তোর মনের অরন্যে পর্ব-৮

0
850

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৮.
সোহার চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে । তার চোখ যায় একটু দূরে দাঁড়ানো আমন এর দিকে সে যে ভীষণ রেগে গেছে এটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এবার সোহা সামনের দিকে তাকায়। দেখে এক দৃষ্টিতে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ভদ্র লোক। তাকে তার সাথে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। সোহা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি হেনে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। সামনের ব্যাক্তি টি কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নেয় মিস্টার আকেশ রাঠোর এই ইউনিভার্সিটি এর ট্রাস্টি বোর্ড এর সাথে যুক্ত সাথে প্রফেসর ও। কাল সোহা প্রিন্সিপাল এর পাঠানো মেইল থেকে জেনে নিয়েছে এই ইউনিভার্সিটি এর প্রত্যেক এর ব্যাপারে। তাই জানে তার সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তি কে । এক নজর তাকিয়ে নিয়ে এবার মাথা ঘোরায় সোহা। ততক্ষণে আমন ও কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে তার দৃষ্টি তার থেকে একটু দূরে দাঁড়ানো একটা মেয়ের উপর। সোহা আমন এর দৃষ্টি অনুসরন করে তাকাতেই এবার তার মাথায় রাগ চড়ে বসে। সোহা একবার চোখ বুলিয়ে চারিদিকে দেখে। ওদের ঘিরে বেস কিছু স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে আছে তারা ও এতক্ষণ দেখ ছিল আর হাসাহাসি করছিলো। কিছুটা দূরে সেই কালকের গ্যং দাঁড়িয়ে আছে রনি রাজ নিশা রিনি তাদের মুখে ও শয়তানি হাসি। তার আর কিছু বুঝতে বাকি থাকে না। আকেশ সোহা তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতেই সে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। এতক্ষণ সে এই মেয়ে কে দেখেছিল। কে এই মেয়েটা সে তো চেনে না নতুন এসেছে তাহলে। উফ চোখ ধাধানো সুন্দরী যাকে বলে। একে তো তার লাগবেই। আকেশ সোহা কে দেখে নিজের মনে মনে হিসাব করতে থাকে।

এদিকে সোহা চোখ মুখ লাল করে মেয়েটার দিকে এগিয়ে কষে মেয়েটার গালে এক জোরদার থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। সোহার এমন আক্রমণে সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। তবে আমন যেনো এবার একটু স্বাভাবিক হয়েছে। কারণ সে জানে সোহা কেনো মেরেছে এই মেয়েকে। এদিকে আকেশ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সোহার দিকে । আর দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রনিদের দল চোখ মুখে রাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তাদের প্ল্যান ফ্লপ করে গেছে।

-“আমাকে কেনো মারলেন? মেয়েটা মৃদু চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে।

-” ইউনিভার্সিটি তে আসা হয় পড়াশোনা করার জন্য নাকি অন্যের সুযোগ নিয়ে অন্যায় কাজ করে বেড়ানোর জন্য। আর থাপ্পড় টা কেনো মেরেছি সেটা কি এখনও বুঝতে পারো নি নাকি আমি আরো একবার বুঝিয়ে দেবো। সোহা কঠিন ভাবে বলে ওঠে।

সোহার এই রাগী মুখ আর তার এই ভয়ংকর রাগী আওয়াজ শুনেই ওখানে থাকা সবাই চমকে গেছে। আকেশ তাকিয়ে দেখছে সোহা কে সে বুঝতে পারছে না কি হয়েছে।

-“পরের বার থেকে আমাকে ফেলতে এলে আরো ভালো করে ট্রেনিং নিয়ে আসবে কেমন আর যারা মিলে এই প্ল্যানিং করেছিলে তারা ও যেনো আরো ভালো কিছু প্ল্যান করে আমার বিরুদ্ধে। কেমন? সোহা একবার দূরে দাঁড়ানো রনিদের তাকিয়ে ওই মেয়েটা কে বলে ওঠে।

আসলেই সোহা যখন সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে যাচ্ছিলো তখন এই মেয়ে তার পায়ে পা বাজিয়ে ফেলে দিতে চায়। সোহা সেটা বুঝতে পারে আর দূরে দাঁড়ানো রনিদের দেখে তার আর বুঝতে বাকি থাকে না যে এই প্ল্যান টা কাদের। সোহা একবার ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা আমন এর দিকে তাকিয়ে ওখান থেকে চলে যায়। আমন ও মেয়েটার দিকে তাকিয়ে নিয়ে চলে যায়।

এদিকে আকেশ একবার মেয়েটার দিকে তাকায়। দেখে মেয়েটা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ততক্ষণে রনিরাও মেয়েটার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এবার বুঝতে পারে এরাই কিছু করেছে। আকেশ রনির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-“কেস টা কি?

-” ভাই এই সেই মেয়ে। যার কথা আমি তোকে কালকে বলেছিলাম । আর আজ ওকে ফেলে দিয়ে সবার সামনে অপমানিত করার প্ল্যান করেছিলাম কিন্তু ভাই তার আগে তুই ওকে ধরে নিলি। রনি রাগে বলে ওঠে।

-“কালকে ওই মেয়ে আমাকে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছে অপমান করে। আর আজকে এত সুন্দর একটা প্ল্যান করেছিলাম ওকে শিক্ষা দিতে কিন্তু রিক তুমি সব শেষ করে দিলে। রিনি বলে ওঠে।

-“প্লিজ রিক ভাই এই মেয়ে কে এই ইউনিভার্সিটি থেকে বের করে দাও। এই মেয়ের খুব গরম। তবে এখান থেকে যাওয়ার আগেই ওর সব গরম বের করে দেবো। রাজ বলে ওঠে।

-” ঠাসসসসস ।

রাজ কথাটা শেষ করতে না করতেই তার গালের উপর আকেশ তার পাঁচ আঙুল এর ছাপ বসিয়ে দেয়। তার এই কাজে বাকিরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। রিনি বিস্ফোরক চোখে তাকিয়ে আছে রিক এর দিকে। রনি তার ভাই এর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

-” ভাই । সে বিস্ময় নিয়ে বলে ওঠে।

-” আর একটা কথাও না। আর ওর থেকে দূরে থাকবি তোরা। তোদের যেনো আর ওর ধারে কাছেও না দেখি তাহলে কি হবে বুঝতে পারছিস। ও আমার শিকার। ওর দিকে চোখ তুলে তাকালে আমি সেই চোখ তুলে নেবো মনে থাকে যেনো ওই মেয়ে শুধু আমার। বলে ওখান থেকে বেরিয়ে যায় আকেশ।

এদিকে আকেশ এর কথা শুনে রিনি রাগে ফেটে পড়েছে। আর বাকিরা এখন ও স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারা যেনো তাদের নিজেদের কান কে ও বিশ্বাস করতে পারছে না। হটাৎ কিছু একটা ভেবে রনি হেসে ওঠে।

-“আরে ভাই কি বলে গেলো শুনলি না ওই মেয়েটা ভাই এর শিকার। আর শিকার করা হয়ে গেলে কি হয় তারপরে। সবার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে ওঠে রনি।

বাকিরা ও রনির কথা বুঝতে পেরে শয়তানি হেসে ওঠে। তবে রিনির চোখ মুখে রাগ ফুটে আছে। সে রিক কে পছন্দ করে ইনফ্যাক্ট তাদের সম্পর্ক ও আছে আর এখন রিক এই মেয়ের পিছনে পড়েছে আর এই মেয়ের জন্য তাকে অপমান করলো। সে কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারছে না। সে এই মেয়ে কে কিছুতে ছাড়বে না। কিছুতেই না।

————

-“হ্যালো মিস.. ।

ক্লাস থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে যেতেই পিছন থেকেই ডাক শুনেই থেমে যায় সোহা। পিছন ঘুরে তাকাতে দেখে আকেশ দাঁড়িয়ে আছে । সকালে এই ছেলে তাকে পড়ে যাওয়া থেকে ধরে নিয়েছিলো। সে একবার তীক্ষ্ণ চোখে তাকায়। তার পরেই চুপ করে দাঁড়িয়ে যায়।

-” হ্যালো আমি আকেশ রাঠোর এই ইউনিভার্সিটি এর প্রফেসর ও ট্রাস্টি। আকেশ বলে ওঠে।

-” সোহা জৈন । সোহা বলে ওঠে।

-“আপনি কি নতুন এই ইউনিভার্সিটি তে আগে তো কখনো দেখিনি। আকেশ বলে ওঠে।

-” ইয়েস কালকে জয়েন করেছি প্রফেসর হিসাবে। আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন? সোহা বলে ওঠে।

-” না। আপনার সাথে পরিচিত হয়ে খুব ভালো লাগলো। কোনো অসুবিধা হলে অবশ্যই জানাবেন। আকেশ বলে ওঠে।

-” ধন্যবাদ । এখন আসি তাহলে। মুখে হাসি রেখে বলে ওঠে।

আকেশ মৃদু হেসে মাথা নাড়া দিতে সোহা ও হেসে বেরিয়ে যায়। আর এদিকে আকেশ বাঁকা হেসে সোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সোহা জৈন । হুম ।

-” আমার থেকে যতো পালাও না কেনো সুন্দরী ঘুরে ফিরে ঠিক আমার কাছেই আসতে হবে তোমাকে। তাই যতো খুশি পালিয়ে নাও। তোমাকে আমি আমার খাঁচায় বন্দি করব। তোমাকে এই আকেশ এর হতে হবে। আকেশ নিজের মনে মনে বলে বাঁকা হেসে উঠে ওখান থেকে বেরিয়ে যায়।

আর এদিকে আমন হাত মুঠো করে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে তার চোখ দিয়ে যেনো আগুন বের হচ্ছে তার এই আগুনে সবাই কে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেবে।

চলবে….. ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here