#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?
পর্ব-২৭
ফাবিহা নওশীন
??
আদিবার কথা রাখতে আদিকে সাথে নিতে হয় সামুর।মেয়ে তো আর জানে ওর মাম্মা পাপার মধ্যে কি চলছে।
স্কুলের সামনে গাড়ি থামলো।সামু,আদিবা,আদি একে বের হলো।
আদিবা দৌড়ে ভিতরে যেতে গিয়ে পড়ে গেলো।সেটা দেখে আদি অস্থির হয়ে দৌড়ে ধরতে গেলে সামু আদির হাত ধরে থামিয়ে দেয়।
আদি অবাক চোখে চাইলে সামু আদিবাকে বলে,
–বেবি কিচ্ছু হয়নি।উঠে পড়ো।তুমি তো ব্রেভ গার্ল।
আদিবাও উঠে গেলো।তারপর নিজের স্কুল ড্রেস ঝেড়ে বললো,
আমি ব্যথা পাইনি।
আদি ভেবেছিলো আদিবা কাঁদতে শুরু করবে কিন্তু না।
সামান্তার যখন খেয়াল হলো ও আদির হাত ধরে রেখেছে তখন ছেড়ে দিয়ে বললো,
–ওকে আমি ননীর পুতুল বানাইনি যে অল্পতে কষ্ট পাবে।ওকে আমি শিখিয়েছি হোঁচট খেলে আবার উঠে দাড়াতে হবে। নিজে নিজেই উঠতে হবে।নিজেকে নিজের সামলে নিতে হবে।কেউ তোমাকে হাত ধরে তুলবেনা।
যাতে কেউ ওকে কষ্ট দিতে না পারে।কেউ কষ্ট দিলে নিজেকে সামলে নিতে পারে।
স্কুল ছুটির পর সামু আদিবাকে নিয়ে বের হতেই আদি সানগ্লাস খোলে মুচকি হেসে এগিয়ে আসে।আদিবাও দৌড়ে এসে পাপা বলে আদিকে জড়িয়ে ধরে।
আদিবার ক্লাসমেট রাহি আদিবার সাথে আদিকে দেখে জিজ্ঞেস করে,
–আদিবা কে এটা?
আদিবা বেশ ভাব নিয়ে বলে,
আমার পাপা।দেখেছিস আমার পাপা কত হ্যান্ডসাম।তোর পাপার চেয়েও বেশি হ্যান্ডসাম।
সেটা শুনে রাহি ক্ষেপে যায় আর বলে,
–তোর পাপার চেয়ে আমার পাপা বেশি হ্যান্ডসাম।
শুরু হয়ে যায় ঝগড়া।আদিবা কোমড়ে হাত দিয়ে ঝগড়া শুরু করে দেয়।তা দেখে সামু আর আদি হতবাক।
আদি ওদেরকে থামিয়ে বলে,
আদিবা তোমার পাপাও হ্যান্ডসাম,রাহি তোমার পাপাও হ্যান্ডসাম।দুজনেরই পাপা হ্যান্ডসাম।ওকে?আর ঝগড়া করে না ঝগড়া করা ব্যাড ম্যানারস।
আদি আদিবাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে তুলে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়।সামু পাশে গিয়ে বসে।তারপর আদিবাকে বলে,
–তুমি এত ঝগড়াটে কবে হলে?আমার মেয়ে এত ঝগড়া করতে জানে জানা ছিলো না তো?
আদি পাশ থেকে বলে,দেখতে হবেনা মেয়েটা কার?মাম্মা যেমন ঝগড়াতে এক্সপার্ট।
সামু ভ্রু কুঁচকে আদির দিকে তাকায়।আদিবা সামুকে প্রশ্ন করে,
–মাম্মা তুমি কি ঝগড়াটে?
এমন প্রশ্নে সামু কি জবাব দেবে।
–নাহ,,আমাকে কখনো ঝগড়া করতে দেখেছো?
আদিবা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো, না।তবে কি পাপা মিথ্যা কথা বলেছে?
সামু জানে বাবা-মা মিথ্যা কথা বলে শুনলে বাচ্চাদের উপর তার প্রভাব পড়ে।তাই বললো,
–পাপা মজা করেছে।আর মজা শুধু বড়রা করে।বাচ্চারা কিন্তু মজা করেনা।তাই তুমিও মজা করবেনা।
সামু আদির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো।
আদিবা মাথা নাড়ালো।
বাড়িতে গিয়েই সামুর চোখ ছানাবড়া।ড্রয়িংরুমে শপিং ব্যাগের গোডাউন।ড্রয়িংরুমে এত শপিং ব্যাগ সামু হিসাব করতে পারছেনা।এত শপিং ব্যাগের এখানে কিভাবে এলো তা জানতে খালাকে ডাকতেই আদি বললো,
–এগুলো আদিবার জন্য।
আদিবা বললো,
–আমার জন্য?
–হুম চড়ুই পাখি তোমার জন্য।তোমার জন্য ড্রেস,সুজ,ব্যাগ,টেডি,খেলনা,চকলেট অনেক কিছু আছে।
আদিবা খুশি হয়ে গেলো।আদি একটা প্যাকেট থেকে একটা লকেটসহ চেইন বের করে আদিবাকে পড়িয়ে দিলো।
সামু একটা লাগেজ দেখতে পেলো বুঝতে পারলো আদির লাগেজ।আদি হোটেল থেকে লাগেজ আনার ব্যবস্থা করেছে।
সামু আদিবাকে বললো,
–আগে স্কুল ড্রেস চেঞ্জ করে নেও তারপর সবকিছু দেখবে ওকে?
–ওকে।
আদিবা ভিতরে চলে গেলো।সামু আদিকে বললো,
–তোমার লাগেজ এখানে কেন?কতদিন তুমি এখানে থাকবে?
আদি ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
–যতদিন না তুমি আমার সাথে যাচ্ছো?
–আমি তো বলেছি আমি যাবোনা।
–তাহলে আমিও এখানে থাকবো।
–এটা কি তোমার বাড়ি যে তোমার ইচ্ছে হলে তুমি থেকে যাবে।
–এটা আমার বউয়ের বাড়ি।আর বউয়ের বাড়ি মানে আমার বাড়ি।
–উফফ,,তোমার কি কিছুই গায়ে বাধেনা?তুমি কি জানো তুমি বেহায়া হয়ে যাচ্ছো?
–হ্যা জানি।ভালোবাসার জন্য এটুকু বেহায়া হতেই পারি।
–উফফ,,
সামু বিরক্তি নিয়ে চলে গেলো।
আদিবা চেঞ্জ করেই আদির সাথে সব দেখে চলেছে।টেডি নিয়ে খেলছে।একটার পর একটা খেলনা বের করছে আর খেলছে।আদিবা এত খেলনা দেখে আনন্দে আত্মহারা।
সামু দূর থেকে আদিবাকে দেখছে।আদিবা নিজের পাপাকে পেয়ে কত খুশি।সামুর সে খুশি ছিনিয়ে নিতে ইচ্ছে করে না।ওর ও ইচ্ছে হয় ওর পাপা সবসময় ওর সাথে থাকুক।যেমনটি সামুর বাবা সবসময় সামুর পাশে থেকেছে।
আদি আর আদিবা একসাথে গোসল করছে।সামু এসে দেখে দুজনেই গোসল রেখে পানি দিয়ে খেলছে আর হাসছে।সামু কোমড়ে হাত দিয়ে ওদের দিকে তাকাতেই ওরা স্টপ।
–কি হচ্ছে এখানে?গোসল না পানি ছিটাছিটি?আদি ও নাহয় ছোট ওর সাথে কি তুমিও বাচ্চা হয়ে গেছো?
–মাম্মা পাপার দোষ নেই।আমিই খেলছিলাম।
–খেলছিলে তারপর যদি ঠান্ডা লেগে যায়।এসো মুছে দেই।
সামু আদিবার শরীর মুছে চেঞ্জ করে দিলো।আদির প্রচন্ড ভালো লাগছে।নিজেকে পরিপূর্ণ লাগছে এত ভালো অনুভূতি আগে কখনো হয়নি।আজ বুঝতে পারলো বাবা কি জিনিস।একজন বাবা নিজের সন্তানের মুখের হাসির জন্য পারলে পুরো দুনিয়া এনে দেয়।আদিরও তাই মনে হয়।আদিবার জন্য সব করতে পারবে।
সারাদিন আদি আর আদিবা হৈ-হুল্লোড় করে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে ও নিজেও বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে।মাঝে মাঝে সামুকে একটু খেপিয়ে যায় সুযোগ বুঝে।
সামু রাতের বেলা রুমে এসে দেখে আদি আর আদিবা একসাথে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।কারো হুশ নেই।
সামু বাবা-মেয়ের ঘুমের মুহুর্তকে ক্যামেরা বন্ধি করে রাখলো।
তারপর কাউচে শুয়ে পরলো।
সকালে আদির ঘুম ভাংতেই দেখলো ও আদিবার সাথে শুয়ে।কখন গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে।তারপর ওর খেয়াল হলো সামু কোথায়।উঠে বসে সামুকে কাউচে দেখতে পায়।আদি ধীর পায়ে সামুর কাছে যায়।সামু কাত হয়ে শুয়ে আছে।চুল এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে আছে।ঘুমন্ত অবস্থায় সামুকে মোহনীয় লাগছে।এই ঘুমন্ত পরীকে যে কেউ দেখেই প্রেমে পড়ে যাবে।আদির ইচ্ছে করছে সামুকে একটু ছোয়ে দিতে।আদি সামুর দিকে হাত বাড়িয়ে আবার হাত সরিয়ে নিলো।তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
–নিজের বউকে ছুতে পারছিনা,কি দূর্ভাগ্য আমার।
তারপর ফোন এনে নিঃশব্দে কয়েকটা ছবি তুলে নিলো।ছবিতে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,
–কবে আমাকে ক্ষমা করবে জান?
দুপুর বেলা আদি থাই ফুড বানাচ্ছে।এটা সেটা কাটাকাটি করে পুরো কিচেন শেষ করে দিয়েছে।সামু একটু পর পর উঁকি দিচ্ছে আর মাথায় হাত দিয়ে বলছে আমার স্বাদের কিচেন শেষ।পরিস্কার করতে ২দিন লেগে যাবে।আদিবা একটু পর পর গিয়ে বলছে,
পাপা কখন হবে?
–এইতো চড়ুই পাখি হয়ে গেছে।২মিনিট।তুমি বাইরে যাও।এখানে থাকা ঠিক হবেনা।
ডাইনিং এর উপর আদির ফোন বেজেই চলেছে।সামু ফোনের সামনে গিয়ে দেখে স্কিনে “মা” লিখা।সামুর খুব ইচ্ছে করছে ফোন রিসিভ করে কথা বলতে কিন্তু কি বলবে।সামু হাত বাড়িয়ে ফোন ধরতে গিয়েও হাত সরিয়ে নেয় আর কল কেটে যায়।কল কাটার পর সামু ওয়ালপেপারে নিজের হাসোজ্জল একটা পিক দেখে।৫বছর আগে দোলনায় বসে তুলেছিলো।আদি তুলে দিয়েছিলো।সামু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আদিকে ডেকে বললো,
–তোমার ফোন বাজছে।মা ফোন করছে।
আদির রান্না শেষ।ও হাত ধুয়ে ডাইনিং টেবিলের উপরে থেকে ফোন নিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে যেতে যেতে মাকে ফোন করলো।
–হ্যালো মা।
অপর পাশ থেকে শুধু কান্নার শব্দ আসছে।মায়ের কান্নার শব্দ শুনে আদি বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–মা কি হয়েছে?কাঁদছো কেন?সব ঠিক আছে তো?বাবা ঠিক আছে?
অপর পাশ থেকে আদির মা কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু কান্নার জন্য বলতে পারছেনা।
–মা কান্না থামাও,রিলেক্স হও।বলো কি হয়েছে?
কিছুই বলতে পারছেনা।সামু আদির এহেন কথা শুনে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো।আদি ফোন কেটে দিলো।তারপর নিশিকে ফোন দিলো।
–নিশি কি হয়েছে?এভরিথিং ইজ ওকে?
–না ভাইয়া,,দেখেই তো গিয়েছিলি বাবার কি অবস্থা?হটাৎ করে জানি না কি হয়েছে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছিলো আর কেমন ছটফট করছিলো।তাই হসপিটালে নিয়ে এসেছি।তোকে জানানোর সুযোগ পাইনি।অনেক ভয় লাগছে জানিনা কি হবে?ডাক্তার এমনিতেই বলেছিলো সাবধানে থাকতে।লাইফ রিক্স আছে।আমি এখন ডাক্তারের কাছে কথা বলতে যাচ্ছি।তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়।আমার খুব টেনশন হচ্ছে।মা তো পুরোই ভেঙে পড়ছে।কান্নাকাটি করছে খুব।(ধরা গলায়)
নিশি ফোন রেখে দিলো।আদির কেন জানি খুব ভয় লাগছে।মনে কু ডাকছে।বাবার কিছু হয়ে যাবে না তো।হারিয়ে ফেলবো না তো।আদি সোফায় বসে নিজের বুকের বা পাশ চেপে ধরলো।কেমন জানো চাপা ব্যথা অনুভব করছে।সামু আদির এমন অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়।
আদি বুকে হাত দিয়ে ভাবছে,
বাবার কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা।এ সব কিছু আমার জন্য হয়েছে।একজন শক্তিশালী পলিটিশিয়ান কয়েক বছরের ব্যবধানে এত অল্প বয়সে এমন নির্জীব,নিস্ক্রিয় হয়ে গেছে শুধু আমার জন্য।আমার জন্য তাকে অসুস্থতা ঘিরে ধরেছে।আমি একটা হাসিখুশী পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছি।আমার জন্য সবার লাইফে এত পরিবর্তন এত স্ট্রাগল।আমি সবার লাইফ ধ্বংস করে দিয়েছি।আমি অনেক বড় পাপী।আমার পাপের ক্ষমা নেই।বাবার কিছু হয়ে গেলে,,,,,
আদি আর ভাবতে পারছেনা।ওর দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে।আদির চোখে পানি দেখে সামুর ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।ভয় হচ্ছে বাড়ির সবাই ঠিক আছে কিনা।সামু কখন আদির পাশে গিয়ে বসেছে সেদিকে আদির খেয়াল নেই।হঠাৎ সামু আদির কাধ চেপে ধরায় আদি ওর পাশে সামুকে দেখে।
সামু ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আদিকে জিজ্ঞেস করে,
–কি হয়েছে?এমন করছো কেন? সব ঠিক আছে তো?
আদি কিছুক্ষণ সামুর দিকে চুপ করে চেয়ে রইলো।আজ মনে হচ্ছে সেই পুরনো সামু ওর পাশে বসে আছে।চোখের পানি মুছে সামনের দিকে মুখ করে বললো,
–বাবা হসপিটালে।এর আগে কয়েকবার হার্ট এটাক করে শয্যা নিয়েছেন।হাটা চলা করতে পারেনা।বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিলো।কিন্তু আজ হঠাৎ করে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে।ডাক্তার এর আগেই বলেছে এবার কিছু হলে আর আশা নেই।
এসব শুনে সামুর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।এতকিছু হয়ে গেছে।যাকে ছোট বেলা থেকে সম্মান করে এসেছে,ভালোবেসেছে।যার কাছ থেকে এতকিছু পেয়েছে,এত ভালোবাসা পেয়েছে তার আজ এই অবস্থা?সামুর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
আদি আবার বলতে শুরু করলো, এসবের জন্য আমি দায়ী।আমার জন্য সব হয়েছে।আমার জন্য বাবার এই অবস্থা।আজ যদি বাবার কিছু হয়ে যায় তবে আমি নিজেকে কক্ষনো ক্ষমা করতে পারবোনা।অনুশোচনায় মরে যাবো।আমার রাগ,জেদ শুধু আমার জীবন নয় আমার আশেপাশের সবার জীবন শেষ করে দিয়েছে।বাবা-মা, তুমি আমার হাসিখুশি পরিবারকে শেষ করে দিয়েছে।সব শেষ করে দিয়েছে।সব।এতকিছু হচ্ছে আমার জন্য।আমি কেন মরে গেলাম না।
আদি দুহাতে মুখ চেপে ধরে আরো জোরে জোরে কাদছে।
সামুও আদির কাধ দু’হাতে চেপে ধরে কাদছে।প্রথমত আদির বাবার অবস্থা আর দ্বিতীয়ত আদির বর্তমান অবস্থা।যা দেখে ওর চোখের পানির বাধ মানছেনা।
এর মধ্যে হঠাৎ আদিবার উপস্থিতি।ও পাপার রান্না করা ফুড দেখতে এসেছিলো কিন্তু মাম্মা পাপাকে এভাবে কাঁদতে দেখে ঘাড়ড়ে যায়।নিজেও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদা শুরু করে।সামুর হঠাৎ আদিবার দিকে চোখ যায়।সামু আদিকে ছেড়ে আদিবার কাছে এসে বসে।
–আদিবা কাঁদে না,,।
আদির ও আদিবার দিকে খেয়াল হলো।ও কান্না থামিয়ে আদিবার কাছে এলো।আদিবাকে জড়িয়ে ধরলো।
আদিবা সামুকে জিজ্ঞেস করলো,
–মাম্মা তোমরা কাদছো কেন?
–তোমার দাদু অনেক অসুস্থ।তোমার দাদু মানে তোমার পাপার পাপা।গ্রেন্ড ফাদার।সে অসুস্থ তাই পাপা কাদছে।
তারপর আদিকে বললো,
–আদি কান্না থামাও,,তোমার এখন সেখানে থাকা প্রয়োজন।তোমাকে ঢাকা ব্যাক করতে হবে।
আদি চোখ মুছে নিজেকে সামলে বললো,হ্যা।
আদিবা বলে উঠে,
–মাম্মা আমরাও যাবো।দাদুকে দেখতে।
আদি সামুর দিকে তাকালো।তারপর বললো,
–সামু চলো।দেখো আদিবাও যেতে চাইছে।আমার উপর একটু দয়া করো।এমন ও হতে পারে বাবা তোমাকে আর আদিবাকে দেখে সুস্থ হয়ে গেলো।নিজেকে আর আমাকে ক্ষমা করে দিলো।বাবা তো তোমাকে খুব ভালোবাসতো।আর তোমার পক্ষেই ছিলো।বাবার কোনো দোষ নেই আমার শাস্তি বাবাকে দিওনা।
–দেখো বাবার উপর আমার কোনো রাগ,অভিমান নেই।আমি তাকে আগে যেমন ভালোবাসতাম এখনো বাসি।ঠিক আছে আমরা যাবো তবে হসপিটালে বাড়িতে না।
আদি আর কিছু বললো না,তোমরা তৈরি হয়ে নেও। আমাদের বেরুতে হবে।আমি সব ব্যবস্থা করছি।
সামু আদিবাকে খাইয়ে তৈরি করে দিলো।আদিবার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলো।নিজের জন্য কিছুই নেয়নি।হসপিটাল থেকে ওদের বাড়িতে যাবে আদিবার নানা বাসায় তারপর পরের দিন আবার কক্সবাজার ব্যাক করবে।
সামু আদিকে খাওয়ার জন্য বলেছিলো কিন্তু ও খাবেনা।তারপর ওরা বেরিয়ে গেলো।আদির টেনশন থামছেই না।
ওরা ঢাকায় পৌছে গেছে।গাড়িতে করে হসপিটালে যাচ্ছে।সামুর কোলে আদিবা ঘুমাচ্ছে।তখনই নিশি ফোন করে বললো,
–ভাইয়া বাবার তেমন সমস্যা হয় নি।ডাক্তার বলেছে এখন ভালো আছে।তাই আমরা বাবাকে বাড়িতে নিয়ে যাবো।কাগজপত্র রেডি করা শেষ এখুনি বের হবো।তুই বাড়িতে আয়।
–আচ্ছা।(এখন কি করবো?সামু ত বাড়িতে যেতে চাইবেনা।কিন্তু আমি আমার পুরো পরিবারকে এক করার সুযোগটা হারাতে চাইনা।এর জন্য যদি আমাকে আবারো অন্যায় করতে হয় করবো।সরি সামু।)
–কি বললো নিশি আপু?
–এখন একটু ভালো আছে।আমাকে কিছু মেডিসিন নিতে হবে।
তারপর আদি কাউকে মেসেজ করে।ড্রাইভারকে একটা ঠিকানায় যেতে বলে।
গাড়ি ঠিকানায় গিয়ে থামতেই আদি নেমে একটা প্যাকেট নিয়ে আসে।তারপর সামুকে বলে,
–আদিবাকে আমার কাছে দেও।অনেকক্ষণ যাবত কোলে নিয়ে আছো।
–না ঠিক আছে।সমস্যা নেই।
–আরে দেও নিশ্চয়ই পায়ে ঝিম ধরে গেছে।
বলে এক প্রকার জোর করেই আদিবাকে কোলে নিয়ে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে সামুকে বললো,
–আই এম সরি।
এমন হুট করে সরি বলাতে সামু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
–মানে?
–নিশি ফোন করে জানালো বাবাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।তাই এখন আমাদের বাসায় যেতে হবে।
সামু চোখ বড়বড় করে বললো,
–তার মানে তুমি এখন আমাকে বাসায় নিয়ে যাবে।আমি কিন্তু আগেই বলেছি,,
–এই জন্যই তো সরি বললাম।
সামু কিছু বুঝার আগে আদি নাক চেপে সামুর মুখে স্পে করে দিলো।সামু সেন্সলেস হয়ে গেলো।
আদি সামুর মাথাটা নিজের কাধে রেখে বললো, জানতাম রাজি হবেনা।তাই বাধ্য হয়েই,, সরি।
ড্রাইভার আদির এহেন কাজে ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
–স্যার এটা কি করলেন?
আদি ড্রাইভারকে নির্ভয় দিয়ে বললো,
–ভয় পাবেন না ভাই।এছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিলোনা।তাছাড়া আমার বউকেই তো অন্য মেয়ে তো নয়।
–আপনার বউ!!
–হ্যা,আপনি নতুন তাই জানেন না।ও আমার বউ।আমাদের মাঝে একটু সমস্যা হয়েছিল তাই সেপারেট ছিলাম।আপনি বাড়ির দিকে যান।
গাড়ি বাড়ির সামনে থামতেই আদিবার ঘুম ভেঙে গেলো।আদিবা চোখ খোলে বললো,মাম্মা!
–চড়ুই পাখির ঘুম ভেঙে গেছে?মাম্মা ঘুমাচ্ছে।এই দেখো আমরা এসে গেছি।
আদিবাকে জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে বড় একটা বাড়ি দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো,পাপা এটা তোমার বাড়ি?
–উহু,,এটা আমাদের বাড়ি।তোমার বাড়ি।
তারপর ড্রাইভারকে বললো,
–ভাই ওকে একটু ভিতরে নিয়ে যান।
ড্রাইভার এসে আদিবাকে কোলে তুলে নিলো।
আদি আদিবাকে বললো, তুমি ভিতরে যাও আমি মাম্মাকে নিয়ে আসছি।
আদিবা বললো,
ওকে পাপা।
ড্রাইভার আদিবাকে কোলে নিয়ে ভিতরে গেলে নিশি বললো,এই পিচ্ছিটা কে?
–আদি স্যারের মেয়ে?
নিশি ড্রাইভারের কথা শুনে তব্দা খেলো।
–কি!
আদিবার সেদিকে খেয়াল নেই।ও তো বাড়িটা দেখায় বেশি ব্যস্ত।
তখনই আদি সামুকে কোলে নিয়ে ভিতরে ঢুকে কিন্তু চেহেরা দেখা যাচ্ছিলোনা।তাই নিশি চিনতে পারেনি।কিন্তু ওর এই পিচ্ছিকে নিয়ে বেশি ইন্টারেস্ট।আদির মেয়ে কি করে?
–ভাইয়া এই পিচ্ছি নাকি তোর মেয়ে?
সামুকে সোফায় শুইয়ে বললো,হুম।
নিশি আদির কথা শুনে আকাশ থেকে ঠাস করে পড়ে কোমড় ভেঙে ফেলেছে।
–কি বলছিস?তোর মেয়ে এলো কোথা থেকে?
–তোর ছেলে যেখান থেকে এসেছে।আমার বউ দেখ আগে।
নিশি সোফার কাছে গিয়ে ফেস দেখে থ।
–সাসাসা,,,,,মু!!
কেমনে কি?আমাকে ক্লিয়ার করে সব বল।
–আমি যখন চলে যাই তার কিছুদিন পর জানতে পারে ও প্রেগন্যান্ট।ভয় আর অভিমান করে কাউকে জানায়নি।আমি কক্সবাজার গিয়ে ওদের দেখি,খোঁজ নেই তারপর সব জানতে পারি।
আদির কথা শুনে নিশি পারলে লুঙ্গি ড্রান্স করে।আদিবার কাছে গিয়ে বসে বললো,
বাবু তোমার নাম কি?
–আদিবা সাজান্তা চৌধুরী।
–হাও সুইট নেম।আদিবা আমি তোমার পাপার বোন তোমার ফুপি।
–আসসালামু আলাইকুম।
–অলাইকুম আসসালাম কিউটি।
তখনি আদির মা এলো।আর ওদের দেখে বললো, আদি,,
আদি মায়ের দিকে হাসি মুখে ঘুরে বললো,বাবা কি করে?
–ঘুমায়।
এই মেয়েটা কে?
আদি কিছু বলার আগেই বললো, তোমার নাতনী।
নিশির কথা শুনে আদির মা কয়েক হাজার বোল্টের শকড খেলো।
–আদি নিশি কি বলছে?
আদি আদিবাকে কোলে তুলে নিলো।আদিবা পাপার গলা জড়িয়ে ধরলো।
–ঠিকই বলছে।আদিবা আমার মেয়ে তোমার নাতনী।
–কি বলছিস?
–হু,আমার আর সামুর মেয়ে।এই যে সামুকেও নিয়ে এসেছি।কথা দিয়েছিলাম না তোমাকে বউ এনে দেবো।
আদির মার সামুকে দেখে মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।আদির কোল থেকে আদিবাকে নিয়ে চুম্বন করে বলে,আমার বোন,,!!
আদি আদিবাকে বলে,
–চড়ুই পাখি,,আমি মাম্মাকে ঘরে শুইয়ে রেখে আসি।তুমি ফুপি আর দাদির সাথে গল্প করো।নিশি ওকে কিছু খেতে দে।
আদি সামুকে কোলে নিয়ে উপরে চলে গেলো। তারপর রুমে গিয়ে বেডে শুইয়ে দিলো।তারপর কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,
–আমার রানী চলে এসেছে।আজ অনেক দিন পর এ ঘর পরিপূর্ণ হলো।
তবে আমি আপাতত ভাবছি ঘুম ভেঙে কি তান্ডব চালাবে।আদি তুই পিঠে বস্তা বেধে রেডি হ।
চলবে,,