তোর শহরে রেখেছি পা (পর্ব ৪)

0
731

#তোর_শহরে_রেখেছি_পা
#পর্ব_৪
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

আরুহি বাড়ি এসে দেখলো আরহামও বাড়িতে। ও আরহামকে দেখে বলল,,,

“ভাইয়া তুমি এই সময় বাড়িতে? তোমার শরীর ঠিক আছে তো! তুমি তো এই সময় কখনো বাড়িতে থাকো না।”

“আরে বোনু রিল্যাক্স! আমি একদম ঠিক আছি। আজ তেমন কাজ ছিল না তাই বাড়িতে এলাম। কিন্তু তুই এসময় বাড়িতে?”

“কাল মোস্তাক হোসেন ধরা পরলো না তাই আজ ক্লাস হবে না। ভাইয়া তুমি কিন্তু মোস্তাক কে ছাড়বে না। ওর থেকে সব ইনফরমেশন কালেক্ট করো। এর পরের জনকেও তো ধরতে হবে।”

“ওর জন্য আমার থেকে বেশি A.K পারফেক্ট। ওর মারার স্টাইল দেখে আমিই মাঝে মাঝে ভয় পাই।”

“এই কাজের জন্য A.K কে টানছো কেন? সে জানে তুমি পারবে তাই তো তোমাকে বলেছে।”

“হুম বুঝতে পেরেছি। আজ যেহেতু দুজনেই বাড়ি তাহলে চল একসাথে রান্না করি যার রান্না বেস্ট হবে। তাকে অপরজন রেস্টুরেন্টে নিয়ে ট্রিট দিবে। সে যা খেতে চাইবে তাই- ই তাকে খাওয়ানো হবে। এবার বলুন আপনি রাজি মিস আরুহি মাহমুদ খান।”

“হুম রাজি আমি জানি আমার রান্নাই বেস্ট হবে। ওকে আমি ওপর থেকে ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর শুরু করা যাবে মিস্টার আরহাম মাহমুদ খান।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

আরুহি ওপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। তারপর দুজনে রান্না শুরু করল দুজন দুজনের ফ্রেভারিট আইটেম করলো। টাইম ছিল একঘন্টা অতঃপর রান্না শেষ করে টেবিলে রাখলো। কিন্তু জাজ হবে কে আমেনা চাচি তো সকালের কাজ শেষ করে চলে গেছে। এখন বাসায় কেউ নেই। তাই দুজনে মিলে ঠিক করলো দুজন দুজনের টা টেস্ট করবে কিন্তু মিথ্যা বলা যাবে না। দুজনে ওয়াদা করলো তারা মিথ্যা বলবে না। অতঃপর দুজনে এক লুকমা মুখে দিলো আর একসাথে বলে উঠল,,,

“লা জাবাব সত্যি খাবার টা দারুন হয়েছে।”

দুজনে এই কথা বলে দুজনের দিকে তাকালো। আর একসাথে হেসে উঠল। তারপর আরহাম বলল,,,

“তারমানে দুজনের টাই ভালো হয়েছে। এখন কি করা যায় বলতো?’

“এক কাজ করি ভাইয়া যেহেতু দুজনের টাই ভালো হয়েছে তাহলে রেস্টুরেন্টে যাই আমি তোমাকে খাওয়াবো তুমি আমাকে। কিন্তু আমার লস হবে। কারন তুমি আমার থেকে বেশি খাও!”

“এই কি বললি তুই আমি বেশি খাই তোর হচ্ছে দাঁড়া!”

আবহাম চেয়ার ছেড়ে উঠলো তা দেখে আরুহিও উঠে দৌড় দিল। আরুহি আগে আগে আরহাম পেছনে পেছনে। পুরো ড্রয়িংরুম চক্কর দিচ্ছে।দুজনেরই মুখে হাসি লেগে আছে। এটাই ওদের জন্য শান্তির। কথায় আছে না অল্প জিনিসেও শান্তি পাবে যদি তুমি সেটা অনুভব করতে পারো। একটা সময় দুজনেই হাপিয়ে গেল। আর সোফার বসলো। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আবারও একসাথে হেসে উঠলো। ওদের দেখে কে বলবে ওরা অসুখী বরং ওদের দেখে যে কেউ বলবে ওদের মতো সুখী কেউ নেই। আরুহির আবরারের কথা মনে পরতেই ও বলল,,,

“ভাইয়া তোমার বন্ধু নিশান আবরার আমাদের বাড়িতে আসতে চেয়েছেন।”

“ভালো তো তুই কি বললি?”

“আমি বলেছি যখন তাদের সময় হয় তখন বলতে আমাকে।”

“আবরারও আমার মতো একজন সি আই ডি অফিসার। সে যে স্পাই অফিসার সেটা আমি কাল জানলাম। ”

“কি!! উনি স্পাই অফিসার!”

আরহাম মুচকি হেসে বলল,,,

“হ্যা উনি একজন স্পাই অফিসার। আমরা এর আগে সিলেট গিয়েছিলাম কাজের জন্য তখন আবরার ও কাজের জন্যই গিয়েছিল। সেটা আমি কাল জানলাম।

“ওহ আচ্ছা!”

“তাহলে ওদের সামনে শুক্রবার আসতে বল ওকে আর তোর নতুন বান্ধবী ওর বোনকে কি যেনো নাম ,,হ্যা মনে পরেছে নিশি আফরিন।”

“আমি আর কাউকে চিনি নাকি যে বলব। আর হ্যা আমাদের ও উনাদের বাড়িতে যেতে বলেছে।”

“সময় সুযোগ হলে যাবো কোন একদিন। এখন চল খেয়ে নিই দৌড়াদৌড়ির চক্করে একটু খেয়েই উঠে পরেছি।”

“হ্যা চলো।

___________________

ওদিকে,,,,

আবরার আজও তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছে। ও বাড়ি ফিরে সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই নাসরিন খান সাহস যুগিয়ে বললেন,,,

“নিশান শুনো?”

আবরারের পা দুটো থেমে গেল। একমাত্র তিনি আর আবরারের বাবা নিশান বলে ডাকে অনেকদিন পর এই নামের ডাক শুনে আবরার থমকে গেল। আফরিন , রুবিনা খান ,নাদিয়া সকলে ড্রয়িংরুমেই ছিল ওরাও নাসরিন খান এর দিকে তাকালো। আবরার ওভাবেই দাঁড়িয়ে বলল,,

“কি বলবেন বলুন আমার এতো সময় নেয়।”

“কাল রাতে অনেক রাত করে বাড়ি ফিরেছো আবার সকালে কাশতেও দেখলাম আমি তোমার জন্য একটা আয়ুর্বেদিক ওষুধ বানিয়েছি সেটা যদি খাও তাহলে আরাম পাবে।”

“আমাকে নিয়ে এতো চিন্তিত কবে হলেন মিসেস খান। আমার কিছু হয় নি আমি ঠিক আছি। আগে তো সাংবাদিক ছিলেন সারাদিন এ খবর সে খবর খুঁজে বেরিয়েছেন। আপনার বাচ্চা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে সে খেয়াল ও তো থাকতো না। হুট করে পাঁচ বছর আগে কি হলো আপনি চাকরি ছেড়ে দিলেন। তারপর থেকে শুরু করলেন ভালো মা হওয়ার নাটক। এরপর থেকে আমার সাথে এসব আদিখ্যেতা দেখাতে আসবেন না।”

আবরার গটগট পায়ে ওপরে উঠে গেল। নাসরিন খানের চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো। তিনি একজন ভালো মা হতে পারেন নি। তিনি পেশায় সাংবাদিক ছিলেন সারাদিন খবরের পেছনে ছুটতেন। আবরার কে কখনো সময় দিতো না। ওকে ওর চাচি রুবিনা খানই দেখাশোনা করতেন। আফরিন হলো তাও একই অবস্থা। আফরিন কে আবরার – ই দেখাশোনা করেছে। হুট করে পাঁচ বছর আগে তিনি চাকরি ছেড়ে দিলেন। তখন তিনি সংসারে মনোযোগী হন। ততদিনে আবরার আর আফরিন উনার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। উনি এখন বুঝতে পারছে সারাজীবন উনি কি ভুল গুলো করে আসছিলেন। এখন উনি একটা তৃষ্ণার্থ মানুষের মতো ছেলেমেয়েদের ভালোবাসার জন্য তাকিয়ে থাকে। আফরিন কাছে এলেও আবরার নাসরিন খানের ধারে কাছেও যায় না। সত্যি বলতে ও ওর মাকে ঘৃনা করে কারন ওর শৈশব টা নষ্ট করার পেছনে ওনারই বড় একটা অবদান রয়েছে। একটা বাচ্চার মা না থাকলে তার শৈশব টা কেমন হয়। তা কারো অজানা নয়। কিন্তু ওর মা তো থেকেও ছিল না কখনো ওর পাশে। আবরার ওপরে গিয়ে রুমের ভেতরে ঢুকে পরলো তারপর তাড়াতাড়ি করে সব রেখে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিল। ও ওর মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে চায় না। কিন্তু উনি সামলে আসলেই ওর শৈশবের স্মৃতি মনে পরে। কতো কান্না করেছে নাসরিন খানের জন্য কিন্তু উনি আসেন নি আবরার এর কোন কথা শোনেননি। আবরার মায়ের অনাদরেই বড় হতে থাকে যখন ওর দশ বছর তখন ও বুঝতে পারল বলে লাভ নেই তখন থেকে ও সব হাল ছেড়ে দেয়। নিজেকে একা একাই সামলাতে থাকে। সবার থেকে দূরে থাকতে শুরু করে হাসতে ভুলে যায়। আফরিন আর রিয়াদের জন্য একটু হাসি মজা করতো। কিন্তু ওর ষোলো বছর বয়সে একটা ঘটনার জন্য আবার আবরার নিজেকে নিজের মাঝে বন্দী করে ফেলে। ওর বাবাকে ঘৃনা করতে শুরু করে। আগে তো তাও হাসতো কিন্তুসেই ঘটনার পরে ও হাসতে ভুলে যায়। অনেক বছর পর আরুহির সাথে মন খুলে হেসেছে। আবরার এর এখন মনে হচ্ছে চিৎকার করে কাঁদতে। কেন ওর জীবন এরকম হয়ে গেল। ও তো ভালোভাবে বাঁচতে চেয়েছিল ও তো এই এতো টানাপোড়েন চায় নি। আবরার ফ্রেশ হয়ে গোসল করে বের হলো। তারপর ভালোভাবে ওযু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেল।কারন ওর মনে এখন যে ঝড় চলছে সেটা নামাজের মাধ্যমেই থামাতে পারবে। মানসিক শান্তির চাবিকাঠিই তো নামাজ। রবের কাছে মনপ্রান দিয়ে দোয়া করলো যাতে একটা নরমাল জীবন পায়। আবরার নামাজ শেষ করে শান্তি অনুভব করলো। ও গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়ালো। আর চোখ বন্ধ করলো আর আনমনে বলে উঠলো,,,

“কিছু কিছু বিষন্নতার গল্প কাউকে বলা যায় না।
অদ্ভুত সেই বিষন্নতা; বিচিত্র সেই মন খারাপ মাথার ভেতর মাকড়শার জালের মত এলোমেলো ভাবে জাল বুনতে থাকে, আর সেই জালে হাসি আর আনন্দগুলো আটকে যায়! আমি তো একটু হাসি মজা করেই থাকতে চাই তবুও বুকের ভেতর অদ্ভুত যন্ত্রনা হতে থাকে। আমার কি দোষ ছিল আমি একটু বাবা মায়ের ভালোবাসা চেয়েছিলাম। বেশি কিছু তো চাই নি। কিন্তু এই অল্প জিনিস টাও আমার হাতে আসলো না। এই সংক্ষিপ্ত জীবনে কতো কাহিনী।”

“চিৎকার করে কান্না করার বয়স টা চলে গেলে কষ্টের পরিমানও বেড়ে যায়! কি অসহনীয় যন্ত্রণা না কাউকে বলা যায় না কাউকে দেখানো যায়। তবে আমি চাই আমার জীবনে এমন কেউ আসুক যে মন দিয়ে আমার আমার কথা শুনবে আমাকে বুঝবে আমার কষ্টের ভাগীদার হবে। প্রিয় তুমি,, আমার শহরে তোমার পা তো পরে গেছে তুমি কি পারবে আমার এই সবকিছুর ভাগীদার হতে নাকি তুমিও বাকিদের মতো আমার থেকে দূরে চলে যাবে। মাঝে মাঝে বড্ড ভয় হয়।

______________________

আবরার সব কিছু সাইডে রেখে নিচে আসলো দুপুরের খাবার খেতে। রিয়াদ আজও অফিস থেকে দুপুরের খাওয়ার জন্য এসেছে। আফরিন, আবরার, মিস্টি,আর রিয়াদ খাচ্ছে। নাদিয়া খাবার বেরে দিচ্ছে। দুর থেকে নাসরিন খান দেখছে। রুবিনা খান কোথায় যেনো গেছে। খাওয়া শেষ হতেই আবরারের ফোনে অচেনা নাম্বার থেকে একটা কল এলো। আবরার কল ধরে সালাম দিল,,,

“আসসালামু আলাইকুম!”

ওয়ালাইকুমুস সালাম!

কন্ঠস্বর টা শুনেই আবরারের মুখে হাসি ফুটে উঠল। বাকিরা সবাই ওকে পর্যবেক্ষন করছে। ওর মুখে হাসি দেখে সকলে অবাক হলো। ছেলেটা আগে হাসতো না আর এখন হুটহাট হাসে। আবরার বলল,,,

“তা মিস আমার নাম্বার পেলেন কোথা থেকে।”

“ভাইয়া দিয়েছে ভাইয়াকে তো আপনি আপনার নাম্বার দিয়েছিলেন। কিন্তু কখনো ফোন করা হয় নি।”

তো আপনারা বুঝতেই পারছেন কে কল করেছে কলটা আরুহি করেছে।

“তা এখন ফোন করার কারন?”

“সামনে শুক্রবার আপনার আর আফরিনের দাওয়াত রইল আমাদের বাসায়।”

“কেন কোন ওকেশন আছে নাকি?”

“না আপনি না বললেন আমাদের বাড়িতে আসবেন । আমি বাড়ি ফিরে ভাইয়াকে বললাম ভাইয়া বলল শুক্রবার আপনাদের আসতে বলতে। আপনার সাথে দেখা করতে চায়।”

“ওহ আচ্ছা! আমি আর আফরিন আসবো জুম্মার নামাজের পর।”

“ঠিক আছে!”

তখন মিস্টি আবরারকে বলল ,,,

“চাচু তুমরা কুতায় যাবে?”

আবরার আরুহিকে একমিনিট বলে মিস্টিকে বলল,,,

“তোমার এক আন্টির বাসায় যাবো আমি আর তোমার ফুপি। ”

“আন্টিটা কি খুব মিষ্টি দেখতে?”

“হ্যা মামনি খুব মিষ্টি দেখতে।”

“আমার সাতে কতা বলবে আন্টিটা আমিও দাবো তুমাদের সাথে?”

আবরার ফোনটা কানে নিল তখন আরুহি বলল,,,

“আপনি পিচ্চিটার কাছে ফোনটা দিন আমি কথা বলছি।”

“আচ্ছা ঠিক আছে!”

আবরার ফোনটা স্পিকারে দিয়ে মিস্টির কাছে দিল আর বলল,,

“এই নাও তোমার আন্টি তোমার সাথে কথা বলবে।”

” সত্যি”

“হুম সত্যি!”

মিস্টি কানে ফোনটা নিল তখন আরুহি বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম সোনা!”

“ওয়া ওয়া লাই কুও মুস সালাম।”

আরুহি বুঝতে পারল পিচ্চিটার বেশি বয়স না। আর কথাও ও স্পষ্ট না। সালামের উত্তর শুনে খুশি হলো। বাচ্চাদের সালামটা শেখানো উচিত। যাতে তারা আগে থেকেই সালাম দেওয়া শিখতে পারে আর অভ্যাস করতে পারে।

“মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর করে সালাম নিতে পারো তো তুমি!”

“চাচ্চু শিকিয়েছে সালাম দিতে নিতে!”

“ভালো তো তোমার নাম কি সোনা। আর কেমন আছো তুমি?”

“আমার নাম মিস্টি আমি ভালু আছি! তুমি কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি সোনা।”

“তুমি দানো আমাল না কোন আন্টি নেই। তাই তো তুমার সাথে কথা বলতে চাইলাম!”

“ভালো করেছো আমিও তোমার সাথে কথা বলতে পেরে খুব খুশি হলাম। তুমিও তোমার চাচ্চুর সাথে আমাদের বাসায় এসো।”

“আচ্ছা আন্টি! তুমি না কুব ভালো আন্টি!”

“তুমিও খুব ভালো মিস্টি। এখন তোমার চাচ্চুর কাছে ফোনটা দাও।

মিস্টি ফোনটা আবরার কে দিল। এতক্ষন ফোনটা স্পিকারে ছিল বলে সবাই আরুহির সব কথা শুনতে পেল। সকলে ওর ব্যবহারে মুগ্ধ। নাসরিন বেগম মনে মনে কিছু ভাবলেন। আফরিন আরুহির কন্ঠ শুনে বুঝতে পেরেছে যে আরুহি কল করেছে। আরুহি আবরার কে বলল আফরিন আর মিস্টিকে নিয়ে আসতে আর আল্লাহ হাফেজ বলে ফোনটা কেটে দিল।ও ফোন কাটতেই রিয়াদ বলল,,,

“কে ফোন করেছিলো আবরার?”

তখন আফরিন বলল,,,

“আমার নতুন বান্ধবী আরুহি মাহমুদ খান! তাইনা ভাইয়া!”

“হুম!”

তখন রিয়াদ বলল,,

“আফরিন তোর বান্ধবী আবরার কে কেন ফোন দিল!”

তখন আবরার বলল,,,

“কারন ওর বান্ধবী আর বান্ধবীর ভাইয়ের সাথে আমার আগে থেকেই পরিচয়। আর দাওয়াত করলো ওর ভাই। উনি আমার সাথে দেখা করতে চায় তাই। আর কোন প্রশ্ন আছে। আর হ্যাঁ দাওয়াত টা শুক্রবার মানে দুদিন পর আমি নিশু আর মিস্টি ওদের বাড়িতে যাচ্ছি। আর কিছু?”

“সব তো তুই বলেই দিলি আর কি থাকতে পারে। কিন্তু তোদের পরিচয় হলো কোথায় আর কিভাবে।”

আবরার সিলেটের সব কথা খুলে বলল। কিভাবে পরিচয় হলো কি হয়েছে সব। সবাই সব শুনে হেসে উঠলো সাথে আবরার ও হাসলো। অনেক দিন পর আবরার কে সবাই এভাবে মন খুলে হাসতে দেখলো। নাসরিন খান তো চোখ ফেরাতে পারছে না। ইশশ্ তার ছেলেটাকে হাসলে কতো সুন্দর লাগে। কখনো ছেলেটার দিকে নজরই দেওয়া হয় নি।

তখন নাদিয়া বলল,,,

“যাই বলো মেয়েটার ব্যবহার কিন্তু অনেক ভালো। কি সুন্দর করে মিস্টির সাথে কথা বললো।”

“হুম তা তো শুনলামই!”

আবরার ওখান থেকে ওপরে চলে গেল। তখন আফরিন বলল,,,

“আরুহির এইটুকুই শুনেই মুগ্ধ হলে। ওর আরো কাহিনী শুনলে তো ওর ফ্যান হয়ে যাবে।”

তখন রিয়াদ বলল,,,

“এটাই কি সেই মেয়ে যার জন্য আবরার এখন স্বাভাবিক হচ্ছে।”

“হ্যা রিয়াদ ভাইয়া।” আফরিন কলেজে ঘটা সব ঘটনা খুলে বলল। আর এটাও বলল কাল আবরারই বলেছে ওদের বাড়িতে যাবে। তাই বোধহয় আজ দাওয়াত করলো। সব শুনে সবাই বুঝে গেল আসলে আবরারের মনে কি চলছে। তারা খুব খুশি হলো। নাসরিন খান ও মনে মনে কিছু একটা ভাবলো।

____________________

মোস্তাক হোসেনের সামনে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে আরহাম। মোস্তাক হোসেনের অবস্থা খুব একটা ভালো না। আরহাম শান্ত স্বরে বলল ,,,

“ভালো চাস তো বলে দে তোর সাথে কে কে যুক্ত।”

“আমিই নিজের জন্যই এগুলো করেছি । কেও আমার সাথে যুক্ত না।”

“তাই বুঝি তা এগুলো তোকে সাপ্লাই করে কে? নিশ্চয়ই তোর কাছের কেও!

“আমাকে মেরে ফেললেও আমি তার কথা বলবো না। ”

“যখন বলবিই না তাহলে তোকে বাঁচিয়ে রেখে লাভ কি তাই না। মেরেই ফেলি তোকে কি বলিস। কিন্তু মরার আগে তার নাম বলে পাপ টা একটু কম করে যা।”

“শুধু অবৈধ ওষুধ দিই বলে এতো বড় শাস্তি হবে আমার আমিও কিন্তু আইন কানুন জানি। আমাকে যদি মেরে ফেলো তাহলে নিজেও বাঁচতে পারবে না। তোমাকেও এর কৈফিয়ত দিতে হবে।”

“তোকে কে বলল আমি শুধু তোকে অবৈধ ওষুধ এর জন্য মারবো। আমি তো তোকে মাহমুদ খান আর তার স্ত্রীকে মারার জন্য তোকে মারবো।”

এই কথা শুনে মোস্তাক হোসেন এর পিলে চমকে উঠলো। এই কথা তো ওরা কয়েকজন ছাড়া আর কেউ জানেনা তাহলে ওরা জানালো কিভাবে। কে ও? মোস্তাক হোসেনের অবস্থা দেখে আরহাম হাসলো। আর বলল,,,

“কি হলো চমকে গেলি নাকি? এখন নিশ্চয়ই ভাবছিস আমি কি করে জানলাম? কে আমি?”

মোস্তাক হোসেন মাথা নাড়ালো। আরহাম মোস্তাক হোসেন এর সামনে গিয়ে বলল,,,

“আমি সেই বীর পুলিশ অফিসার মাহমুদ খানের ছেলে আরহাম মাহমুদ খান।”

“কিন্তু মাহমুদের তো কোন ছেলে ছিল না।”

“তোকে আরেকটা কথা বলি আমার একটা বোন ও আছে আর সে বেঁচেও আছে। তোর ভাগ্য ভালো আমার বোন এখানে নেই তাহলে ও তোর কি হাল করতো তুই ভাবতেও পারবি না। এখন তুই বল আমার বাবা মায়ের কি দোষ ছিল তাদের কে তোরা কেন মারলি? কি ক্ষতি করেছিল তোদের!”

মোস্তাক হোসেন মাথা নিচু করে ফেলল। আরহাম আবারও বলল,,,

“কি হলো চুপ করে আছিস কেন? তোর সাথে কে কে আছে বল আর কিসের জন্য তাদেরকে সাহায্য করেছিস?”

মোস্তাক হোসেন চুপ করে আছে দেখে আরহামের খুব রাগ হলো ও মোস্তাক হোসেন এর মুখে ইচ্ছে মতো ঘুসি মারতে লাগলো। মোস্তাক হোসেনের অবস্থা আগেই খারাপ ছিল এখন তো আরো খারাপ অবস্থা হলো। মোস্তাক হোসেন হাসতে লাগলো ।

মোস্তাক হোসেন হাসি থামালে এবার আবরার হাসতে লাগলো। আরহাম কে দেখে মনে হচ্ছে এ বছরের সেরা জোকস টা ওকে কেউ শুনিয়েছে। মোস্তাক হোসেন অবাক হয়ে আরহাম এর দিকে তাকালো। তখন আরহাম বলল,,,

“তুই কি বোকা নারে । আমি যখন জানতে পারলাম তুই আমার বাবা মারার সাথে যুক্ত আছিস তাহলে তোর সাথে কে কে ছিল সেটাও আমি জানি। হুদাই তোকে আমি মারলাম। আসলে তোকে দেখে খুব রাগ হচ্ছিল তাই রাগটাকে তোর ওপর খাটালাম। এখন বল NS এখন কোথায়?”

তখন মোস্তাক হোসেন বলল,,,

“আমি জানিনা! সেই ঘটনার পর আমার সাথে তার দেখা হয় নি।”

“তা অবশ্য ঠিক তার মুখটাই তো চেন্জ করে ফেলেছে পাঁচ বছর আগে তোর সামনে থাকলেও তো তাকে চিনবি না। তার কথা মতোই তো তুই আমার মায়ের খোঁজ খবর তাকে দিয়েছিস। আর তোর খবর পেয়েই তো সে সব জেনে গেছে আর তোর জন্যই ওরা আমার মা বাবাকে মেরে ফেলেছে।”

“সব যখন জানো তাহলে আমাকে এভাবে জিজ্ঞেস করছো কেন?”

“NS এর সব বাদ দিলাম। এখন বল তুই কেন আমার মায়ের খবর দিলি যার জন্য আমার মাকে মরতে হলো। আমি জানতে চাই। আমি জানি তুই জানিস সব কিছু। আমি কথা দিচ্ছি তুই যদি আমাকে সব বলিস তাহলে আমি তোর শাস্তি কম করার ব্যবস্থা করবো।”

মোস্তাক হোসেন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,,

“তোমার মা সবসময়ই একজন ভালো ডাক্তার ছিল। আমি আর তোমার মা একসাথে পরতাম। ডাক্তার ও একসাথেই হয়েছি। সবাই তার গুনগান করতো যেটা আমার ভালো লাগতো না। সেটারই ফায়দা নিয়েছে NS ও আমার কাছে আসে আর আমাকে প্রস্তাব দেয় অনেক টাকা দেবে আর তোমার মায়ের খবর দিতে হবে। আমিও মানা করিনি। আর NS কে শুধু তোমার বাবা না তোমার মাও দেখেছিল। NS এর মুখ পাল্টানোর কাজ আর অপারেশন টা তোমার মা-ই করেছিল। NS এর সন্দেহ ছিল তোমার মা কিছু একটা করতে পারে। যখন তোমার মা জানতে পারে NS এর ব্যাপারে তখনি তিনি সব প্রমান নিয়ে তোমার বাবাকে দেয়। এমনিতেও তোমার বাবা NS এর পেছনে পরে ছিল।তোমার বাবা প্রশাসন কে জানাবে বলে সেটা NS জানতে পেরে যায়। তাই তোমাদের মা বাবাকে মেরে ফেলে। তুমি এটা ভেবনা আমি শাস্তি কম করার জন্য তোমাকে এসব বললাম। আমি জানি আমি এখান থেকে বেরুলে NS আমাকে মেরে ফেলবে। ঐ যে তুমি বললে না মরার আগে একটু পাপ কম করতে তাই ভাবলাম মরার আগে একটু পাপ টা কম করেই যাই। আমি সত্যি জানতাম না এরকম কিছু হবে। ”

“কি বললি জানতি না তুই শুধুমাত্র তোর খোঁজ খবরের জন্য ওরা আমার মায়ের সম্পর্কে জানতে পেরেছিল।”

“ওরা আমাকে বলেছিল খবর না দিলে ওরা আমার পরিবার কে মেরে দিত।”

“ও আপনি আপনার পরিবারের কথা ভাবলেন অথচ আমার পরিবারের কথা ভাবলেন না। আর দু নম্বরি ওষুধ দিচ্ছেন তাদের পরিবারের কথা ভাবলেন না।”

মোস্তাক হোসেন আর কিছু বললেন না। মাথা নিচু করে ফেলল। আরহাম ও আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। এতক্ষন রুমে আরহাম আর মোস্তাক হোসেন ছাড়া আর কেউ ছিল না। নেওয়াজ আহমেদ সব শুনেছে আরহামের জন্য খারাপ লাগছে কিন্তু কিছুই করার নেই। আরো একজন শুনেছে সে হলো আরুহি। আরুহি আর আরহাম আগে থেকেই সব জানতো। তবুও সব শুনলো । আরুহির ইচ্ছে করছে লোকটাকে এখনি মেরে ফেলতে। আরুহি আর আরহাম বাড়ি চলে গেল। রাস্তায় দু ভাই-বোন কোন কথা বলেনি। বাড়িতে এসে আরুহি সোফায় বসে চোখ বুঝলো আরহাম ওর কাঁধে হাত রাখতেই ও আরহামকে জরিয়ে ধরে কেদে দিল আরহাম ও কাঁদছে। ওদের প্ল্যান এক এক করে সবাইকে শাস্তি দেওয়া। মোস্তাক হোসেন কে তো শাস্তি দেবেই। এবার টার্গেট আরেক জন কে। আরুহি আর আরহাম নিজেকে সামলিয়ে বলল,,,,

“এবার দ্বিতীয় জনকে শাস্তি দিতে হবে। এর জন্য আমাদের*********** যেতে হবে!”

বলেই দুজনে হেসে ফেললো।
____________________________

দেখতে দেখতে শুক্রবার চলে এসেছে। আজ আরুহি আরহাম খুব ব্যস্ত। কারন আজ আমেনা চাচি নেই গ্ৰামের বাড়িতে গেছে। তাই সব ওদের কেই করতে হবে। ওরা জানতো না আজ আমেনা চাচি থাকবে না। হুট করেই কাল চলে গেছে। কাজের লোক নেই বলে তো আর আবরার দের মানা করা যায় না। আরহাম আর আরুহি মিলে সব রান্না বান্না করলো। জুম্মার নামাজের সময় হওয়ায় আরহাম সব গুছিয়ে গোছল করে মসজিদে গেল। আরুহি বাসার সব ঠিক করে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে সোফায় বসে সবার অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর আরহাম আসলো। আবরার রা একটা একতলা বাড়ির সামনে এসে থামলো। আবরার বাড়ির সাথে ঠিকানা মেলালো এটাই সেই বাড়ি মাহমুদ ভিলা। আবরার আফরিন আর মিস্টিকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো। এমনিতে ও বাড়ির গাড়ি ইউজ করে না। কিন্তু মিস্টি আর আফরিনের জন্য আজ গাড়ি নিয়ে এসেছে। আবরার ওদের নিয়ে ভেতরে ঢুকলো । ঢোকার রাস্তার দু পাশে সুন্দর ফুল গাছ। আবরার গিয়ে কলিংবেল বাজালো। আরহাম গিয়ে দরজা খুললো। আবরার আরহাম কে দেখে সালাম দিয়ে হাত মেলালো। কিন্তু পাশে দেখতেই ও বলল,,,

“আপনি এখানে?”

আরহাম আফরিন কে দেখে যতটা অবাক হলো তার থেকে আফরিন বেশি অবাক হলো আরহামকে এখানে দেখে। তখন আফরিন বলল,,,

“এটা আপনার বাসা? আপনি এখানে কি করছেন?”

তখন আবরার বলল,,,

“আপনারা একে অপর কে চিনেন?”

তখন পেছন আরুহি বলল,,,

“সব কথা পরে শুনবো আগে ওদের ভেতরে আসতে দাও। আপনাদের আসতে অসুবিধা হয় নি তো?

তখন আবরার বলল,,,

“না কোন অসুবিধা হয় নি।”

আরুহি এসে আবরারের কোল থেকে মিস্টি কে কোলে নিয়ে বলল,,,

“মিস্টি মামনি তুমি কেমন আছো?”

“আমি ভালু আছি আন্টি?” তুমি কেমন আছো?

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি সোনা। আপনারা ভেতরে আসুন ।”

সবাই ভেতরে গেল।আরুহি ওর ভাইকে এভাবে দেখে অবাক হলো। ওরা গিয়ে সোফায় বসলো। আফরিনের হাতে কিছু প্যাকেট ছিল সেগুলো আরহাম এর হাতে দিয়ে বলল,,,

“আপনাকে এখানে একদম আশা করি নি। আপনি যে আরুহির ভাই সেটা আমি জানতামই না।”

“আপনার যে অবস্থা আমারও একি অবস্থা।”

ফ্ল্যাশব্যাক,,,

আফরিন শপিং মলে গিয়েছিল। আরহাম ও কাজের জন্য শপিং মলে গিয়েছিল। আরুহি আবরার এর জন্য শার্ট আর পাঞ্জাবি দেখছিল। কিন্তু আবরার তো ওর সাথে যায় নি। তাই কোন সাইজ নেবে বুঝতে পারছিল না। তখনি আরহাম কে উল্টো দিকে ঘুরে কারো সাথে কথা বলতে দেখে আফরিন। পেছন থেকে একদম আবরারের মতো হাইট আর বডি। তাই আফরিন গিয়ে আরহাম কে বলে,,,

“এক্সকিউজ মি মিস্টার?”

আরহাম কারো কন্ঠ শুনে পেছনে তাকায়। আফরিন আরহামকে দেখে ওখানেই থমকে যায়‌ শ্যামবর্ন মুখশ্রীতে । আরহাম পেছনে তাকিয়ে বলে ,,,

“ইয়েস বলুন!”

আরহামের কথায় আফরিন এর ধ্যান ভাঙে। ও বলে,,,

“আসলে আমি আমার ভাইয়ের জন্য কিছু শার্ট আর দুইটা পাঞ্জাবি কিনবো। কিন্তু ভাইয়া আমার সাথে আসে নি। পেছন থেকে দেখলাম আপনার হাইট আর বডি ভাইয়ার মতো। তাই আপনি যদি আমার সাথে একটু আসতেন তাহলে আমি আপনার মাপ নিয়ে ভাইয়ার জন্য শার্ট আর পাঞ্জাবি কিনতে পারতাম। আপনার যদি কোন অসুবিধা না থাকে তাহলে আমাকে একটু সাহায্য করবেন।”

আরহাম কিছু একটা ভেবে বলল,,

“ঠিক আছে চলুন!”

“ধন্যবাদ মিস্টার!”

“আপনি কি একাই এসেছেন শপিং করতে?”

“হ্যা এখন একাই আছি আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে এসেছিলাম কিন্তু তার কাজ পরে যাওয়ায় ও চলে গেছে।”

“ওহ আচ্ছা!”

আফরিন আরহামের মাপে কিছু শার্ট আর দুটো পাঞ্জাবি কিনলো। সব শেষে আফরিন বলল,,,

“ধন্যবাদ মিস্টার আমাকে সাহায্য করার জন্য!”

“ইটস্ ওকে। আমি এখন আসি!”

“কিছু না মনে করলে আমার সাথে এক কাপ কফি খেয়ে যান।”

“সরি মিস এখন সময় নেই। আবার অন্য একদিন দেখা হলে খাবো। এখন আসছি আল্লাহ হাফেজ!

বলেই আরহাম ওখান থেকে চলে যায়। আফরিন যাওয়ার দিকে অনিমেষ তাকিয়ে রইল।
_________________

বর্তমান ,

আরহাম বলল,,

“আপনার ভাইয়ার ড্রেস গুলো লেগেছিল তো?”

“হ্যা সব ভালো মতোই হয়েছিল। তবে আপনি যে কয়েকমাস আগের ঘটনা মনে রেখেছেন ব্যাপারটা ভালো লাগলো।”

“আপনিও তো মনে রেখেছেন।”

তখন আবরার বলল,,,

“আপনারা কি কথা বলছেন আপনারা কি আগেই একে অপরকে চিনতেন?”

তখন আরহাম বলল,,,

“হুম ঐ একটু মুখ চেনাচিনি নামটাও জানিনা।”

“মানে?”

আফরিন সব খুলে বলল তখন আরুহি বলল,,,

“তারমানে আফরিন! ঐ মেয়ে যে ভাইয়ার মাফ নিয়ে শার্ট আর পাঞ্জাবি কিনেছিল।’

তখন আরহাম বলল,,

“হ্যা ও মেয়েটাই!”

এ কথা শুনে আফরিন একটু লজ্জা পেল । তখন আরুহি সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাকলো। আরুহি মিস্টিকে খায়িয়ে দিল। সবার খাওয়া শেষ হলে।আরুহি সবাইকে বাড়িটা ঘুরে দেখালো। এখন ওরা ছাদে গেল। ছাদে কিছুটা বাগানের মতো। আরুহি আর আবরার ছাদের একটা কর্নারে গেল। তখন বলল,,,

“আপনি যে একজন স্পাই সি আই ডি অফিসার সেটা তো জানতাম না।”

“আপনাকে কে বলেছে?”

“ভাইয়া বলেছে! তবে ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লেগেছে। দেশের জন্য কিছু করতে পারলে সবারই ভালো লাগে।”

“ধন্যবাদ তবে এটা কাউকে বলবেন না। আপনার বান্ধবী কেও না।”

“ওকে!”

তখন মিস্টি এলো ওদের কাছে। ওরা সবাই মিলে কিছুক্ষণ আড্ডা দিল। বিকেলে আবরাররা ওদের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে গেল। ওরা গেল থেকেই জানতো আরুহিদের মা বাবা নেই তাই ওরা কোন প্রশ্ন করে নি। শুক্রবার সন্ধ্যায় আরুহিদের বাড়িতে একটা বিয়ের ইনভেটিশন কার্ড এলো। আর একটা ফোন ও এলো। আরুহি কার্ডটার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,

“এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। আমরা ভাবছিলাম কিভাবে ওখানে যাবো কিন্তু এটা তো আমাদের জন্য শুধু বিয়ের কার্ড না আমাদের ট্রাম কার্ড হিসেবে কাজ করবে।”

________________

আবরার এর আফরিন বাড়িতে ফিরেই শুনতে পেল তাদের এক দিন পরে গ্ৰামে যেতে হবে একটা বিয়ের জন্য। নিতুদের পরিবার ও যাবে। আবরার মানা করেছিল কিন্তু সবার জোরাজুরিতে যেতে রাজি হলো। গ্ৰামের বিয়ে আর যার বাড়িতে বিয়ে সে বারবার বলে দিয়েছে সবাই যেনো যায়। নাহিয়ান খান এর চাচার নাতিনের বিয়ে। নাহিয়ান খান এর বাবা মা মারা যাওয়ার পর তার চাচাই তাদের দেখাশোনা করেছে। আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে সব নাহিয়ান চৌধুরীর চাচার জন্য। তিনি এখনো বেচে আছে!” তারজন্যই ওখানে যেতে হবে। অনেক বছর হলো ওখানে যাওয়া হয় না। কিন্তু ফোনে যোগাযোগ থাকে। ওনাদের বাড়ি কুমিল্লা।সবাই মিলে ঠিক করেছে ট্রেন এ যাবে।

__________________

এক দিন পর ,,

আবরারের পুরো পরিবার ট্রেন থেকে নামলো।নিতুদের পরিবার বিয়ের দিন আসবে। কিন্তু ট্রেন থেকে নেমে সমস্যায় পরলো সবাই। কারন নাহিয়ান খান অনেক দিন হলো এখানে আসে না। তাই কাউকে তেমন চেনেও না। ওদের স্টেশন থেকে আরো ভেতরে যেতে হবে। আর গাড়ি দিয়েই যেতে হবে। ওরা গিয়ে ওখানে থাকা লোকদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,,

“এখান থেকে খান ভিলায় যেতে কতোক্ষন লাগবে।”

তখন একজন বলল,,

“এই গাড়িতে গেলে বিশ মিনিট লাগবো।”

তখন পাশ থেকে মেয়েলি শব্দ এলো।

“আসসালামু আলাইকুম মাসুম ভাই এখন কি বাড়ি যাবে?

তখন লোকটা হেসে বলল,,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম আরুহি যে ।!কেমন আছো তুমি?”

“এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি! তুমি কেমন আছো?”

তখন পাশ থেকে একটা বারো বছরের বাচ্চা ছেলে বলল,,,

“আরুহি আপা আপনে আইছেন অনেকদিন হলো আপনে গ্ৰামে আসেন না। আমি এখনি খবর পাটাইতেছি আপনে আইছেন। কিন্তু ভাইজান কই?

“ভাইয়া রাতে আসবে এখন কাজ আছে কেমন আছিস তুই?”

“আমি ভালোই আছি আপা । অহন যাই সবাইরে আপনার আসার কথা জানাইতে হইবে।”

বলেই ছেলেটা দৌড়ে কোথাও একটা চলে গেল তা দেখে আরুহি বলল,,,

“এই আস্তে যা পরে যাবি!”

বলেই আরুহি হাসতে লাগলো। কতো গুলো চোখ যে ওর দিকে তাকিয়ে আছে সেটা ও এখন বুঝতে পারলো। ও সবার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো । এতো আবরারের পরিবার। ওকে দেখে আবরার বলল,,,

“আরে মিস আরুহি আপনি এখানে?”

“হ্যা একটু গ্ৰামে আসলাম! কিন্তু আপনারা এখানে?”

তখন নাহিয়ান খান বললেন,,,

“আমরা খান বাড়ির বিয়েতে এসেছি। কিন্তু কিভাবে যাবো বুঝতে পারছিলাম না।”

“সমস্যা নেই স্যার আমি বলে দিচ্ছি!”

আরুহি লোকটাকে বলল,,

“মাসুম ভাই তুমি উনাদের সকলের বাড়িতে যাওয়ার ব্যবস্থা করো।”

সবাইকে গাড়িতে বসানোর ব্যবস্থা করা হলো শুধু একটা সিট বাকি। আবরার আর আরুহি দুজনে দাঁড়িয়ে আছে।তখন আরুহি বলল,,

“মিস্টার আপনি ওটায় বসে পরুন?”

“আপনি কিভাবে যাবেন?”

“আমার যাওয়ার অনেক সোর্স আছে। আপনি যান আমি চলে যাবো। ”

তখন কেউ পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,,

“এই আরু ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আমি তোর জন্য কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি স্কুটি নিয়ে। সেই কখন থেকে তোকে খুঁজছি ট্রেন থেকে নেমেই তুই হাওয়া। আরহাম যদি জানতো আমি তোকে খুঁজে পায় নি তাহলে তো আমার ওপর দুইশো তিন ডিগ্ৰি টর্চার করতো।”

“আরে ভাবি তুমি টেনশন করছো কেন? আমি তো জানতাম না তুমি আসবে তাহলে আর এখানে দাড়াতাম না।”

আরুহির কথা শুনে একজনের পিলে চমকে উঠলো।

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। আজকের পর্বে সবাই গঠনমূলক কমেন্ট করবেন। এতো বড় করে একটা পর্ব দিই কিন্তু আপনারা কিপটামি করেন। আপনাদের কমেন্ট গুলা লেখিকাদের কতো অনুপ্রেরণা যোগায় আপনারা জানেন না। তাই NC, next, না লিখে সবাই বড় বড় গঠন মূলক মন্তব্য করবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here