#নির্মোচন . ❤
#পর্বসংখ্যা_৩০ .
#ফাবিয়াহ্_মমো .
নির্মেদ কোমরে জড়িয়ে ধরা ওই মজবুত সর্মথ হাত আরেকটু দৃঢ়বদ্ধ হয়ে নববধূর নির্বাক মুখটা দেখতে লাগল। ভীষণ রকম কাছ থেকে, নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাস ছুঁয়ে। সারা শরীর মন দিয়ে অনুভব করে। পায়ের যন্ত্রণায় দিকে খেয়াল রাখলেও এই মূহুর্তে মনে হলো, রাতের আকাশে উঁকি দেওয়া চাঁদ তার কাজে দুষ্টু চোখে হাসছে। আবারও নিজের ইচ্ছে ব্যাকুলতা জানান দিয়ে ওর মুখের কাছে শুধিয়ে উঠল সে,
– আপনার মনে নেই সেদিন সন্ধ্যায় নোটচিটে কি ছিল?
জবাব শূন্য মুখ ‘হ্যাঁ’ সূচকে বুঝিয়ে দিল নিজের ফিরতি উত্তর। ফিহা ভুলেনি সেদিন সন্ধ্যায় ওই ছোট্ট এক টুকরো চিরকুটে ছিল কয়েকটি নিঃশব্দ নীরব অক্ষর, যে অক্ষরগুলো আগামী দিনের জন্য ছিল চাপা অধিকার ও আজকের এই অবস্থাকে বোধহয় দিয়েছিল জানান। কিন্তু সেদিন বুঝতে পারেনি অতো শীঘ্রই যে ওর সরলমুখো জীবনটায় নিজেকে শক্ত দূর্গের মতো ঘিরে দিতে আসবে এই ব্যক্তিগত পুরুষ। ওর রাজত্বের ত্রিসীমানাতেই ঢুকতে দেবে না কোনো অনাহূত ব্যক্তি বা স্পর্শ। রেলিংয়ে থাকা ওর ডানহাতের ভেতর তাঁরই চাপা স্বভাবের মতো গুঁজে দিল একটি নিঃশব্দ খাম। চকিতে মুখ ঘুরিয়ে ডানহাতে ধরা সাদা খামটি দেখে প্রশ্ন জর্জরিত চোখদুটি সাঈদের মুখপানে রেখে বলল,
– এটা কী?
– আপনার প্রাপ্য। আর কোনো দাবি দাওয়া থাকলে বলবেন।
অমন অদ্ভুত কথার মর্ম, সাদা খামের হেতু কোনোটাই বুঝতে না পেরে ফিহা আবারও কৌতুহল বিদ্ধ চোখে খামটি দেখল। উজবুক ঢোক গিলে সাঈদের দিকে অর্থপূর্ণ চোখে চাইলে সে যেন ফিহার মনের কথাটা বুঝতে পেরে আগাম শব্দে জানিয়ে উঠল,
– এটা আপনারই। খাম খুলতে আমার কোনো পারমিশন লাগবে না। চাইলে খুলুন।
প্রবল কৌতুহলে খচখচ করা মন ওইটুকু কথায় সায় পেয়ে খামের মুখটা তখুনি ছিঁড়ে ফেলে। মুখ ছেঁড়া খামের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে লম্বা একখানা পুরু কাগজ। লাইটবিহীন চাঁদের ফটফটে আলোয় চোখ খাটো খাটো করে বুঝল, এটা মামুলি কোনো কাগজ নয়, নয় কোনো তুচ্ছ সামান্য জিনিস . . বরং এতে বসানো হয়েছে সদ্য কবুল বলা বিয়েটার সম্পূর্ণ মোহরানার হিসেব-সিদ্ধ অর্থ, ব্যাংক চেকের ছোট্ট কোণায় ফুটে রয়েছে তরতাজা একটি কলমে সই। এক টুকরো কাগজ, এটা কী আজকের এই পা° শবিক সমাজে নববধূর হাতে তুলে দেওয়া হয়? হয় না। বরপক্ষের তরফ থেকে ঘোষণা করা বিপুল পরিমাণ মোহরানার অর্থ কোনোরকমে অর্ধেক শোধ হয়, নতুবা কণেপক্ষের মাধ্যমে মাফ মওকুফ করে দেবার এক অদ্ভুত বিকৃত নিয়ম বানানো হয়েছে। যে নিয়মের সঠিক রেয়োওয়াত ধর্ম মোতাবেক তো নেই-ই, উলটো কালেমা পড়া এক নারীর হক সুচনালগ্নেই নষ্ট করা হচ্ছে হাসিমুখে। সমস্ত প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়া ওই একফালি কাগজ পুনরায় খামে ভরে একটু আগের কথাটা প্রত্যুত্তর করল ফিহা,
– দাবি দাওয়ার বিষয়টা সময়ের জন্য থাকুক। যখন প্রয়োজন হবে আপনার কাছ থেকে সেটা চেয়ে নিব। যদি আপনি সেদিন মন্ঞ্জুর করে দিতে রাজি থাকেন তো।
কথার বাকপটুতায় মুগ্ধ হয়ে সাঈদ নিজের পেশল শক্ত বাহুবেষ্টনে জড়িয়ে ধরল ওর সবটুকু তনু। রক্তিম আবিরে আরক্ত গালে পুরুষ্টু দুটো ওষ্ঠাধর চেপে দিলে গলে যাওয়া মোমের মতো ডেবে গেল ওর ডানগাল। ভীষণ অজানিত এক রুদ্ধ শ্বাস ফিহার অন্তঃকরণে ছুঁয়ে ছুঁয়ে মন ক্যানভাসে এঁকে দিল একটিমাত্র উদ্দীপ্ত মুখ। যেই পৌরুষ মুখ ছোট্ট ছোট্ট আদর দিতে এখন ব্যস্ত। নরম গালটা ছুঁয়ে, নির্মেদ কোমর জড়িয়ে, চুলের গহিন অরন্যে আঙুল বুলিয়ে সে মিশে যাচ্ছে ওর কবোষ্ণ সত্তায়। হঠাৎ তপ্ত নিঃশ্বাসের তাপ ওর কানের কাছটায় ছুঁয়ে গেলে ফিসফিসে কণ্ঠের স্বরটুকু কেমন প্রোফেশনাল ভঙ্গিতে উচ্চারণ করে উঠল,
– রজার ফ্রম মাই সাইড। অর্ডার অ্যাকসেপ্টেড অ্যান্ড নোটেড। কথাটা এই মর্মে তোলা থাকল যে যখনই আপনি চাইবেন, সেটা যা-ই হোক আমি তখনই ফুলফিল করতে বাধ্য হব। যদি দীর্ঘ আয়ুর অনুমতি আমার থাকে বা স্মৃতিভ্রষ্ট যদি না হয়, টিল দ্যান আই উইল গিভ মাই ফুল পার্শেন্ট টু কিপ ইয়্যুর ওয়ার্ডস্।
দুটো পেশল বাহুর বেষ্টনে শক্ত অপ্রতিরোধ্য একটি দূর্গের মাঝে নিজেকে নিরাপদ অনুভব করছে ও। মনে হচ্ছে, কোনো কলুষ মাখানো পঙ্কিলতা, আকস্মিক হামলে পড়া কোনো ভয়াবহ দুর্ঘটনার ছোবল ওকে আর ছুঁতেই পারবে না। ক্লান্ত শরীরি ভরটুকু সুস্থ বাঁ পা ও সুঠাম বুকে ছেড়ে দিয়ে ওভাবেই চোখ বুজে প্রশস্ত কাঁধের খোপে ঘুম গুঁজে দিল ফিহা। অনুভব করল মাথার পেছন থেকে ঝপ করে খসে পরেছে মাথার সুন্দর দোপাট্টা। গায়ের শীত নিবারণ একমাত্র মখমলী চাদরটাও সে কথার ফাঁকে ফাঁকে অনেক আগেই খুলে নিয়েছে। পাতলা পিঠে কী যেন একটা করে কাঁধে লুকোনো ছোট্ট মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে নিল সাঈদ। এক হলফ মাত্র দূরে লিপস্টিক মুছে নেওয়া গোলাপী, শুকনো, তুলতুলে ঠোঁটদুটো। এবার তো এইটুকু সৌন্দর্য নিজের ঠোঁটে বুঝে নিতে কোনো ভয় নেই। নেই কোনো সংস্কার আলগা হবার প্রবণতা। নব অঙ্কুরিত দুটি সতেজ ফুলের মতো তিরতির করে কাঁপতে থাকা ঠোঁটদুটো নিজের পুরুষ্টু, তপ্ত, খয়েরি ঠোঁটদুটোতে তুলে নিল সাঈদ। কাঁপুনিটুকু অধীর আকাঙ্ক্ষায় দমন করে দিলে ওর নিম্ন অধরে ছুঁয়ে দিল প্রখর আদর। ঘুম জড়ানো ফিহার চোখদুটি হঠাৎ হঠাৎ কুঁকড়ে উঠে শেরওয়ানির কালো কলারটুকু ঘাড়ের কাছে মুঠোবন্দি করে নেয়। ফুসফুসে অক্সিজেন ফুরোতে ফুরোতে বড্ড বিপন্ন সঙ্গিন অবস্থা অনুভব করলে নড়েচড়ে উঠে ওই সুঠাম বুকের দূর্গে। দূর্গের মালিক যেন ঠাহর করতে পেরেই মুক্ত করে দেয় তাঁর অধর-সন্ধিস্থ বলয়। একটুখানি দম পেয়ে জোরে জোরে হাঁপাতে থাকে ফিহা। ওর ঠোঁটদুটো এই প্রথম কেউ ছুঁয়ে দিয়েছে। ফুলে উঠা লাল রক্তাভ ঠোঁটদুটোতে নিজের বৃদ্ধাঙুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে সাঈদ বলল,
– আপনার এই ঠোঁটদুটো আমিই প্রথম স্পর্শ করে দিলাম। এখানে আমি বাদে অন্য কারো অধিকার যেন না বসে। আপনার বয়স অল্প। সামনে লম্বা দিন পরে আছে। আমি চাইব না কোনো ভুল ধারণাগত ব্যাপারে ম্যানিউপুলেট হয়ে খারাপ কিছু করে বসুন। আপনি বুঝতে পারছেন, কোন্ ব্যাপারে আমি বোঝানোর চেষ্টা করছি?
চোখ তুলে সাঈদের আস্বাভাবিক রকম শান্ত হয়ে থাকা মুখটার দিকে চেয়ে মনে মনে সমস্ত কথাটুকু খাপমতো জুড়ে নেয় ফিহা। ও বুঝতে পারে, বাইরের নেগেটিভ কথাবার্তার প্রভাব বা থার্ড পার্সনের সাজানো যুক্তিবাণ থেকে সরে থাকার জন্য শক্ত ইঙ্গিত বুঝিয়েছে। ঠোঁট ছুঁয়ে চলা ওই অবারিত আঙুলের কর্মযজ্ঞের মাঝেই ফিহা নিজ চিন্তাস্থল থেকে বলল,
– ভুল করার পেছনে দুটো কারণ সবসময় দায়ী থাকে জনাব। এটা আমার একান্তই ধারণা। আপনার বা কারো সাথে ধারণাটা মিলবে না এটাই স্বাভাবিক। আমি মনে করি ভুলের পেছনে দুই পক্ষেরই দোষ আছে। প্রথম পক্ষের মধ্যে, ওই বিষয়টাকে অবহেলা করা বা গুরুত্ব না দেওয়া। আর দ্বিতীয় পক্ষের মধ্যে, ওই ব্যাপারটা সম্বন্ধে কোনোরকম ধারণা বা জ্ঞান-ই না থাকা। আপনি যদি অবহেলা না করে আমাকে আগে থেকেই বুঝিয়ে বলেন, কোথায় কোন ধরণের সমস্যা হলে এই এই ভুল হবে, তাহলে আমি আমার জ্ঞানশূন্য অবস্থাটা আগে থেকেই ঠিক করে নিতে পারব। আর . .
অমন সাজানো, গুছানো সাবলীল, সুন্দর কথার মাঝে হঠাৎ মুখ নীচু করে ফেলল ফিহা। ঠোঁটের আগায় ঝুলে থাকা অন্য কথাগুলো বলতে যেয়ে ভীষণ লজ্জায় কানদুটো গরম হয়ে আসছে। সাঈদ ওর বিষয়টা বুঝতে পেরে ইচ্ছে করে ওকে নাস্তানাবুদ করতে চাইল,
– আর? আর কী? শেষ করুন।
– আর কিছু না।
– না। কিছু তো একটা আছে। গিভ অ্যা ফুলস্টপ অন দ্যাট লাইন। বলুন।
ফিহা নিরুপায়, কুণ্ঠিত, জড়সড় চোখদুটো আবারও উপরে তুলে চাইলে কঠিন লজ্জায় টইটুম্বুর হয়ে বলল,
– কিছু জিনিস শুধু আপনিই পাবেন। সেখানে অন্যের আনাগোনা কক্ষনো হবে না।
কথার নীচে ওর নীরব প্রলুব্ধ সমর্থনটুকু বুঝতে বাকি নেই সাঈদের। মুখ বরাবর উচ্চতা থেকে মন্থর লয়ে নেমে যায় আরেকটু দুরত্ব, ওই বিউটি বোন হাড্ডিটার নীচে, সেখানে শাড়ির আঁচল ও ব্লাউজের মেলবন্ধনে ঢেকে আছে অবর্ণনীয় রূপ স্নিগ্ধ সম্মোহন। পিঠের কাছে শিথিল করে রাখা ওর টপ হুকটি দুআঙুলের দক্ষ কায়দায় সম্পূর্ণ খুলে নিল সে। ফিহা চোখ মুদিয়ে নেওয়া নীরব রুদ্ধ নিঃশ্বাসে প্রতিটি স্পর্শ, কম্প, একটু একটু করে ওর কাছ থেকে বুঝে নেওয়া এই কর্ম, দুকূল ছাপানো নব আবেগের উদ্বেলিত প্রখরতাটুকু . . প্রাণপণ অনুভব করতে পারে। অনুভব করতে পারে ওর ওভারসাইজ ব্লাউজটা একটু ঢিলে হয়ে বড়ো গলাটার কাছে উন্মোচিত হয়েছে সেই আজন্ম দাগটুকু। বড্ড নিভু নিভু শিখার মতো কাঁপছে ওর চোখের পাতা, মুখের আদল, বাঁ পায়ের স্থিরতাটুকু। যেকোনো মূহুর্ত্তেই বুঝি ব্যালেন্স বিগড়ে শরীরি ভরটুকু ফ্লোরে পরে যাবার দুর্ভাবনা আছে। সাঈদ উন্মুক্ত করে ফেলা কাঁধের সুসদৃশ বিউটি বোন হাড্ডিটার একটু নীচে পরোখ দৃষ্টিতে তাকাল। অমন ফুটফুটে সুন্দর চামড়ায় কেন এই রক্তাভ দাগটুকু? কেন? জন্মের সময় এখানে ব্যথা পাবার ফলে এরকমটা হয়েছে কী? ডাক্তারি লাইনে কোনো জ্ঞান না থাকায় সে আঁচ করতে পারল না এটা। মুখ এগিয়ে দুচোখ বন্ধ করে লালবর্ণের রক্তাভ চামড়াটায় দুঠোঁট ছোঁয়াল সাঈদ। গভীর, প্রগাঢ়, নিবিড়ভাবে চুমু খেল ওইটুকু গোপন নিভৃত স্থানে। আচমকা ঘুমন্ত শহরে ছুটে বেড়ানো হুঁ হুঁ বাতাস সাঈদের ঝলমলে চুলগুলো আজও পৈশাচিক হাসিতে উড়িয়ে দিতে চাইলে, কারো কোমল হাতের কল্যাণে তা একটুও পারল না। মন বেজার করা হাওয়ার দল ভ্রুঁ কুন্ঞ্চন করেই ছুটে পালাল। সাঈদের চুলগুলো যে এখন সপ্তদশী মেয়েটির হাতে ভীষণ আদর পাচ্ছে, মুঠোবন্দি করা আঙুলের ফাঁকে আবদ্ধ রয়েছে তারা। ঘোর সর্বস্ব আবেশে প্রতাপদর্প হাতদুটি ওর পিঠের কাছটায় খাবলে ধরলে চরম উচ্চরবে আর্তনাদ করে উঠে ফিহা। প্রচণ্ড দাউদাউ করা দুর্বিসহ যন্ত্রণায় চিলিক দিয়ে উঠেছে ওর দ্বিতীয় চোট! আগুন ঝলসে যাওয়া চামড়ায় লবণ ঘষার মতো অসহনীয় যন্ত্রণায় চোখমুখ কুঁচকে এসেছে ওর। সাঈদ তৎক্ষণাৎ মদিরা মূহুর্ত পাশ কাটিয়ে সর্বপ্রথম ওর পায়ের দিকে চিন্তিত চোখে তাকায়। সে তখনো জানে না, পায়ের ব্যথাটা ছাড়াও অন্য আরেক চোট যে ফিহার শরীরে ক্ষতচিহ্ন হয়ে আছে। নিজেকে অশ্রাব্য, কটু, হাজারটা গালাগাল দিতে দিতে দ্রুত ওকে শূন্যে তুলে নেয় সাঈদ। ভুলবশত আবারও পিঠের ওই জায়গাটায় বিশ্রীভাবে ব্যথা লাগলে অসম্ভব যন্ত্রণায় কাতরে উঠে ফিহা। এবার সাঈদ অবস্থা দেখে ধারণা করতে পারল ঠিক কোথায় পেয়েছে চোটটা। রুমে ঢুকে বিছানায় বসিয়ে টাস করে রুমের লাইটটা জ্বালিয়ে দিতেই সে এসে বসল ফিহার পিছু। সাবধানের সাথে দ্রুতগতিতে সবকটা হুক খুলে নিতেই দুপ্রান্ত ধরে সরিয়ে ফেলল পিঠের আব্রু। অনাবৃত পিঠ দেখে কোনো ঘোর নেশালু প্রতিক্রিয়া কাজ করল না। বরং আবেগের দরজায় সশব্দে তালা মেরে হুংকারের সাথে গরম গলায় সে বলল,
– আমাকে একবারও বলা হয়নি আপনি শরীরে আরেক ইন্ঞ্জুরি নিয়ে বসে আছেন। পিঠে এই অবস্থা কীভাবে করেছেন? সারাটা বিকেল, পুরোটা সন্ধ্যা, সাড়ে নয়টা পর্যন্ত রাত কাবার হলো, কিন্তু আপনি আমাকে কিছু এখনো বলেননি। আপনাকে এই মূহুর্তে কী করা উচিত বলবেন?
ভয়ে, ব্যথায়, অপরাধবোধে সাথে সাথে কোনো জবাব রাখতে পারল না ফিহা। কিন্তু এটুকু নিশ্চিত যে এই দ্বিতীয় চোট নিয়ে কারোর সাথে আলোকপাত করেনি। একমাত্র মাকে জানানো ছাড়া আর কাউকেই এ বিষয়ে কিচ্ছুটি মাত্র বলার জন্য বারণ করেছিল ও। পিঠের চোটটি ডানদিক থেকে বাঁকা হয়ে লম্বা চিড় হয়ে কেটেছে। চিড়টি বেশি গভীর না হলেও লম্বা ক্ষতটা চামড়া উঠে রক্তিমবর্ণে ফুলে ফুলে উঠেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে এ যেন একটা ফোলা ফোলা লাল ক্ষুদ্র ড্রাগনের চিত্র। সেসময় বুঝতেও পারেনি, ওরকম একটা একান্ত মূহুর্ত্তের সময় ওভাবে পিঠে হাত রাখবে সাঈদ। দোষ তো তাঁরও নেই। সে তো জানতো না কিছুই। ফিহা দোনোমনা করতে থাকা অবস্থায় ব্যথায় ঝাপসা হয়ে যাওয়া চোখদুটো মেলে বলল,
– সিঁড়ি থেকে পরে যাওয়ার সময় এটা হয়েছে। এ বিষয়ে কাউকে কিছু জানানো হয়নি। শুধু মা জানে। এটা জামার চেইনের সাথে বাজেভাবে লেগে এমন বিশ্রী অবস্থা হয়েছে।
– গাড়িতে আসার সময় বলা যায়নি? রুমে আসার সময় তখনো কী বলা যায়নি? আপনি সেম টু সেম মায়ের মতো হয়েছেন। শোকেজ বিহেবিয়ার।
তুমুল যন্ত্রণায় ভেতর দাঁত চিবিয়ে কুঁকড়ে বসে থাকলে ফিহা ‘শোকেজ বিহেবিয়ার’ শব্দদুটো শুনে আর্দ্র চাহনিদুটো ওই লোকটার দিকে ফেলল। এই শব্দদুটোর মানে কী দাঁড়ায়? শোকেজের মতো উপরি উপরি শো করা আচরণ? আদৌ কী খালামণি জানে, তাঁর পুত্রধন তাঁকে কাঁহাতক পর্যন্ত সার্ফ এক্সেল পানিতে ধুয়ে দিচ্ছে? একটু আগে কী চমৎকার আচরণ, আর তুড়ি বাজাতেই রূপ বদলানো বীভৎস রূপ? শর্ট টেম্পার্ড মাথাটা হুবহু জননীর কর্মকাণ্ড সব পরমা স্ত্রীর মাঝে প্রকট পেতে দেখে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। ঠাস করে আলমারির দ্বারদুটো খুলে ভেতর থেকে ছোট্ট টিউব, রাতের পোশাক হিসেবে ঘরোয়া ট্রাউজার এবং ব্যতিক্রমী হিসেবে আজ থেকে টিশার্টটাও পরে ঘুমোতে হবে। আলমারির পাশে হাঁটু ভেঙে বসতেই রাখা ফিহার লাগেজটা খুলে হাতড়ে হাতড়ে সুতির ঢিলেঢালা, পিঠে লম্বা চেইন দেওয়া গোলাপি কামিজটি পছন্দসই হলো। ওর যেহেতু পাজামা পরার জন্য অন্যের সাহায্য হিসেবে মা বা সুফি খালাকে লাগতে পারে, তাই সেসব ডাকাডাকির কথা চিন্তা করে আজ রাতটুকু সাদা একটি পেডিকোট বের করল সাঈদ। দুটো পোশাকই বিছানার উপর ফেলে রুমের লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে বলল,
– পিঠে চেইন লাগাবেন না। আমি মেডিসিন লাগিয়ে দিব। ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে যাচ্ছি, ততক্ষণে কাজ শেষ করবেন।
একটুপর ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করার শব্দ পেতেই ঘুটঘুট্টি অন্ধকারে বুক মথিত করা দমটুকু ফোঁস করে ছাড়ল ফিহা। কথা মোতাবেক গা থেকে বিয়ের শাড়ি, দুহাত ভরা চুড়ি খুলে রেখে ওভাবেই বসে থাকা অবস্থায় সাবধানে বদলে নিল পোশাক। কামিজের বাঁদিককার লম্বা ফালি জায়গাটুকু দিয়ে কোমরের ওখানটায় পেডিকোটের দড়িদুটো বেঁধে নিতেই খটাশ করে দরজা খুলার শব্দ হল। গলায় ঝুলোনো তোয়ালেটা দিয়ে সাঈদ ভেজা মুখ মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
– শুয়ে পড়ুন। বিছানার যে সাইডে ইচ্ছে সে সাইডে ঘুমাতে পারেন।
– ধন্যবাদ।
ঠোঁট মুচড়ে খুব সাবধানে ডান পা-কে একটুও কসরতে না ফেলে বিছানার বাঁদিকটা দখল করল ফিহা। সিথানের বালিশটি ঠিকঠাক করতেই বিছানার খালি অংশটুকুতে উঠে এলো সাঈদ। নিজ বালিশে মাথা রেখে সটান বিছানায় শুয়ে পড়লে একটা সাংকেতিক ইশারায় গলাটা খাঁকারি দিয়ে উঠল। মুখ ফিরিয়ে ফিহা তার পানে চাইলে সাঈদ একটা হাত মাথার নীচে ঢুকিয়ে বলল,
– গতকাল রাতে নিশ্চয়ই উপুড় হয়ে ঘুমিয়েছেন? মেবি আজকের মতোই পিঠ খোলা রেখে। এখন এখানে আসুন। আমি বিছানার মতো নরম নই। কিন্তু হোপ দ্যাট আমার বুকে ঘুমুতে পারবেন। আসুন।
#FABIYAH_MOMO .
#