#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_50
স্বচ্ছ কিংবা নীল রঙা পানি, দূরে মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় আর বর্ষার যৌবন—এমন অপরূপ সৌন্দর্যের সমাহার দেখা যায় শুধু টাঙ্গুয়ার হাওরেই। শুধু তাই নয়, মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়-ঝরনা থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ পানি, অগণিত পাখির কলতান আর করচ-হিজল বনের মায়া বিমোহিত করবে যেকাউকেই।
দেশের অন্যতম সুন্দর ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ সম্ভাবনাময় জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর। আন্তর্জাতিকভাবে ঘোষিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট এটি। অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর স্বচ্ছ জলের স্বর্গরাজ্য! বর্ষা ও শীত—এই দুই মৌসুমে দুই রকমের সৌন্দর্যে অপরূপ হয়ে ওঠে এই হাওর। তবে পর্যটকদের মতে, এই হাওর তার আসল সৌন্দর্যে সাজে বর্ষাকালে। তাই তো বর্ষাকালে হাওরে আসা।
সুনামগঞ্জে পৌছাতেই কেমন কেমন অনুভব হচ্ছে। কাক ভোরের পেজা তুলোর মতো মেঘ যেন সুনামগঞ্জের প্রথম সৌন্দর্য বহন করছে। জানালায় থুতনি ঠেকিয়ে প্রান ভরে তা দেখছে ঝিল। অভিনব ঘুমে ছিলো। ভোরের দিকে একটু চোখ লেগেছিলো। গাড়ির ঝাঁকুনি তে উঠে পরে। ঝিল কে টেনে কাছে নিয়ে আসে। বিরক্ত হয় ঝিল।
_ হঠাৎ এমন করলে কেন ?
_ জানালার সাইটে বসতে দিয়েছি মাথা ঠেকানোর জন্য ? জানো এভাবে কতো দুর্ঘটনা হয়ে যেতে পারে।
নিজ ভুল বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে ঝিল। অস্ফুটন স্বরে বলে
_ স্যরি।
ঘড়ির কাঁটা বলে দিচ্ছে সাত টা বাজতে চলেছে। সকালের সৌন্দর্য অভিনবর মনে দাগ কেঁটে নেয়। মুখ দিয়ে উচ্চারন করে
_ মাশআল্লাহ ।
ঝিলের হাতের আঙুলের ভাঁজে আঙুল গলিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে টা উপভোগ করতে থাকে। সুনামগঞ্জের নামের মতোই জায়গার সুনাম থাকা বাহুল্য । প্রকৃতির সমস্ত সৌন্দর্য যেন উজার করে দিয়েছে সে , নিজ হাতে সাজিয়েছে সুনামগঞ্জ কে।
এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে কখন যে সুনামগঞ্জ শহরে এসে পরে তাঁর খেয়াল হয় না। গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। নন এসি বাসের ভাড়া জনপ্রতি 550 টাকা । এটা এসি বাস হলে ও এসির প্রয়োজন হয় নি। কারন আবহাওয়া শিথিল ই ছিলো। তবে সুনামগঞ্জে এসে তাপমাত্রা যেন গাঁয়ে এসে লাগলো। ঘেমে ঝিলের কপালে শিশির বিন্দুর মতো রেখা তৈরি হলো। পকেট থেকে রুমাল বের করে খুব সুন্দর করে মুছে দিলো অভিনব। একটু করে হাসলো ঝিল। লজ্জা নয় ভালোলাগা তাঁকে আকৃষ্ট করছে।
অভিনবর সাথে তালে তাল মিলিয়ে হাঁটছে ঝিল। কোথায় যাচ্ছে তা জানা নেই। তাই প্রশ্ন করলো
_ আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি ?
_ রোজ গার্ডেন হোটেলে।
_ এখানে কেন ? হাওরে যাবো না ?
_ নাস্তা করতে হবে তো ?
ঝিল কথা বাড়ালো না। কিছুক্ষনের মাঝেই রোজ গার্ডেন হোটেলে চলে আসলো। ব্যাক প্যাক রেখে ফ্রেস হয়ে নিলো। ঝিল পরোটা অর্ডার করবে বলে ঠিক করছে। তবে অভিনব বাঁধা দিয়ে বলল
_ সিলেটের ট্রাডিশনাল ফুড আখনি। আখনি নিলে কেমন হয় ?
_ আচ্ছা।
অভিনব আখনি অর্ডার করে দিলো। সাথে নিয়ে নিলো দুটো ফ্রুট জুস। আখনি টা তেহেরির মতোই দেখতে আর টেস্ট ও একি রকম। তবে এর বিশেষত্ব হলো এর সাথের এক্সট্রা ঝোল। যেটা দিয়ে আখনি মাখিয়ে খেতে বেশ সুস্বাদু । সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় আখনির মূল্য জন প্রতি 50 টাকা।
অভিনব একটু অবাক ই হলো।
খাওয়া দাওয়া কমপ্লিট করে একটু জিরিয়ে নিলো । হোটেল থেকে বেরিয়ে সবাই কে ফোন লাগালো। সবাই পৌছে গেছে। মুহুর্তেই সবাই এসে পরলো। ঝিল প্রচন্ড অবাক হয়ে বলল
_ মৌন তুই !
_ সারপ্রাইজ
_ কি মৌন মৌন বলছিস ভাবি বলে সম্বোধন কর।
ঝিল ব্যঙ্গ করে বলল
_ বয়েই গেছে ভাবি বলতে। আমার বান্ধবীকে তোমার সাথে বিয়ে দিবো না।
ঝিলের কথাতে সবাই একটু হাসলে ওহ রোহন থতমত খেলো।
একে একে সবাই কুশল বিনিময় করে নিলো । মাহের জানালো মাহেরা নতুন রিলেশনে গেছে। কথা টা শোনা মাত্র ই ঝিলের মন উড়তে লাগলো। ওর কান্ডে মুখ চেপে হাসছে অভিনব। নিজের বিয়ের খবর শোনে ও এতো টা খুশি হয় না কেউ।
অভিনব আর শাকীল লেগুনা ভাড়া করে নিলো। যেহেতু ওরা দশ জন তাই একটা লেগুনা তেই হয়ে যাবে। সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর রিজার্ভ লেগুনার ভাড়া পরলো 1000 টাকা। সবাই লেগুনায় উঠে পরলো। সুনামগঞ্জ টু তাহিরপুর যাওয়ার ভিউ টা অসাধারন। গ্রাম্য সৌন্দর্য নজর কারার মতো।
চকের ভেতর দিয়ে পাকা সড়ক। চারপাশে গাছ পালা সহ ছোট ছোট ঘর। সব কেমন ছবির মতো। চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য উপভোগ করলো।
লেগুনা এসে তাহিরপুর বাজারে থামলো। সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর আসতে মোটামোটি দুই ঘন্টা সময় লেগেছে। দু হাত মেলে দিয়ে পিঠ সচল করে নিলো ঝিল। দু ঘন্টা বসে থেকে হাত পা যেন অবশ হয়ে গেছে। অভিনব এক হাতে ঝিল কে জড়িয়ে ধরতেই তেঁতে উঠলো ঝিল। যেন আগুনের গাঁয়ে ঘি ঢালা হয়েছে। অভিনব হতবাক হয়ে গেল।
_ কি করছো কি ? সবাই আছে , সে দিকে খেয়াল আছে ?
ব্যঙ্গপূর্ন দৃষ্টি মেলে দিয়ে ঝিল কে কাছে টেনে নিলো। শাহাদাত আঙুলের সাহায্যে দিক নির্দেশনা দিয়ে অভিনব বলল
_ দেখো ওদের অবস্থা।
ঝিলের মাথা ঘুরে গেলো। এরা যে বাজারে নেমেছে মনেই হচ্ছে না। একে অপরকে এমন ভাবে জড়িয়ে আছে দেখে মনে হচ্ছে পার্সোনাল বেড রুমে দাঁড়িয়ে আছে। অভিনব এক ফালি হেসে বলল
_ ডান দিকে তাকাও।
ঝিল ডান পাশে তাকিয়ে 440 ভোল্ট এর শক খেলো। রোহন আর মৌনতার অবস্থা আরো করুন। অস্ফুটন স্বরে বলল
_ ছিইইই এদের কে আমি ভরসা করতে পারছি না। যাহ তা করে বসবে।
ঝিলের কথাতে হো হো করে হেসে উঠে অভিনব। ঝিল লজ্জা পায়। সে কি একাই আনরোমান্টিক ?
.
ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে প্রায় ৩০টি ঝরনা এসে সরাসরি মিশেছে হাওরের পানিতে। সারি সারি হিজল-করচ শোভিত, পাখির কলকাকলিতে মুখর এক অপরূপ সৌন্দর্যের আধার। মাছ, পাখি এবং নানান প্রজাতির জলজ প্রাণীর এক বিশাল অভয়াশ্রম। জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ মিঠাপানির এ হাওরের আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ৩০ হাজার একর।
বাজার থেকে হেঁটে তাহিরপুর ঘাটে আসলো সকলে। ঘাটে বোট রাখা আছে। সবাই বোট এ উঠলো ,একজন কর্মকর্তা সবাই কে সেফটি স্প্রে দিয়ে ডিজইনফেক্ট করে নিলো। রিফ্রেসিং এর জন্য হট ট্রাওয়াল এর ব্যবস্থা ওহ রয়েছে। সবাই একে একে ট্রাওয়াল দিয়ে চোখ মুখ মুছে নিলো। এখন খানিকটা ফ্রেস লাগছে।
ঝিল লক্ষ্য করলো বোট এর কর্নারে স্টিয়ারিং এর মতো লাগানো। অভিনব ব্যাক প্যাক গুছিয়ে রেখে ঝিলের হা হয়ে যাওয়া মুখ টা দেখলো। ডান পাশ থেকে টোকা মেরে বাম পাশে চলে গেল। এদিক ওদিক ফিরতেই প্রশস্ত হাসে অভিনব। ঝিল সে দিকে পাত্তা দেয় না। শুধু বললো
_ এই স্টিয়ারিং দিয়েই কি বোট কন্ট্রোল করা হয় ?
_ উহহু
_ তাহলে?
_ আরে এটা তো সো করার জন্য রাখা হয়েছে। ট্যুরিস্ট রা ছবি তুলতে পারবে খানিক টা সৌন্দর্য বোঝানোর জন্য।
অভিনবর সাথে পুরো বোট ঘুরে দেখলো ঝিল। বোটের ভেতর এমন সুন্দর ব্যবস্থা সত্যি ই অসাধারন। এখানে একটাই বিশাল কেবিন। যেখানে ঢালা বিছানা করা। দুটো ওয়াসরুম রয়েছে। সার্বক্ষণিক আই পি এস এর ব্যবস্থা। তবে সমস্যা হচ্ছে কেবিন টার হাইট টা ডাউন। যার কারনে ঘাড় নিচু করে রাখতে হচ্ছে অভিনবর। তা দেখে গগন কাঁপিয়ে হাসছে ঝিল। অভিনব বিরক্ত হলো। বোট কর্মকর্তার কাছে গিয়ে বলল
_ হ্যালো ! কেবিনের হাইট এতো ডাউন কেন ?
_ এটা ডাউন দেওয়ার কারন টা হচ্ছে হাওরে হাওয়া বেশি থাকে যদি কেবিন টা উঁচু করা হয় তাহলে উল্টে যাওয়ার সম্ভবনা থাকবে। তাছাড়া বোট কন্ট্রোল করতে অসুবিধা হয়ে যায়।
অভিনব আর কিছু বললো না। দুটো দিন তাঁকে ঘাড় নিচু করেই চলতে হবে। অবশ্য বোট এর বাইরের অংশ কিংবা ছাঁদেই বেশি থাকা হবে।
কেবিনের ডিজাইন টা সুন্দর। অনেক গুলো জানালা দেওয়া যার কারনে বৃষ্টি হলে বেশ রোমাঞ্চকর পরিবেশ পাওয়া যাবে।
জানালায় লাগানো সাদা পর্দা গুলো বাতাসে উড়ছে। এতেই প্রেম প্রেম অনুভূতি হচ্ছে। ঝিল কে ইশারা করলো অভিনব। মেয়েটা তীক্ষ্ম চোখে তাকালো। কাছে এসে বলল
_ সব জায়গায় রোম্যান্স নো এন্ট্রি !
_ তুমি ই একটা গাধা । সবাই ঠিক রোম্যান্স করবে ইনফেক্ট তোমার না হওয়া ভাবি কে দেখে নিও।
_ মানে !
_ রোহন অনেক এগিয়ে , তোমার মতো গাধা না।
ভেঙ্চি কাঁটে ঝিল । সবার লাজ লজ্জা না থাকতে পারে তাই বলে ওহ কেন বেহায়া হবে?
এই প্রথম মনে হচ্ছে অভিনব বিদেশে বড় হয়েছে। পুরোই ফাজিল ধাঁচের বিচ্ছু ছেলে।
চার জন কর্মকর্তা সাথে দশ জন ট্যুরিস্ট নিয়ে ওদের যাত্রা শুরু হবে। জল যাত্রায় এর আগের অভিজ্ঞতা থাকলে ও এবারের যাত্রা লোভনীয় হতে যাচ্ছে। কারন এটা হাওর। এখানে নেমে গোসল করা যাবে। বোট এর মোট কস্ট পরেছে 18,000 টাকা। তবে মেইন মিল গুলো নিজেদের প্রোভাইড করতে হয়। বোট এর প্যাকেজ এর সাথে বাবুর্চি সুবিধা রয়েছে।
অভিনব ঘড়িতে টাইম দেখে নিলো। হাঁটু গেড়ে বসে পরেছে ঝিল। একটা ওয়াটার বোতল এগিয়ে দিতেই ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। প্রচন্ড তৃষ্ণা পেয়েছিলো। কৃতঙ্গতা প্রকাশ করলো মেয়েটা। অভিনব ঝিলের কোলে মাথা রেখে বলল
_ একটু বিলি কেঁটে দাও।
_ মাথা ব্যথা করছে ?
_ উহহু
_ তাহলে ?
_ ওদের তো বাজারে পাঠিয়েছি। তোমার লাজ লজ্জার কারনে তো পরে সেবা পাওয়া যাবে না।
তাই আগেই একটু সেবা নিয়ে নিচ্ছি। বউ বলে এতো টা ছাড় দেওয়া উচিত হবে না।
অভিনবর কথাতে ফিক করে হেসে দেয় ঝিল। মাথায় বিলি কেঁটে দিতে দিতে বললো
_ মোটে ও ছাড় দিবে না বুঝেছো । না হলে পাখি উড়াল দিবে।
_ আমার পাখি উড়াল দিবে না। কারন সে পাখি আমার থেকে ও বেশি আমাকে ভালোবাসে।
প্রশান্তির শ্বাস ফেলে ঝিল। উল্টো হয়েই অভিনবর নাকে নাক ঘষতে লাগলো। অভিনবর উষ্ণ হাত ঝিল কে কাছে টেনে নিলো। সর্বাঙ্গে বিদ্যুৎ খেলে গেল। ঠিক তখনি বাইরের খটখট আওয়াজ ভেসে আসলো। ছিটকে সরে গেল ঝিল। রোহন কে দেখে প্রচন্ড অবাক হলো । একটুর জন্য বেঁচে গেছে। না হলে লজ্জায় মাথা ঠুকতে হতো।
অভিনব আফসোস এর সুরে বলল
_ মানলাম তুমি সম্পর্কে বড় হও তাই বলে প্রাইভেসি দিবে না আমাদের ?
_ কেমন প্রাইভেসি চাচ্ছেন অভিনব ভাই ?
_ প্রাক্টিক্যাল চাওয়ার তো সুযোগ নেই। একটু নক টক করে এসো। আমি ও একি মানের প্রাইভেসি দিবো।
ডোন্ট ওরি , আমার শালিকা তোমার জন্য রেডি।
হাই ফাইফ করে দুজনে। ঝিল লজ্জায় কুকুরে গেল। বড় ভাইয়ের সাথে ফ্রি হলে ও এখন লজ্জা লাগছে। ভয়ঙ্কর দুটো গালি দিলো অভিনব কে। অভিনব অবশ্য সেটা শুনতে পেল না।
.
এক গাঁদা বাজার করা শেষ। মাছ মাংস মসলা সবজি সব কিছুই কেনা হয়েছে। এখন বোট হাওর দিয়ে ওয়াচ টাওয়ারে যাবে। সেখানে গিয়ে সবাই সাওয়ার নিবে তারপর কোনো এক গাছের নিচে বোট থামিয়ে লাঞ্চ করবে। দারুন হবে বিষয় টা।
সবাই খুব এক্সাইটেড। অভিনব বরাবরের মতো ঝিল কে নিয়ে বোট এর কর্নারে চলে গেল। বোট ছাড়তেই জোরে হাওয়া বইতে লাগলো। স্নিগ্ধ হাওয়াতে পাশা পাশি বসে রইলো ঝিল আর অভিনব। হাতের আঙুলের ভাঁজে আঙুল গলিয়ে পা ভেজাতে লাগলো দুজনে। ঝিলের কাঁধে মাথা রেখে বলল
_ আমাদের পথ দীর্ঘ হোক !
_ আল্লাহ চাইলে অনেক টা সময় আমরা এক সাথে থাকতে পারবো। মৃত্যুর পর ও তুমি শুধুই আমার।
অভিনব হাসলো। ঝিলের বাহু টেনে কাছে টেনে নিলো। হঠাৎ করেই ঝিল চেঁচিয়ে উঠলো। কারন একটা মাছ তাঁর পায়ের উপর দিয়ে গেছে যার কারনে সুরসুরি লেগেছে তাঁর । অভিনব মাথা নিচু করতেই ঝিলের বুক ধক করে উঠলো। খামচে ধরে বলল
_ একদম না। পানি তে পরে গেলে ব্যথা পাবে।
*
#বোনাস_পার্ট
দেড় ঘন্টার মাঝেই বোট এসে থামলো ওয়াচ টাওয়ারে। সবাই হৈ হুল্লরে মেতে উঠেছে। সুন্দরবনের ওয়াচ টাওয়ার কে সন্দর বলা না গেলে ও হাওরের ওয়াচ টাওয়ার কে দুর্দান্ত সুন্দর বলতে বাধ্য হতে হয়। পানির উপর ওয়াচ টাওয়ার তাঁর চারপাশে সবুজ গাছে ঘেরা। যার অর্ধেক ডুবে আছে পানির নিচে।
সবাই লাইফ জ্যাকেট পরে নেমে গেল। ঝিল একটু ভয় পাচ্ছে। কারন এটা হাওরের মধ্যি খান। পানির গভীরতা নিশ্চয়ই অনেক হবে।
দুটো রঙিন চা নিয়ে হাজির হলো অভিনব। ঝিল ফ্যাল ফ্যাল তাকিয়ে শুধাল
_ এটা দিয়ে কি হবে ?
_ পানি তে নেমে চা খাবো। সেই ফিলিংস হবে।
_ আমার ভয় করছে।
_ আমি থাকতে ও ভয় পাও ? ছিইই ঝিল নিজের বরের উপর বিশ্বাস রাখতে পারছো না।
_ এটা কখন বললাম ?
_ আচ্ছা এতো রাগ করো না তো। আসো আমার সাথে। আমি তোমায় ধরে রাখবো।
ভদ্র মেয়ের মতো হাঁটা লাগায় ঝিল । নিজ হাতে লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে দেয় অভিনব। চুল গুলো রাবার ব্যান দিয়ে আটকে দেয়। কিছু টা চুল কানে গুঁজে দিয়ে এক ফালি হাসে। ঝিল এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই অভিনব ভয়ঙ্কর কাজ করে ফেলে যার প্রতিবাদের সুযোগ হয় না ঝিলের। নিজেকে ছাড়িয়ে ঠোঁট মুছে বলে
_ ছিইই এটা কি হলো ? তুমি এতো টা অসভ্য কেন বলো তো ?
_ হুসস। নিজে থেকে কিস করেছো কখনো ? সব সময় আমি ই কাছে আসি। আনরোমান্টিক মেয়ে
_ মোটে ও আমি আনরোমান্টিক না।
_ পারলে প্রুভ দিও।
কথা টা বলেই অভিনব বোটের কর্নারে চলে আসলো। সবাই নদীতে গোসল করছে। অভিনবর লোভ লাগলো তাই ঝিল কে বোটে রেখেই নদীতে ঝাঁপ দিলো।
মিনিট পাঁচেক পর ঝিল বাইরে আসলো। বুকে হাত গুঁজে রাগ কন্ট্রোলের ব্যর্থ চেষ্টা । হঠাৎ করে কিছু টা পানি এসে ওকে ভিজিয়ে দিলো। ভেবে ছিলো অভিনব তাঁকে পানি ছুড়েছো। কিছু বলার জন্য ঘুরতেই দেখলো বৃষ্টি নেমেছে। ঝিল অন্যমনস্ক ছিলো। অভিনব তাঁকে টেনে নামিয়ে নেওয়ায় ভয় পেয়ে যায়। চোখ বন্ধ করেই চেঁচিয়ে উঠে।
অভিনব আশ্বস্ত করে বললো
_ আরে চোখ খোলো। আমি তোমাকে নামিয়েছি।
ঝিল চোখ খুলে নিজে কে অভিনবর বাহুতে আবিষ্কার করে। লজ্জা পায় সে , আশে পাশে তাকিয়ে দেখে সবাই সবার মতো ব্যস্ত। বুকে দুটো কিল বসিয়ে দেয়। অভিনব কে জড়িয়ে লম্বা করে শ্বাস নেয়।
সবাই ঘন্টা খানেক গোসল করে একদম চুপচুপে হয়ে যায়। কেউ যেন পানি থেকে উঠতেই চাইছে না। একে একে চেঞ্জ করে নেয়। তারপর ই চলে আসে বোটের ছাঁদে। সেখানে বিচ সোফার ব্যবস্থার রয়েছে। কেউ কেউ সেখানে শুইয়ে রয়েছে। অভিনব ঝিল কে নিয়ে ছাঁদের কর্নারে পা দুলিয়ে বসলো।
কর্নার গুলো খুব প্রিয় ওর। আসলে এখানেই বেশি মজা পাওয়া যায়। বৃষ্টির রেখা কাটিয়ে আকাশ পরিষ্কার হচ্ছে। হঠাৎ অভিনব আবিষ্কার করলো আকাশে কয়েক টা রঙিন রেখা উঠেছে। যাকে রঙধনু বলে। না চাইতে হ ওহ মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসলো
_ ওয়াও
প্রিয় মানুষের সাথে রঙধনু দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরলো ছেলেটা। ঝিলের চোখ আকাশে নিবদ্ধ। তাঁর কোনো খেয়াল ই নেই। পৃথিবীর সমস্ত চিন্তা যেন মাথা থেকে উবে গেছে। নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ন্যায় সে ভেসে বেড়াচ্ছে। প্রকৃতি এমন এক সুখ যাহ নতুন অনুভূতির সাথে পরিচয় করায়।
প্রকৃতির সাথে থাকা মানুষ গুলো কে ড্রিপেশন কাবু করতে পারে না। সকল চিন্তার স্বস্তির জন্য আল্লাহর সৃষ্টি কে উপভোগ করতে হয়।
আল্লাহর সৃষ্টি সর্ম্পকে বর্ণনা করলে হাজারো বই হয়ে যাবে তবে বর্ননার শেষ হবে না।
.
সবাই কে লাঞ্চ সার্ভ করা হয়। একটা গাছের নিচে বোট থামানো হয়েছে। ছাঁদে ছাউনি টানিয়ে দেওয়া হলো।
হাওরের তাজা রুই মাছের সাথে গরম গরম ভাত যেন অমৃত। লাঞ্চে ছিলো ভাত, মাছ , আলুর ভর্তা , ডাল , আর লাটি মাছ ভর্তা সাথে সালাত।
লাঞ্চ করে সবাই রেস্ট নিতে বসে।
টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রবেশ মুখেই দেখা যায় সারি সারি হিজল গাছ। মূল হাওরে পানির নিচের দিকে তাকালে দেখা মিলে হরেক রকম জলজ উদ্ভিদ ও লতাগুল্মের। হাওরের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার কে দেখে দৈত্য মানব ই মনে হয়েছে। ওয়াচ টাওয়ারের নিচেই সারি সারি হিজল করচের গাছ দাঁড়িয়ে আছে সারা বছর জুরে।
হাওরের উত্তর পাশে টেকেরঘাটে রয়েছে স্বচ্ছ নীল জলের শহীদ সিরাজ লেক। একপাশে মেঘালয়ের সুউচ্চ পাহাড়, আরেক পাশে ছোট ছোট সবুজ টিলা। মাঝখানে নীল জলের লেকটি অসাধারণ সৌন্দর্যের মূর্ত প্রতীক। টেকেরঘাট থেকে মোটরসাইকেলে করে আধাঘণ্টার দূরত্বে রয়েছে বারিক্কা টিলা। যাদুকাটা নদীর তীরে এই পাহাড়টি বাংলাদেশ অংশে, এখান থেকে যাদুকাটার অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়।
হাওরের করচ হিজল গাছের মহিমা বিমোহিত করবে যে কাউকে। নিষ্পলক চাহনিতে মেতে উঠবে হৃদয়। অভিনবর বুকে মাথা গুঁজে সুবজের মহিমা দেখছে ঝিল। পানিতে ভেসে থাকা গাছ আহা কতো সুন্দর সৃষ্টি। স্বচ্ছ পানিতে খালি চোখেই দেখা যায় মাছ। রোদ্রময়ী আকাশ টা একটু একটু করে ঝকঝক করছে। ঝিলের ইচ্ছে হলো অভিনবর দেওয়া চ্যালেঞ্জ টাকে পূরন করার। হঠাৎ করেই ঝিল ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় অভিনবর ঠোঁটে। এক ফালি হাসে অভিনব। ঝিলের কানের কাছে ফিস ফিস করে বলে
_ এখন পারফেক্ট কাপল লাগছে ।
**হাওরের পানি তে থাকা ওয়াচ টাওয়ার আর বোটের সামনে থাকা স্টিয়ারিং এর ছবি কমেন্টে দিয়ে দিবো।
হ্যাপি হাওর জার্নি
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।
চলবে