তোর মনের অরন্যে পর্ব-২২

0
678

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২২.
চৌধুরী ম্যানসনের গেটের ভিতরে এসে দাঁড়ায় তিনটে বাইক। সোহা একবার হেলমেট এর কাঁচ খুলে সামনে থাকা নেম প্লেট টা দেখে নেয় যেখানেই লেখা চৌধুরী ম্যানসন। একে একে সবাই নেমে যায় বাইক থেকে। সোহা চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে হেলমেট খুলে বাইক থেকে নেমে পড়ে। চোখ ঘুরিয়ে একবার চারদিকে দেখে নেয়। উম না ছোটো খাটো একটা প্রসাদ বলা যেতে পারে।

-“কিরে আয় ভিতরে যাবি না নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি? অ্যাস বলে ওঠে।

-” উম এই ফার্স্ট এলাম তোর বাড়িতে। সানি বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ হ্যাঁ আগেই থেকে শ্বশুর বাড়ি ঘুরে নেওয়া ভালো। আকাশ ফিচেল হেসে বলে ওঠে।

-” উম মন্দ কথা বলিস নি। বিয়ের আগে শ্বশুর বাড়ি ঘোরা কয় জনের সৌভাগ্য হয় বলতো। সানি হেসে বলে ওঠে।

-” উম হুম আমার মনে হচ্ছে এটা শুধু তোর শ্বশুর বাড়ি নয় সাথে আরেকজনের ও হতে পারে। নীহার চোরা চোখে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-” এই তোরা তোদের রেডিও অফ করে ভিতরে যাবি নাকি আমি তোদের ফেলে চলে যাব? অ্যাস খানিকটা রাগের ভান করে বলে ওঠে।

-“আরে জান এত রাগলে হয় চলো চলো আগের থেকে শ্বশুর শাশুড়ি কে একটু দেখে নেই। সানি বলে ওঠে।

-“বাই দ্য ওয়ে আকাশ তুই কবে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছিস আই মিন নীহার তুই কবে শ্বশুর বাড়ি যাবি আর আকাশ কে তার শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যাবি? সানি ভিতরে যেতে যেতে পিছন ঘুরে বলে ওঠে।

-“এই তোদের শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার গল্প হলে আমরা কি ভিতরে যেতে পারি? সোহা সবার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-” ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই এখন আমরা তোর আর তোর শ্বশুর বাড়ি টা আগে ঘুরে নেই তারপরে আমারটা যাওয়া যাবে ক্ষণ। আকাশ ফিচেল হেসে বলে ওঠে।

আকাশ নীহার আর সানি অ্যাস একে অপর কে ভালোবাসে। কিন্তু সেটা তাদের কে দেখে বোঝা যাবে না। তাদের এক সঙ্গে দেখলেই আগে সবাই এটা ভেবে বসবে ওরা বেস্ট ফ্রেন্ড। ওদের মত বন্ধুত্বের মিল আর কোথাও নেই। ওরা যখন একে অপরের সাথে প্রথম ট্রেনিং গ্রাউন্ডে পরিচিত হয়েছিলো তখন কেউ কাউকে চিনত না। তারপরেই এক সাথে থাকতে থাকতে একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে এই পাঁচ জন। সানি অ্যাস বন্ধুত্বের গন্ডি পেরিয়ে একে অপরের আরো অনেক কাছে চলে এসেছে। বন্ধুত্বের বাঁধন থেকে তারা ভালোবাসা বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে ঠিক তাদের মত আকাশ নীহার ও একে অন্য কে ভালোবাসে। তবে তাদের সবার আগে তারা সেই আগের মত বেস্ট ফ্রেন্ড তাদের পঞ্চঁমূর্তি আছে। আকাশ নীহার সানি সবাই ব্যাঙ্গালোর থেকে শুধু মাত্র সোহাই দিল্লী থেকে। ট্রেনিং গ্রাউন্ডে থেকেই তাদের পরিচয় তাদের একে অপরের সম্বন্ধে জানা। তারা একই শহরের হলেও তাঁরা ট্রেনিং গ্রাউন্ডে এসে জানতে পেরেছে শুধু তাইনা তারা সবাই একে অপরের পরিবারের সাথে যুক্ত কিন্তু তারা এটা আগে জানতো না আর চিনতো একে অপর কে। তাদের এই পাঁচ মূর্তির মধ্যে শুধু মাত্র সোহা হিন্দু পরিবার থেকে। আর তাছাড়া আকাশ সানি নীহার অ্যাস সবাই মুসলিম। তাদের মধ্যে ধর্মের পার্থক্য থাকলেও তাদের মধ্যে মনের মিল এর কোনো পার্থক্য নেই। এক সাথে থাকা খাওয়া একে অপরের খাইয়ে দেওয়ার মধ্যে কোনো বাধা নেই। এর আগে কখনো সোহা তার কোনো বন্ধুর বাড়িতে যায়নি। বলা ভালো তাদের সময় হয়ে ওঠেনি। তারা এন.এস.জি তে জয়েন করার তারা পরিবারের সাথে দেখা করার মত পর্যাপ্ত টাইম পায়নি। একটা কেস শেষ হওয়ার সাথে সাথে তারা আরো একটা কেস এর সাথে জড়িয়ে যেত। তাই তারা সবাই বেশির সময়ে এক কি দুই দিন যা সময় পেতো সবাই সোহার বাড়িয়ে কাটিয়ে দিত। আর যদি বেশি সময় আসতো তখন তারা বাড়িতে চলে যেতো। আর সোহা চলে যেতো লন্ডন। তাই এর আগে কারোর বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাইনি সোহা।

————

সোহা আকাশ সানি নীহার অ্যাস পাঁচ জন একত্রে নিজেদের মধ্যে হাসি মজা করতে করতে বাড়ির ভিতরে ঢোকে। তারা এতটাই নিজেদের কথার মধ্যে মশগুল হয়ে আছে যে ভিতরে কে আছে না আছে সেদিকে কারোর খেয়াল নেই। এখন আকাশ আর নীহার মিলে সোহা সানি আর অ্যাস কে খেপিয়ে যাচ্ছে যেহেতু বাড়িটা আমন আর অ্যাস এর । এই এক মাস সোহা আমন এর সব খোঁজ খবর অ্যাস এর থেকে নিয়েছে তাই তারা বুঝতে পেরেছে সোহা ও আমন এর প্রতি অনুভূতি অনুভব করে কারণ তারা এর আগে কখনো সোহা কারোর ব্যাপার নিয়ে এত উত্তেজিত হতে দেখেনি। অ্যাস আমন এর সব খোঁজ বাড়িতে ফোন করে নিত কারণ যেহেতু অ্যাস সোহার সাথে থাকে তাই আমন তার ব্যাপারে এত খোঁজ নিতে দেখলে একটু হলেও বুঝতে পারতো। ওদের সবার কথার ঘোর কেটে যায় কারোর ডাকে। সবাই নিজেদের কথা বন্ধ করে সামনে তাকায়।

-“আয়ু মা তোরা ওখানে কেনো দাঁড়িয়ে আছিস ভিতরে আয়। আভা চৌধুরী বলে ওঠেন।

-” এই তো মম আসছি ।অ্যাস বলে ওঠে।

বাকিদের দিকে ইশারা করে এগিয়ে যায় লিভিং রুমের দিকে। সোহা আকাশ সানি নীহার এর দিকে তাকিয়ে ইশারা করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। সোহা সামনে তাকিয়ে দেখে অ্যাস এর মম এর সাথে আরো দুই জন ব্যাক্তি বসে আছে। অ্যাস এর মা কে সে চেনে ।এর আগেও দেখেছে কথাও বলেছে তবে সামনে থেকে এই প্রথম দেখছে সোহা। পাশের দিকে তাকায় দেখে মধ্য বয়স্ক একজন ব্যাক্তি বসে আছে। সোহা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে লোকটি কে।

-“আরে সোহা মা কেমন আছো? ফাইনালি তোমাদের সময় হলো তাহলে আমাদের বাড়িতে আসার। আভা চৌধুরী বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ আন্টি আমরা চলেই এলাম ভাবলাম একবার ফ্রেন্ড এর শ্বশুর বাড়ি টা দেখে যাই।আকাশ হেসে বলে ওঠে।

-“বাহ তা তুই কবে যাচ্ছিস শ্বশুর বাড়ি? আভা চৌধুরী আকাশ কে বলে ওঠে।

আভা চৌধুরী আকাশ সানি অ্যাস নীহার এদের ব্যাপারটা জানেন। তাই তিনিও ওদের সাথে মজা করতে শুরু করেন। আভা চৌধুরী সোহার দিকে তাকিয়ে দেখেন সোহা তীক্ষ্ণ ভাবে তার পাশে বসা লোকটি কে দেখে যাচ্ছে। তাই তিনি সোহা কে টেনে নিয়ে তার পাশে বসিয়ে নেয়।

-“মম এনারা কারা? এনাদের তো ঠিক চিনলাম না? অ্যাস বলে ওঠে।

-” আয়ু মা ইনি হলেন সাজিদ মল্লিক তোর সাজিদ আংকেল । ছোটো বেলায় ওদের বাড়িতে কতো গেছিলো তোর মনে নেই। আভা চৌধুরী বলে ওঠে।

-“মনে থাকবে কি করে ভাবি। আয়ু মা তখন কত ছোটো ছিল আর এখন তো বড় হয়ে গেছে। আমি নিজেই তো ওকে দেখে চিনতে পারছি না। সাজিদ মল্লিক বলে ওঠেন।

-“হ্যাঁ তা ঠিক বলেছেন দাদা। আয়ু তো বাইরে থাকে ঠিকমত বাড়ি আসতে পারে না তাই দেখা হয়নি। আভা চৌধুরী হেসে বলে ওঠেন।

-“আয়ু মা এই হলো মণিকা মল্লিক তোমার সাজিদ আংকেল এর মেয়ে। আভা চৌধুরী মণিকা কে দেখিয়ে বলে ওঠেন।

-“হাই আয়ু। মণিকা গদগদ হয়ে হেসে বলে ওঠে।

-” আয়েশা। আয়েশা চৌধুরী। আয়ু টা শুধু মাত্র আমার ফ্যামিলি মেম্বারাই ডাকে । তাছাড়া বাইরের কারোর থেকে আমি এই ডাক ঠিক একটা পছন্দ করিনা প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড। অ্যাস তাচ্ছিল্য করে বলে ওঠে।

-“ইটস ওকে আয়েশা আমি কিছু মনে করিনি। তাছাড়া আর কয়েকদিন পর আমিও তোমার ফ্যামিলির একজন হয়ে যাব তখন না হয় আমি আয়ু বলে ডাকলাম। মণিকা নিজের অপমান সহ্য করে নিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে অ্যাস কে হাতে রাখার জন্য।

-” ওহ রিয়েলি ফ্যামিলি মেম্বার হতে যাচ্ছ চৌধুরী পরিবারের তা কেমন করে একটু শুনি। অ্যাস বিদ্রুপ হেসে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” আমন মানে তোমার ভাই এর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। তো সেই ক্ষেত্রে আমি এই ফ্যামিলি এর একজন হলাম তাইনা। মণিকা নিজের ঔদ্ধত্য বজায় রেখে বলে ওঠে।

-” আরে বাহ ভাই এর সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে আর এটা আমিই জানি না ইন্টারেস্টিং না। অ্যাস আগের মতই বিদ্রুপ হেসে বলে ওঠে।

-” তুমি তো বাইরে থাকো তাই তুমি জানবে কি করে। এখন এসেছ তাই জানতে পারছ। মণিকা দাম্ভিকতার সাথে বলে ওঠে।

মণিকার কথা শুনে আকাশ সানি নীহার সবাই একসাথে সোহার মুখের দিকে তাকায়। দেখে সোহার মুখটা কেমন কঠিন হয়ে আছে আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সাজিদ মল্লিক এর উপর আছে। তারা সোহা কে দেখে নিয়েই একে অপরের দিকে ইশারা করে। মণিকা অ্যাস এর সাথে আরো চারজন কে দেখে।

-“আচ্ছা আয়েশা এরা কারা? মণিকা বলে ওঠে।

-” হুম আমিও তো ঠিক চিনতে পারলাম না তোমাদের কারা তোমরা? সাজিদ মল্লিক বলে ওঠেন।

-” আরে ওরা আমার সাথে এসেছে মানে নিশ্চয়ই আমারই কেউ হবে তাইনা। অ্যাস বলে ওঠেন।

আভা চৌধুরী নিজের মেয়ের দিকে দেখে কেমন রেগে যাচ্ছে তাই তিনি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বলে ওঠেন।

-” ওরা হলো আয়ুর ফ্রেন্ড। ও হলো আকাশ, সানি, নীহার আর এই হলো সোহা। আভা চৌধুরী সবাই কে দেখিয়ে বলে ওঠেন।

সাজিদ সোহা কে দেখেই ভূত দেখার মত চমকে গেছে। তার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে। সে একভাবে সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ তিনি সোহা লক্ষ করেননি। সোহারা যখন ভিতরে এসে দাঁড়ায় তখন তিনি মণিকা এর সাথে কথা বলছিলেন। আর তারপর আভা চৌধুরী তার পাশে বসিয়ে নিতে কিছুটা আড়াল হয়ে গেছিলো তাই দেখেনি। কিন্তু এখন পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময়ে তার চোখ গিয়ে সোহার উপরে পড়ে। আর সেই সাথে তিনি চমকে ওঠেন। তার বিশ্বাস হচ্ছে না যে তিনি ঠিক দেখছেন নাকি ভুল। এটা তো কোনো মতেই সম্ভব হতে পারে না। কারণ তিনি নিজে ওর শেষ দেখছেন তাহলে কি করে সম্ভব উহু হতেই পারে না কোনো ভাবে। সাজিদ মল্লিক নিজেকে কোনো মতে সামলে নেয়। খানিকটা কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-“কি নাম বললে? না আসলে আমি ঠিক ভাবে শুনতে পাইনি।

-” সোহা । সোহা জৈন । সোহা বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।

সাজিদ মল্লিক নামটা শুনে ও কিছুটা চমকে ওঠে। সেই একই মুখ এই একই নামের টাইটেল এটা কি সত্যি নাকি কোনো কো-ইন্সিডেন্ট এটা তো কোনো ভাবেই সম্ভব হতে পারে না। না তিনি ভুল করতে পারেন সে কিছুতেই বেঁচে থাকতে পারে না। কোনো মতেই না তিনিই একটু বেশি ভাবছেন হয়তো। সাজিদ মল্লিক নিজের মনে মনে বলে ওঠে।

-” আপনি ঠিক আছেন মিস্টার মল্লিক? এই এসির মধ্যে বসেও আপনি ঘেঁমে যাচ্ছেন শরীর খারাপ লাগছে? সোহা বাঁকা হেসে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” না না আমি একদম ঠিক আছি। সাজিদ খানিকটা হেসে বলে ওঠে।

সোহা সাজিদ মল্লিক কে এতক্ষণ লক্ষ করছিলো তার তাকে দেখে ভয় পেয়ে যাওয়া কন্ঠ কেঁপে যাওয়া সব কিছুই লক্ষ করেছে সে। বলা ভালো সে এখানে এসে থেকেই সাজিদ মল্লিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ করে যাচ্ছিলো। এতক্ষণ তার মুখ কঠিন হয়ে থাকলেও এখন তার ঠোঁটের কোণে ফুটে আছে বাঁকা হাসি।

-“সোহা জৈন? তার মানে তোমার রিলিজিওন আলাদা? মণিকা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” হ্যাঁ আমার পরিবার হিন্দু। সোহা গর্ভের সাথে বলে ওঠে।

-“আয়েশা আন্টির কাছে থেকে শুনেছিলাম তুমি বেশির ভাগ সময়েই এই মেয়ের বাড়িতে থাকতে। ওরা হিন্দু এটা জেনেও ওদের বাড়িতে থাকতে ওদের বাড়িতে পুজো হয় একই সাথে খেতে? মণিকা ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-“কেনো ওর পরিবার হিন্দু বলে কি ওকে ঘৃণা করতে হবে। নাকি ওদের বাড়ি থাকা যাবেনা খাওয়া যাবে না। এমনটা কি কোথাও লেখা আছে? এমন কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে নাকি মিস মণিকা? আমন বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে বলে ওঠে।

আমন এর গলার আওয়াজ পেয়েই সবাই পিছন ঘুরে তাকায়। আর মণিকা চমকে ওঠে। আমন এসে তার মায়ের আরেক পাশে বসে যায়।

-“না না আমন আমি সেটা কি বললাম আমি তো শুধু জিজ্ঞেস করলাম। মণিকা আমন এর সামনে ভালো হতে বলে ওঠে।

-” কিন্তু তোমার কথার মধ্যে সেটা প্রকাশ পায়নি। তোমার কথায় স্পষ্ট অপমান এর চাপ ফুটে ছিল। অ্যাস তীক্ষ্ণ গলায় বলে ওঠে।

-” মিস মণিকা আমি যতদূর জানি ইসলাম ধর্মে এটা বলা হয়নি যে অন্য কোনো ধর্ম কে অপমান করা বা তাদের জোর করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করানোর কথা। মানুষ কে ভালোবাসতে বলা হয়েছে। আর সব কিছুর উর্ধে মানুষ কে ভালোবাসতে বলা হয়েছে মনে হচ্ছে। হ্যাঁ তাদের পুজোর জিনিস সামগ্রী নাও খেতে পারেন তার মানে এই নয় শুদ্ধ খাবার ও খেতে পারবেন না। আপনি তাদের বলতে পারেন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে কিন্তু তাদের অপমান বা জোর করতে পারেন না। আরেক টা কথা কি জানেন মিস মণিকা আপনি বাইরে রেস্টুরেন্টে খান সেটা যদি ও কোনও মুসলিম রেস্টুরেন্ট হলেও সেখানকার স্টাফ মুসলিম নাও হতে পারে সেখানকার রাধুনিরা ও হিন্দু হতে পারে। আর আপনারা অসুস্থ হলে যখন রক্তের প্রয়োজন পড়ে তখন কি এটা দেখেন যে সে হিন্দু কিনা মুসলিম তারপরেই কি রক্ত নেন। বাড়িতে যে ডেলিভারি বয় খাবার দিতে আসে তারা হিন্দু কি মুসলিম এটা দেখার পর কি খাবার নেন নাকি। পুজোর সময়ে যে আপনারা নিজেও যখন তাদের উৎসবে মেতে ওঠেন তখন কি এটা ভুলে যান যে এটা হিন্দুদের প্রোগ্রাম। আর এমন তো নয় যে আপনার কোনো হিন্দু বন্ধু বান্ধব নেই। সোহা মণিকার দিকে তাকিয়ে কঠিন ভাবে বলে ওঠে।

সোহার বলা কথা গুলো শুনে মণিকা একদম চুপ হয়ে গেছে। মনে মনে রাগে ফুসছে তাকে এই ভাবে সবার সামনে বিশেষ করে আমন এর সামনে অপমান করার জন্য। আর আমন ও ওই মেয়ের হয়ে কিনা কথা বললো সেটা কিছুতেই মণিকা মেনে নিতে পারছে না। নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বসে আছে। আর সাজিদ মল্লিক সেই প্রথম থেকে এখনও সোহা কে পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে। তার এখন আসে পাশে কি হচ্ছে সেটা নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই সে তো শুধু সোহা কে দেখে যাচ্ছে ।

সোহার বলা কথা গুলো শুনে আমন এক দৃষ্টিতে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে। আর সোহা আমন এর দৃষ্টি বুঝতে পেরে আমন এর দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকায়। আর আমন সোহার এই দৃষ্টি দেখে কনফিউজড হয়ে যায় সে বুঝতে পারেনা যে সোহা কিসের জন্য তার উপর রেগে আছে কেনো তাকে কঠিন দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে । আর আকাশ সানি নীহার অ্যাস সবাই মিট মিট করে হাসছে। একদিকে মণিকা মুখ চুন করে বসে আছে আর আমন কিছুটা ভীতু হয়ে তাকিয়ে আছে সোহার দিকে।

চলবে…… ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here