দেবী পর্ব ৩৪

0
340

#দেবী
লেখিকাঃ #Srotoswini_স্রোতস্বীনি (ছদ্মনাম)
৩৪ঃ

সামিয়ার মাধ্যমিক পরীক্ষা আজ শেষ হবে। হয়তো আজ কালের মধ্যেই বকুল এসে নিয়ে যাবে।তবে সামিয়ার বকুল কে দেখার তর সইছে না। বকুল এ পর্যন্ত দুখানা চিঠি পাঠিয়েছে সামিয়ার জন্য। কিন্তু সামিয়া একটির ও উত্তর লেখে নি। ঠিক এমন নয় লেখে নি। লিখেছে অনেকগুলো লিখেছে কিন্তু দেওয়া হয় নি। তবে নিজের ব্যক্তিগত ডাইরিটা তে রোজ বকুল কে নিয়ে কিছুনা কিছু লেখে। অনেকবার চিঠি গুলো ডাক পিওনের কাছে দিতে চেয়েছে তবে কি ভেবে রেখে দিয়েছে আল্লাহ মালুম।

সবশেষে অংক পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরলো সামিয়া।
সামিয়া হাত মুখে পানি দিয়ে শাড়ি বদলে নিলো। সুভার কথা মতো কাকম এক গ্লাস করবত নিয়ে সামিয়ার কক্ষে গেলো। সামিয়ার হাতে শরবত টুকু দিয়ে বললো ” “পরীক্ষা কেমন হলো তোমার? ”

সামিয়া শরবত পান করে বললো, ” আর কইয়ো না ভাবিজান আমি নিশ্চিত অংকে ফেল যামু।”

–“কেন ফেল যাবে কেন। মাস্টার মশাই কি তোমায় ভালোভাবে পড়ায় নি নাকি? ”

–“আরে মাস্টার তো ভালো কইরাই পড়ায় ছে। কিন্তু অংক আমার মাথায় খেলে না।”

–“কেন খেলবে না তুমি মানলাম পড়াশোনায় অমনোযোগী তাই বলে কি কিছুই পারো নি তুমি? ”

–” আমি নিজেও জানি না অংকগুলো ঠিক হইবো কি না। পরিক্ষার আগে কত ঝামেলা গেলো ভাবিজান। আমি তো ঠিকভাবে পড়তেই পারলাম না।”

কাকন আফসোস করে বললো, “হ্যাঁ সে অবশ্য ঠিক ই বলেছো।”

–“হ, এখন আরেক চিন্তা মাথায়। যদি ফেল যাই তারে মুখ দেখাইতেই লজ্জা করবো আমার। ”

–” সে তো করবেই।তুমি কেন ভালো করে পড়াশোনা করো নি। তোমার দাদাভাই হয়তো কিছুটা ছাড় দেবে কিন্তু তোমার স্বামী ছাড়বে বলে মনে হয় না। ”

–” সে দুইডা চিঠিতেই স্পষ্ট লেখছে আমি জানি ভালো কইরা পড়াশোনা করি। রেজাল্ট খারাপ হইলে আমার বকবো। আর এইডাও কইছে আমারে নাকি কলেজে ভর্তি কইরা দিবো।”

কাকন খুশি হয়ে বললো,”বাহ এ তো উত্তম পরিকল্পনা। তাহলে তো তোমার এটা অনেক ভালো সুযোগ।”

–” কিন্তু আমার তো পড়াশোনা ভাল্লাগে না ভাবিজান। আমি আর পড়াশোনা করতে চাই না।ভাবছিলাম বিয়ার পর সংসার করমু তা না আমারে হেতি পড়াশোনা করাইতে চায়। ”

–” পড়াশোনা করবে সংসার ও করবে। তোমার তো ভাগ্য ভালো তুমি পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছো। আমি যদি পেতাম আমিও করতাম। ”

–“তুমি পড়াশোনা করতে চাও? ”
–“হ্যাঁ আমার অনেক স্বপ্ন ছিল অনেক পড়াশোনা করবো। যদিও সেগুলো আর কোনো দিন পুরণ হবে না। তবে সুযোগ পেলে ঠিক ই লেখাপড়া করতাম।”

সামিয়ার ব্যাঙ্গাত্মক করে বললো, “আর কিছু না লেখাপড়া,, ধুর তার চেয়ে সংসারের কাম করা
শতগুণে ভালো ভাবিজান। ”

–” তোমার কাছে হয়তো এগুলোই ভালো লাগে কিন্তু আমার কাছে না। আমার পড়তে অনেক ভালো লাগতো।”

–” আমার জায়গায় তুমি হইলে ভালো হইতো হিহিহি।”

–” হ্যাঁ তবে তোমার জায়গায় থাকলে এমন সংসার পেতাম না কিন্তু। আর না তোমার মতো ননদ পেতাম।”

–“হুম আর না আমি তোমার মতো সুন্দরী ভাবিজান পাইতাম। ”

–“হুম তুমি বিশ্রাম করো আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

–“আচ্ছা। ”
___________________

বিকেলে দক্ষিণা হাওয়া বইছে। ছাদের কিনারায় দাড়িয়ে আছে কাকন। প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর বাতাসে সকল ক্লান্তি যেন দূর হয়ে যাচ্ছে কাকনের। দুহাত মেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো কাকন। কতদিন এভাবে প্রকৃতির এমন বাতাস অনুভব করা হয় না।

আজ চারদিন হলো রুহুল ঢাকায়। কাকন সারাদিন সকলের সাথে সময় কাটালেও নিজের স্বামীর কথা রাত হলেই বেশি মনে পড়ে। রুহুলের বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর সময় রুহুল যখন মাথায় বিলি কেটে দেয় তখন মনে হয় স্বর্গীয় সুখ। হ্যাঁ রুহুল তো বলেই ছিল রুহুলের বুকে কাকনের জন্য জান্নাতের সুখ রেখেছে। শুধু একটু ভালোবাসতে হবে সেই সুখের বিনিময়ে।

কাকন রুহুল কে ভালোবাসে ভীষণ ভালোবাসে। কাকনের ও রুহুলের মতো বলতে ইচ্ছে করে আমিও আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি। কিন্তু লজ্জাবতী কাকন যে মুখ ফুটে ভালোবাসার কথা বলতেই পারছে না। বোধহয় পৃথিবীতে সবচেয়ে দুর্লভ কাজ এটাই। নিজের ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসার কথা বলা। সারাজীবন এর জন্য পাশে থাকার জন্য হাত চাওয়া।ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করা কেন এত কঠিন।

কাকন চোখ খুলে তাকালো আকাশ পানে। আকাশে সাদা তুলোর পিছনে আসমানি রঙ। এত সুন্দর আল্লাহর সৃষ্টি।লেখিকা স্রোতস্বীনি। মেঘেরা যেন হেসে বেড়াচ্ছে। কিছুক্ষণ পরেই এই আকাশে আধার নেমে আসবে। কাকন পিছে ফিরলো যখনি তখনি মনে হলো কেউ ছাদের দরজার কাছে ছিল। কাকন এগিয়ে গেলো কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না। তবে কাকন নিশ্চিত এখানে কেউ ছিল কারণ কারো ছায়া ঠিক ই দেখেছে কাকন। কাকন ছাদ থেকে কাপড় তুলে নিয়ে নিচে নেমে গেলো। তবে মনের মধ্যে মধ্যে খুত খুত রয়ে গেলো যে কে তাকে গোপনে দেখছিল।
______________________

গত শুক্রবারে চল্লিশা করা হয়েছে হেলালের নামে। সিরাজপুরের সকল ফকির মিসকিন দের খাওয়ানো হয়েছে। এতিম দের জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে। আগের তুলনায় কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে মালেকা তবে যখনি মনে পড়ে চোখের জল ফেলে। মালেকার প্রথম সন্তান হলো হেলাল। ছেলে কে অসম্ভব ভালো বাসে মালেকা। বিলাল সিরাজী রুহুল কে তার বাকি তিন সন্তানের চেয়ে বেশি ভালোবাসতো। মুলত রুহুল বড় সন্তান হওয়াতে ভালোবাসা,আদর, যত্ন সব কিছুই সর্বাধিক পেয়েছে। আর বিষয়টি বেশি পীড়ন দিতো মালেকাকে।

মালেকা আজ অনেক দিন পর বিলাল সিরাজীর কক্ষে এসেছে। বিলাল সিরাজীর কক্ষে ঢুকে সব কিছুতে চোখ বুলালো। এই ঘরে মালেকার খুব বেশি ঢায় হয় নি। ছোট থেকেই তো জানতো বিলালের বউ হবে মালেকা।কত স্বপ্ন ছিল অথচ বিলালের একমাত্র বউ হবার, ভালোবাসা পাওয়ার যা জীবনেও হলো না মালেকার। মালেকা বিলালের কাছে বসলো। বিলাল সিরাজী পলকহীন ভাবে চেয়ে রইলো মালেকার দিকে। মালেকা বিলালের দিকে চাইলো। বিলালের চোখের পানি অনবরত পড়তেই থাকে সারাদিন। মালেকা নিজের আঁচল দিয়ে মুছে দিলো। তবে আবারো সেই চোখের জলের প্রস্রবণ বইতে থাকলো বিলালের চোখ দিয়ে।মালেকা এবার মুছলো না। খুতিয়ে খুতিয়ে দেখলো নিজের স্বামী কে। এই সেই চোখ যা বড় করে মালেকার দিকে তাকালেই মালেকা ভয়ে কুপোকাত হয়ে যেতো।বিছানায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে সুঠাম দেহ। নিজের স্বামীর ব্যক্তিত্বের আলাদা তেজ টাও নেই। মালেকা হাত দুটো ধরে স্বাভাবিক স্বরে বললো, ” হেলালের আব্বা”

বিলাল চোখের পলক ফেললো। মালেকা আবারো বললো ” শুনতাছেন হেলালের আব্বা। ”

মালেকা এবার ফুপাতে শুরু করলো। ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললো, ” হেলালের আব্বা, এই হেলালের আব্বা।”

বিলাল আগের মতোই নিরুত্তর। মালেকা হাউ মাউ করে কাদতে কাদতে ক্ষিপ্ত হয়ে বললো, “কথা কন না কেন হেলালের আব্বা।আমার লগে কথা কন। আমি আপনেরে ডাকতাছি না। আমার লগে কথা কন। ”

মালেকা হাত ছেড়ে দিয়ে বললো, “আমার হেলাল রে আইনা দেন। আমি তো আমার পোলা আর আপনের মুখ দেইখা ই এই বাড়িতে আছিলাম।আপনে ভালো হইয়া যান আর নাহার আমার হেলাল রে আইনা দেন। আমার হেলাল তো আর নাই। আমি নিয়া থাকমু। ”

কথাটি বলে মালেকা মেঝেতে বসে পড়লো। নিজের মতো কাদতে থাকলো। তারপর আবারো বললো, “আপনে খুশি হইছেন তাই না। আপনে তো খুশি হওয়ার কথা। আমার পোলারে তো আপনে ভালোবাসেন নাই। মইরা গেছে আপনের তো আত্মা শান্তি হওয়ার কথা হইছে শান্তি। ”

কাকন বিলাল কে রাতের ওষুধ খাওয়াতে এসেছিল। বিলালের কক্ষে এসে মালেকার এমন কথায় কাকন এগিয়ে এলো। কাকন মালেকা কে টেনে বিলালের কাছে বসালো। কাকন মালেকা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললো, “শান্ত হন ছোট আম্মা,,শান্ত হন। ”

মালেকা কাকন কে ধাক্কা দিয়ে বললো, “কেন শান্ত হমু আমি কেন শান্তি হমু। আমার, আমার পোলাডারে কোনোদিন ভালোবাসে নাই। এমন একটা বাপ সে যে বাইচা থাইকাও নিজের পোলারে এক মুঠ মাটিও দিলো না।”

–“উনি তো আর দশটা স্বাভাবিক বাবাদের মতো না ছোট আম্মা। কিভাবে দেবে বলেন। ”

–” উনি সুস্থ থাকলেও দিতো না। উনি বাপ নামের কলঙ্ক। বাইচা থাকতে ও জানাজায় গেলো না,,মাটি দিবার পারলো না। সন্তানের সাথে বেইমানি করলে এমন ই হয়। ওনার পাপের বিচার এগুলা। আপা ঠিক ই কইছে ওনার কোনো ক্ষমা হয় না। ওনারে আমরা কেউ ক্ষমা দিমু না।মইরা গেলেও না।”

–“আপনারা কেন ক্ষমা দেবেন না সে আমি জানি না ছোট আম্মা। তবে এভাবে ওনার সামনে এমন করলে ওনার অবস্থা আরো অবনতি হবে। তাই দয়া করে এরকম করবেন না।”

–” ওনারে কেমনে ক্ষমা করমু কও। কোনোদিন আমারে ভালোবাইসা কাছে টাইনা নিছে। সুহাগ করছে। দেহের মিল হইলেই সংসার হয় না ভালোবাসা ডাই আসল।”

কাকন নিরুত্তর। বিলালের দিকে চাইলো দেখলো বিলাল তাদের দিকে চোখের জল ফেলছে। মালেকা আবারও বললো, যরুহুল তোমারে কত্ত ভালবাসে বউ। তোমাগো দেইখা আমার কইতে ইচ্ছা করে রুহুলের আব্বা কেন রুহুলের মত হইলো না। অন্তত আমার সংসার জীবন ডা আইজ অন্যরকম হইতে পারতো।মরনের আগে সুয়ামিরে ভালোবাইসা মরতে পারতাম”

–” অতীত হলো বর্তমানের কাল। এটাকে আকড়ে ধরে রাখলে নিজেই নিস্তেজ হয়ে যাবেন। তাই এগুলো না ভেবে বর্তমান নিয়ে বাচুন। আব্বাকে একটা বার ক্ষমা করে দিন। অভিমানে আব্বার কাছে আসেন না, কখনো হাত ধরে পাশে বসেন না। ভেবে দেখুন উনি যে কাদে হয়তো আপনাদের কথা ভেবেই।”

–” কিন্তু আমার যে সারাজীবন তার ভালোবাসা না পাওনের আক্ষেপ থাইকা যাইবো তার বেলা। ”

–“আক্ষেপ আফসোস এগুলো হয়তো আব্বার ও আছে। একটা বার চোখের দিকে চেয়ে দেখুন না কেমন নিরবে চোখের জল ফেলে।মুখ ফুটে একটু কথা ও বলতে পারে না। দুটো স্ত্রী থাকতেও কেউ তার দিকে হাদিমুখে তাকায় না। ”

–“ভালোবাসলে ভালোবাসা পাওন যায়। আপারে তাও ভালোবাসছে কিন্তু আমারে ”

–“বাসে নি তাইতো। তবে স্বামী যখন ছিল আপনাদের জন্য অনুভূতিও হয়তো ছিল। তাই আপনারা দুজন ই ওনাকে ক্ষমা করে দেন। এটাই ওনার শাস্তি আপনাদের ক্ষমা হয়তো ওনাকে শান্তি দেবে।”

মালেকা আর কাকন দুজনেই চেয়ে রইলো বিলালের মুখপানে।
______________________

ঘড়ির কাটা এগারোটার বেশি। প্রত্যেক নিজ নিজ কক্ষে ঘুমে তলিয়ে গেছে। পুরো সিরাজপুর নিরব।

একের পর এক মদের গ্লাস শেষ করছে মহীবুল। জামাল ও সাথে বেশ আরামে নিজের গুপ্ত কক্ষে আধশোয়া হয়ে মদ গিলছে। মহীবুলের মদ খাওয়া আজ যেন বেশি হয়ে যাচ্ছে। তবুও খেয়েই চলেছে।

মহীবুল চোখ বন্ধ করলেই কেবল চোখে ভাসছে কাকনের ফর্সা উন্মুক্ত পেট। কাকন যখন বিকেলে দুহাত মেলে দাড়িয়ে ছিল বাতাসে কাকনের পেট এর কাপড় সড়ে গিয়েছিল। মহীবুল চিলেকোঠার ঘরে যাওয়ার জন্য ছাদে উঠেছিল। কিন্তু দরজার কাছে কাকন কে দেখেই নিজের ভেতরের কামুকতা জেগে উঠেছিল।লেখিকা স্রোতস্বীনি। মহীবুল চোখে যেন বার বার ভাসছে সেই দৃশ্য। মহীবুল গ্লাসে আবারো মদ ঢালল। চোখের সামনে থেকে দূর করতে চায় এমন দৃশ্য।

জামাল মহীবুলের এত খাওয়া দেখে বললো, ” কিরে মহী আইজ তুই এত গিলতাছা কেন?

–” মাথার ভিতর জা*রা চিন্তা ঘুরতাছে আব্বা সেই জন্য আইজ এইডা খাইয়া মাথারেই উল্টায়া দিতে চাইতাছি।

–“হাহাহা,,তা আমার বাপজানের কি চিন্তা ঘুরতাছে শুনি?”
মহীবুল আবারো মদ গিলে বললো, ” আমার কাকন রে ছুইতে ইচ্ছা করে আব্বা। ”

–” ছুইবা ছুইয়ো,, তুমিই তো ছুইবা। সব জিনিস কি একা রুহুলের নাকি,,তোমার ও হক আছে। ”

–“হের লিগাই আমি আপনেরে এত ভালোবাসি আব্বা। আপনে ছাড়া আমারে কেউ বোঝে না। কেউ ভালোবাসে না। ”

–“তরে ভালোবাসমু না তো কারে ভালোবাসমু। দশটা না পাচটা না একটা মাত্র পোলা তুই আমার।

–” হ,, একটাই। আচ্ছা আব্বা আমরা এখুন একা হইয়া গেলাম তাই না আব্বা।”

–” হ সা* কপাল ডাই মন্দ হইয়া যাইতাছে দিনের পর দিন। আমাগো দলের হবি মরলো, আবার হেলাল ডাও মরলো। দিন দিন কেমন জানি একা হইয়া যাইতাছি। তার উপুর রুহুল এত চর লাগাইছে সিরাজপুরে চোরা কারবার ও করতে পারতাছি না।”

মহীবুল মদের গ্লাস ছুড়ে মারলো দেয়ালে। ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,”আমি ওই রুহুল রে খুন করমু।এখুনি খুন করমু।”

–“হ আমিও খুন করমু। ওরে খুন কইরা আমি রাজা হমু। আমি সব্বাইরে খুন করমু।ওর ওই বউ রে আগে খুন করমু। আমার হাত ভাংছে ওই মা*র জন্য। আমি হাত দিয়া ঠিক ভাবে কাম ও করতে পারি না।”

–” হ ঠিক। ওই বান্দি রে আগে খুন করমু। আমি নাকি ওরে খারাপ নজর দেই ওর রুহুল ভা** এর কাছে বিচার দিছিলো।কি মাইর ডাই না দিছিলো। আইজ
ওরে ছাড়ুম না। ”

–“হ্যাঁ যা ওরে শেষ কইরা দে। আইজ তো রুহুল ও নাই। যা ওরে খুন কইরা দে। যা এখুনি যা।”

মহীবুল শয়তানি হাসি হেসে ঢুলতে ঢুলতে বেরিয়ে গেলো জামালের গুপ্ত কক্ষ থেকে। তারপর হাটতে হাটতে সিড়ির কাছে গেলো।সিড়ি বিয়ে দোতলায় রুহুলের কক্ষের সামনে পৌছালো। কক্ষের দরজায় কয়েকবার ধাক্কালো মহীবুল কিন্তু দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারলো না মহীবুল।

মদ খেয়ে এমনিতেই মাতাল হয়ে আছে মহীবুল। তার ওপর দরজা না খোলায় মহীবুলের রাগ উঠে গেলো। মহীবুল আরো জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।

কাকন ঘুমে বিভোর ছিল। দরজায় করাঘাতে ঘুম ভেঙে গেলো কাকনের। কাকন ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলো রাত ১২টার অধিক। কাকন কিছুক্ষণ ভাবলো কে আসতে পারে। খুলবে নাকি খুলবে না। তারপরে বললো, “কে, কে দরজা ধাক্কাছেন এত রাতে? ”

কিন্তু মহীবুল কোনো উত্তর দিলো না। নিজের মতো দরজা ধাক্কাতে লাগলো। কাকন বিছানা থেকে নেমে দরজার সামনে দাড়ালো। হঠাৎ ভাবলো রুহুল এসেছে হয়তো। কারণ এর আগেও কয়েকবার কাজ থেকে অনেক রাত করে রুহুল ফিরেছিল। কাকন খুশি হয়ে দরজা খুলে দিলো কিন্তু দরজা খুলে দিলো। খোলার পর কাকনের হাসি মিলিয়ে গেলো। দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে স্বয়ং মহীবুল। কাকন মহীবুল কে দেখেই ভয় পেয়ে গেলো।লেখিকা স্রোতস্বীনি। দরজার পাল্লা ধরে আটকে দেবে তার আগেই দরজায় বল প্রয়োগ করেই কাকনের কক্ষে ঢুকে গেলো। কাকন বললো, “আ,,আপনি কেন এসেছেন। বের হন বলছি। ”
মহীবুল দরজা আটকিয়ে কাকনের দিকে এগোতে এগোতে বললো, “হ আমিই আইছি। বাহির ও হমু তয় তার আগে তোমারে একটু আদর-সোহাগ করমু। ”

কাকন পিছাতে পিছাতে বললো, “কি যা তা বলছেন। দেখুন বের হন আমার ঘর থেকে। আমি কিন্তু আপনার ভাই কে বলে দেবো সব। ”

মহীবুল কাকনের হাত ধরে বললো, “যা এখুনি ডাক তর ওই ভা** রে দেখি আইসে নাকি। ”

–“ছাড়ুন বলছি। আমি কিন্তু চিৎকার করবো।”
–“হাহা যা চিৎকার কর যা ডাক।”
–“দাদাজান,, আম্মা,,,আমাকে বাচান,,,, আম্মা,,দাদ উম্ম উম। ”

মহীবুল আরেক হাত দিয়ে কাকনের মুখ চেপে ধরলো। বললো,”কর চিৎকার নে কর মা*, বান্দির বেটি তরে আইজ আর ছাড়মু না। মেলা জালাইছা আমাগো। আইজ তর সব তেজ বাইর করমু আমি।”

কাকন মহীবুলের হাতে কামড় দিয়ে দরজার দিকে অগ্রসর হলো। দাদাজান বলে চিৎকার করে উঠলো। দরজার খিল হালকা খুলতে সক্ষম হলো। তার আগেই কাকন কে বিছানায় ছুড়ে ফেললো মহীবুল। কাকনের দিকে ঝুকে আবারো হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বললো, আইজ তরে কেউ বাচাইতে আসবো না। সবাই ঘুমের রাজ্যে চইলা গেছে। কাল সকালে হেলালের মতো তর লাশ তিনতলায় পইড়া থাকবো। কেউ কিচ্ছু বুঝতে পারবো না। হাহাহাহা।”

কাকন মহীবুলের কথায় কেদে দিলো। মরার আগে কি রুহুল কে ভালোবাসার কথাটাও বলতে পারবে না?

চলবে…..

#দেবী
#Srotoswini_স্রোতস্বীনি

বিদ্রঃ দয়া করে কেউ কপি করবেন না। ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করে পাশে থাকবেন, ধন্যবাদ।

®️ Srotoswini-স্রোতস্বীনি ✍️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here