#নিষ্প্রভ_প্রণয়
#পর্ব_১৬
লেখনীতেঃএকান্তিকা নাথ
রঙ্গনের আশীর্বাদের অনুষ্ঠানের কথাটা শুনেই সবাই স্তব্ধ হলো।নিষাদ অবাক করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।নীরুর মতো মনে মনে সেও অন্যকিছুই ভেবে রেখেছিল।নিজের এত কাছের বন্ধুর বিয়ে ঠিক হলো, আশীর্বাদের অনুষ্ঠানের তারিখ ঠিক হলো অথচ সে কিছুই জানে না?আশ্চর্য!নিষাদ চোখ ঘুরিয়ে বোনের দিকে তাকাল।কোথাও দুঃখের কোন রেশ নেই।উচ্ছল প্রাণবন্ত হাসি তার মুখে।নিষাদ নীরুর সে হাসির মানে খুব সহজেই ধরতে পারল।তবুও কিছু বলতে পারল না।রঙ্গনের দিকে তাকিয়ে ভরাট গলায় বলল,
” আশীর্বাদের অনুষ্ঠানে ইনভাইট করার জন্য এভাবে বাড়িতে আয়োজন করে আসার কি ছিল?তুই তো চাইলে কলেও ইনভাইট করতে পারতি।”
রঙ্গন না চাইতেও হালকা হাসল।বলল,
” উহ!সামনাসামনি ইনভাইট করা আর কলে ইনভাইট করায় তফাৎ আছে না?বিয়ে তো একবারই করব। সুন্দরভাবে ইনভাইট করে গেলে তো ক্ষতি নেই।”
নিষাদ আর কিছু বলতে পারল না।আরো কিছুটা সময় পরই নিষাদের মায়ের সাথে কথা বলে রঙ্গন বাড়ি ছাড়ল।নিষাদ ছোট্ট শ্বাস ফেলল।নীরু ততক্ষনে ঘরে চলে গিয়েছে।নিষাদও পা ফেলে বোনের ঘরে গেল।খাটে চিৎ হয়ে চোখ বুঝে শুঁয়ে আছে নীরু।হাত গুলো দুইপাশে মেলে দেওয়া।পা জোড়া ঝুলছে।নিষাদ চেয়ার টেনে বসল।নীরু আগের মতোই চোখ বুঝে রেখে বলল,
” কিছু বলবে দাভাই?দয়া করে যা কিছুই বলো, সান্ত্বনা দিও না দাভাই।”
নীরুর মুখে “দাভাই” শব্দটা শুনে নিষাদ অবাক হলো।গরু শব্দটা দাভাই শব্দে পরিণত হতেই নীরুর কষ্টের পরিমাণটা বুঝে উঠল সে।বুকের ভেতর ভার অনুভব হলো।তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,
” স্যরি নীরু।যদি জানতাম রঙ্গন এমন কিছুই বলতে আসবে বাড়িতে তাহলে কখনো আলাদা করে তোদের কথা বলার সুযোগ করে দিতাম না। ”
নীরু চোখ মেলে চাইল।উঠে বসে নিষাদের দিকে তাকিয়ে মলিন কন্ঠে বলল,
” তাও কথাটা তো আমার কানে আসতই। আমি তো জানতামই কোন না কোনদিন সে অন্যের হচ্ছে।বাদ দাও।যা হয়েছে ভালো হয়েছে।আমি খুশি হয়েছি।”
নিষাদ সরু চোখে চাইল।বলল,
” আমার সামনে অভিনয়টা করতে হবে না নীরু।খাস নি কিছু।খাবার আনছি৷ চুপচাপ খেয়ে নিবি।”
নীরু হালকা হাসল৷ বলল,
” তুমি কি আমায় টিপিক্যাল গার্লফ্রেন্ডদের মতো ভেবেছো গরু?প্রেমিক ছেড়ে গেলেই যেসব প্রেমিকারা খাওয়া তাওয়া বন্ধ করে সুইসাইড টুইসাইড করে বসে। তাদের মতো ভেবেছো?”
” না, আমি জানি তুই কেমন।খুব ভালো করেই চিনি তোকে।আমি জানি তুই তেমন কিছু করবি না।তোর হাসিটাও উবে যাবে না।হয়তো সবার সামনে কান্নাও দেখাবি না।কিন্তু তোর কষ্টটা আমি ফিল করতে পারছি নীরু।আমার খুব অসহায় লাগছে। রঙ্গন যেমন আমার বন্ধু, তুই ও আমার বোন।আমি চাইনি তোর অনুভূতি এভাবে খু’ন হোক।আমি সত্যিই চাইনি।”
নীরু স্বাভাবিক হয়ে আগের রূপে ফিরে আসল।বসা ছেড়ে দ্রুত উঠে দাঁড়াল। নিজের ঘাড়সমান ছোট ছোট চুলগুলো থেকে ক্লিপ খুলল।আয়নার সামনে গিয়ে চোখের কাজলটা কাপড় দিয়ে দ্রুত তুলে খিলখিলিয়ে হাসল।চঞ্চল গলায় বলল,
“বাদ দাও তো এসব।আবেগের বয়সে আছি তো তাই একটুআধটু আবেগ তো কাজ করবেই।দুইদিন পর দেখবে সব ভ্যানিশ!তোমার বন্ধুর থেকে শতসহস্রগুণ ভালো ছেলেকে বিয়ে করব আমি।দেখে নিও।”
নিষাদ মৃদু হাসল। বলল,
” চল খাবি।”
নীরু আর কিছু বলল না।পা বাড়িয়ে খাবার টেবিলের সামনে চেয়ার টেনে বসল।খালি প্লেট সামনে রেখে চেঁচিয়ে নিষাদের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
” এতক্ষন যে খেয়ে নে খেয়ে নে বললে।খাবারটা বেড়ে দেবে কে?তুমিই বেড়ে দেবে।সেতু দি বা মা বেড়ে দিলে আমি খাব না বলে দিলাম।”
নিষাদ ঠোঁট গোল করে শ্বাস টানল।পা ফেলে টেবিলের সামনে বসে থাকা নীরুর দিকে তাকাল।কেমন জানি কষ্ট হচ্ছে, অস্থির লাগছে।হয়তো এই কষ্টটা সেও পার করে এসেছে বলে।বয়সে বেশ ছোট আর চঞ্চল বোনটি সেই তীব্র শোক সইতে পারবে তো?যতোটা স্বাভাবিক দেখাচ্ছে সব ততোটাই স্বাভাবিক থাকবে তো সব?চিন্তা হলো।তবুও সেই চিন্তা প্রকাশ করল না।কোনদিন খাবার না বাড়তে পারা নিষাদ অদক্ষ হাতে ভাতের বাটি হাতে নিল।চামচ দিয়ে ভাত তুলতে গিয়েই অল্পকয়েক ভাত পড়ে গেল টেবিলের মসৃন তলে।নীরু কপাল কুঁচকাল।আওয়াজ তুলে বলল,
” এত বড় ছেলে হয়েছো, কি পারো তুমি?বয়স কত হুহ?ছিঃ!ছিঃ!ভাতটাও বেড়ে দিতে পারছো না গরু?সুন্দর করে দাও।নাহলে খাব না কিন্তু।”
নিষাদ অসহায় চোখে তাকাল। পরেরবার সুন্দর করেই চামচে ভাত তুলল।তারপর নীরুর প্লেটে রাখল।কিন্তু তরকারি দিতে গিয়ে আবারও বিপদে পড়ল।চামচে যেন তরকারি উঠছেই না।কি আশ্চর্য!অনেক কষ্ট করে চামচে তরকারি তুলে নীরুর প্লেটে রাখতে গিয়েই তরকারির ঝোল গিয়ে পড়ল নীরুর শাড়ির আঁচলে।নীরু ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না তুলল।ঠোঁট উল্টে বলতে লাগল,
” তুমি কি এইসব ইচ্ছে করেই করছো গরু?তোমার কাছে ভাত খেতে চেয়েছি বলে এভাবে অপমান করে খাবার বেড়ে দিচ্ছো তুমি?ভাত দিলে তুফানের মতো করে, এখন তরকারি দিচ্ছো জলোচ্ছ্বাসের মতো করে? খাব না আমি।”
নিষাদের মুখটা আরো অসহায় হলো।অন্য সময় হলে বোনের সাথে ঝগড়া করত।আজ ঝগড়া করার জন্য কোন কথা আসছে না মুখে।পাশে চেয়ার টেনে বসেই হাত ধুঁয়ে নিল।প্লেটটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে খাবার মাখল।নীরুর দিকে হাত বাড়িয়ে খাবার এগিয়ে দিতে দিতেই বলল,
” খাবি না মানে?তোর চৌদ্ধগোষ্ঠী খাবে।হা কর।”
নীরু কান্নার নাটকে ইতি টানল।মুহুর্তেই চমৎকার হাসল।মুখ এগিয়ে দ্রুত মুখে ফুরল খাবার।নাক ফুলিয়ে মুখ কুঁচক বলল,
” ছিঃ!কি বিচ্ছিরি খেতে।খাবারটা তুমি মেখেছো বলেই এতোটা বিচ্ছিরি স্বাদ।”
নিষাদ সরু চোখে তাকিয়ে শুধাল,
“কথা না বলে তাড়াতাড়ি খা বলছি।”
নীরু গাল ফুলিয়ে রাখল।চুপচাপ ভাইয়ের হাতে খেতে লাগল।
.
সেতু বিছানায় বসে ছিল। বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।পরিবেশটা কেমন ঠান্ডা।নীর ঘুমাচ্ছে। নীরুও আজ বেশ চুপচাপ।সেতুর মন খারাপ হলো প্রাণবন্ত নীরুর কথা ভেবে।এত চেয়েও মানুষটাকে পেল না?এত উচ্ছ্বাস নিয়ে শাড়ি পরল, সাঁজল।অথচ তার প্রিয় মানুষটা তাকে এমন এক উপহার দিয়ে বসবে যেটা সে আশাই করেনি।সেতু চুপচাপ ভেবে গেল সেসব।ভাবনার মাঝেই টের পেল কেউ একজন তার কোলে মাথা রেখেছে।অপলক তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
” আজকে আমার মন খারাপ সেতু। আমার মন খারাপ কাঁটিয়ে দাও প্লিজ।”
কি সুন্দর অধিকার দেখিয়ে কথাটা বলে ফেলল নিষাদ!কি নির্দ্বিধায় আবদার রাখল!সেতু চোখ নামিয়ে নিষাদের চোখের দিকে তাকাল।কি ভীষণ গহীণ চাহনী।সে চাহনীতে একরাশ বিষন্নতা। সেতু নিজের নরম হাত নিষাদের চুলে রাখল।বলল,
” আমি যে মন খারাপ কাঁটাতে পারি না নিষাদ।”
নিষাদের মুখ উদাস হলো।চোখ বুঝে থেকে ভরাট গলায় শুধাল,
” খুব মাথা ধরেছে। বুকের ভেতর কষ্ট হচ্ছে। ভালোবাসা শব্দটা কষ্টের খুব। শব্দটা ভীষণ যন্ত্রনার।কাউকে ভালোবাসলেও কষ্ট পেতে হয়।কারো ভালোবাসা ভেঙ্গে যেতে দেখলেও কষ্ট পেতে হয়।”
সেতু চুপ রইল।হাত দিয়ে নিষাদের ঘন ঝাকড়ানো চুলে হাত বুলাল।নিষাদ আবারও বলল,
” নীরুর কষ্টটা আমি বুঝতে পারছি। খুব করে টের পাচ্ছি ও আমার মতোই ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে।কিন্তু আমি কিছু করতে পারছি না সেতু।আমার বোনটা কষ্ট পাচ্ছে। অথচ হাসছে কি সুন্দর।”
সেতু ঠোঁট ভিজাল জিহ্বা দিয়ে। বলল,
” যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে পা বাড়িয়ে লাভ নেই। শুধুই অবহেলা পাওয়া যায়। এই ধ্রুব সত্যটা জেনে মানুষ সেই মানুষটারই প্রেমে পড়ে যে মানুষটা তাদের সারাজীবন অবহেলায় ডুবিয়ে রাখে। নীরুর ভালোবাসা সত্যি ছিল।অনুভূতি গুলো বাস্তব ছিল।তবুও যদি মানুষটা তার কপালে না জুটে তাহলে বুঝবেন, সেই মানুষটার থেকেও উত্তম কেউ ওর জীবনে আসবে।”
” আমি জানি না ওর জীবনে আর কে আসবে, কখন আসবে।কিন্তু ও তো আমারই বোন।আমি জানি ও অন্য কারো প্রতি খুব সহজেই অনুভূতিপ্রবণ হতে পারবে না।আমিও তো পারিনি সেতু।তুমি আমায় বলেছিলে, যতদিন না প্রতিষ্ঠিত হয়ে তোমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাব ততদিন যেন তোমার পিঁছু পিঁছু না ঘুরি।তুমি প্রেম করবে না,একেবারেই বিয়েই করবে।আমিও মেনে নিলাম।বিনিময়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম,’ ততদিনে যদি তুমি অন্য কারো হয়ে যাও?’ তুমি সেদিন আমায় ঠান্ডা স্বরে কথা দিয়ে বলেছিলে, ‘ হবো না অন্য কারো।আমি অপেক্ষায় থাকব।’ তোমার সেই কথা তুমি রাখলে না সেতু।আমি তোমার থেকে দূরত্ব টানলাম সেই কতবছর আগে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লোভে।তারপর?তারপর একদিন জানতে পারলাম তোমার বিয়ে হয়ে গেছে।কি ভীষণ যন্ত্রনায় ছটফট করেছিলাম আমি সেদিন।কি ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম।তোমার বিয়ের হওয়ার আগেও দুইবছর আমি তোমাকে দেখিনি।তোমার সাথে সরাসরি কথাও বলিনি।এতগুলো দিন তোমার থেকে দূরত্বে থাকার পরও তোমার প্রতি আমার অনুভূতি এইটুকুও কমল না। যখন জানলাম তুমি অন্য কারো হয়ে গেছো আমার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছিল।নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল।বার তিনেক সুইসাইডের চেষ্টা করেছি তোমার প্রতি ঘৃণা রেখে।কিন্তু লাভ হলো না।আমি দিনশেষে ব্যর্থ হলাম তোমার থেকে অনুভূতি সরাতে।তখন তো আমি মেনে নিতে পারিনি, সৃষ্টিকর্তা যা করেছেন ভালোর জন্যই করেছেন।আমার জীবনে আরো উত্তম কেউ আসবে এটাও মেনে নিতে পারিনি।নীরুও পারবে না মানতে।কিছুতেই পারবে না।”
সেতু মৃদু হাসল।স্পষ্ট ভাবে বলল,
” আপনি ভুল নিষাদ।নীরু পারবে মানতে।আর আপনি সেটা দেখে বিস্মিত হবেন। মেয়েরা সব পারে নিষাদ।যেমন ভালোবাসার মানুষটাকে ভালোবাসতে পারে, তেমনই ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া বাঁচতেও পারে।রাতদিন যেমন প্রিয় মানুষটার সাথে সংসার বুনার স্বপ্ন দেখতে পারে? তেমনই প্রিয় মানুষকে ছেড়ে অন্য কারো সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারে হাসিমুখে।খুব কম মেয়েই বোধ হয় পারে না।”
নিষাদ কৌতুহলী চোখে তাকাল।প্রশ্ন ছুড়ল,
” তুমিও কি ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে হাসিমুখে বিয়ের পিড়িতে বসেছিলে সেইবার?ভালোবাসতে কি আমায় সেতু?”
সেতুর চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হলো।কথার প্রসঙ্গ ছিল অন্য।সে প্রসঙ্গ থেকে কথা টেনে নিষাদ এমন প্রশ্ন করবে ভাবে নি সে।ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কিয়ৎক্ষন চুপ থাকল।তারপর বলল,
” আপনি ব্যাতীত আর কেউ কোনদিন আমার কাছে প্রেমপ্রস্তাব রাখেনি নিষাদ।প্রেম জিনিসটা আমার কাছে নিষিদ্ধ বস্তুর ন্যায় ছিল।আর মানুষের প্রবল কৌতুহল থাকে সেই নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতিই!আমি ও ব্যাতিক্রম নই।কিশোরী বয়সে প্রথম প্রেম বুঝতে শিখলাম আপনার পাগলামোতে।আপনার উম্মাদনায় প্রেমের অস্থিরতা টের পেলাম।তারপর যখন নিজের মুখেই নিষিদ্ধ প্রেমের স্বীকারোক্তি স্বরূপ ” ভালোবাসি ” শব্দটা বলে বসলেন তখন থেকেই আমার প্রবল আগ্রহ জম্মাল আপনার প্রতি।তখন আমি আপনার প্রেমে পড়িনি ঠিক তবে আমি ভীষণ কৌতুহলী ছিলাম আপনার সেই প্রেমানুভূতি নিয়ে।আসলেই কি প্রেম নিয়ে প্রেমিক পুরুষ সাত সমুদ্র পাড়ি দিতে পারে?আসলেই প্রেম একজন প্রেমিক পুরুষকে যত্ন, মমতা, বিশ্বাস ইত্যাদি শেখায়?তারপর থেকে আপনি সামনে আসলে চার পাঁচবার আড়চোখে দেখতাম। বুকের ভেতর অনুভব হতো আপনার প্রেম আমায় কড়া নেড়েছে।আমার আপনার যোগাযোগ ছিল এতটুকুই।”
নিষাদের ভালো লাগল কথাগুলো শুনতে।চোখ বুঝে রেখে আবারও প্রশ্ন ছুড়ল,
” তারপর?যোগাযোগের ইতি টানার পরের অংশে কি ছিল সেতু?”
সেতু বলল,
” আমার বাবা মারা গিয়েছিল ছোটবেলায়।মা মারা গিয়েছিল যখন আমার বয়স বারো!এর পরবর্তী জীবনটা সম্পূর্ণই কেঁটেছিল দাদা আর বউদির অধীনে।দাদা কম বেতনের চাকরী করত।সংসার চলত সেই কম রোজগারেই।মাসের শেষে টানাফোড়ন চলত।বউদির মুখে প্রায়সময়ই নানা ধরণের, নানা রকমেন কথা শুনেছি আমি।দাদা বউদির অধীনে বড় হওয়া সেই আমির কাছে প্রেম করা ছিল আকাশ ছোঁয়ার মতো।এদিকে ক্রমশ আপনি উম্মাদ হয়ে উঠছিলেন।পাগলামো বাড়ল।দাদাও খেয়াল করল তা।একদিন আপনাকে ডেকে নিয়ে বেশ কিছু কথাও শোনাল।আমার বউদির মুখ বেশ ধারাল।আমার পিঁছু পিঁছু আপনার ঘোরার বিষয়টা জানতে পেরে সেই ধারালো মুখ আরো ধারালো হলো।আমি তখন বাধ্য হয়েই আপনাকে দূরে সরানোর জন্য সেই শর্ত রাখলাম।আপনিও রাজি হলেন।ব্যস!তারপর আর দেখা হলো না, কথা হলো না,প্রেমানুভূতি জানানো ও হলো না।”
“উহ!পরের ঘটনা শুনতে চেয়েছি সেতু।”
সেতু হালকা হাসল।বলল,
” পরের ঘটনা আপনার জানা। সেখানে বিশেষ জানার মতে কোন তথ্য নেই।”
নিষাদের গলা আরো খানিকটা ভরাট হলো।বিষন্নতা ছুঁয়ে গেল কন্ঠে।বলল,
” জানা নেই।অনেক কিছুই জানা নেই।।তোমার বিয়ে হলো।কেন বিয়েতে রাজি হয়েছিলে?কেন বিয়ে করে অন্যের হয়ে গিয়েছিলে আমায় কথা দিয়েও?কেনই বা বিয়ে করছো এটা একবারও জানালে না আমায়?”
“একের পর এক বিয়ের প্রস্তাব আসল নিষাদ।শেষমেষ বিয়েটা ঠিক হয় গেল।আমার দায়িত্ব ছিল দাদা বউদিদের হাতে।আপনার কথা জানানোর সাহসই হয়ে উঠেনি আমার।জানালেও যে বিশেষ লাভ হতো তেমন নয়।আপনাকে কথা দিয়েছিলাম অন্য কারো হবো না, তবুও কথা না রেখে অন্য কারো হয়েছি।মেয়েদের জীবন অদ্ভুত নিষাদ! কথা দিলেও কথা রাখা হয়ে উঠে না সবসময়।আমি হয়তো চাইলে পারতাম কথা রাখতে।কিন্তু আমার যে অতো অধিকার ছিল না পরিবারে, আমার কথার যে অতো প্রাধান্য ছিল না নিষাদ।আর রইল কেন জানাইনি?জানালে কি হতো নিষাদ?আপনি তখন বেকার।আমার পরিবার বিয়ে দিত না আপনার সাথে।উল্টে সমস্যা হতো। তাই আর জানানো হয়নি।”
নিষাদ মৃদু আওয়াজ তুলেই বলল,
” ভালো করেছো।”
নিষাদের কথাটায় চাপা রাগ।সেতু তা বুঝতে পারল।বুঝেও কিছু বলল না আর আগ বাড়িয়ে।
.
নীরুর হাতে মোবাইল।মোবাইলের স্ক্রিনে এক যুবকের ছবি।একটা না, অনেকগুলো।নীরু একে একে সবগুলো ছবি দেখল।তারপর হঠাৎ ই সবগুলো ছবি ডিলিট করতে লাগল।ছবি, নাম্বার, ম্যাসেজ সহ যাবতীয় যত তথ্য ছিল রঙ্গন সম্পর্কিত সবগুলো ধীরে ধীরে মুঁছে দিল।হৃদয়ে তরতাজা দুঃখের সাথে সাথে প্রশান্তির হাওয়া বইল।যে স্মৃতি রাখা কেবলই দুঃখ পোষা, সেই স্মৃতি বেশিদিন না পুষে মুঁছে দেওয়া উচিত।ইশশ!মোবাইলফোনের মতো যদি তার মন থেকেও এইভাবে মানুষটাকে মুঁছে দেওয়া যেত।
#চলবে….
[ কেমন হয়েছে?আজকের পর্বটা ঝামেলার মধ্যে লেখা।হয়তো অগোছাল ভীষণ।ভুল থাকলে ক্ষমা করে দিবেন।]