#দেবী
লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি (ছদ্মনাম)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
৩৮ঃ
কেটে গেছে দু সপ্তাহ। দুলাল সিরাজী বসার ঘরে মঞ্জিলের সকল সদস্যদের ডাকলেন। সামিয়া, সুভা, মালেকা, জামাল,জামালের স্ত্রী, রুহুল, কাকন সকলেই আছে। দুলাল সিরাজী সকলের দিকে চাইলেন। দেখলেন কাকন মাথায় কাপড় দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে সুভার নিকটে। আর কাকনের পাশে সামিয়া।
দুলাল সিরাজী বললেন, ” সামিয়া তুমি রুহুলের বউরে নিয়া ঘরে যাও। এইখানে তোমাগো না থাকলেও চলবো। তোমরা ঘরে গিয়া গপ্পো করা গা।”
সামিয়া বুঝলো হয়তো এমন কিছু কথা যা সামিয়াকে বলা যাবে না। সামিয়া কাকন নিয়ে বসার ঘর থেকে বেরয়ে এলো। দুলাল সিরাজীর বড়দের নিয়ে করা বৈঠকে সামিয়া কে কোনোদিনো থাকতে দেয় নি। তাই এটা নতুন কিছু না সামিয়ার কাছে। তবে কাকনের কাছে বিষয়টি পছন্দ হলো না। তারা দুজন থাকলে কি এমন হতো। আর কাকন আসতেও চাই নি কিন্তু সামিয়ার জোড়াজুড়িতে বসার ঘরে গিয়েছিল।কাকন সিড়ির কাছে এসে পাশে তাকিয়ে দেখলো সামিয়া নেই। তাহলে কি সামিয়া এখনো সেখানে। কাকন এগিয়ে গেলো সামিয়ার কাছে ।দেখলো পর্দার আড়ালে দরজার কাছে সামিয়া আড়ি পেতে দাড়িয়ে আছে। কাকন কিছু বলবে সামিয়া কাকনের মুখ চেপে ধরে বললো, “আস্তে ভাবিজান কথা কইয়েন না। শুনলে দাদাজান চেইতা যাইবো। চুপ কইরা কান খাড়া কইরা শুনেন কি কথা কইতাছে তারা। ”
–“কিন্তু এভাবে আড়ি পেতে এভাবে বড়দের কতাহ শোনা ঠিক না।”
–“চুপ, আপনে এইখানে দাড়ান। আইসেন কি জানি কইতাছে।”
সামিয়ার প্ররোচনায় কাকন ও দাঁড়িয়ে গেলো। শুনতে পেলো ভিতরের বলা কথা গুলো।
দুলাল সিরাজী সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, “আমি একটা সিদ্ধান্ত নিছি। যেইডা তোমাগো কইবার চাই।
তয় তার আগে পারিবারিক কিছু কথা কওয়া দরকার।”
সকলেই দুলাল সিরাজীর মুখপানে তাকালো। হঠাৎ কি সিদ্ধান্ত নিতে পারে উনি আর কিসেরই বা কথা।
রুহুল বললো, ” কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দাদাজান?”
দুলাল সিরাজী বললেন,”জামাল তুমি জানি কি কইতে চাইছিলা তুমি তাইলে এখুন কও। ”
জামাল নিজের মন কে অবাধ্য করে বললো, “আমি মাফ চাই বড়ভাবি, রুহুল তুই ও মাফ কইরা দিস। আমি আমার ভুল বুঝবার পারছি। কাম ডা ঠিক করে নাই মহী। আর আমি এখুন একটা শান্তিপুর্ণ পরিবার চাই আমাগো। সবাই মিলামিশা থাকবার চাই মঞ্জিলে। আর আব্বাজান ও তাই চায়। ”
রুহুল এবং সুভা দুজনের বুঝতে বাকি নেই এটা কার শেখানো। তবে জামাল আজ বেশ কয়েকদিন হলো আগের মত করে না। রুহুল মায়ের দিকে চাইলো। সুভা চোখ দিয়ে ইশারা করলো রুহুল কে মেনে নিতে বললো। কারণ সুভার হাতেই জামাল তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হারিয়েছে আর এটাই ছিল জামালের শাস্তি। রুহুল বললো,”ক্ষমা চাইতে হবে না। আমরা ক্ষমা করে দিয়েছি।”
জামাল আর কিছুই বললো না। নিরব দর্শকের মতো কথা শুনলো দুলাল সিরাজীর। অবশ্য তার আর এখন বলার মতো কিছুই নেই। নিজেকে এখন নিস্ব মনে হয় জামালের।
দুলাল সিরাজী পান চিবোতে চিবোতে বললেন,”আমি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিছি। বিলালের পোলা হেলাল নাই, মহী ও নিজের করা ভুলের জন্য দুনিয়া ত্যাগ করলো। এহুন রুহুল ই আমাগো বংশের একমাত্র পোলা। তাই আমি চাই আমার বংশ বাড়ুক। বংশের নিয়ম মতো সব কাম সহি সালামত চলুক তাই আমি সকল দায়িত্ব রুহুল রে দিবার চাই। আশা করি তোমাগো আপত্তি নাই।”
রুহুল জানতো খুব শীঘ্রই তার দাদাজান তাকে এগুলো বলবে।কিন্তু এত দ্রুত জানা ছিল না। দাদিমা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,”এইডা আপনে ঠিক সিদ্ধান্ত নিছেন বিলালের আব্বা। আমাগো কারো আপত্তি নাই।”
কিন্তু সুভা বলল, ” আমার আপত্তি আছে।”
–“কেন তোমার কিসের আপত্তি?”
–“আমার খোকা এই সকল দায়িত্ব নিতে পারবে না। এই সম্পত্তি, এই বংশে হাজারো মানুষের অভিশাপ আছে। কখনো কাউকে সুখী হতে দেয় না। আমি আমার খোকা কে কখনোই এগুলোতে জড়াতে দেবো না”
দুলাল সিরাজী ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, “রুহুল না নিলে কেডায় নিবো। ও ব্যতীত কি কেউ আছে এই মঞ্জিলে যে দায়ীত্ব নিবো।মহীরে তো খুন কতছো তুমি। ”
–“কেউ নেই সে আপনার ব্যাপার কিন্তু আমি চাই না আমার খোকা এই সকল দায়িত্ব নিক। ”
দাদিমা বললো, ” এই বড়বউ তুই চুপ কর কইতাছি। শশুড় এর মুহে মুহে কথা কইতাছা ব্যাদ্দপ বউ। আমার মানিক এই সব দায়িত্ব নিবো। তুই ওর মাথায় পোকা ঢুকাস না জানি কইয়া দিলাম। ”
–” ছেলের মাথায় পোকা ঢুকানোর অভ্যাস আপনাদের ছিল আম্মা। আমার নেই আর না কোনোদিন হবে। ”
–“তুই কি কইবার চাস হ্যাঁ? ”
–“আমি অতীত মনে করতে চাই না আম্মা। তবে চাইলে আপনারা নিজেদের অতীত মনে করতে পারেন?
–“মুখে খই ফুটছে দেহি, ত..”
রুহুল এতক্ষণ মা-দাদির কথা কাটাকাটিতে বিরক্ত হয়ে উচ্চস্বরে বলল, “সবাই থামুন। আমি সব দায়িত্ব নেবো। সিরাজপুর পরিচালনার দায়িত্ব আমি নেবো।”
–“কিন্তু খোকা”
–” কোনো কিন্তু না আম্মা, দাদাজান ঠিক ই বলেছেন এখন তো আর কেউ নেই। কে নেবে সকল ভাড় আর এমনিতেও আমার ঘাড়েই সব আসতো। তাই আমার আপত্তি নেই দাদাজান। ”
দুলাল সিরাজী খুশি হয়ে বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ। মহীবুলের চল্লিশা শেষ হওয়ার পর ই সব আয়োজন শুরু করমু। সারা সিরাজপুরে উৎসব এর ব্যবস্থা কইরা তোমারে সিরাজপুরের কর্তা বানাইয়া দিমু। আইজ আমার বড় আনন্দের দিন। ”
মালেকা ও খুশি হলো। হয়তো একটা সময় নিজের ছেলেকে দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে আজ নেই। কিন্তু হাসি নেই কেবল সুভা আর জামালের মুখে। জামাল কোনোদিন ও রুহুল কে এই আসনে দেখতে চায় নি। অন্যদিকে সুভা চায় না রুহুল তার আব্বার পরে এই দায়িত্ব নিক। বিলালের পর রুহুলের খারাপ দশা দেখা মাত্রই সে মারা যাবে। এত কিছু আর তার সহ্য হবে না।
রুহুল মেকি হাসি টেনে বসে আছে। সম্পত্তির প্রতি তার কোনোকালেই লোভ ছিল না আর না আছে। তবে রুহুল এই দায়িত্ব নিতে চায় কারণ এই দায়িত্ব নেওয়ার পর আক্রমণ তার উপর ই হবে।সেও দেখতে চায় কে তার বংশের শত্রু। রুহুল নিজ হাতে খুন করবে।
____________________
পরের দিন সকাল বেলা কাকন রন্ধনশালায় কাজ করছে।রানুর শরীর খারাপ হওয়াতে তড়িপার উপর কাজের চাপ বেশি।রানু বেশি একটা কাজ করে না। কাকনের মায়া হয় তাই কাকন সেচ্ছায় কাজে হাত লাগিয়েছে। সকলের জন্যই রান্না করছে সুভা আর কাকন সেগুলো বাটিতে বেড়ে বেড়ে সাহায্য করছে। এত গুলো দিনে কাকন বেশ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। বাইরের দাগ গুলো নেই তবে মনের দাগ গুলো ঠিক ই স্পষ্ট। কাকন এখন হাসি খুশিই থাকার চেষ্টা করে। রুহুলের একপ্রকার হুমকি, কাকন কে সর্বদা হাসি খুশি থাকতে বলেছে। কাকন এর পাশেই সামিয়া রয়েছে। মালেকাও এখন আর কাকন কে আগের মতো ঝাঝালো কথা শুনায় না। তবে দাদিমা আগের মতোই আছে। সিরাজী মঞ্জিলের পাক্কা গিন্নি বলে কথা।
মহীবুলের মা বাড়ির সব কাজ ই করে। সবার সাথেই কম বেশি কথা বলে। কেবল কাকন আর সুভার সাথে সাভাবিক ব্যবহার করে না। এমন কি ভালো ভাবে কথাও বলে না। মহীবুলের মায়ের পাতে কাকন ভাত বেড়ে দিতে চাইলে বললো,” লাগবো না আমি নিজেই নিবার পারমু। ”
কাকন এর হাত থেমে গেলো। সুভা বললো, “জাহানারা তুমি এমন আচরণ করছো কেন। এখনো কি তুমি আমার আর কাকনের উপর রেগে আছো?”
মহীবুলের মা হেসে বললো, ” আমি কি এই বাড়ির কোনো মানুষ নাহি যে রাগ করুম। আমি তো এই বাড়ির দাসি। দাসি গো রাগ করুনের অধিকার নাই বড়ভাবি।”
মালেকা মহীবুলের মায়ের থালায় ভাত দিয়ে বললো,
” মহীর মা তুই এইভাবে কস কেন। আমরা কি তরে কোনোদিন কম মনে করছি। তুই কেন দাসি হবি। এই বাড়তে আমরা ও যা তুই ও তা। এইভাবে কইতে নাই।”
–” তো কিভাবে কমু কন ছোটভাবি? ”
সুভা বললো, “আমি একজন মা হয়ে তোমার ছেলেকে খু’ন করেছি আমি জানি আমি অন্যায় করেছি। ভেবে দেখো তো তোমার মেয়ের সাথে যদি কেউ জোর জবরদস্তি করতো আর তুমি সেই অবস্থায় কি করতে। মা হয়ে, একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীর ইজ্জত হরণ করতে দিতে পারতে তুমি? ”
মহীর মা নিরুত্তর।সে মাথা নিচু করে ফেললো। মহীবুল যে সত্যিই ভয়ংকর অন্যায় করেছিল।
কাকন মহিবুলের মায়ের পা ধরেব ললো, “আমার মা নেই চাচি আম্মা। তবে এ বাড়িতে আমার তিনটি মা। আপনি আমায় রোকেয়া আপার মতোই ভালোবাসেন সে আমি জানি। আমায় আম্মার পর আপনিই সংসার কি তা বুঝিয়েছেন। আমায় কি ক্ষমা করা যায় না।আমার জন্য যা হারিয়েছেন তা হয়তো ফিরিয়ে দিতে পারবো না তবে আপনার আরেকটি সন্তান হয়ে ঠিকই থাকতে পারবো। আমায় ক্ষমা করে দিন না। ”
মহীবুলের মা কাকন কে জড়িয়ে ধরলো।কাদতে কাদতে বললো, ” আমার কোন রাগ নাই,, দুঃখ নাই কিন্তু আমার একটাই শোক আমার পোলা কেন রুহুলের মতো হইল না। আমার সন্তান হইয়া কেন আমারে রুহুলের মত নিজ আম্মারে ভালোবাসলো না।ওর বাপ না হয় পাপি, অনেক পাপ করছে আমি কি পাপ করছিলাম যার জন্য পুত্র দিয়া সুখ পাইলাম না ”
সুভা মহীবুলের মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো ” এই দুনিয়ায় খোকার মতো সন্তান একটাই দিয়েছেন আমাকে আল্লাহ। তবে খোকা তোমার গর্ভে হলেই বোধহয় ভালো হতো। অন্তত এতকিছু ওর সহ্য করতে হতো না। আর তুমিও সুপুত্র পেতে।”
কাকন সুভার দিকে তাকালো। তার স্বামীর বেদনা আজ্ও অজানা তার কাছে। সুভা যে কাকনের নানা অজানা কথার বাক্স। সুভার থেকে কি কাকন আদোও সব জানতে পারবে।
____________________
সামিয়া কাকনের কাছেই বসে আছে । সামিয়ার আজকাল কোনো কাজ নেই বললেই চলে।পাচ ওয়াক্ত নামাজ আর এই ঘর থেকে সেই ঘর। রুহুল এর কথা মতো কাকনের মন ভালো রাখার জন্যই সামিয়া তার দুষ্ট মিষ্টি কথা শুনিয়ে কাকন কে হাসায়।বেশির ভাগ সময় ই কাকনের সাথে পাড় করে। কাকন এর ও খুব ভালো লাগে। এর মাঝে রানু এসে বললো, ” সামিয়া বুবু তোমার সুয়ামি আইছে। তাড়াতাড়ি আহো।”
রানুর কথা শুনে কাকন খুশি হয়ে হাসলেও হাসি নেই সামিয়ার মুখে। আশ্চর্য হয়ে গেছে সামিয়া। কোনো খবর নেই বার্তা নেই হুট করে চলে এলো।সামিয়ার বুক ধুকপুক করছে সে সামনে যাবে কি করে। বকুলের কাছে গেলেই চিঠিতে দেওয়া হুমকি গুলো বাস্তব রূপ ধারণ করবে। আর সেই সাথে নানা কথা শুনতে হবে।
সামিয়া রানু কে বললো, “তুই যা আমি যামু না।”
–“কেন, দাদিআম্মা আমারে পাঠাইলো আপনেরে ডাকতে। আইসেন হেই রাজধানি থিকা আইছে। ”
সামিয়া বললো, “এই তুই যা তো। নাইলে মাইর দিমু। ”
রানু মাইরের কথা শুনেই চলে গেল।
কাকন বললো, ” তুমি যাও, উনি হয়তো তোমার অপেক্ষা করছে। তাই তোমার যাওয়া উচিত। ”
সামিয়া ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে কাকনের দিকে চেয়ে বললো, ” ভাবিজান আমি যামু না ”
–“কেন?”
–“আমি গেলেই উনি আমায় ঝাড়বো। ওনারে চিঠির উত্তর দেই নাই আর তাছাড়া আমার শরম করতাছে।”
কাকন হাসলো হেসে বললো, “বিশ্বাস রাখো কিছুই বলবে না। এতদিন পর এসেছে তোমায় বরং অনেক সোহাগ করবে দেখে নিও।”
সামিয়া লাজুক হেসে বললো, “ধ্যাৎ কিসব যে কও না ভাবিজান। ”
–“হুম ঠিক ই বলি আমি বুঝেছো। ”
তারপর সামিয়াকে ধাক্কা দিয়ে বললো,”কি হলো যাও।”
সামিয়া বিছানা থেকে নামলো। আয়নার সামনে যেয়ে চুল আচড়ে মাথায় শাড়ির আচল দিয়ে ঠিকঠাক হয়ে নিলো। তারপর কাকনের কাছে এসে দাত কেলিয়ে বললো, “একটা জিনিস বুঝলাম ভাবিজান। ”
কাকন বললো, “কি জিনিস?”
–“এই যে দাদাভাই অনেকদিন পর ঢাকা থিকা আসলে তোমায় অনেক সুহাগ করে। এই জন্যই তো জানো। ”
বলেই ভো দৌড় দিলো সামিয়া। কাকনের চোখ লজ্জায় বেড়িয়ে আসার উপক্রম। নিজের উপর ই রাগ লাগলো কাকনের। কেন যে সে মুখফুটে সত্যি কথাটি বলতে গেলো। আর এই সামিয়া এত কিছু বোঝে কি করে।
আর কোনো কথাই বলবে না কাকন।
_________________________
বকুল কে রানু সামিয়ার কক্ষ দেখিয়ে দিয়েছিল।তাই বকুল সামিয়ার কক্ষেই অপেক্ষা করছে। সামিয়ার নিজের কক্ষেই যাওয়ার সময় কেমন যেন অসস্তি লাগছে। তার সাথে লজ্জা তো আছেই। দড়জার সামনে দাড়িয়ে ভাবছে যাবে কি যাবে না। সামিয়া হালকা দড়জা খুলে উকি দিলো দেখার জন্য বকুল কোথায় কিন্তু দেখলো যে বকুল নেই। এর ই মধ্যে কেউ সামিয়ার সামনে ছেড়ে দেওয়া চুলের বেণি ধরে টেনে কক্ষে নিয়ে এলো। নিয়েবএসেই দরজা আটকিয়ে দিলো। আকষ্মিকভাবে এমন ঘটনায় হচকচিয়ে গেলো সামিয়া। বকুল সামিয়ার সামনে দাড়িয়ে নিজের দুহাত বুকের সাথে ভাজ করে রেখে বললো, ” এখন কি করবো বলো তো দেখি,কি শাস্তি দেওয়া যায় তোমায়?”
–“কি,,কিসের শাস্তি হ্যাঁ? ”
–” কিসের শাস্তি তাই না। দু’দুটো চিঠি লিখেছিলাম উত্তর পায় নি তার শাস্তি। আমার ঘুম হারাম করে রেখে এতদিন সিরাজপুরে সুখে থাকার শাস্তি।”
সামিয়া খাটে বসে বললো,”আসলে আমি ব্যস্ত আছিলাম তাই লিখতে পারি নাই। ”
–“তা কি এমন কাজে ব্যস্ত ছিলে শুনি?”
সামিয়া কি বলবে এখন। পরীক্ষার বাহানা দিলেও কথা শুনতে হবে তাই বুদ্ধি খাটিয়ে বললো,
–” কত কিছু ঘইটা গেলো আমাগো মঞ্জিলে তাই। ”
বকুল ও বিছানায় বসে বললো, “হুম সেই তো ঘটেছে। সেই জন্য এবারের মতো মাফ করলাম তোমায়।”
সামিয়া খুশি হয়ে বললো, “ধন্যবাদ”
বকুল সামিয়ার নিকটে গেলো। শান্তস্বরে বললো, –“সামিয়ারানি ”
সামিয়া উত্তর দিলো, “জি ”
বকুল সামিয়ার হাতের দিকে চেয়ে বললো, “তোমার ওই কোমল হাত দুটো একটু ধরি? ”
–“হুম”
–“তোমার হাতে একটু চুম্বন দেই ”
সামিয়া লজ্জা পেলো। তবে মুখে বললো, “হুম ”
বকুল হাত মুখের কাছে নিয়ে একটা চুমু দিলো। তারপর সামিয়ার আরো কাছে বসলো। তারপর বললো,
” তোমায় একটু জড়িয়ে ধরি? ”
সামিয়া বকুলের মতলব বেশ বুঝলো। সে এখন এখান থেকে কেটে পড়লে বাচে। সামিয়া নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, ” উহু, সড়েন দেখি আপনে অনেক ক্লান্ত হইয়া আছেন। আপনের জন্য পানি নিয়া আসি।”
বকুল সামিয়ার হাত ধরে নিজের বুকের সাথ মিশিয়ে নিলো। তারপর বললো, ” আমার বুকের তৃষ্ণা আগে মিটিয়ে দাও। পানির তৃষ্ণা না মেটালেও চলবে।”
______________________
সিরাজী মঞ্জিল কেমন শুনশান লাগে আজকাল। হালকা শীত এর ছোয়া পাওয়া যায় প্রকৃতিতে । শীত না আসতেই শীতের রিক্ততা যেন সব সিরাজী মঞ্জিলের পরিবেশের উপর পড়েছে। সারাদিন বাড়িতে কতজন মাতিয়ে রাখতো। বাড়িতে এখন কেবল কাকন, মালেকা, সুভা, মহীবুলের মা, দাদীমা ব্যতীত কেউ থাকবে না।
জামাল ও ছেলের শোকে কেমন ছন্নছাড়া হয়ে আছে। বাড়িতে ঢুকলেই মহীবুলের জন্য মনে কষ্ট হয়। জামাল অনুভব করে তাকে মহীবুল আব্বা আব্বা বলে ডাকছে। মহিবুলের ঘরে দিনে একবার হলেও যায় জামাল। নিজ হাতে সব কিছু নিজের মতো করে গুছিয়ে রাখে।
রুহুল নিজের সকল কর্ম সেড়ে কেবল সিরাজী মঞ্জিলে এলো। রুহুল জামালকে মহীবুলের ঘর থেকে বের হতে দেখে থেমে গেলো। জামালের এমন করুন চেহারা দেখে রুহুলের খুব খারাপ লাগলো। লোকটার প্রতি ভীষণ ক্ষোভ জমেছিল রুহুলের মনে তবে এখন আর নেই। কারণ পুত্রশোকে জামালের এমন করুণ দশা দেখে রুহুলের নিজের ই মায়া হয়। একটা সময় জামাল ও রুহুল কে ভীষণ ভালোবাসতো। কিন্তু সম্পদের তাড়নায় রুহুল কে নিজের ছেলের শত্রু মনে করতে শুরু করে। এমনকি হেলাল কে ও রুহুলের শত্রুতে পরিনত করে।
রুহুল কে সামনে দেখে জামাল কিছুটা অসস্তিবোধ করলো। রুহুল কে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলো। রুহুল ডাকলো, “চাচাজান।
জামালের পা থেমে গেলো। রুহুল জামালের কাছে গিয়ে বললো, ” আমায় ক্ষমা করবেন চাচাজান। ”
কিন্তু জামাল উত্তর দিল না।রুহুল আবারো বললো,
–“আমি আপনার গায়ে হাত তুলেছিলাম সেদিন। তার জন্য আমি দুঃখিত। আপনি আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেছেন স্বামী হয়ে এটা আমি মেনে নিতে পারি নি তাই সেদিন আপনার হাতেও আঘাত করেছিলাম। আমি হাত জোর করে বলছি আমায় ক্ষমা করে দেন।”
জামাল বললেন, “হাহ, কপালে লাত্থি দিয়া পায়ে সালাম করতে আইছো রুহুল। দরকার নাই ক্ষমা চাওনের।”
–“দরকার হলে তাই করবো চাচাজন। আপনি ভালো করেই জানেন আমার যখন রাগ হয় তখন আমি রুদ্রমূর্তি হয়ে যাই আর যখন ভালো থাকি তখন সবচেয়ে শান্তশিষ্ট হয়েই থাকি। সেদিন আমার স্ত্রীকে যেগুলো বলেছিলেন আমি সব চাচি আম্মার থেকে শুনেছিলাম।আর সেই সাথে চাচি আম্মার উপর করা নির্যাতন ও আমায় রাগিয়ে দিয়েছিল। প্রচন্ড রাগে আপনার গায়ে হাত তুলেছিলাম।”
–” দুইদিনের বউ এর জন্য তুমি নিজের চাচার গায়ে হাত তুলছো রুহুল। ভুইলা গেছিলা যে আমি তোমার চাচা হই।”
–” চাচা কখনো নিজ ভাইপোর স্ত্রীর গায়ে হাত তোলে না। ভুল আপনার ও হয়েছে আমার ও হয়েছে। আগের মতো করে কি সব হতে পারে না চাচাজান। ”
–“আমার মন মেজাজ ভালা নাই রুহুল। আমি এগুলা বিষয় কথা কইবার চাই না। ”
–” আপনার মনের অবস্থা আমি বুঝি। কারণ এই বাড়ির প্রত্যেক টা সদস্য জানে আপনি মহীকে কত টা ভালোবাসতেন।তবে আপনাকে আগের মতো দেখতে চাই আমরা সকলে। আপনাকে স্বাভাবিক হতে হবে।”
জামাল রুহুলের দিকে চেয়ে বললো,” একটা কাম করবা রুহুল? ”
–“জি বলুন চাচাজান! ”
–” আমারে আমার মহীর কাছে পাঠাইয়া দেও। আমার আর ভাল্লগতাছে না। আমি আর এই মঞ্জিল এত কিছু চাই না।আমার বুক খা খা করে,মহীর কথা মনে পড়ে।”
–“এটা তো সম্ভব নয়। আপনাকে তো চাচি আম্মার জন্য বাচতে হবে। সারাজীবন তার সাথে অন্যায় করে গেছেন।শেষ সময় টা তার সাথে ভালোভাবে থাকুন।”
–“কেন সম্ভব না আমি আর বাচবার চাই না। তর আম্মায় মহীরে খুন করার আগে আমায় করলো না কেন।আমার প্রশ্রয়েই আমার মহী ওই পাপ করতে গেছিলো। আমি তো তোর শত্রু খুন কর আমারে।”
–“আপনারা তো কম অন্যায় করেন নি। আমি চাইলেই সব দাদাজানের কাছে বলে দিতে পারতাম কিন্তু আপনাদের ছাড়া এই মঞ্জিলে থাকা আমার জন্য অসম্ভব। আপনাদের যে সারাজীবন আপন ভেবে এসেছি অথচ আপনারা সারাজীবন পর ভেবেই গেলেন। আপনি কোনোদিনো আমার শত্রু ছিলেন না। আর না আছেন। আপনি আমার আরেক আব্বা। ”
জামাল হু হু করে কেদে উঠলো। বললেন, ” আব্বা ঠিক ই কইসে সব আমার পাপের ফসল। তুই আমাগো ফালাইয়া দিতি না। ঠকাইতিও না। আমার জন্য আইজ আমি পুত্রহারা। আমার করা সব পাপের জন্য আইজ আমি নিস্ব। তোর ক্ষতি করতে চাইয়া নিজের ক্ষতি কইরা ফালাইলাম। ”
–“পাপ পাপ কেও ছাড়ে না, আর পাপিকেও ছাড়ে না। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন। আগের মতো সব ঠিক করে নিন। আসুন না আমরা একটা সুন্দর পরিবার গড়ি। আমার নিজেরও এত অশান্তি ভালো লাগে না। ”
জামাল নিজের চোখ মুছে বললো, “হ তাই করমু। আমি ভালো হইয়া যামু। আর পাপ করমু না।আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইয়া হেদায়েত চামু। ”
রুহুল জামালের হাত ধরে বলল,” চাচাজান সবার আগে নিজের স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চান। নিজের স্ত্রীর কাছে যে পুরুষ উত্তম সেই উত্তম পুরুষ। আপনি সবচেয়ে বেশি অন্যায় করেছেন নিজের স্ত্রীর সাথে। ”
–“হুম মহীর মা রে আর কষ্ট দিমু না।আমি এক্ষুণি যামু ওর কাছে। সব ঠিক কইরা নিমু। ”
জামাল চলে গেলো। তবে রুহুলের খুব ভালো লাগলো। অবশেষে মনে হচ্ছে এখন থেকে আর কোনো অশান্তি হবে না। সব ঠিক হয়ে যাবে সিরাজী মঞ্জিলে ।
রুহুল কক্ষে গেলো দেখলো কাকন উল্টো দিক হয়ে কাপড় ভাজ করছে।রুহুল পিছন থেকে যেয়ে কাকন কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কাকনের হৃদগতি মুহুর্তেই বেড়ে গেলো তবে কিছু বললো না। নিজের মতো কাজ করে গেলো। রুহুলের এই স্পর্শ গুলো যে কাকনের সবচেয়ে চেনা, সবচেয়ে প্রিয়।
রুহুল কাকনের কোনো কথা সাড়াশব্দ পেলো না। কাকনের ঘাড়ে চুমু দিয়ে বললো, “এত কাছে আছি
তবু আপনার সাড়া নাহি পাই। শেষ নিশ্বাস অব্দি আমি কেবল আপনার ভালোবাসা চাই।”
চলবে…
#দেবী
লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি (ছদ্মনাম)
কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ।
৩৯ঃ
রুহুল তার দাদাজানের কাছে যাচ্ছিলো ব্যবসায়িক কথা বলতে। কিন্তু পথিমধ্যে দেখা হয়ে গেলো বকুলের সাথে। রুহুল বকুল কে দেখে আলিঙ্গন করল। বললো, “কি রে কি অবস্থা তোর, কখন এসেছিস।? ”
–“সন্ধ্যায় এসেছি। সে আছি বেশ,তা তোর কি খবর? ”
–“আমার খবর কি আর তোর নেওয়ার সময় আছে তুই তো আমায় ভুলেই গেছিস। আর তার চেয়েও বড় কথা হলো বিয়ের আগে কত চিঠি লিখতি এখন কেবল আমার বোন টাকেই চিঠি লিখিস।আগে তো চিঠি লিখে পাগল করে দিতি যে কবে আসতে হবে তোর। ” ”
–“আসলে ব্যস্ত থাকি তো তাই আর কি। ”
–“বুঝি সব ই বুঝি। কাজের সময় ভাই ভাই কাজ ফুরালে খবর নাই তাই না। ”
বকুল মনে মনে নিজেকে দোষ দিল। আসলেই তো বিয়ের আগে রুহুল কে কত চিঠি দিয়েছে বিয়ের প্রস্তাবের জন্য। নিজের দোষ লুকাতে বকুল বললো, “তোর জন্য একটা জিনিস নিয়ে এসেছি বন্ধু। ”
–“আজ কি সুর্য উত্তর দিকে উঠেছে নাকি তোর মতো কিপটা আমার জন্য উপহার এনেছে।”
–“ধুর সালা,সত্যিই বলছি। উম এক কাজ কর ছাদে আয় ওইখানে দেবো। অনেকদিন হলো একসাথে আমাদের গল্প হয় না। ”
রুহুল হেসে বললো, “বেশ নিয়ে আয় আমি ছাদে অপেক্ষা করছি। তাড়াতাড়ি আসবি কিন্তু । ”
রুহুল কিছু একটা ভেবে নিজের কক্ষে গেলো। টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা সিগারেটের প্যাকেট হাতে নিলো। অনেক দিন পর খাওয়ার সখ জেগেছে রুহুলের। আর যেহেতু বকুল ও এসেছে সকল চিন্তা ভাবনা আজ ধোঁয়ার সাথে উড়য়ে দেবে।
রুহুল সিগারেটের প্যাকেট টা শার্টের পকেটে ভড়বে তার আগেই কেউ ছিনিয়ে নিলো। রুহুল পাশে তাকিয়ে দেখলো কাকন দুহাত কোমড়ে রেখে নাক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এমন মুখ করে রেখেছে যেন এখন রুহুল কে আস্ত চিবিয়ে খাবে।
রুহুল মুখ ছোট করে বললো, “বিবিজান আসলে ”
–” আপনি এসব তামাক দ্রব্য খান? ”
–” আরে না আমি এগুলা খাবো কেন। এগুলো তো বকুল খেতে চেয়েছিল তাই আর কি।”
–” এগুলো খেলে মুখ নাপাক হয় আপনি জানেন না। আর তার চেয়েও বড় কথা উনি খেতে চাইবে আর আপনি দেবেন হ্যাঁ। ”
–” বিবিজান আপনি তো জানেন ই আমাদের মঞ্জিলে মেহমান দের আপ্যায়ন করা পুণ্য হিসেবে মানা হয়। আর তাছাড়া ও তো আমার প্রিয়বন্ধু আর বোনের স্বামী। ওর কথার খেলাপ করা কি ঠিক হবে।”
–“বেশ উনি খাবে তো দাড়ান দিচ্ছি।”
কাকন প্যাকেট খুলে একটা রুহুলের হাতে দিলো। আর বাকি গুলো কয়েক টুকরো করে জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দিলো। রুহুল কিছু বলতে চাইলো তবে সাহস পেলো না। এর আগেও কাকন দেখেছিল এবং নিষেধ ও করেছিল। রুহুল এর মুখ টা একদম ছোট হয়ে গেলো। সে তো এগুলো সব ঢাকা থেকে নিয়ে এসেছিল। আর এটা তো বিদেশি সিগারেট। একবারের জন্য ছুতেও পারলো না রুহুল।
কাকন বললো, “এটা আপনি বকুল ভাই কে দেবেন। আর হ্যাঁ খবরদার আপনি কিন্তু স্পর্শ ও করবেন। আমাকে ছুয়ে কথা দিন আপনি আর কোনোদিনো ধুমপান করবেন না।”
রুহুল নিরুপায় হয়ে গেলো। সে সিগারেট খায় না কিন্তু সপ্তাহে অন্তত একটা টান না দিলে ভালো লাগে না। রুহুল কাকনের দুকাধে হাত রেখে বললো, ” বিবিজান আমি আপনাকে ছুয়ে এই কথা দিতে পারবো না।আমি তো সবসময় খাই না। মাঝে মাঝে এক দু টান দেই আরকি। আপনাকে ছুয়ে মিথ্যে কিথা দিতে পারবো না।”
–“ওই এক দু টান ও আর দেওয়া যাবে না। আপনি জানেন না এগুলো স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। সেদিন তো পত্রিকায় ও দেখলাম ছাপা হয়েছে এক বিখ্যাত গায়কের কথা। যিনি ধুমপান করে শ্বাসনালিতে কি যেন হয়েছে। তাই আপনি আর ছোবেন না। ”
কাকন কে একদম গিন্নীর মতো লাগছে। কোমড়ে এক হাত দেওয়া। চুল গুলো খোপা করা। নাক ফুলিয়ে রেগে রেগে কথা বলা দেখে রুহুল উচ্চস্বরে হেসে দিলো।
কাওন অবাক হয়ে বললো,”এভাবে হাসছেন কেন্ হ্যাঁ?”
–“আপনাকে একদম গিন্নী গিন্নি লাগছে। গিন্নীদের মতো স্বামী কে শাসন করতে পারেন দেখছি। ”
–“কখনো কখনো গিন্নী হতে হয়। ”
–“গিন্নী তো হলেন খুব শীঘ্রই অন্যকিছু ও হবেন।”
–“অন্যকিছু হবো মানে? ”
–“এটা আপনার জন্য চমক । তবে এটুকু বলতে পারি জানার পর আমার চেয়ে বেশি খুশি আপনি হবে। ”
—“না এখুনি বলুন না!”
–“ঠিক আছে বলতে পারি তবে তার আগে একটা জিনিস চাই আমার। ”
–“কি জিনিস? ”
–” এখন একটা চুমু দিতে হবে আর মাঝে মাঝে একদুটান দেওয়ার অনুমতি।”
কাকন মুখ ফুলিয়ে বললো “শোনা লাগবে না আমার। যান যা খুশি করুন গিয়ে আমি কিছুই বলবো না। ”
কাকনের মুখ ফুলানো দেখে রুহুল বললো, “এই রে না না আর খেতে চাইব না। আপনি যা বলবেন তাই। আমি খাবো না আমার সুন্দরী বিবিজান।”
–“সত্যিই তো। ”
–” তিন সত্যি। এই যে কান ধরছি। ”
রুহুলের কান ধরা দেখে কাকন ঝঙ্কার তুলে হাসি দিল। রুহুলের করা এই বাচ্চামি গুলো কাকন কে খুব হাসায়। আর রুহুল পলকহীন ভাবে এই হাসি দেখলো। এই সেই হাসি যা রুহুল এর সবচেয়ে প্রিয়। এই হাসি দেখতে দেখতে মৃত্যু হয়ে গেলেও ভয় নেই রুহুলের। কতদিন পর কাকন এমন করে হাসলো। রুহুলের মনে প্রেমের বীজ যে এই হাসিই রোপণ করেছিল।
_________________________
বাগানের হরেক রকমের সুগন্ধময় ফুলের গন্ধ ছাদ অব্দি পৌছে গেছে। সুগন্ধে মো মো করছে। এ অবশ্য নতুন কিছু নয়। চাদের পুর্ণ আলোয় দুই বন্ধু ছাদের কিনারায় বসে আছে। রুহুল সিগারেট ধরালো।নিজে একটান দিয়ে বকুল কে দিল।
বকুল সিগারেট হাতে নিয়ে বললো, ” তোর দাম্পত্য জীবন কেমন চলছে রে? ”
–“বেশ ভালোই আছি বিবিজানের সাথে।বলতে পারিস জীবনের সেরা সময়গুলো ওনার সাথেই কাটাচ্ছি।”
–“তোর ই কপাল। সালা তোর বোন টা আমায় একটুও ভালো বাসে না। ”
–“এই একদম আমার বোন কে নিয়ে কিছু বলবি না। মুখ ফাটিয়ে দেবো বলে দিলাম।”
–“আমাক্র মারলে তোর বোন ই কষ্ট পাবে হ্যাঁ। ”
–“এই জন্যই তো কিছু বলতে পারি না। ”
তারপর বকুল আর কিছুই বললো না। এমন ভাব করলো যেন সে অনেক কিছু ভাবছে। রুহুল বললো, –“কি রে কি ভাবছিস? ”
–“একটা জিনিস ভাবলাম বুঝলি.
–“কি জিনিস। ”
–“আমাদের সম্পর্ক টা আরো গাঢ় করবো।”
–“বন্ধু ছিলি এখন ছোট বোনের স্বামী হয়েছিস আর কি হতে চাস?”
–“বেয়াই হতে চাই! ”
–“মানে কি যাতা বলছিস, তুই উলটা পালটা কিছু খেয়েছিস নাকি? ”
–“আরে ধুর কি খাবো উলটা পালটা। তুই কি আদোও কিছু খাইয়েছিস নাকি আমাকে।”
–“তুই কি বলতে চাইছিস বল তো? ”
–“আমি আমাদের বন্ধুত্ব টা অটল রাখিতে চাই।”
–“সে তো থাকবেই! ”
–” হ্যাঁ তবে যদি আরো করা যায় মন্দ কি! ”
–“বকুল তোর কথা আগা মাথা কিছুই বুঝছি না।”
–” আমি তোর ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেবো।”
–“কিহ, ছেলে কই পেলি আর মেয়েই বা কই পেলি?”
–“হয়নি তবে হবে। দেখ যা ই হোক না কেন শেষ বয়সে তোকে আমি আমার বেয়াই হিসেবে দেখতে চাই। ”
রুহুল অবাক হয়ে বললো, “তুই এত কিছু কিভাবে ভেবে রেখেছিস ভাই। তুই তো দেখি কঠিন মানুষ। ”
–“এইটা আমি আগেই ভেবে রেখেছিলাম কিন্তু তখন তো আর জানতাম না যে তুই আমার শা’লা হবি।”
–“আগে বাবা তো হতে দে তারপর তোর বেয়াই হবো।”
–“এতদিন ধরে বিয়ে হয়েছে আর এখনো বাপ হতে পারলি না। রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। ”
–“সালা একটা মারবো। রবিনের বউ অল্প বয়সে বাচ্চা দিতে যেয়ে মারা গিয়েছিল মনে আছে তোর। সেই ভয়ে আমি বাবা হতে দেরি করছি তবে এখন আমার বিবিজান ১৬ পার করেছে। খুব শীঘ্রই বাবা হবো।”
–“তাও ভালো। আর হ্যা আগামী বার এসে যেন সুখবর টা পাই। ”
–“পাবি ইন শাহ আল্লাহ। খুব শীঘ্রই পাবি। এখন কিসের উপহার দিবি দে দেখিব।”
–“তোর এই সুখবরের জন্যই একটা অগ্রীম উপহার তোর আর আমার ভাবির জন্য। নয়ন দিয়েছে আসার সময় নিয়ে এসেছি। ”
রুহুল খুশি হয়ে বললো, “অবশেষে পেলাম। আচ্ছা আমি যাই বিবিজান কে দেখিয়ে আসি ”
–“আরে পরে যা।”
–“না ওনাকে আগে দেখাবো। তুই ও গিয়ে শুয়ে পড়।”
_______________________
মহীবুলের মা জায়নামাজে বসে মোনাজাতে কাদছেন। দুখী মানুষরা কোথাও সুখ না পেলেও নামাজে পায়। আল্লাহর ইবাদতে যে পরম সুখ। মহীবুলের মা এর নিরব কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। তবে শুধু বারবার আল্লাহ শব্দ টাই কর্ণগোচর হচ্ছে। জামাল কক্ষে এসেছে অনেক্ষণ। সচারাচর এই সময়ে তার কক্ষে আসা হয় না। যৌবন কাল থেকেই সে তার বেশির ভাগ রাত পাড় করেছে তার একান্ত কক্ষে। প্রথম স্ত্রী এসব বিষয়ে তর্ক করেছিল বলেই সে নিজ হাতে হত্যা করেছিল। অন্যদিকে মহীবুলের মা শান্ত শিষ্ট হওয়ায় যেমন খুশি তেমন ভাবে জীবন যাপন করেছে। অর্ধেক রাত নেশায় পার করে তারপর স্ত্রীর কাছে এসেছে। দেহের মিল অনেক ঘটেছে তবে মনের মিল বোধহয় আজ অব্দি করতে পারেনি জামাল তার অর্ধাঙ্গিনীর সাথে।
জামাল এখনো দাঁড়িয়ে আছে। মনের ভিতরে লজ্জা, অসস্থিবোধ, অনুশোচনা সব কাজ করছে। নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার প্রথম ধাপ হলো স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাওয়া।
বেশ কিছুক্ষণ পর মহীবুলের মা মোনাজাত শেষ করে জায়নামাজ উঠিয়ে গুছিয়ে রাখলো।
জামাল কে দেখেই মাথা নিচু করে বললো, ” আমি বুঝি নাই আপনে আইছেন। তাইলে আরো আগে মোনাজাত শেষ করতাম। আপনের কি কিছু লাগবো? ”
জামাল অত্যন্ত শান্ত ভাবে বললো, ” নামাজে কি কোনো দিন আমার জন্য কিছু চাস নাই মহীর আম্মা?”
মহীবুলের মা জামালের দিকে চাইলো। জামাল আবারো বললো, “কোনো দিন কি চাস নাই যাতে আমি ভালা হইয়া যাই, তরে যাতে ভালোবাসি। আর অত্যাচার মারধোর না করি। ”
মহীবুলের মা জামালের মুখে এমন কথা মাথা নিচু করে ফেললো আবারো। কি উত্তর দেবে সে। এমন কোনো ওয়াক্ত নেই যেখানে সে তার স্বামী আর পুত্রের ভালোবাসা-যত্ন চায় নি আল্লাহ তায়লার কাছে।
জামাল আবারো বললেন, “কি হইল কথা কস না কেন। উত্তর দে আমি শুনবার চাই। ”
মহীবুলের মা ঠোঁট চিপে কান্না আটকাতে চাইলেন। মুখ ফুটে কিছু বলতে ও যেন কিছু বাধা দিচ্ছে।
জামাল নিজ স্ত্রীর পায়ের কাছে বসে পড়লেন। দুপা জড়িয়ে ধরে কাদতে শুরু করলো। এমন ভাবে পা জড়িয়ে ধরায় মহীবুলের মা চমকে গেলো। মহীবুলের মা নিজের পা ছাড়ানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু ছাড়াতে পারলো না। শেষে বাধ্য হয়ে নিজেই বসে পড়লেন মেঝেতে। জামাল স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদলেন। কাদতে কাদতে বললেন,”আমারে মাফ কইরা দে মহীর আম্মা। আমি সারাজীবন তরে দুঃখ দিছি। কোনোদিন ভালোবাসি নাই। তর উপর খাকি জুলুম করছি।”
–“আমার পাও ছাড়েন। আপনে আমার সুয়ামি আপনে আমার পাও ধরলে আমার গুণা হইবো।”
–” না তোর কোনো গুনা হইবো না। গুনাতো আমার হইছে তোর লগে করা অন্যায়ের গুনা। মহীর আম্মা আমারে মাফ কইরা দে। মাফ কইরা দে। ”
–“আপনে আমার স্বামী। আপনের উপর কোনো ক্ষোভ নাই যে মাফ করমু। আমি তো আপনেরে কোনো দিন দোষীই মনে করি নাই পাপি হইবেন কেমনে।”
–” আমি আমার সব ভুল বুঝবার পারছি। যেইখানে সবাই বউ সন্তান নিয়া সুখে আছে সেইখানে আমি আমার একমাত্র পোলাডারে হারাইলাম তরে ও সুখ দিতে পারি নাই। আইজ আমি নিস্ব। সব আমার পাপের ফসল।”
–“এগুলা কইয়া আর কি হইবো কন।আমার মহীও ফিরা আইবো না। আর না আমার কষ্টের দিন গুলা ফিরা আইবো। আমি আপনেরে ক্ষমা কইরা দিলাম।আপনে আপনের ভুল বুঝিতে পারছেন এইডাই মেলা।”
–“তুই এতডা ভালা না হইলেও পারতি মহীর আম্মা। অন্তত আইজ আমার এত কষ্ট হইতো না তোর জন্য।
তরে ও সুখ দিবার পারতাম। ”
–” আপনে যে আমারে ভালোবাইসা জীবনের প্রথমবার বুকে নিছেন এইডাই আমার সারাজীবনের বড় সুখ।”
–” আমি আর কোনোদিন তরে কষ্ট দিমু না। বাকিডা জীবন তরে রানির মতো কইরা রাখুম। আমি ভালা হইয়া যামু দেহিস তুই। ”
–” হুম হইবেন। আমার আর কিছুই চাই না আপনার ভালোবাসা ছাড়া। আপনের ভালোবাসাই আমার সুখ।
________________
রুহুল ছাদ থেকে কক্ষে এসে উপহারটি বিছানার ঠিক মাঝ বরাবর রাখলো। উহু রুহুল নিজে এটা কিছুতেই খুলবে না। সে চায় তার বিবিজান খুলুক এবং সে যেন চমকে যায়। রুহুল এর এখন একটাই কাজ কাকন কে খোজা। রাত তো আর কম হলো না। রুহুল কক্ষের দড়জা চাপিয়ে কাকন কে খুজতে গেলো।
রুহুল কাকনের খোজ করলে জানলো কাকন বিলালের ঘরে। রাতে বিছানা ঠিক করতে হয় তাই কাকন সাহায্য করতে গেছে সুভা কে।এখন অবশ্য মালেকাও স্বামীর সেবা করে। তবে কাকন নিজেও সেবা করতে পছন্দ করে।
সুভা দুহাতে স্বামীকে ধরে রেখেছে আর মালেকা বিছানা ঠিক করে দিচ্ছে। আর কাকন ওষুধ গুড়ো করছে। রুহুল কে দেখেই কাকন চেয়ার এগিয়ে দিলো বসতে কিন্তু রুহুল বসলো না বরং নিজে বিলাল কে ধরলো। সুন্দর করে আধশোয়া করে দিলো নিজের আব্বা কে। কাকন পানির সাথে ওষুধ মিশিয়ে নিজেই খাইয়ে দেয় তবে রুহুল হাত এগিয়ে দিলো কাকনের দিকে। কাকন ও ওষুধ টুকু রুহুলের হাতে দিলো।
রুহুল খুব নিখুতভাবে ওষুধ খাইয়ে দিলো। তারপর চোখ মুছে দিলো। রুহুল তার আব্বার এমন দশা দেখে কান্না পেলো। তার আব্বা তো সেই পুরুষ যে তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবেসেছে। অথচ আজ তার আব্বার এই নির্মম দশায় ছেলে হিয়েও সুস্থ করতে পারছে না।নিজেকে অক্ষম মনে হয়। রুহুল ডাকলো, “আব্বা, ”
তারপর বিলালের হাত নিজের গালে রেখে বললো,
” আর কত কাদবেন আব্বা। আপনার এমন দশা যে আর আমাদের সহ্য হয় না। আম্মাদের দেখেছেন কতটা কষ্ট পাচ্ছেন তারা। সুস্থ হবেন না। ”
বিলাল সিরাজী নির্বিকার ভাবে শুধু চেয়ে থাকলো।তার চোখ যে কত কি বলতে চায় তা কেবল আল্লাহই বোধহয় জানে। রুহুল বিলালের হাত ছেড়ে দিয়ে সুন্দর করে তা বিছানায় রেখে দিলো। সুভার দিকে তাকালো। সুভা নিজের চোখের পানি আড়াল করতে ঘর থেকেই বেড়িয়ে গেলো। রুহুল ঠিক ই লক্ষ করল তার দুই আম্মার চোখেই পানি। রুহুল তার আব্বার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো, ” ছাড়বো না। কাউকে ছাড়বো না। আপনাদের চোখের প্রত্যেকটা জলের মুল্য দিতে হবে তাদের যারা আপনাদের এই অবস্থা করেছে। ”
কাকন রুহুলের চোখে পানি দেখলো। রুহুলের চোখ টলমল করছে যেন এখনি জলস্রোত বইবে। কাকন রুহুলের কাধে হাত রাখলো বললো, “ভেঙে পড়বেন না এভাবে। আপনার চোখে এমন পানি দেখতে চাই না আমি। আব্বার সাথে করা অন্যায়কারীর শাস্তি আপনি নিশ্চয়ই দেবেন।নিজ হাতে দেবেন ইন শাহ আল্লাহ।”
রুহুল কাকনের কথায় কোনো উত্তর দিলো না।তবে রুহুলের চোখে প্রথমবারের মতো পানি দেখে কাকনের ভিতর ফেটে গেলো। প্রিয়তম রুহুলের করুণ চোখ-মুখ অত্যন্ত বেদনাদায়ক কাকনের কাছে।
_____________________
সামিয়া নিজ কক্ষে ঘুমের ভান করে আছে। বকুলের সাথে দ্বিতীয় বারের মতো এক কক্ষে রাত কাটাতে হবে। মনের ভিতর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে সামিয়ার। কাথা দিয়ে মাথা ঢেকে শুয়ে আছে। কাথার নিচে দাত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে। অতিরিক্ত চিন্তায় নখ কাটা সামিয়ার বদ অভ্যাস। দরজা খোলার শব্দেই যেন সামিয়ার জান যায় যায় অবস্থা।
বকুল কক্ষে এসে সামিয়াকে এভাবে কাথা মুড়িয়ে শুয়ে থাকতে দেখে হাসলো। বকুলের মতো বুদ্ধিমান পুরুষ বেশ বুঝেছে যে সামিয়া কেন এমন করে আছে। বকুল পরখ করতে চায় যে আসলেই সামিয়া ঘুমিয়েছে কি না।
বকুল আলো নিভিয়ে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। কাথার ভিতরে যেয়ে সামিয়ার পায়ে শুরশুরি দিলো। সামিয়ার পায়ে শুরশুরি অনুভব হতেই বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠল। বকুল হাসতে শুরু করলো। তারপর বললো,”কি সামিয়ারানি আরো অভিনয় করবেন হ্যা?”
–“আপনে খুব খারাপ। আমার ঘুম নষ্ট কইরা দিলেন।”
–“বাহ তুমি ঘুমিয়েছিলে বুঝি? ”
–“হ, ঘুমাইছিলাম ই তো। ”
–” আচ্ছা আসো আমি ঘুম পারিয়ে দেই তোমায়। ”
–“না আপনের ঘুম পারান লাগবো না। আমি নিজেই ঘুমাইতে পারি। ”
–না আমি যেহেতু তোমার ঘুম নষ্ট করেছি আমিই নাহয় ঘুম পারিয়ে দেবো।”
–” আচ্ছা মানুষ তো আপনে এত জালাইয়েন না তো।”
–“জালালাম কই। শুনেছি সুন্দরী নারীদের নাকি ঘুমালে আরো সুন্দরী লাগে।তাই আজ তুমি ঘুমাবে আর আমি চেয়ে দেখবো তোমার রুপ। ”
–“হ কইছে ঘুমাইলে তো মুখ আরো তেল তেল দেখা যায়। আপনের তখন আমারে আর ভাল্লাগবে না তাই আপনে ঘুমান আপনের মত। আর আমি আমার মতো ঘুমামু। ”
–“আচ্ছা ঘুমাতে হবে না। কাছে আসো একটু। কতদিন একসাথে ঘুমাই না। ”
–“আপনের মতলব বুঝি, আপনে বেশি সুবিধার না।”
–“হাহাহা কি বুঝো শুনি? ”
–“কমু না! ”
–“বেশ বলতে হবে না। আমি নিজেই বলছি আমার মতলব কি।আমার মতলব তো অনেক কিছুই।তবে আজ একটু ঘুমাতে চাই। শান্তির ঘুম। কতদিন তোমায় বুকে নিয়ে ঘুমানো হয় না। একটু আসো না। ”
সামিয়া ও তো চায়। তাই সামিয়া বললো, “আমিও ঘুমাইতে চাই আপনের বুকে।”
–“তাহলে আসো। দেরি কিসের। ”
লজ্জাসরম কে আল্লাহ হাফিজ জানিয়ে সামিয়া ঝাপ দিলো স্বামীর বুকে। সুখের ঘুম দেবে তারা দুজন এখন।
চলবে…….
#দেবী
#Srotoswini_স্রোতস্বীনি