#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১৯.
আরহান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছবি দুটোর দিকে। এতটা মিল কিভাবে থাকতে পারে। ছবি দু’টো পাশাপাশি রেখে সে সোহার মুখটা ছবির অ্যালবামে থাকা ছবির সাথে মেলাতে থাকে। এটা কি নিছক কোনো সাদৃশ্য নাকি কোনো যোগ সূত্র আছে? কিন্তু যোগ সূত্র টায় বা থাকবে কি করে। আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগে হারিয়ে ফেলেছে তার এই আত্মা কে তাহলে সোহা কোথায় থেকে আসবে। আরহান এর মাথা গুলিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু সম্ভব না হলেও সেই এক মুখ সেই এক চোখ সব কিছুই একই কি করে হতে পারে? আচ্ছা সে শুনে ছিল পৃথিবীতে একই দেখতে মানুষ সাতরকম থাকে তাদের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য পাওয়া যায় তাহলে কি এই ক্ষেত্রেও একই ঘটনা হবে? আরহান এর মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে তার মাথায় আরো একটা জিনিস স্ট্রাইক করে জৈন টাইটেল। এই জৈন টাইটেল সে শুনে ছিল তার আত্মার সাথে জড়িত ছিল কিন্তু সে পুরোপুরি কিছু জানে না।
ভাবনার মাঝে দরজায় নক হতে আরহান চমকে যায়। সে তাড়াতাড়ি উঠে অ্যালবাম টা কাবার্ডে রেখে লক করে দেয়। তার নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে দরজা খুলে দেয়। দেখে সামনেই হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে আক্রম তার আত্মার আরেক অংশ। আক্রম কে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরহান এর মুখেও হাসি ফোটে।
-“ভাই দরজা বন্ধ করে রুমে কি করছিলে? আক্রম ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে ওঠে।
-” সেই রকম কিছু না আয় বস। আরহান প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে বলে ওঠে।
-“ভাই মণি দি ভীষণ ডেসপারেট হয়ে উঠছে মম ও সামলাতে পারছে না। তোমার কি আমন দা এর সাথে কথা হয়েছে?
-” না আমন এর সাথে কোনো কথা হয়নি। তবে বাপি কি বলছে মণিকা কে নিয়ে? আরহান প্রশ্ন করে ওঠে।
-” বাপি কি বলবে? তুমি তো জানো বাপি মণি দি কে কত ভালোবাসে মণি দি এর কষ্ট দেখতে পারেন না তাই বাপি ও চাইছে মণি দির সাথে আমন দা এর সম্পর্কের একটা পরিনতি দিতে।আক্রম বলে ওঠে।
-” ওহ আচ্ছা । আরহান গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে ওঠে।
-“আচ্ছা ভাই আমাদের ইউনিভার্সিটি তে নাকি কয়েকদিন এর জন্য একটা নতুন প্রফেসর ম্যাডাম এসেছিল? আর রনি কে ও তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সাথে প্রফেসর আকেশ আর মন্ত্রী গৌতম রাঠোর ও। আমি তো এখানে ছিলাম না তাই কিছুই জানতে পারিনি তুমি কি কিছু জানো ভাই? আক্রম বলে ওঠে।
-” আকেশ আর গৌতম কে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তারা অনেক বেআইনি কাজ করেছে সেই জন্য। আর ইউনিভার্সিটি একজন ম্যাডাম এসেছিলেন তবে সেটা কিছু কাজের জন্য। কাজ শেষ সেও চলে গেছে। আরহান সোহার বিষয় বেশি এড়িয়ে গিয়ে বলে ওঠে।
-” ওহ আচ্ছা ওই জন্য এখন ইউনিভার্সিটি পুরো শান্ত হয়ে আছে। আক্রম হেসে বলে ওঠে।
-” তুই কিছু বলতে এসেছিলিস আক্কি? আরহান আক্রম এর মাথার চুল গুলো ঘেঁটে দিয়ে বলে ওঠে।
-“ওহ হ্যাঁ বলতে তো এসেছিলাম মম তাড়াতাড়ি নিচে ডাকছে এসো। বলেই বেরিয়ে যায় আক্রম।
আক্রম বেরিয়ে যেতেই আরহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এই বাড়িতে থাকতে তার যেনো দিন দিন বিরক্ত লাগে। সারাক্ষণ বাড়িতে মণিকা এর চিৎকার তার ভালো লাগে না কিন্তু কি করবে শুধু মাত্র এখানে আছে কিছু স্মৃতি আর আক্রম এর জন্য। আক্রম কে ছেড়ে সে কিছুই ভাবতে পারে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
—————
চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিতে গটগটিয়ে ভিতরে ঢুকে আসে মণিকা। তাকে কেউ বাধা দেই না। সবাই একবার করে দেখে নিয়ে চোখ ফিরিয়ে আবার যে যার কাজে মন দেয়। মণিকা হনহন করে ভিতরে ঢুকে আসে তার ইচ্ছা করে সব কিছু ভেঙে গুটিয়ে দিতে। কয়েকদিন থেকে আমন এর কোনো খোঁজ পাচ্ছে না সে। কেমন একটা নিজেকে গুম করে নিয়েছে হঠাৎ করেই। এমনিতেও তার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই যদিও বা কারোর মারফত খোঁজ নিত সেও বন্ধ হয়ে গেছে। আমন এখন করে খুব দরকার ছাড়া অফিসে আসে না। না ঠিক মতো ইউনিভার্সিটি তে যায় আর না বাড়িতে থাকে। সব জায়গায় খোঁজ নেওয়া হয়ে গেছে মণিকার এই একমাস ধরে আমন কেমন একটা চেঞ্জ হয়ে গেছে। অফিসের প্রত্যেকটা খবর আমন এর পি এ নিশি এর কাছে থেকে পায়। আর বাড়ির খবর দেওয়ার জন্য তো আমন এর মা আন্টি আছে। কিন্তু এই এক মাসে ঠিক মতো আমন এর খবর পেয়ে ওঠেনি। তাই আজ নিজেই সোজা অফিসে চলে এসেছে। আমন এর পি.এ নিশি এর রুমের ভিতরে ঢুকেই ডেকে ওঠে।
-“নিশি
-” ম্যাডাম মণিকা? আপনি এখানে? নিশি উঠে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে।
-“আমন আজ অফিসে এসেছে? মণিকা জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-” ইয়েস ম্যাডাম মণিকা কিছুক্ষণ আগেই অফিসে এসেছে। নিশি বলে ওঠে।
-“ওকে আমি ওর রুমে যাচ্ছি। এখন যেনো কেউ রুমে না আসে এটা তুমি দেখবে ওকে। মণিকা বলে ওঠে।
-“ইয়েস ম্যাডাম মণিকা । নিশি বলে ওঠে।
মণিকা নিশি এর রুম থেকে বেরিয়ে সোজা আমন এর রুমের দিকে এগিয়ে যায়। কেবিনের বাইরে থেকে একবার দেখে নিয়ে কোনও রকম নক করা ছাড়াই ভিতরে ঢুকে যায়। আমন নিজের কাজে এতটাই মগ্ন ছিল যে সে খেয়াল করেনি কে এসেছে। সে ভেবেছে হয়তো নিশি এসেছে কোনো কিছুর আপডেট দিতে। হটাৎ করেই নিজের কাঁধে হাতের স্পর্শ পেতেই ল্যাপটপ থেকে মাথা তুলে তাকায়। সাথে সাথে তার দপ করে জ্বলে ওঠে। এক ঝটকা দিয়ে নিজের কাঁধের থেকে হাত টা সরিয়ে দেয়। আমন এর মনে হয় তার কাঁধে একটা নোংরা কীট ছুয়ে গেছে সেই ভাবেই হাত ঝাড়া দিয়ে দেয়। ক্ষুব্ধ চোখে তাকায় আমন মণিকা এর দিকে। মণিকা আমন এর তাকানো কে গুরুত্ব না দিয়েই আরো একটু কাছে সরে যায় আমন এর দিকে।
-“এতদিন কোথায় ছিলে তুমি আমন? তোমাকে ফোনে কেনো পাচ্ছিলাম। আন্টি কে জিজ্ঞেস করেও কোনও উত্তর পাইনি তুমি কোথায় গেছো? মণিকা জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-” হু আর ইউ? আমন কঠিন ভাবে জিজ্ঞেস করে।
-“মানে কি আমন? মণিকা থমকে গিয়েই বলে ওঠে।
-” আমি কখন কোথায় যাবো কি করব না করব সব কি তোমাকে বলে করতে হবে? কে তুমি আমাকে প্রশ্ন করার রাইট তুমি কোথায় থেকে পাও? আমি কি তোমার বন্ধু? তোমার বয়ফ্রেন্ড? না তো ।আমাদের শুধু ফ্যামিলি সম্পর্ক সেটাও আমার সাথে নয়। তোমার সাথে আমার বিজনেস রিলেটেড চেনা জানা আছে বলতে পারো এর বেশি কিছু না। তো এখন না আমি কোনো মিটিং এ আছি তাই তোমাকে জবাব দিহি করতে আমি বাধ্য নয়। আর হ্যাঁ কারোর রুমে ঢুকতে গেলে তার পারমিশন নিতে এই মিনিমাম সেন্স টুকু থাকা উচিত। আমন কাঠ কাঠ গলায় বলে ওঠে।
আমন এর কথা গুলো মণিকা এর গায়ে আগুন লাগানোর মত ছিল। মণিকা আগুন চোখে আমন এর দিকে তাকিয়ে আমন এর কথা গুলো হজম করার চেষ্টা করতে থাকে। আমন একবার মণিকা এর মুখের দিকে দেখে সে তার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে। আমন সে দিকে পাত্তা না দিয়েই বলে ওঠে।
-“আর কিছু বলার না থাকলে আসতে পারো। দরজা টা ওই দিকে। আমন দরজার দিকে ইশারা করে বলে ওঠে।
মণিকা একবার আমন এর দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে নিয়ে নিজের মনে মনে বলে ওঠে।
-” একবার তোমাকে নিজের করে নেই তার পরে দেখব তোমার এই অ্যাটিটিউড কোথায় থাকে, এই মণিকা মল্লিক কে অপমান করার মজা তখন বুঝবে তোমাকে আমি আমার করে নিয়ে আমার পেট বানিয়ে রাখবো।
মণিকা যেমন ভাবে এসেছিল ঠিক তেমন ভাবে বেরিয়ে যায় রুমে থেকে। মণিকা এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা নিশ্বাস ছাড়ে আমন। তার পরেই আনমনা হয়ে পড়ে আমন।
-“আর কতো অপেক্ষায় রাখবে ধানী লঙ্কা। তোমার অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে যে আমি নিঃশ্বেস হয়ে যাচ্ছি। আমন নিজের মনে বলে ওঠে।
চলবে….. ❣️
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।
গল্প নিয়ে নিজেদের আলোচনা সমালোচনা রিভিউ গ্রুপে জানাতে ভুলবেন না আপনাদের সমালোচনা রিভিউ এর অপেক্ষায় আমি।