#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১৬+১৭.
-“রিক এত সব ঘটনা ঘটে গেলো আর তুমি আমাকে একবারও জানানোর প্রয়োজন মনে করোনি। কোটি টাকার মালের ট্রাক বাজেয়াপ্ত হয়ে আছে। তার আগে রবিন এর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া তারপরও তুমি কি করে হালকা ভাবে নিলে বিষয়টা ওকে খোজ না করে ছেড়ে দিয়েছ আর তারপর এত বড় একটা ডিল আমাদের হাত ছাড়া হয়ে গেল সাথে আমাদের লোক গুলো কেও পুলিশের ধরে নিল সাথে এখন রনি কেও। আর সব কিছু হয়ে যাওয়ার পরও তুমি কিভাবে চুপ করে আছো? চিৎকার করে বলে ওঠে ব্যাক্তি টি।
-“বিগ বস আমি চুপ করে বসে নেই। রবিন এর খোঁজ চলছে সব জায়গায় দেখা হয়ে গেছে ওকে কোথাও পাওয়া যায়নি। আর আমাদের ট্রাক আর লোককে পুলিশ এর লোক ধরে নিয়ে গেছে সালা হারামজাদাদের এত টাকা দিয়ে পকেট ভরিয়ে দিয়েও কাজের কাজ কিচ্ছু হয়না। আর আজ সকালেই আবার রনি কে আটক করেছে। আকেশ বিক্ষিপ্ত হয়ে বলে ওঠে।
-“পুলিশ অফিসারদের এত সাহস হলো কি করে? ওরা কি ভুলে গেছে ওদের বাঁচা মরা সব আমাদের হাতের মধ্যে। এই ব্যাঙ্গালোর শহরের আইন আমাদের তৈরী আর সেখানেই ওরা মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে? কে করেছে এমন কাজ কার এত সাহস? বিগ বস চিৎকার করে বলে ওঠে।
-” আমাদের এখানের কোনো পুলিশ অফিসার এই কাজ করেনি বিগ বস তারা সবাই আমাদের কেনা। দিল্লী থেকে নিউ অফিসার এসেছে তার পোস্ট টাও জানা নেই নিশ্চয়ই বড় কোনো পোস্ট এর অফিসার হবে নাহলে পুরো থানার ইন চার্জ কি করে হতে পারে। সেই করেছে এই সব কাজ। আর আজ সকালেই রনি কেও সেই গ্রেপ্তার করেছে তার গায়ে হাত তোলার জন্য। রিক বলে ওঠে।
-“দিল্লী থেকে কোন অফিসার এসেছে খোঁজ নাও। আমার শহরে আমার আইন চলবে অন্য কারোর নয় আমার গুহায় ঢুকে আমাকে কাটবে এটা তো হতে পারে ওর পুরো পরিবার নিঃবংশ করে দাও খোঁজ লাগাও ওই অফিসার যেনো প্রাণ নিয়ে ব্যাঙ্গালোর ছাড়তে না পারে। বিগ বস দাঁত কিড়মিড় করে বলে ওঠে।
-” ওর পরিবার কে কিছু করা প্রায় অসম্ভব বিগ বস কারণ ও এই শহরের টপ রয়্যাল চৌধুরী ফ্যামিলির সম্রাট চৌধুরীর মেয়ে ও আমন চৌধুরীর বোন আয়েশা চৌধুরী। আকেশ বলে ওঠে।
-” হোয়াট? বিগ বস চিৎকার করে ওঠে প্রায়।
-“হ্যাঁ রনির সাথে যারা থানায় গেছিলো তারাই বললো। রনি নাকি ওই মেয়ে কে ভয় দেখিয়ে ছিল আর তখনই সে তার পরিচয় বলে। আর রনি কে ওই সবার সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেছে হেড কোয়ার্টারে। আকেশ বলে ওঠে।
-“আমার শহরে পোস্টিং হয়ে এসেছে অথচ আমি জানি না এটা হতে পারে না। কোন ডিপার্টমেন্টের কোন পোস্টে আছে জানা গেছে? বিগ বস জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-” না জানা যায়নি। ইনফ্যাক্ট থানার কেউ জানে না ওই মেয়ে কোন পোস্ট এর অফিসার। তবে সিনিয়র অফিসার সবাই এটাই জানে। আর ওই মেয়ে ও নাকি বলেছে রনি কে ওখানেই মেরে ফেললেও কাউকে জবাব দিহি করা লাগবে না। আকেশ বলে ওঠে।
-” আমার বিষয়টা ঠিক লাগছে না রিক তুমি খোঁজ লাগাও ওই মেয়ে কোন পোস্ট এর অফিসার। বড় কিছু হওয়ার আগে ব্যাপারটা কে সামলে নিতে হবে নাহলে আমরা সবাই ধরা খেয়ে যেতে পারি। বিগ বস বলে ওঠে।
-” আমি খোঁজ লাগিয়েছি অলরেডি তবে এখনও কোনও খবর কেউ বলতে পারেনি ওই মেয়ের সম্পর্কে। আকেশ রাগে বলে ওঠে।
ওদের দুজন এর কথোপকথন এর মধ্যেই আকেশ এর ফোনের নোটিফিকেশন টোন বেজে ওঠে। ফোন চেক করতে রাগে তার মুখ লাল হয়ে যায়। আকেশ রাগে রুমের মধ্যে থাকা কাঁচের একটা সোপিশ তুলে নিয়ে আছাড় মারে সাথে সাথে রুমের মধ্যে আওয়াজে ভরে যায়। বিগ বস চমকে ওঠে আকেশ এর এমন কাজে। আকেশের এর হাতের থেকে ফোন টা নিয়ে নিয়েই নিজে দেখে সাথে তাঁর ও চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে যায়।
ফোনের স্ক্রিনে জ্বল জ্বল করছে রনির ভিডিও যেখানে রনি কে উদাম করেই বরফের উপরে বেঁধে রেখে তাকে টর্চার করা হচ্ছে প্রথমে দুটো মেয়ে তবে তাদের চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না সাথে আরো দুজন ছেলে কে দেখা যাচ্ছে। আর তাদের পাশেই আছে রবিন সেও আঘাতে জর্জরিত হয়ে আছে। সাথে আরো একটা ছোটো লাইন আছে লেখা।
“আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা মিস্টার এস.আর হাতে সময় আছে এর মধ্যে পালিয়ে বেঁচে যায়। কাউন্টডাউন স্টার্ট হয়ে গেছে। টিক টক টিক টক।
-” রিক যে করেই হোক আজকের রাতের মধ্যে এদের সবার খোঁজ বের করো কালকেই আমার মিটিং আছে সময়ে দিতে পারবো না আমাকে সেখানেই থাকতে হবে। আর ভুলে যেও না কালকে কলেজে রনির একটা ড্রাগস ডিল এর কাজ ছিল। যেহেতু রনি নেই তাই তোমাকে দেখতে হবে আর সাথে এই ব্যাপার টা কে দেখো ।বিগ বস বলে ওঠে রাগে দাঁত চেপে।
-” আমি এক্ষুনি খোঁজ লাগানোর ব্যবস্থা করছি তারপর আমিও দেখব কে আমার কি করতে পারে। আকেশ দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।
————-
রোজকার মত ইউনিভার্সিটি এর পরিবেশ একদম নরমাল চারিদিকে স্টুডেন্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তবে রোজকার মত থাকলে ও আজকে কিছু একটা মিসিং লাগছে। আর সেটা হলো রনি। এমন কোনো দিন যায়নি যে রনি কে ইউনিভার্সিটি চত্বরে দেখা যায়নি। আর আজ এত বেলা হয়ে গেছে তবুও রনি কে দেখা যায়নি। তবে এখানে তার চেলাদের দেখা পাওয়া গেছে। আকেশ তার সমস্ত পাওয়ার কাজে লাগিয়ে কোনো খোঁজ পাইনি। সকাল সকাল ইউনিভার্সিটি চলে এসেছে আজকে তার কাজ আছে এখান থেকেই কয়েক টা ড্রাগস এর পেটি সাপ্লাই হবে। যেটা এতদিন রনি করে এসেছে। আজ তাকে দেখতে হবে সেই জন্য সকাল সকাল চলে এসেছে। তবে কালকের পাওয়া ভিডিও ও থ্রেট টা পাওয়ায় সে সব জায়গায় তার লোক লাগিয়ে রেখেছে সে ওদের খুঁজে পাইনি তো কি হয়েছে ওরা নিজেই ধরা দেবে এটাই তার মনে হয় আর সেই জন্য এই প্ল্যান করে রেখেছে সে।
দুপুর বারোটা হঠাৎ করেই ইউনিভার্সিটি এর পরিবেশ কেমন একটা গুমোট হয়ে ওঠে। চারদিকে। ইতি মধ্যে গ্রাউন্ডে সিভিল ড্রেসে থাকা প্রায় পঞ্চাশ জন মত লোক ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ জন কে এক সাথে জড়ো করে তাদের ঘিরে রেখেছে তাদের প্রত্যেক এর হাতে রয়েছে গান। গ্রাউন্ডে এমন একটা কান্ড সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে যেতে স্টুডেন্টদের মধ্যে চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি তৈরী করেছে তারা একাধারে হয়ে দাঁড়িয়ে দেখে যাচ্ছে সব কিছু।
ইউনিভার্সিটি তিন তলায় ডান দিকের কোন এর এক রুমে আকেশ দাঁড়িয়ে আছে সাথে আছে তার কয়েকজন লোক তাদের হাতে রয়েছে ড্রাগস এর পেটি। আর তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে পাঁচটা ছেলে আকেশ তাদের ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছিল কাজের। ড্রাগস এর পেটি গুলো সবে সামনের ছেলে গুলোর হাতে দিতে নিতেই রুমের মধ্যে ঢুকে পড়ে প্রায় কয়েকজন লোক চারদিকে থেকে ওখানে থাকা সবাই কে ঘিরে নিয়েছে।
-“হোয়াট দ্য হেল হচ্ছে কি এটা? তোমরা কারা? আর এই ভাবে আমাদের ঘিরে নিয়েছ কেনো? আকেশ রাগে চিৎকার করে বলে ওঠে।
-” আমরা কে সেটা না হয় একটু পরেই জানতে পারবেন প্রফেসর সাহেব এখন চুপ চাপ আমাদেরকে সাথে চলুন। ওদের মধ্যে একজন বলে ওঠে।
-“তোরা ভুল করছিস তোরা জানিস না তোদের আমি কি করতে পারি। এই পুরো ইউনিভার্সিটি জুড়ে আমার লোকেরা আছে আমার এই ইশারায় তোদের সবাই কে শেষ করে দেবে। আকেশ দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।
-” ওহ তাই নাকি তোর লোকে ঘেরা আছে। তা নিজের চোখে একবার দেখে নিবি চল কেমন তোর লোক ঘিরে আছে।
-” এই নিয়ে চল ওদের।
টানতে টানতে রুমে থেকে সবাই কে নিয়ে গ্রাউন্ডে এসে দাঁড়িয়ে যায়। ইতি সব স্যার ম্যাডাম রাও এখানে আছে। স্টুডেন্টরা অবাক হয়ে দেখছে আকেশ কে ও এই লোক গুলো ধরে নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে রাজ নিশা রিনি ও আছে। তবে তারা সামনে আসেনি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। আকেশ গ্রাউন্ডে এসে নিজের লোকদের এই ভাবে বন্দি হয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে যায় তার ।তার একটা একটা করে সব প্ল্যান মাটি হয়ে যাচ্ছে কি ভাবে যে তোর সব প্ল্যান কেচে যাচ্ছে সেটাই তার বোধগম্য হচ্ছে না। এতদিন সে রাজ করে বেড়ালেও এই একমাস যেনো তার জীবন পুরো নরক হয়ে গেছে একটা একটা করে ক্ষতি হয়ে গেছে তার।
এর মধ্যেই আমন এসে ঢোকে ইউনিভার্সিটিতে তবে তার সাথে সোহা আকাশ ওরা কেউ নেই। তবে আমন একা নেই তার সাথে আজ আরহান ও এসেছে। আমন অফিসে থেকে সোজা ইউনিভার্সিটি এসেছে। কাল সারা রাত তারা প্ল্যানিং করে সব কাজ করে নিয়েছে। আর তাছাড়া ও আমন একজন স্পাই অফিসার তাই সে সবার সামনে এই পরিচয় নিয়ে আসতে পারবে না। তার কাজ পিছে থেকেই করা। তাই আজ সকালে সে মিটিং করে নিয়েছে অফিসের আজ সে অফিসার হিসাবে সামনে না আসলেও একজন প্রফেসর হিসাবে তো আসতেই পারে। আর অফিসে থেকে তাড়াতাড়ি আসার দরুণ আরহান ও তার সাথে এসেছে। আমন আর আরহান এসে আকেশ এর সামনে ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে যায়। আমন কি হচ্ছে জানলেও সে একদম যেনো চমকে আছে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না এমন একটা ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর হাতের ঘড়ি টা তে টাইম দেখে নিয়ে বাঁকা হাসে। এখন তার দৃষ্টি ইউনিভার্সিটি এর গেট এর দিকে।
-“এখানে হচ্ছে টা কি? আর আপনারা কারা এই ভাবে আমাদের ইউনিভার্সিটি তে ঢুকে এসে এসব কি করছেন? আর প্রফেসর আকেশ কে কেনো ধরে রেখেছেন? আমি এখুনি পুলিশ কে ফোন করছি। ওখানে থাকা একজন ম্যাম বলে ওঠে।
-” আমরা কারা আর এখানে কি হচ্ছে সেটা একটু পরেই জানতে পারবেন। আর পুলিশ কে ডাকতে হবে না। পুলিশ এখানেই আছে আর মেইন লোক তো এসে পড়েছে। বলেই গেট এর দিকে ইশারা করে ওদের মধ্যে একজন।
সবাই অবাক হয়ে এবার গেট এর দিকে তাকায় । কে এসে পড়েছে এটা দেখার জন্য। কিছু সেকেন্ডের মধ্যে সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে পর পর তিনটে বাইক এসে থামে বাইক এ থাকা সবাই ফুল ব্ল্যাক ড্রেসে আছে। হেলমেট খুলতে পাঁচ টা মুখ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবে তাদের মধ্যে একটা চেনা মুখ বেরিয়ে আসে। সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেদিকে সবার মুখে একটা নাম।
-“সোহা ।
সোহা বাইক থেকে নেমে এগিয়ে আসে সাথে আছে আকাশ সানি অ্যাস নীহার ।আকেশ সোহা কে দেখে থমকে তাকিয়ে আছে তার দিকে । সব কিছু তার মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। সোহা এগিয়ে এসে আকেশ এর বরাবর দাঁড়িয়ে যায়। মুখে ফুটে আছে সেই বাঁকা হাসি। সোহা একবার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আমন কে দেখে নেয় । আমন তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দেয়। সোহা এর দিকে থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে এবার তার সামনে দাঁড়ানো আকেশ এর দিকে তাকায় ।
-“কি হচ্ছে এখানে এইসব মিস সোহা? এই সব কি? আর মিস্টার রাঠোর কে কেনো এভাবে ধরে রাখা হয়েছে। একজন প্রফেসর বলে ওঠে।
-” সোহা কে তুমি? আর এখানে কি করছো? আকেশ দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।
-“গুড কোয়েশ্চেন মিস্টার রাঠোর ওরফে এস.আর অ্যাম আই রাইট?
সোহার মুখের থেকে এস.আর নাম শুনেই ভ্রু কুঁচকে যায় আকেশ এর সে এবার সোহা এর দিকে তীক্ষ্ণ ভাবে তাকিয়ে থাকে। বাকিরা সোহার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
-” কখন থেকে জিজ্ঞেস করছি কি হচ্ছে সোহা কিন্তু আপনি কিছুই বলছেন না মিস সোহা। তবে আমি এক্ষুনি পুলিশ কে ফোন করছি তারপর তারা এসে বুঝবে কি হচ্ছে।
-” আপনার দেখছি খুব তাড়া ম্যাডাম একটু চুপ করে দাঁড়ান তাহলেই বুঝতে পারবেন। আর এখানে এই যে যাদের কে এখানে দেখতে পাচ্ছেন তারা সবাই পুলিশ অফিসার। তাই আপনাকে আর কষ্ট করে কাউকে ডাকতে হবে না। সোহা কঠিন ভাবে বলে ওঠে।
-” মিস্টার রাঠোর অপস এস.আর । আপনার সব প্ল্যান বুঝি ফ্লপ হয়ে গেছে। দেখুন ওই যে আপনার লোক গুলো ওই যে দাঁড়িয়ে আছে। আপনি খুবই বুদ্ধিমান বুঝলেন সাথে ওভারকনফিডেন্ট। আর আপনার এই ওভারকনফিডেন্ট এর জন্য আজ আপনি এই আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন। ছোটো সামান্য একটা ভুল আর দেখুন কি হয়ে গেলো। এতদিন অনেক রাজ করেছেন কিন্তু এখন আপনার সব জারি জুড়ি শেষ। ইউ নো না এক মাস আগেই দিল্লী কমিশনার এর মেয়ের কিডন্যাপ কেসে যে কয়েকজন আপনার লোক ধরা পড়েছিলো তাদের ঠিক কী নির্মম মৃত্যু হয়েছে সেটা নিশ্চয় জানেন। হুম জানতে তো হবে। সোহা বলে ওঠে।
-“কে তুমি? কি তোমার পরিচয়? আকেশ জিজ্ঞেস করে ওঠে।
-” এন.এস.জি – ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড ইন্ডিয়ান আন্ডার কভার সিনিয়র অফিসার সোহা জৈন। হাই কমিশন থেকে হায়ার করা ভারতীয় জাসুস ইন্ডিয়ান আর্মি যাকে এক কথায় ব্ল্যাক ক্যাট হিসাবে চেনে সবাই।
সোহার কথা গুলো শুনে সবাই হতভম্ব হয়ে যায় বড় বড় চোখ করে সবাই এক ভাবে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে। তারা যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না। আর আকেশ সে তো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে সোহার দিকে।
-“মনে পড়ে এক মাস আগে কমিশনার রাজীব রায় এর মেয়ে রিয়া রায় কে রেপ করে তার ভিডিও ভাইরাল করিয়ে ছিলি। মেয়ে টা কে উদ্ধার করার পরই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে এই এস.আর খুঁজে বের করে তাকে তার শাস্তি দেবো।আর দেখ ভাগ্যের কি পরিহাস আমাকে ও তোর কেস টাই দিলো এই শহরের ড্রাগস এর র্যাকেট ধরার জন্য ব্যস এখন আমার সামনে সব কিছু। সোহা বলে ওঠে।
-তোরা নিজেরাই নিজেদের জালে ফেসে গেলে তবে মানতে হবে তোমার কাজের ট্যালেন্ট নামের শেষ অক্ষর আর টাইটেল মিলিয়ে কোড নাম এস.আর রাখলে যাতে কেউ ধরতে ও না পারে রাইট?
বলেই মুখ থেকে আওয়াজ করেই আচমকা আকেশ এর মুখে একটা ঘুষি মেরে দেয় সাথে সাথে মুখ থুবড়ে পড়ে যায় নীচে আকেশ। সাথে থাকা অফিসার গুলো ওখানে থাকা লোক গুলো কে আর আকেশ কে তুলে নিয়ে চলে যায়। সোহা একবার ওখানে থাকা সবাই এর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
-“আপনারা কি কেউ আমাকে চেনেন? জানেন আমার পরিচয়। কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করে ওখানে থাকা সবাই কে।
-“না না না। একসাথে সবাই বলে ওঠে।
-“গুড । বলেই সোহা বাঁকা হেসে একবার আমন এর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বেরিয়ে যায়।
আমন এর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরহান এতক্ষণ অদ্ভূত ভাবে সোহা কে দেখা যাচ্ছিলো তার কেনো জানি সোহা কে কারোর সাথে মিল পাচ্ছে তার ওই চোখ জোড়া মুখের আদল সব কিছুই খুব পরিচিত আরহান এর। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না যে কার সাথে মিল পাচ্ছে তবে সে জানে এই চোখ জোড়া আর মুখের ওই আদল তার খুব চেনা খুব কাছের। সোহার মুখের সাথে কারোর মুখের মিল খুঁজে পাচ্ছে সাথে আরো একটা নাম জৈন হ্যাঁ এই টাইটেল ও তার খুব পরিচিত তার মনে হচ্ছে সে এই টাইটেল আর মুখের সাথে ওতঃপ্রোত ভাবে জড়িত। আরহান অস্থিরতা নিয়েই নিজের চোখ বন্ধ করতে চোখের দৃশ্য পটে ভেসে একটা স্নিগ্ধও মায়া ভরা এক মুখ যে মুখ দেখলে সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায় তার। হ্যাঁ সে এবার সোহার মুখ এর সাথে মিল পাচ্ছে। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব। কি করে হতে পারে। না না সে ভুল ভাবছে এটা কখনই হতে পারে না। কিন্তু ওই চোখ ওই একই মুখের আদল সে কি করে ভুল বুঝবে। ও যে তার সারাজীবনে ও ওই হাসি মাখা স্নিগ্ধতায় ভরা ওই মায়া জড়ানো মুখ কখনই ভুলবে না কখনই না। এই মেয়ের সাথে কিছু তো একটা কানেকশন আছে কিন্তু সে টা কি তাকে খুঁজে বের করতেই হবে। আরহান অস্থিরতা নিয়েই ইউনিভার্সিটি ছেড়ে বেরিয়ে যায়। আমন আরহান কে কেমন একটা ভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। তার সাথে আরহান এর সম্পর্ক ছোটো থেকে বন্ধুত্বের। তার পরিবারের কাউকে দেখতে না পারলেও এই ছেলে টা তার প্রাণ এর এক অংশ। আমন ও বেরিয়ে যায় ইউনিভার্সিটি ছেড়ে।
————-
এদিকে আকেশ কে এনে রবিন রনি যে রুমে রাখা হয়েছে সেই রুমে এনে রাখা হয়েছে। আকেশ একবার চারদিকে তাকিয়ে দেখে ওই রুমে আরো একজন বাধা আছে। রুমের লাইট অন হতেই দেখা যায় তার মুখ।
-“ড্যাড । আকেশ আতকে ডেকে ওঠে।
-“মন্ত্রী গৌতম রাঠোর ওরফে বিগ বস আর তোমার ড্যাড রাইট। সোহা রুমে ঢুকে বলে ওঠে।
-“কি মনে করেছিলি আমরা ধরতে পারবো না। তবে তুই নিজেই এসে ধরা দিয়েছিস আমার কাছে, তোর প্রথম ভুল ছিল আমার পিছনে ঘোরা আমাকেই শিকার বানানোর চেষ্টা করা। এটাই কাজে লাগিয়ে তোর ফোন ট্রাপ করে নিলাম আর সাথে এই যে রবিন আছে না। বলেই সোহা রবিন কে দেখায়।
আকেশ রুমে এবার ভালো করে চোখ বুলিয়ে নেয় দেখে কিছুটা দূরেই তার ভাই পড়ে আছে। আকাশ রুমে এসে গরম পানি ঢেলে দেয় গৌতমবাবুর উপরে। প্রায় আতকে উঠে নিজের চোখ খোলেন। সাথে সাথে নিজের সামনে ছেলেদের দেখেই চমকে ওঠেন। গৌতম বাবু কে তার মিটিং রুমে ঢোকার আগেই তুলে নিয়ে আসা হয়েছে এখানে।
-“কি মন্ত্রী মশাই জ্ঞান ফিরেছে তাহলে ওপস বিগ বস রাইট । বলেই সোহা বাঁকা হেসে ওঠে।
-” তোমাদের কি মনে হয় তোমরা সমানে নিজেদের অপকর্ম করে যাবে আর আইন বসে বসে বুড়ো আঙুল চুষবে তোমাদের কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না। আর তোমরা নিশ্চিন্তে সমাজে উপদ্রব চালিয়ে যাবে কিন্তু সেটা আর হবে না সেটা করার জন্য তোমরা আর কেউ বেঁচে থাকবে না। এতদিন অনেক অপকর্ম করেছ আর আজ সেই সব কিছুর শাস্তি একসাথে পাবে আর তার একটাই শাস্তি মৃত্যু। আর তোমাদের মত লোক কে মেরে ফেলা মানে পূর্ণের কাজ করা। তোমাদের বাঁচিয়ে রাখা মানে এই সমাজ কে আবারো বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া। আজ তোমাদের সারাজীবন এর জন্য জেল হলেও তোমার যে বাইরে বেরিয়ে আসবেনা পালাবে না এর গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না তারপর আবারো তোমাদের এই সব কালো ধান্দা শুরু করবে। আবারও সমাজ এর মানুষের ক্ষতি করবে। তাই তোমাদের মত মানুষ কে বাঁচিয়ে রাখা মানে দ্বিতীয়বার সমাজ কে বলির মুখে ফেলা আর সেটা আমি কখনই করবো না। আমি কখনোই এমন মানুষ কে বাঁচিয়ে রাখি না। তোমাদের মত কীট দের মৃত্যু দেওয়া আমার একমাত্র কাজ। সেই জন্য আজকেই তোমাদের শেষ দিন। সোহা বজ্র কঠিন ভাবে বলে ওঠে।
-“আকাশ সানি এদের নিয়ে যা। সোহা বলে ওঠে।
সাথে সাথে আকাশ সানি ওদের কে নিয়ে পাশের আরো একটা রুমে নিয়ে যায় যেখানে খাঁচার মধ্যে চারটে কুকুর বাঁধা আছে এই কুকুর গুলো ব্ল্যাক ক্যাট এর সাথে থাকে। এরা ও ভয়ঙ্কর শিকারী। ওদের নিয়ে এক এক করে খাঁচার মধ্যে ছেড়ে দিয়ে রুম লক করে দেয়। রুমের মধ্যে যন্ত্রণার চিৎকারে শব্দ ভরে যায়। বাঁচার আহাজারি আর যন্ত্রণাময় আর্ত চিৎকার রুমের বাইরে থেকেও শোনা যায়।
সোহা এক পলক তাকিয়ে নিয়ে বেরিয়ে যায়। ওরা সবাই বেসমেন্ট থেকে বাংলো তে ঢুকে দেখে আমন বসে আছে। সোহা এক পলক দেখে নিয়েই আমন এর দিকে এগিয়ে যায়। তার হাতে থাকা ফাইল গুলো আমন এর হাতে তুলে দেয়।
-“এর মধ্যে সমস্ত ডকুমেন্ট আছে এগুলো কালকের মধ্যে পাবলিশ করে দেবেন মিস্টার চৌধুরী।
-” সোহা চল আমাদের বেরোতে হবে। আকাশ বলে ওঠে।
সোহা আকাশ কে ইশারায় বাইরে যেতে বলে উঠে দাঁড়ায় আমন এর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে গভীর ভাবে একবার আমন কে দেখে নেয় । আমন তার দিকে এক গভীর দৃষ্টি নিয়েই তাকিয়ে আছে ।যেখানে সে তার জন্য ভালোবাসা আকুলতা দেখতে পাচ্ছে।
-“ভালো থাকবেন মিস্টার চৌধুরী। ভাগ্যে থাকলে আবারো দেখা হবে। সোহা বলে ওঠে।
আমন উঠে দাঁড়িয়ে হ্যাচকা টানে সোহাকে নিজের বুকের উপরে ফেলে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নেয়। সোহা নিজেকে ছাড়াতে চেয়ে ও পারে না আটকে থাকে কয়েক মিনিট আমন এর বাহু ডোরে । কয়েক মিনিট পরেই সোহাকে ছেড়ে কোমরে এক হাত রেখে সোহার কপালে নিজের ঠোঁট এর ছুয়ে গভীর এক চুমু এঁকে দেয়। সোহা আমন এর স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে নেয়।
-“আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো। আর পরেরবার এই স্পর্শ টা ঠিক এখানে থাকবে। আমন সোহার ঠোঁটে নিজের আঙুল দিয়ে স্পর্শ করে তার উপর চুমু দিয়ে দেয়।
সোহা আমন এর এমন কাজে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। দেখে আমন ও তার দিকে ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে। সোহা আমন কে কিছু না বলেই নিজেকে আমন এর বাহু থেকে ছাড়িয়ে নিয়েই এক পলক তাকিয়ে বেরিয়ে যায়। আর আমন এক ভাবে তাকিয়ে সোহার চলে যাওয়া দেখতে থাকে।
-“আমি জানি তুমি আসবে। আমার এই স্মৃতি গুলো তোমাকে আমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। তুমি কিছুতেই দূরে থাকতে পারবে না মিস সোহা। তোমার মনেও আমার জন্য সফট কর্নার আছে। অনুভূতি তৈরী হয়েছে তোমার মনে আমার জন্য যেটা তুমি বুঝতে পারছো না নয়তো তুমি মানতে চাইছ না। তবে আমার এই স্মৃতি গুলো তোমাকে স্থির থাকতে দেবে না ফিরবে তুমি আমার কাছে। ততদিন আমি তোমার অপেক্ষায় থাকলাম
চলবে…… ❣️
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।
75th Happy independence day ?? ?? ??