দু’মুঠো_প্রেম ফারজানা_আফরোজ ৮

0
1586

দু’মুঠো_প্রেম
ফারজানা_আফরোজ

সবুজ ঘাসের উপর এলোপাতাড়ি ভাবে শুয়ে আছে অরিন আর আদিবা। আদিবার দৃষ্টি খোলা আকাশের সেই নীল সাদা মেঘের উপর। অরিনের দৃষ্টি আদিবার উপর। বাড়ির পিছন দিকে সবুজ ঘাস আর বিভিন্ন গাছের মেলা। আদিবার মন খারাপ হলেই সে এইখানে এসে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকবে। বান্ধবীর সেদিন চলে আসা বারবার অরিনের মনকে আকুল করে তুলেছিল। সকাল হতে না হতেই ব্যাগ পত্র নিয়ে চলে আসে আদিবার বাসায়। অরিনকে দেখে মুখে মিষ্টি হাসি দিয়ে তাকে নিয়ে চলে আসে বাড়ির পিছন দিকটায়।

– কি হয়েছে তোর? ফয়সাল ভাই কিছু করেছেন?

– কিস করেছে গালে।

– কিহ। ছিঃ উনার মত মানুষ কিনা এখন এইভাবে নিচে নেমে যেতে পারে। ভাবলেই রাগ হচ্ছে। আজকেই উনার পেজ থেকে লাইক উঠিয়ে ফেলবো। গ্রুপ থেকে লীভ নিবো। আইডি থেকে ব্লক মারবো। উপরে উপরে এমন ভাব নিয়ে চলে যেন ভাজা মাছটি উল্টিয়ে খেতে জানে না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে লুচু নাম্বার ওয়ান

– একটা প্ল্যান করেছি শুনবি?

ভ্রু জোড়া কুচকালো অরিন। আদিবার শান্ত কথাগুলো তাকে ভীষণ ভাবাচ্ছে। কারণ, যখন আদিবা ভীষণ কষ্টে কিংবা রেগে থাকে তখন সে এইভাবে কথা বলে। ভয়ে ভয়ে বলল,

– কি প্ল্যান করেছিস?

– ফয়সাল নামক বাজে লোকটির মুখোশ আমি সবার সামনে তুলে ধরবো। যেভাবেই হোক তাকে আমি শাস্তি দিবো।

– কিন্তু কিভাবে?

– উনার প্রেমের জালেই ফাঁসাবো উনাকে। কিন্তু তোর একটা হেল্প লাগবে।

অরিন ভয়ে কেঁপে উঠলো। ফয়সালের সাথে গেম খেলা মানে নিজের প্রাণ হাতে নিয়ে খেলা করা। তবুও বেস্ট ফ্রেন্ডের মনকে শান্ত করার জন্য হেল্প তো তাকে করতেই হবে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

– কি হেল্প?

– তুই আজ আব্বুকে গিয়ে বলবি আমরা বেশ কিছু ফ্রেন্ড মিলে সাজেক ঘুরতে যাব। তুই বললে আব্বু এত ঘেঁটে দেখবে না। সাজেক যেহেতু কাপলদের জন্য কিংবা প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য বিশেষ ভ্রমনকর সেখানেই নিয়ে যাবো পাজি ফয়সালকে। কিছুদিন উনার সাথে নাটক করে সব রেকর্ড করবো ফোনে। সুযোগ বুঝে নেট জগতে ভাইরাল করে দিবো।

– সবই বুঝলাম কিন্তু পরে যদি খারাপ কিছু হয়।

– কিচ্ছু হবে না ট্রাস্ট মী। কিন্তু আন্টির শরীরের কথা ভেবে ভাবছি তোকে নিবো না।

হকচকিয়ে উঠলো অরিন। ভয়ঙ্কর মুহূর্তে কিছুতেই সে আদিবাকে একা ছাড়বে না। ফয়সাল হলো হিংস্র পশু যখন তখন কি রূপ নেয় তা বুঝা মুশকিল তার উপর তাকে জব্দ করার জন্য এই প্ল্যান। কিছুতেই প্রিয় বান্ধবীকে সে একা ছাড়বে না। মায়ের জন্য কষ্ট হচ্ছে হঠাৎ তার মাথায় একটা প্ল্যান আসলো, খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,

– সমস্যা নেই। মাম্মী, বেশ কিছুদিন ধরে বলছে নানু বাড়িতে যাবে। আমি বরং আজকে গিয়ে বলব উনি নানু বাড়িতে গিয়ে ঘুরে আসুক আর আমরাও ফয়সাল ভাইকে শায়েস্তা করার জন্য সাজেক ঘুরে আসি। বাই দা ওয়ে ফয়সাল ভাইকে নিমন্ত্রণ দিবে কে?

– এই ব্যাবস্থাও আছে এখন তুই চল আব্বুর কাছে।

দৌঁড়ে চলে গেল দুইজন। প্রথমবার বারণ করার পর মিষ্টার নিজাম উদ্দিন দেখলেন অরিন আর আদিবার মন খারাপ হয়ে গেছে। মেয়েদের মুখের কষ্ট কিছুতেই উনি মানতে পারেন না তাই রাজি হয়ে পারমিশন দিলেন তবে উনার এক শর্ত আদুরীকে নিয়ে যেতে হবে।

– ওরো এখন ঘুরাঘুরি করার বয়স। তোমরা যেহেতু যাচ্ছ তাহলে ওকে নিয়ে যাও সাথে করে। ভালো মতে খেয়াল রেখো ছোট বোনের।

ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও রাজি হলো আদিবা। আদুরী তো খুশিতে সবার গালে পাপ্পি খেতে লাগল। মনের ভিতর তার রঙিন সুর,

– সাজেক সাজেক না বলেও আমি সাজেক যাবো রে….

হলুদ জামা, ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক, চোখে গাঢ় কাগল, গালের তিনটা আরেকটু কালো করার জন্য আইলেনার লাগালো আদিবা। আজ তাকে ভয়ংকর সুন্দরী লাগছে। চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে এক পাশে রেখে অন্য পাশে ওড়না দিয়ে অরিনের দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর হাসি দিয়ে বলল আদিবা,

– কি রে অরি পাখি কেমন লাগছে আমাকে?

– আজ ছেলে হলে তোকে কিডন্যাপ করে বিয়ে করতাম। ফয়সাল ভাই শুধু শুধু তোর প্রেমে পড়েনি। মায়াবতী, সুন্দরী, কেশবতি মেয়েকে দেখলে সবাই প্রেমে পড়বে।

– ফয়সাল ইজ নট ভাই হি ইজ ঘরের ময়লা ছাল। বাই দা ওয়ে আমাকে দেখে টাস্কি খাবে অসভ্য লোকটি?

– অবশ্যই।

দুই বান্ধবী তৈরি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য যেতে লাগলো। আজ তাদের প্ল্যান হলো ফয়সালের সামনে গিয়ে ঘুরে ঘুরে কথা বলা, জোরে জোরে হাসতে থাকা, সাজেক যাবার ব্যাপারে একজন আরেকজনকে এমনভাবে বলবে যেন ফয়সাল শোনে কথাগুলো। আদিবা যাচ্ছে মানে ফয়সালও যাবে। সেখানেই হবে আসল গেম।

______________

পার্কের বেঞ্চে এসে বসেছে আদিবা ও অরিন। তাদের নজর ফয়সাল কোথায় সেদিকে। হঠাৎ ফয়সালের উপস্থিত টের পেয়ে অরিন গদগদ করে বলল,

– আদুরে আমার কি যে ভালো লাগছে। আমরা সাজেক যাবো। ওয়াও, নিজের দু হাতে মেঘের ভেলা স্পর্শ করতে পারবো। আকাশের সাথে মিশতে পারবো। ভাবলেই নাচতে ইচ্ছে করছে।

– শুধু কি তোর? আমিও তো ভীষণ খুশি। ভাবছি বাসে করে যাবো। দুই বান্ধবী আড্ডা দিতে দিতে পারি জমাবো মেঘের রাজ্য। মেঘের রাজ্যেতে যদি একজন রাজা কিংবা রাজকুমার পেয়ে যাই মন্দ হবে না ব্যাপারটা।

– আমার মনের কথাগুলো বলেছিস বাই দা ওয়ে কবে যাবো আমরা?

– পরশু।

বাসের নাম,কয়টায় যাবে, বাস কখন ছাড়বে সব ডিটেলস তারা ফয়সালকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলো। ফয়সালের এখন মনে হচ্ছে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেয়ে গেছে। আরিফ বলেছিল, এমন কোথাও যেতে যেন তারা অনেকক্ষণ সময় আলাদা থাকতে পারে। যেখানে তাদের খুব কম মানুষই চিনে। ফয়সাল মনে মনে ভীষণ খুশি হয়ে বলল,

– আমার প্রবলেম সলভ করার জন্যও একটা তুমি চাই আদু রাণী।

ফয়সালের এখন সামনে থেকে আদিবাকে দেখতে ইচ্ছা করছে। পিছন থেকে খোলা চুলের হলুদিয়া পাখিকে দেখে তার মন ভরছে না। তাই সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আদিবা অরিন দেখেও না দেখার ভান করে কথা বলছে এমন সময় ফয়সাল ওদের সামনে একটা গানের কলি বলতে লাগলো,

– ঢাকা টু খুলনা একটু ভালোবাসোনা। নেই কোনো ভাবনা নিয়ে যাবো পাবনা।

অরিনের ভীষণ হাসি পাচ্ছে গান শোনে। ফয়সালকে দেখে তার মনে হয় না এই ছেলে একটা মেয়ের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে গান বলবে। আদিবার জন্য জোরে হাসতে না পেরে মুখ চেপে হাসছে। আদিবাও একটু মজা নেওয়ার জন্য বলল,

– ঢাকা টু সিলেট সবকিছুই ডিলেট। মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা গবেট।

অরিন এইবার হাসি ধরে রাখতে না পেরে জোরে জোরে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে হঠাৎ করেই ফয়সালের পিঠে হালকা চাপড়ে বলে দিলো,

– ফ্রী-তে এত সুন্দর সিনেমা দেখবো কখনো ভাবিনি। প্লিজ কন্টিনিউ।

অরিনের মনে নেই সে কাকে চাপড় মেরেছে। ফয়সাল তো রাগান্বিত চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে অরিনের দিকে। যখনি অরিনের খেয়াল হলো সে ভয়ে আদিবার পিছন দাঁড়িয়ে পরলো। ফয়সালের ইচ্ছা করছে এখন অরিনকে ধরে মাথার উপরে তুলে নিচে ফেলে দিতে শুধু মাত্র হবু বউয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড বলে রাগটা কন্ট্রোল করে হেসে দিয়ে বলল,

– ইটস ওকে। শালীদের এমন করতেই হয় হবু দুলাভাইয়ের সাথে। ভীষণ খুশি হলাম তুমি যে আমাকে দুলাভাই ভেবে ফেলেছো। লাভ ইউ শালীকা।

আদিবা রাগী দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অরিনকে নিয়ে চলে যায়। সে চায় না তার প্ল্যান নষ্ট হয়ে যাক। ফয়সালকে সে জ্বালাবে কিন্তু এখন নয়। সাজেক হবে ফয়সালের জীবনের কষ্টের মুহূর্ত।

____________

চলে গেলো দুইটা দিন। আজ সাজেক যাবার জন্য তৈরি হচ্ছে আদিবা ও আদুরী। অরিন ওর বাসা থেকেই আসবে। আদুরী কালো টপ, জিন্স, মাথার চুলগুলো জুটি বেঁধে ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, গলায় পাথরের মোটা চেইন, ডান হাতে ঘড়ি, বাম হাতে ব্রেসলেট, হিল জুতো পরে মুখটা আফসোসের ভঙ্গিতে বলল,

– আমার যেতে ইচ্ছা করছিল না। যতদিন থাকবো না ততদিন বেয়াদব তুহিন খুব আনন্দ করবে। শুধু মাত্র তোমাকে আর অরি আপুকে দেখে রাখার জন্য যাচ্ছি। ঘুরতে গিয়ে হারিয়ে যেতে পারো কিংবা কোনো ছেলে বিরক্ত করলে তখন একা একা কি করবে তাই তো আব্বু আমাকে পাঠাচ্ছে তোমাদের খেয়াল রাখার জন্য। ইসস কত কাজ যে করতে হয় আমাকে। তবুও কোনো অহংকার নেই আমার, নেই কোনো ক্লান্তি। আমার মত এই পৃথিবীতে একজনই আছে। ভাগ্য ভালো তোমার, আমার মত কিউট একটা বোন পেয়েছো বলে।

– এত কথা না বলে প্যাম্পাস ব্যাগে রাখ। ওইখানে যদি হিসু টিসু করিস তোকে জেলে ভরবে রিসোর্টের লোকেরা।

গাল ফুলিয়ে প্যাম্পাস ব্যাগে রাখলো। ওর একটাই সমস্যা মাঝে মধ্যে রাতে বিছানা ভিজিয়ে ফেলা। এইজন্য ওর মা কত যে হিসু বিছানা থেকে খাইয়েছে তবুও যায় না এই বদ অভ্যাস।

চলবে,

বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ‘বিষাক্ত মায়াজাল’ আমার প্রথম উপন্যাস প্রীঅর্ডার শুরু হয়ে গিয়েছে। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here