#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?
পর্ব-২০
ফাবিহা নওশীন
??
আদি আধা ঘন্টা পর ঘরে গেলো।সামু শুয়ে আছে কিন্তু জেগে আছে।আদি সামুর পাশে শুয়ে সামুকে হালকা করে ধাক্কা দিলো।
–সামু,,
সামু আদির দিকে ঘুরে আদির দিকে চেয়ে রইলো।
আদি সামুর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললো,
–সকালে ডেকে দিও।
সামু চিন্তিত ভংগীতে বললো,
–কেন?কোথায় যাবে?
আদি মুচকি হেসে সামুর গালে চুমু খেয়ে বললো,
অফিসে,,
সামু হা করে রইলো।নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।আংগুল দিয়ে কান ঝাকিয়ে বললো,
–আমি কি ঠিক শুনলাম,,আপনি কি আরেকবার বলবেন মি.হাসব্যান্ড?
আদি নাক ফুলিয়ে বললো,
–সামু মজা করো না,তুমি ঠিক শুনেছো?আমি সত্যিই আগামীকাল থেকে অফিসে যাচ্ছি।
সামু খুশিতে গদগদ হয়ে আদিকে জড়িয়ে ধরলো।ওর চোখে পানি ছলছল করছে।ও ভাবতে পারেনি এতো অল্পতেই আদি ওর কথা শুনবে।এতো কম ডোজেই কাজ হবে।
–থ্যাংক ইউ,,ভেরি ভেরি থ্যাংকস।আইম সো হ্যাপি।
আদি সামুকে সামনে এনে বললো,
–অনলি ফর ইউ,,শুধুমাত্র তোমার কথায়,,,
এন্ড আইম অলসো সরি।আমি এই দুইদিন অনেক উল্টো পাল্টা কাজ করেছি।প্লিজ ফরগিভ মি,,
–তুমি নিজেকে শুধরে নেও,,তাতেই আমি হ্যাপি।তোমার উপর শুধুমাত্র আমার ভবিষ্যৎ নয় আমাদের পুরো পরিবার নির্ভর করবে।
–আমি আর রাত করে বাড়িতে ফিরবোনা।এমন ড্রিংক ও করবোনা বাট আমি এত সহজে ড্রিংক করা ছাড়তে পারবোনা।ইউ নো আমি অনেক এডিক্টেড হয়ে গেছি।সো,,
–আই নো,,এসব এতো সহজে ছাড়া যায়না।তুমি চেষ্টা করো আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।চেষ্টার উপর জোর রাখতে হবে।
–ওকে,,তুমি আমার উপর রাগ করে নেই তো,,
–রাগ তো করিনি,,অভিমান করেছিলাম,,ভেবেছিলাম তুমি আজকে আমাকে নিতে যাবে কিন্তু,
–আমি যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু যাই হোক আমি তোমার সব কথা যেমন শুনছি তোমাকেও আমার কথা শুনতে হবে আর আমাকে অনেক ভালোবাসতে হবে,,হু,,
–ওকে ডান,,আমি আমার বরকে ছাড়া আর কাকে ভালোবাসবো।
–কাউকে না।
বলেই সামুকে বুকে জড়িয়ে নিলো।তারপর বললো,
–সামু,,আমি জীবনের এতকিছু বুঝিনা,,আমার কাছে জীবনের মানে নিয়ে চিন্তা করার মতো সময় ছিলো না,,সময় দেইনি জীবনকে।তাই তোমাকে দায়িত্ব দিলাম আমার জীবনের।ভুল করলে শোধরে দিও।
–আচ্ছা,,,
.
.
.
.
.
সামু কয়েকবার আদিকে ডেকেছে কিন্তু সে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।
সামু আদি পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
–আদি উঠো।অনেক বেলা হয়েছে।অফিসে যাবেনা?
–উমম,,
–আদি আমার লক্ষী জামাইটা,,উঠো,,প্লিজ
–উহু,,
–এমন করে না দেখো কয়টা বেজে গেছে মাই সুইট কিউট হ্যান্ডসাম হাসব্যান্ড উঠো,,
–…
বুঝেছি তুমি ভালো কথার ছেলেনা।ভালো কথায় কাজ হবে না।ডোস দিতে হবে,,
সামু একগ্লাস পানি নিয়ে আদির মুখে ছুড়ে মারে।আদি ধরফরিয়ে উঠে বসে।
–সামু,,,এটা কি করলে?
–উঠানোর উত্তর পন্থা।তুমি না অফিসে যাও,,,
–ভালোভাবে ডাকলেই তো পারতে,,
–আল্লাহ,,,কি বলে এই ছেলে,ডাকিনি,,,অনেক আদর সোহাগ করে ডেকেছি কাজ হয়নি,,,,ভালো কথার ভাত নেই তাই এই পন্থা অবলম্বন করেছি।
আদি নামতে নামতে বললো, নিষ্ঠুর বড্ড নিষ্ঠুর,,আরেকটু ভালোবেসে ডাকবে তা নয় চুবানি দিলো সকাল সকাল,,
–হিহি,,
আদি ফ্রেশ হয়ে আসতেই সামু ওর জামাকাপড় এনে দিলো।স্যুট পড়িয়ে,টাই বেধে দিলো।চুল আচড়িয়ে দিয়ে ফোন,ওয়ালেট,গ্লাস এগিয়ে দিলো।শরীরে বডি স্পে লাগিয়ে দিলো।সামুর প্রচুর খুশি লাগছে।আদি অবাক হয়ে সামুকে দেখছে।
–তুমি এত খুশি কেন?
সামু মুচকি হেসে বললো,
–কারন আমার গর্ব করার সময় এসেছে তাই।তুমি জানো মেয়েরা তাদের হাসব্যান্ডের সাকসেসে কত খুশি হয়,,বেশিরভাগ ছেলেরা স্ত্রীর সাকসেস সহ্য করতে পারেনা,স্ত্রী তাদের উপরে উঠবে মেনে নিতে পারে না।কিন্তু মেয়েদের বেলায় উল্টো।
–বুঝেছি বুঝেছি,,কথা দিচ্ছি আমার জন্যও গর্ব করবে।
–মনে হচ্ছে একটা বাচ্চা ছেলেকে স্কুলের জন্য রেডি করছি,,হিহি,
–প্যাক্টিস করে রাখো একদিন তো করতেই হবে,
সামু লজ্জা পেয়ে কিছু বললোনা।কিছুটা দূরে গিয়ে আদির দিকে চোখ বুলালো।ফরমাল ড্রেসে ড্যাশিং লাগছে।সামুর চোখে তাক লেগে গেচগে তা দেখে আদি বলছে,
–এভাবে নজর দিওনা,,তুমি যদি এভাবে নজর দেও বাইরের মেয়েরা কি করবে?
–নজর দিয়ে দিলাম যাতে অন্য কারো নজর যেন না লাগে,,তারপরও মেয়েদের থেকে দূরে থাকবা,,ওকে,,
–আচ্ছা,,এখন আমাকে গুড উইশ করে দেও তো,,
সামু মুচকি হেসে দুহাত গালে রেখে মাথা নামিয়ে কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,
–আল্লাহ তোমার সহায় হোক,তোমাকে ধৈর্য শক্তি দান করুন।সফল হও।
–ধন্যবাদ।
আদি আর সামু একসাথে ডাইনিং টেবিলের কাছে যেতেই সবাই অবাক হয়ে আদিকে দেখছে,,
সামু বললো,
–সবার অবাক হওয়া শেষ হলে একটা কথা বলি আদি আজ থেকে অফিসে যাচ্ছে।
–কিহ!!!(সবাই একসাথে)
সবার খুশি আর ধরে কই।আদি অফিসে যাচ্ছে এ নিয়ে বাড়িতে ঈদ চলছে।
সন্ধ্যা বেলা।আদি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।সামু পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরে আদির পিঠে মাথা এলিয়ে রাখলো।আদি সামুর হাত ধরে পিঠের সাথে মিশিয়ে নিলো।
–অফিস ভালো ছিলো কিন্তু কিছুটা বোরিং।
–অফিস তো আর বউনা যে বোরিং লাগবেনা।
–তাহলে আর কি বউকে পকেটে করে অফিসে নিয়ে যেতে হবে।
–আমি রাজি যদি পকেটে নিতে পারো।হিহি,,
আদি সামুকে টেনে সামনে এনে বললো,
–তুমি এতো ফাজিল কেন হুহ,,
–তুমি কম কিসে,,
–আমি ফাজিল,,
–হুহ,,
–ঠিক আছে,,
আদি সামুর থুতনি ধরে উচু করে ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো।
???
এভাবে কেটে গেলো ৬মাস।আদি এখন আর বন্ধুদের সাথে রাতভর আড্ডা দেয়না।না আগের মতো এত ড্রিংক করে।অফিসের কাজে মনোযোগী হয়েছে।কিন্তু রাগ,জেদ,ইগো,অহংকার সবই এক আছে।সামুর দুনিয়া সংকীর্ণ হয়ে আসছে।আদি ওকে ওর নিজস্ব গন্ডিতে সীমাবদ্ধ রেখেছে।আদি চায় সামুর সবটা জোরে,সামুর পুরো দুনিয়ায় শুধু মাত্র আদির বসবাস থাকবে।ওর চিন্তাভাবনা জোরে শুধু আদি থাকবে।এ নিয়ে অনেক মান-অভিমান চলেছে ওদের মধ্যে।
আদি অফিস থেকে ফিরে এসে দেখে সামু কানে দুল পড়ছে।দেখে বুঝা যাচ্ছে কোথাও যাচ্ছে।
–সামু কোথাও যাচ্ছো?
সামু কানে দুল পড়ে আদির দিকে ঘুরে বললো,
নিশি আপুর সাথে যাচ্ছি।আপুর কিছু কেনাকাটা আছে।
আদি অভিমানের সুরে বললো,
–কই আমাকে তো কিছু জানাও নি আর আমি বাসায় আসার পর ই যেতে হচ্ছে।
–আদি এভাবে বলছো কেন?আমাদের তো প্রি-প্ল্যান ছিলো না।হুট করে আপু বললো ইমার্জেন্সি বাইরে যেতে হবে আমি যেন তার সাথে যাই।আর বেশি টাইম লাগবেনা অনলি ওয়ান আওয়ার।
–যা খুশি করো।
বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
–উফফ ছেলেটা কথায় কথায় অভিমান করে।
,
,
,
রাতের বেলা~
সামুর ফোন বেজেই চলেছে।রুমে ফোন রেখে নিচে গেছে।আদি ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছে।বারবার ফোন বেজেই চলেছে।আদি উঠে ফোন হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে সামুকে ডাকছে।
–সামু কই তুমি,ফোন বাজছে।
আদি সিড়ির সামনে আসতেই সামু বলে পিক করো তুমি।
আদি ফোন পিক করে।
–হ্যালো,,
–এটা কি সামান্তা সেহনুজ চৌধুরীর নাম্বার?
–জ্বী,,আমি ওর হাসব্যান্ড বলছি।
–কিহ!!!সামান্তা মেরিড!!জানা ছিলো না তো,,যাইহোক ওর কোচিং থেকে ফোন করেছি।আমি ওর স্যার বলছি।একটু দরকার ছিলো সামান্তাকে,,
–হোল্ড করুন।ও একটু ব্যস্ত আছে।নয়তো কিছুক্ষণ পর ও ফোন করে নিবে।
–ওকে ধন্যবাদ।
আদির মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।সামান্তা মেরিড কিনা এ নিয়ে এতো বিস্ময় কেন,,যত্তসব ফালতু স্যার।
সামু কফি নিয়ে আদির সামনে রেখে জিজ্ঞেস করে কে ফোন কিরেছে।আদি সব খোলে বললো।লাউডস্পিকার দিয়ে ফোন করো।
–কেন?
আদি আমতা আমতা করে বলল,
দেখি কি বলে,,তুমি ফাকিবাজি করছো কিনা,,
–আচ্ছা দেখো,,,
সামান্তা লাউডস্পিকারে দিয়ে ফোন করলো।সালাম কুশল বিনিময় করার পর স্যার বললেন,
–তুমি বিবাহিত?একটা ছেলে ফোন রিসিভ করে বললো তোমার হাসব্যান্ড।
–জ্বি স্যার আমি মেরিড।আমার হাসব্যান্ড ফোন রিসিভ করেছিলো।
–তোমাকে দেখলে তো বুঝাই যায়না,যে তুমি মেরিড,,,কতদিন হলো বিয়ের?
আদি চোখ পাকিয়ে সামুর দিকে তাকাচ্ছে।সামুর ও মেজাজ খারাপ হচ্ছে।স্যার বেশি পেচাল পাড়ছে তাও আদির সামনে কিছু বলতেও পারছেনা আবার ছাড়তেও পারছেনা।
–জ্বী একবছর হতে চলেছে।কি দরকার ছিলো স্যার?
–ও হ্যা,,শুনো,,
(পড়াশোনা, পরীক্ষার সাজেশন সম্পর্কে অনেক কথা বলে ফোন রাখলো।যেহেতু সামনে ফাইনাল এক্সাম)
ফোন রাখতেই আদি ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি আর ওই কোচিং-এ পড়বেনা।
সামান্তা চমকে বললো,কেন?
আদি নির্লিপ্তভাবে উত্তর দিলো।
–যে কোচিং-এ স্যারদের স্টুডেন্টদের পার্সোনাল লাইফ নিয়ে এতো ইন্টারেস্ট সেখানে আমার ওয়াইফ পড়বে না।
আর কেন ফোন করেছিলো?
–শুধু আমাকেই না সব স্টুডেন্টদের ফোন করা হয়।এটাই কোচিং-এর রুলস।সামনে যেহেতু এক্সাম।তাই ফোন করে পড়াশোনার খবর নেয়।আর তুমি তো জানো মডেল টেস্ট চলছে আমাদের।
–,যাইহোক তুমি আর ওখানে পড়বেনা।
–আদি,,সামনে আমার এক্সাম।আর তুমি এসব বলছো?
–এর চেয়ে ভালো কোচিং-এ ভর্তি করে দেবো।টপ টিউটরদের লাইন লাগিয়ে দিবো তবুও ওখানে তুমি পড়বেনা।
–তুমি বললেই হলো,,
আদির মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো।তবুও রাগটাকে কন্ট্রোল করে ল্যাপটপ রেখে উঠে দাড়ালো।তারপর সামুর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে ওর চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে শীতল কণ্ঠে বললো,
–তাহলে কে বলবে জানেমন?কে বলবে,,?
সামু চুপ।ও আদির দিকে চেয়ে আছে।আদি যে হাইপার হয়ে গেছে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।তাই চুপ করে আছে।
–তুমি আর ওখানে পড়বেনা।এটাই শেষ কথা।
সামুর কান্না পাচ্ছে।আদি যখন একবার বলেছে তো বলেছে কিছুতেই ওকে ওখানে পড়তে দিবেনা।এতদিন যাবত এখানে পড়ছে।নতুন জায়গায় এডজাস্ট করে নেওয়া কতটা ট্রাফ।তাছাড়া কিছুদিন পর পরীক্ষা।নতুন জায়গায় গিয়ে কি করবে,,কিভাবে তাল মিলাবে।সামু বেডে বসে মাথা নিচু করে দুহাত চেপে ধরে রেখেছে।না চাইতেই দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
যদিও বুঝা যাচ্ছে না ও কাদছে।কোনো শব্দ নেই।
আদি নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।হটাৎ সামুর দিকে তাকালো যেভাবে ছিলো সেভাবেই আছে।আর ওর মন বলছে সামু কাদছে।
আদি ল্যাপটপ রেখে উঠে দাড়িয়ে সামুকে হাত ধরে দাড় করালো।ঘটনার আকস্মিকতায় সামু চোখের পানিও মুছার সুযোগ ও পায়নি।তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নিলো।আদির চোখমুখ লাল হয়ে গেছে।সামুর হাত যেভাবে চেপে ধরেছে মনে হচ্ছে হাড় গুড়া করে ফেলবে।
দাদে দাত চেপে বললো,
–ডোন্ট ক্রাই,,আই হেইট টেয়ারস,,ইউ নো দিস।কান্না থামাও নয়তো খুন করে ফেলবো।
সামু কান্না থামিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
–একটা কথা কি জানো,,থাকতে মানুষ কদর করে না,,যখন আমি হারিয়ে যাবো তখন বুঝতে আমি কি ছিলাম,,
আদি সামুর দুবাহু চেপে ধরে বললো,
–হারিয়ে যাবে মানে কি,,,কোথায় যাবে তুমি?হাহ?কোথায় যাবে,,
সামু আদিকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বললো, ধরো মরে গেলাম।
বলেই ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।
আদি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।সামান্তার শেষের কথা শুনে ওর বুকটা ছ্যাত করে উঠলো।কয়েক মিনিটের জন্য পাথর হয়ে গেলো।
সামান্তা আর ঘরে আসে নি।ডিনার টাইমে আদিকে খেতে ডাকতে এসে দেখে আদি বারান্দায় মেঝেতে বসে বেডে মাথা দিয়ে রেখেছে।
সামু গম্ভীর কন্ঠে বললো,
–খেতে এসো।
বলেই ঘুরে হাটা দিলো কিন্তু আদির কোনো হেলদুল নেই।সামু আবারো বললো,
–আদি টেবিলে খাবার দেওয়া হয়েছে খেতে এসো।(কিছুটা জোরে)
আদি মাথা তুলে সামুর দিকে তাকালো।শান্ত আর অসহায় সে দৃষ্টি।একদৃষ্টিতে সামুর দিকে চেয়ে আছে।আদির এমন অদ্ভুৎ দৃষ্টি সামুকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।ওর এই দৃষ্টি দেখে সামুর বুকে মোচড় দিয়ে উঠে।এক নিমিষেই সব রাগ অভিমান হারিয়ে গেলো।সামু আদির পাশে বসে ওর মাথায় হাত দিয়ে বললো,
–কি হয়েছে জান আমার?
আদি কিছু না বলে সামুকে জড়িয়ে ধরলো।খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।সামু কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে আবার বললো,
–আদি বলো কি হয়েছে?
–তুমি প্লিজ আমাকে ছেড়ে কোথাও যেওনা,,
–কোথায় যাবো?কেন যাবো??
–কিছুক্ষন আগেই তো বলছিলে,,মরে যাবে,,কেন মরে যাবে?(ধরা গলায়)
সামু এবার আসল কাহিনি বুঝতে পারলো।সামু আদুরে গলায় বলল,
–আরে পাগল আমি কি সত্যি সত্যিই বলেছি নাকি?আমি তো রাগের মাথায় বলেছিলাম,,
–প্লিজ আর যাই বলো এমন কথা বলোনা,,আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।আমি তোমাকে নিয়ে অনেক ভয়ে থাকি,,তাই কোনো রিক্স নিতে চাইনা।আমি চাইনা কেউ তোমার ছায়াও মাড়াক।তাই এমন করি,,,
–আচ্ছা,ঠিক আছে।ছেড়ে দেবো কোচিং।তোমার আগে আমার কাছে আর কিছুইনা।ছেড়ে দেবো।
(সামু দীর্ঘশ্বাস ফেললো।আদির এমন ইনসিকিউরড ফিলিংস ও আর নিতে পারছেনা।কিন্তু ওর কষ্টও সহ্য করতে পারেনা।কি করবে,,নিজের সব স্বপ্ন ইচ্ছা জলাঞ্জলি দেওয়া ছাড়া।)
–আমার রাগ উঠলে কন্ট্রোল করতে পারিনা।কিন্তু আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।আমি রাগের মাথায় যদি তোমাকে চলে যেতে বলি তুমি কি চলে যাবে?
মাথা তুলে সামুর দিকে জিজ্ঞাস্যুক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। সামু ওর এমন প্রশ্নে অবাক হলো।
তারপর আমতা আমতা করে বললো,
–তুমি তো আমাকে চলে যেতে বলবেনা,,তাহলে এসব কেন বলছো?
–আমি কখনো বলবো না।তুমি চলে যেতে চাইলে আটকে রাখবো,,তবুও বলো না,,
–না যাবো না।
আদি বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে সামান্তার গালে,চোখ,ঠোঁটে চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে বললো,দ্যাটস লাইক মাই গার্ল।আমি জানতাম তুমি কখনো আমাকে ছাড়বেনা।আদি সামান্তার মাথা বুকে চেপে ধরে ফিসফিস করে বলে,
??”রেহনা তো পালপাল দিলকো পাস জুরি রহে তুজসে হার এক সাস,,
সিনেসে তেরে সারকো লাগাকে শুনতি মে রহো নাম আপনা “??
সামান্তাও মুচকি হেসে আদির বুকে মাথা রাখলো।
??
সন্ধ্যায় আদি আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে।সামু রুমে ঢুকে ওকে এভাবে রেডি হতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছো?
আদি চুল ঠিক করতে করতে বললো,
–ভুলে গেলে,,আজকে বিজনেস পার্টি আছে।নিউ প্রজেক্টের।
–ওহ,,হ্যা।ভুলেই গিয়েছিলাম তা একা যাচ্ছো যে?আমারও তো যাওয়ার কথা ছিলো
–বিজনেস পার্টিতে তুমি গিয়ে কি করবে?
–বাবার সাথে মা গিয়ে কি করবে?
–উফফ সামু সেখানে অনেক মানুষ আসবে তোমার যাওয়ার দরকার নেই।
–কেন,,কেউ কি আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবে?
–কি বলছো এসব,,দেখো আমার এসব বিজনেস পার্টি ভালো লাগে না কিন্তু যেহেতু প্রজেক্টের দায়িত্ব আমার তাই আমাকে এটেন্ড করতেই হবে।নয়তো যেতাম না।তোমার তো সেখানে কোনো কাজ নেই,,তাই যাওয়ার দরকার নেই,,
–বুঝেছি,,,
সামান্তার দিকে ঘুরে
–কি বুঝেছো?
–যা বুঝার বুঝেছি কিন্তু তোমাকে বলতে চাইনা,,
বলেই সামু ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।
মনে মনে আদিকে গালাগাল দিচ্ছে,
আস্ত বিদেশ ফেরত পাগল,,পার্টিতে গেলে কেউ আমাকে নিয়ে যাবে,,কি মনে করে নিজেকে ওর বউ বিশ্ব সুন্দরী,, সবাই ওর বউয়ের জন্য পাগল হয়ে আছে,,।যত্তসব,,,ইচ্ছে করে পাবনা দিয়ে আসি,,কিন্তু পাবনা দিলে কিছুদিন পর আমি নিজেই পাগল হয়ে পড়বো।
রাতের বেলা,,আদি পার্টি থেকে ফিরার পর,, সামু আর আদি শুয়ে আছে সামু কিছু বলার জন্য হাশফাস করছে,তারপর বলেই ফেললো,
–আদি আমি আমাদের বাসায় যাবো,,আম্মু ফোন করেছিলো,,।তুমিও যাবে,,।
–সামু কি বলছো,,দেখছো তো নিউ প্রজেক্ট নিয়ে কতটা বিজি আছি,,আর তুমি বলছো তোমাদের বাড়ি যাওয়ার কথা,,।সম্ভব না,,
–উফফ আমি তো ভুলেই গেছি,আমার হাসব্যান্ড একজন বিজনেস ম্যান,,সে খুব বিজি।
–সব কিন্তু তোমার জন্য।ভুলে যেও না,,
–আমি তা বলিনি,,আসলে আমার খুব যেতে ইচ্ছে করছে। বিয়ের এক বছর হয়ে আসছে।একবারো যাইনি।আম্মু,আব্বু বারবার বলছিলো।আর সামনে পরীক্ষা,, তখন তো আর যেতে পারবোনা।
–বুঝতে পারছি কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
সামু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, তাহলে আর কি আমি একাই যাই,,
আদি চমকে গিয়ে বললো,
–তুমি একা যাবে,?
–তুমি না গেলে কি করবো,,তুমি প্রজেক্ট নিয়ে বিজি।তুমি তোমার কাজ করো আমি কিছুদিন থেকে আসি।পরীক্ষার পর দুজনে এক সাথে গিয়ে কিছুদিন থেকে আসবো।
–কয়দিন থাকবে?
সামু খুশি হয়ে বললো,
–এক সপ্তাহ।
আদি বুকের কাছে হাত রেখে অদ্ভুৎ শব্দ করে বললো,,
–এক সপ্তাহ!!আল্লাহ কি বলে,,??
–কি হলো?
–ছোটখাটো হার্ট এটাক,,
সামু ভ্রু কুচকে বললো, বাপের বাড়ি যাচ্ছি এক সপ্তাহ থাকবো না?
–হুম যাও থাকো এসে দেখবে মরে গেছি,
–ছিঃ কি সব বলো,,আচ্ছা যাও ৫দিন থাকবো,,
–না ৩দিন,,এতদিন আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।
–আদি প্লিজ।
–আচ্ছা ৪দিন।
সামু হতাশ হয়ে বললো, ওকে ডান।
–কবে যেতে চাও?
–কালকেই,,
তুমি কি বলো?
–উমম,আচ্ছা,কালকেই যাও।তবে মাত্র ৪দিন মনে থাকে যেন,,(মন খারাপ করে)
সামান্তা খুশিতে আদিকে ঝাপটে ধরে গালে চুমু খেয়ে বললো, থ্যাঙ্কিউ।
–কি স্বার্থপর রে বাবা,,যেতে বলছি তাই কিস করছে।এমনিতে তো চিনেই না,,
–আদি তুমি মিথ্যা বলছো,,প্রতিদিন সকালে কে দেয়,,
–আমি,,
–উহ,,আমি আর তোমাকে সকালে রেডি করে দেবোনা,,
–আরে বউ তো আমার সত্যি সত্যিই রেগে যাচ্ছে,,আমি তো মজা করছি।চলো একটা চুমু খাই,,
–উমম,,
সামু ভোর বেলা উঠে ব্যাগ প্যাক রেডি হয়ে গেছে।আদি গাল ফুলিয়ে বসে আছে।আদিকে টেনে তুলে রেডি করিয়ে দিচ্ছে অফিসের জন্য।রেডি করা শেষে কপালে কিস করলো।
–একটা কেন?
–তাহলে?
–বাকি তিন দিনের টা?
–চালাক,,প্রচুর চালাক,,
সামু গুনে গুনে আরো তিনটা কিস করলো,,
–সামু আবারো বলছি অনলি ৪দিন।এর বেশি হলে সাইক্লোন হয়ে যাবে।মাইন্ড ইট।
তারপর দুজন দুজনের গন্তব্যের দিকে ধাবমান।
চলবে…..
(?)