নিষ্প্রভ প্রণয় পর্ব ২৪

0
157

#নিষ্প্রভ_প্রণয়
#পর়_২৪
লেখনীতেঃএকান্তিকা নাথ

রঙ্গন আর কয়েক ঘন্টা পরই দেশ ছাড়ছে। খবরটা পেয়ে ও নীরু নিশ্চুপ হয়ে শুঁয়ে রইল।চোখজোড়া বুঝে রাখা।তার ভেতরে তেমন বিশাল কোন অনুভূতি হলো না।তবুও মন চাইছে রঙ্গনকে বাঁধা দিতে।অন্তত সপ্তাহে, মাসে এক আধবার লোকটাকে দেখতে তো পাবে।কথা হবে। কিন্তু চলে গেলে সেসব কিছুই হবে না।তবুও সে নিষেধ করতে পারল না।তার তো তেমন অধিকার খাটাবার জোর নেই।নিষেধ করলে ও যে রঙ্গন থেকে যাবে তেমন কোন নিশ্চায়তা নেই।তার থেকে চুপ থাকাই শ্রেয়।কিন্তু নীরু বেশিক্ষন চুপ থাকতে পারল না।মোবাইলটা বেঁজে উঠল।নীরু একপলক স্ক্রিনে তাকিয়ে দেরি না করে কল তুলল। ওপাশ থেকে কিছু শোনার আগে আগেই বলে উঠল,

” সাবধানে যাবে, নিজের যত্ন নিও।আর হ্যাঁ, ওখানে গিয়ে আমায় ভুলে যেও না বুঝলে?শত হোক তুমি তো আমার একটা মাত্রই বর বলো?”

রঙ্গন ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ল। ক্লান্ত গলায় শুধাল,

“আরো অনেক সময়। নয় দশ ঘন্টা আগেই বিদায় দিয়ে দিচ্ছিস?”

“নয় দশ ঘন্টায় তুমি তো আর কল দেবে না তাই এখনই বিদায় জানিয়ে দেওয়া ভালো নয়?”

রঙ্গন দাঁতে দাঁত চেপে শুধাল,

“কেন তোর হাত নেই?মোবাইল নেই?কল করে বিদায় জানাতে পারতি না?আমি কল করাতেই তোকে বিদায় জানাতে হবে কেন?”

নীরু ঝাঝালো গলায় বলল,,

“তুমি আসলে শুধু গাধাই নও।একটা ঝগড়ুটেও।সুন্দরভাবেই তো কত ভালোবাসা নিয়ে বিদায় জানাতে চাইলাম।কিন্তু ভুলে গেছিলাম ভুল পাত্রে ভালোবাসা দান করা উচিত নয়। ”

“তোর ভালোবাসা চাইছে কে?আমি চেয়েছি?সোজা নিচে নেমে বাড়ির বাইরে আসবি।তাড়াতাড়ি।”

“তুমি কোন দেশের রাজা বাদশা এলে যে তোমার কথামতোই আমি চুপচাপ বাড়ির বাইরে চলে যাব?”

রঙ্গন শান্ত গলায় বলে উঠল,

” তোর মনের রাজ্যের রাজা বলছি।তাড়াতাড়ি আয়,হাতে সময় নেই।”

নীরুর মন খারাপ হলো।হাতে সময় নেই, তো এসেছে কেন?সে কি আসতে বলল?চলেই তো যাবে কিছু সময় পর। চোখের সামনে এসে কি তার ভেতরকার দুঃখগুলোকে তরতাজা করে দিিতে এসেছে?নীরু আলতো গলায় শুধাল,

” আমার ঘুম পাচ্ছে গাধা।তোমার সামনে যাওয়া তো দূর, কথাও শুনতে ইচ্ছে করছে না।”

রঙ্গন বোধ হয় রেগে গেল।দৃঢ় গলায় বলল,

” তাড়াতাড়ি নিচে আয় নীরু।নয়তো আমিই আসছি, সমস্যা নেই।”

নীরু এবার উঠে বসল। আওয়াজ করে বলল,

” দরকার নেই।তুমি যেখানে আছো সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকো আসছি আমি।”

কথাটা বলেই নীরু উঠে দাঁড়াল। পা বাড়িয়ে রঙ্গনের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।মিনিট কয়েকের মধ্যে পৌঁছেও গেল।রঙ্গনকে ব্যস্তভঙ্গিতে হাতের ঘড়িতে তাকিয়ে থাকতে দেখে সামনে গিয়ে দাঁড়াল। সরু চোখে বলল,

” কি দেখছো ঘড়িতে?বিশেষ কিছু?”

রঙ্গন মাথা তুলে চাইল।নীরুকে দেখে এক নজর তাকাল।বলল,

” ঘড়িতে মানুষ সময় দেখে জানিস না?”

নীরু মাথা দুলাল। বলল,

” জানি, জানি।কিন্তু তুমি যেভাবে দেখছিলে মনে হচ্ছিল এই ঘড়িটা তোমার বিশেষ কেউ দিয়েছিল।দিয়া দি দিয়েছিল? ”

নীরুর আকস্মিক প্রশ্নে রঙ্গনের দৃষ্টি সরু হলো।ঠোঁট চেপে বলল,

” দিলেও এতবছর পর ঘড়িটা সচল থাকবে?”

নীরু চঞ্চল গলায় বলল,

” অবশ্যই থাকবে।প্রিয় মানুষের উপহার আমরা যত্ন করে রাখি। হতেই পারে তুমিও খুব যত্ন করে রেখেছিলে।নষ্ট হলেও মেরামত করিয়ে আবারও সচল করেছো।হতে পারে না?”

” জানি না। ”

নীরুর ঠোঁটে ঠোঁট চাপল। প্রসঙ্গ বদলে বলল,

” বলো ডেকে এনেছো কেন?কি বিশেষ দরকার?”

রঙ্গন ঠোঁট গোল করে শুধাল,

” এমনিই।মন চেয়েছে।”

” তোমার মন চাইলেই আমায় আসতে হবে নাকি?কি আশ্চর্য!”

রঙ্গন হঠাৎ স্থির চোখে চাইল নিরুর দিকে।শান্ত, নরম গলায় বলল,

” শোন নীরু, তুই এই চঞ্চলতা কখনো বাদ দিবি না। হুহ? সবসময় এমনই থাকবি।আমি কল দিলে কল তুলবি।আর নিজের যত্ন নিবি।খুব শীঘ্রই দেখা হবে।”

নীরু অবাক হলো।হাত বাড়িয়ে রঙ্গনের কপাল ছুঁয়ে কিছু পরখ করল। তারপর বলল,

” কি হলো তোমার হঠাৎ?জ্বর টর তো নেই।চড় থাপ্পড়ের বদলে এসব কি বলছো?ভালো আছো তো তুমি?”

” হ্যাঁ, ভালোই আছি।”

নীরু ত্যাড়া চেখে তাকাল।চঞ্চল গলায় শুধাল,

” শোনো, তোমায় একটা ফ্রি এডভাইস দিই গাধা।ওখানে অনেক সুন্দরী মেয়ে থাকবে।দেখেশুনে একটা রুপবতী মেয়েকে পছন্দ করে প্রেম শুরু করে দিবে বুঝলে। পারলে বিয়েও করে নিবে।শুধু বিয়েই নয়, হানিমুনও করে নিবে। তারপর বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে দেশে আসবে।সুন্দর হবে না বলো?”

রঙ্গন হতাশ হলো।বলল,

” ভীষণ সুন্দর হবে।কিন্তু তোর সমস্যা হবে না তো?”

নীরু দাঁত কেলিয়ে হেসে উত্তর দিল,

” একদমই না।আমি বাচ্চাকাচ্চা ভালোবাসি।তুমি বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে আমার সাথে দেখা করতে আসবে এটাই আনন্দের বিষয়।”

রঙ্গন ক্লান্ত গলায় বলল,

” আচ্ছা, অপেক্ষায় রইলাম সেদিনের।”

” কিসের অপেক্ষা?কোনদিনের অপেক্ষা?”

” তোর আমার সূচনার অপেক্ষা।”

কথাটা বলে রঙ্গন এক পা ও দাঁড়াল না।নীরু আহাম্মকের মতো শুধু তাকিয়ে রইল।

.

সেতু রেস্টুরেন্টের এককোণে দাঁড়িয়ে থাকা আকাশ নামক মানুষটার দিকে তাকাল।নিষাদই মাত্র তাকে দিয়ে গেল এখানে।মনে মনে নিষাদ কি ভাবছে তা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই পা বাড়াল।আকাশের উদ্দেশ্য কি বলা উচিত, কি বলা দরকার সে বুঝতে পারল না। পা বাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই আকাশ বলে উঠল,

” কেমন আছো সেতু?”

সেতু চোখ তুলে চাইল।আকাশের চোখের চাহনীতে সুখের ছায়ার থেকেও দুঃখের আভাসই যেন বেশি।গলা শান্ত।সেতু বলল,

” ভালো আছি, তুমি কেমন আছো আকাশ?””

আকাশ শুকনো হেসে জবাব দিল,

” যেমন দেখছো।তাকে আনলে না সাথে সেতু?ভয়ে আনলে না?আমি ছিনিয়ে নিব বলে?”

সেতু সচেতন হয়ে তাকাল।আকাশ যে নীরের কথাই বলছে তা বুঝতে পেরে শ্বাস ফেলে বসল। মুখে বলল,

” দুপুর তো এখন।বাইরে রোদ।তাই ভাবলাম ওকে নিয়ে আসাটা ভালো হবে না।কি বলবে বলে ডাকলে?প্রয়োজনীয় কথা?”

আকাশ মৃদু হাসল। চেয়ার টেনে বসে কিয়ৎক্ষন চুপ থাকল।তারপর বলল,

” আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি সেতু।আর এই বিষয়টা আমি তখনই বুঝতে পারলাম যখন তুমি আর আমার নও কিংবা তোমাকে ফিরে পাওয়ার কোন রাস্তাই অবশিষ্ট নেই তখনই।তুমি নম্র-স্বভাবী।হয়তো তোমার সাথে একান্তে সময় কাঁটালে যে কোন পুরুষই তোমার মায়ায় পড়বে।আমিও পড়েছিলাম।যে কারণে প্রথম দিকটায় ডিভোর্সে নিজেই পা বাড়ানো স্বত্ত্বেও যখন ডিভোর্স দেওয়ার সময় আসল তখন আমি মন থেকে চাইনি তোমায় ডিভোর্স দিতে। ধীরে ধীরে আমার আর ইরার দূরত্ব বাড়ছিল তখন।তবুও কেন জানি আমার সাহস ছিল না ইরাকে ছাড়ার।আমি ডিভোর্সের আগে আগেই বুঝতে পারলাম আমি অন্যায় করছি।চেয়েছিলাম তুমিও থেকে যাও আমার জীবনে।কিন্তু পারলাম না মুখ ফুটে বলতে।”

সেতুর অস্বস্তি বোধ হলো কথা গুলো শুনে।এভাবে ডেকে এনে এত আগের কথা গুলো বলে বিশেষ কোন লাভ আছে?সেতু চোখের দৃষ্টি সরু করেই বলল,

” এতগুলো দিন পর হঠাৎ এসব কথা উঠছে কেন আকাশ?তোমার প্রয়োজনীয় কোন কথা না থাকলে বলতে পারো, আমি চলে যাচ্ছি।”

আকাশ ছোট্ট শ্বাস টানল।আবারও বলতে লাগল,

” আমায় আজ বলতে দাও সেতু।আর কোন দিন তো বলব না।”

” আমি তখনকার কথা গুলো আর শুনতে চাই না আকাশ।শুনেও লাভ কি?যা ঘটার ঘটে গিয়েছে।হয়তো ভালোর জন্যই ঘটেছিল।”

আকাশ হেসে বলল,

” তা ঠিক।ভালোর জন্যই ঘটেছে। হয়তো আমার আর তোমার সংসারে তুমি কখনোই এতটা সুখী হতে না সেতু।তাই না?আমি ডিভোর্সের পরপরই ইরাকে বিয়ে করলাম।কিন্তু সত্যি বলতে ধীরে ধীরে আমি বুঝতে পারলাম তোমার প্রতি আমার দুর্বলতা। কিন্তু ঐ যে, দুই নৌকায় পা রাখা সম্ভব নয়।দ্বিতীয়ত নিজের করা কৃতকর্মের জন্যই আমি দ্বিতীয়বার আর তোমার দিকে পা বাড়ানোর সাহস করে উঠতে পারলাম না।তারপর যখন শুনলাম তুমি দ্বিতীয়বার বিয়ে করছো তখনই আমি বুঝতে পারলাম আমার থেকে কেউ কিছু কেড়ে নিচ্ছে।আমি কিছু না কিছু হারিয়ে ফেলছি।অবশ্য আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম তার বহু আগেই।তারপর আর কুড়িয়ে নেওয়ার সাহস হয় নি।সে থেকে আমি শান্তি পাচ্ছি না।আমার শান্তি মিলছে না।আশ্চর্যজনক ভাবে ইরার মাঝে আর সুখ খুঁজে পাই না। শুধু ভেতর থেকে ছটফট করছি।তারপর হঠাৎ জানতে পারলাম তোমার সে সন্তানটি আমারই সন্তান।আমার রক্তই তার দেহে বইছে।”

সেতু ভ্রু কুঁচকে বলল,

” তো?”

” একনজর দেখা যাবো না সেতু? সন্তান সুখ আমি ইতোমধ্যেই উপলব্ধি করেছি।হঠাৎ বুঝলাম ইরার মাঝে কিংবা ইরার আর আমার সংসারের মাঝে কোথাও সুখ না ফেলেও আমি আমার মেয়ের মাঝে সুখ পাই।তুমি প্লিজ ভেবো না আমি তাকে তোমার থেকে কেড়ে নিব।একবার দেখতেই তো চাইলাম।আমি কি এতটাই পাপী যে দেখা পাব না আমার প্রথম সন্তানের?”

সেতু চাহনী শক্ত করল।কঠিন গলায় শুধাল,

” আমি চাই না তুমি ও কে দেখো কিংবা ও তোমায় দেখুক।আমি চাই না তোমার ছায়া ওর উপর পড়ুক।কেন চাই না সেটা জানি না। তবে সত্যিই চাই না।আজ তুমি আসলে, কাল তোমার পরিবার আসবে, পরশু হয়তো আমার থেকে আমার ছেলেকে কেড়েও নিয়ে যেতে পারো।তখন?তুমি যদি আমার ভালো চেয়ে থাকো তবে একটা অনুরোধ রাখো, আর কখনো যোগাযোগ করো না আকাশ।তুমি আমার অতীত।অতীতটা অতীত পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকুক।ভালো থেকো।স্ত্রীর প্রতি মনোযোগী হও, ভালোবাসো। দেখবে সুখী হবে।”

কথাটা বলেই সেতু উঠল। আর একবার ও আকাশের দিকে না তাকিয়ে পিঁছু ঘুরে হাঁটা ধরল।রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এসেই এদিক ওদিক নিষাদকে খুঁজল৷ কোথাও না দেখেই মোবাইল নিয়ে কল দিল।কিয়ৎক্ষন পর নিষাদ হাজির হলো। সেতু মৃদু গলায় বলল,

” এত করে বললাম, আমার সাথে গেলেন না কেন? ”

নিষাদ হালকা হেসে বলল,

” কি করতাম গিয়ে?তোমাদের নিজস্ব কথা থাকতেই পারে।আমি তোমার স্বামী হয়েছি বলে জোর জবরদস্তি করে সেসব শুনতে যাব।কেমন দেখাবে বিষয়টা।”

সেতু এক পলক তাকিয়ে বলল,

” জোরজবরদস্তি তো নয়।আমিই বলেছিলাম আপনাকে যেতে।”

” তবুও, বিষয়টা কেমন নিম্ন মন মানসিকতার দেখায়।”

সেতু হাসল। এতটা স্বাধীনতা নিষাদের জায়গায় অন্য কোন পুরুষ থাকলে দিতে পারত?এতটা বিশ্বাস কি আদৌ অন্য কোন পুরুষ থাকলে করতে পারত?জানা নেই।নিষাদের সাথে পা চালিয়ে বলল,

” নিষাদ?আপনার সাথে এমন একটা জীবন পাওয়া আমার সৌভাগ্যের ফল।আমি আসলেই জানি না কোন কাজের জন্য আমি আপনাকে পেয়েছি।মাঝেমাঝে নিজের ভাগ্যকে খুব চমৎকার মনে হয়।নিজেকে ভাগ্যবতী নারীদের মধ্যে কল্পনা করেই সুখী অনুভব হয়।”

নিষাদ ঠোঁট চওড়া করে হাসল। হালকা ঝুঁকে বলল,

” কেন?”

” জানি না, তবে এইটুকু জানি, আমি আপনাতে মুগ্ধ।আপনার ব্যবহারে, আচরণে সবকিছুতেই আজকাল মুগ্ধতা টের পাই।”

নিষাদ আবারও হাসল। ফের একই প্রশ্ন ছুড়ল,

” কেন?”

সেতু চোখ তুলে একবার চাইল নিষাদের দিকে।মুখের হাসিটা দেখেই দৃষ্টি সরু করে বলল,

“ঐ যে যাদু করে নিয়েছেন সে কারণে।”

নিষাদের হাসি এবার আরো চওড়া হলো।মৃদু আওয়াজও হলো হাসির।দাঁত কেলিয়ে বলল,

” তোমার থেকেই তো শিখলাম।তোমার যাদু-বিদ্যা দেখেই তো আমি আগ্রহী হলাম সে বিদ্যা শিখতে।তবে আপসোস! আমি কিন্তু তোমার থেকে ভালো যাদু শিখতে পারিনি।যাদুবিদ্যায় তুমিই আমার থেকে দক্ষ!”

সেতু ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,

” আমার তো মনে হচ্ছে আপনিই দক্ষ।অল্পদিনেই বেশ সফলতা অর্জন করে নিয়েছেন।”

নিষাদ ভ্রু উঁচিয়ে বলল,

” তো এর জন্য কি তুমি পুরষ্কার দিবে আমায়?কি পুরষ্কার দিবে?আমার কিন্তু বেশ কৌতুহলী সেই পুরষ্কার নিয়ে । ”

সেতু হতবিহ্বল চোখে চেয়ে বলল,,

“আমি কবে বললাম পুরষ্কার দিব?কি আশ্চর্য!আপনি কি আমার ছাত্র নাকি?”

” ছাত্র হতে যাব কেন?আমি তোমাকে মুগ্ধ করা পুরুষ।প্রেমিকও হতে পারি।”

সেতু কিয়ৎক্ষন চুপ রইল। তারপর হঠাৎই শান্তস্বরে বলল,

” আপনি আমার প্রথম অনুভূতি।আমার নিষ্প্রভ জীবনে প্রথম রংয়ের আভাস।আমার শান্ত হৃদয়ে প্রথম অস্থিরতা।আপনি চাইলে আরো হরেক রকম সম্বোধন দিতে পারি আপনাকে।নিবেন সেসব পুরষ্কার হিসেবে?”

নিষাদ পা থামিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।সেতু কয়েক পা এগিয়ে এবার পিছু ঘুরে চাইল নিষাদের দিকে। আবারও নিষাদের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।ভ্রু উঁচিয়ে বলল,

” কি হলো?এমন দাঁড়িয়ে পড়লেন যে? ”

নিষাদ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। ঝুঁকে গিয়ে সেতুর কানের কাছে বলল,

” ওমন ভাবে বললে দাঁড়িয়ে পড়ব না?এভাবে প্রেমে জড়ালে তোমারই ক্ষতি মেয়ে।তুমি যতটুকু জড়াবে তার থেকে দ্বিগুণ জড়িয়ে যাব আমি।তুমি যতদূর এগিয়ে আসবে তার থেকেও বেশি এগিয়ে যাব আমি।প্রেমের স্বীকারোক্তি বরং আমাতেই সীমাবদ্ধ থাকুক।তুমি বরং নিশ্চুপে প্রেম দিও। লালাভ মুখে রক্তিমতা উপহার দিও। অন্যথায় জটিল!সবই জটিল হবে।আমি মানুষটা সুযোগ পেলে অতোটাও সহজ নই।”

সেতু চোখ নামিয়ে নিল।রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা দুই যুবক যুবতীর মলিন ছায়া রাস্তার উপর।মাঝে অল্প কিছু দূরত্ব। সেতু তাকিয়ে রইল সেদিক পানে। সুন্দর দেখাল নিষাদের কাঁধ অব্ধি তার সেই ছায়া।মৃদু হাসতেই নিষাদের ছায়া নড়চড় হলো।মাঝের দূরত্বটা মিটিয়ে নিয়ে হঠাৎই সেতুর পাশে দাঁড়াল।নরম হাতটা নিজের হাতে তুলে নিয়েই নিষাদ বলল,

“এবার ঠিক আছে? ”

সেতু হাসল। বলল,

” আমার আপনার রৌদ্রস্নাত দুপুর।সুন্দর মুহুর্ত ঠিক না হয়ে বেঠিক হয় কি?”

” ঠিক বলছো তবে?”

সেতু উত্তর দিল না এবার।দু পা বাড়িয়ে একসঙ্গে হাঁটতে হাঁটতেই শুধাল,

“সবসময়ই এভাবে হাতটা ধরে রাখবেন তো নিষাদ?আমার জীবনে আমি বহু হাত হারিয়েছি, বহু ছায়ার সঙ্গ আমায় ছেড়ে গিয়েছে।আপনি যাবেন না তো?সবসময়ই আমার হাতটা এভাবেই ধরে রাখবেন প্লিজ। আমার নিষ্প্রভ জীবনটা এভাবে প্রণয়ে ভরপুর করে দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।আমি আপনার এই হাত, হাতের ছোঁয়া, এই ছায়ার সঙ্গ, এইভাবে একসাথে হাঁটা সবকিছুই চাই।জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত চাই।”

নিষাদ অল্প হাসল। নিজের হাতে সেতুর নরম হাতটা আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরল।শান্ত গলায় বলল,

” আমি তোমার হাত ধরার সুযোগটা অনেক কষ্টে অর্জন করেছি সেতু। সেই হাত ছেড়ে দিব?এতই সহজ ছেড়ে দেওয়া?আমি যে এমনটা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না।আমি তোমার জন্য সবসময় এমনই থাকব।এমনই!আমি, তুমি, নীর,আমাদের সাদামাটা সংসার সবই এমন থাকবে।জীবনের শেষ মুহুর্তে এসে আমরা সেই সাদামাটা সংসারের গল্প সাঁজাব।এই রৌদ্রময় দুুপুর কিংবা তুমিময় বিকাল সবকিছুই ভাগাভাগি করব স্মৃতিতে।ভালোবাসি মেয়ে। ভালোবাসব সেই শেষ জীবন পর্যন্ত।”

কথাগুলো শোনার পর আর কোন কিছু বলতে পারল না সেতু।নিশ্চুট হয়ে শুধু হেঁটে হেল।উপলব্ধি করল তার পাশের পুরুষটিই পৃথিবীর সবচেয়ে মুগ্ধকর পুরুষটি।

#চলবে…

[ কেমন হয়েছে?ভুলত্রুটি ক্ষমাদৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here