তোর শহরে রেখেছি পা (পর্ব ৯)

0
548

#তোর_শহরে_রেখেছি_পা
#পর্ব_৯
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

আরুহি আর আরহাম বাড়িতে ঢুকেই থমকে গেছে। কারন ওদের সামনে আফরিন দাঁড়িয়ে আছে তাও সাদা ভুত হয়ে। মানে আজ আফরিন আরুহিদের জন্য কিছু বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু ওপর থেকে কিছু একটার কৌটা পারতে যেয়ে তার পাশে থাকা ময়দার কৌটা রাখা ছিল। হাত লেগে ওর ওপর পুরো ময়দাটাই পরে গেছে। পুরো শরীর ভর্তি ময়দার মাখামাখি ও এগুলো দেখে আরুহি আর আরহাম হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। দরজা টা আবরার দের বাড়ির কাজের লোক খুলে দিয়েছে। আফরিন ময়দা মাখা শরীর নিয়ে কিচেন থেকে বেরিয়েছে তখনি রিয়াদ ওর সাথে মজা করতে শুরু করে। যার কারনে এখন ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রিয়াদের সাথে ঝগড়া করছে। আবরার আর মিষ্টি দাড়িয়ে মজা দেখছিল তখনি আবরারের চোখ যায় দরজার দিকে ও আরুহিদের দেখেই বলে,,

“আরে আবরার ভাইয়া তোমরা এসে পরেছো? আসো ভেতরে এসে বসো। আর বলো না ওদের ঝগড়ার জন্য কলিংবেল এর শব্দ পেয়েও ওদিকে যাওয়া হয় নি।”

আবরারের কথা শুনে সবাই দরজার দিকে তাকালো। আরুহি আর আরহাম মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে। আফরিন তো আরহামের সামনে এই অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করে লজ্জা পেল। ও এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল। তা দেখে সবাই হেসে উঠল। নাসরিন খান আর নাহিয়ান খান এগিয়ে গেল।তা দেখে আরহাম বলল,,,

“আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা?”

নাহিয়ান খান বললেন,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আমরা আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তোমরা কেমন আছো?”

“জি আঙ্কেল আমরাও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”

তখন নাসরিন খান আরুহির হাত ধরে বললেন,,,

“তোমরা আজ আমাদের বাড়িতে এসেছো আমরা খুব খুশি হয়েছি।”

“আরে আন্টি এতো ফর্মালিটি কেন করছেন আমরা আমরাই তো।”

আরহামের কথায় নাসরিন খান হেসে উঠলো। আরুহি গিয়ে মিস্টি কে কোলে নিয়ে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম সোনা।’

“ওয়া লাই কুও মুস সালাম।”

“মাশাআল্লাহ। ”

“আন্টি তুমি জানো ফুপির ওপর না ময়দা পরে গেছিল।”

“সেটা তো আমরা দেখলামই”

তখন আবরার এগিয়ে এসে বলল,,

“আপনাদের আসতে কোন অসুবিধা হয় নি তো?”

“না কোন অসুবিধা হয় নি।”

আরুহি গিয়ে সবার সাথে কথা বললো। আরহাম ও সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। ততক্ষনে আফরিন ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো। আরুহির পাশে বসলো। তখন আরহাম বলল,,

“আপনাকে সাদায় খুব ভালো মানায় মিস।”

তখন আফরিন বলল,,,

“এখন যেনো কেউ আমার সাথে মজা না করে! আগেই বলেদিলাম। পরে উল্টো পাল্টা বলে দিলে তখন কিন্তু আমি দায়ী থাকবো না।”

“আমি একদম মজা করছি না। সত্যি কথাই বলছি।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। বুঝতে পেরেছি আপনি কি মিন করেছেন। ”

আসলে আফরিন এখন সাদা সালোয়ার কামিজ পরেছে মাথায় ওরনা দিয়ে এসেছে। আফরিন কে শুভ্র রঙে অনেক স্নিগ্ধ লাগছে। তাই আরহাম ওরকম বলেছে কিন্তু আফরিন ভাবলো ময়দার জন্য আরহাম ওর সাথে মজা নিচ্ছে। আরহাম আর কিছু বললো না। মিস্টি নানান কথা বলে যাচ্ছে আর আরুহি আর আফরিন হাসছে। এটা দেখছে দু জোড়া চোখ। ইশশ্ কি সুন্দর হাসি। কিছুক্ষন করা বলার পর আবরার বললো ,,,

“মিস আরুহি চলুন আপনাদের আমাদের বাড়িটা ঘুরে দেখাই।”

তখন আফরিন বলল,,,

“হুম আমিও ভাবছিলাম এই কথাটা বলবো।তার আগে তুমিই বলে দিলে ভাইয়া। হ্যা আরুহি চল তোদের কে আমাদের বাড়িটা ঘুরে দেখাই।”

আবরার আর আফরিন আরুহিদের নিয়ে ওপরে চলে গেল। সাথে মিস্টিও আছে। আবরার আর আফরিন মিলে ওদের পুরো বাড়িটাই দেখালো। শুধু আবরারের রুমটা বাকি। তখনি আরহাম এর ফোনে একটা কল এলো। ও ফোনে কথা বলার জন্য অন্য কোথাও চলে গেল। তখনি নাদিয়া বলল পাখিকে নিয়ে নিচে যেতে আফরিন পাখিকে নিয়ে নিচে চলে গেল। আবরার আর আরুহি দাঁড়িয়ে আছে তখন আবরার বলল,,

“চলুন আপনাকে আমার রুম দেখাই।”

কেউ নেই এখান আরুহি হ্যা বলবে নাকি না! বুঝতে পারছে না আরুহি। হয়তো আবরার আরুহির মনের কথা বুঝতে পারলো। তাই ও বলল,,,

“সমস্যা নেই এই যে আমির দরজা পুরোটা খুলে দিলাম। আটকাবো না। মনে করেন আমার রুমে না আমার শহরে প্রবেশ করবেন। আশা করছি আমার ওপর ভরসা রাখলে ঠকবেন না।”

তখন আরুহি বলল,,

“মাঝে মাঝে আপনি একটু বেশি ভাবেন মিস্টার নিশান !”

বলেই আরুহি আবরারের রুমে ঢুকে গেল। আরুহি আবরার এর রুম দেখে মুগ্ধ ছেলেদের রুম ও এতো গোছানো হয়। অবশ্য আরহাম ও বেশ গুছালো ছেলে। প্রতিটা মেয়ে তার জীবনসঙ্গীর মধ্যে তার বাবার গুন দেখতে চায়। কিন্তু আরুহি চায় ওর ভাই আরহাম এর মতো। আবরার এর ভেতর অনেক কিছুই দেখতে পায় আরুহি ওর ভাইয়ের মতো। আবরারের রুমটা বেশ গুছানো পরিপাটি একপাশে বুকশেলফ আরেকপাশে একটা পড়ার টেবিল তারমধ্যে বই ল্যাপটপ রয়েছে। আরো কিছু জিনিস রয়েছে। হুট করে আরুহি বলল,

“আপনার রুমটা দারুন! পরিপাটি গুছানো। ”

“থ্যাঙ্ক ইউ মিস!”আসলে কি বলুন তো যতোক্ষন বাড়িতে থাকি নিজের রুমেই থাকি তো তাই গুছিয়ে রাখি। আমার আবার অগোছালো জিনিস খুব একটা ভালো লাগেনা।”

“পরিবারের সাথে সময় কাটান না?”

“কাটাই তবে কম ঐ যে বলেছিলাম না ছেলে হয়েও একটু ইনট্রোভার্ট আর কি!”

“পরিবারের সাথে সময় কাটাবেন দেখবেন অনেকটাই ফ্রি লাগছে। এই ব্যস্তময় জীবনে পরিবারই তো শান্তির নীড়। তাই বেশি বেশি পরিবারের সাথে সময় কাটাবেন।”

“সব কিছু ঠিক থাকলে অবশ্যই সব করতাম।”

“আচ্ছা বাদ দিন। আপনার ইন্টার্নি শেষ হলে কি করবেন!”

“এখনো কিছু ভাবি নি আগে শেষ হোক তারপর দেখা যাবে।”

‘ওহ আচ্ছা।”

“আচ্ছা মিস আপনার কাছে সব থেকে সুন্দরতম অনুভূতি কি?”

“আমি বুঝতে পারি না আপনার মাঝে মাঝে কি হয়! অদ্ভুত প্রশ্ন করেন!”

“আরে আপনি বলুন – ই না। শুনি একটু!

“সুন্দরতম অনুভূতি রাইট,,নিজের কাছে ফেরার চেয়ে সুন্দর ব্যাপার বা অনুভূতি আর কিছুই নেই। আমার কাছে ঐ অনুভুতিটাই বেস্ট লাগে। মনে করেন আপনি ব্যস্ততার কারণে আপনি নিজেই নিজেকে সময় দিতে পারছেন না সব বোর লাগছে। তখন আপনি সারা দুনিয়া কে সাইডে রেখে এক কাপ কফি হাতে চলে যান কোন এক নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে একটা বড় শ্বাস নিন। দেখবেন এর থেকে শান্তি আপনি কোথাও পাবেন না।
একা থাকা মানে নিঃসঙ্গ হওয়া নয়, কখনও কখনও আপনি নিজেই আপনার সেরা সঙ্গী।”

“এই ব্যস্তময় শহর ছেড়ে নিরিবিলি জায়গায় এক কাপ কফি হাতে নিতে নিতে তো আমার কফিটা ঠান্ডা হয়ে যাবে মিস। এখনকার সময়ে নিরিবিলি জায়গায় অভাব হয়ে গেছে। ”

“মজা করছেন আমার সাথে।

“মজা কোথায় করলাম আমি তো যাস্ট কিডিং করলাম।”

এ কথা শুনেই আরুহি হেসে উঠলো তখন আবরার ও হেসে উঠলো আসলে আরুহি কে হাসানোর জন্যই ও কথাটা বললো। তবে আরুহির কথাটা খুব ভালো লেগেছে আবরারের। হাসি থামিয়ে আরুহি বলল,,,

“আমার টা তো শুনলেন এখন আপনি বলুন আপনার কোন অনুভূতি টা ভালো লাগে?”

আবরার হালকা হেসে বলল,,

“আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম অনুভূতি হলো কল্পনা। কারণ এখানে সব কিছুকে আমি আমার মতো করে পাই। এখানে না পাওয়া বলতে কিছুই নেই। যে জিনিস টা আমার সেটা এখানে শুধু একান্তই আমার!”

আরুহি কিছু বলবে তার আগেই আফরিন আর আরহাম আবরারের রুমে ঢুকলো। আরহাম রুমে ঢুকেই বলল,,,

“মাশাআল্লাহ আবরার তোমার রুমটা তো ভারি সুন্দর।”

“থ্যাঙ্কস ভাইয়া।”

তখন আফরিন বলল,,,

“চলুন আপনাদের আমাদের বাড়ির ছাদ দেখাই আমি অনেক ফুল গাছ লাগিয়েছি।”

“আপনি লাগিয়েছেন যখন তখন তো দেখতেই হয়।”

আরহাম এর কথায় মুচকি হাসে আফরিন। সবাই রুম থেকে বেরুতো নিল। কিন্তু আরুহি চোখ গেল টেবিলের ওপরে রাখা একটা ডায়রিতে ডায়রির মলাটে বড় করে লেখা। #তোর_শহরে_রেখেছি_পা
আরুহির দেখে একটু কৌতুহল হলো কিন্তু কিছু বলল না।আফরিনের সাথে ছাদে চলে গেল। আফরিনদের ছাদটা বেশ বড় ‌। এক সাইডে আফরিন খুব সুন্দর করে বাগান করেছে। সেখানে সুন্দর একটা দোলনা লাগানো ওটা আবরার লাগিয়েছে। মাঝে মাঝেই মাঝরাতে ও ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখে তাই ও লাগিয়েছে। আরহাম বাগান দেখে বলল,,,

“মাশাআল্লাহ মিস আফরিন আপনার বাগানটা তো খুব সুন্দর হয়েছে।”

“থ্যাঙ্ক ইউ মিস্টার। তবে আপনাদের বাগানটাও অনেক সুন্দর।”

তখন আরুহি বলল,,,

“এই দোলনা কে লাগিয়েছে?”

“ভাইয়া লাগিয়েছে!”

তখন আবরার বলল,,,

“আসলে মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় চন্দ্রবিলাস করতে । তাই ভাবলাম একটা দোলনা লাগাই ওখানে বসে বসে চন্দ্রবিলাস করা যাবে।”

“ভালো করেছেন। ”

তখন রিয়াদ আসলো ছাদে আর বলল,,,

“তোমরা এখানে আর আমি সারা বাড়ি তোমাদের খুজছি। চাচি নিচে সবাইকে ডাকছে। ”

তখন আবরার বলল,,

“আমরা আসছি।”

ওরা সবাই নিচে যেতে লাগলো। আরহাম আফরিন কে বলল,,

“আপনার বাগানে দেখলাম কয়েকটা কালো গোলাপ এর ফুল গাছ আছে আমাকে একটা দেবেন আসলে গোলাপের অনেক ফুল গাছ থাকলেও কালো গোলাপের গাছ নেই।”

“আচ্ছা ঠিক আছে যাওয়ার সময় দিয়ে দেব আপনাকে।”

“যারা ফুল ভালোবাসে তাদের মনটাও ফুলের মতোই সুন্দর হয়। আপনি তা আবারও প্রমান করে দিলেন।”

এ কথা শুনে আফরিন মুচকি হাসলো। তা দেখে আরহাম ও মুচকি হাসলো। নিচে আসতেই আরহামের মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেল। আরুহি নিচে এসে একদৃষ্টিতে সোফার দিকে তাকিয়ে আছে। আরহাম তাড়াতাড়ি গিয়ে আরুহির হাত শক্ত করে ধরলো। নাহিয়ান খান ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“ও তোমরা এসে পরেছো? এদিকে এসো তোমাদের সাথে আমার বোন বোনের জামাই আর ভাগ্নির সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।”

সোফায় নিতু নিতুর বাবা আর মা বসে আছে। নিতু আরুহিকে এবাড়িতে দেখে অবাক হয়ে গেছে। কিন্তু এখানে সবাই আছে তাই কোন রিয়াক্ট করছে না। আরুহি আর আরহাম জোর পূর্বক হাসি দিল। নিতুকে দেখে আবরারের খুব রাগ হলো। ওদের তো আজ ডাকা হয়নি নিশ্চয়ই বিনা দাওয়াতে চলে এসেছে।ওরা কেন এখানে এসেছে। আরুহি আর আরহাম এগিয়ে গেল নাহিয়ান খান এর দিকে। নাহিয়ান খান পরিচয় করিয়ে দিল ,,

“এ হচ্ছে আমার বোন ঊষা শিকদার আর এ হচ্ছে নওশাদ শিকদার আমার বোনের হাজবেন্ড। আর আর ও হচ্ছে নিতু আমার ভাগ্নি।আনোয়ার কাকাকে তো চেনো নওশাদ আর ওরা হচ্ছে আনোয়ার কাকার নাতি আর নাতনি আরুহি আর আরহাম। মাহমুদ ভাইয়ার ছেলে মেয়ে। নওশাদ দের কাজ থাকায় ওরা বিয়েতে যেতে পারেনি তাই তোমাদের সাথে আলাপ হয় নি আরহাম।”

আরুহিরা তাকে দেখে থমকালেও নওশাদ খান ওদের দেখে থমকায় নি কারন উনি আগে থেকেই খবর পেয়েছেন। যার জন্য উনি বিয়েতেও যায় নি। আরহাম এগিয়ে এসে বলল,,,

“গুড আফটারনুন আংকেল । কেমন আছেন আপনারা?”

“গুড আফটারনুন। আমরা ভালোই আছি। তোমরা কেমন আছো?”

“জি আলহামদুলিল্লাহ আমরাও ভালো আছি।”

“বিয়েতে কাজ থাকায় যাওয়া হয়ে উঠেনি তোমাদের সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো।”

“আমাদের ও ভালো লাগলো। ”

তখন আরুহি বলে উঠলো,,

“আমি আর আপনার মেয়ে একি মেডিকেল কলেজে পড়ি। উনাকে দেখে আপনার সাথে পরিচয় হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। আমাকে আপনার মেয়ে খুব ভালো মতোই চেনে।”

“ওহ তাই নাকি।”

তখন নিতু বলল,,,

“বাবা তোমাকে একটা মেয়ের কথা বলেছিলাম না। ফাস্ট ইয়ারে পড়ে এই মেয়েটাই সেই মেয়ে।’

নওশাদ শিকদার একবার আরুহির দিকে তাকালো তা দেখে আরুহি মুচকি হাসলো। তখন আরহাম বলল,,,

“জুম্মার নামাজের সময় হয়ে গেছে। নামাজ পড়ে আসি তারপর আপনাদের সাথে কথা হবে।”

তখন আবরার বলল,,

“আমিও যাবো। কয়েক মিনিট দাঁড়াও আমি গোসল করে রেডি হয়ে আসছি।”

তখন নাহিয়ান খান বললেন,,

“আমরাও যাবো সকলে একসাথেই যাই।”

আরহাম আরুহিকে টেনে একপাশে সরে দাঁড়ালো আর কি যেনো বললো। আরুহি মাথা ঠান্ডা করে ওর ভাইয়ের কথা শুনলো। আরুহি এসে সোফায় বসলো। আবরারের ফুপি উষা শিকদার আরুহি নানা জিনিস জিজ্ঞেস করছে ও মুচকি হাসি হেসে সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। কিন্তু নিতু কে এড়িয়ে চলছে।
লাইফে ভালো থাকতে হলে কিছু মানুষকে এড়িয়ে যাওয়া প্রয়োজন।কিছু মানুষকে ইগনোর করা প্রয়োজন।লাইফে অনেক মানুষই আপনাকে পছন্দ করবেনা।আপনি হাজারটা ভালো কাজ করলেও তারা আপনার প্রশংসা করবেনা।কিন্তু একটা ভুল করলে দেখবেন দুর্নাম করে ভরে ফেলবে!
এইসব মানুষদেরকে ইগনোর করুন।তারা কে কি বললো তা এড়িয়ে চলুন; আপনি আপনার জায়গায় ঠিক থাকুন এইটুকুই যথেষ্ট!

ছেলেরা সবাই রেডি হয়ে আসতেই ওরা সবাই মিলে মসজিদে গেল। আরুহিরা কিছুক্ষন কথা বলে নামাজ পরলো । যাই হয়ে যাক না নামাজ মিস দেওয়া যাবে না। আরুহি নামাজ পরে আফরিনের রুমে বসে রইলো। আরহাম আসতেই ওর ডাক পরলো যে ছেলেরা নামাজ পরে চলে এসেছে। ওরা নিচে যেতেই নাসরিন খান সকলকে খাবার দিলেন। আরুহি আর আরহাম কোন মতে খাবার খেল। সবার খাওয়া শেষ হতেই আরহাম বলল,,,

“আন্টি আমার আর্জেন্ট কাজ পরে গেছে এখনি যেতে হবে।”

“এ কেমন কথা আরহাম আজকে তো তোমাদের সারাদিন আমাদের বাড়িতে থাকার কথা।”

“হুট করেই কাজটা এসে পরেছে। এখন যেতে হবে।”

“তাহলে আর কি করার। তাহলে আরুহিকে রেখে যাও। বাড়ি যাওয়ার সময় নিয়ে যেও।”

তখন আরুহি বলল,,

“না আন্টি আজ আর থাকবো না আবার অন্য একদিন আসবো। আজ আসি।”

“নিশান সন্ধ্যার আগে তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দেবে সমস্যা নেই।”

তখন আবরার বলল,,,

“মিস উনি যখন বলছে থাকুন না। আমি আপনাকে ড্রপ করে দেব।”

“সরি মিস্টার আপনাদের কথা রাখতে পারছি না। আজ আসি পরে আবার আসবো।”

আবরার কিছু একটা বুঝতে পারলো। তাই আর না করলো না। আবরার বলল,,

“ঠিক আছে চলুন আপনাদের এগিয়ে দিই।”

আবরার আর আরুহি সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। আবরার আর আফরিন গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিল। তখন আফরিন বলল,,,

“এক মিনিট দাঁড়ান আমি এখনি আসছি।”

বলেই আফরিন দৌড়ে বাড়ির ভেতরে গেল। কিছুক্ষণ পর হাতে কালো গোলাপের গাছ নিয়ে এলো। আর বলল,,,

“এই মিস্টার আপনার কালো গোলাপ গাছ।”

“ধন্যবাদ মিস। আমি তো একদম ভুলেই গেছিলাম।”

“আবারো আসবেন আমাদের বাড়িতে।”

“আল্লাহ হাফেজ।”

তখন আরুহি বলল,,

“আল্লাহ হাফেজ ”

আরুহি আর আরহাম চলে গেল। তারপর ওরা বাড়িতে ফিরলো। সকলে সোফায় বসে আছে। হুট করে নাহিয়ান খান বললেন,,,

“তা নওশাদ কোন খবর না দিয়েই চলে এলে। আমাদের আগে বলতে পারতে।”

তখন উষা শিকদার বলল,,,

“নিজের বাড়িতে আসবো তাও খবর দিয়ে আসতে হবে নাকি?”

“আমি এটা মিন করে বলিনি।”

তখন নওশাদ শিকদার বলল,,

“আসলে ভাইয়া একটা কাজেই এসেছি। আমি সোজা কথার মানুষ সকলে যখন এখানে আছে তাই সকলের সামনেই বলছি আমি আবরারের সাথে নিতুর বিয়ের কথা বলতে এসেছি।”

এ কথা শুনেই আবরার দাঁড়িয়ে পরলো। আর বলল,,,

“কি নিতুর সাথে আমার বিয়ের কথা বলতে এসেছেন আপনাদের কে বোধ বুদ্ধি লোপ পেয়েছে।”

তখন নাহিয়ান খান বললেন,,,

“নিশান শান্ত হও।”

“কি শান্ত হবো। নিতু আমার ফুফাতো বোন আমি সবসময় ওকে বোনের নজরে দেখি। আর আপনারা কি না। ”

নওশাদ শিকদার বলল,,,

“আমার মেয়ে খারাপ কোথায়? আর ওতো দেখতে সুন্দরীও তাহলে কি সমস্যা।আর তোমরা তো আর আপন ভাই বোন নও। আমার মেয়ে তোমাকে পছন্দ করে আর আমাদের ও তোমাকে খুব পছন্দ। তাই আমি চাই তোমার আর নিতুর বিয়ে হোক।”

আবরার শান্ত স্বরে বলল,,

সৌন্দর্য কখনো মানুষের চেহারা বা গায়ের
রঙে থাকে না,সৌন্দর্য থাকে মানুষের মনে,ব্যবহারে আর ব্যক্তিত্বে!

আর একটা কথা,,,

ভুল শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করার চেয়ে!
স্থানটি চিরকাল খালি থাকা ভালো !

আশা করি আমার উত্তর পেয়ে গেছেন।”

বলেই আবরার রেগে ওপরে চলে গেল। গিয়েই ও দরজাটা এতো জোরে বন্ধ করলো যে নিচ থেকে আওয়াজ শোনা গেল। ওর রাগ কমছেই না। ও গিয়ে কিছু জিনিস ফেলে দিল। কিছুক্ষণ পর আবরারের ফোন বেজে উঠল আবরার দেখলো আরুহি ফোন করেছে। ও ফোন ধরেই বলল,,

“তুমি আমার অনেক শখের খুজে পাওয়া এক প্রজাপতি নীল ”

এ কথা শুনে আরুহি বলল,,,

“মিস্টার নিশান কি হয়েছে আপনার কি বলছেন?

“আমার কিছু ভালো লাগছে না মিস আরুহি। আমার খুব অস্থির লাগছে সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আমার ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে ফেলতে। আমি কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছি না। কোথা থেকে এই অশান্তি হচ্ছে এটাও বুঝতে পারছি না। আমার একটু শান্তি চাই।”

আরুহি বুঝতে পারলো আবরার কোন কারনে অস্থির হয়ে পরেছে। ওর এখন একটু শান্তি দরকার। আবরার নিজেও বুঝতে পারছে না ও কি বলছে। আরুহি একটু চুপ থেকে বলল,,

“নিশান শান্ত হোন। বড় বড় শ্বাস নিন।”

আবরার আরুহির কথা মতো শ্বাস নিলো। আরুহি বলল,,,

“এখন কেমন লাগছে?”

“একটু বেটার!”

“আমি যা বলছি মন দিয়ে শুনুন,, অতিরিক্ত চিন্তা করা বন্ধ করুন। আপনার মনে নেতিবাচক চিন্তা এবং আত্ম-সন্দেহ করা বন্ধ করুন। আপনি যা মনে করেন তার বেশিরভাগই সম্ভবত ঘটবে না, নিজেকে অত্যাচার করবেন না, নিজেকে যথেষ্ট ভালবাসুন এবং নিজের প্রতি সদয় হন। দিন শেষে মনে রাখবেন; আল্লাহ আপনার জন্য শুধুমাত্র উত্তম কিছু চান। তাই সব কিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ বলুন!হেরে যাওয়ার নাম জীবন নয়, সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার নামই জীবন। যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন সমস্যা থাকবেই। সমস্যা দেখে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না; সমস্যাগুলোকে পায়ে ঠেলে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। সংগ্রাম করতে হবে বাস্তবতার সাথে টিকে থাকতে হবে জীবন যুদ্ধের সংগ্রামে!

-চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here