তোর নামের রোদ্দুর পর্বঃ১৩

0
1053

#তোর_নামের_রোদ্দুর
পর্বঃ১৩

লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা

বৃষ্টিস্নান করতে ব্যস্ত রাতের শহর।শীতল হাওয়া গা ছুয়ে দিয়ে যেতেই অপরুপ শিহরন বয়ে যায় যেনো সারা শরীরে।রাতের কোনো এক দুর উৎসের আলোতে চোখে পড়া চিকচিক করতে থাকা বৃষ্টির ফোটাগুলো,সে এক অভিনব অনুভুতি।জোড়া শালিক,চড়ুই বা চকোরেরাও হয়তো ভালোবাসার আবেশে প্রিয় সঙ্গীটার বাহুডোরে নিজেকে লুকিয়েছে।

আর এদিকে?বিবাহিত,বরবিশিষ্ট তবুও অভাগী আমি!কোথায় বরের সাথে ভিজবো বৃষ্টিতে,কাপের পর কাপ চা খেয়ে খেয়ে,বৃষ্টি দেখতে দেখতে রাত কাবার করে দেবো,তা না!ভিজেই ঠান্ডা বাধিয়ে বসে আছেন উনি,আর চা তো খানই না।কফিখোর!

একরাশ চাপা কষ্ট নিয়ে তার দিকে ঘুরলাম।উল্টোপাশে শুয়ে বর আমার দুনিয়া উল্টানো হাচি দিচ্ছে,বিছানাসহ কেপে উঠছি একদম।কাছে শুয়েছে এই ঢের,ওষুধের নাম নিলে কপালে দুঃখ আছে কথাটা ভেবে একটাবারও ওষুধের কথা বলিনি তাকে।শুদ্ধ নাক টানছেন,হাচি দিচ্ছেন।জ্বরটাও যে এসেছে তাও নিশ্চিত আমি।আমাকে ঠিক‌ বাসার সবাইকে ডেকে এনে ওষুধ খাইয়ে দিয়েছেন,নিজের বেলায় খবর নাই।উকি মেরে দেখলাম চোখ বন্ধ করে আছেন উনি।যেইনা কপালে হাত দিতে গেছি,খপ করে না দেখেই হাতটা ধরে ফেললেন উনি।পরক্ষনেই ছেড়ে দিয়ে বললেন,

-আ’ম ফাইন।ডাক্তারী দেখাতে আসবি না একদম।হ্ হা হাইচ্ছু!

তার কথা ভেঙচিয়েই বললাম,

-ইহ!বলছে আ’ম ফাইন।আবার বলবে হাইচ্ছু!

-চুপ করবি তুই?হ্ হা্…

-হাইচ্ছু?তাইনা?

-তোর বেশি বাড় বেড়েছে সিয়া!

-আর আপনার ত্যাড়ামো!ইফ আনলিমিটেড ত্যাড়া হ্যাড আ ফেইস!

রাগ করে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে রুমেই বারান্দার সামনে দাড়ালাম।থাই গ্লাসের ওপারে বারান্দাটায় রাখা গাছগুলোতে বৃষ্টির পানি পরতেই পাতা কেপে কেপে উঠছে।বিদ্যুত চমকানোর আলোর ঝলকানি দেখলাম দুর আকাশে।তবে শব্দ আসছে একেবারে ক্ষীন।ঘুম আসবে না এখন আমার।বাজপরা শব্দে চমকে ওঠাটাও বৃষ্টির এক অসম্ভব সুন্দর প্রাপ্তি।বাইরের রিনরিন শব্দটা কর্নগোচর করতে সবে গ্লাস ঠেলতে হাত লাগিয়েছি,কব্জি কোনো শক্ত মুঠোতে আটকে গেলো।

-আবার বৃষ্টির পানি গায়ে লাগানোর ধান্দা খুজছিস?

পাশ ফিরে শুদ্ধকে নাক ডলতে দেখলাম।লোকটার দিকে তাকালে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।বাইরের কোনো এক ল্যাম্পপোস্টের আলো অনেকটাই রুমে ঢোকে।একটু বেশিই আলোর জন্য পর্দা দিয়ে রাখি রাতে।কিন্তু আজ আগে শুয়েছিলাম,শুদ্ধ আর পর্দা টেনে দেননি।সে আলোতেই মুদ্ধ নয়নে দেখতে লাগলাম তাকে।
চুলগুলো একদম অগোছালো,ঘুমঘুমো চোখ,যদিও সেটা ঘুমের জন্য নয় আমি জানি।নাকটা লাল হয়ে গেছে।এটার ফিফটি পার্সেন্টের কারন ঠান্ডা,বাকি ফিফটি পার্সেন্ট রাগ আর মেজাজের গরম।যাকে বলে ঠান্ডা গরমের সুষম মিশ্রন।গালের খোচাখোচা দাড়িগুলো আজ মাত্রাতিরিক্ত বড় লাগছে না।হয়তো কোথাও যত্মের একটু ছোয়া পেয়েছে।

-কি?হাইচ্ছু!

এই হাচি!দিলো তো নষ্ট করে সাধের বরকে দেখার মতো গুরুত্বপুর্ন কাজটা!কিছু না বলে বিরক্তি নিয়ে চোখ সরিয়ে অন্যদিক তাকালাম।

-ঘুমাবি না?

-আসছে না ঘুম।

তখনই অনুভব হলো তার হাতের মুঠোর উষ্ণতা একটু বেশিই।বললাম,

-বৃষ্টিতে ভিজি আরেকপশলা?

-চাপড়ে কান লাল করে দেবো!

-কেনো?

-জ্বর বাধাবি আরো বেশি করে?

-আপনার জ্বর উঠেছে শুদ্ধ।

-নান অফ ইউর কনসার্ন!

-ইটস্ টোটালি অফ মাই কনসার্ন।ওষুধ খেয়ে নিন না প্লিজ!

শুদ্ধ এতোক্ষনে আমার হাত ছেড়ে দিলেন।চুপচাপ কাচের দরজাটা লক করে,পর্দা টেনে দিলেন।চাবি হাতে করে নিয়ে চাদর টেনে শুয়ে পরলেন উনি।পর্দা সরিয়ে বাইরের পরিবেশটা দেখবো,উনি জোরে বলে উঠলেন,

-ঘুমে ডিস্টার্ব হয়।লাইট চোখে লাগে।

-উল্টোপাশ হয়ে শুয়ে পরুন।আপনি আমার কথা না শুনলে আমি কেনো আপনার কথা শুনবো?

উনি তাই করলেন।হতাশ হয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।মানুষটা এমন করে কেনো?

.
অনেকক্ষন পর্দা সরিয়ে বাইরেই তাকিয়ে ছিলাম।আর অনেকটাসময় ওনার হাচির শব্দ শুনলাম না।পাশ ফেরেন নি এখনো উনি।আমি ওভাবেই দাড়িয়ে।লোকটা আমাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখেও কিছু বলছে না কেনো?ঘুমোতে জোর করছে না কেনো?ঘুমিয়ে গেছেন নাকি?আমাকে এভাবে দেখেও?
এগিয়ে গিয়ে পাশে দাড়াতেই বুঝলাম শুদ্ধ অসম্ভব জোরে কাপছেন।চাদর গায়ে জরিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পরেছেন যতোদুর সম্ভব।যেনো পৌষের শীত পরেছে।ক্ষনবিলম্ব না করে কপালে হাত রাখলাম আমি।তাপমাত্রা এতোটাই বেশি যে আমার শরীরও ঝাকি দিয়ে উঠলো।এতোটা জ্বর হলো এই অল্প সময়েই?এভাবে হঠাৎ করে?তাড়াতাড়ি ব্লাঙ্কেট বের করে গায়ে জরিয়ে দিলাম ওনার।উনি তা শক্ত করে জরিয়ে আমার দিকে পাশ ফিরলেন।

ওনার মুখের সামনেই মেঝেতে বসে গেলাম আমি।অস্থির লাগছে।জ্বরটা বেশিই।এতো রাতে কাকে ডাকবো?কি করবো?তাড়াতাড়ি উঠে ওষুধ বের করে পানির গ্লাস নিয়ে আবারো ওনার সামনে এসে বসলাম।শুদ্ধ বিরবির করে কিছু বলে চলেছেন।জ্বরের ঘোরে হয়তো বা।মাথার পাশে বসে অতিকষ্টে আধশোয়া করে বসালাম ওনাকে।বাধা দেননি উনি।কাধের সাথে মাথা ঠেকালাম তার।শুদ্ধ তখনও কিছু বলে চলেছেন।গালে আলতোভাবে হাত দিয়ে নাড়া দিয়ে বললাম,

-শুদ্ধ?শুদ্ধ?শুনতে পাচ্ছেন?

…..

-শুদ্ধ?আপনার গায়ে অনেক জ্বর।এবারতো ওষুধটা খেয়ে নিন?

উনি চোখ টেনেটুনে তাকালেন আমার দিকে।বললেন,

-জ্বর হয়েছে?

-হুম।টেম্পারেচার অনেক বেশি।ওষুধটা…

কথা শেষ করতে না দিয়েই উনি মৃদ্যু হেসে বললেন,

-টেম্পারেচার বেশি!হাহ!বলেছি না *তোর নামের রোদ্দুর* দগ্ধ করছে আমাকে।বৃষ্টিতে ভিজে কিছুই হয়নি আমার।এ সবই তোর কাছে থেকেও দুরে থাকার যন্ত্রনার আগুনে পোড়ার ফল।সবটাই তোর…

ওনার কথার অর্থ বোধগম্য হলো না আমার আজ।বাকি কথাগুলোও শুনতে পাইনি।শুদ্ধের নিজের শরীরটাও নেতিয়ে গেছে।ভর ছেড়ে দিয়েছেন অনেকটাই আমার উপর।মুখে ওষুধ পুরে দিয়ে পানি খাওয়ালাম ওনাকে।শুদ্ধকে শুইয়ে দিয়ে পানির গ্লাসটা রেখে ওষুধের পাতা হাতে নিয়ে উঠে আসছিলাম।শুদ্ধ আচমকাই হাত ধরে ফেললেন আমার।চমকে উঠে পিছন ফেরার আগেই উনি এতোজোরে হাত ধরে টান মারলেন যে সোজা তার বুকে গিয়ে পরেছি আমি।বা হাতটা উনি ধরে আছেন।ডানহাতটা ওনার বুকে।চোখ বন্ধ রেখেই উনি বললেন,

-আর কতো সইবো‌ বলতে পারিস সিয়া?আর কতো?এ জ্বালা যে জ্বালিয়ে শেষ করে দিচ্ছে আমাকে।পারছি না তো আর নিতে আমি।পারছি না জাস্ট!

শুদ্ধ কাপছেন।একহাতে ব্লাঙ্কেটটা আরো ভালোমতোন জরিয়ে দিলাম।বাইরের আলোটুকোর সাথে রুমে ঢুকছে বিদ্যুৎ চমকানোর আলো।সে আলোতেই আমার দৃষ্টি আটকে গেলো শুদ্ধর সেই মোহ জড়ানো মুখে।চোখদুটো বন্ধ করে রেখেছেন উনি,তবে পাতা কাপছে।একই অবস্থা তার ঠোটজোড়ার,কাপছে সেগুলোও।জ্বরের কারনে কেমন যেনো শুকিয়ে উঠেছে তার ওষ্ঠ।
ওনার এতোটা কাছে আমি যে জ্বরের ফলে অতিরিক্ত গরম হয়ে ওঠা নিশ্বাস কপাল বরাবর লাগছে আমার।ভারী হয়ে আসলো আমার শ্বাসপ্রশ্বাস।গলাটা শুকিয়ে এসেছে।আর তৃষ্ণার্ত মন তার সেই শুস্ক ঠোটজোড়ার দিকে নির্লজ্জভাবে চেয়ে আছে।চোখ‌ খিচে বন্ধ করে নিলাম বারকয়েক।কেমন যেনো ভেতরটা লাবডাব শব্দটার তীব্রতা বেড়ে গেছে।হাতটা ছাড়ানোর জন্য যেইনা একটু মোচড় দিয়েছি শুদ্ধ চোখদুটো খুলে ফেললেন।

শ্বাস আটকে ওভাবেই পরে রইলাম তার বুকের ওপর।অসুস্থ্য উনি,কোনোভাবেই উত্তেজিত করা ঠিক হবে না ওনাকে।চোখদুটো লালচে হয়ে গেছে।এই মানুষটার অতিরিক্ত ফর্সা চেহারাটায় হলদে ভাব।আমাকে দেখে ওনার ওষ্ঠযুগল প্রসারিত হলো।হাত না ছেড়েই উনি উঠে বসলেন আবারো।ব্যস্ত হয়ে বললাম,

-সবে ওষুধ দিয়েছি।রেস্টের প্রয়োজন আপনার।এভাবে উঠে বসলেন কেনো?

-তুই একাকী কেনো চলে গেছিলিস সিয়া?জানিস?পাগল পাগল লাগছিলো আমার।এক মুহুর্তের জন্য ভাবলাম,তোকে হারিয়ে ফেলেছি।কিন্তু আমিতো তোকে দুর করতে চাই আমার এই অভিশপ্ত জীবন থেকে।চাই তুই দুরে থাক আমার থেকে।তবে কেনো এভাবে কষ্ট পাই‌ বলতে পারিস?কেনো?

ওনার আওয়াজে শুধুই কাতরতা,অসহায়ত্ব।তার কেনোর জবাব তো একটাই।সে যে তার শ্যামাপাখিকে ভালোবাসে।কিন্তু আমার কেনোর জবাব কে দেবে শুদ্ধ?কে‌ বলবে,কেনো আপনি এমন করছেন?কেনো দুরে‌ সরাতে চান আমাকে?নাকি ভালোবাসাটা ছিলো,এখন আর নেই?তবে এতোটা কেয়ারিং কেনো দেখান?শুধুই দায়িত্ব?

মুহুর্তেই একরাশ অভিমান দানা বাধলো মন জুরে।আমি আরেকহাতে নিজের হাত ছাড়াতে ওনার হাত ধরতে যাবো ঠিক তখনই উনি সে‌হাতও ধরে ফেললেন।ঘুরিয়ে পিঠে আটকে দিতেই ব্যথা সামলাতে উল্টোদিক হয়ে বসলাম আমি।শুদ্ধ এগিয়ে বসেছেন কিছুটা।তার বুকের সাথে পিঠ লেগে আছে আমার।কানের পাশের কয়েকটা চুল উড়ে উঠলো।এর জন্য শুদ্ধর নিশ্বাস দায়ী আমি জানি।রুমে অন্য কোনো বাতাস আসার সুযোগ নেই।এয়ারকুলারও বন্ধ।

চোখ বন্ধ করে নিলাম।দমটাও যেনো বন্ধ হয়ে আসছে আমার।এবার নিজের শরীরেও কম্পন অনুভুত হচ্ছে।শ্বাস জোরে চলছে।আমার পিঠে এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো এক আঙুলে পেচিয়ে সরাতে লাগলেন শুদ্ধ।ওনার সেই এক আঙুলের ডগার স্পর্শেই শিউরে উঠলাম।বিছানার চাদর খামচে বসে রইলাম ওভাবেই।কাধের সবগুলো চুল খুটে খুটে ঘাড়ের বা পাশে সামনে দিয়ে দিলেন উনি।

-ই্ ইউ নিড র্ রেস্ট।আপনার….

হঠাৎই সেই শুস্ক ওষ্ঠের উষ্ণ ছোয়া।জামার গলার জন্য একটুখানি বেরিয়ে থাকা উন্মুক্ত ঘাড়ের ডানপাশটায় ঠোট ছুয়েছেন শুদ্ধ।এতক্ষন চলতে থাকা তোলপাড় নিমিষেই থেমে গেলো।এটা কি ছিলো?ঝড়ের পরবর্তী অবস্থা?নাকি নতুন কোনো শিহরন জাগানো মুহুর্তের আগমনী শিরোনাম?

কাপতে কাপতেই আড়চোখে তাকানোর চেষ্টা করলাম তার দিকে।তবে নিজেও জানিনা চোখ মেলাতে পারবো কি না।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি আমার মাথার চারপাঁচটে চুল একদম মুখে গিয়ে পরেছে তার।আর উনি?মলিনভাবে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।একহাত খালি ছিলো।সেহাতেই চুলগুলো সরিয়ে দিলাম।গালে হাত রাখতেই শুদ্ধ শান্ত ছেলের মতো হাত ছেড়ে দিলেন আমার।চুপচাপ মাথার নিচে দুহাত দিয়ে শুয়ে পরে চোখ বুজলেন উনি।

ওভাবেই ঠায় হয়ে বসে থেকে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।অজান্তেই চোখের কোন বেয়ে একফোটা আনন্দঅশ্রু বেরিয়ে আসলো।আজ স্ত্রী হিসেবে প্রথমবারের মতো শুদ্ধর কাছ থেকে ভালোবাসার স্পর্শ পেয়েছি আমি।হোক তা অতিক্ষুদ্র সময়ের জন্য।তবে মন বলছিলো,এটুকো দিয়েও তুই তোর সারা জীবন পার করে দিতে পারবি ইনসু।সারা জীবন পার করে দিতে পারবি!

—————-?

পুরো রুম তোলপাড় করে দিয়েছে আয়ান।একটার পর একটা ঘটনায় শরীর জ্বলছে ওর।এই গভীর রাতটাই তো ওর জ্বালা মেটানোর সময়।আর সে সময়টাও এই বৃষ্টি এসে সবটা নিঃশেষ করে দিচ্ছে।সেই দুপুর থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি,থামার নামই নেই।অফিস থেকে ফিরেছে সেজন্য রাগ নিয়েই।এই বৃষ্টি তো চায়ই না ও।ওর তো চাই ইনসিয়া নামক বর্ষন।কিন্তু না।বরাবরের মতোই সে রোদ্দুর হয়ে জ্বালাচ্ছে তাকে।বাসায় ফিরে মুনিয়াকে দেখতে গিয়েছিলো।ওর কেবিনে অপরিচিত কেউ ঢুকেছে শুনলে আয়ান ঠিক থাকবে না এটা জানে নার্স,তাই ইনসিয়ার ব্যাপারটা চেপে গিয়ে এটুকো বলেছে,মুনিয়া আজ সারাদিনে ভালো রেসপন্স করেছে।

কিছুটা স্বস্তি নিয়ে বাসায় ফিরলো আয়ান। ডিনার শেষ করে আয়ানের মা,অশোক,সার্ভেন্টরা ঘুমিয়ে গেছে।বৃষ্টির প্রতি তীব্র বিরক্তিটা নিয়েই রুমে ঢুকেছিলো।ভেবেছিলো ডায়রি পরে মনকে শান্ত করবে।কিন্তু ডায়রিটা ওর জায়গায় নেই!মাথা ঘুরে ওঠে আয়ানের।পুরো রুম উলোটপালোট করে খুজতে থাকে ওটা।শেষ অবদি রাগে দেয়ালে তিনচারটে ঘুষি ছুড়ে হাত ধরে মেঝেতে বসে পরে।সবে অশোককে ডাকতে যাবে,ঠিক তখনই মিস্টার আজাদ ফোন করে ওকে।ফোন রিসিভ করতেই উনি বলে উঠলেন,

-দুবার সরি আয়ান।প্রথমটা এতো রাতে ডিস্টার্ব করার জন্য,দ্বিতীয়টা এভাবে ফোনে জানানোর জন্য।আসলে সন্ধ্যা অবদিও আমরা কনফিউজড্ ছিলাম অনুষ্ঠানটা হবে কি না।যাই হোক,এখন সবটা ঠিক আছে।তাই এভাবে জানাতে হচ্ছে।কাল এ বাসার প্রোগ্রামে তুমি থাকছো।ইনফ্যাক্ট,সবটা সামলানোর দায়িত্ব তোমার।

-কিসের অনুষ্ঠান স্যার?আর এভাবে…

-কাল শুদ্ধর বৌভাতের রিসেপশন আয়ান।শুদ্ধ একটু অসুস্থ্য,জ্বর হয়েছে।তাই হয়তো জানায়নি তোমাকে।আমরা ভেবেছিলাম হয়তো এটা হবে না,শুদ্ধ রাজি হবে না।বোঝোই তো,বাসায়ই থাকে না ও।এজন্যই আগে থেকে কাউকে বলিনি সেভাবে।কিন্তু রাতে ডিনারের সময় ইনসিয়া বললো ও নাকি কাল বাসায়ই থাকছে।তাই আমি চাই আজাদ ম্যানশনের এই অনুষ্ঠানটা যেনো গোটা এলাকায় মেমোরেবল হয়ে থাকে।আর তুমি তো জানোই তুমি ছাড়া অন্য কারো উপর ভরসা হয় না আমার।তাই একবেলার মধ্যে সর্বোচ্চ আয়োজনটা তুমিই করতে পারবে বলে আম্….

কলটা কেটে যায়।আয়ান ওর ফোনটা ছুড়ে মেরেছে।যেটা সোজা গিয়ে আয়নার কাচে লেগেছে।দুটোই চুর্নবিচুর্ন হয়ে আছে।রাগে কাপছে আয়ান।শুদ্ধর ডায়রিটা চুরি হয়ে গেছে,পরদিন শুদ্ধ ইনসিয়ার বৌভাত!কিন্তু মুনিয়ার সাথে হওয়া ঘটনা,পুলিশের গায়ে হাত তোলা,আর আরেকটা গুরুত্বপুর্ন ফাইল পাঠিয়েছিলো ও ইনসিয়াকে।ফাইলগুলো দেখার পর তো পরদিন ইনসিয়ার ডিভোর্স ফাইল করার কথা।তবে বৌভাত কেনো?শুদ্ধই বা এসব হতে দিচ্ছে কেনো?ওর ডায়রিটা কোথায় গেলো?ফাইলগুলো কি ইনসিয়া দেখেনি?আদৌও সেগুলো ইনসিয়ার হাতে পৌছেছে তো?

#চলবে…

(আসসালামু আলাইকুম।
প্রথম পর্বে বলেছিলাম,খুব বেশি পর্ব হবে না।কিন্তু আপনারা অনেকেই কমেন্টে গল্পটা বড় করতে বলছেন।বড় করলে শুদ্ধ সিয়া এভাবেই ভালোবাসা পাবে তো আপনাদের?মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।
হ্যাপি রিডিং?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here