#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৭.
-” আমি আমার টিমে অমনোযোগী অফিসারদের একদম পছন্দ করিনা। সোহা আমন এর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে ।
সোহা এর কথাটা শুনেই কিছুক্ষন থমকে যায় আমন ।তারপরেই আবারো তার ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসিটা ফিরে আসে। সে এবার এক ভ্রু উচু করে সোহার দিকে তাকিয়ে ফিচেল হেসে বলে ওঠে।
-” যেমন?
-“কাজের সময়ে সেই দিকে মন না দিয়ে অন্য দিকে মনোযোগ দেওয়া। সোহা ট্যারা ভাবে বলে ওঠে।
-“ওহ আচ্ছা তো বুঝতে পারলাম এই কথাটা আমাকেই বলছেন। তো মিস উম কি যেনো আপনার নাম জানতে পারি কি? আমন ভ্রু নাচিয়ে বলে ওঠে।
-” সোহা জৈন । সোহা এক পলক আমন এর দিকে তাকিয়ে নিয়ে বলে ওঠে।তার বুঝতে বাকি নেই আমন এর কৌশলে তার নাম জানার এই টেকনিক টা।
-“তো মিস সোহা জৈন। জৈন ।বলেই কিছু একটা মনে পড়তে বলে ওঠে। সোহা জৈন মানে জৈন গ্রুপ অফ ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রিস। ধীরাজ জৈন অ্যান্ড সৌজন্য জৈন ঠিক বলেছি তো? আমন জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-” হ্যাঁ ধীরাজ জৈন আমার বাপি আর সৌজন্য জৈন আমার ভাইয়া। সোহা বলে ওঠে।
-” আপনার বাপি তো আমাদের বিসনেজ পার্টনার। আর আমার ড্যাড আর আপনার বাপি বন্ধু হয়। ওনারা তো আমাদের বাড়ি ও এসেছিলেন কই আপনাকে তো দেখিনি কখনো ইনফ্যাক্ট কোনো পার্টি তে ও আপনাকে দেখিনি। শুনেছিলাম ওনাদের একটা মেয়ে আছে। বলেই আমন সোহা কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে বলে। আর আজ দেখে ও নিলাম।
-” আমি এইসব কিছু থেকে দূরে থাকি আর বিভিন্ন মিশনের জন্য বছরের অর্ধেক সময়ে আমি বাড়ির বাইরে থাকি। তাই বিশেষ কেউ আমাকে চেনে না। সোহা কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলে ওঠে।
আমন কিছুক্ষণ সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপরেই আবার সোহার বলা কথা মনে পড়তে আবারো বাঁকা হেসে ওঠে।
-“তো মিস সোহা আমরা কোথায় যেনো ছিলাম? উম হ্যাঁ তো আপনি বলছিলেন আপনি কাজের সময়ে অমনোযোগী অফিসার পছন্দ করেন না। তো এই কথা টা যে আমাকে উদ্দেশ করে বলেছেন সেটা বুঝতে পেরেছি তো। বলেই আমন থেমে গিয়ে সোহার মুখের দিকে তাকায়।
সোহা আমন এর থেমে যেতে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন চোখে তাকায় আমন এর দিকে। সোহার তাকানো দেখে আমন আবারো বলে ওঠে ।
-” তো কাজের সময়ে অন্য দিকে মন দেওয়া বলতে আমি কোন দিকে মন দিয়ে রেখেছিলাম সেটা কি আপনি জানেন? না মানে আপনি কি তাহলে দেখেছেন আমার মন চোখ কোথায় ছিল?
সোহা আমন এর কথা শুনে তড়াক করে আমন এর দিকে তাকায় দেখে সে তার দিকে তাকিয়ে আছে ভ্রু উচু করে ঠোঁটের কোণে সেই বিখ্যাত বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। আমন এর প্রশ্ন শুনে তার মনে পড়ে তাদের মিটিং এর সময়ে বারবার আমন তার মুখের দিকে দেখ ছিল। আর তার কথায় যে আমন তাকে উল্টো ফ্যাসাদে ফেলছে আর তার মুখ থেকে যে তার দিকে তাকিয়ে ছিল সেটা শুনতে চাইছে সেটা সোহা বুঝতে পারে। কিন্তু সোহা তো সোহা।
-“মিস্টার চৌধুরী আমি সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছি। তাই মনের মধ্যে কি চলে সেটা একটু হলে ও বোঝার ক্ষমতা রাখি। সোহা কাঠ কাঠ ভাবে বলে ওঠে।
-” আরে বাহ তাহলে তো আপনি এটাও বলতে পারবেন আমার মনের মধ্যে কি চলে? আমন বলে ওঠে।
-“সেটা সময় বলে দেবে আমি না। আপাততঃ এখন কাজের দিকে ফোকাস করুন। বলে রুমের দিকে পা বাড়ায়।
কিছুটা এগিয়ে থেমে গিয়ে আমন এর দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে আমন এর মুখের দিকে তাকায় ।
-“আর হ্যাঁ রাস্তা টা কিন্তু খুব রিস্কি তাই সাবধানে পা ফেলবেন দেখবেন যেনো পড়ে না যান। এতে কত টা সফল হবেন আগেই থেকে জেনে নিয়ে পা বাড়ানো ভালো। বলেই সোহা রুমের মধ্যে চলে যায়।
আর এদিকে সোহার কথা শুনে আমন এর মুখে হাসি ফোটে। তার করা প্রশ্ন টা কি ভাবে এড়িয়ে গিয়ে তাকেই সাবধান বাণী শুনিয়ে দিলো সেটা ভেবেই তার মুখে হাসি ফোটে। আমন যে তাকে মিটিং চলাকালীন দেখ ছিল সেটা ও দেখে নিয়েছে এই মেয়ে আর এখন তো তার মনের মধ্যে কি চলে সেটা নিয়েও সাবধান করে গেলো।
-“উফ এই মেয়ে তো পুরো চলতি ফিরতি হিডেন ক্যামেরা কোনো কিছুই চোখের আড়াল হয়না আর সাথে মনোবিদ ও। মনের মধ্যে থাকা কথা গুলো ও জেনে ফেলছে । ডেঞ্জারাস মেয়ে। এবার বুঝতে পারছি এই জন্য ডিপার্টমেন্টে কেনো তাকে লেডি ডন বলে। আমন নিজের মনে বলে ওঠে।
-” তবে রাস্তা যতোই রিস্কি হোক আর পিচ্চিল হোক না কেনো গন্তব্যে তো আমি পৌঁছাবোই সব বাঁধা পেরিয়ে সাথে সফল ও হব মিস লেডি ডন ধানী লঙ্কা। আমি বাঁকা হেসে বলে ওঠে।
————-
সোহা তাড়াতাড়ি করে বাড়ি থেকে বেরোয়। তাকে ইউনিভার্সিটি পৌঁছাতে হবে। আজ তার দেরি হয়ে গেছে । কাল সারারাত জেগে কাজ করেছে তারা সবাই। যদি ও রাতে কাজ করতে করতে সানি আকাশ নীহার অ্যাস ঘুমিয়ে পড়েছিলো । সোহা আর আমন তাদের পুরো কাজ শেষ করতে করতে ভোর হয়ে যায়। আমন ভোরে বেরিয়ে যেতেই সোহা সব কিছু গুছিয়ে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ে। তাই উঠতে দেরি হয়ে যায়। যদিও তার রাত জেগে থাকার ট্রেনিং নেওয়া আছে। তাতে ও এখন যখন সময় পাচ্ছে তখন না ঘুমানোর কোনো কারণ নেই।
সোহা বাইক স্টার্ট দিয়ে তার বাংলো থেকে বেরিয়ে যায়। কিছুটা যেতেই লক্ষ করে তার পাশে পাশে থেকে একটা ব্ল্যাক স্পোর্টস কার চলছে ।প্রথমে সাইট দিলে ও সে তার পাশাপাশি চলতে থাকে। ব্ল্যাক গাড়ি দেখে তার মাথায় ক্লিক করে যায় আগের দিনের ইউনিভার্সিটি তে ঢোকার সময়ে ও ঠিক এমনি গাড়ি দেখেছে। আর রাস্তায় তার বাইক ও এই গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়েছে। সোহার আর বুঝতে বাকি থাকে না যে এই গাড়ির মধ্যে আমন আছে যে তার সাথে সাথে চলছে । এটা বুঝতে পেরেই বাঁকা হাসে সোহা। পুরো রাস্তা টা তারা পাশাপাশি এসেছে। আজও তারা একসাথে ইউনিভার্সিটি ঢোকে আগে সোহা তারপরেই আমন।
সোহা বাইক পার্কিং করে রেখে পাশের দিকে তাকায় দেখে আমন গাড়ি থেকে নামছে। তার ঠোঁটে ও একটা হাসি দেখা যাচ্ছে বলে সোহার মনে হয়। সে একবার তাকিয়ে নিয়েই ভিতরের দিকে পা বাড়ায়। যেতে যেতে সোহা পুরো গ্রাউন্ড টা একবার তার তীক্ষ্ণ চোখে বুলিয়ে নেয় । কিছু দৃশ্য তার চোখে আসতেই তার ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফোটে। আজকেও রীতিমত তাকে সবাই দেখ ছিল যখন সে আসছিল তবে তফাত আগের দিন তাঁরা তাকে স্টুডেন্ট ভেবেছিল আর আজ তারা প্রফেসর হিসাবে দেখছে আর ছেলেরা তো রীতিমত সোহার উপর ক্রাশ খেয়ে গেছে। আমন ও একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে নেয় দেখে সব ছেলেরা সোহার দিকে তাকিয়ে আছে ।
সোহা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে গিয়ে পায়ের সাথে কিছু আটকে গিয়ে পড়ে যেতে নেয় কিন্তু সাথে সাথে তাকে কেউ কোমরে আকড়ে ধরে নেয়। আমন সোহার দিকে তাকানো ছেলে গুলো কে তাকাতে দেখতে গিয়ে সোহার থেকে কিছুটা পিছিয়ে যায় তাই সে সোহা পড়ে যাচ্ছে দেখে ধরতে এগিয়ে আসলেও ধরতে পারে না তার আগেই কেউ সোহা কে ধরে নেয়। সোহার কোমর ধরে তার নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেছে। এটা দেখতেই আমন এর চোখ মুখ পাল্টা যেতে শুরু করে তার চোখ দুটো আসতে আসতে লাল হতে থাকে রাগে। হাত চেপে মুঠো করে নেয়। তার মাথার রগ গুলো ও ফুলে উঠেছে ।এই মুহূর্তে তাকে কেউ দেখলেই বুঝতে পারবে যে আমন ভয়ঙ্কর ভাবে রেগে গেছে।
চলবে… ❣️
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।
(বিঃদ্রঃ – আমন সোহা লাভারদের রেসপন্স চাই নাহলে কিন্তু শুরু হওয়া প্রেম কেচে দেবো নায়ক কে ভিলেন আর ভিলেন কে হিরো বানিয়ে দেবো। তাই আমন কে চাইলে অতি অবশ্যই সাড়া দিতে হবে। ও হ্যাঁ নেক্সট নাইস স্টিকার ও কিন্তু চলবে না হুম)