তোর মনের অরন্যে পর্ব-৫

0
916

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৫.
-“আই অ্যাম সোহা জৈন। ফ্রম টুডে আই উইল টেক ইউর হিউম্যান সাইকোলজি ক্লাস । সো নাউ ইউ অল আন্ডারস্ট্যান্ড হু আই অ্যাম ওর ডু আই হ্যাভ ইন্ট্রোডিউশ মাইসেলফ এগেইন? সোহা তীক্ষ্ণ ভাবে কঠিন গলায় বলে ওঠে।

সোহা সবার দিকে একবার তাকিয়ে নেয়। দেখে সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার কথা গুলো শুনে সব হতভম্ব হয়ে গেছে। তাই সোহা সবার দিকে তাকিয়ে আবারো বলে ওঠে।

-“দেন লেট’স স্টার্ট দ্যা ক্লাস । অ্যান্ড ইউ গেট আউট অফ দিস ক্লাস ।সোহা সবার উদ্দেশে বলে শেষে রিনি কে ক্লাস এর বাইরে বের হয়ে যেতে কঠিন ভাবে।

সোহা এর তাকানো দেখে রিনি আর কিছু বলতে পারেনা। সোহার দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে ক্লাস থেকে বের করে দেয়। এর পরেই সবার দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে টেবিল থেকে মার্কার তুলে নিয়ে বোর্ডে একের পর এক কাউন্ট লাইন লিখতে থাকে। লেখা শেষে একটা একটা করে বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করে। সোহা মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করাচ্ছে সাথে তার চোখ ও ঘুরে বেড়াচ্ছে পুরো ক্লাস রুম জুড়ে। পুরো ক্লাস জুড়ে সবার মাঝে পিন পতন নীরবতা গ্রাস করে আছে। পুরো রুম জুড়ে শুধু সোহার আওয়াজ ভরে আছে।

এদিকে পাশের রুমে আমন ক্লাস নিচ্ছে। পাশের রুমে থেকে কোনও হট্টোগোল এর আওয়াজ না পেয়েই ভাবতে থাকে যে ওই ভয়ঙ্কর ক্লাস এর জন্য মাঝে মাঝে ক্লাস নেওয়া দায় হয়ে যায় আর আজ সেখানে এত শান্ত কি করে থাকতে পারে। সে তার স্টুডেন্ট কিছু কাজ দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এই রুমের দিকে তাকাতেই তার চোখ কপালে উঠে যায়। এ সে কাকে দেখছে। এই মেয়ে লেকচার দিচ্ছে। তারমানে প্রফেসর ওহ মাই গড কিন্তু একে তো দেখে স্টুডেন্ট লাগে বয়স বা কত এই মেয়ের? এই মেয়ের তেজ আছে বলতে হয় নাহলে এই ডেন্জারাস ক্লাস রুম কে শান্ত বানিয়ে নিতে পারতো? আমন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সোহার পড়ানোর স্কিল দেখে অবাক হয়। সত্যি তার কাছে রহস্যময়ী মনে হচ্ছে। এক পলক দেখে নিয়েই আমন তার ক্লাসে ফিরে যায়।

প্রায় এক ঘণ্টার ক্লাস শেষ হতেই সোহা ক্লাস রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসে। তার মধ্যে কোনো ক্লান্তি দেখা যায় না। এর আগে সে তার ট্রেনিং এর দরুণ প্রায় আট থেকে নয় ঘন্টা কমান্ড ট্রেন করতে হতো তাই এই এক ঘন্টা তার কাছে কিছুই না। এত তবু স্বাভাবিক আওয়াজে সে লেকচার দিয়েছে। আর তাদের ট্রেনিং এর সময়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কমান্ড দিতে হতো যাতে পুরো ট্রেনিং গ্রাউন্ড শুনতে পায়।

সোহা ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতে রিনি রাগে ফুসতে ফুসতে ক্লাসের ভিতরে ঢোকে সেখানে রাজ রনি নিশা বসে আছে ওদের মুখেই রাগ ফুটে আছে । তাদের ভয়ে এই পুরো ইউনিভার্সিটি কাপে আর এই মেয়েটা কিনা তাদের হেনস্থা করে গেলো না এটা তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

-“এই মেয়েটা কিনা আমাদের ক্লাস নেবে অসম্ভব। এটা কখনোই হতে পারে না। নিশা রাগে বলে ওঠে।

-” ওই মেয়ের এত সাহস আমাকেই এই ভরা ক্লাস রুমের থেকে বাইরে বের করে দেয়। ওকে তো আমি কিছুতেই ছাড়বো না। রিনি বলে ওঠে।

-“ভাই কি অ্যাটিটিউড দেখেছিস? আমি তো ভেবেছি আমাদের ক্লাস এর স্টুডেন্ট হবে বেশ খেলা যাবে এটা কে নিয়ে কিন্তু এ শালী প্রফেসর বেরোয় রাজ হাত ঠুকে বলে ওঠে।

-” না কিছুতেই না একে আমি কিছুতেই এখানে টিকতে দেবো না। রনি দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।

-একদমই তাই । রনি তোরা তো এই ইউনিভার্সিটি এর ট্রাস্টি তাই চাইলেই কাউকে বের করে দিতে পারিস সাথে রিক ভাই আছে না। রিনি বলে ওঠে।

-” আমি এই মেয়েকে আর একদিন ও এখানে দেখতে চাইনা তবে তার আগে একটা ব্যবস্থা তো করব তোরা চল আমার সাথে। বলেই রনি উঠে বেরিয়ে যায়।

————-

সোহা পকেটে থেকে ফোন বের করে এ.আর.চৌধুরীর ব্যাপারে পাঠানো ইনফরমেশন গুলো দেখে নিয়েই একটা মেইল পাঠিয়ে দেয় এ.আর.চৌধুরী কে। ফোন পকেটে রেখে এবার সোহা পুরো বিল্ডিং টা একবার ঘুরে দেখে নেয় তার তীক্ষ্ণ চোখ দিয়ে ভালো করে সব স্ক্যান করে নেয় যাতে এরপরে হতে থাকা কোনো দৃশ্য যাতে তার চোখ দিয়ে না বেরিয়ে যায়। পার্কিং থেকে গাড়ি নিয়েই ইউনিভার্সিটি থেকে বের হয়ে যায় তার গন্তব্যে। এতক্ষণ যে কেউ তাকে নজরে রাখছিলো সেটাও সোহার চোখে এড়াইনি। এটা দেখেই তার ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। সোহা ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে কিছুটা যেতেই সোহার দুই পাশে আরও দুটো বাইক চলতে থাকে। সোহা এবার ঘাড় ঘুরিয়ে দুই দিকে তাকায়। সোহা কে তাকাতে দেখেই ওরা হেসে দেয়। এর পরেই তিনটে বাইক পাশাপাশি ফুল স্প্রিডেই চলতে থাকে। এরপরেই গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকে পর পর তিনটে বাইক থামে। বাইক থেকে নেমে সোহা বলে ওঠে।

-“কিরে তোদের কাজ হয়েছে?

-” একদম । আকাশ হেসে বলে ওঠে।

-“উফ মনে হচ্ছে এবারের খেলা টা দারুন জমবে। অ্যাস হাসতে হাসতে বলে ওঠে।

-” যে ভাবে প্ল্যান সাজানো হয়েছে আর প্রথম দিনেই পাখি তার পা ও জালে দিয়ে দিয়েছে শুধু এবার খেলার সময়। জমবে না মানে। সানি হাসতে হাসতে বলে ওঠে।

-” আচ্ছা তোর ওদিকে ঠিক ঠাক ছিল তো সব? নীরা বলে ওঠে।

-“অল ওকে । আচ্ছা চল কিছু প্রস্তুতি নেওয়ার আছে আজ নতুন মেহমান আসছে। সোহা বাঁকা হেসে বলে ওঠে।

সাথে বাকিরা ও হেসে বাংলোর ভিতরে ঢুকে যায়।

————-

আমন গাড়িতে উঠে ফোন চেক করতে দেখে তার ফোনে একটা মেইল এসেছে। এন.এস.জি সিনিয়র অফিসার লেডি ডন এর থেকে। এটা দেখেই আমন এর মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার চোখ দুটো চকচক করে ওঠে। সে জানত এই কেসে তার সাথে লেডি ডন ও এই কেস হ্যান্ডেল করবে। হেড অফিস থেকে তার কাছে মেইল এসেছিল। আর সে অপেক্ষায় ছিল কখন এই লেডি ডন এর থেকে সে ডাক পাবে। তার অনেক দিনের স্বপ্ন এই অফিসার এর সাথে দেখা করার কিন্তু সে চাইলেই তো দেখা করতে পারেনা আর তার ডিটেইলস ও সে পাবে না। তার পোস্ট অনুযায়ী তার ডিটেইলস খুব কম জনই জানে ডিপার্টমেন্টের সবাই তাকে লেডি ডন হিসাবে চেনে। আমন নিজেও একজন সিনিয়র অফিসার কিন্তু তাদের ডিপার্টমেন্ট আলাদা আর সেই অনুযায়ী এই লেডি ডন ও তার তার থেকে বড় অফিসার।

আমন নিজেও অনেক স্টিং অপারেশন করেছে। আমন ও একজন স্পাই অফিসার। আর.এ.ডাব্লিউ এর একজন দক্ষ সিনিয়র অফিসার। তাকে ও ডিপার্টমেন্টের সবাই এ.আর.চৌধুরী হিসাবে চেনে। আজ পর্যন্ত সে অনেক কেস সামলেছে। সোহার মত তাকেও সবাই এক ডাকে চেনে আর তাই উপর মহল থেকে এবার দুই জন এক সাথে এই কেস হ্যান্ডেল করতে দিয়েছে। কিন্তু এটা তার সব থেকে বেস্ট একটা স্টিং অপারেশন হতে চলেছে। তার অপেক্ষিত সেই নারীর সাথে সে একসাথে কাজ করতে চলেছে এর থেকে বেস্ট আর কি হতে পারে তার কাছে । আমন ফোন রেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়েই ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যায়।

————-

রাত এগারোটা পঞ্চান্ন চারিদিকে শুনসান হয়ে আছে মাঝে মাঝে রাস্তা দিয়ে একটা করে গাড়ি চোখের পলক ফেলতে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার স্ট্রিট লাইট এর আলো গুলো জ্বলছে ।ফুটপাতে কয়েকটা কুকুর ডাকছে। আমন একবার চারদিকে দিকে তাকিয়ে পরিবেশ টা দেখে নেয় তার তীক্ষ্ণ চোখে। আমন লেডি ডন এর পাঠানো অ্যাড্রেসে চলে এসেছে। কয়েক সেকেন্ড পরেই সে দেখতে পায়। সামনে মাটির নীচের দিকের একটা রাস্তা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সে তো এতক্ষণ খুব সূক্ষ্ম ভাবে পরখ করে নিয়েছে তাহলে? এটা কি তাহলে লেডি ডন এর কাছে পৌঁছানোর রাস্তা ভেবেই তার হাতের ঘড়ির দিকে তাকায় বারোটা বাজতে আর মাত্র এক মিনিট সময় আছে আর এটা দেখেই মুখে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়েই আসতে আসতেই পা বাড়ায় সামনের দিকে। গেট এর মুখে আসতেই দরজা ওপেন হয়ে যায় এটা দেখে একটু চমকে গেলে ও নিজেকে বাইরের থেকে স্বাভাবিক রাখে ভিতরে ঢুকতেই আবারো দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তার কানে আসে মৃদু একটা রিনরিনে কন্ঠস্বর।

-“ওয়েলকাম মিস্টার চৌধুরী। ওয়েল আপনি একদম পারফেক্ট টাইমে এসেছেন। আই লাইক ইট।

আমন কন্ঠস্বর শুনেই সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আমন রুমের মাঝ বরাবর আসতেই চারিদিকের লাইট জ্বলে ওঠে। আমন একবার চোখ চেপে বন্ধ করে আবারও খুলতে দেখে একজন মেয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। আসতে আসতে মুখ পরিষ্কার হতে আমন এর চোখ দাঁড়িয়ে যায়। সাথে সামনের থাকা ব্যাক্তির ও চোখ বড় বড় হয়ে যায়। দুজন এর চোখে মুখে বিস্ময় ফুটে আছে। দুজন প্রায় একসাথে বলে ওঠে।

-“আপনি?

-” তুমি?

চলবে…..❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

(প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আজও ইচ্ছেকথন গল্প দিতে পারছি না। আসলে আমার দাদুর ভাই দাদু মারা গেছে সারাদিন ওখানেই কেটে গেছে আর এই পরিস্থিতিতে ইচ্ছেকথন এর মত রহস্যজনক গল্প লেখার মত মনোবল ও নেই তাই কেউ অপেক্ষায় থাকবেন না)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here