#নিষ্প্রভ_প্রণয়
#পর্ব_০৫
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ
কলকাতার বিধাননগরে ইটপাথরের ছোট্ট দোতালা বাড়িটায় থাকত সেতুরা।দেওয়ালে সবুজ শেওলার আবরণ ছিল কোথাও কোথাও।বারান্দা জুড়ে ছোট ছোট ফুলের চারাগাছ।মা, ভাই, বউদি, সে, আর ভাইয়ের দুটো ছোট ছোট বাচ্চা।এতেই বাড়িটা বেশ রমরমে মনে হতো।ততোটা ধনী না হলেও বেশ আরাম আয়সেই কাঁটছিল তাদের দিন। কিন্তু হঠাৎই মায়ের অসুখ হলো।কি ভীষণ জ্বর!সে জ্বরে যেন শরীর পুড়ে যাওয়ার উপক্রম!মা সেই জ্বরেই শয্যাশায়ী হলো। সেতু তখন দিনরাত মায়ের বিছানার সামনে এসে তাকিয়ে থাকত। মাঝেমাঝেই মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুম দিত।তারপর কয়েকদিন পরই মা তাকে চিরকালের জন্য ছেড়ে চলে গেল।তাকে, ভাইকে, সবাইকে ছেড়ে চোখ বুঝল কতটা নির্মমভাবে।পৃথিবীর বুকে একদম অনাথ করে রেখে গেল তার দুজন সন্তানকে।
মা মারা যাওয়ার কয়েকমাস পরই সেতু কেমন যেন জমে গেল।তার মনোযোগ তখন ভাই আর বউদির সংসারে টিকে থাকায়।বউদি তখনও তাকে এখনকার মতোই কত কথা শুনাত।মেয়েমানুষ বলে কথা!ভাইয়ের সংসারে বোঝা করে রেখে লাভ কি?অতঃপর বয়স আঠারোর গন্ডিতে যেতেই শুরু হলো পাত্র দেখা।অবশেষে সুবিধামতো পেয়েও গেল পাত্র।ছেলের ভালো চাকরি, ধনী পরিবার!আর কি চাই?বিয়ে ঠিক হওয়ার একমাসের মধ্যেই বেশ ভালোভাবে বিয়েও হয়ে গেল।বউদি যেন তখন হাফ ছেড়ে বাঁচল।যাহোক, অবশেষে মেয়ে বিদায়তো হলো!
আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই বিয়ের পর সেতু সংসার জীবন শুরু করল।শ্বশুড়, শ্বাশুড়ি, স্বামী আর ননদ নিয়ে ভরা সংসার।মনের সম্পর্ক না গড়ে উঠলেও শুরু থেকেই আকাশের সাথে শরীরের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ঠিকই ।আকাশই তাকে রাত হলে কাছে টানত।বোধ হয় শরীরের নেশা মেটাতে।প্রথম দিকে সেতু কখনোই বুঝে উঠতে পারেনি আকাশ অন্য কোন মেয়েকে ভালোবাসে।আর পাঁচটা বাঙ্গালি স্বামী স্ত্রীর মতোই সংসার চলতে লাগল তাদের।তারপর হঠাৎ করেই মাস পেরুতে না পেরুতেই একদিন আকাশ জানাল সে অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসে।মেয়েটার নাম ইরা।কলেজ জীবন থেকেই তাদের প্রেমের সম্পর্ক!এই বিয়েটা নাকি আকাশ বাধ্য হয়েই করেছিল।সেতু সেদিন অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল।কি বলবে, কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না।সেদিনের পর অবশ্য আকাশ এই বিষয়ে দ্বিতীয়বার কখনো কিছু জানায়নি।মুখে কথাটা বললেও তার ব্যবহার, কামনা, শরীরের নেশা কোন কিছুরই পরিবর্তন ঘটল না।সেতু ভেবেছিল আকাশ বোধহয় শুধু তার অতীতটা জানাতেই কথাগুলো বলেছিল।মনের মধ্যে এই ভাবনা রেখেই আবারও আর পাঁচটা বাঙ্গালি সংসারের মতো সংসার করতে লাগল। ধীরে ধীরে সেতু ভেবেছিল আকাশের মনে তার জায়গা হয়েছে।আকাশ হয়তো তার সে কলেজজীবনের ভালোবাসা ভুলে সংসারে মনোযোগী হয়েছে।কিন্তু না!সেতুর ধারণাকে ভুল করে দিয়েই হঠাৎ একদিন আইনি নোটিশ আসল।নোটিশটা মূলত বিবাহ বিচ্ছেদের কারণবশতই আসা।নোটিশে তাদের আরো ছয়মাস একসাথে থাকতে বলা হয়েছে।সেতুর সেদিন কান্না পেল ভীষণ।কাউকে কিছু বলতে না পেরে টলমলে চোখে নোটিশটার দিকে তাকিয়ে ছিল কেবল। তবুও কিভাবে যেন দুই পরিবারেই জানাজানি হয়ে গেল আইনি নোটিশটার সম্বন্ধে।হন্তদন্ত হয়ে সেতুর দাদা ছুটে আসল সেদিন রাতেই।শ্বশুড়বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষসহ করল গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।আকাশকে অনেক বুঝিয়ে, শাসিয়ে বলা হলো এসব নিয়ে যেন আর কোনদিন কোন কথা না শুনতে হয়।সেতু ভেবেছিল আকাশ বুঝি সত্যিই বুঝেছে।সত্যিই বুঝি বিবাহ বিচ্ছেদের কথাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছে।আর যায় হোক, বাঙ্গালি মেয়েদের চিন্তাধারায় একবার বিয়ে আর একবার সংসার করারই মনোভাব থাকে। তাই তো সেতুও আঁকড়ে ধরে তার প্রথম সংসারটা টিকিয়ে রাখতে চেয়ছিল নিজের সবটা দিয়ে।সারাদিন শ্বশুড়, শ্বাশুড়ি,ননদ আর স্বামী সবার মনমতো কাজ করে খেটে যেত গাঁধার মতে।আবার কখনো বা স্বামীর শরীরের চাহিদা মিটিয়ে।যেভাবেই হোক, সংসারটা টিকিয়ে রাখাই যেন প্রধাণ উদ্দেশ্য।তখন আকাশের আচরণেও কেমন একটা নমনীয়তা এসেছিল।আবেগ ছিল।মাঝে মাঝে মনে হতো আকাশ বুঝি সত্যিই তাকে ভালোবাসে।সেই ছয়মাসে যে শুধু আকাশের দিক থেকে শরীরের সম্পর্কই ছিল তেমন নয়, মাঝে মাঝে আকাশ বেশ যত্নও দেখাত সেতুর প্রতি।কখনো কখনো অমায়িকভাবে তাকিয়ে থাকত প্রেমে পড়া দৃষ্টিতে। কখনো বা সেতুকে জড়িয়ে ধরে ক্লান্তির শ্বাস ফেলত।সেতুর তখন মনে হতো সত্যিই আকাশ তাকে ভালোবাসে।আকাশের চোখে কেমন জানি এক মায়া দেখেছিল সে তার জন্য।অথচ এতকিছুর পরও আইনি নোটিশ আসার সাড়ে পাঁচমাস পার হতেই আবারও নতুন কিছুর সম্মুখীন হলো সেতু।আকাশের প্রেমিকা ইরা এসে হাজির হলো শ্বশুড়বাড়িতে।আকাশ নাকি ছয়মাস পার হলে সেতুকে ডিভোর্স দিয়ে তাকে বিয়ে করবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আকাশ প্রতিশ্রুতি রাখছে না এমনটাই মনে হয়েছিল ইরার। তাই নাকি হাজির হলো আকাশের বাড়িতে।সেতু অবাক হয়নি সেইবার। আকাশের মুখের নত দৃষ্টি দেখেই বুঝেছিল আকাশের মনোভাব।মনোভাবটা এমন, ইরাকেও বিয়ে করতে চায় আবার তাকেও ছেড়ে দিতে চায় না।সেতু সেদিন তাচ্ছিল্য নিয়ে হেসেছিল।দুইজন মানুষের মাঝে নিজেকে তৃতীয় ব্যাক্তি হিসেবে আবিষ্কার করেই সরে আসার সিদ্ধান্ত নিল।ইরাও তখন হাত পা ধরে তাকে অনুরোধ করেছিল।শুধুমাত্র ডিভোর্সটা দেওয়ার জন্য।তাই তো তখন আর পেঁছন ফিরে চাইল না সেতু।আইনি নোটিশের ছয়মাস পার হতেই আদালাতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য নিজের মতামত হিসেবে ডিভোর্সেরই পক্ষ নিল সে।অতঃপর চুপচাপ সই-স্বাক্ষর করে সেই বিয়ে থেকে মুক্তি নিল।চিরকালের জন্য ছেড়ে আসল দশমাসের সেই শখের সংসার।এত করেও যার মনে তার জায়গা হয়নি তাকে কি করে সারাজীবন সে আগলে রাখবে?আধো আগলে রাখার সেই ক্ষমতাটুকু তার আছে?তার থেকে বরং যার যেখানে শান্তি মিলে তাকে সেখানেই ছেড়ে আসা উচিত।যেমন পাখিদের মুক্ত আকাশে, বন্যপ্রাণীদের বনে। আর পুরুষদের বোধহয় তাদের শখের প্রিয় নারীর কাছে।
বিবাহ বিচ্ছেদের পর অবশ্য শ্বশুড়বাড়িতে আর পা বাড়ায়নি সে।সোজা বাবার বাড়িতেই ফিরে এসেছিল।হাতে এত বড় ব্যাগের বোঝা দেখেই বউদি সন্দেহ ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল সেদিন।সেতু যেই ডিভোর্সের কথাটা জানাল ওমনিই ঝাঝালো গলায় চিৎকার করে বাড়ি মাথা করল।বিবাহিত মেয়ে শ্বশুড়বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে উঠে বসবে এই কেমন কথা!মুহুর্তেই পাড়ায় খবরটা ছড়িয়ে গেল।প্রতিবেশিদের কেউ কেউ এসে সমবেদনা জানাল, কেউ কেউ বা সান্ত্বনা দিল। কেউ আবার চোখের পানি ফেলে দুঃখ প্রকাশ করল।কেউ বা তাচ্ছিল্য করে উপহাস করে গেল।সেতু চুপচাপ শুনত, মাঝেমাঝে দুঃখ করত।কখনো বা চোখ বুঝে নীরবে কান্না করত।বাবার বাড়িতে একের পর এক অশ্রুজরা দিন কাঁটতে লাগল তার।তারপর হঠাৎ একদিন বিস্ময়কর কিছু জানতে পারল সে।জানতে পারল তার ভেতর বেড়ে উঠছে ছোট একটা প্রাণ।শুরু থেকে প্র্যাগনেন্সির কোন লক্ষন না প্রকাশ পেলেও পিরিয়ড় মিস হওয়ার কারণবশতই প্র্যাগনেন্সি টেস্ট করেছিল।টেস্টের রেজাল্টস্বরূপ এই নির্মম সত্যটা জেনেই হতভম্ব হয়ে বসে পড়ল সেদিন সে ।মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে তখন নতুন চিন্তার বসবাস। আড়াইমাসের ছোট্ট একটা প্রাণকে একটা পরিপূর্ণ প্রাণ দিতে পারবে কিনা সেই চিন্তা।ছোট্ট শরীরে সেই প্রাণসমেত পৃথিবীতে আনতে পারবে কিনা সেই চিন্তা।পরমুহুর্তেই মাথায় ঝেকে বসল অন্য চিন্তা।আকাশকে কি জানানো উচিত বিষয়টা?শত হোক সন্তানটা তো আকাশেরই।আকাশ আর তার মেলামেশার ফলস্বরূপই তো এই প্রাণের অস্তিত্ব!এত এত প্রশ্ন মাথায় ঝেকে বসতেই মস্তিষ্ক স্পষ্ট ভাবে জানান দিল সেইদিন,” না, আকাশকে জানানো উচিত নয়।আকাশের সাথে তার ডিভোর্স হয়েছে দেড় মাস আগে।সে যে এখন নতুন সংসারে ব্যাস্ত।”সেতুও মস্তিষ্কের সেই স্পষ্ট জবাবকে আদেশস্বরূপ মেনে নিল সেইদিন।তাইতো আকাশের দিকে দ্বিতীয়বার আর পা বাড়ায়নি। নিজের গর্ভে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠা প্রাণ সম্পর্কেও আজ পর্যন্ত জানায়নি তাকে।
.
সেতু নিজের ছোট ফুটফুটে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে আনমনেই অতীতের কথাগুলো ভাবছিল।চোখ জোড়া ভিজে উঠল সেইসব স্মৃতিরা মস্তিষ্কে ফুটে উঠতেই।টসটসে জল গড়িয়ে পড়ল নিজের গাল বেয়ে।ভেতর থেকে বেরিয়ে আসল এক তপ্ত দীর্ঘশ্বাস।সেতু চোখের জল মুঁছল।নিজের পাশে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত বাচ্চাটার দিকে তাকাতেই মুহুর্তে মুখে হাসি ফুটল।চিকন হাতের ছোট্ট ছোট্ট আঙ্গুলরা তার হাতেরই একটা আঙ্গুল স্পর্শ করে আছে।সেতু চোখ ভরে অপলক তাকিয়ে থাকল।।সেদিনের সে ছোট্ট প্রাণটা আজ কি সুন্দর ফুটফুটে এক বাচ্চা। কি কোমল, নরম তুলতুলে শরীর।যেন পুতুলের মতো।সেতু সেই পুতুলের ন্যায় শরীরটা হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখল।সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়ের ভেতর অদ্ভুত আনন্দের স্পন্দন টের পেল।মা হওয়ার আনন্দ!নিজের ঠোঁটজোড়া এগিয়ে ছোট্ট বাচ্চাটার কপাল ছুঁয়ে দিল।ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ তুমি আমার অনেক দিনের অপেক্ষার ফল পুচকে।তুমি কি ভীষণ মিষ্টি দেখতে হয়েছো।তুমি কি জানো তা?”
ছোট্ট বাচ্চাটা ঘুমন্ত অবস্থায় কিছু বুঝল কিনা কে জানে।তার পরপরই আড়মোড়া দিয়ে চোখ মেলে ফিটফিট করে তাকাল।সেতু মুচকি হাসল সেই তাকানো দেখে।কিন্তু তার হাসিটা বোধহয় পছন্দ হলো না তার বাচ্চার।ফিটফিট করে তাকিয়েই ঠোঁট উল্টাল সে। তারস্বরে কন্ঠে ঝংকার তুলে কান্না জুড়ে দিল মুহুর্তেই।সেতু ঘাবড়ে গেল প্রথমটায়।সন্তানের গায়ে হাত বুলিয়ে যথাসম্ভব চেষ্টা করল কান্না থামানোর। কিন্তু থামল না কান্না। উল্টে বাড়ল তার কান্নার আওয়াজ আর বেগ।অবশেষে বউদি ছুটে এল কান্নার আওয়াজ শুনে।সেতুকে শোয়া থেকে উঠিয়ে বসাল।সেতুর শরীরে তখনও কিছুক্ষন আগের সন্তান জম্ম দেওয়ার তরতাজা ক্ষতের ব্যাথা।বসতে কষ্ট হচ্ছিল।তবুও বসল দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা হজম করে। সেতুর বউদি বাচ্চাটা সেতুর কোলে তুলে দিয়েই বলল,
” একি সেতু!কেমন মা হয়েছো শুনি?বাচ্চাটা এভাবে কাঁদছে দেখছো না?কান্না থামাতে পারছো না?”
সেতু চোখ ছোট ছোট করে তাকাল।বউদি আবারও বিরক্ত হয়ে বলল,
” সব কি বলে বলে দিতে হবে তোমায়?বাচ্চাটা কাঁদছে দেখেও এভাবে তাকিয়ে থেকে বসে আছো কেন?কোলে নিয়ে কান্না থামাও।ক্ষিধে পেয়েছে হয়তো। বুকে নিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করো বাচ্চাটাকে।”
সেতু মাথা নাড়াল হালকা।দুই হাত দিয়ে ছেলেকে চেপে ধরে শাড়ির আঁচল দিয়ে ডেকে বুকে নিল।
.
নিষাদ যখন বাড়ি ছেড়ে বের হলো তখন বাইরের আবহাওয়া গুমোট।গাড়ি চালিয়ে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতেই জড়ো বেগে বৃষ্টি নামল।ছাতা না আনায় গাড়ি থেকে নেমে হসপিটালের ভেতর ডুকতে ডুকতেই বৃষ্টি এসে ছুঁয়ে দিয়ে গেল তাকে।সঙ্গে সঙ্গে গায়ের শার্টের একপাশ হালকা ভিজে গেল।নিষাদ বিরক্ত হলো।বৃষ্টির পানিতে হালকা ভিজে যাওয়া চুল ঝাড়া দিয়েই পা চালাল। হসপিটালের করিডোরে বসে থাকা নীরুর দিকে তাকিয়েই এগিয় গেল।গম্ভীর গলায় বলল,
” এভাবে বসে আছিস কেন?”
নীরু মাথা তুলে তাকাল।ভাইকে দেখেই সঙ্গে সঙ্গে মুখে ফুটে উঠল চঞ্চল হাসি।দাঁত বের করে হেসেই বলে উঠল সে,
” তুমি এসেছো?”
” আসবই তো বলেছিলাম।”
নীরু খিলখিলিয়ে হাসল।বসা ছেড়ে উঠেই ভাইয়ের হাত ধরে টানল।চঞ্চল গলায় বলল,
” চলো, বাচ্চাটাকে দেখবে।দেখলেই একদম ভালোবেসে ফেলবে দেখো।”
নিষাদ পা বাড়াতে গিয়েও থেমে গেল।হালকা কেঁশে নীরুর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াল।মুখে টানটান গম্ভীর ভাব এনে বলল,
” ভেতরে সেতু আছে।তুই বরং বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আয়।”
নীরু সরু চোখে তাকাল।বলল,
” সেতু দি থাকলে কি হয়েছে?”
” উহ বেশি কথা বলিস।রক্ত দেওয়া হয়ে গেছে?”
নীরু উপর নিচ মাথা নাড়াল।হাতের উপর রক্ত দেওয়ার দাগ দেখিয়েই দাঁত কেলিয়ে বলল,
” হ্যাঁ,জানো?আমার খুব খুশি খুশি লাগছে রক্ত দিয়ে।”
নিষাদ এবার হালকা হাসল।নীরু আসলেই এখনও বাচ্চা!বয়স আঠারো হলেও কথাবার্তা, চালচলন সব যেন ছোট বাচ্চার মতোই।বলল,
” আরো থাকবি?নাকি যাবি?”
” উহ, যাব তো।তুমি বাচ্চাটাকে কোলে নেওয়ার পর যাব আরকি।”
কথাটা বলেই হনহন করে চলে গেল নীরু।মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে এসে চাপিয়ে দিল নিষাদের কোলে।নিষাদ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ছোট বাচ্চাটার দিকে।ঘুমিয়ে আছে।নবজাতক শিশু কোলে নেওয়া বলতে কেবল নিলির সন্তানকেই হসপিটালে কোলে নিয়েছিল।আজ অনেকদিন পর আবারও কোলে নিল একটা ছোট্ট বাচ্চাকে।মুখটার দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়েই ছোট্ট শ্বাস ফেলে নীরুর দিকে তাকাল সে।নীরু তখন মোবাইল ফোনে নিষাদ আর ছোট বাচ্চাটার ছবি তুলতে ব্যস্ত।ভাইকে বাচ্চাটার থেকে চোখ সরিয়ে তার দিকে তাকাতে দেখেই হেসে বলে উঠল,
” সুন্দর না?”
নিষাদ ছোট করেই উত্তর দিল,
” হু।”
” সেতু দির কথা জিজ্ঞেস করবে না?”
” করেছি তো আগে কলে কথা বলার সময়।”
” সেটা তো একবার।আর জিজ্ঞেস করবে না?”
নিষাদ শান্তভাবে তাকাল।ঠোঁট চেপে এবার বলেই ফেলল,
” কেমন আছে?”
নীরু সঙ্গে সঙ্গে চমৎকার হাসল।যেন সে এটাই চেয়েছিল।বলল,
” ভালো আছে এখন।নরমাল ডেলিভারী তো।কাল সকালেই বাড়ি নিয়ে যাবে।”
নিষাদ ক্লান্তিভরা কন্ঠে বলল,
” ওহ।”
” দাও এবার আমার কোলে। ”
কথাটা বলেই বাচ্চাটাকে আবারও কোলে তুলে নিল নিরু।হেলেদুলে হেঁটে আবারও সেতুর বেডে গিয়ে বাচ্চাটাকে শুইয়ে দিল।এবার নীরুর পিঁছু পিঁছু নিষাদও গেল।ক্লান্তিভরা চাহনীতে সেতুর দিকে তাকাতেই হৃদয়ে শীতল অনুভব হলো।সেতুর মুখের উজ্জ্বলতা আগের থেকে কমেছে।চোখের নিচে গাঢ় কালো দাগ।মুখেও ব্রনের দাগের অস্তিত্ব।নিষাদ তাকিয়ে রইল অপলক ভাবে।কিন্তু বেশিক্ষন চেয়ে থাকতে পারল না।সেতু এদিক ফিরে চাইতেই চোখাচোখি হলো দুজনের।সঙ্গে সঙ্গে নিষাদ দৃষ্টি সরাল।দ্রুত বেগে হেঁটে গিয়ে সরে গেল সেখান থেকে।
#চলবে…..
[ কেমন হয়েছে জানাবে।ভুলত্রুটি ক্ষমাস্বরূপ দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।আজকে পর্বটা আমার নিজের কাছেই কেন জানি না হিবিজিবি লাগছে।অনেকক্ষন চেষ্টা করেছি সুন্দরভাবে সবটা লিখতে।কিন্তু পারছি না।দুঃখিত তার জন্য।আর কোথাও ভুল থাকলে জানানোর অনুরোধ রইল।আমি যথাসাধ্য ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।]