#নির্মোচন . ❤
#পর্বসংখ্যা_২৬ .
#ফাবিয়াহ্_মমো .
অশনি ঝড়ের পূর্ব সংকেত কিনা জানা নেই নাবিলা হক ফিহার। বুকের ভেতরটা অস্থির হয়ে চরম বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। মুখে কোনো কথাই বলতে পারল না সেই মূহুর্তে! সেদিনের সেই বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় চরম অপমানিত হয়ে এই ব্যক্তি আর দ্বিতীয়বার মুখ দেখায়নি! তবে, আজ কেন এ তল্লাটে এসেছে এই অদ্ভুত ব্যক্তি? ঠোঁটের আগায় ঝুলতে থাকা রহস্যময় হাসিটা তখনো সেভাবে জিইয়ে রেখে ফের প্রশ্ন করল ইয়াসিন,
– খালামণির বাড়িতে কেমন কাটাচ্ছ বললে না তো ফিহা? আসো, ভেতরে আসো। আমি মাত্রই এসে পৌঁছালাম।
কোনো প্রত্যুত্তর করল না ফিহা। চোখদুটো ঘুরিয়ে বাবা নামক মানুষটার দিকে এক ছটাক বিষ্ময় ঢেলে বলল,
– বাবা, তুমি কি জানতে আজ স্যার আসবেন?জানলে আমাকে বলোনি কেন?
মেয়ের চোখেমুখে বিষ্ময়ের ঢেউ দেখে ভদ্রলোক ফিচেল হেসে প্রত্যুত্তর করলেন,
– না। আমিও তো জানতাম না ইয়াসিন আজ আসবে। ওর আসার কথা ছিল নাকি হলুদের দিন, কিন্তু কী একটা কাছে ব্যস্ত হয়ে শেষপর্যন্ত আসাই হয়নি। তাই আজ সময় পেয়ে বৌভাতের দিন এসে পরেছে। আচ্ছা, তোর মা কোথায় বলতে পারিস?
বাবার কথা শুনে মনের অস্থিরতা কয়েক ডিগ্রী কমলেও ভেতরে ভেতরে স্বাভাবিক হতে পারেনি। মায়ের প্রসঙ্গ এসে পরাতে গলা সাফ করে বলল,
– শৈলী আন্টিদের ওখানে গিয়েছে। আমি কি মাকে ডেকে আনব?
– না, থাক। অতো বিশেষ প্রয়োজন নেই। সেখান থেকে ফিরলে বলবি, আমার পান্ঞ্জাবীটা বের করে রাখতে। কাল দুপুরের দিকে বাস ধরতে হবে এটাও বলে রাখিস। আসো ইয়াসিন।
রুম থেকে সদ্য আগত ইয়াসিনকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন নিয়াজ উদ্দীন। ভদ্রলোক জানেন না, আফসানার ওখানে কি ধরণের চোস্ত ভাষাতে অপমানিত হয়েছে ইয়াসিন মাহমুদ। ফিহা রুমের দরজাটা চাপিয়ে দিতেই শূন্য রুমের ভেতর অস্থির ভঙ্গিতে পায়চারী করতে শুরু করল। ওর এখনো মনে আছে দীপ ভাই যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য গোঁ ধরে বসেছিল, তখন দুলাল খালু আর রোকসানা খালামণি দূরত্বের জন্য একমাত্র ছেলেকে রাজশাহী পাঠাতে চাননি। এর মধ্যে ভাইয়ার সব বন্ধুরা তখন মেডিকেল লাইনে পড়ার জন্য তুমুল যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। তিনমাসের জন্য সেখানকার একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তির জেদ শুরু করলে বাধ্য হয়ে দুলাল খালু বাবার সাথে পরামর্শ করেন। সেই পরামর্শের মারফতেই বাবা তখন দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়ের সাহায্যে ইয়াসিন স্যারের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন। কেননা, বাবার কাছে কিছুদিন আগেই ইয়াসিন স্যারের সমস্যাটা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। এরপর দু’জনই তিনমাসের সময় বেঁধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পাড়ি দিয়ে ফেলে। সেই সূত্রেই দীপ ভাই আর ইয়াসিন স্যারের মধ্যে সাদামাটা একটা সম্পর্ক শুরু হয়েছিল। যদিও সেই সম্পর্ক ক্যালেন্ডারের পাতা বদলানোর মতো আস্তে আস্তে ফিকে হতে থাকে এবং একপর্যায়ে সেটা কমতে কমতে সম্পর্কে কিছুটা জং ধরে। ফিহার মনে হচ্ছে স্যার এখানে কিছু একটা ঝামেলা করার উদ্দেশ্যেই এসেছেন। ওর মেয়েলী ইন্দ্রীয় কোনোভাবেই ব্যাপারটা সাধারণ ভাবে নিতে পারছে না। যদি বাবার কাছে সেই পরতে পরতে বাহুবন্ধনে আঁটকে পরার দৃশ্যটুকু বলে দেয়, তাহলে সত্যিই অনর্থ হয়ে যাবে বাড়িতে। বিশ্বাস নেই। ওই মহাধূর্ত লোকটা কেন সেদিন কফিম্যাটের বাহানায় রুমে থাকতে কড়া নির্দেশ দিয়েছিল, সেটাও একটু আধটু আঁচ করতে পেরেছে ও। এই জুনায়েদ সাঈদ নির্ঘাত রগে রগে ফোস্কা ধরিয়ে স্যার ব্যাটাকে অপমান করেছে। তবু যদি ফোস্কা গলিয়ে স্যার এখন এসে থাকেন, তাহলে নিশ্চিত যে, কঠিন একটা ঝামেলা ছাড়া ফিরে যাবেন না। কেউ কী অপমানের হিসাব এমনি এমনি ভুলে যায়? জীবনেও না!
নীচের ঠোঁটটা দাঁতে কামড়ে অস্থির চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পরলে হঠাৎ দরজায় ‘ঠকঠক’ করল কেউ। চট করে পাদুটো থামিয়ে শব্দ উৎসের দিকে তাকাল ফিহা। দরজা ঠেলে উঁকি দিয়ে আছে ফাহাদ। মুখ জুড়ে হাস্যোজ্জ্বল ছায়া টেনে প্রসন্ন গলাতে বলল,
– ভেতরে আসব ছোটু?
মুখের উপর থেকে চিন্তার প্রলেপটা আস্তে করে সরিয়ে প্রফুল্ল হাসিতে ফিরে আসলো ফিহা। সম্মতি জানিয়ে প্রাণখোলা হাসিতে বলে উঠল,
– কী কাণ্ড আল্লাহ্! ভেতরে আসতে ওভাবে অনুমতি লাগবে? ফাহাদ ভাই, চট করে এসে পড়ুন।
দরজা ঠেলে হাসতে হাসতে ঢুকে পরল ফাহাদ। ডানহাতে তার নিত্যসঙ্গী মাঝারি সাইজের কালো চামড়ার একটি বিশেষ ব্যাগ। অন্যহাতে যত্ন করে ধরা কাপড়ের শপিংব্যাগটি ওর দিকে বাড়িয়ে বেশ খুশি খুশি কণ্ঠে বলল,
– এবার অ্যাপ্রুভালটা দিয়ে দিয়ো নাবিলা। ‘খ্যাঁকশিয়াল’ অতোটা খারাপ না, যতোটা নিজেকে শো করে। নাও.. তোমার জন্য পাঠানো হয়েছে। চেক দিয়ে বলো ঠিকঠাক আছে কিনা।
এমন কথার সুক্ষ্ম মানেটা বুঝতে পারল না ফিহা। ‘খ্যাঁকশিয়াল’ শব্দটা শুনে হাত থেকে চুপচাপ শপিব্যাগটা বুঝে নিল। দু’খানা ভ্রুঁ কুন্ঞ্চন করে ব্যাগের ভেতর তাকাতেই তৎক্ষণাৎ সারামুখ আকণ্ঠ লজ্জায় নিভু নিভু হয়ে যায়! খ্যাঁকশিয়াল তো ওরই দেওয়া বিশ্রী একটা উপাধি ছিল! এটা কী করে ভুলে গেল? ব্যাগের ভেতরে সদ্য কেনা জুতোর বাক্স। বাক্সের সাইজ চার্টে যেই ছোট্ট সংখ্যাটা দেখা যাচ্ছে, সেই সাইজটা খাপে খাপ ওরই জুতোর মাপ! এই ক্ষুদ্র মাপটুকুর বিষয়ে এতোটা সুক্ষ্ম-নিগূঢ় অবস্থা দেখে ফিহার বুকের ভেতরটা প্রচণ্ডরূপে কেঁপে উঠেছে! যদি জুতোর মতো তুচ্ছ একটা মাপ ওই চতুর দৃষ্টিতে ধরা পড়ে, তাহলে. . তাহলে সেদিনের সেই ব্লাউজ, সেই ম্যাচিং করা পেডিকোট, দু’হাতের লাল চুড়ি সমস্ত কিছুই . . . সর্বনাশ! সতেরো বছর ধরে একটু একটু করে গড়ে তোলা এই নারীপ্রাসাদের সমস্ত তথ্যই কি তার জানা? অদ্ভুত শঙ্কামিশ্রিত উৎকণ্ঠায় চুপচাপ জুতোর খাপে পা ঢুকাচ্ছিল ফিহা। কালো রঙের ফ্ল্যাট হিল জুতোটা একদম নির্ভুল খাপে আঁটকে গেল! বুঝতে আর বাকী রইল না, কতটা গুরুত্বপূর্ণ নজিরে একেকটি বিষয়, একেকটি গতিবিধি, একেকটি সুক্ষ্ম অনুভূতির বুনন মানুষটা পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। ব্যাগের জিপটা ধরে বাঁদিক থেকে ডানদিক বরাবর টেনে আনতেই ফাহাদ পুরো ব্যাগটা খুলে ফেলল। ভাঁজ করা পৃষ্ঠার মতো ব্যাগটা দুই পার্টে খুলে যেতেই ব্যাগের গায়ে সারি সারি ডাক্তারি ইন্সট্রুমেন্ট ছোটো ছোটো খাপে সেঁটে আছে। সেখান থেকে ছোট্ট একটা এন্টিসেপ্টিক বোতল, সার্জিক্যাল কাঁচি, সার্জিক্যাল চিমটা, মলম ও একপাতা ক্যাপসুল বের করে ঝটপট নিজের হাতদুটো স্যানিটাইজ করে নেয়। ফিহা যে জুতার দিকে চরম আশ্চর্যে জুলজুল চাহনিতে তাকিয়ে আছে, সেটা দেখতে পেয়ে ফাহাদও মিটিমিটি হাসিতে মজা পাচ্ছে। মনে মনে আওড়ালো, —”মাত্র তো শুরু নাবিলা! কার খপ্পরে পরেছ জানোই না।’
ফাহাদ চুপিচুপি ঠোঁট টিপে হাসতে থাকলে অতঃপর গলাটা জোরসে খাকারি দিয়ে শব্দ করল। চমকে উঠে ফিহা জলদি জলদি জুতা খুলে বাক্সে ভরতে শুরু করলে তা দেখে ফাহাদ হাসতে হাসতে বলল,
– খ্যাঁকশিয়ালের চয়েস কিন্তু খারাপ না। কী বলো নাবিলা? পার্ফেক্ট হয়েছে না বলো? যাইহোক, আমি তোমার কানটা ক্লিন করতে আসলাম। ব্যথাটা কী আগের চাইতে কমেছে না বেড়েছে?
খসমস শব্দে জুতোর বাক্সটা বন্ধ করে দাঁড়াতেই চটপট ওটা বিছানায় রেখে দিল। ডানহাতে একটা চেয়ার টেনে ফাহাদের সামনে বসতেই অপ্রস্তুত, লজ্জিত, উৎকণ্ঠিত মনটা খোলসে ঢেকে বলল,
– ব্যথাটা একটু কমেছে ভাইয়া। পুরোপুরি এখনো কমেনি। ভুল করে যখন কানের ওখানে হাত লাগে, অসহ্য ব্যথায় আত্মাটা যেন খাঁচা ছাড়া হয়ে যায়! আপনি পানি লাগাতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু, আজ সকালে মুখ ধুতে গিয়ে পানিটা লেগে গেছে। এতে কোনো সমস্যা হবে ফাহাদ ভাই?
ভদ্র একজন পেশেন্টের মতো গড়গড় করে সবটুকু অবস্থা বলে দিল ফিহা। ফাহাদের হাতে তখন স্যাভশন মাখানো তুলো আর সেই তুলোটা জীবানুমুক্ত চিমটাটার মুখে পেশাদার ডাক্তারের মতো আঁটকে নিচ্ছে। একপলক কিশোরী চপল মুখটার তাকিয়ে দিকে হাসি এঁটে বলল,
– তোমার ইন্ঞ্জুরি সারার দায়িত্ব ‘ইফতিখার ফাহাদ’ নিয়েছে। কীভাবে আন্দাজ করছ সমস্যা হবে? নিশ্চিত থাকো।
হাসি দিয়ে কথাটা বলে দিলেও মনে মনে চিন্তিত সুরে নিজেকেই বলল ফাহাদ, তোমার যদি উনিশ-বিশ কিছু হয় গো নাবিলা, আমার উপর দিয়ে আইলার পূর্ব বংশ ধেয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি সুস্থ হও তুমি। গতকাল রাতেই ফিহা জেনেছে ফাহাদ একজন অভিজ্ঞ শ্রেণীর ডাক্তার। মেডিকেল ডিগ্রিধারী পেশাদার মানুষটা কতটা সুচারু রূপে পেশেন্টের ক্ষত সারাতে কর্তব্যনিষ্ঠ, এবং পেশেন্টের যেন এতটুকু পরিমাণ জুলুম না হোক, সেদিকে কতটা সচল দৃষ্টি রেখে চলে, তা সবটুকুই চাক্ষুষ দেখেছে ও। অথচ, এতোগুলো দিন পার হয়ে গেলেও কেন জানি প্রাণ-প্রফুল্লকর মুখটার নীচে আসল কর্মটা বোঝাই যায়নি! মনে মনে এখন প্রশ্ন জাগছে, যদি কালরাতে ও আহত না হতো, তাহলে কি ফাহাদ ভাইয়ার এই পরিচয়টা আদৌ জানা যেতো? কানের ছিদ্র সহ জায়গাটা টমেটোর মতো রক্তিম হয়ে ফুলেছে। আরো একবার জায়গাটা মুছে দিয়ে সামান্য একবিন্দু মলম চিমটার তুলো দিয়ে ওই জায়গাটায় মাখিয়ে দিল। অতি সন্তপর্ণে নিজের পেশাদারীত্বের প্রমাণ দিতেই ওর হাতে একটা ক্যাপসুল গুঁজে বলল,
– ক্ষতটা শুকিয়ে আসবে নাবিলা। তুমি একদম চিন্তা কোরো না, ঠিক আছে? তুমি এই ক্যাপসুলটা এখন খেয়ে নাও। আমি ঠিক রাতের দিকে আরেকটা ক্যাপসুল দিয়ে যাব।
– হুঁ, ঠিক আছে।
শুকনো মুখে উত্তরটা জানিয়ে দিলেও ফিহার মনে তখন প্রশ্নের ঝড় উঠেছে। একটা-পর-একটা ঘোর কুয়াশার পর্দা কেমন আস্তে আস্তে খসে পরছে না? আচ্ছা, উনারা সবাই এমন লুকোচুরি করে কেন? এতো বড়ো একটা পজিশনে থাকা সত্ত্বেও বিন্দুমাত্র অহং নেই, কী স্বচ্ছ সরল ব্যবহার! পাঁচ বন্ধুর এই ছোট্টদলটা সবার থেকে একটু আলাদা না? কেমন যেন সরল সরল একটা মন নিয়ে একজন আরেকজনের প্রতি সদয় থাকে। বিছানা থেকে তল্পিতল্পা গুছিয়ে ফাহাদ যেই দরজার দিকে যেতে নিবে, ঠিক তখনই ফিহা পেছন থেকে তড়িৎগতিতে ডেকে উঠল,
– ফাহাদ ভাইয়া দাঁড়াবেন? একটা কথা ছিল।
আর দুই পা ফেললেই দরজার সামনে পৌঁছে যেত ফাহাদ, কিন্তু পেছন থেকে ডাক শুনে ওমনেই মুখ ঘুরিয়ে জবাব দিল,
– হ্যাঁ, বলো নাবিলা।
প্রশ্নগুলো এক এক করে সাজিয়ে ফিহা ছোট্ট করে দম নিল। গলাটা ভিজিয়ে প্রস্তুত হয়ে বলল,
– প্রশ্নটা করা ঠিক হবে কিনা জানি না, কিন্তু আমি করব। আমি বেশিক্ষণ প্রশ্ন নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করতে পারি না। ধৈর্য কম আছে। আপনার বন্ধু আমার জুতাগুলো নিয়ে কী করেছে জানতে পারি? প্লিজ, উত্তরটা দিয়ে যাবেন। বুঝতেই পারছেন আমি যার কাছে প্রশ্নটা করব, তিনি আপনার মতো স্বাভাবিক নন। স্বাভাবিক সুরে কথা বলেন না।
বিশেষ ট্রেনিংপ্রাপ্ত ডাক্তার ইফতিখার ফাহাদ একপেশে হাসি দিল। কথাটার মানে সে বুঝেছে। এও বুঝেছে সামনে তার প্রাণপ্রিয় বন্ধুর কপালে শনি আছে। ঘোর শনিটা কীভাবে কাটাবে জানা নেই, তবে সরাসরি তার বন্ধুকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে আখ্যা দেওয়াতে ফাহাদ উপরের ঠোঁটটি নীচের ঠোঁটে চেপে কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
– প্রথমত, তুমি ব্যাপারটা ভুল ভাবছ। ভাবছ যে, তোমার জুতাগুলো নিয়ে সাঈদই কিছু একটা করবে। আসলে ব্যাপারটা তা না। ওগুলো আমার ইন্সট্রাকশনে একটা ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তুমি যে কাল হিল দিয়ে জব্বর আঘাতটা করেছ, এতে ওই হিলে ব্লাড স্যাম্পল লেগে আছে। আন্দাজ করা যাচ্ছে ব্লাড স্যাম্পলটা কোনো না কোনো সূত্র ধরিয়ে দিবে। বুঝতে পেরেছ আমার কথা?
কথাটা শুনে মনঃপূত হলো না ফিহার। আবারও খচখচ মনটা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইলে তার আগেই ফাহাদের দ্বিতীয় জবাবটা ছুঁড়ে আসলো,
– দ্বিতীয়ত, তোমার উপর হামলাটা আমার কাছে সাদামাটা লাগছে না। এটা পুলিশি কেস। কিন্তু, সত্য এটাই পুলিশের কাছে কোনো ফায়দা হবে না। কেন হবে না, এটা আর ভেঙে বললাম না। দেশে এই সিস্টেমের উপর ভরসা কম। উলটো ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেলে সেটা ডেন্ঞ্জারাস লেভেলে যেতে পারে।
এই ব্যাপারটা নিজেও সারারাত ভেবে দেখেছে ফিহা। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একমাত্র ফিমা আপু ছাড়া বাবা-মা কাউকেই এটা জানাবে না। যত দ্রুত সম্ভব, আপুকে এটা জানিয়ে রাখতে হবে। একটু থেমে এবার শেষকথাটা উচ্চারণ করে উঠল ফাহাদ,
– তৃতীয় এবং লাস্ট কথা, ও অস্বাভাবিক না। স্বাভাবিক-ই। শুধু আশপাশের মানুষ ওর মতো ভাবতে পারে না। যে কথাটা তুমি-আমি ফড়ফড় করে বলে দিতে পারি, ওটা বলার আগে ও একশবার চিন্তা করে। বলবে কি বলবে না, মূল্যায়ন হবে কি হবে না— এই ধরণের যুদ্ধ চলে। এমন মেন্টালিটি নিয়ে যারা বড়ো হয় নাবিলা, তাদের মধ্যে জড়তার ধাক্কাটা খুব বেশি। যখন দেখবে তোমার আপন মানুষরাই চরম অবহেলা করে ছেড়ে দিচ্ছে, তখন মনে হবে তুমি কতটা অযোগ্য। তুমি এখনো বেশ ছোটো। তাই বেশি কথা বললাম না। জাস্ট এটাই বলব— ফলের স্বাদটা পেতে হলে ফলের খোলস ছাড়াতে হয়, মানুষের মন বুঝতে চাইলে হৃদয়ের নির্মোচন ঘটাতে হয়।
ঠোঁটে প্রসন্ন হাসির আভাস ফুটিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ফাহাদ। শেষের শব্দগুলো নূপুরের ঝুনঝুন আওয়াজের মতো কোথায় যেন সুর তুলেছে। একনাগাড়ে কানে তাক লাগানোর মতো সুর, শব্দ। থামছে না, থামল না। ফিহা অন্যমনষ্ক হয়ে শূন্য দরজার পানে সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। কথাগুলো আদৌ বুঝতে পারল কিনা বোঝা গেল না।
#নোটবার্তা— আজকের পর্বে ‘টুইস্ট’ নামক ব্যাপারটা লিখতে পারলাম না। আগামী পর্বের জন্য তুলে রাখছি। একনাগাড়ে টাইপ করতে করতে দু’চোখ জুড়ে ব্যথা উঠেছে। ইনশাআল্লাহ্, নেক্সট পার্টটা দ্রুতই পাবেন। সেই পার্টটা আপনাদের মন জুগিয়ে, ভুলিয়ে, মাতিয়ে দিবে। ঠিকআছে? ❤
#FABIYAH_MOMO .