#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১৫.
রুমের মধ্যে রবিন এর ঠিক পাশে এনে রনি কে ছুড়ে ফেলে আকাশ সানি। ওরা থানায় থেকে এখানেই নিয়ে চলে আসে রনি কে। রনি মেঝেতে পড়ে কাতরাতে কাতরাতে একবার রুমে চোখ বুলিয়ে নেয়। থানায় অ্যাস এর থেকে যে কয়েকটা মার খেয়েছে একদম সলিড ছিল তাই শরীরে ঠিক মতো বল পাচ্ছে না রনি। তবে রুমের মধ্যে হাত পা বাঁধা অবস্থায় রবিন কে পড়ে থাকতে দেখে তার চোখ কপালে উঠে যায় সে জুল জুল চোখে রবিন কে দেখতে থাকে তার শরীরের আঘাত এর চিহ্ন আঁকা আছে। এটা দেখেই সে এবার চোখ তুলে রুমের মধ্যে থাকা আকাশ সানি নীহার এর দিকে তাকায়। তারপর আবারো তার সেই আগের রূপে ফিরে আসে চিৎকার করে ওঠে।
-“আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছিস তোরা? তোরা জানিস না তোরা কার সাথে লাগতে এসেছিস। আমাকে এখানে তোরা কোনো ভাবেই আটকে রাখতে পারবি না। আর তোরা অফিসার না? তোদের চাকরি ও কি করে থাকে আমি দেখব। আমার গায়ে যে কটা আঘাত করেছিস না সব সুদে আসলে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এখন যতো ইচ্ছা আমাকে আঘাত করতে পারিস পরে এর জন্য তোরা পস্তাবি আমার ড্যাড আর ভাই তোদের ছাড়বে না। রনি একভাবে চিৎকার করে বলে ওঠে।
-” ওহ তাই নাকি? তা তোমার ওই মন্ত্রী ড্যাড আর তোমার ওই ভাই কি করে সেটা তো আমাদের কেও একটু দেখতে হয় তাইনা গাইজ? রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে ওঠে সোহা।
হঠাৎ করে এই কথা গুলো শুনে রনি রুমে থাকা তিন জনের মুখের দিকে তাকায়। কিন্তু তাকিয়ে দেখে তারা তিনজন মুখ টিপে হাসছে। এটা দেখেই রনি খানিকটা বিরক্তি নিয়ে দরজার দিকে তাকাতে দেখে ভিতরের দিকে কেউ আসছে। চোখের সামনের ব্যাক্তির মুখ পরিষ্কার হতেই রনির চোখ দাঁড়িয়ে যায় বিস্মিত হয়ে সে তাকিয়ে আছে। দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে আসে সোহা আর আমন।
-“কি বাবু সোনা চমকে গেলে নাকি? আহারে। বলেই সোহা মুখে আওয়াজ করতে থাকে।
-” তুমি? তুমি এখানে কি করে? এক মিনিট তার মানে তুমিও এদের সাথে যুক্ত আছো? রনি বিস্ময় নিয়ে বলে ওঠে।
-“আমাকে তো এখানে থাকতে হবে তাইনা নাহলে তোমার সাথে পরিচয় করব কি করে? তুমি ও তো অমর সাথে একান্তে সময়ে কাটাতে চেয়ে ছিলে তাই না? আহারে ভুলে গেলে? সোহা বলে ওঠে।
সোহার কথা শুনে রনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আর বাকিরা মুখ চেপে হাসছে সোহা রনির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে সে ভ্রু কুঁচকে ক্ষুব্ধ চোখে তাকিয়ে আছে।
-” আরে আরে তোরা চুপ কর বাবু দেখি রেগে যাচ্ছে আহারে বাবু রাগ করে না। সোহা বলেই জোরে জোরে হেসে ওঠে।
আর সোহার এই হাসি দেখে বাকি চারজন চুপ করে যায় কারণ এই হাসির পরে যে ঠিক হতে চলেছে সেটা তারা জানে তাই চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর আমন চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখছে। সোহা হাসতে হাসতে আচমকা রনির কাছে গিয়ে রনির গাল টিপে ধরে। সাথে সাথেই রনির মুখ থেকে আর্তনাদ বেরিয়ে আসে তার মনে হচ্ছে গালের মাংস দাঁত ভেদ করে ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে।
-“তোর ড্যাড আর ভাই চাইলেও কিছু করতে পারবে না আমাদের। কিন্তু আমরা চাইলেই তোর ড্যাড আর ভাই কে একদম উপরে পাঠিয়ে দিতে পারি। এর জন্য কারোর কাছে জবাব দিহি ও করতে হবে না আমাদের। তাহলে ভাবে এখন তোর সাথে কি হতে চলেছে । সোহা রনির গাল চেপে রেখেই হিংস্র ভাবে বলে ওঠে।
-” এখন তোকে খানিকটা জামাই আদর করে নেই তারপর তোর ভাই বাপ কে দেখা যাবে ঠিক কী ভাবে খাতির করা যায়। কেমন? বলেই সোহা রনি কে ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।
সোহা উঠে দাঁড়িয়ে আকাশ সানি কে ইশারা করতে তারা কাজে লেগে পড়ে। রনি এর গায়ে থেকে শার্ট খুলে নেয় শুধু একটা শর্ট প্যান্ট ছাড়া আর কোনো সুতো রাখে না। কিছুক্ষণ পরই আকাশ বাইরের থেকে একটা ট্রলি টেবিল রুমে নিয়ে আসে তাতে বড় বরফ চাঁই রাখা আছে। রনি এক পাশে পড়ে আছে তার হত দুটো বাধা আছে আর তার পাশেই সানি দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণ রুমের এত হট্টগোল এর আওয়াজ পেয়ে রবিন ও হুসে ফিরে আসে। সে অবাক হয়ে মধ্যে হতে থাকা দৃশ্য দেখতে থাকে। তার চোখ ইতি মধ্যে বড় বড় হয়ে গেছে রনি কে দেখে। আকাশ এগিয়ে এসে রনি এর পাশে দাঁড়িয়ে সানি আর আকাশ মিলে রনি কে ধরে বরফে আবৃত্ত টেবিলের উপর উল্টো করে শুইয়ে দেয়। সাথে পা দুটো টেবিলের দুই পায়ের সাথে বেঁধে দেয় ফলে আর নাড়াচাড়া করতে পারে না। রবিন ভয় ভয় চোখ নিয়ে তাকিয়ে দেখছে তার মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে আসে।
-“সেকেন্ড বস।
এদিকে রনি কে নিয়ে সবাই ব্যস্ত থাকতে কেউ খেয়াল করেনি রবিন এর কখন জ্ঞান ফিরেছে। তাকে বাধা আছে বলে তারা নিশ্চিন্তে তাদের কাজ করছিলো। তবে রবিন এর কথার আওয়াজ পেতেই সবাই ওর দিকে ঘুরে তাকায়। সোহা রবিন এর মুখের দিকে তীক্ষ্ণ ভাবে তাকিয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করে। রবিন এর ভীতু দৃষ্টি অনুসরন করে দেখে সে রনি কে দেখছে। আর একটু আগের রবিন এর মুখ থেকে অস্ফুটে বের শব্দ কিছুটা কানে এসেছে তবে ঠিক ভাবে বুঝতে পারেনি। তাই সোহা রবিন এর দিকে এগিয়ে যায়। রবিন এর সামনে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ ভাবে তাকায় ।রবিন তার সামনে সোহা কে দেখে আরো গুটিয়ে যায় ভয়ে।
-“কি বললি এক্ষুনি? সোহা গম্ভীর ভাবে বলে ওঠে।
-“সস সে সে সেকেন্ড বস। ভয়ে ভয়ে বলে ওঠে রবিন।
এটা শুনতেই সোহার মুখে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে তার চোখ গুলো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। বাকিরা ও তাকিয়ে আছে তাদের ছোড়া তীর যে একদম নিশানায় লেগেছে এটা বুঝেই মুখে হাসি ফোটে তাদের ধারণা ছিল। সকালে থানায় যে আসবে তার কাছে থেকে সব ডিটেইলস তারা পাবে তবে এটা যে একবার খাপে খাপে লেগে যাবে ভেবেই বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে সবার মুখে।
-“আরে ভাই আমাদের এখানে সেকেন্ড বস এসে পড়েছে তাকে একটু খাতির তো কর, এখনও দাঁড়িয়ে কেনো আছিস ।সোহা বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।
সোহার কথা শুনে অ্যাস এগিয়ে যায় রনি এর দিকে সকালে তাকে অনেক কথা বলেছে এই ছেলে এবার সে দেখাবে মেয়েরা চাইলেই কি করতে পারে। মেয়েরা যেমন মায়ের জাত তেমনি মেয়েরা সময়ে সময়ে অস্ত্র হাতে নিয়ে ঝাঁসির রূপ ও ধরতে পারে। শুধু তাদের বিছানা ব্যবহার করা বাড়ির হেসেলে ব্যবহার করার যন্ত্র নয়। তারা যেমন হেসেলে খুন্তি ধরতে পারে আবার তেমনি হতে অস্ত্র ও তুলে নিতে পারে।
অ্যাস এগিয়ে গিয়ে রুল বাড়ি তুলে নিয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়েই রনি কে পেটাতে থাকে সাথে নীহার ও গিয়ে যোগ হয়। এদের হাতের একটা থাপ্পড় খেলে গাল এর অবস্থা এক সপ্তাহ খারাপ থাকে আর সেখানে শরীরের শক্তি দিয়ে পেটাতে যে আধা ঘণ্টার মধ্যে রনি কে আর আস্ত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। এরা মাসের পর মাস কঠিন ও ভয়ঙ্কর ট্রেনিং দিয়ে নিজেদের তৈরী করেছে। রুমের মধ্যে রনি এর চিৎকারে ভরে যায়। তার কান ফাটানো যন্ত্রণাময় চিৎকার শুনেই রবিন বারংবার কেঁপে কেঁপে উঠছে।
-“উল্টো গোনা শুরু হয়ে গেছে মিস্টার বিগ বস ও এস.আর। মাত্র হাতে গোনা কিছু টাইম তোমাদের হাতে আছে এর মধ্যে পালিয়ে বাঁচতে শুরু করো। তারপরেই দেখা হবে আমাদের সামনাসামনি। টিক টক টিক টক। সোহা মুখে রহস্যময় হাসি নিয়ে বলে ওঠে।
চলবে…… ❣️
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।
নিচে গ্রুপের লিঙ্ক দেওয়া হলো…. যারা আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন আমার ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলেন তারা এখানে জয়েন হতে পারেন।। গল্প নিয়ে আপনাদের ব্যাক্তিগত মতামত জানাতে পারেন ?
https://www.facebook.com/groups/213937003998462/