#নিষ্প্রভ_প্রণয়
#পর্ব_০২
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ
মাস পের হলো।সেতুর প্রেগন্যান্সির এখন আটমাস।চেহারা আগের থেকেও মলিন হয়েছে তার।চোখের নিচে বেশ কালো দাগ।শরীরটাও তেমন ভালো যাচ্ছে না।এরইমধ্যে আজ সকাল থেকে পেটে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করছে।এখন দুপুর!সেতু প্রথমে ব্যাথাটা কমে যাবে ভাবলেও কমেনি ব্যাথা।আকাশেও আজ বেশ মেঘ করেছে।ভারী বৃষ্টি হবে বোধ হয়!কেমন গুমোট আবহাওয়া!সেতু এক পা দুপা করে বউদির ঘরে গেল। পেটের ব্যাথা সম্পর্কে জানিয়েই ডাক্তার দেখাবে কিনা জিজ্ঞেস করতেই মুখ কালো করলেন তার বউদি।ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে উঠলেন,
” এমন ব্যাথা হওয়া আর এমন কি ব্যাপার?এমন তো কতবারই হয় এই সময়ে।একটু থেকে একটু ব্যাথা হলেই ডাক্তারের কাছে ছুটতে হবে নাকি সেতু?আশ্চর্য!তোমার দাদা কি টাকার গাছ বসিয়েছে নাকি বলো?ডাক্তার দেখাতেও তো কম টাকা লাগবে না।তাই না?আমার সময় তো সন্তান জম্ম দেওয়ার আগ মুহুর্তেই হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল তোমার দাদা।যখন ব্যাথা একেবারে সহ্যই করতে পারছিলাম না তখন!এসব হালকা পাতলা ব্যাথার কথা তো কোনদিন জানাইনিই। কি এত নবাবের সন্তান তোমার সন্তান?যে একটু থেকে একটুতেই ডাক্তারের কাছে ছুটতে হবে?ওর বাপও তো জানে না ওর অস্তিত্বের কথা!”
সেতু ক্লান্ত চোখে চাইল।আজকাল বউদির মুখে মুখে কথা বলার ইচ্ছে হারিয়ে গেছে তার।আকাশ তার অনাগত সন্তানের ব্যাপারে জানে না ঠিক। তবে জানলেও কিই বা করত?ডিভোর্স হওয়ার দেড়মাসের মধ্যেই জানতে পেরেছিল সে প্র্যাগনেন্ট।ততদিনে আকাশ দ্বিতীয় বিয়ে করে নিয়েছে!সেতুর সাথে তখন তার কোন সম্পর্ক নেই বললেই চলে।আকাশও কোনদিন সেতুর খোঁজ নেয়নি।শুধু শুধু যেচে পড়ে সন্তানের কথা জানিয়ে কি কোন লাভ হতো আকাশকে?আকাশ তো ফিরেও চাইত না!সেতু লম্বা শ্বাস টানল।বউদির সাথে কথা না বাড়িয়ে বসার ঘরে গিয়ে সোফায় গা এলিয়ে বসল।ঠিক তখনই বাসায় ডুকল তার দাদা।চোখেমুখে ক্লান্তি নিয়েই বলে উঠলেন তিনি,
” কি হয়েছে সেতু?ওভাবে বসে আছিস কেন?”
সেতু চোখ তুলে চাইল।ক্লান্ত গলায় বলল,
” কিছু নয় দাদা। ঘরে যাচ্ছি। ”
কথাটা বলেই উঠে দাঁড়াল সেতু।পা বাড়িয়ে রুমে যাবে ঠিক তখনই তার দাদা বলে উঠল,
” সেতু শোন?নিষাদের বোন আছে না?বড়বোন, বড়বোনের স্বামী আর ছোটবোন তোকে দেখতে আসবে বিকালে।এমনিই কথাবার্তা বলবে আরকি একটু তোর সাথে।আমাকে একটু আগেই ওর মা কল করে জানাল।”
সেতু চোখ ছোট ছোট করে তাকাল।মাথা নাড়িয়ে রুমে ডুকতেই ফোনের আওয়াজ কানে আসল। ভ্রু কুঁচকে বিছানা থেকে মোবাইল তুলল সে।কল রিসিভড করার আগে আগেই কলটা কেঁটে গিয়েছে।কিন্তু এর আগেও পাঁচবার কল এসেছে দেখেই চমকাল সেতু।নিষাদের এতগুলো কল? কেন করেছে কল?এই মাসখানেকের মাঝে নিষাদ আর তাকে কল করেনি।তাহলে আজ হঠাৎ এতবার কল?শুকনো ঢোক গিলল সেতু।কল ব্যাক করতেই ওপাশ থেকে নিষাধ রিসিভড করল।দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
” কি করছিলে তুমি?কল ধরতে এতক্ষন লাগে?”
সেতু টানটান কন্ঠেই উত্তর দিল,
” আমি বুঝতে পারিনি।বাইরে ছিলাম।কিছু বলবেন?”
নিষাদ কিছুটা সময় চুপ থাকল।তারপর হঠাৎ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,
” তোমার বাড়িতে আমার দিদি আর দিদির বর যাবে।ছোটবোনও যাবে।”
সেতু স্বাভাবিক কন্ঠেই বলল,
” শুনেছি।দাদা বলেছেন আমায়।”
” এই বিষয়টা জানাতেই কল দিয়েছিলাম।দিদি রেগে আছে।তোমায় পছন্দ করেনি।”
সেতু হাসল।বলল,
” পছন্দ করার তো কথাও নয়।আপনার দিদি কেন, কেউই পছন্দ করার কথা নয়।বিয়েটা শুধুমাত্র আপনার রাগের বশে হবে তাও আবার প্রতিশোধের খেলায়!”
” কিন্তু দিদি তা জানে না।তোমায় অনেক কথা শোনানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।নাক ফোঁসফাঁস করছে। তোমার জন্যই আমার আর দিদির মাঝে ভুল বুঝাবুঝি হচ্ছে।তুমিই দোষী!”
” আমি সবকিছুতেই দোষী।আপনার কাছেও দোষী।আপনার দিদির কাছে নাহয় নতুন করে দোষী হলাম।সমস্যা নেই!”
নিষাদ চাপাস্বরে বলল,
” দোষীদের দোষীই বলে।এনিওয়েজ দিদি যদি তোমার সাথে কঠিন ব্যবহারও করেন তাহলে সে কঠিন ব্যবহারের জন্যও তুমিই দায়ী!ওয়ান এন্ড অনলি, তুমিই দায়ী!”
সেতু তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল।বলল,
” আমার সাথে খুব একটা ভালো ব্যবহার কেউই করে না নিষাদ।ব্যাপার না।আমি অভ্যস্ত এতে!বিনাদোষে দোষের দায় নেওয়া, কঠিন আচরন সবকিছুতেই অভ্যস্ত।তবে আপনার পরিবার যে এতটুকু এসেছে এতেই আমার কেমন বিদ্ঘুটে লাগে!একটা মেয়েকে এই অবস্থায়ই দেখতে আসতে হচ্ছে আপনার পরিবারের?তাও আবার বিয়ের পাত্রী হিসেবে?আপনার পরিবারের মানুষজন আসলেই কেমন জানি না?”
নিষাদের জবাব এবার শক্ত হলো।গাঢ় কন্ঠে বলল,
” তুমি প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিশ্রুতি ভাঙ্গতে পারো জানি বলেই মূলত এই অবস্থায়ই বিয়ের পাকা কথা সেরে ফেলতে বলেছি।তোমাতে এখন আর নিশ্চায়তা খুঁজে পাই না সেতু।না জানি আবার কার সাথে বিয়ে করে নিচ্ছো পরিবারের জন্য।তাই না?”
সেতু চোখ বন্ধ করে শ্বাস ফেলল।এই একটা কথার দায় যে নিষাদ সারাটাজীবন তাকে দিয়ে যাবে এটা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারল সে।নিষাদ খুব একটা সহজ মানুষ নয়।তাকে বুঝা ভারী কঠিন!সেই কঠিন মানুষটাই প্রতিশোধ নিতে গিয়ে কি করে বসবে তার সাথে তা ভেবেই মাঝে মাঝে ভয় হয় সেতুর।চোখ মেলেই স্পষ্ট গলায় বলল,
” আমাকেই যে বিয়ে করতে হবে তার কি মানে আছে?যেখানে বিশ্বাস নেই,নিশ্চায়তা নেই, সেখানে এমন একটা সম্পর্কে জড়িয়ে লাভ নেই।”
নিষাদ হাসল। বলল,
” সম্পর্কে জড়ানোর জন্য তো বিয়েটা হবে না।তোমায় কেন বিয়ে করব সেদিন তো বললামই সেতু!যত্ন করে যন্ত্রনা দেব বলে।আমার জীবনটা যেভাবে বি’ষিয়ে দিয়েছো ঠিক সেভাবেই তোমার জীবনটাও ছা’রখা’র করে দেব।কষ্ট পাবে। কান্না করবে।দিনশেষে দীর্ঘশ্বাস ফেলবে।আর আমি পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করব!”
” কি করবেন আপনি?”
” সিক্রেট। ”
সেতু চুপ থাকল।পরমুহুর্তেই কিছু একটা মনে পড়ে গেল।ঠোঁট চালিয়ে বলে উঠল দ্রুত,
” আপনার সাথে কিছু দরকারি কথা আছে আমার।বলব?”
নিষাদ আগের মতোই গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিল,
” বলো।”
সেতু জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজাল। বলল,
” আমি জানি আপনি প্রতিশোধ নিবেন।আমায় কষ্ট দিবেন।জীবনটা নরক করে দিবেন।কিন্তু একটা অনুরোধ রাখবেন নিষাদ?আমার সন্তান তো নিষ্পাপ।ও তো এখনো দুনিয়াতেই আসেনি।কিছু জানে না, বুঝে না।ওকে সেই প্রতিশোধের খেলার ধারেকাছেও আনবেন না প্লিজ।আপনার সাথে বিয়ে হলে আমার জীবনের যাই পরিণতি হোক, আপনি ওকে একটা সুস্থ জীবন উপহার দিবেন?প্লিজ?আমি আমার পুরো জীবনের বিনিময়ে এইটুকু চাইছি।রাখবেন কথাটা?”
নিষাদ কিছুক্ষন চুপ থেকেই কঠিন কন্ঠে উত্তর দিল,
” আমি তোমার মতো অতোটা হীন নই সেতু।নিষাদ ভৌমিক বাচ্চাদের ভালোবাসে।বাচ্চাদের আগলে রাখতে জানে।তোমার ভাইয়ের ছেলেমেয়েদের সাথে ও কিন্তু আমার বেশ সখ্যতা ছিল।এখনও আছে।তখন থেকেই বুঝা উচিত ছিল তোমার, নিষাদ বাচ্চাদের ঘৃণা করতে পারে না। তুমি কি ভেবেছো? তোমার শাস্তিস্বরূপ আমি বাচ্চাটাকে কষ্ট দিব?”
সেতু তৃপ্তি নিয়ে শ্বাস ফেলল।যাক!এই বিষয়ে অন্তত নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।ঠোঁট চেপে বলল,
” ও তো আপনার বাচ্চা নয়, যদি এইজন্যই ওর প্রতি আপনার ক্ষোভ থাকে?তাই ভেবেই বিষয়টা মাথায় ঘুরছিল এতদিন।এখন ভালো লাগছে।”
” রাখছি।”
কঠিন কন্ঠে কথাটা বলেই কল রেখে দিল নিষাদ।সেতু স্ক্রিনে একবার তাকিয়েই মোবাইলটা আগের মতোই বিছানায় রেখে দিল।পেটের উপর হাত রেখেই বসে পড়ল এককোণে।অনাগত সন্তানের নড়াচড়া পেটের চামড়ার উপর হাত পর্যন্ত অনুভব হতেই মনের ভেতর সুখ অনুভব হলো।চোখের উপর ভেসে উঠল এক ছোট্ট বাচ্চার প্রতিচ্ছবি।ছোট ছোট পা, ছোট ছোট হাত, নরম তুলতুলে শরীর আর মায়াবী মুখ।নরম ঠোঁট জোড়া নাড়িয়ে তারস্বরে কান্না।আধো আধো পায়ে হাঁটা।আহ! কি শান্তি!
.
নিষাদদের পরিবারের মাথা বলতে নিষাদের বড়বোনের স্বামীই। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সবকিছুতেই অভিভাবক হিসেবে মূলত তাকেই দেখা হয়েছে।এখন সেই অভিভাবক ব্যাতিতই নিষাদের বিয়ের পাকা কথা দিয়ে চলে এসেছে তাদের মা। বিষয়টায় সন্তুষ্ট হতে পারল না নিষাদের বড়বোন।চোখেমুখে তার বিস্তর রাগ।নাকের অগ্রভাগ লাল হয়ে ফুলে আছে সেই রাগের পরিচয়স্বরূপ!নিষাদ তা তখন থেকেই দেখে চলেছে মুখে গম্ভীর ভাব টেনে।অবশেষে বলেই ফেলল,
“সকাল থেকে এমন করছো কেন? তুমি কি কিছু বলবে দিদি?শুধু শুধু বসিয়ে রেখেছো কেন আমায়?”
নিষাদের দিদি এই কথাটারই অপেক্ষায় ছিল যেন।সুযোগ পেয়েই গলগল করে বলতে লাগল,
” তোর বিবেকে বাঁধল না ভাই?আমাদের চৌদ্দগোষ্ঠীতে কাউকে দেখেছিস বিবাহিত মেয়েকে বিয়ে করতে?দেখেছিস বল?তুই কি ফেলে দেওয়ার জিনিস?নাকি এতটাই ঠুনকো?বিয়ের বাজারে তোকে কেউ বিয়ে করবে না?এখনও কত মেয়ে পাগল হয়ে আছে তোর জন্য।দুনিয়াতে তো মেয়ের অভাব পড়ে নাই ভাই।এত মেয়ে থাকতে তুই কিনা এক বিবাহিত পোয়াতি মেয়েকে পছন্দ করেছিস?মাথা ঠিক আছে তোর?একবার ও তোর দুলাভাইয়ের মানসম্মানের কথা ভাবলি না?লোকে শুনলে তো ছিঃ ছিঃ করবে।কত আশা ভরসা ছিল তোর উপর!একটা মাত্র ভাই।ভাইয়ের বিয়েতে কত মজা করব, আনন্দ করব।সব মাটি করে দিলি ভাই?”
নিষাদের চোয়াল শক্ত হলো কথাগুলো শুনে।মুহুর্তেই চোখ লাল হলো।কপালের মাঝখানে রগটাও ফুলে উঠল সঙ্গে সঙ্গে।তবুও যথাসম্ভব রাগ নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করেই বলল,
” আনন্দ করতে কি কেউ নিষেধ করেছে তোমায়?যখন বিয়ে হবে তখন আনন্দ করবে।”
” আমার ঐ মেয়েকে পছন্দ নয়।তুই যদি ঐ মেয়েকে বিয়ে করিস তো এই বাড়িতে আমি আর কখনো আসব না।এক্ষুনি চলে যাব এখান থেকে।তোরা থাক তোদের মতো।যা ইচ্ছে কর।”
নিষাধ ভ্রু কুঁচকাল।দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
” ঐ মেয়েকে কেন পছন্দ নয় তোমার?ওর কি হাত নেই নাকি পা নেই?”
” ঐ মেয়ে বিবাহিত।সবচেয়ে বড় কথা ওই মেয়ে প্রেগন্যান্ট!দুদিন পর একটা বাচ্চা হবে।সেই বাচ্চা সহ তোর সাথে সংসার করবে।ভাবলেই তো আমার গা গুলাচ্ছে।যেখানে আমিই মেনে নিতে পারছি না, সমাজের লোকেরা কি করে মেনে নিবে?”
” সমাজের লোকদের মেনে নেওয়া না নেওয়াতে আমার তো কিছু আসছে যাচ্ছে না।আমার তো গা গুলোচ্ছে না ওর সাথে ওর বাচ্চা সমেত সংসার করব ভেবে।তোমার গা গুলোচ্ছে কেন?”
নিষাদের স্পষ্ট জবাবে এবার খানিক মিইয়ে গেল তার দিদি।মায়ের দিকে তাকিয়েই অভিযোগের সুরে বলল,
” দেখলে মা?তোমার ছেলের কথা শুনছো?কত বড়বড় কথা ঐ মেয়ের জন্য!ঐ মেয়ের প্রেমে দেওয়ানা হয়ে আগেপিছে সব ভুলে বসেছে ও।সমাজ যে এমন একটা কথা শুনে ছিঃ ছিঃ করবে তা ও জানে না?ওকে এতদূর পড়ালেখা করিয়ে, এত বড় চাকরি করিয়ে শেষে এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করাব?কখনোই না।আমি এই বিয়ে হতে দিবই না।আমি তোর জন্য আরো ভালো পাত্রী খুঁজব।আরো ভালো পাত্রীর সাথে তোর বিয়ে দিব বলে দিলাম।”
নিষাধ এবার সোজা উঠে দাঁড়াল।চোখ জোড়া বন্ধ করে হাতের মুঠো শক্ত করল রাগ নিয়ন্ত্রনের বৃথা চেষ্টায়।তবুও রাগ দমল না।সামনের ফুলদানিটা হাতে নিয়েই আঁ’ছাড় মা’রল ফ্লোরে।সঙ্গে সঙ্গেই চুরমার হয়ে ফ্লোরে ভেঙ্গে পড়ল ফুলদানিটা।নিষাদ নিরেট গলায় একরাশ জেদ নিয়ে বলে উঠল,
” হয় ও।নয়তো কেউ নয়। বিয়ে করলে ওকেই করব আমি নয়তো বাসা ছেড়ে বেরিয়ে যাব।এবার তোমাদের ইচ্ছে।পাত্রী খুঁজো, যা ইচ্ছে করো।আমি আর এই বাসায় পা রাখব না তখন।”
কথাটা বলেই হনহন করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল সে।নিষাদের মা ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে রইল।যেন এটা হবে জানতেনই উনি।মেয়ের দিকে তাকিয়েই নরম গলায় বলল,
” ও যখন সুখে থাকবে ঐ মেয়ের সাথে তখন এত বাঁধা দিয়ে লাভ নেই নিলি।এমনিতেই যা রগচটা! রাগের বশে কি না কি করে বসে জানি না।মেনে নে না দয়া করে।আমার আর এসব ভালো লাগছে না।”
” মানে তোমারও মেয়েটাকে পছন্দ? মেয়েটার মধ্যে কি এমন আছে যে তোমরা এমন পাগল হয়ে যাচ্ছো মেয়েটার জন্য?আশ্চর্য!”
” আমিও চাই না নিষাদের সাথে মেয়েটার বিয়ে হোক।কিন্তু নিষাদকে তো চিনিস?ওর জন্যই আমি মুখ বুঝে সবটা মেনে নিচ্ছি নিলি।মেয়েটাকে যে আমার একেবারেই পছন্দ তেমন নয়,আবার একেবারে অপছন্দও নয়।”
মায়ের কথাটা শুনেই ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ল নিলি।রাগে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলেই ঢগঢগ করে পানি খেল এক গ্লাস।মাথার ভেতর ধপধপ করছে তার।বাপের বাড়িতে এসেই যে এমন একটা খবর শুনতে হবে তাকে সে ভাবেনি।ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে তার কত আশা ছিল!সব আশায় জল ঢেলে দিল।
.
সেতু নিজের ঘরেই ছিল।বিকেল হতেই নিষাদের দুই বোন আর বড় বোনের স্বামী আসল বাসায়।সেতুর বউদি তাদের দেখেই সেতুকে ডাক দিল।সেতুও ঘর ছেড়ে বের হলো ধীর পায়ে।সোফায় বসে থাকা তিনজন মানুষকে পর্যবেক্ষন করেই সামনে এগিয়ে গেল।বউদি নাস্তা এগিয়ে দিচ্ছিল।তাকে দেখেই মুখে গদগদ হাসি এনে বলে উঠল,
” এই যে সেতু।পরিচিত হয়ে নাও।”
সেতু হালকা হাসতেই তিনজনের মধ্যে অল্প বয়সী মেয়েটি এগিয়ে আসল।তাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়েই একটা মিষ্টি হাসি দিল।ঠোঁট চওড়া করে বলল,
” তুমি সেতু দি, রাইট?আমি তোমায় চিনি।অনেক অনেক আগে থেকেই।তুমি আগেই অনেক সুন্দরী ছিলে কিন্তু।আমি নিজে মেয়ে হয়েও তোমার উপর ক্রাশ খেয়ে গিয়েছিলাম তখন।এখন চেহারার এই হাল করেছো কেন?চোখের নিচে কালি লেপ্টে রেখেছো! কি এত চিন্তা করো হুহ!”
সেতু অবাক হয়ে চাইল মেয়েটির দিকে।খুব প্রাণবন্ত ছটফটে মেয়টা।মুখে এক মিষ্টি হাসি।গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা।চুলগুলো ঘাড় পর্যন্ত।সেতু বেশ কিছুক্ষন মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকল।নাহ!আগে কখনো ও এই মেয়েটাকে দেখেনি। তবে মেয়েটা তাকে কি করে চিনে?তাও আবার অনেক আগ থেকেই?সেতুর চাহনী দেখেই মেয়েটা পুণরায় বলে উঠল,
” আমি নিষাদ গরুর ছোটবোন।তোমাকে কিভাবে চিনি তা বরং সিক্রেট থাক। কেমন?”
কথাটা বলেই মেয়েটা চোখ টিপ দিল।সেতু হালকা হাসল।মেয়েটা আসলেই ছটফটে!বলতে গেলে একটু বেশিই ছটফটে।কিন্তু তার ছটফটানো কথা বোধ হয় বড়বোনের ভালো লাগল না।দৃষ্টি প্রখর রেখেই সোফায় বসে তাকিয়ে রইল নিলি।নাক দিয়ে ফোঁসফাঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করছে তার।কিন্তু যেতে পারছে না ভদ্রতার কারণে। চোখে তীক্ষ্ণ চাহনী রেখেই সেতুকে পর্যবেক্ষন করছে সে। কোনভাবেই মনের মধ্যে মেয়েটার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে পারছে না সে।উল্টে রাগ হচ্ছে মেয়েটার উপর।আর মাথার ঘুরঘুর করছে কেবল একটাই বাক্য,” একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র বউ হবে কিনা এই মেয়েটা? ”
#চলবে……
[প্রথমত আমি ক্ষমাপ্রার্থী নিজের ভুলের কারণে।শতসহস্রবার ক্ষমা চাইছি আমি নিজের বোকামির জন্য।আমার জানা উচিত ছিল সবটা।ভুল হয়েছে তার জন্য ক্ষমাও চাইছি।ভুল না হলে তো এটা হয়তো জানতাম না আমি।আপনারা যারা জানিয়েছেন তাদের সত্যিই অনেক ধন্যবাদ।
দ্বিতীয়ত আমি সত্যিই অতো মেধাবী নই।যাদের ধারণা শিল্পী মানেই মেধাবী হতে হবে তাহলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি নিজেকে শিল্পী পরিচয় দিইনি। লিখতে ইচ্ছে হয়েছিল তাই লিখেছিলাম।ভুলবশতই ভুলটা করে ফেলেছি।সবার তো সবকিছু জানা থাকে না।প্রথম যখন স্কুলে ভর্তি হইছিলাম তখনও আমি সবকিছু জানতাম না। ভুল করতে করতেই জেনেছি।যায় হোক ধন্যবাদ!কেমন হয়েছে ভালো,খারাপ সবটা জানাবেনআর হ্যাঁ ভুলত্রুটি ক্ষমাস্বরূপ দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ❤️।]