নিভৃত কুহক পর্ব ১

0
1101

#নিভৃত_কুহক (পর্ব ১)

মার্চ, ২০২২

১.
মুনিয়া আধোঘুমে টের পায় সাব্বির ওকে আদর করছে, বুকের উপর হাত ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিরক্ত হয় মুনিয়া, আজ সারাদিন অফিসে খুব খাটুনি গেছে। তাই বিছানায় যেতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। এর মাঝে সাব্বির এখন এমন করছে। না করে লাভ নেই, উলটো অশান্তি হবে। এই ব্যাপারটায় ওর মতামতের মূল্য খুব সামান্যই। ঘুমের ঘোরে জামা খুলতে খুলতে মুনিয়া ভাবে, আচ্ছা ও দেখতে সুন্দর না বলেই এমন অবহেলা? ও যদি খুব সুন্দর হতো তাহলে কি সাব্বির এমন করত? সুন্দর মানে একটু ফর্সা যদি হতো, তাহলে? এই যে এখন যেমন, সাব্বির ওকে একবারও ভালোবেসে জড়িয়ে না ধরে, চুমু না খেয়েই সরাসরি আদরে চলে গেল।

বাথরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। সাব্বির এখন গোসল করে তারপর ঘুমোবে। মুনিয়া জেগে থাকার চেষ্টা করে, একবার বাথরুমে যাওয়া দরকার। কিন্তু এমন ঘুম পাচ্ছে! সাব্বির ওকে কখনও বাথরুমটা আগে ব্যবহার করতে দেয় না। মুনিয়া বিছানায় বসে ঝিমোতে থাকে।

একটু পরেই বাথরুমের দরজা খোলার শব্দ হয়।

সাব্বির ফুরফুরে মেজাজে বের হয়ে আসে, মাথা মুছতে মুছতে বলে, ‘তুমি যাবে?’

মুনিয়া চোখ মেলে, সম্মতিসূচক মাথা নাড়ে। তারপর আলসেমি ঝেড়ে খাট থেকে নামে। এলোমেলো পায়ে বাথরুমে ঢুকে, সাবান শ্যাম্পুর সুন্দর একটা ঘ্রাণ পায়। পানির কলটা ছেড়ে মুখে ঝাপটা দিতেই ঘুমটা কেটে যায়। গোসল সেরে ফেলবে? সাধারণত ও সকালেই গোসল করে। কিন্তু কেন জানি আজ এখনই গোসল করে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু বের হয়ে জামা কাপড় আনতেও ইচ্ছে করছে না। র‍্যাকের উপর রাখা সাদা টাওয়েলের দিকে তাকাতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, আজ গোসলটা করেই ঘুমোবে।

তিরতির করে পানি পড়ছে, পুরো শরীর জুড়ে একটা আরামদায়ক অনুভূতি। সাবানের ফেনাগুলো পানির স্পর্শে কেমন মিলিয়ে যাচ্ছে, সাথে পুরো শরীরে একটা সুন্দর ঘ্রাণ। পুরো শরীরে হাত বোলাতে বোলাতে বোলাতে মুনিয়া ভাবে, ও কী দেখতে এতই অসুন্দর!

জলের কলটা বন্ধ করে ভেজা শরীরে একবার আয়নার সামনে দাঁড়ায়। শরীরের ভাঁজে ভাঁজে জলবিন্দুগুলো কেমন মোহনীয় ভঙ্গিতে ছুঁয়ে আছে। এমন করে একবারও ভালোবাসে না কেন সাব্বির? না হয় গায়ের রঙটা একটু বেশিই চাপা, কিন্তু ওর শরীরটা তো সুন্দর। কখনও ওর শরীরের খাঁজগুলো আবিস্কার করতে চায়নি ও।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুনিয়া সাদা টাওয়ালে শরীর জড়িয়ে বের হয়। একটাই সমস্যা, চুলগুলো ভেজা। শুকোতে সময় লাগবে। ফ্যানের নিচে এসে দাঁড়ায় ও। সাব্বির এর মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছে, তৃপ্তির ঘুম, নাক ডাকছে। শরীরের ক্ষুধা মিটে গেছে, তাই কেমন শান্তির ঘুম।

মুনিয়া বারান্দা থেকে একটা শুকনো গামছা দিয়ে ভালো করে ভেজা চুলগুলো মুছে নেয়। তারপর চুলগুলো গামছা দিয়ে ভালো করে বেঁধে বিছানায় যায়, পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে ঘুম ভাঙতেই মুনিয়া টের পায় মাথাটা ভার ভার লাগছে, নাকের ভেতর একটা অস্বস্তি। নাহ, কাল অমন ভেজা চুলে ঘুমোনো উচিত হয়নি। একবার তাকায় সাব্বিরের দিকে, কেমন শিশুর মতো ঘুমুচ্ছে।

সাব্বির দেখতে খুব সুন্দর, হ্যান্ডস্যাম। ওর মতো মেয়েকে সাব্বিরের পছন্দ করার কথা না। একটা কারণ অবশ্য ছিল, মুনিয়ার চাকরি। সাব্বির একদম ভ্যাগাবন্ড ছিল, কিছুই করত না। ওর বাবা মারা যাবার পর যখন অকুল পাথারে পড়ে তখন প্রায়ই মুনিয়ার কাছে হাত পাতত। বাবার রেখে যাওয়া কনট্রাকটারির লাইসেন্স দিয়ে টুকটাক কাজ করত কিন্তু তাতে সংসার চলত না। বহুদিন একই এলাকায় ওদের বেড়ে ওঠা, সেই সূত্রে পরিচয়। একটা সময় বিয়ে হয়ে যায়, যদিও সাব্বিরের মায়ের আপত্তি ছিল। কিন্তু আর্থিক নিরাপত্তার হাতছানিতে শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়। তবে পরিহাস এই যে বিয়ের এক বছরের মাথায় সাব্বিরের কনট্রাকটারির ব্যবসা বাড়তে থাকে। একটার পর একটা কাজ পেতে থাকে। আর সেই সাথে ধীরে ধীরে সাব্বিরও পালটে যেতে থাকে। মুনিয়ার গুরুত্ব কমতে থাকে সংসারে।

আজ সকাল সকাল কেন যে এই কথাগুলো মনে পড়ছে, কে জানে। মুনিয়া মন খারাপ নিয়ে মেয়ের ঘরে ঢোকে, পিউ ঘুমাচ্ছে এখনও। ডাকতে যেয়েও থেমে যায়, আজ তো ওর স্কুল বন্ধ। দেখতে দেখতে মেয়েটা বড় হয়ে যাচ্ছে। সামনের মাসেই এগারোতে পড়বে ও। মায়া নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকে। ভাগ্যিস মেয়েটা ওর মতো কালো না। তারপরও সাব্বিরের মা দিলারা বেগম ওর জন্মের সময় মুখ বেঁকিয়ে বলেছিলেন, মেয়ে দেখি মায়ের মতোই কালো হয়েছে। এত কষ্ট লেগেছিল মুনিয়ার! কথাটা আজও কানে বাজে।

নাহ, আজ বড্ড বেশি মন খারাপ হচ্ছে। মুনিয়া মাথা ঝাঁকিয়ে মন খারাপগুলো দূর করার চেষ্টা করে। অনেক কাজ হাতে এখন। নাস্তা বানাতে হবে, দুপুরের তরকারি রেঁধে তারপর ও অফিস যাবে। ভাগ্যিস অফিসটা কাছেই, আর শুরুও হয় দশটা থেকে।

মুনিয়া এবার কোমর বেঁধে নেমে পড়ে কাজে।

২.
আজাদ প্রোডাক্টসের গুলশান শো রুমে মুনিয়া আগ্রহ নিয়ে নীল রঙের একটা বিয়ের কার্ড দেখছিল। নামকরা একজন শিল্পপতি মেয়ের বিয়ে। কার্ডটা খুলতেই ভেতরে ডাই কাটিং করা ঝালরওয়ালা বর-কনের হাত ধরা প্রতিকৃতি। কী যে সুন্দর কার্ডটা! মাত্রই প্রেস থেকে এসেছে, এখনও ঠিকমতো রঙ শুকায়নি। মুনিয়া সন্তুষ্টি নিয়ে প্রেসের ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘সব ঠিক আছে। কিন্তু ভেতরে লেখাগুলোতে কিছু রেজিষ্ট্রেশন আউট আছে। নীলের সাথে অন্য কালার একটু মিশে গেছে। আপাতত অসুবিধে নেই, পাত্রীপক্ষকে আমি বুঝিয়ে বলব।’

এই শো রুমের পুরো দায়িত্ব মুনিয়ার। বছরখানেক হয়েছে ও এখানে জয়েন করেছে। এর আগে বহু বছর আরেকটা নামকরা কোম্পানিতে ছিল। কাজটা ভালোই লাগে, মানুষের আনন্দের মুহুর্তের ছবি বানানো। বিয়ের কার্ডের কাজই বেশি হয়। একটু মন খারাপ হয়, ওর নিজের বিয়েতে কার্ড করা হয়নি। অথচ ও নিজেই এখন হাজারো মানুষের বিয়ের কার্ডে স্বপ্ন বুনে।
পাশাপাশি অবশ্য জন্মদিনের কার্ডের অর্ডার আসে অনেক। আগে ইদ এলে প্রচুর ইদ কার্ড বিক্রি হতো। এখন আর সেসব নেই। কোথায় যে সেই সোনালি দিনগুলো হারিয়ে গেল!

ভাবতে ভাবতে মুনিয়া নিজের ডেস্কে যেয়ে বসে। কম্পিউটারে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। বাপরে, এত বিয়ের কার্ডের অর্ডার পড়েছে! মুনিয়া এবার দ্রুত পুরো লিস্টে চোখ বুলিয়ে নেয়। অনেকে সাথে পছন্দসয় ডিজাইন দিয়ে দিয়েছে। প্রত্যেকের সাথে আবার আলাদা করে বসতে হবে। তার আগে আলাদা করে সবার জন্য ডিজাইন নিয়ে ভাবতে হবে। মুনিয়া এসবে খুব সতর্ক। প্রত্যেক কাস্টমারের জন্য ও আলাদা করে একটা ডিজাইন ভেবে রাখে। তাতে কাস্টমাররা খুব সন্তুষ্ট হয়। ওর বস মিজান ভাইও এজন্য খুব প্রশংসা করে ওর। মুনিয়া একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে ভাবে সবাই ওর প্রশংসা করে, কিন্তু সাব্বির!

ভাবনার এই সময়ে স্টোর এসিস্ট্যান্ট নজরুল হাতে একগাদা পুরনো বিয়ের কার্ড নিয়ে এসে বলে, ‘আপা, এই কার্ডগুলা ফালায় দেওয়া দরকার। অনেক পুরানো কার্ড, স্টোরের এক কোণায় বহুদিন পইড়া ছিল।’

মুনিয়া একবার তাকায়, ধুলোমাখা কতগুলো কার্ড। নাক কুঁচকে বলে, ‘এহ হে, এগুলো এখানে নিয়ে এসেছ কেন। ফেলে দাও না। পুরাতন কার্ড রেখে কী হবে?’

নজরুল অনুমতি পেয়ে খুশি মনে চলে যায়। স্টোর খালি করতে পেরে ও খুশি।

মুনিয়া আবার কম্পিউটারের স্ক্রীণে চোখ রাখতে গিয়ে একটু থমকায়। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে কী যেন একটু ভাবে, তারপর গলা বাড়িয়ে এবার ডাক দেয়, ‘নজরুল, কার্ডগুলো নিয়ে এসো তো।’

এবার নজরুলের হাতে আগের চেয়ে অনেক বেশি কার্ড দেখা যায়। কাছে আসতেই মুনিয়া চোখ কুঁচকে বলে, ‘এগুলো কত পুরনো, বলো তো?’

নজরুল ঠোঁট উলটে বলে, ‘আপা, তেমন কইরা দেহি নাই। দশ বারো বছরের পুরান কার্ডও আছে।’

মুনিয়া একটু ভেবে বলে, ‘তুমি এক কাজ করো, দশ বছরের উপরে পুরানো কার্ডগুলো ফেলো না। আমার মাথায় একটা আইডিয়া আসছে। তুমি দশ বছরের বেশি পুরাতন কার্ডগুলো আলাদা করে নিয়ে এসো আমার কাছে।’

নজরুল বিরক্ত গলায় বলে, ‘এত পুরান কার্ড দিয়া কী হইব আপা?’

মুনিয়া মাথা নেড়ে বলে, ‘কাজ আছে। তুমি যাও, দুপুরের মধ্যে সব গুছিয়ে নিয়ে আসো।’

নজরুল বিরক্ত চোখে একবার তাকায়, এই আপার মাথা আউলা। মিজান স্যার অবশ্য খুব পছন্দ করে। এখন এই ধুলোবালি ঘেটে পুরাতন কার্ড খুঁজে বের করতে হবে। নজরুল স্টোরে ঢুকে প্রথমেই মুখে একটা মাস্ক পরে নেয়। তারপর খুঁজে খুঁজে পুরনো বিয়ের কার্ডগুলো আলাদা করে রাখতে থাকে।

মুনিয়া এবার ওর সিট থেকে উঠে মিজান স্যারের ডেস্কে যেয়ে দাঁড়ায়। স্যার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আগ্রহের সাথে বলে, ‘স্যার একটু আগে নজরুল এসেছিল। স্টোরে অনেক পুরাতন কার্ড জমা হয়েছে সেগুলো ফেলে দিবে। কিন্তু আমি নিষেধ করেছি।’

মিজান ভ্রু কুঁচকে বলেন, ‘কেন নিষেধ করেছ? ওগুলো ফেলে দেওয়াই তো ভালো কিছু জায়গা পাওয়া যাবে।’

মুনিয়া এবার চেয়ার টেনে বসে বোঝানোর ভঙ্গিতে বলে, ‘স্যার আমি দশ বছরের বেশি পুরাতন কার্ড রেখে দিয়ে বাকি সব ফেলে দিতে বলেছি।’

মিজান বুঝতে না পেরে বলে, ‘দশ বছরের বেশি পুরাতন কার্ড রেখে দিয়ে কী হবে? ওগুলোই তো আগে ফেলে দেওয়া দরকার।’

মুনিয়া এবার একটু ঝুঁকে বলে, ‘স্যার, আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে। মানুষ সাধারণত বিয়ের দশ বছর, ১২ বছর, তারপর মনে করেন বিশ বছর পূর্তি এগুলো খুব সেলিব্রেট করে। আমি ভাবছি এই কার্ড দেখে দেখে যাদের দশ বছর হয়েছে তাদেরকে এই বিয়ের কার্ডটাই একটা কপি শুভেচ্ছা হিসেবে পাঠাব। অথবা যাদের একযুগ বা বিশ বছর হয়েছে তাদেরকে আমাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে উপহার স্বরূপ এই কার্ডগুলোর সাথে কেক, ফুল পাঠাব। তাতে করে তাদের বিয়ের সেই পুরাতন মধুর স্মৃতিগুলো মনে পড়বে। এটা এক ধরনের কাস্টমার রিলেশন বলতে পারেন। এতে করে ওনাদের ছেলেমেয়ে অথবা আত্মীয় স্বজন আমাদের কাছ থেকেই বিয়ের কার্ড করতে আগ্রহ বোধ করবে। তাতে আমাদের বিক্রিও বাড়বে। নতুন কাস্টমার তৈরি হবে।’

মিজান অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে, তারপর হঠাৎ দুইহাতে বাচ্চাদের মতো তালি দিয়ে বলেন, ‘বাহ! দারুন আইডিয়া তো! চমৎকার একটা আইডিয়া। মুনিয়া তুমি আসলেই একটা জিনিয়াস। এমন সুন্দর একটা আইডিয়া এনেছ সত্যিই একদম ইউনিক। এমডি স্যার জানলে ভীষণ খুশি হবে। যাও, এখনই কাজে লেগে পড়ো।’

মুনিয়ার মনটা ভালো হয়ে যায়। আজ সকাল থেকে যে অযথা মন খারাপটা বয়ে বেড়াচ্ছিল এখন একদম উধাও। কাজের স্বীকৃতি একটা বড় অনুপ্রেরণা, ও ভাবে।

দুপুর নাগাদ নজরুল মোটামুটি গোটা তিরিশেক কার্ড এনে ওর টেবিলের উপর রাখে। তারপর নিরাসক্ত গলায় বলে, ‘আপা, আর নাই। এই কয়টাই খুঁইজা পাইলাম।’

মুনিয়া একবার তাকায় কার্ডগুলোর দিকে। একেকটা একেক রকম। মুনিয়া মাথা নেড়ে বলে, ‘নজরুল অনেক ধন্যবাদ। একটা দারুণ কাজ হয়েছে।’

নজরুলের মুখে এবার হাসি দেখা যায়।

মুনিয়া কার্ডগুলোর দিকে হাত বাড়াতে যেয়েও থেমে যায়। লাঞ্চ করে নেওয়া যাক। হাত ধুয়ে এবার ও ব্যাগ থেকে খাবারের বক্সটা বের করে। তার আগে একবার বাসায় ফোন করে পিউ এর সাথে কথা বলে নেয়।

খাওয়া শেষে এক কাপ চা নিয়ে এবার আয়েশ করে পুরনো বিয়ের কার্ডগুলো দেখতে থাকে। একটা জিনিস লক্ষ্য করে কার্ড যত পুরনো ডিজাইনগুলো ততই সাদামাটা, কিন্তু ভেতরের লেখাগুলোতে আন্তরিকতার ছোঁয়া আছে।

কার্ডগুলো দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা কার্ডে এসে ও থমকে যায়, কালো রঙের একটা কার্ড, তাতে ছেলে আর মেয়ের ঝাপসা অবয়ব। মুনিয়া একটু অবাক হয়, বিয়ের কার্ড কালো রঙের হয় না, সাধারণত ও দেখেনি। কৌতুহলী হয়ে কার্ডটা খুলতেই ও বিস্মিত হয়ে দেখে ভেতরেও কালো ব্যাকগ্রাউন্ড তার উপর রুপোলি হাতের লেখা, একটা কবিতা –

“কৃষ্ণকলি কেউ বলে না তাকে
কালো তাকে বলে পাড়ার লোক
মেঘলা কোথা, সব ক’টা দিন খরা
কেউ দেখে না কালো হরিণ চোখ”

একজন দেখেছে, আর সেই মানুষটার সাথেই আমার বিয়ে। আপনাদের দাওয়াত রইল।
– রেহনুমা।

মুনিয়া স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে থাকে। বুকের ভেতর একটা মন কেমন করা হাওয়া টের পায়। ওর মতোই গায়ের রঙ নিয়ে কষ্ট পাওয়া একটা মানুষ। কতটা কষ্ট পেলে বিয়ের কার্ডেই সেটা লিখেছে। আর সেজন্য বুঝি কার্ডটা কালো। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে মুনিয়ার। ঝাপসা চোখে বিয়ের তারিখটা দেখে, ৩০ মে, ২০০৩। প্রায় উনিশ বছর আগের!!

মুনিয়ার ভীষণ ইচ্ছে করছে রেহনুমার জীবনটা জানতে, বিশেষ করে যে মানুষটা ওর কালো হরিণ চোখে মায়া খুঁজে পেয়েছিল। তাহলে কি মায়াটাই আসল? গায়ের রঙ না?

মুনিয়ার খুব জানতে ইচ্ছে করে সেই মায়ার গল্পটা সেটা কি আজও একই রকম আছে নাকি সময়ের সাথে পালটে গেছে?

(চলবে)

মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সুবাস
শিমুলতলী, গাজীপুর
১৬/০৪/২০২৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here