#ধূসর_রঙের_রংধনু -৬
#তাসনিম_তামান্না
নিপা হৃদিকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রুমে আনতেই রুদ্র প্রশ্ন ছুড়লো
— এতোক্ষণ কোথায় ছিলে??
— বাবু কে ঘুম পড়াচ্ছিলাম।
— তার আগে কোথায় ছিলে?
নিপা বিরক্তি নিয়ে বলল
— আমার বাড়িতে আমি যেখানে খুশি থাকবো তার সব কৈফিয়ত আপনাকে দিতে হবে? আর আপনি এতো প্রশ্ন-ই বা করছেন কেনো?
— কোথায় কি করছিলেন শুনবো না?
— শুনে কি করবেন? এগুলো আমার বিরক্ত লাগে।
— আচ্ছা আর কখনো শুনবো না।
— ডাইনিং টেবিলের যান সকলে আপনার জন্য বসে আছে।
— তুমি খাবে না?
— এখনো ফ্রেশ হয় নি। তাছাড়া আমি, আম্মু, ভাবি পরে খাবো। আপনি যান।
রুদ্র আর কোনো কথা না বলে চলে গেলো। ডাইনিং টেবিলে গিয়ে খেতে খেতে নিপার বাবা – ভাইয়ের সাথে টুকটাক কথা হলো।
—–
— আমি সব প্ল্যান সেট করে ফেলছি। বাচ্চাটাকে নিয়েই তোমরা রাজশাহীর কোনো এক অনাথ আশ্রমে দিয়ে দিবে। আর যত দ্রুত সম্ভব ওখান থেকে কোনো দম্পতির কাছে দিয়ে দিবে।
— কিন্তু স্যার এতো ছোট বাচ্চা মা’কে ছাড়া কীভাবে থাকবে। আর একটু বড় হলে না হয়…
— সাট আপ রাশেদ। আমি তোমার কাছ থেকে জ্ঞান শুনতে চাই নি যেটা করতে বলেছি চুপচাপ কথা মত কাজটা করবে। এই কাজ করার জন্য তুমি টাকা পাচ্ছো ভুলে যেও না।
রাশেদ একটু মিয়িয়ে গেলো। মলিন কণ্ঠে বলল
— জী স্যার।
— ওরা বাসায় আসলেই সুযোগ বুঝে আমি তোমারকে দিন তারিখ বলে দিবো।
— ওকে স্যার।
— আর হুটহাট ফোন দিবে না।
— জি স্যার।
ফোন কেটে অভিজিৎ একটা শ য় তা নি হাসি দিয়ে বলল
— আমি আমার ছেলে ভবিষ্যৎ এর কোনো কাটা রাখবো না সব উপড়ে দিবো।
নীলিমা এসে বলল
— কি উপড়ে দিবে?
অভিজিৎ থতমত খেয়ে বলল
— ভাবছি মিরপুরে ১২ ওখানে একটা খালি জমি আছে না ওখানে পার্ক বা রেস্টুরেন্টে বানালে কেমন হয়।
— হুম ভালোই। ওসব নিয়ে পড়ে ভেবো এখন এসো দুপুর অনেক হলো খেয়ে নিবে।
অভিজিৎ একটু হাফ ছেড়ে বাচলো। নীলিমা যে কিছু শুনি নাই এটা নিশ্চিত শুনলে এতোক্ষণে দফারফা বেঁধে যেত।
—-
সন্ধ্যা বেলা চাচি আর পপি হাসি মুখে পরিপাটি হয়ে আসলো নিপাদের ফ্ল্যাটে। পপিকে দেখে সকলে অবাক হলো। যে মেয়ে দুদিন আগে এসে সকলের সাথে ঝগড়া করে গেছে। কান্নাকাটি করে সু ই সা ই ড করার চেষ্টা করেছে সে মেয়েকে আজ হঠাৎ স্বাভাবিক লাগছে কারণটা খুঁজে পেলো না কেউ। রুদ্র আর নিপার ভাই তখন ড্রাইংরুম বসে গল্প করছিলো বাকিরাও ছিল। পপি এসেই প্রথমে নিপার মা’র কাছে গিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে কান ধরে বলল
— চাচি আ’ম সরি। তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। সত্যি সরি আর কখনো হবে না।
নিপার মা-ও গলে গিয়ে বলল
— দূর পাগলি আমি ওসব কিছু মনে রেখেছি না-কি বস কি খাবি বল
— তোমার হাতের এস্প্রশাল পিঁয়াজু।
— আচ্ছা বস আমি আনছি।
নিপার মা যেতেই পপি রুদ্র কে দেখে বলল
— আরে দুলাভাই যে কেমন আছেন?
রুদ্র হকচকিয়ে গেল নিজে সমলিয়ে বলল
— ভালো আছি। তুমি?
— ভালো ছিলাম না। কিন্তু আপনার বউ ম্যাজিক করে ভালো করে দিলো। তখন আর খারাপ থাকতে পারি বলুন।
রুদ্র হাসলো। উপস্থিত কেউ ই কিছুই বুঝলো না পপির কথা। নিপা পপির দিকে তাকিয়ে ছিলো পপি বলল
— ঔ তোর বাবু কই?
— রুমে।
— চল যায়।
পপির এমন স্বাভাবিক বিহেভিয়ার কারোরই হজম হচ্ছে না। নিপা মনে মনে খুশিই হয়েছে পপির স্বাভাবিক ব্যবহারে। রুমে এসে বাবুকে ভালো করে দেখে বলল
— আরে এযে পুরাই রুদ্র কপি
— না ও অভ্রর মতো
— হ্যাঁ কিন্তু অভ্র ভাইয়া শ্যামলা ছিল বাবু অভ্র ভাইয়ার মতো দেখতে কিন্তু গায়ের রংয়ের জন্য পুরাই রুদ্র লাগছে কেউ বিশ্বাস করবে না যে এটা রুদ্রের বাবু না
নিপা চোখ মুখ শক্ত করে বলল
— আমি ওকে তেল মাখিয়ে মাখিয়ে শ্যামলা করে দিবো
পপি শব্দ করে হেসে ফেললো বলল
— পাগল তুই?
— তুই চুপ কর
— আচ্ছা বাবা রাগিস না এক্সামের ডেট দিয়েছে। তুই এক্সাম দিবি তো?
— হ্যাঁ। কবে এক্সাম?
— এক সপ্তাহ পর
— মানে? আমি কিছুই পড়ি নি কি এক্সাম দিবো তাও আবার অর্নাস ফাইনাল এক্সাম কিভাবে কি করবো?
— তুই জানিস। আর এখন তো বাবু ছোট সারাক্ষণ ঘুমাবে শুধু খাওয়ার সময় তোর দরকার তাছাড়া সবসময় পড়তে পারবি। আর এক্সামের সময় না-হয় ফিডার খাওয়ালো
— হুম কিন্তু ওকে কার কাছে রেখে যাবো?
— কেনো তোর শাশুড়ি না হয় এখানেই থেকে যা চাচি ভাবি সামলিয়ে নিবে
— তা ঠিক কিন্তু শাশুড়ি মা তো আমাকে তারাতাড়ি বাসায় ফিরে যেতে বলেছে ওনার একা লাগে বলে। বল তো কি করবো?
— আন্টির কাছে শুনে দেখ
— হুম। আচ্ছা ওসব বাদ দে। আমি তোর এমন স্বাভাবিক বিহেভিয়ারে খুশি হয়েছি।
— হুম। জানিস তুই চলে আসার পর ভাবলাম অনেক। যে একটা দু’দিনের ছেলের জন্য কেনো মন খারাপ করবো বলতো সে তো দিব্বি সংসার করছে আমি কেনো মাঝক্ষাণ থেকে ফাঁ স বো?
— দেখিস তুই একটা ভালো বর পাবি তোকে সে খুব ভালোবাসবে
— আমি আর ওসব নিয়ে ভাবি না রে আমি বাবা-মা র কাছেই সারাজীবন থেকে যাবো
— সেটা আমি দেখে নিবো
ওদের কথার মাঝে নিপার মা পিঁয়াজুর সাথে আরো অনেক কিছু আনলেন। নিপা, পপি, নিপার মা, পপির মা, নিপার ভাবি মিলে গল্পের আসর বসালো কতদিন পর। নিপার ভাই আর রুদ্র বাইরের দিকে গেছে। নিপার কয়েক মূহুতের জন্য মনে হলো সবটা আগের মতো।
—-
— আমার এক্সাম আর ৭দিন পর কি করবো মা বাড়ি ফিরবো নাকি এখানে থেকে যাবো?
— বাড়ি ফিরো আমি হৃদিকে দেখে রাখবো
— আচ্ছা। খেয়েছেন আপনারা?
— হ্যাঁ। তোমরা?
— না একটু পরে।
— আমার দিদিভাইটা কি করে?
— ওনার যা কাজ সারাদিন ঘুমানো
— বড় হতে দাও দেখ কি জ্বালানো টাই না জ্বালাই
নিপা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল
— হুম ওর জন্য ই এখনো বেঁচে আছি মা।
— ওমন কথা বলে না বউ মা
নিপা ফোন কাটতেই রুদ্র প্রশ্ন করলো
— এক্সাম দিবে বললে না তো?
— সব কিছু ই আপনাকে বলতে হবে?
— আব না কিন্তু এক্সাম ফিজ তো দেওয়া লাগবে না?
— ও হ্যাঁ ভুলে গেছিলাম
— তোমার কাগজ পাতি দিও আমি দিয়ে আসবো
— আচ্ছা। আমরা কালই বাসায় ফিরছি।
— হুম
—–
— বউমার পরিক্ষা তাহলে বাচ্চার জন্য একটা আইয়া রাখি কি বলো
— আমি আছি তো আবার আইয়ার কি দরকার?
— তুমি আর এই বুড়ো বয়সে আর কত পারবে? তার চেয়ে বড় একটা আইয়াই রাখি। যতদিন না বউমার পরিক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত
— যা ভালো হয় করো
অভিজিৎ এতো সোজা সুযোগ পেয়ে কেনো হাত ছাড়া করবে?
চলবে ইনশাআল্লাহ
আসসালামু আলাইকুম। গল্পের মোড় ঘুরে যাবে। আপনারা প্রস্তুত তো?😌