#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?
পর্ব-২৫
ফাবিহা নওশীন
??
সামান্তা গার্ডেনে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।
বাড়িতে এসে আদিবাকে রুমে রেখেই গার্ডেনে চলে আসে।একটু শান্তিমতো কেদে নিজেকে হালকা করার প্রচেষ্টায়।আদিবা তার মাম্মাকে কাদতে দেখলে নিজেও কান্নাকাটি করবে তাই ওর আড়াল হতেই গার্ডেনে চলে আসে।তারপর জোরে জোরে কাদে।কাদতে কাদতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।এখন শুধু ফুপাচ্ছে।
“আদি কেন,,?কেন আবার আমার সামনে এসে আমাকে দূর্বল করে দিলে?নিজেকে তো মজবুত করে নিয়েছিলাম।তোমার দেওয়া আঘাত নিজের বুকে দাফন করে দিয়ে নতুন করে বাচতে চেয়েছিলাম।তবে আবার কেন এত বছর পর আমার সামনে এলে?এবার কোন ঝড় নিয়ে এলে?আমাকে আবার তছনছ করতে চাইছো?আদিবা…না আদিবা আমার মেয়ে,,আমার কাছ থেকে কেউ ওকে কেড়ে নিতে পারবেনা।তুমিও না।প্লিজ আদি আর এসো না আমার জীবনে?আমার সুখ কেড়ে নিতে।এসোনা।”
“আই নিড হার এট এনি কস্ট।গট ইট?।দুদিনের মধ্যে আমার খোজ চাই।সব ডিটেইলস আমি আগেই দিয়েছি।আর কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবেন তবে আমার খোজ চাই।”
আদি ফোন রেখে দিলো।ঢাকা ব্যাক করার সমস্ত ব্যবস্থা করে ফেলেছে।সকালেই ঢাকা ব্যাক করবে।
আদি হোটেলের বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।আর নিজেকে নিজেই শান্তনা দিচ্ছে।
“আদি রিলেক্স,তুই যা ভাবছিস তাই হবে।ওই ছেলেটাকে দেখে হাসব্যান্ড ভেবেছিস,,ওর সাথে ছিলো বলেই কি হাসব্যান্ড হবে?এমন ও তো হতে পারে ওর ফ্রেন্ড বা আত্মীয় স্বজন কিংবা কলিগ,প্রতিবেশী অনেক কিছুই হতে পারে।”
আবারো বলছে,
আমি সামুকে বেবির কথা বলেছিলাম।আমরা আলাদা হয়েছি প্রায় পাচ বছর।আর মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে ৪বছর হবে।৪বছরের কম হবেনা।ওর নাম আদিবা।আদি,,,আদিবা।সামু বলেছিলো আমাদের মেয়ে হবে আর মেয়ের নাম আদিবা।আমার নামের সাথে মিলিয়ে নাম আদিবা।বেবিটা যদি আমার না হয় তবে ওর নাম আদিবা কেন রাখবে?অন্য নাম রাখতে পারতো।আর ওখানে যা দেখেছি সেটাও।(বালিতে সামুর লাভ সেপের লিখাটা দেখেছে।অনেকে বলেছে লিখাটা তো থাকার কথা না।ঢেউয়ে মুছে যাওয়ার কথা। তাদের বলছি যেখানে ঢেউ আছড়ে পরেছে সেখানেই যে লিখেছে তা কিন্তু বলিনি।সাগড়ের পাড়ে লিখেছে।তবে কিছুটা দূরে।ওখানে বলেই দিয়েছি আদিবার চেয়ে কিছুটা দূরে।সাগর বা নদীতে ঢেউ যেখানে আছড়ে পড়ে তার চেয়ে বেশ কিছুটা জায়গা বেশি পর্যন্ত ভেজা থাকে।আর কিছু কিছু জায়গায় বালু পানি জমে থেকে সুন্দর প্রলেপের মতো তৈরি হয়।যারা গিয়েছেন দেখেছেন।আর যেহেতু রাত হয়ে গিয়েছিলো মানুষ জন কম ছিলো তাই কেউ নষ্ট করতে পারেনি।আশা করি উত্তর পেয়ে গেছেন।)হ্যা বেবিটা আমার।আমার বেবি।হ্যা আমার, আমার।”
আদি পাগল হয়ে যাচ্ছে।বিরবির করে এক কথাই বলছে।
সামান্তা শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে কিছুতেই ঘুম আসছেনা।অস্থির অস্থির লাগছে।আদির মুখটা ভেসে উঠছে।কেমন শুখিয়ে গেছে।চেহারায় ম্যাচুয়েড ভাব এসেছে।সেই চোখ, নাক,চুল সবকিছু একি আছে।সামান্তার কেমন ভয় হতে লাগলো আদি যদি আদিবার কথা জানতে পারে আদিবাকে নিয়ে যেতে চায় তাহলে?ও আর ভাবতে পারছেনা ওর কলিজার টুকরো আদিবা।সামু আদিবার গালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
মাই সানসাইন।
আদি কক্সবাজার থেকে বাড়ি ফিরেছে।অফিসের কিছু কাজ আছে সেগুলো চুকিয়ে আবার কক্সবাজার যাবে।
রাতের বেলায়-
আদির মা আদির পাশে এসে বসলো।
আদি ল্যাপটপে চোখ রেখে বললো,
–মা কিছু বলবে?
–হ্যা,এভাবে আর কতদিন?সব ভুলে আবার নতুন করে শুরু কর।অনেকের জীবনেই অনেক দূর্ঘটনা ঘটে তাই বলে জীবন থেমে থাকেনা।আমাদের বয়স হয়েছে।তোর বাবার অবস্থাও দেখছিস।আমাদের ও তো ইচ্ছে হয় তোকে সুখী দেখতে।নাতি নাতনীর মুখ দেখতে।তুই আবার বিয়ে কর।
–সামুর খবর জানো কিছু?
আদির এমন প্রশ্নে আদির মা ঘাবড়ে যায়।থমথমে মুখে বলে,
–নাহ,,সামু আর যোগাযোগ করেনি।সামুর বাবাও তোর বাবার সাথে যোগাযোগ রাখেনি।৫বছর আগেই সব শেষ হয়ে গেছে।নিশিকে একদিন ফোন করেছিলো সামু।বলেছে ওর জব হয়েছে।ও ওর লাইফে ভালো আছে।তারপর আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তুই ও তোর লাইফে ভালো থাক।বিয়ে কর।
–তোমার বউ লাগবে তো?ঠিক আছে এনে দিবো।
আদির এমন কথায় আদির মা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ে।
–সত্যি বলছিস?
–হুম,,তবে আমি আনবো।সময় হলেই আনবো।তোমরা নিজেরা কিছু করোনা।
–ঠিক আছে তুই যা ভালো মনে করিস।তোর খুশিতেই খুশি।
–আমি আগামীকাল আবার কক্সবাজার যাচ্ছি কাজ আছে।
–আজই তো এলি
–দরকার ছিলো তাই এসেছি।কাজ বাকি আছে কক্সবাজারে।শেষ করেই চলে আসবো।শুধু দোয়া করো যে কাজে যাচ্ছি তাতে যেন সফল হই।যদি কাজটা মন মতো হয় তবে আমার সাথে সাথে তোমরাও হ্যাপি হবে।
আদির মা ছেলের কথা কিছুই বুঝতে পারলো না তবুও বললো,
অবশ্যই সফল হবি।দোয়া করি।
আদি কক্সবাজারে এসেছে সাতদিন হয়ে গেছে কিন্তু সামুর কোনো খোজ কেউ এনে দিতে পারেনি।এদিকে সামান্তাও কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছে যে আদি আর ওদের লাইফে ব্যাক করছেনা।
আদির রাগ হচ্ছে।আগের মতো রাগ নেই তবে আজ রাগ হচ্ছে।এতদিন হয়ে গেলো কেউ খোজ দিতে পারলো না।সামনে থাকা লোকগুলোকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–আপনারা কি হ্যা?সাতটা দিন পার হয়ে গেলো আর আপনারা কোনো খোজ দিতে পারলেন না।আপনাদের পিছনে অযথা টাকা খরচ করছি।
হটাৎ ফোন বেজে উঠলো।আদি নিজেকে শান্ত করে স্বাভাবিক হয়ে ফোন রিসিভ করলো।
কয়েক মিনিটের মাথায় আদির মুখে হাসি ফুটে।
ফোন রেখে বললো, আই গট ইউ।
সামু অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে চুলগুলো উচু করে বেধে কফি নিয়ে বসেছে খেতে।আদিবা ঘুমিয়ে আছে।তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো।খালা ব্যস্ত তাই সামু উঠে দরজা খোলল।দরজা খোলে ওর চোখ চড়কগাছ।শরীর কাপছে।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে।যেন বোবা হয়ে গেছে।
দরজায় আদি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
সামু অনেক কষ্ট করে ঢুক গিলে বললো,
–তুমি এখানে?
–কি আশ্চর্য ভিতরে ঢুকতে দিবে না?এক্স হাসব্যান্ড বলে কি ভদ্রতা করবে না?
উত্তরের অপেক্ষা না করেই ভিতরে ঢুকে গেলো।
সামান্তা কিছুই বুঝতে পারছেনা।ভয়ে ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।এভাবে হুট করে এখানে আসার কারণ কি সেটাও বুঝতে পারছেনা।আর ঠিকানা কোথায় পেলো।সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
আদি পুরো ড্রয়িং রুমে চোখ বুলিয়ে সোফায় আরাম করে বসতে বসতে বললো,
নাইচ হোম।
সামান্তা হাতে হাত ঘষতে ঘষতে মিনমিন করে বললো,
এখানে কেন এসেছো?
আদি সামান্তার কথার উত্তর না দিয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে।সামান্তার চোখে চোখ পড়তেই অস্বস্তিতে সামান্তা চোখ সরিয়ে নেয়।আদি সামুকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে।
পড়নে কালো প্লাজো নেবি ব্লু কালার ঢিলাঢালা হাটু অবধি জামা।গলায় ওড়না জড়ানো।চুলগুলো উচু করে হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে বাধা।গলায় একটা চিকন চেইন।হাত,কান খালি।আগের চেয়ে কিছুটা মোটা হয়েছে।
আদির এভাবে চুপ করে বসে থাকা মেনে নিতে না পেরে কিছুটা জোরেই বললো,
–কি চাই এখানে?
আদি হালকা হেসে বললো,
–দেখতে এলাম।কেমন সংসার পেতেছো?কোথায় আছো কেমন আছো?
–দেখা হয়ে গেছে এবার যাও।
সামু বারবার বেডরুমের দরজার দিকে তাকাচ্ছে।আদিবার ঘুম থেকে উঠার সময় হয়ে গেছে।ঘুম থেকে উঠেই সামুর খোজ করবে।তখন ড্রয়িং রুমে আসবে,,আর তখন ওকে আদি দেখবে।তাই সামু চাইছে আদি তার আগেই চলে যাক।
–কি অদ্ভুৎ তাড়িয়ে দিচ্ছো কেন?আমি কি শুধু তোমাকে দেখতে এসেছি?তোমার হাসব্যান্ডের সাথে পরিচয় করাবে না?আরে ভয় পেওনা আমি কিছু জানাবো না।ফ্রেন্ড পরিচয় দেবো।আর তোমার মেয়ে কই?তাকে দেখছি না।তোমার মেয়ে মাশাল্লাহ।
–ও ঘুমাচ্ছে।বাড়িতে আমি একা আছি সো চলে যাও।
–মাম্মা!!
আদিবার ঘুম থেকে উঠে সামুকে ডাকছে।ডাকতে ডাকতে রুমের বাইরের দরজার সামনে এসে দাড়িয়েছে।আদি-সামু দুজনের দৃষ্টি সেদিকে।সামু বিরক্তিতে চোখ বন্ধ করে নিলো।
আদি বসা থেকে উঠে বললো,এইতো উঠে গেছে।
আদিবা আদির দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে।ওদের বাড়িতে কে এসেছে বুঝতে পারছেনা।আদি আদিবার দিকে এগিয়ে গিয়ে হাটু গেড়ে বললো,
–কিউটি ভালো আছো?
–হ্যা,,
–স্কুলে পড়ো?
–হ্যা।
–গুড।আচ্ছা একটা কথা বলো তো,,
সামান্তা বুঝতে পারছেনা আদি কি করতে চাইছে।
আদিবা খুশি মনে বললো,কি?
–তোমার বাবার নাম কি?
সামু বাধা দেওয়ার আগেই আদিবা ফট করে বলে দিলো,
–পাপার নাম আদিল চৌধুরী।(হাত নাড়িয়ে)
আদি স্তব্ধ হয়ে গেল।পুরো রুম জোরে নীরবতা বিরাজ করছে।
আদি আদিবার গালে হাত ছোয়ালো।টপ করে ওর ডান চোখ থেকে পানি পড়লো।সামু কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।মেয়ে সব শেষ করে দিয়েছে।
–আংকেল তুমি কাদছো কেন?
আদি চোখ মুছে বললো,আমি কাদছি না।এমনিতেই পানি এসে পড়েছে।
সামু আদির চোখে এই প্রথম পানি দেখলো।আদির সাথে চোখ মিলানোর সাহস হচ্ছেনা।মাথা নিচু করে রাখলো।
–বেবি তুমি এখানে থাকো।তোমার মাম্মার সাথে আমার একটু কথা আছে।কেমন?
আদিবা মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।আদি সামান্তার হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে।
গার্ডেনে নিয়ে হাত ছেড়ে দেয়।সামান্তা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।আদি নিজের কোমড়ে দুহাত দিয়ে সামুর দিকে চেয়ে আছে।দুজনের মধ্যে নীরবতা।সব নীরবতা ভেঙে আদি শান্ত কন্ঠে বললো,
–কেন আদিবাকে আমার কাছ থেকে আড়াল করতে চাইছো?
সামু মুখ কঠিন করে বললো,কেন চাইবো না?কে তুমি?
আদি বিস্ময় নিয়ে বললো,তুমি ভালো করেই জানো কে আমি?
–ওহ,,আচ্ছা,,তুমি ওর বাবা।তাই তো?কিসের বাবা হাহ,,কিসের?যে বাবা ওর মাকে তুচ্ছ একটা কারণে ডিভোর্স দিয়ে চোরের মতো পালিয়ে গিয়েছে সে বাবা?এতগুলো বছর যেখানে আমি ওকে একা কষ্ট করে মানুষ করেছি কই ছিলে তুমি?
–তুমি প্রেগন্যান্ট ছিলে সেটা কি আমি জানতাম?
–কেন জানবে না?তুমি সেদিন বেবি চাওনি?বলোনি তোমার বেবি লাগবে?আমরা ডক্তরের সাথে মিট করিনি?
কোনো উত্তর নেই তোমার কাছে?
–সামু মানছি আমার ভুল হয়েছে কিন্তু তুমি সেদিন বিচে আমাকে জানালে না কেন?
–আদিবা আমার মেয়ে।আমি ওকে জন্ম দিয়েছি।ও শুধু আমার কাছেই থাকবে।তোমার মতো মানুষের কাছে আমি ওকে দেবোনা।
–আমি ওর বাবা।
সামান্তা হাসছে।
–লাইক সিরিয়াসলি,একটা মেয়ে যখন প্রেগন্যান্ট থাকে তখন তার সবচেয়ে বেশি কাকে প্রয়োজন পড়ে?প্রেগন্যান্সির প্রথম খবর আহ্লাদী কন্ঠে স্বামীকে জানায়,প্রেগন্যান্সির সময় হাসব্যান্ডরা বেবি,বেবির মায়ের জন্য কত কি করে।অন্যদের দেখেছি আর কেদেছি।বেবি যখন প্রথম নড়াচড়া করে উচ্ছ্বসিত হয়ে তখন হাসব্যান্ডকে জানায়।যখন লেবার পেইন উঠে হসপিটালে ওটিতে নেওয়ার সময় একটা মেয়ে তার হাসব্যান্ডকে খোজে।আমার হাত ধরে কেউ বলে নি সামু ভয় পেওনা তোমার কিছু হবেনা।আমি আছি।বেবি আর তুমি ভালো থাকবে।
সামান্তা চোখের পানি মুছে বললো,আমি ওর খেয়াল রেখেছি,,লালন পালন করেছি।নিজের খেয়াল রেখেছি।পড়াশোনা করেছি।সব একা করেছি।
আর তখন তুমি নিশ্চয়ই তোমাতে মজে ছিলে,ফূর্তি করে বেরিয়েছো।
–মানছি আমার ভুল ছিলো কিন্তু আমার তো জানার অধিকার আছে।
–হ্যা,তুমি তো যাওয়ার আগে আমাকে বলে গিয়েছিলে,,কোথায় গিয়েছিলে বলে গিয়েছিলে।বাড়িতেও দুই বছর যোগাযোগ করোনি।
–হ্যা,আমি নিখোঁজ ছিলাম বাট আমার বাড়ির কাউকে জানাওনি,,তাদেরকে জানাতে পারতে।তারা তো তোমার কোনো খবর ই জানেনা।তারা জানলেও আজকে গল্প টা অন্য রকম হতো।
সামান্তা তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
–হ্যা,অন্যরকমই তো হতো।আমাকে ও বাড়িতে নিয়ে যেতো বেবির নিউস শুনে।এক্স পুত্রবধূ হিসেবে।তারপর তোমার কানে যখন বেবির নিউজ যেতো তখন তুমি পিতা হিসেবে উদয় হতো।তারপর তোমার মনের বাকি ক্ষোভ মেটাতে আমাকে পুরোপুরি ধ্বংস করার জন্য আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে।আমাকে ছুড়ে ফেলে দিতে।আমার কোনো অধিকার থাকতো না কেননা ডিভোর্স,,,
–সামু,,আমাকে তোমার এতটা খারাপ মনে হয়?
–কেন,,তুমি আমাকে ডিভোর্স কেন দিয়েছিলে?আমাকে ধ্বংস করতে নয়?তোমাকে তো বলেছিলাম আমাকে তুমি ছেড়ে দিলে আমি ধ্বংস হয়ে যাবো।তুমি তো সেই পয়েন্ট ব্যবহার করেছো।আর যখন দেখতে আমি মেয়েকে নিয়ে কিছুটা ভালো আছি।তখন মেয়েকে কেড়ে নিয়ে আমাকে পুরোপুরো শেষ করে দিতে।তুমি আমার সাথে যা করেছো তাতে তোমাকে এতটা ভালো মনে হওয়ার ও তো কোনো কারণ নেই।
আদি বাকা হেসে বললো,
–ঠিক বলেছো আমাকে এতটা ভালো মনে হওয়ার ও কিছু নেই।যাইহোক যেটা বলতে চাই।মাকে কথা দিয়েছি তাকে বউ এনে দেবো।পাচবছর তো একা আছি।আর কত দিন একা থাকবো।বিয়ে তো করতে হবে।তবে তার আগে ডিভোর্সের বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছি।আমি তোমাকে ডিভোর্স পেপার সাইন করে দিয়ে গিয়েছি কিন্তু অফিসিয়ালি কিছুই হয়নি।আমি পেপারটাও পাইনি।আমি ডিভোর্স কনফার্ম করেই বিয়েতে বসতে চাই।দেখা গেলো বিয়ে করলাম তারপর তুমি এসে নাটক শুরু করলে ডিভোর্স নিয়ে তখন তো আরেক মছিবতে পড়তে হবে।তাই সব ঝামেলা চুকাতে চাই।
আদির কথা শুনে সামান্তার চোখে পানি চলে এলো।আদি আর বিয়ে করে নি।এখন বিয়ে করবে।আর ওকে এসব কথা শুনাচ্ছে।
–আমি তোমার লাইফে হস্তক্ষেপ করবো?ডিভোর্স নিয়ে নাটক করবো?এতটা ছোট লোক আমি নই।আমি তোমার লাইফে কখনও ইন্টারফেয়ার করবোনা নিশ্চিন্তে থাক।
–তুমি আমাকে ডিভোর্স পেপার দিয়ে দেও তবেই আমি নিশ্চিন্ত হবো।তারপর তুমি তোমার মতো আমি আমার মতো।
–এটা এখন আমার কাছে নেই।
–মিথ্যা বলোনা।তোমার কাছেই আছে।ঠিক আছে যতদিন তুমি আমাকে পেপার দিচ্ছোনা ততদিন আমি তোমাদের লাইফ থেকে যাবোনা।আর আদিবাকে,,,
সামু ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
–আদিবাকে কি?
আদি রহস্যময় হাসি দিলো।
সামু ভয়ার্ত স্বরে বলে,আদিবা আমার কাছেই থাকবে।আমি পেপার দিলে তুমি ওকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিবে না,,
–ওকে ডান।
সামু বাড়ির দিকে হাটা দিলো আদিও বিজয়ের হাসি হেসে ওকে ফলো করছে।সামান্তার কাছে আপাতত আদিবার চেয়ে মূল্যবান কিছুই নেই।মায়ের কাছে সন্তানের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই নেই।
সামু আলমারি থেকে পেপার বের করে টেবিল থেকে পেন নিতে যায় সাইন করার জন্য তখনই আদি ছু মেরে পেপার নিয়ে নেয়।
তারপর পেপার উল্টেপাল্টে দেখে বলে,
আমি জানতাম তুমি সাইন করোনি।আমার মন এটাই বলছিলো।
সামু আমতা আমতা করে বলল,করা হয়নি দেও করে দিচ্ছি।
আদি মুচকি হেসে সামুর দিকে চেয়ে পেপার দু’হাত দিয়ে মাঝ বরাবর টান দিয়ে ছিড়ে ফেলে।তারপর কয়েক টুকরো করে মেঝেতে ছেড়ে দেয়।
সামান্তা আদির কাজে অবাক হয়ে যায়।বিচলিত হয়ে বললো,
–এটা কি করলে তুমি?
আদি হাই তুলতে তুলতে বললো,আমার ডিভোর্স চাইনা।
সামু কিছু বলতে যাবে তখনই আদিবার প্রবেশ।আদিকে দেখে বলে,
–আংকেল তুমি কি আজকে এখানে থাকবে?
আদি ওকে কোলে নিয়ে বলে,যদি থাকি তুমি কি রাগ করবে?
–নাহ,,তুমি থাকো।তুমি থাকলে ভালো হবে তাইনা মাম্মা?
সামু কি বলবে বুঝতে পারছেনা। আদি সেটা দেখে বলে,
–আমি তোমার সাথে থাকবো।আচ্ছা আদিবা তোমার পাপা কই?
–মাম্মা বলেছে প্লেনে করে আকাশ দিয়ে বিদেশে থাকে।আমি বড় হলেই চলে আসবে।
–তোমার পাপাকে মনে পড়ে না?
–হ্যা,,প্লেনকে বলেছি ও যেন পাপাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলে।
–তাই?দেখতে ইচ্ছে করে না?
–আমি ছবিতে দেখেছি।মাম্মা দেখিয়েছে।আমার পাপা অনেক সুন্দর একদম তোমার মতো।হিহি।
আদির চোখে পানি ছলছল করছে।সামু আর পারছেনা।কি বলবে বুঝতে পারছেনা।আদিবাকে কি বলবে এটাই ওর পাপা,,মেয়েকে আর কতদিন পাপার কাছ থেকে দূরে রাখবে।সামু ঠিক করলো বলে দিবে আদিবাকে।
তার আগেই আদি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে বলে দিলো,
–আমিই তোমার পাপা,,
আদিবা অবাক হয়ে আদির মুখের দিকে চেয়ে আছে।তারপর সামুর দিকে চাইলো।আদিও অসহায়ের মতো সামুর দিকে চাইলো।আদি বুঝতে পারলো সামু না বললে আদিবা ওকে বিশ্বাস করবেনা।
সামু বড়সড় শ্বাস নেয় মাথা নাড়ে তারপর বলে,
হ্যা আদিবা,,এটা তোমার পাপা।
আদিবা আদির দিকে চেয়ে প্রশ্ন করে, তোমার নাম কি আদিল চৌধুরী?
আদি মাথা নেড়ে হেসে বলে,হুম।
আদিবার খুশি কে দেখে।ও পাপাকে পেয়ে অনেক খুশি।
–কি মজা আমার পাপা এসে পড়েছে।তুমি আর যাবে না তো?
–না,,
আদি আদিবাকে নামিয়ে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খায়।
সামু চোখ মুছে বাবা মেয়েকে একা ছেড়ে দিলো।
রাত হয়েছে সামু রাতের রান্নার ব্যবস্থা করে ডাইনিং টেবিলে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে।আদিবা সোফায় বসে কার্টুন দেখছে।তখনই আদি দুকাপ কফি নিয়ে সামুর সামনে একটা রেখে নিজে আরেকটা নিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ল।সামু একবার আড়চোখে দেখে নিজের কাজে মন দিলো।
তা দেখে আদি বললো,কফি নিজে বানিয়েছি।ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
নিজে বানিয়েছি শুনে সামু বিষম খেলো।এ ছেলে বলে কি।
সামু কফির দিকে চেয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
বাব্বা আদিল চৌধুরী কফি বানাতে পারে?
–শুধু কফি না আমি ইতালিয়ান,চাইনিজ, থাই,জাপানিজ খাবার ও বানাতে পারি।
সামান্তা টেবিলে ভর করে গালে হাত দিয়ে বসে ছিলো।ওর কথা শুনে হাত সরে পড়ে যেতে নেয়।
–আরে পড়ে গিয়ে থুতনি ভাংতে চাও।কফি খেয়ে বলো কেমন হয়েছে?নাকি ভাবছো কিছু মিশিয়ে দিয়েছি।ওয়েট,
আদি চেঞ্জ করে নিজেরটা সামুকে দিয়ে কফিতে চুমুক দিলো।
সামুর অসহ্য লাগছে।শুধু মাত্র আদিবার জন্য কিছু বলছেনা।আদিবা ঘুমালেই ওকে দেখে নিবে।ভদ্রতা বজায় রাখতে কফিতে চুমুক দিয়ে হা।
এত ভালো কফি ও কোনো দিন খেয়েছে কিনা মনে পড়ছেনা।এত ভালো কফি কোথায় বানানো শিখেছে।সামু আড়চোখে আদিকে দেখে ওর দিকে চেয়ে আছে জানার জন্য কফি কেমন হয়েছে।
সামু আদিকে উদ্দেশ্য করে বললো, জঘন্য হয়েছে!
বলেই ল্যাপটপ নিয়ে উঠে চলে গেলো।
আদি মুচকি হেসে বললো, তোমার অভিমান ভেংগে তোমার মনে আমার জন্য ভালোবাসার ফুল ফুটাবো।জানি সহজ হবেনা।তবে চেষ্টা করে যাবো যতদিন পর্যন্ত না মেনে নিচ্ছো।
চলবে….?