ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা |৪১|

0
1402

#ত্রিধারে_তরঙ্গলীলা
|৪১|
কোনোমতে শরীরে টি-শার্ট জড়িয়ে নিচে নেমে এলো সৌধ৷ দেখতে পেল সুহাস, আইয়াজ আর প্রাচীর আতঙ্কিত মুখ। সুহাস ঢাকাতে ছিল, গতকাল সকালেই কথা হয়েছে ওর সঙ্গে। তাই আকস্মিক সুহাসের আগমন সন্দেহ তৈরি করল মনে। আইয়াজ আর ফারাহর গত মাসে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আইয়াজের বিয়েতে প্রাচী উপস্থিত থাকতে পারেনি৷ সুহাস, নামী আর সে উপস্থিত ছিল। বর্তমানে আইয়াজ ঢাকাতে থাকে আর ফারাহ এখানেই নামীর সঙ্গে থাকে। পরীক্ষা চলছে তাদের। হুট করে আইয়াজও তার বাড়িতে! আর প্রাচী? সে তো অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দু’দিন আগেই কথা হলো। বলেছিল যাওয়ার আগে সময়, সুযোগ বুঝে দেখা করবে সবার সঙ্গে। কিন্তু আজ হঠাৎ এভাবে? চোখে, মুখে তীব্র দুঃশ্চিতার ছাপ নিয়ে কেন?

ভ্রুদ্বয় কুঁচকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে এগিয়ে এলো সৌধ। যখন ওদের একদম কাছাকাছি এসে দাঁড়াল আচম্বিতে মস্তিষ্ক স্মরণ করিয়ে দিল গতরাতে নিধির ফোনকল পাওয়ার কথা। যে কারণে ক্রোধের বসে ফোন ভেঙে ফেলেছে সে! নিমেষে থমকে দাঁড়াল সৌধ। ক্ষীণ কণ্ঠে ‘ ওহ শীট ‘ বলেই চোখ দু’টো বুজে ফেলল। ডান হাতের তর্জনী আর বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে চেপে ধরল কপালের একপাশ। বা’হাতে ধরল কোমরের এক পাশে। শ্বাস আঁটকে গেল হঠাৎ। চোয়াল দ্বয় দৃঢ় হয়ে কপালের নীল রগ ফুটে ওঠল। সম্মুখে বসা প্রতিটি ব্যক্তিই সৌধর এহেন অবস্থা দেখে ঢোক গিলল। চাওয়াচাওয়ি করল একে অপরের দিকে। এরপর সুহাস ওঠে এসে সৌধর কাঁধ স্পর্শ করে শান্ত কণ্ঠে বলল,

‘ রিলাক্স দোস্ত। এদিকে আয় কথা আছে, বোস এখানে। ‘

নড়ে ওঠল সৌধ। গভীর একটি নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মৃদু পায়ে এগুলো সোফার দিকে। বসল প্রাচীর পাশে। ভণিতা বিহীন ত্বরিত রাশভারি গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ল,

‘ কী হয়েছে? ‘

গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল প্রাচী৷ আইয়াজের দিকে ভীত দৃষ্টিতে তাকাল একবার। আইয়াজ আশ্বাস দিলে বলল,

‘ চল তোর রুমে যাই। ‘

প্রশ্নের উত্তরে প্রাচীর এহেন বাক্য পেয়ে দৃঢ় চোখে তাকাল সৌধ। তক্ষুনি কফির মগ নিয়ে এগিয়ে এলো কাজের মেয়েটা। সৌধর মা তানজিম চৌধুরীই ছেলের বন্ধুদের জন্য কফি বানিয়ে পাঠিয়েছেন। সৌধ কফি গুলো উপরে তার ঘরে নিয়ে যেতে বলে ওঠে দাঁড়াল। বন্ধুদের ইশারা করে বলল সঙ্গে যেতে।

সৌধর রুমে গিয়ে সকলে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল যেন৷ সুহাস ঝটপট রুমের দরজা লক করে দিলে সকলে নিজেদের জায়গা দখল করে নিল। সুহাস আর আইয়াজ বসল বিছানায়। প্রাচী বসল ডিভানে সৌধর ঠিক ডান পাশে। সৌধর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ হয়েছে আগেই। নিশ্চয়ই জটিল কিছু ঘটেছে। প্রচণ্ড গম্ভীর হয়ে গেল মুখটা। হাত, পা হিম ধরে শক্ত হয়ে গেল। বা হাতে ট্রাউজারের পকেট হাতড়ে সিগারেট বের করল একটা। আশপাশে তাকিয়ে লাইটার খুঁজতেই সুহাস বালিশের কাছ থেকে লাইটার নিয়ে ছুঁড়ে মারল। মুহুর্তেই কেস ধরে ফেলল সৌধ। আইয়াজ বলল,

‘ প্রফাশনালি সিগারেটখোর হয়ে গেলি? ‘

ঠোঁট কামড়াল সৌধ। তীব্র দুঃশ্চিতা ঘিরে ধরল ওকে। আইয়াজের কথিত বাক্যে তাই গম্ভীর কণ্ঠেই জবাব দিল,

‘ শুধু সিগারেট না অ্যালকোহলও পান করি। ‘

সুহাস দু-হাত, পা ছেড়ে শুয়ে পড়ল। বেচারা টেনশন নিতে পারে না৷ জানে সৌধ। এই যে আচমকা শুয়ে পড়ল। এটা যে অতিরিক্ত চিন্তার ফল বুঝতে পারল। তাই প্রাচীর দিকে তাকাল সূক্ষ্ম নজড়ে। বলল,

‘ কী হয়েছে? ‘

বলতে বলতেই সিগারেট ধরাল। প্রাচী ঘনঘন ঢোক গিলল। কাঁধ সমান চুলগুলো ত্বরিত প্যাঁচিয়ে কাঁটা লাগিয়ে নিল। এরপর দম ছেড়ে বলল,

‘ যতক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ কথা শেষ না করব রিয়াক্ট করবি না৷ ওভার রিয়াক্ট তো একদমই নয়। ‘

‘ প্রশ্ন করা যাবে? উত্তর দিতে পারব? ‘

সৌধর দৃঢ়, গম্ভীর কণ্ঠে প্রাচী ম্লান হেসে মাথা নাড়াল। ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে ফের সৌধ বলল,

‘ সহ্য করতে পারবি? ‘

প্রাচী তাকাল সৌধর হাতের দিকে৷ সিগারেট ধরাল সৌধ। সিগারেটের উদ্ভট গন্ধ সে সহ্য করতে পারে। অন্যান্য মেয়েদের মতো সিগারেটের গন্ধে এলার্জি নেই তার। মাঝেমধ্যে দু’একটা খাওয়ার অভ্যাসও আছে। যা তার বন্ধুমহলের মধ্যে শুধু সুহাসই জানে। তাই মৃদু হেসে বলল,

‘ নো প্রবলেম দোস্ত। ‘

সুহাস বলল,

‘ কফি গুলো ঠান্ডা হয়ে গেল৷ কেউ খাবি না? ‘

প্রাচী বলল,

‘ তোরা খা৷ কথা শেষে ঠান্ডা কফি এক চুমুকে খেয়ে নিব আমি। ‘

সৌধ সম্মতি দিয়ে একবার কফির মগে চুমুক দিল তো আরেকবার সিগারেট ফুঁকল। বন্ধুর কাণ্ড দেখে তাজ্জব বনে গিয়েও গেল না প্রাচী। কারণ এই মুহুর্তে তাকে এমন কিছু সত্যি আর জটিল বিষয়ে কথা বলতে হবে যে অন্য কোনো বিষয়, বস্তু নিয়ে ভাবার, আগ্রহ প্রকাশ করার বিন্দুমাত্র ফাঁক পাবে না।

‘ দোস্ত আংকেল, আন্টি আমাদের শুক্রবার ইনভাইট করেছিল। আমাদের প্ল্যান ছিল আমরা আগামীকাল তোদের বাড়ি আসব। সারপ্রাইজ দিব তোকে। ‘

‘ সারপ্রাইজটা একদিন আগে পেলাম যে? ‘

পায়ের ওপর পা তুলে বা’দিকে সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে প্রশ্নটি করল সৌধ। প্রাচী সচেতন হয়ে ঢোক গিলে পুনরায় বলল,

‘ আমি গতকাল নামীদের বাসায় ওঠেছি। ভেবেছিলাম একদিন থেকে আগামীকাল তোদের এখানে আসব। আংকেল, আন্টি চায় তুই বিয়ে কর। সংসারি হো। কিন্তু তুই কিছুতেই এটা মানতে পারছিস না৷ তুই তোর সুস্থ জীবন মেনে নিতে চাইছিস না আর আংকেল, আন্টি পারছে না তোর অসুস্থ জীবন মেনে নিতে৷ তাই অসহায়ের মতো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তারা। তারা যেমন তাদের সন্তানের জীবন নিয়ে আতঙ্কিত। আমরাও আমাদের বন্ধুর জীবন নিয়ে আতঙ্কিত। ‘

থামল প্রাচী। সহসা উচ্চশব্দে হেসে ওঠল সৌধ। তার হাসিতে শুয়ে থাকা সুহাস ধড়ফড়িয়ে ওঠে বসল। আইয়াজের হৃৎপিণ্ড ছটফটিয়ে ওঠল। গলা শুঁকিয়ে গেল প্রাচীর৷ চৈত্রের খরার মতো গলা ঢোক চিপে ভিজিয়ে নিল নিমেষে। সিগারেটের শেষ অংশটুকু ফ্লোরে ফেলে হাত দিয়ে ধোঁয়া সরাতে সরাতে হাসতে হাসতেই সৌধ বলল,

‘ আমি তাহলে সবার জীবনে আতঙ্ক হয়ে পড়েছি! ‘

কণ্ঠে উপচে পড়ছে বিস্ময়। প্রাচী হাত বাড়িয়ে ওর কাঁধ স্পর্শ করল। বলল,

‘ দোস্ত আমার কথা শেষ হয়নি। ‘

মাথা দুলালো সৌধ। গা এলিয়ে বসে পায়ের ওপর তোলা পা নাচাতে নাচাতে বলল,

‘ ওকে, শেষ কর। ‘

প্রাচী এবার ভীষণ সিরিয়াস মুখ করে বলতে শুরু করল,

‘ নিধি অসুস্থ! গতকাল রাতে হসপিটালে এডমিট করিয়েছে ওকে। আগামীকাল আসার কথা থাকলেও আজ আমরা এসেছি নিধির জন্য। ‘

‘ স্ট্রেঞ্জ! ‘

সহসা শব্দটি বলেই সোজা হয়ে দেহ টানটান করে বসল সৌধ। প্রাচী খেয়াল করল, সৌধর চোয়াল দ্বয় কঠিন থেকে কঠিনতর। চোখ দু’টোর বর্ণও পরিবর্তন হচ্ছে। পুরু ঠোঁটজোড়া নড়ল তক্ষুনি। ভেসে এলো গমগমে কণ্ঠস্বর,

‘ বউ তো আমার নয়। ওর বাচ্চার বাবাও আমি না। তাহলে অসুস্থতার খবর নিয়ে আমার এখানে এসেছিস কেন? তোদের তো ওর স্বামীকে খোঁজা উচিত। হসপিটালে ওকে দেখতে যাওয়া উচিত। ‘

কথাগুলো স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেও সৌধর ভেতরে ভেতরে চলছিল নিদারুণ উত্তেজনা। যা উপস্থিত সকলেই টের পেল। মৌন রইল সম্মুখের দুই বন্ধু। পাশের বন্ধুটি হাঁপ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,

‘ যাব তার আগে তোর সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া আছে৷ ‘

আশ্চর্যান্বিত হয়ে ডানপাশে ঘাড় ঘোরাল সৌধ। তাচ্ছিল্য মিশ্রিত ক্ষীণ কণ্ঠে বলল,

‘ আমার সাথে বোঝাপড়া! ‘

মাথা নাড়াল প্রাচী৷ সৌধ প্রায় নিঃশ্বাস আঁটকে মৃদু কাঁধ উঁচিয়ে ফের বলল,

‘ ওকে ফাইন। ‘

‘ তুই কেন বিয়ে করছিস না সৌধ। প্লিজ তুই রাজি হো দোস্ত৷ তোর এই একটা সিদ্ধান্তের ওপর শুধু তোর ভালো নয় আরো তিনটে জীবনের ভালো নির্ভর করছে। ‘

‘ মানে! ‘

‘ হ্যাঁ দোস্ত। তুই যতদিন একা থাকবি ততদিন নিধি ওর সংসারে মন দিতে পারবে না৷ নিধি সংসারে মন না দিলে অর্পণ স্যার ভালো থাকবে না। নিধি, অর্পণ স্যার আর অনাগত বাচ্চা তিনজনের ভবিষ্যত পরোক্ষভাবে তোর ওপরই নির্ভর করছে। ‘

‘ মানে! ‘

‘ হ্যাঁ সৌধ। তুই তোর জীবন গুছিয়ে নিলে নিধি আর অপরাধভোগে ভুগবে না৷ আর না ওর বুঝে যাওয়া অনুভূতি গুলো গুরুত্ব পাবে। তোর জীবন অন্যকারো সাথে না বাঁধলে নিধির তার নীতিজ্ঞান ভুলে যাবে। ‘

‘ ভণিতা বাদ প্রাচী। পরিষ্কারভাবে বল। ‘

রুদ্ধ কণ্ঠ সৌধর। প্রাচী বলতে শুরু করল,

‘ নিধি ঠিক নেই দোস্ত, একদম ঠিক নেই। আমাদের সেই চেনা, আদর্শ বান্ধবীটি বদলে গেছে রে। ও অর্পণ স্যারের সঙ্গে সুখে নেই। বিয়ের পর থেকেই ওর মনে অসুখ বিরাজ করছে৷ সেই অসুখটা সৃষ্টি হয়েছে তোকে নিয়ে৷ বিয়ের আগে ও যা অনুভব করতে পারেনি বিয়ের পর থেকে প্রতিনিয়ত তা অনুভব করে গুমরে ম রছে। আফসোস, হতাশায় জর্জরিত হয়ে মানসিক খেই হারিয়ে ফেলছে দিনকে দিন। ভয় হয় সৌধ। এই খেই হারানোর ওর চরিত্রে না দাগ লাগায়!’

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামল প্রাচী। সৌধ স্তব্ধ নয়নে সম্মুখে বসা আইয়াজ আর সুহাসের পানে তাকিয়ে রইল৷ কিয়ৎক্ষণ অতিবাহিত হতেই হঠাৎ হাসল ঠোঁট বাকিয়ে৷ গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে দাঁড়িয়ে বেলকনিতে যেতে যেতে বলল,

‘ এই সুহাস, এই আয়াজ প্রাচীর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। পাগলটাকে সামলা তোরা। ‘

আইয়াজ, সুহাস হতভম্ব। প্রাচী দমে রইল না৷ ত্বরিত বেগে ওঠে পিছু নিল সৌধর। গিয়ে দাঁড়াল পাশে। সৌধ খোলা বেলকনির রেলিঙেয়ে দু-হাত রেখে পিছমুখী হয়ে দাঁড়ানো। প্রাচীও গিয়ে পাশে দাঁড়াল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘ নিধি প্র্যাগনেন্ট হওয়ার পর থেকে ওর সঙ্গে আমার যোগাযোগ বাড়ে দোস্ত৷ সব রাগ, অভিমান, অন্যায়, অভিযোগ শেষে আমরা তো বেস্ট ফ্রেন্ড বল? আমি পারিনি পুরোপুরি যোগাযোগ অফ করতে। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় একটা মেয়ের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানসিক সাপোর্ট। আমি বুঝতে পারছিলাম নিধি ভালো নেই। ডিপ্রেশনে ভুগছে। প্রথমে ভেবেছিলাম ওর ঘনঘন মুড সুইং হচ্ছে। এ সময় মেয়েদের এমন হয়েই থাকে৷ কিন্তু ধীরেধীরে বুঝতে পারি দাম্পত্য জীবনে ও অসুখী৷ কিন্তু কেন? এই অসুখের কারণ কী? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সব অভিমান ভুলে পুরোনো দিনের মতো করেই ওর সঙ্গে মিশতে শুরু করি। জানার চেষ্টা করি অর্পণ স্যারের সঙ্গে ওর সম্পর্কের গভীরতা সম্পর্কে। আর তখনি কিছু আশ্চর্যজনক বিষয় টের পাই। জানিস বিষয়টা কী? ‘

সৌধ তাকাল না প্রাচীর দিকে। আর না মুখ ফুটে উত্তর দিল ‘কী’ শুধু গভীর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। যে দীর্ঘ নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পেল প্রাচী। ঈষৎ হেসে বলল,

‘ এই পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যারা নিজেদের অনুভূতি সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে। যেই অজ্ঞতার জন্যই সারাজীবন চরম খেসারত দিতে হয়। এই অজ্ঞতা কিন্তু কোনো বোকা শ্রেণির মানুষদের আক্রমণ করে না৷ এই অজ্ঞতার শিকার হয় নিধিদের মতো জ্ঞান, বুদ্ধি সম্পন্ন আদর্শ রমণীরা। এরা সারাজীবন আদর্শ মেনে জীবনযাপন করতে করতে অনুভূতিদের মূল্যায়ন দিতে ভুলে যায়। এদের সবাইকে নিয়ে চিন্তা হয়, সবকিছু নিয়ে চিন্তা হয়। কেবল নিজের বিশেষ অনুভূতিটুকুন ছাড়া। দেখ না নিধি পরিবারের চিন্তা করল, পড়াশোনার চিন্তা করল, প্রিয় বন্ধুর প্রেমের প্রপোজাল রিজেক্ট করল পরিবার, পড়াশোনার কথা চিন্তা করে। দিনশেষে পরিবারের সম্মান, প্রতিজ্ঞা রক্ষার্থে প্রচণ্ড পছন্দের মানুষটাকে বিয়ে করেও ফেলল। কিন্তু একবারো কি অনুভূতির মূল্যায়ন করেছে? নাহ করেনি! ‘

শক্ত পাথরের ন্যায় দাঁড়ানো সৌধ। প্রাচী এক পলক তাকিয়ে দেখল ওকে। এরপর দম ছেড়ে ফের বলতে শুরু করল,

‘ তুই ওর প্রতি কতটা সিরিয়াস ছিলিস আগে বুঝলেও খুব একটা অনুভব করতে পারেনি। কিন্তু সেদিন তোর অবস্থা দেখার পর থেকে মনে মনে অপরাধবোধে ভুগছিল। তাছাড়া সেদিনের পর থেকে আমরা সবাই ওকে দোষারোপ করেছি, ওর সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছি। যা ওর মনে বিরূপতা সৃষ্টি করে৷ নতুন জীবন থেকে মন ওঠা শুরু সেখান থেকেই। সারাক্ষণ মানসিক চাপ নিয়ে সংসারে মন বসত না। অর্পণ স্যার ভালো কথা বললেও ওর খারাপ লাগত। নিধির মুখেই শুনেছি ও তোকে মিস করে, তোর কেয়ার করা গুলোকে, তোর ভালোবাসাকে মিস করে। অর্পণ স্যারের মাঝে সারাক্ষণ তোকে খুঁজে বেড়ায়। একজন মানুষ কি আরেকজনের প্রক্সি দিতে পারে? বিশেষ করে ব্যক্তিগত মানুষের প্রক্সি? পারে না তো। অর্পণ স্যার আদর্শবান পুরুষ। তাকে দেখে ভালো লাগে, তার আচরণ মুগ্ধ করে। স্বীকার করে নিধি৷ কিন্তু একসঙ্গে থাকতে গিয়ে ও অনুভব করে তার ভালোবাসা ওর হৃদয় ছুঁয়ে দেয় না। কারণ বহু আগেই ওর হৃদয়ে অন্যকারো ভালোবাসা ছুঁয়েছে। এক হৃদয়ে কি দুই পুরুষের ভালোবাসা স্থান পায়? সঠিক সময়ে সঠিক অনুভূতি বুঝতে না পারার খেসারত দিচ্ছে বেচারি। ‘

‘ শাট আপ, জাস্ট শাট আপ! ‘

সহসা ধমকে ওঠল সৌধ৷ সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠল প্রাচীর। ভিতর থেকে ছুটে এলো সুহাস, আইয়াজ। প্রাচী ভয় পেয়েছে বুঝতে পেরে সুহাস এসে ওর কাঁধ চেপে ধরল। বারকয়েক ঢোক গিলে প্রাচী বলল,

‘ ঠিক আছি আমি। ওকে শান্ত কর। ‘

সৌধ অগ্নি চক্ষুতে তাকিয়ে। আইয়াজ ওকে শান্ত করতে উদ্যত হলেই চোখ, মুখ খিঁচিয়ে বলল,

‘ প্রাচীকে চুপ থাকতে বল আয়াজ। আমি কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলব৷ ‘

আয়াজ নিশ্চুপ। সুহাস তেজ দেখিয়ে বলল,

‘ কন্ট্রোল হারিয়ে ভেসে যা তুই তবু প্রাচী চুপ করবে না৷ সবটা শুনবি বুঝবি তারপর রিয়াক্ট করবি সৌধ। নিজের আসল সত্তা এভাবে বিসর্জন দিস না তুই। ‘

কিঞ্চিৎ দমল সৌধ। প্রাচী স্বাভাবিক হতে সময় নিল একটু৷ এরপর ত্বরিত কণ্ঠে বলল,

‘ বেশকিছু দিন আগে অর্পণ স্যার আমার সঙ্গে দেখা করেছিল। নিধির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী আমি তাই অনেক কিছুই শেয়ার করেছে। অনুরোধ করেছে নিধিকে বাস্তবতা বোঝাতে৷ কী আশ্চর্য তাই নারে? আমাদের মধ্যেকার সবচেয়ে বাস্তববাদী মেয়েটাকে এখন আমাকে বাস্তবতা বোঝাতে অনুরোধ করে তার স্বামী। ‘

একটুক্ষণ থামল প্রাচী। সময় নিয়ে বলল,

‘ লোকটা সত্যিই অসহায় হয়ে পড়েছে রে। আর তার মধ্যে আমি নিধির প্রতি ভালোবাসার পাশাপাশি বিরক্তিও দেখেছি। এই বিরক্তি তার প্রতি নিধির অনীহার জন্য সৃষ্টি হয়েছে। বেচারা ভীষণ চিন্তিত ভবিষ্যত নিয়ে। বাচ্চাটাকে নিয়ে আতঙ্কে আছে ভীষণ। শুনেছি বাচ্চা নেয়ার তাড়া ছিল নিধিরই। আমার মনে হয় ও ভয় পাচ্ছিল নিজের আসল সত্তা প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার। ও আসলে মন থেকে চায়নি ওর তোর প্রতি প্রগাঢ় অনুভূতি আছে সেটা ওর স্বামী বা বন্ধু – বান্ধব টের পেয়ে যাক। স্বাভাবিক, যা আগে প্রকাশ করেনি তা এখন করে তো বদনাম ছড়ানোর মানে হয় না৷ বাচ্চা পৃথিবীতে আসার সময় ঘনিয়ে আসছে আর ওর রাগের মাত্রা বাড়ছে৷ গতকাল রাতেও দু’জন ঝগড়া করেছে৷ নিধি নাকি ডিভোর্স চেয়েছে স্যারের কাছে। স্যার ডিভোর্স দেবে না। এ কথা সরাসরি না বলে রাগের মাথায় বলেছে ডিভোর্স দিয়ে কার কাছে যাবে সৌধর কাছে? নিধি নাকি জোর গলায় বলেছে, হ্যাঁ। স্যারের সামনেই নাকি তোকে ফোনও করেছিল। স্যার বলল তুই নাকি রিসিভ করিসনি৷ এরপরই অতিরিক্ত রাগান্বিত হয়ে সেন্সলেস হয়ে যায় ও। শারীরিক অবস্থা ভালো না ওর। অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিতে পারেনি বলেই এই অবস্থা। ফজরের আজানের সময় স্যার ফোন করে এসব জানিয়েছে আমাকে। ‘

প্রাচীর কথা শেষ হতেই হঠাৎ সুহাস অধৈর্য গলায় বলল,

‘ এই শোন প্রাচী তোদের মেয়েদের বড্ড প্যাঁচানোর স্বভাব। আর প্যাঁচিয়ে বলা লাগবে না৷ এবার আমি সরাসরি বলছি সৌধকে। ওর যা বর্তমান অবস্থা তোর কথা বোঝবার শক্তি নেই। ‘

এ কথা বলেই সৌধর দিকে তাকাল সুহাস। বলল,

‘ আমাদের দ্য গ্রেট নিধি জ্ঞানী আপা পরিবারের সম্মান, প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে তার ক্রাশকে বিয়ে করেছে। বেচারি বুঝতে পারেনি বিয়ের পর তার ক্রাশিং ফিলিং বাঁশিংয়ে পরিণত হবে। এর ওপর আবার মনে মনে চুরি করে তোকেও ভালোবেসেছিল। চুন্নি মহিলা সেটা প্রকাশ করেনি৷ করবে কীভাবে গোবেট কিনা? জ্ঞান, বুদ্ধি, মেধাশক্তি সব মেডিক্যাল পড়া আর পরের উপকারে খরচ করে নিজের জন্য এঁটোটুকুও রাখতে পারেনি। এখন জামাই চুমু দিলে ভালোবাসার ফিল আসে না। পান্তা ভাত লবণ ছাড়া খেলে যেমন লাগে তেমন লাগে৷ এখন লবণ নামক সৌধকে মনে পড়ে। ভেবেছিল বাচ্চা আনলে লবণের অভাব পূরণ হবে। কিন্তু ফলাফল শূন্য হওয়াতে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। যার ফলাফল জামাইয়ের সাথে এই ঝামেলা আর হসপিটালে ভর্তি। ‘

থামল সুহাস। আইয়াজ প্রচণ্ড বিরক্ত হলো। রেগে বলল,

‘ এই তোর প্যাঁচ ছাড়া কথা? সিরিয়াস মোমেন্টেও তোর এমন করা লাগবে? কী করে সহ্য করে নামী তোকে? ‘

সুহাস কিছু বলতে উদ্যত হতেই সৌধ ধমকে ওঠল। ক্রোধান্বিত কণ্ঠে বলল,

‘ যা বলছিস এসব সত্যি হলে আমি নিধিকে খু ন করে ফেলব। ‘

তীব্র জেদি স্বর সৌধর। প্রাচী আতঙ্কিত হয়ে বলল,

‘ না তুই এসব করবি না। ‘

চিৎকার করে ওঠল সৌধ।

‘ এছাড়া আর কী করণীয় থাকতে পারে আমার? ওই বেইমানটা আমার সাথে বেইমানি করেনি শুধু ও নিজের সঙ্গেও বেইমানি করেছে। ‘

কথাটা বলেই সহসা শরীর ছেড়ে ফ্লোরে বসে পড়ল সৌধ। সুহাস ত্বরিত ধরল ওকে। সৌধ হতাশার সুরে বলল,

‘ আমি আর নিতে পারছি না। জাস্ট নিতে পারছি না। খু ন চেপে গেছে আমার৷ হয় কাউকে খু ন করব নয়তো নিজেই খু ন হবো। এছাড়া আমার আত্মায় শান্তি মিলবে না। ‘

সুহাস, আইয়াজ, প্রাচীর একসঙ্গে বলল,

‘ না সৌধ৷ এভাবে আবেগে গা ভাসালে চলবে না। তোকে এবার নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিতে হবে। ‘

‘ সম্ভব না। ‘

প্রাচী বলল,

‘ কেন সম্ভব না? তুই যদি নিজের জীবন গুছিয়ে নিস নিধি বুঝবে ওর জন্য তোর জীবন থেমে নেই। ও দিকশূন্য হয়ে গেছে সৌধ। ওকে হুঁশে আনতে হবে তোকে। একমাত্র তুইই পারিস। আ’ম সিয়র তুই বিয়ে করে নিলে ও ছোট্ট একটা আঘাত পাবে। সেই আঘাতই ওকে ওর আসল জীবনটাকে মেনে নিতে বাধ্য করবে। ‘

‘ ওর জন্য অন্য একটা মেয়ের জীবন কেন নষ্ট করব প্রাচী? আমি তো নিধির মতো স্বার্থপর নই। আমি ওর মতো অজ্ঞ বা প্রতারকও নেই। ‘

‘ নষ্ট কেন করবি? বিয়ে করবি, বউকে ভালোবেসে সংসার সাজাবি। সুখে থাকবি। ‘

আইয়াজের কথা শুনে হোহো করে হাসল সৌধ। তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল,

‘ এ জীবনে কী এটা সম্ভব আর? ‘

প্রাচী বলল,

‘ এই পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। তুই আমাদের কথা শোন সৌধ। আমরা আজ নিধির সঙ্গে দেখা করে বলব, তোর এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। সামনে মাসে বিয়ে। ‘
.
.
পাগলের মতো ছুটতে ছুটতে সদর দরজা পেরিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকল সিমরান। গলার স্বর উঁচিয়ে এক নাগাড়ে ডাকল,

‘ আন্টি, আন্টি, কোথায় তুমি? ‘

ভেতর থেকে ছুটে এলেন তানজিম চৌধুরী। দেখলেন হাঁপাচ্ছে সিমরান। চোখ মুখের অবস্থা বিধ্বস্ত! ত্বরিত পায়ের গতি বাড়িয়ে সিমরানের মুখোমুখি হলেন তিনি। হাত বাড়িয়ে গাল স্পর্শ করে বললেন,

‘ কী হয়েছে সিনু মা? এভাবে হাঁপাচ্ছ কেন! কোথায় থেকে আসলে তুমি? ‘

মুহুর্তেই থমকে গেল সিমরান। আশপাশে তাকিয়ে খোঁজার চেষ্টা করল তার ভাই আর ভাইয়ের বন্ধুদের। স্মরণ করল ঘন্টা খানেক আগের ঘটনা –
***
ঘুম থেকে ওঠে ব্রাশ হাতে নেয়া মাত্রই সিমরান জানতে পারে সুহাস তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যাচ্ছে। গতকাল বেশ রাত করে ঢাকা থেকে সরাসরি বাড়ি ফিরেছে। সকাল হতে না হতেই বেরিয়ে যাচ্ছে? মেজাজ খারাপ হলো মেয়েটার। ছুটন্ত পায়ে নিচে এসে ভাইয়ের পথ রোধ করল। কোমরে দু-হাত রেখে রাগান্বিত স্বরে শুধাল,

‘ আমার সাথে দেখা না করে কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি? নামীপুর কাছে নিশ্চয়ই নয়? ‘

চিন্তান্বিত মুখেই কিঞ্চিৎ হাসল সুহাস। হাত বাড়িয়ে বোনের এক গাল ছুঁয়ে বলল,

‘ সরি’রে। দেখা করার সময় পাইনি। নামীর ওখানে যাই না জানিসই তো। আমি সৌধদের বাড়ি যাচ্ছি। আয়াজ, প্রাচীও আসছে। ‘

ভ্রু কুঁচকে গেল সিমরানের। কোমর থেকে হাত নামিয়ে স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়াল। সৌধর নাম নেয়াতে বিচলিত হলো কিঞ্চিৎ। আবার কিছু হলো না তো? প্রচণ্ড দুঃশ্চিন্তা নিয়ে মনের প্রশ্ন মুখে তুলল,

‘ কিছু হয়েছে? সৌধ ভাই আবার পাগলামি করছে? ‘

সময় কম তবু বোনকে প্রশ্নের উত্তর দিল,

‘ সৌধর কিছু হয়নি। হয়েছে নিধির। ‘

আকস্মিক কথায় বুক ধক করে ওঠল সিমরানের। আঁতকানো কণ্ঠে বলল,

‘ কী হয়েছে নিধিপুর! ‘

সুহাস পা বাড়াল সদর দরজার দিকে। সিমরান পাশে হাঁটতে হাঁটতে আকুতির সুরে বলল,

‘ ব্রো প্লিজ বলে যাও আমাকে, নয়তো টেনশন হবে খুব। ‘

গাড়ির দিকে এগুতে এগুতে ত্বরিত স্বরে সুহাস বলল,

‘ আর বলিস না আমাদের প্ল্যান ছিল শুক্রবার সবাই মিলে সৌধদের বাড়িতে যাব। আংকেল, আন্টি গোপনে ইনভাইট করেছে। সৌধর বাড়ি থেকে মেয়ে দেখছে ওর বিয়ের জন্য৷ কিন্তু ফা জিলটা এই নিয়ে অশান্তি করেই যাচ্ছে, করেই যাচ্ছে। থামাথামির আর নাম নেই৷ গত সপ্তাহে ভাঙচুর করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছিল, ফিরেছে মাঝরাতে নেশাগ্রস্থ হয়ে। ভাব একবার আংকেলের সম্মানটা কোথায় নিয়ে ঠেকিয়েছে ও? এজন্যই আংকেল আমাকে অনুরোধ করেছিল একদিন যেন সময় দেই। আন্টি ফোন করে অনুরোধ করে আয়াজ, প্রাচীকেও সঙ্গে নিতে। অনেকদিন পর সবাইকে একসাথে পেলে সৌধর মন হালকা হবে। পাশাপাশি সৌধকে আমরা বোঝাতে পারব, গুড সাজেশন দিতে পারব। কারো জন্য কারো লাইফ থেমে থাকে না তো বল? ‘

কথার সমাপ্তি দিয়ে গাড়িতে ওঠে বসে সুহাস। ডোর লাগাতে নিলে সহসা সিমরান বাইরে থেকে টেনে ধরে৷ সুহাস খেয়াল করে সিমরান থরথর করে কাঁপছে। সাধারণত প্রচণ্ড ক্রোধে আর ভয়ে শরীর কাঁপে সিমরানের। এ মুহুর্তে ভয় পাওয়ারই বা কী হলো, রাগেরই বা কী হলো? বোধগম্য হলো না সুহাসের। শুধু হাত বাড়িয়ে বোনের গাল ছুঁয়ে বলল,

‘ ঠিক আছিস তুই? ‘

‘ না নেই! ‘

তীব্র রোষানলে ফেটে পড়ল সিমরান। সুহাস ভয় পেয়ে গেল। আশ্চর্য মুখে তাকিয়ে বলল,

‘ এমন করছিস কেন? ‘

নিমেষে নিয়ন্ত্রণ হয়ে গেল সিমরান। চোখ বুজে কিয়ৎক্ষণ বড়ো বড়ো করে নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ খুলল। থমথমে কণ্ঠে বলল,

‘ তোমরা সৌধ ভাইকে বিয়েতে রাজি করাতে যাচ্ছ?’

‘ হ্যাঁ। কিন্তু আরেক বিপদ ঘটে গেছে। ‘

হঠাৎ মনে পড়েছে এমন ভঙ্গিতে সিমরান জিজ্ঞেস করল,

‘ নিধিপুর কী হয়েছে? ‘

‘ অর্পণ স্যারের সাথে ওর বনিবনা নেই তেমন। শুনলাম দোষ নিধিরই। স্যার যথেষ্ট ভদ্র আর ভালো মানুষ। ওই মানাতে পারছে না৷ এদিকে প্র্যাগ্নেসিরও সাড়ে পাঁচ মাস চলছে। গতকাল মাঝরাতে নাকি তুমুল ঝগড়া করেছে জামাই, বউ মিলে। এক পর্যায়ে নিধি সেন্স লেস হয়ে যায়। প্রাচী গতকাল নামীদের বাসায় ওঠেছে। কথা ছিল আজ আমাদের বাড়ি আসবে, কাল সবাই মিলে সৌধদের বাড়ি যাব৷ কিন্তু নিধি হসপিটালে ভর্তি। তাই আজই যেতে হবে। ‘

‘ কেন যেতে হবে? ‘

সিমরানের মাথা ঘুরছে। একদিকে সৌধ ভাইয়ের বিয়ের তোড়জোড়। অন্যদিকে নিধি আপুর অসুস্থতায় সবাই মিলে সৌধ ভাইয়ের কাছে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বুকের ভেতর তিতকুটে অনুভূতি হলো ওর। সুহাস বলল,

‘ বাকি কথা পরে বলব বোন। এখন যেতে হবে। ‘

আর অপেক্ষা করল না সুহাস। ডোর লক করে গাড়ি স্টার্ট করল। সিমরান নিশ্চল দেহে, শূন্য মস্তিষ্কে দাঁড়িয়ে রইল কয়েক পল। এরপর আচমকা সম্বিৎ ফিরতেই ছুটে গেল বাড়ির ভেতর। তাকে এক্ষুনি তৈরি হতে হবে। যেতে হবে চৌধুরী বাড়িতে।
***
সবটা স্মরণ হতেই দু-চোখ উপচে জল গড়িয়ে পড়ল সিমরানের। তানজিম চৌধুরী হকচকিয়ে গেলেন৷ হঠাৎ কী হলো মেয়েটার? এভাবে কোথায় থেকে ছুটে এলো? এমন বিধ্বস্ত লাগছে কেন? কাঁদছেই বা কেন? বাবা, মায়ের সাথে আবার মান, অভিমান হয়নি তো? সুহাস তো কিছু বলল না এ ব্যাপারে। চিন্তিত মুখে সিমরানের চোখের পানি মুছিয়ে দিলেন তিনি। বললেন,

‘ আমার সিনু আম্মাটার কী হয়েছে শুনি? ‘

কথাটা বলতেই আচমকা তানজিম চৌধুরীকে জাপ্টে ধরল সিমরান। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

‘ আমি কি পাত্রী হিসেবে খুব খারাপ আন্টি? ‘

|চলবে|

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here