#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩৪.
ফ্লোরে রক্তাক্ত শরীরে সোহার নিথর দেহ পড়ে আছে । চারদিকে রক্তে ভরে আছে। আমন স্তব্ধ হয়ে আছে। তার দৃষ্টি যেনো স্থির হয়ে গেছে চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ছে । আমন অবশ পায়ে এক পা এক পা করে এগিয়ে যায় সোহার দিকে। সোহার সামনে গিয়ে হাঁটু ভেঙে বসে পড়ে। সোহার রক্ত শূন্য ফ্যাকাশে মুখের দিকে দেখে আমনের বুকের মধ্যে হাজার গুন বেশি যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়। আমন তার কাঁপা কাঁপা হাত এগিয়ে নিয়ে দু হাত দিয়ে সোহার মুখটা তুলে ধরে নিজের হাতের মধ্যে। আমন আচমকা দুই হাত সোহাকে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে মিশিয়ে নেয়। আমনের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না সে সোহার অবস্থা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে কথা বলার শক্তি যেনো হারিয়ে ফেলেছে। অ্যাস নীহার আকাশ সানি তারাও গুটি গুটি পায়ে সোহার দিকে এগিয়ে যায়। সোহার অবস্থা দেখেই কারোর চোখ শুষ্ক নেই। আর আমন সেতো যেনো পাথর হয়ে গেছে মনের দিক দিয়ে। তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লেও তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হয়নি। সে সোহার দেহ টা নিজের মধ্যে নিয়ে জড়িয়ে রেখেছে । আমনের চোখের সামনে বারবার ভেসে আসছে সোহার রাগী মুখটা আর এখন সেই রাগী মেয়েটা কিনা এই ভাবে নিথর হয়ে পড়ে আছে। সেটা যেনো আমন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।
হটাৎ করেই সোহার হাতে আমন এর হাত পড়তেই আমন দ্রুত গতিতে এক হাত দিয়ে তার বুকের থেকে সোহার মুখ তুলে সোজা করে ধরে তার মুখের সোজা করে। মুখের কাছে হাত নিয়ে বোঝার চেষ্টা করে নিঃশ্বাস পড়ছে কিনা। কিন্তু না সোহার নিঃশ্বাস পড়ছে না। আমন তার হাতের সাথে লেগে থাকা সোহার হাতটা এবার চেক করে হ্যাঁ খুব সামান্য পরিমাণে পালস পাওয়া যাচ্ছে। সোহার দেহে এখনও প্রাণ আছে। অ্যাস নীহার আকাশ সানি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে হটাৎ করে আমনের এমন করায়। আমনের পাথর হয়ে যাওয়া চোখ মুখে একটা আশার আলো ফুটে উঠেছে। আমনের মুখের আশার আলো দেখেই তারাও বুঝে যায়। সানি উঠে গিয়ে দ্রুত অফিসারদের কল করে ইমিডিয়েট শর্টে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে ডক্টরকে দ্রুত সব কিছু অ্যারেঞ্জ করতে বলে । আমন সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে কপালে নিজের ঠোঁট ছুয়ে গভীর এক স্পর্শ দেয়। সোহাকে কোলের উপর শুয়ে দিয়ে দ্রুত হাতে নিজের কোট খুলে শার্ট খুলে ফেলে শার্টের দুই দিকে ধরে ছিড়ে ফেলে। একটা অংশ জড়িয়ে দেয় সোহার হাতে। সোহার হাতের রগ কেটে ফেলা অংশে বেঁধে দেয় যাতে আর রক্ত বের না হয়। আরেকটা অংশ নিয়ে মাথায় ভালো করে জড়িয়ে বেঁধে দেয়। সোহার শরীরে আর কোনো জায়গায় কাটা ছড়ার দাগ নেই শুধু মাথা আর হাতের কাঁটা অংশ ছাড়া। সোহার ক্ষত স্থান বেঁধে দেওয়ার পর আদুল শরীরের উপর শুধু কোট টা পরে নেয়। তার এখন এইসব দেখার সময় নেই। দ্রুত সে সোহাকে কোলে তুলে নিয়ে উঠে রুম থেকে এক প্রকার দৌড়ে বেরিয়ে যায়। পিছনে বাকি চারজনও ছুটে বেরিয়ে যায়।
আমন সোহাকে কোলে নিয়ে দ্রুত কটেজ থেকে বেরিয়ে হেলিকপ্টারের দিকে যেতে থাকে। বাইরে দাঁড়ানো অফিসারদের সাথে এখন তার কথা বলার সময় নেই আমন সবাই কে অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যায় সোহাকে নিয়ে। আমনের গলায় মুখে বুকের অংশে রক্তে মেখে আছে। সানি আকাশ অ্যাস নীহার এসে অফিসারদের সাথে কথা বলে ওদের কাছে থাকা গার্ড গুলোকে তাদের সাথে আসা অফিসারদের হ্যান্ডওভার করে নিয়ে তারাও এগিয়ে যায় হেলিকপ্টারের দিকে।
আমন সোহাকে নিয়ে হেলিকপ্টারে উঠতেই দ্রুত ডক্টর তার চিকিৎসা শুরু করে। আমন এখনও তার ধানী লঙ্কাকে কোলে নিয়েই বসে আছে ডক্টর তার কাজ করছে। তারা যে প্রাইভেট হেলিকপ্টারে এসেছে এটা মূলত ব্ল্যাক ক্যাটদের আন্ডারে থাকে। হেলিকপ্টারে পাইলটের সাথে সাথে সব সময়ের জন্য একজন ডক্টর মজুত থাকে যাতে মিশনে থাকাকালীন কোনো বিপদ হলেই দ্রুত চিকিৎসা করা যায়। সোহার মুখে অক্সিজেন লাগানো হয়েছে হাতে মাথায় আমনের শার্টের অংশ খুলে ফেলে ব্যান্ডেজ করে দেয়। কোনো মতেই প্রাথমিক চিকিৎসা টুকু করা গেছে কোনো ভাবে প্রাণ বায়ূ টাকে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। খুব সামান্য পরিমাণ হার্ট চলছে। আমন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সোহার মুখের দিকে। অ্যাস নীহার আকাশ সানি পাশে বসে আছে তারাও তাদের প্রাণের বন্ধুর এইরকম অবস্থা দেখে নিজেদের ঠিক রাখতে পারছে না কিছুতেই। তারা যখন থেকে এই লাইনে আছে এই প্রথম সোহার এমন প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়ে গেছে। এর আগেও বিপদ গেছে তবে সোহা সব কিছুই সামলে নিয়েছে এই প্রথম সেই এমন বিশ্রী ভাব আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। সোহার অবস্থার কোনও উন্নতি নেই সেই একই রকম আছে। সানি হেলিকপ্টারে ওঠার আগেই সোহার মাম্মাকে ফোন করে দিয়েছে সব কিছুই রেডি রাখতে বলেছে খুবই সিক্রেট ভাবে। এতদিনে বাড়িতে কোনও খবর দেওয়া হয়নি সোহার নিখোঁজের তা নাহলে সোহার পরিবার পুরোপুরি ভেঙে পড়তো তাই চেপে রেখেছিল। আমনই প্রথম থেকেই সবাই কে বলে দিয়েছে যাতে সোহার নিখোঁজের খবরটা পুরোপুরি সিক্রেট থাকে যেনো কারোর কানে কোনো কথা না যায়।
———–
প্রায় আধঘণ্টার মধ্যে তারা দিল্লী এসে পৌঁছে যায়। হেলিকপ্টার থেকে নেমে আমন সোহাকে প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে হসপিটাল এর দিকে বেরিয়ে যায় সাথে অ্যাস আর নীহার আছে। সানি আর আকাশ তাদের সাথে তুলে আনা ওই গার্ড গুলোর ব্যবস্থা করার জন্য রয়ে যায়। সানি আকাশ মিলে ওদের নিয়ে সোহার বানানো সিক্রেট জোনে রেখে তারাও বেরিয়ে যায় হসপিটালের উদ্দেশে।
হসপিটালের সামনে গাড়ি থামতে আমন দ্রুত সোহাকে নিয়ে কোলে নিয়েই দৌড়ে হসপিটালের ভিতরে ঢুকে যায়। গেটের কাছেই শ্রেতা জৈন অপেক্ষা করছিলো একটা ছেলের কোলে তার মেয়ে কে দেখে তিনি দ্রুত এগিয়ে আসে। সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে তার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। আমন কে দ্রুত আসতে বলে তিনি এগিয়ে যায়। ভিতরে ঢুকেই সোহাকে স্টেচারে শুয়ে দেয়। শ্রেতা জৈন আর তাদের সাথে থাকা বাকি ডক্টর মিলে দ্রুত ও.টি’তে ঢুকে যায়। হেলিকপ্টারে মধ্যে সোহাকে অক্সিজেন দেওয়া হলেও তাকে গাড়ি করে হসপিটাল নিয়ে আসার সময়ে খুলে দেওয়া হয়েছিল তাই সোহার অবস্থা আরও অবনতি ঘটে গেছে। ও.টি’র দরজা বন্ধ হতে আমন হাঁটু গেড়ে ওখানেই বসে পড়ে মুখে হাত দিয়ে। আমনের সব ধৈর্য্য যেনো মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেছে। অ্যাস নীহার দুজনই এগিয়ে এসে আমনের পাশে বসে পড়ে। অ্যাস তার ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে আরো বেশি করে ভেঙে পড়েছে। তার ভাইযে সোহাকে ভালোবাসে তারা সেটা আগেই বুঝতে পেরেছিল। তার হাসি খুশি থাকা ভাই কেমন পাথর হয়ে গেছে ভিতর থেকে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। সেই দিল্লী থেকে লাদাখ যাওয়ার সময়ে আমন শেষ কথা বলেছিলো আর তারপরে তার মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হয়নি বরং বধির হয়ে গেছে সোহাকে দেখে। আর এখন এই অবস্থা। না জানি সোহার ভালো মন্দ কিছু একটা হয়ে গেলে আমনের কি হবে। অ্যাস নীহার দুজনই আমন কে তুলে ধরে পাশে চেয়ারে বসিয়ে দেয়। আমনের শরীরে থাকা কোটের উপরেও রক্তের আস্তারন পড়ে গেছে সোহার রক্তে তার শরীর মেখে আছে। আর আমন তার দৃষ্টি ও.টি’র দিকে করে রেখে গেছে। সবাই চিন্তিত হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যেই হসপিটালে ধীরাজ জৈন আর সৌজন্য জৈন এসেও হাজির হয়ে গেছে সাথে কিছুক্ষণ পরই আকাশ সানি ও এসে যায়। সবাই চিন্তিত হয়ে বাইরে পায়চারি করে যাচ্ছে সাথে উপর ওয়ালার কাছে প্রে করে যাচ্ছে।
সৌজন্য আর ধীরাজ জৈন এখানে আমনকে দেখে কিছুটা অবাক হয়েছে আকাশ সানির থেকে সব কিছু শুনে সৌজন্য গিয়ে আমনের পাশে বসে পড়ে সৌজন্যের সাথে আমনের বেশ একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে তাদের বিজনেস সূত্র থেকে। আমনের কাঁধে হাত রাখে সৌজন্য কিন্তু এতেও আমনের কোনো পরিবর্তন হয়না। আমন সেই একইরকম ভাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও.টি’র বন্ধ দরজার দিকে। আমনের চোখের সামনে শুধু একের পর এক সোহার সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো ভেসে আসছে সোহার তেজি মুখ রাগে লাল হয়ে যাওয়া চোখ মুখ সাথে মূল্যবান সেই হাসি সব কিছু সাথে সোহার আজকের সেই ফ্যাকাশে রক্ত শূন্য মুখটা ভেসে ওঠে।
ইতি মধ্যেই কয়েকবার ও.টি’র দরজা খুলে নার্স বেরিয়ে এসেছিল রক্তের জন্য তারা যা মজুত রেখেছিলো তার প্রায় সবটাই লেগে গেছে তাই ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের তলব পাঠানোর জন্য নার্স বাইরে এসেছিল আবার ভিতরেও চলে গেছে। নার্স থেকে সোহার কন্ডিশন কিছুই জানা যায়নি। তাই কারোর মন থেকে দুশ্চিন্তা ও যায়নি।
চলবে….. ❣️
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।
(বিঃদ্রঃ – আমি জানি কয়েকদিন ঠিকমত গল্প দিতে পারছি না। আসলেই আমি ভীষণ অসুস্থ জ্বরে কাহিল হয়ে আছি সাথে গলা খারাপ হয়ে গিয়ে কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে। এইসব কিছুর মাঝে ঠিকমতো গল্প লিখতে বসতে পারছি না তাই একটু সমস্যা হচ্ছে। আশা করি সবাই একটু মানিয়ে নেবেন। আর রাতে আরো একটা পার্ট দেওয়ার চেষ্টা করবো।)