দু’মুঠো_প্রেম
ফারজানা_আফরোজ
১০
আরিফ কিছু বলতে যাবে তার আগেই অরিন এমন একটি কাজ করে বসলো যাতে আরিফের চোখ কপালে। রসগোল্লার মতো চোখগুলো তাকিয়ে আছে অরিনের দিকে,
অরিন আরিফের মুখ চেপে ধরে অন্য হাত আরিফের ঘাড়ে রেখে চিমটি কেটে মিষ্টি হেসে বলে উঠলো,
— আসলে হয়েছে কি ফয়সাল ভাই, আপনার এই বন্ধুর সাথে আমার দুই মাসের পরিচয়। তো উনি আমাকে অনেকবার প্রপোজ করেছে রাজি না থাকায় এখন সে নালিশ জানাতে আসছে আপনার কাছে। একটু বুঝিয়ে বলুন আপনার এই অকেজো বন্ধুকে যে, একটা মেয়ের ভালোবাসা পেতে অনেক কাঠখড় পুড়াতে হয়।
আরিফ যেন অরিনের কথার জালে আটকে পরে চুপচাপ হয়ে গেছে। সে হিসাব করছে তাদের পরিচয় এক সপ্তাহও হলো না কিন্তু এই মেয়ে বলছে দুইমাস। এক বাজার থেকে কিনে আরেক বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে ফেলবে এই মেয়ে তাকে। ফয়সাল তখন হট্ট হাসিতে মেতে উঠলো।
— ছিঃ আরিফ তোর থেকে এমন কিছু আশা করেনি। বাই দা ওয়ে, শালীকা যাও তোমরা পিছনের সিটে বসে নিজেদের মধ্যে সব ঠিকঠাক করে নাও আর এইদিকে আমরাও।
অরিন যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। কিন্তু এখনও আরিফের মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে সে বলে দিবে ফয়সালকে তাই কোনো রিস্ক না নিয়ে আরিফের হাত ধরে টেনে পিছনে গিয়ে বসে পড়লো। আদুরী সব কিছু ভালো করে লক্ষ্য করে মুখ ফুলিয়ে বলল,
— আগে জানলে কখনই আসতাম না। তোমরা সবাই কাপল হয়ে ঘুরতে যাচ্ছো আর আমি কিনা একা একা ঘুরবো।
আদিবা চোখ পাকিয়ে কড়া গলায় বলল,
— বাচ্চা মেয়ে বাচ্চাদের মত থাকবে একদম বড়দের মত কথা বলবে না। বেশি পকপক করলে গাড়ি থেকে নামিয়ে বাসায় দিয়ে আসবো।
আদুরী বলল,
— ওকে দেও। আমিও গিয়ে আব্বুকে বলব, জানো আব্বু আপু না ওই রাজাকারের বাচ্চার সাথে সাজেক ঘুরতে যাচ্ছে, ওরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে। তখন দেখবে তোমার কি হয়।
আদিবা নিরুপায় হয়ে বলল,
— একদম মিথ্যা কথা বলবি না। আমার কোনো সম্পর্ক নেই এই লোকের সাথে।
— নাহ থাকুক। আমাকে না নিয়ে গেলে বলে দিবো।।
— ওকে তোকে নিয়ে যাবো ।
— গুড গার্ল।
ফয়সাল তখন আদুরীকে জিজ্ঞাসা করলো,
— রাজাকারের বাচ্চা কে?
আদুরী তখন দাঁত বের করে হেসে দিয়ে বলল,
— তুমি। আব্বু তো তোমাকে রাজাকারের বাচ্চা বলেই জানে হিহিহিহি।
শশুর মশাইয়ের প্রতি এক রাশ রাগ হলো ফয়সালের। মনে মনে ভাবতে লাগলো সাজেক থেকে আসার পরেই শশুর মশাইয়ের একটা ব্যাবস্থা সে করবে।
আদিবার চিন্তা হচ্ছে অরিনকে নিয়ে। পিছনে তারা দুজন কি করছে কে জানে। বাস এখনও ছাড়ে নাই তাই সে সিট থেকে দাঁড়িয়ে উল্টো ঘুরে পিছনে তাকিয়ে দেখলো অরিন বেশ রেগে আছে। আরিফ তাকে টিজ করছে। আদুরী চিপসের প্যাকেট জানালা দিয়ে ফেলবে বলে ফয়সালের কোল থেকে নেমে জানালার কাছে গিয়ে হাত বাড়ালো তখনি বাস ছেড়ে দেওয়াতে দুই বোন এসে ফয়সালের গায়ের উপরে পরে গেলো।
— বাহ বাহ আগে একটা পাই না এখন দুজনেই দেখছি আমার কোলে উঠার জন্য পাগল হয়ে গেছে। একেই বলে ভালোবাসা।
— ভালোবাসা না ছাই। ইচ্ছা করে পড়েনি বাস ছেড়ে দেওয়াতে পড়েছি।
আদিবা নিজের সিটে গিয়ে বসলো আদুরী ফয়সালের কোলে চিপস খেয়ে ফয়সালের প্যান্টে হাত মুছতে লাগলো বেচারা ফয়সাল মুখ বুজে সব সহ্য করতে লাগলো।
অন্যদিকে,
— ওই তুমি মিথ্যা কেন বললে? আমাদের পরিচয় কিভাবে দু মাস?
— মাথার ভিতরে গিলু আছে আপনার? আপনি যদি বলতেন সত্য কথাগুলো তখন আপনার বন্ধু আমাকে তো মরিচ ছাড়াই চিবিয়ে খেত। ওহহ গুড কেন যে আমাদের দুই নিষ্পাপ বান্ধবীর সাথে আপনাদের দুই বন্ধুর দেখা হলো? জীবনটা তেজপাতা বানিয়ে ফেলতেছেন এখন।
— আমার সামনে আর কোনোদিন গুড শব্দটি ইউজ করবে না। পছন্দ করি না আমি এই শব্দ কারণ, আল্লাহতায়ালা কোরআনে বলেছেন…
“হে রাসূল! আপনি বলে দিন ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি এক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি, কারো থেকে জন্ম নেন নি। তাঁর সমতুল্য বা সমকক্ষ্য কেউ নেই।”
আর যদি আমরা হিন্দুদের ছান্দগ্য উপনিষদের দিকে যায় তাহলে দেখা যাবে অধ্যায় ৬, পরিচ্ছেদ ২, অনুচ্ছেদ ১ এ উল্লেখ করা আছে…
“বলো তিনিই আল্লাহ যিনি এক ও অদ্বিতীয়। স্রষ্টা মাত্র একজনই দ্বিতীয় আর কেউ নেই”
আর যদি গুড এর সাথে ফাদার যুক্ত করি তাহলে হয় গডফাদার এর অর্থ দাঁড়ায় সৃষ্টিকর্তার বাবা।
কিন্তু মহান আল্লাহ এর কোন লিঙ্গ নেই। আর যদি GOD এর সাথে S যুক্ত করি তাহলে হয় GODS এর অর্থ অনেকগুলো সৃষ্টিকর্তা কিন্তু ইসলামে অনেকগুলো সৃষ্টিকর্তা বলে কিছু নেই।
যার প্রামণ হিন্দুধর্মের শ্বেতা পত্র উপনিষদে অধ্যায়-৬ পরিচ্ছে্দ-৯ এও আছে….
“তাঁর কোন বাবা মা নেই, তাঁর কোন প্রভূ নেই, তাঁর চেয়ে বড় আর কেউ নেই।”
সুতরাং বলা যায় আমরা ইংরেজীতে god নামে আল্লাহ কে ডাকবো না, প্রয়োজনে Almighty ব্যবহার করবো। আল্লাহ ডাকটি কত মধুর। শুনতে যেমন ভালো লাগে ডাকতেও তেমন ভালো লাগে। আল্লাহ্।।
অরিন অনেকটা অবাক হলো। সে ভাবেনি আরিফ এমন ধরনের কথা বলতে পারে।
— তাহলে তো আমরা অনেক বড় ভুল করি প্রতিদিন। ধন্যবাদ, ভুল শুধরে দেওয়ার জন্য, ওহ হ্যাঁ আপনি তো হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন, ধর্ম পরিবর্তনের ইচ্ছা আছে না কি?
— একদমই নয়। আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে দুইজন হিন্দু ফ্রেন্ড ছিল সেই কারণে একটু আকটু জানি। তবে ধর্ম পরিবর্তন করে নাস্তিক হতে চাই না। আমি মুসলমান এইটা আমার বড় পরিচয়।
ভীষণ অবাক আর খুশি হলো অরিন। আরিফের মুগ্ধকর কথা বার্তা তাকে মুগ্ধ করে ফেলেছে। শান্ত চোখে তাকিয়ে কিছুক্ষণ দেখলো আরিফকে। আরিফ ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই সে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বাহিরের দিকে নজর নিক্ষেপ করলো।
আরিফ ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
— আমরা কি বন্ধু হতে পারি? বন্ধু তো হতেই পারি কজ তোমার জন্য প্রাণ প্রিয় বন্ধুকে মিথ্যা বলেছি। তোমাকে হেল্প করানোর জন্য হলেও তো বন্ধু হতে পারি আমরা?
কয়েক মিনিটে আরিফের কথায় মুগ্ধ হয়ে অরিন রাজি হয়ে পড়লো। নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে মনে মনে একটি কবিতা বলল আরিফ,
আমি জয় করেছি আজ-
বিশাল সিন্দু,
জয় করেছি –
পর্বতমালা হিমালয়;
যা ছিল অসাধ্য,
করেছি যেন সব সাধ্য।
ফয়সাল বেশ কিছুক্ষন ধরে তাকিয়ে আছে আদিবার দিকে। আদুরীর কারণে সে কিছুই বলতে পারছে না হাজার হোক ছোট বাচ্চা তার সামনে এমন আচরণ করা উচিৎ নয় যার ফলে খারাপ কিছু হতে পারে। আদুরী ফয়সালকে জড়িয়ে ধরে চিন্তা ভাবনাহীন ভাবে ঘুমিয়ে পড়েছে। তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে নিশ্চিন্তে এই বুকে ঘুমাতে পারবে, যেখানে তার কোনো ভয় নেই। এই প্রথম ফয়সাল তার বুকে কিছু একটা অনুভূতি বুঝতে পারল। ছোট একজন ভাই অথবা বোন থাকা কতখানি জরুরি এখন সে বুঝছে। আদুরীর মাথায় এক হাত বুলিয়ে দিয়ে আরেক হাতে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ অনুভূতি নিতে শুরু করলো। আদিবার নজর এই দুই ব্যক্তির উপর। মনে হচ্ছে, ফয়সাল ও আদুরী একে অন্যের বহু পরিচিত। যে কেউ দেখলে ভাববে এই ছেলে হয়তো এই বাচ্চাটির বাবা নয়তো ভাই। দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করে রাখলো আদিবা। চুলগুলো খোলে দিয়ে জানালার বাহিরে তার দৃষ্টি। হঠাৎ করেই ফয়সাল বলে উঠলো,
— এই শোন, এই মেয়ে, আরে তোমাকেই বলছি। এই মেয়ে, এই…. আজব তো। তোমাকে জলজ্যন্ত একটা মানুষ ডাকছে তুমি শুনছ না?
ফয়সালের কণ্ঠস্বর কানে আসলেও না শোনার ভান করে বাহিরে তাকিয়ে আছে আদিবা। সে চায় আরো ডাকুক তাকে ডাকতে ডাকতে যখন বিরক্ত হবে তখন আরো বিরক্ত করার জন্য তো সে আছেই।
প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে ফয়সাল আদিবার চুল ধরে টেনে বলল,
— চুলগুলো খোঁপা করবে নাকি কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলবো?
চলবে,
বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। বিষাক্ত মায়াজাল বইটি প্রী অর্ডার শুরু হয়ে গিয়েছে।