তোর মনের অরন্যে পর্ব-২৮

0
610

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২৮.
আরহান সোহা কে জড়িয়ে ধরে বসে আছে আজ দুইজনের চোখের পানি বাধ মানছে না। সোহার হাতে ধরা আছে এখনও সেই ছবিটা। আরহান যেনো আজ তার হারিয়ে যাওয়া কোনো মহা মূল্যবান জিনিষ খুঁজে পেয়ে গেছে সেই রকম অবস্থা। তখন আরহান সোহার মুখে থেকে “মাম” শব্দটা শুনেই আরহান থমকে গেছিলো । সোহার আর তার কাছে থাকা ছবিটার মধ্যে যে কোনও কানেকশন আছে সেটা আগে বুঝে গেছিলো আর সোহার মুখে থেকে মাম শুনেই আরহানের ভিতরটা ধক করে উঠেছিলো। মাম এই শব্দের সাথে ভীষণ ভাবে পরিচিত ছিলো। আর আজ সেই শব্দ টা কানে আসতে আরহানের মনে থাকা সব সন্দেহ উড়ে গেছে তার আর বুঝতে বাকি নেই সোহাকে কেনো তার খুব নিজের মনে হতো কেনো তার আত্মার সাথে মিল পেতো। এতদিন পর এসে আরহান তার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে। তবে তার পর দুজনের মুখে কোনো কথা বের হয়নি। আরহান সোহাকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে নিয়েছিলো তারপরই দুজন নিঃশব্দে কান্না শুরু করে। আরহান এটাও বুঝে যায় যে সোহা আগের থেকেই তাকে হয়তো চিনতো বা হয়তো তার ব্যাপারে জানতো।

-“সোহা এইসব কি ভাবে? আই মিন করে সম্ভব হলো? আরহান সোহার মুখ টা তার দুহাতের মধ্যে তুলে ধরে বলে ওঠে।

-” সব কিছুই জানতে পারবে খুব তাড়াতাড়ি ভাইয়া।শুধু এখনও সঠিক সময় আসেনি। সোহা কান্না ভেজা গলায় বলে ওঠে।

-” কেনো এমন হলো বলতো আমাদের সাথে? এমনটা না হলেও পারতো। আজ প্রায় কুড়ি বছর পর তোকে পেলাম আমি। আরহান মুচকি হেসে বলে ওঠে।

-“তুমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবে ভাইয়া । এখন সময় আসেনি কিছু বলার। তবে সেটার বেশি বাকি ও নেই। সোহা সোজা হয়ে বসে বলে ওঠে।

-” হুম আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি সব কিছু জানার জন্য। আরহান বলে ওঠে।

আরহান গাড়ি ড্রাইভ করছে আর সোহা আরহানের এক হাত জড়িয়ে বসে আছে। আজ সোহাও আরহানের মত খুশি আর দুটো কেউ নেই মনে হয়। তাদের গাড়ি চৌধুরী ম্যানসনের সামনে আসতেই সোহা সোজা হয়ে বসে আরহানের দিকে তাকায়।

-“এখন থেকেই নিজের মন কে শক্ত করতে শুরু করো। সামনে এমন অনেক কিছুই ঘটবে যার জন্য তোমাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। বলেই সোহা গাড়ি থেকে নেমে যায়।

আরহান গাড়িতে বসে থেকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সোহার যাওয়ার দিকে। তার মনে থেকে সোহাকে সেই প্রশ্নটা ক্লিয়ার হয়ে গেলেও এর সাথে সাথে আরো অনেক প্রশ্ন তার মাথায় এসে চেপে বসেছে। যার প্রশ্ন একমাত্র দিতে পারবে সোহা। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসি মুখে গাড়ি স্টার্ট দিয়েই বেরিয়ে যায় আরহান।

————

সোহা নিজের রুমে ঢুকতে না ঢুকতে দেখতে পায় আমন তার রুমের মধ্যে পায়চারি করছে মুখে ফুটে আছে চিন্তার ছাপ। সোহা রুমে আসতেই আমন সোহার দিকে এগিয়ে এসে একটানে সোহাকে নিজের বুকের উপর ফেলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। প্রথমেই সোহা আমনের এমন কাজে হকচকিয়ে গেলেও বুঝতে পারে আমন তাকে নিয়ে আজকের ঘটনার জন্য চিন্তিত হয়ে ছিল ভাবতেই তার মুখে হালকা হাসি ফুটে ওঠে। না সে এই ছেলে কে দিয়ে বড্ড পরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছে এতটাও বোধ হয় ঠিক হচ্ছে না তার এবার একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে তোর মনে হয়। সোহা তার মনে ভেবে হালকা হেসে আমনের পিঠে হাত রাখে। সাথে আরো শক্ত করে তাকে জড়িয়ে নেয় আমন। মনে হচ্ছে একেবারে তার নিজের বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে নেবে।

-“এই তুমি ঠিক আছোতো? তোমার কিছু হয়নিতো? কেনো আজ একা একা গেলে আমাকেও বলতে পারতে আমিও তোমার সাথে যেতাম। আমন একসাথে প্রশ্ন করে ওঠে।

আমনের প্রশ্ন শুনে সোহা হেসে ওঠে। আমনের কথা গুলো তার মনে প্রশান্তি বইয়ে দিচ্ছে। আজ এমনিতেও সে খুব খুশি আর তার উপর তার জন্য আমনের এমন চিন্তিত ভাব তাকে নিয়ে করা পাগলামি সব কিছুই তাকে আরো বেশি বেশি করে মনের শান্তির জোয়ার বইয়ে দিচ্ছে।

-“আমি একদম ঠিক আছি মিস্টার চৌধুরী। সোহা আমনকে আশ্বস্ত করতে বলে ওঠে।

-” বললেই হলো ঠিক আছো। তুমি নাকি রোডের উপর পড়ে গেছিলে। তুমি এমন কেনো? সব দিকেই খেয়াল আছে শুধুমাত্র নিজের দিকে নেই কেনো শুনি? আজ যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে কি হতো বলো তো? আমন উদ্বিগ্ন হয়ে বলে ওঠে।

-” আরে বাবা দেখুন আমি একদম ঠিক আছি।

-“তোমার কপালে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া আছে আর তারপরেও বলছ তোমার কিছু হয়নি।

-“আরে এটাতো সামান্য চোট মাত্র। আর আপনি তো জানেন আমাদের এইসব কিছু হয়না আমরা অভ্যস্ত এইসবে।

-” আজ যদি কিছু একটা হয়ে যেতো তাহলে…

আমনকে পুরোটা বলতে না দিয়েই সোহা বলে ওঠে।
-” কিছুই হতো না। ভাইয়া ছিল সেই আমাকে আজকে সেভ করে নিয়েছে।

সোহার কথা শুনে আমন তার বুকের থেকে সোহার মাথাটা তুলে ধরে নিজের সামনে। সোহার মুখের দিকে দেখে নিয়ে সোহার চোখে চোখ রাখে।

-” কে ভাইয়া? কোন ভাইয়া তোমাকে সেভ করেছে? কোন ভাইয়ার কথা বলছো তুমি?

-” আন্নি ভাইয়া ।

-“আন্নি মানে আরহান? ও তোমাকে সেভ করেছে?

-” হ্যাঁ ।

-“আচ্ছা তুমি আরহানের নাম আন্নি সেটা জানলে কি করে? ওহ সেদিন সকালেই মম ওকে ওই নামেই ডেকেছিল তখনতো তুমি ওখানেই ছিলে তাইনা। আমিও কেমন ভুলে গেছি দেখো। আমন হেসে বলে ওঠে ।

সোহা আমনের কথা গুলো শুনে চুপচাপ আমনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমন কত সহজেই বলে দিলো কিন্তু সেতো এই নাম আগের থেকেই জানে বলতে গেলে ছোটো থেকেই জানতো এই নাম টাকে। কিন্তু নামের মালিক কে চিনত না কিন্তু এখন সে নাম আর নামের মালিক দুজনকেই চেনে। তার জীবনে যে অনেক না বলা কথা রয়ে গেছে। যে গুলো কেউ জানে না এমনকি আমনও না। আর সে কোনো মিথ্যা দিয়ে কোনো সম্পর্কের শুরু করতে চায়না। সোহা এটাও জানে আগের দিন রাতে তাকে রুমে নামাজরত অবস্থায় আমন দেখে নিয়েছিল কিন্তু এই নিয়ে তাকে কোনো প্রশ্ন ও করেনি। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর গুলো তো আমনের জানার দরকার আছে কোনো সম্পর্ক মিথ্যে ভিত্তি দিয়ে শুরু করা যায় না। আর যাইহোক মিথ্যে দিয়ে শুরু করা সম্পর্ক বেশি দিন টিকে না একদিন না একদিন সব কিছুই সামনে আসবে। তাই সে কিছুতেই এমন করতে চায়না।

আমন সোহাকে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে। কেমন ঘোর লাগা চোখে দেখছে তাকে।

-“কি ব্যাপার প্রেমে পড়ে গেলে নাকি আমার? উম পড়তেই পারো পা স্লিপ কেটে আমার প্রেমে। ছেলেটাতো খারাপ না তাইনা। দেখতে শুনতে বেশ হ্যান্ডসামও আছে। আমন দুষ্টু হেসে বলে ওঠে।

আমনের কথা শুনে সোহার ঘোর কেটে যায়। সোহা ভ্রু কুঁচকে আমনের দিকে তাকায় দেখে কেমন ফিচেল হেসে তাকিয়ে আছে তার দিকে ।

-“কি বললে নাতো? আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলে বুঝি? হুম খেতেই পারো। আমি তোমাকে তুলব না যতো ইচ্ছা হাবুডুবু খাও আমিতো তোমারই তাইনা তাই যা ইচ্ছে করতে পারো। আমন বলে উঠে এক চোখ টিপে ঠোঁট কামড়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

সোহা আমনের বলা” আমিতো তোমারই “বলা কথাটা শুনে তার বুকের মধ্যে হাতুড়ি পেটা শুরু হয়ে গেছে কেমন একটা অনুভূতি বয়ে যায় তার মধ্যে। তবুও নিজেকে সামলে নেয়।

-“হয়ে গেছে আপনার? নাকি আরো কিছু বাকি আছে? সোহা ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

আমন একবার সোহাকে ভালো করে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে দেখে নেয়। আমনের চোখে মুখে দুষ্টুমির ছাপ স্পষ্ট। ঠোঁট কামড়ে রেখে সোহার চোখে চোখ রাখে।

-” বাকি তো অনেক কিছু আছে? আমি বললেই কি হয়ে যাবে নাকি?

-” এই আপনি এখন যান তো এখান থেকে। অসভ্য কোথাকার। সোহা মৃদু ধমক দিয়ে বলে ওঠে।

আমন আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সোহাকে কাছে টেনে নিয়ে তার কপালে কেটে যাওয়া অংশে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ বুলিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আমনের যাওয়ার দিকে সোহা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কপালে কেটে যাওয়া জায়গায় আমনের ঠোঁটের স্পর্শের উপর নিজের হাত রেখে আমনের স্পর্শ কে অনুভব করতে থাকে। না সে একেবারেই নিশ্চিত এই ছেলে তাকে পাগলের মতো করে ভালোবাসে। আর তাকে ঘোরাবে না এবার তার মনের কথা বলে দেবে তার মন কে। মনে মনে ভেবে নেয় সোহা।

————

আমন ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দূরে ওই আকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। হালকা মৃদু হাওয়া দিচ্ছে চারিদিকে আলো আধারি পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে আছে। সারাদিনের মাঝে মাঝে হওয়া বৃষ্টির আকাশ পরিষ্কার হয়ে গিয়ে এখন আকাশের ঝকঝকে চাঁদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। সোহার জন্য এখানে অপেক্ষা করছে সে। ম্যাডাম তাকে ছাদে আসতে বলে কোথায় যে হারিয়ে গেছে বুঝতেই পারে না। তাই একা একা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চাঁদ এর মোহনীয় রূপ উপভোগ করছে।

-“খুব সুন্দর পরিবেশ তাইনা।

পাশে কারোর উপস্থিতি পেয়ে আমন মাথা ঘুরিয়ে দেখে সোহা এসে তার পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সে এতই প্রকৃতি উপভোগ করতে ব্যস্ত ছিল যে সোহা কখন এসেছে বুঝতেই পারিনি।

-“হুম অসম্ভব সুন্দর এই দৃশ্য। একদম মোহনীয়।

সোহা আমনের ঘোর লাগা কন্ঠ শুনে পাশে তাকাতেই দেখে আমন তার দিকে তাকিয়ে আছে।

-” আমার আপনাকে কিছু বলার আছে আমন। আমার মনে হয় কোনো সম্পর্কে জড়ানোর আগে সবটা জেনে বুঝে নেওয়া উচিত। সোহা বলে ওঠে।

আমন সোহার মুখে এই প্রথমবারের মতো নিজের নাম শুনে চমকে ওঠে তারপরে আবারো চমকে যায় সোহার পরের কথা গুলো শুনে।

-” আমি চাইনা আমাদের সম্পর্কের মধ্যে কোনো মিথ্যে থাকুক। আপনি আমার ব্যাপারে অনেক কিছুই জানেন না বলতে গেলেই কিছুই জানেন আমার সম্পর্কে। তাই আমার মনে হয় আগেই আপনার আমার ব্যাপারে সব কিছু জেনে নেওয়া উচিত তারপরেই আগে যাওয়া। সোহা বলে ওঠে।

এদিকে আমন সোহার কথা শেষ হতে না হতেই সোহার কোমরে হাত রেখে একটানে নিজের বুকের উপর ফেলে। মুখের উপরে ছড়িয়ে পড়া চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে ঘোর লাগা চোখে সোহার দিকে তাকায়।

-“আমার তোমার ব্যাপার নিয়ে যতোটুকু জানার
সেটা আমি জানি এর থেকে বেশি আমার কিছু জানার দরকার নেই আগেও তোমাকে বলেছি আর আবারো বলছি তোমার ব্যাপারে বাকি কথা আমার জানার দরকার নেই। এতে আমার ভালোবাসা এক পরিমাণ ও কমবে না আর। তাই তোমার বাহ্যিক কোনো কিছুর উপরে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। এক দৃষ্টিতে সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-“তবে হ্যাঁ তুমি যদি তোমার দিকে থেকে ক্লিয়ার থাকার জন্য বা আমার কাছে তোমার কথা গুলো শেয়ার করার জন্য বলতে চাও বলতে পারো আমি শুনবো। আমন হেসে বলে ওঠে ।

সোহা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমনের দিকে। আমনের কথা গুলো তাকে এত বেশি প্রশান্তি দেয় যা প্রকাশ করার বাইরে। এই ছেলে কেনো তাকে এত ভালোবাসে সেটা বোঝে না সোহা। তবে হ্যাঁ সে নিজেও এই পাগল ছেলের পাগলামিতে প্রেমে পড়েছে। ভালোবাসে সে এই ছেলে কে।

চলবে….. ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

(বিঃদ্রঃ – আজকেই একটা পোস্ট করেছিলাম গল্প স্যাড এন্ডিং নিয়েই । আর তারপরই বাকিটা ইতিহাস হয়ে গেছে। এত এত থ্রেড পেয়েছি আমি সবার কাছে থেকে। তবে এতেও আমি খুশি হয়েছি আপনাদের আমার গল্পের প্রতি এত্ত ভালোবাসা দেখে। আপনাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই কারণ আমি স্যাড এন্ডিং দিচ্ছিনা ।আমি নিজেই স্যাড এন্ডিং থেকে দূরে থাকি তাই আমার কোনো গল্প অন্তত স্যাড এন্ডিং থেকে দূরে থাকবে সব সময়ে।। আসলেই কালকে স্যাড এন্ডিং নিয়েই মাথায় ঘুরছিল তাই আজকে জিজ্ঞেস করলাম আপনাদের কে কিন্তু আপনারা পুরো থ্রেড এর গোডাউন পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ভাবা যায়।)

#হ্যাপি_রিডিং ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here