তোর মনের অরন্যে পর্ব-২০

0
683

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২০.
হেড কোয়ার্টারে হাই কমিশন এর সামনে বসে আছে সোহা । তার সামনেই রাখা আছে একটা ফাইল কিন্তু সে এখনও খুলে দেখেনি । তার সামনেই পুরো কেস নিয়ে কথা বলে যাচ্ছে অফিসার কর্ন। সোহা সব টা শুনে নেওয়ার পর ফাইল টা হাতে তুলে নেয়। সে এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে পুরোটা দেখতে থাকে। ফাইল টা দেখার পরই তার মুখে ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে একটা বাঁকা হাসি। তার চোখ দুটো ও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সোহার সামনে দাঁড়ানো কর্ন অবাক হয়ে সোহার মুখের পরিবর্তন গুলো লক্ষ করছে।

-“মিস লেডি ডন আপনি কি সব কিছু বুঝতে পেরেছেন? যদিও এই প্রশ্ন টা আমার করা ভুল হয়েছে জানি। মুচকি হেসে বলে ওঠে সুদীপ্ত ভৌমিক।

-” স্যার আমি কি এখন উঠতে পারি। সোহা পুরো প্রসঙ্গ পাল্টে বলে ওঠে।

সোহার কথা শুনেই সুদীপ্ত ভৌমিক ও কর্ন দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। কারণ তাদের ভালো করেই সোহার এমন ব্যবহার জানা আছে সে এই নিয়ে কোনো কথা বলবে না।

-” ওকে । যেতে পারো তুমি। সুদীপ্ত ভৌমিক বলে ওঠে।

-” ওহ হ্যাঁ স্যার আমার পার্টনার গুলো কেও আমার চায় সেই ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হয়। সোহা ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে।

-“পেয়ে যাবে ।যদিও এটা আমাকে না বলে তুমি বললেও কাজ হয়ে যেতো যাইহোক সময়ে মত পেয়ে যাবে। সুদীপ্ত ভৌমিক বলে ওঠে।

সোহা আর কোনো কথা বলে না টেবিলের উপর থেকে ফাইল তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর এদিকে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে সুদীপ্ত ভৌমিক ও কর্ন। কর্ন শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে, এ ছাড়া তার আর কিছু করার নেই। সে মুখে কোনো দিন ও বলতে পারবে না সোহা কে যে সে তাকে পছন্দ করে, ভালোবাসে তাকে। এই কথাটা তার মনেই থেকে যেতে পারে।

—————

সোহা হসপিটাল এর টপ ফ্লোর এর বাম দিকের কোনার রুম থেকে বেরিয়ে আসে। তার চোখ মুখ একদম লাল হয়ে আছে। কোনো দিকে না তাকিয়ে সোহা সোজা নিচে চলে আসে তার মাম্মার কেবিনে ঢুকে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। কেবিনে শ্রেতা দেবী পেশেন্ট দেখেছিলেন আর তার মাঝেই সোহা ভিতরে ঢুকে গেছে কোনো দিকে না তাকিয়ে। পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে বসে পড়ে সোহা। শ্রেতা দেবী কোনো কথা না বলে একবার সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে নিয়ে ওই ভাবেই তার পেশেন্ট দেখতে থাকে। রুমে যারা যারা আসছে একবার করে ডক্টর কে দেখে আর তার পিছনে বসা মেয়ে টা কেও দেখে। যদি ও সোহার মুখ দেখা যায় না চুল পড়ে ঢেকে আছে। প্রায় আধ ঘণ্টা পর পেশেন্ট দেখা শেষ হতে শ্রেতা এক হাত দিয়ে সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তার মুখে ছেয়ে আছে একটা প্রশান্তির হাসি। তাঁর জানা আছে সোহার মন খারাপ হলে ঠিক এই ভাবেই তার কাছে এসে বসে থাকে তাকে জড়িয়ে রেখে একদম বাচ্চাদের মত করে। সেই ছোটো থেকেই সোহা এমন কোনো কারণে মন খারাপ থাকলে সেইদিন আর তাঁকে ছাড়েন না সোহা সারাদিন এই ভাবে মায়ের সাথে চিপকে থাকে সোহা। ছোটো থাকতে শ্রেতা দেবী কে প্রায় সময়ে সোহা কে নিয়ে তাকে হসপিটাল করতে হতো আর সোহা একদম চুপ চাপ মায়ের সাথে থাকতো। আর বড় হয়েও কোনো পরিবর্তন আসেনি সোহার মধ্যেই এখনও একই রকম আছে। আর যখন কেস এর জন্য বাইরে থাকে তখনও মন খারাপ হলেই ফোন করে ভিডিও কলে এক ভাবে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে। ভেবেই মুখে হাসির রেখা আরো একটু বেড়ে যায়।

-“ডক্টর জৈন ভিতরে আসতে পারি?

-” আরে মিস্টার বোস আসুন আসুন ভিতরে আসুন। শ্রেতা দেবী তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠেন।

ডক্টর বোস ভিতরে ঢুকে দেখতে পান শ্রেতা কে পিছন থেকে জড়িয়ে কেউ বসে আছেন। এটা দেখে তিনি ও মুচকি হাসে। তিনি ভালো করেই জানে এটা কে হতে পারে। তিনি বসে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সোহার দিকে। ছোটো বেলা থেকে তিনি এই মেয়ে কে দেখে আসছে শুধু তাই নয় তার হাতেই এই মেয়ের জন্ম হয়েছে। শুধু মাঝের কয়েক টা বছর ছাড়া দেখে আসছে তিনি সোহা কে।গ্রাজুয়েশন কম্পিলিট করার পর সোহা লন্ডন ছেড়ে ইন্ডিয়া চলে আসে সেই সাথে শ্রেতা দেবী ও চলে আসেন।

-“কি লিটল এঞ্জেল কেমন আছেন আপনি? মিস্টার বোস বলে ওঠেন?

সোহা রুমের মধ্যে চেনা জানা কারোর কন্ঠের আওয়াজ পেয়েই মাথা তুলে তাকায়। সামনে বসে থাকা বোস আংকেল কে দেখে তার মুখে হাসি ফোটে।

-” আরে আংকেল আপনি এখানে? কেমন আছেন? আর কবে এলেন ইন্ডিয়া? সোহা একসাথে প্রশ্ন করে ওঠে।

-” আরে আসতে আসতে এত প্রশ্ন একটা একটা করে দেই। আমি এসেছি একমাস হচ্ছে। আর দ্বিতীয় আমি ভালো আছি আর এখন তো আরো ভালো হয়ে গেছি আপনাকে দেখে লিটল এঞ্জেল। মিস্টার বোস বলে ওঠেন।

-” ওহ আমি তো লন্ডন গিয়েছিলাম এই মাসে। আর ওখানে ও খুঁজেছি আপনাকে এই জন্য পাইনি। সোহা হেসে বলে ওঠে।

-“সেই একই রয়ে গেলে এঞ্জেল,সেই ছোট্ট বেলার মত। তুমি জানো তুমি যেদিন প্রথম পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছিলে আমার এই দু’টো হাতের মধ্যে ছিলে। পৃথিবীতে এসেই একটু ও কান্না না করে বড় বড় করে তাকিয়ে ছিলে ।তোমার মায়ের হাতে যখন তোমাকে দিয়েছিলো তোমার মুখে তখন হাসি দেখা গেছিলো। মিস্টার বোস বলে ওঠে।

সোহা বোস আংকেল এর কথা শুনে হেসে ফেলে তার মাম্মা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আর শ্রেতা দেবী ও সোহা কে ধরে রাখে। সোহার জন্ম হয়েছিল লন্ডনে সেখানেই তার বেড়ে ওটা। শ্রেতাদেবীর মনে পড়ে সেই দিনের কথা যেদিন প্রথম তিনি সোহা কে কোলে নিয়েছিলেন ছোটো একটা পুতুল এর মত তার কোলে এসে হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। নার্স এসে কাপড় জড়ানো এক পুতুল তার হাতে তুলে দিয়েছিলো সেদিনই তিনি দ্বিতীয়বার মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করে। আর ডক্টর বোস ছিলেন শ্রেতা দেবীর কলিগ তারা লন্ডনে একই হসপিটালে কাজ করতেন সেই সূত্রে তিনি সোহার খুব কাছের একজন। ছোটো বেলায় মায়ের সাথে হসপিটাল গিয়ে চারিদিকে ঘুরে বেড়াত গুটি গুটি পায়ে।

সোহা শ্রেতা দেবী আর মিস্টার বোস কিছুক্ষণ নিজেদের মধ্যে কথা বলে বেরিয়ে যান হসপিটাল থেকে। সোহা আর শ্রেতা দেবী কিছুক্ষণ একসাথে মা মেয়ে ঘুরে বেরিয়ে একসাথে বাড়ি ফেরে, আজকেই তার মায়ের সাথে ঘুরে নিচ্ছে কারণ কালকে আবার তাকে নতুন কেস এর জন্য বাড়ি ছাড়তে হবে আবার কবে দেখা হবে কবে বাড়ি ফিরবে জানা নেই তার যতো ক্ষণ না কেস শেষ হয়ে সে তো ফিরতে পারবে না তাই মা মেয়ে একসাথে সময় কাটায় নিজেদের মতো করে।

————-

ব্যাঙ্গালোর চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির সামনে একটা গাড়ি এসে থামে। গাড়ির ভিতরে বসে এক পলক উপরে থাকা সাইন বোর্ড এর দিকে তাকায়। যেখানে বড় বড় করে লেখা আছে চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিস। এটা পড়ে নিয়ে মুখে ফুটে ওঠে বাঁকা হাসি। চোখে সানগ্লাস টা লাগিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা এগিয়ে যায় অফিসের ভিতরে দিকে। কোনো দিকে না তাকিয়ে লিফ্ট থেকে বেরিয়ে টপ ফ্লোরে সোজা ঢুকে যায়। ওখানে থাকা সমস্ত স্টাফ এক নজরে তাকিয়ে দেখে তাদের সামনে থেকে হেঁটে যাওয়া রমনী কে।

-“হে ইউ কে আপনি? আর ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন ওটা আমন এর স্যার এর কেবিন। নিশি হঠাৎ রাস্তা আটকে বলে ওঠে।

-” টেল মি ফার্স্ট হু আর ইউ? একবার ভালো করে নিশি কে দেখে নিয়েই সেই অজানা রমণী বলে ওঠে।

-“আমি আমন স্যার এ পি.এ। বেশ দাম্ভিকতার সাথে বলে ওঠে নিশি।

-” ডিরেক্টর অফ জৈন ইন্ডাস্ট্রিস। এনি মোর কোয়েশ্চেন?

নিশি না বলে মাথা নাড়তে আবারো সামনের দিকে এগিয়ে যায়। কেবিনের বাইরে থেকে একবার ভিতরের দিকে তাকায়। না কিছুই দেখা যাচ্ছে না বাইরে থেকে ভিতরে। কোনো নক করা ছাড়াই ভিতরে ঢুকে যায়। এক পলক সামনে তাকিয়ে দেখে আমন ল্যাপটপে মগ্ন হয়ে আছে। ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে দরজার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দরজা লক করে দেয়।

এদিকে দরজা লক এর আওয়াজ পেয়ে আমন মাথা তুলে সামনে তাকায় দেখে একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেয়েটা আমন এর দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। সাথে সাথে আমন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। তার মুখে অবাক চমক সব কিছুর এক্সপ্রেশন একসাথে দেখা যাচ্ছে।

চলবে…… ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

কে হতে পারে এই মেয়ে যাকে দেখেই আমন অবাক প্লাস চমকে উঠলো অবশ্যই আপনাদের মতামত জানান ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here