#নতুন_শহরে
#কুরআতুল_আয়েন
২.
ইসুর আজকে ভার্সিটির প্রথম দিন।অন্যদের অনেক দিন হলেও তার প্রথম দিন।তার আছিয়া খালার মেয়ে রুমুর সাথে ভার্সিটিতে এসেছে।ভার্সিটিতে আসার আগেই রুমু লিফট কীভাবে চালাতে হয় তা শিখিয়ে দিয়েছে।লিফট চালানো শিখে ইসু অনেকটা হাফ ছেড়ে বাঁচলো।ওইদিন এই লিফটের জন্যই তাকে বালতি হাতে নিয়ে কি দৌড়া টাই না দিতে হয়েছিলো।সেইদিনের কথা মনে পড়লে ইসু অনেকটা কূপবাতির মতো নিভু নিভু হয়ে যায়।তারপরও,তার কাছে লিফটে উঠে অনেক ভালো লেগেছে।
রুমু আর ইসু এক ডিপার্টমেন্ট হওয়ায় ইসু মনে মনে অনেকটাই শান্তি অনুভব করলো।ইসু সোজা রুমুর সাথে ক্লাসে চলে গেলো।মাঝখানের একটা বেঞ্চিতে বসে আশেপাশে চোখ বুলাতে লাগলো।রুমু ফোন নিয়ে ব্যস্ত।একটু পরেই একটা মেয়ে এসে রুমুকে বলে উঠলো,
‘আজকে তুই আমাকে ডাক দিলি না কেনো রুমু।’
ফোন থেকে চোখ সরিয়ে রুমু টুম্পাকে দেখে জিহবায় কামড় বসিয়ে দিলো।মুখটাকে বাচ্চাদের মতো করে বললো,
‘একদমই ভুলে গিয়েছিলাম টুম্পা।আসলে,ইসু তো নতুন তাই আজকে ওকে নিয়ে অনেকটা আগেই বেরিয়ে পড়েছি।’
ইসু এতোক্ষণ তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো।রুমুর মুখে টুম্পার নাম শুনে ইসু লিফটের ওই ভদ্রমহিলার কথাগুলো মনে পড়ে যায়।ইসু ভেবে নিয়েছে তাহলে এটাই হচ্ছে টুম্পা।টুম্পা নামটা মুখ আসতেই ইসু জোর গলায় গান গেয়ে উঠলো,
ও টুম্পা সোনা দুটো হাম্মি দেনা–গানটা পুরোপুরি শেষ না করেই ইসু মুখে হাত দিয়ে দিলো।টুম্পাকে নিজের দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে জানালার পাশে একটু চেপে বসে বাহিরে মনোযোগ দিলো।
টুম্পা এখনো ইসুর দিকে তাকিয়ে আছে কটমটানি চোখ নিয়ে।এইদিকে রুমু হাসতে হাসতে শেষ।ইসুকে বরাবরই রুমুর অনেক ভালো লাগে।সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে ইসুর বোকা বোকা কথাগুলো শুনলে।
ইস্পাত দ্রুত গতিতে ক্লাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।গণিতের টিচার সে।বলতে গেলে ভার্সিটিতে টিচার পদে নতুনেই জয়েন করেছে।তার উপর আবার ক্লাস টিচার।সব মিলিয়েই তাকে অনেকটা ব্যস্ত থাকতে হয়।তাও,সময় বের করে একটু বাহির থেকে ঘুরে আসে।রিফ্রেশ মাইন্ডের খুব প্রয়োজন।না হলে মাথায় ভাইরাস ঢুকে ফোনের মতো হ্যাং হয়ে যাবে।
ইস্পাত ক্লাসে ঢুকতেই সব ছাত্র-ছাত্রীরা দাঁড়িয়ে পড়লো।টুম্পা তো ইস্পাত কে দেখে এতো অল্প সময়ে পাঁচ বার তার চুলে হাতও চলে গিয়েছে।চুল ঠিক করে সুন্দর করে দাঁড়িয়ে ইস্পাতের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে।
সবার দাঁড়িয়ে পড়েছে দেখে ইসুও দাঁড়িয়ে পড়লো।সামনে তাকিয়ে স্যার হিসেবে ইস্পাত কে দেখে ইসুর চোখ চড়কগাছ।ইসু মনে মনে ভাবছে,ইয়া আল্লাহ্!উনিই এই ভার্সিটির টিচার।ওইদিন তো উনার মুখে শুনেছিলাম উনি ভার্সিটির শিক্ষক।তাই বলে একদম এই ভার্সিটির শিক্ষক তা কিছুতেই ভাবতে পারি নি।ইসু কিছুক্ষণ থেমে আবারও মনে মনে ভাবতে লাগলো,
যেহেতু এই ভার্সিটি তে টুম্পা সোনা পড়ছে তাহলে তো উনিই ক্লাস টিচার হবে।ওইদিন তো ভদ্রমহিলা টা এটাই বলেছিলো ইস্পাত দাদাকে।ইসস!আমি কি ইস্পাত দাদাকে দাদা বলবো নাকি স্যার!!
কোনো এক বিশেষ কারণে ইসুর দাদা ডাক টা খুব ভালো লাগে।তার বাড়ির পাশেই একটা হিন্দু পরিবার থাকে।সেই পরিবারের জনসংখ্যা অনেকটাই বেশি।যাকে বলে যৌথ পরিবার।সেখান থেকে ইসু দাদা ডাক টা শুনেছে।তারপর থেকেই এই ডাকটার উপর সে মন দিয়ে ফেলেছে।
এইসব ভাবতে ভাবতে ইসু যখন দেখলো সবাই বসে গিয়েছে আর সে শুধু কারেন্টের পিলারের মতো দাঁড়িয়ে আছে তখনই চটজলদি করে ধপাস করেই বসে পড়লো ইসু।খুব মনোযোগ সহকারে ইস্পাত কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।ইস্পাত কে শার্ট,প্যান্ট,ব্লেজার কালো পড়তে দেখে ইসু মুখটা অন্ধকার করে বললো,
‘উঁহুহু!ইস্পাত দাদা কালারের কম্বিনেশন জানেন না।সব কালো না পড়ে,গাঢ় গোলাপি অথবা হলুদ পড়লেও ভালো লাগতো।প্যান্ট টা হলুদ পড়লেও বানাতো।কালোর সাথে যেকোনো কালারেই ফুটে।’
ইস্পাত খাতায় কিছু লিখে নিজেকে তৈরি করে নিলো ক্লাস নেওয়ার জন্য।সামনে তাকিয়ে হঠাৎ চোখ পড়লো ইসুর দিকে।সেখানে দাঁড়িয়েই ইস্পাত কিছুটা ভড়কে গেলো।ইস্পাত মোটেও ভাবতেও পারে নি ইসুকে এই ভার্সিটিতে দেখবে।তবে,ইসুকে দেখে তার খুব রাগ হচ্ছে।একটার পর একটা ঘটনা তার চোখের সামনে টিভির পর্দার মতো ভেসে উঠছে।তাই ইস্পাত ককর্শ কন্ঠে ইসুকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘আমার ডান পাশের সারির ছয় নম্বর বেঞ্চে জানালার পাশে বসা মেয়েটি দাঁড়াও।’
সব ছাত্রী ছাত্রীরা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে।হুট করে ইস্পাত এইরকম একটা কথা বলায় সহজে ধরতে পারে নি।তবে,ইসু ঠিক সেই মুহুর্তেই ধরে নিয়েছে ইস্পাতের কথাটি।তাই,সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ইস্পাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইস্পাত খুকখুক করে কেশে বললো,
‘নতুন তুমি?’
ইসু মাথা নাড়িয়ে বললো,
‘জ্বি ইস্পাত দাদা!না মানে স্যার।’
ইসুর কথা শুনে ক্লাসের হাসির রোল পড়ে গিয়েছে।টুম্পা তো পারছে না ইসুকে গিলে খেতে।এতো সুন্দর একটা মানুষকে দাদা বলাটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।ক্লাসে হাসির শব্দের আওয়াজ পেয়ে ইসু সবার দিকে একবার তাকিয়ে ইস্পাতের দিকে তাকালো।ইস্পাত যে তার দিকে চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে তা ইসু ঢের বুঝতে পেরেছে।তাই তো বারবার শুকনো ঢোক গিলছে।
ইস্পাত কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো।কি রিয়েক্ট করবে তা নিতান্তই ভুলে গিয়েছে।তবে ইস্পাত ভেবে পাচ্ছে না,মেয়েটা কেন তার সাথে এইসব করে।আবোলতাবোল বলে একদম মাথা শেষ করে দেয়।ট্রেনে তার নামটাকে পর্দাথের পড়া বানিয়ে দিয়েছিলো আর এখন তাকে দাদা বানিয়ে দিলো।
সবার হাসাহাসি বেড়ে যেতেই ইস্পাত রাগে সবাইকে থামিয়ে দিলো।বুকে হাত গুজে ইসুর দিকে তাকিয়ে দ্বিগুণ পরিমাণে চেঁচিয়ে বললো,
‘নাম কি তোমার।’
ইসু স্বাভাবিক ভাবে বললো,
‘জ্বি ইসু।’
ইস্পাত কিছুক্ষণ মাথা নাড়িয়ে বললো,
‘আমি!মল,প্রসাব মিশ্রিত নদীর পানি বোতলে করে নিয়ে এসেছি এবং,সেই বোতলের পানি দিয়ে কুলকুচিও করেছি!!
এইটার ইংলিশ কি হতে পারো বলো??’
ইসু মুখ হা করে তাকিয়ে আছে ইস্পাতের দিকে।এইরকম একটা প্রশ্ন করবে সে কিছুতেই ভাবতে পারে নি।তাও আবার ম্যাথ ক্লাসে।তাই ইসু আলুথালু হয়ে তাকিয়ে আছে ইস্পাতের দিকে।
ইস্পাত তাড়া দিয়ে বললো,
‘কি হলো ইংলিশ টা বলো!তুমি ইংলিশ টা বললেই আমি ক্লাস শুরু করাবো।’
ইসু নখ কামড়ে ভাবছে কি হতে এই বাক্যের ইংলিশ।এতো চেষ্টা করেও পারছে না ইসু।
আর এইদিকে ইস্পাত বেশ মজা পাচ্ছে।অবশ্য,সেও এই বাক্যের ইংলিশ জানে না।শুধু তার মনে হয়েছে ইসুকে খোঁটা দেওয়া দরকার তাই সে এইরকম একটা লেইম প্রশ্ন করেছে।
—-
ক্যান্টিনে গালে হাত দিয়ে বসে আছে ইসু।বারবার ক্লাসে ইস্পাতের করা প্রশ্নটা মাথায় ঘুরছে।ইস্পাত যে তাকে ইচ্ছা করেই এইরকম একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছে তা ঠিকই বুঝতে পেরেছে।কিন্তু,উত্তর জানা থাকলে সে কখন ইস্পাতের মুখের উপর একদম ইস্পাতের মতো উত্তর ছুঁড়ে দিতো।কিন্তু,কপাল মন্দ হলে যা হয় আর কি।
পাশের চেয়ারে রুমু এসে ধপাস করে বসে পড়লো।অনেক মানুষের ভিড় ঠেলেঠুলে অবশেষে তার আর ইসুর জন্য একটা বার্গার ওর্ডার দিয়ে এসেছে।ইসু এখনো আগের মতোই বসে আছে।রুমুর এখন ইসু কে দেখলেই শরীর কাঁপিয়ে হাসি আসে।তাদের ভার্সিটির সবচেয়ে ইয়ং স্যার কে দাদা বানিয়ে দিলো।
কিন্তু ইসুর বাই কি করার আছে,সে তো স্যার বলতে গিয়ে মুখ ফঁসকে দাদা বলে ফেলেছে।হুট করেই যদি কেউ ঝড়ের গতিতে প্রশ্ন করে বসে তখন তো একটু গোলমেলে লাগবেই।যেমনটা হয়েছে ইসুর।
ইসুর ভাবনা আর রুমুর মুখ টিপে হাসার মধ্যেই দুইটা বার্গার চলে আসলো।রুমু মিষ্টি হেসে বললো,
‘ইসু খেয়ে দেখ বার্গার টা।অনেক মজা পাবি।আমাদের ভার্সিটির ক্যান্টিনে এই বার্গার টাই বেস্ট।বাকি গুলোতে স্বাদের খাপছাড়া আছে।’
ইসু রুমুর কথা গুলো শুনে খুব মনোযোগ দিয়ে তাকালো সামনে রাখা বার্গার টার দিকে।এইটার নাম যে বার্গার তা ইসু জানতোই না।সে তো সবসময় ভাত,আলু ভর্তা,ডাল ভর্তা খেয়েছে।মাঝেমধ্যে ঈদে গরুর মাংস খেয়েছে।এইরকম খাবার এইপ্রথমেই দেখলো।
রুমু চোখের ইশারায় বার্গার টা দেখিয়ে বললো,
‘নে খাওয়া শুরু কর।অনেক মজা পাবি।’
ইসু সাহস করে হাতে বার্গার টা নিয়েই নিলো।কিন্তু,
সারাহাতে সস ভরে যেতেই ইসু পড়লো বিপাকে।কোথায় মুছবে তা বুঝতেও পারছে না।ব্যাগে না আছে রুমাল আর না আছে কোনো লুঙ্গি ছিঁড়া।তাই হাতে লেগে থাকা সস টা নিজের লাল রঙের ওড়না টায় মুছে ফেললো।
ইস্পাত এককাপ কফি খেতে এসেছিলো ক্যান্টিনে।ইদানীং মাথা অনেক চড়া হয়ে থাকে।আচমকাই রাগ উঠে যায়।তখন নিজেকে সামলানোর জন্য এককাপ কফি অথবা কড়া লিকারের চা হলেই হয়।এই দুইটা তরল পদার্থ ইস্পাত কে একদম কাবু করে ফেলে।ক্যান্টিনের একটা খালি টেবিলে পা’য়ের উপর পা তোলে চেয়ারে বসে পড়লো ইস্পাত।ক্যান্টিনের অনেক স্টুডেন্টই ইস্পাত কে দেখে সালাম জানালো।ইস্পাতও মাথা নাড়িয়ে সালামের উত্তর দিয়ে ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।আসার সময়েই কফি ওর্ডার করে এসেছে।এখন শুধু খাওয়ার পালা।তবে,ততক্ষণে ফোন নিয়ে কিছুক্ষণ স্ক্রোল করতে লাগলো।আবারও,হুট করেই ইস্পাতের চোখ গিয়ে পড়লো কোণার টেবলে বসা ইসুর দিকে।ইসু যে বার্গার নিয়ে বেশ হিমশিম খাচ্ছে তা ইস্পাত ঠিকই বুঝতে পেরেছে।ইস্পাত খুব কনফিউজড ইসুকে নিয়ে।ইসুর হাবভাব দেখে ইস্পাত ভাবছে,মেয়েটা কি বোকা নাকি??সামান্য একটা বার্গার নিয়ে এতো হিমশিম হওয়ার কি আছে!!
এরিমধ্যে কফি চলে আসায় ইস্পাত ইসুর থেকে চোখ ফিরিয়ে কফিতে মনোযোগ দিলো।একটু পর লাইব্রেরিতে গিয়ে ম্যাথের একটা বই খুঁজবে।
—-
ভার্সিটি থেকে এসেই ইসু দিলো এক ঘুম।তার এক ঘুমেই মাগরিবের আজান শেষ করে এবার এশার আজান দিতে শুরু করলো।এশার আজানের ধ্বনি শুনতে পেয়েই ইসুর ঘুম ভেঙে যায়।চোখ কচলে কচলে বুঝার চেষ্টা করছে এইটা সকাল,নাকি বিকাল,নাকি রাত।আগামাথা কিছুই বুঝতে না পেরে তাকালো ঘড়ির দিকে।এশার সময় দেখে ইসু বিছানা থেকে একপ্রকার দ্রুত গতিতেই উঠলো।ফ্রেশ হয়ে ছুটলো পড়ার টেবিলে।আজকের পড়া সে আজকেই শেষ করতে চায়।বর্তমান বা ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিতে চায় না।পড়ার টেবিলে বসেও ইসু কয়েকটা লম্বা হাই তুললো।ইচ্ছা করছে আবারও গিয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়তে।তার উপর আরো গরম।ইসু একদম ঘেমে ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে।ধুর!বলেই ইসু টেবিল থেকে উঠে পড়লো।এই গরম নিয়ে তার পক্ষে পড়া সম্ভব না।মাঝরাতেই না হয় পড়াগুলো কমপ্লিট করে নিবে।রুম থেকে বেরিয়ে ইসু রুমুকে খুঁজলো।কিন্তু পেলো না।রান্নাঘরে আছিয়া বেগমকে কান্না করতে দেখে ইসু অনেকটাই ভয় পেয়ে যায়।দৌড়ে গিয়ে ইসু বসলো আছিয়া বেগমের কাছে।চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,
‘খালামনি!কি হয়েছে তোমার।তুমি কান্না করছো কেন?’
আছিয়া বেগম শাড়ির আঁচলে চোখ দুটো মুছে স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,
‘কিছু হয় নি তো আমার।আমি তো পেঁয়াজ কাটছিলাম।তোর সামনেই তো পেঁয়াজ আর বটি নিয়ে বসে আছি।পেঁয়াজে সালফার বেশি থাকায় সব মানুষকেই কান্না করতে হয়।’
ইসু বুকে থুতু দিয়ে বললো,
‘ওহহ!আমি ভেবেছি তোমার কিছু হয়েছে।’
‘আচ্ছা ইসু!আমার চোখ দেখলে মনে হবে আমি কান্না করেছি তাই না।’
ইসু মাথা উপর নিচু করে বললো,
‘হ্যাঁ!খালামনি তাই তো মনে হচ্ছে।দেখলে না কীভাবে দৌড়ে চলে এসেছি তোমার কাছে।’
আছিয়া বেগম পেঁয়াজ কাটা বাদ দিয়ে হাসি মুখে বললেন,
‘তাহলে তোর খালুর কাছ থেকে পেঁয়াজ কেটে কান্না করে একটা ব্লেন্ডার কিনে নিবো।সেই কবে থেকে বলছি একটা ব্লেন্ডার কিনে দেওয়ার জন্য দিচ্ছেই না।হাড়কিপটে বেডা।’
ইসু গোলগাল চোখ করে তাকিয়ে আছে আছিয়া বেগমের দিকে।সে তো জানতো তার খালা কিপটে মানুষ,খালু না।আর এখন কিনা,তার খালা নিজেই তার সরল খালুকে কিপটে বানিয়ে দিলো তাও আবার হাড়কিপটে।
ইসু আর কিছু না ভেবেই রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।ছাঁদে যাবে।একটু প্রকৃতির হাওয়া অনুভব করা দরকার।তার বাড়ি নদীর পাশে হওয়ায় সারাক্ষণ শুধু হিমেল হাওয়ার স্পর্শ পেতো।ইসস্!কি সুন্দর ছিলো সেই অনুভূতি।
লিফটে আজকে একাই চড়ে ইসু ছাঁদে এসেছে।লিফট চালাতে পেরে সে অনেক খুশি।ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে ছাঁদের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।ছাঁদের দরজায় এসে সে একটা মিষ্টি বাতাসের ছোঁয়া শরীরে পেয়েছে।চোখ,মুখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো।মিনিট দশেক এইভাবে থেকে ইসু চলে গেলো ছাঁদে।ছাঁদ জুঁড়ে শুধু লাইট বিদ্যমান হওয়ায় সারা ছাঁদ আলোকিত হয়ে আছে।গুটিগুটি পা’য়ে ছাঁদের এককোনায় চলে গেলো।ইসুর কাছে চারপাশ খুব সুন্দর লাগছে।
ইস্পাতও ফোন নিয়ে ছাঁদে এসেছে।ফোনে চোখ থাকায় সে ইসুকে দেখতে পায় নি।কিন্তু ইসু ঠিকই দেখেছে ইস্পাত কে।কারোর আসার শব্দ পেয়ে ইসু সেদিকেই তাকিয়ে ছিলো।ইস্পাত কে দেখে ইসু মুখটাকে কাঁচুমাচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।ইসু ভেবে পায় না যেদিকেই যায় না কেন সেদিকেই এই লোকটার সাথে দেখা হয়।কতো সুন্দর একটু বাতাস অনুভব করতে এসেছিলো,আর এইখানেও ইস্পাত এসে ভেজাল বাজিয়ে দিলো।সব কিছুই গোলমাল শুধু।
ইস্পাত ফোন থেকে চোখ তুলেই ইসুর দিকে চোখ পড়লো।বাতাসে ইসুর লম্বা চুল গুলো উড়ছে অবাধ্যভাবে।ইস্পাত সেদিকে কতক্ষণ চেয়ে পুনরায় ফোনে চোখ গুজে দিলো।ধীর গতিতে ইস্পাত ইসুর থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে পড়লো।গলা পরিষ্কার করে বললো,
‘বললে না তো ওই বাক্যটার ইংলিশ কি হবে।’
ইসু কিছুক্ষণ বেক্কলের মতো দাঁড়িয়ে রইলো।তার সবকিছু তালগোল পাঁকিয়ে যাচ্ছে।
ইসুর কোনো উত্তর না পেয়ে ইস্পাত আবারও বললো,
‘কি হলো বলো।’
ইসু কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে আছে ইস্পাতের দিকে।ইস্পাতের এবার খুব হাসি পাচ্ছে ইসুর চেহারা দেখে।ইসু মিনমিনে গলায় বললো,
‘স্যার!আমি জানি না ওই বাক্যের ইংলিশ।’
‘ভার্সিটিতে আমাকে দাদা বলো আর এইখানে আমাকে স্যার বলছো।পরে রাস্তায় কি বলবে আমাকে?’
ইসু ইস্পাতের কথা শুনে আরো নেতিয়ে গিয়েছে।আর কিছু না ভেবে দিলো এক দৌড়।ইস্পাতও কম ধড়িবাজি না!সাথে সাথেই ইসুর হাত ধরে আটকিয়ে ফেলেছে।কড়া গলায় বললো,
‘কি হলো বলো?পালিয়ে যাচ্ছো কেন।রাস্তায় আমাকে দেখলে কি বলবে তুমি।’
ইসু ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো,
‘স্যার বলবো।সব জায়গায় স্যার বলবো।এমনকি আপনার চল্লিশা খেতে গেলেও দোয়াতে বলবো,স্যার যেনো জান্নাতবাসী হয়।’
ইস্পাতের হাতটা অনেক কিলবিল করছে ইসুকে একটা থাপ্পড় মারার জন্য।তাকে কিনা মেরে একদম চল্লিশায় চলে গিয়েছে মেয়েটা।মরণ টা কি ভেবেছে ও।এতো সোজা নাকি মরণ।ইস্পাত কটমট চোখে তাকিয়ে বললো,
‘আমি মরলে তোমাকে নিয়ে মরবো।তখন দেখে নিবো কীভাবে তুমি আমার চল্লিশা খাও।’
‘স্যার আপনি মরলে দেখবেন কি করে।’
ইস্পাত তেড়ে এসে বললো,
‘ওরে ছাগল!আমি না দেখলেও আমার আত্না দেখবে বুঝেছো।’
ইস্পাতের তেড়ে আসা দেখে ইসু দিলো এক দৌড়।দৌড়ে একদম লিফটের কাছে এসে থেমেছে।ইসু হাফাচ্ছে আর বিরবির করছে,নতুন শহরে আসার পর থেকে শুধু দৌড়ানিই খাচ্ছি।পরেরবার থেকে দৌড় প্র্যাক্টিস করে নিতে হবে।
চলবে..