
‘আমি তোর ভালোবাসা তোর কাছে ফিরিয়ে দেবো। একজন ভাই হিসেবে ওয়াদা করছি।
‘যে কথা রাখতে পারবে না সে কথা দিওনা৷ তুমি জানোনা মানহা কেমন!আমি আসলেই নির্দোষ এটা জানার পরে ও ধুঁকে ধুঁকে মরবে, কিন্তু তবুও আমার কাছে ফিরবে না। নিজের আত্মমর্যাদা ওকে কখনে সেটা করতে দেবে না।
‘ভালোবাসা পেয়ে হারনোর চেয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছে একটু বেহায়া হয়ে তাকে ধরে রাখতে হয়। সব আসবে যাবে, কিন্তু এমন একজন ভালোবাসার মানুষ কখনো আসবে না।
‘আমি সেটা জানি, পৃথিবীতে সব মানুষ থাকার পরেও হুটহাট ওই একটা মানুষের স্মৃতি আমাকে পোড়াবে। ওই একটা মানুষের শুন্যতা আমাকে গ্রাস করবে! তাকে ছাড়া বেঁচে থাকবো, কিন্তু রঙহীন। কোন পাগলামি থাকবে না। অনআবদার থাকবে না। বায়না থাকবে না।কিন্তু বেঁচে থাকবো।
‘এবার ভুল করেছে মানহা, তাই ওকেই আসতে হবে তোর কাছে। ফিরতে চাইলে ফেরা যায়! হাজার নিয়ম ভেঙে কাছে টেনে নেয়া যায়!
‘সেটা আমিও জানি। কিন্তু ও ফিরতে চাইবে না। ওর জেদ ওর ইগো ওকে ফিরতে দিবে না।
‘ভালোবাসা এমন এক ম্যাজিক, যেটা মানুষকে একদম বদলে দেয়ে।দেখবি ঠিক মানহা ফিরবে। তোর কাছেই ফিরবে।
‘জানো একবার আমি ওর সাথে রাগ করে ওকে সামন্য ইগনোর করে ছিলাম। তার বিপরীতে ও আমাকে আরো শতগুণ বেশি ইগনোর করেছে৷ আমি যখন বললাম, তুমি এমন কেন করলে, তখন ও বলেছিলো,তোমার সাথে ঝামেলা হলে বা কোন বিষয়ে কষ্ট পেলে, আমাকে জানাবে সরাসরি কথা বলবে। কিন্তু আমি যদি বুঝতে পারি, তুমি আমাকে সামান্য ইগনোর করছো। তাহলে আমি তোমাকে এমন ভাবে ইগনোর করবো, তোমার মনে হবে আমি হয়তো অন্য মানুষ। হয়তো সেই মানুষটাই না। যাকে তুমি চেনো!
‘মেয়েটা বড্ড কঠিন হৃদয়ের। তবে কঠিন হৃদয়ের মানুষের ভালোবাসা থাকে নিখুঁত। তুই চিন্তা করিস না। শালী সাহেবাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দ্বায়িত্ব আমার।
মিফতাজ কোন কথা না বলে, উঠে নিজের রুমে চলে আসলো।
✨
ভর সন্ধ্যা বেলা লেকের পারে বসে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে লেকের পানির দিকে। চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝড়ছে। নিজেই নিজেকে বলছে, যার প্রতি সামান্য বিশ্বাস রাখতে পারলাম না! তাকে কি সত্যি আমি ভালোবাসি?
লেকটা মানহার বাসার কাছেই। হারলি দৌড়ে এসে বলে, তোমার কল আসছে, সেই কখন থেকে। তুমি এই সন্ধ্যায় এখানে কি করো?
মানহা চোখের পানি না মুছেই মোবাইলটা হাতে নিলো। আদুরী,আরহাম, আর রুনা বেগমের অনেক গুলো মিসড কল।
কারটা আগে ব্যাক করবে! অতো শত না ভেবে সাথে সাথে রুনা বেগমের কল ব্যাক করলো৷ রিসিভ করতেই কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো। করুন স্বরে তিনি বলছেন, মা’রে তাড়াতাড়ি ফিরে আয়। তোর মামার অবস্থা একদম ভালো না শেষবারের মত মানুষটা তোকে দেখতে চাইছে,না করিস না মা। আমি টাকা পাঠাচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব ইমার্জেন্সি টিকেট কেটে চলে আয়।
#চলবে
আসসালামু আলাইকুম, গল্প কিন্তু শেষপ্রান্তে আর এক পর্ব হয়তো হবে! তাই গল্প নিয়ে কোন কনফিউশান থাকলে জানাবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰