#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ৩৭
আবছা অন্ধকারে সরু আলোরশ্নির প্রবেশ।গোডাউনের শার্টার খোলার আওয়াজ কানো আসলো।আর জ্বলতে থাকা চোখে এসে লাগলো বাইরের তপ্ত রোদ্দুরের ঝকঝকে আলো।মাটিতে বসে কাদছি আমি।আয়ান কাউকে বললেন,
-এখনই খোলার দরকার ছিলো না অশোক!ইনসিয়ার নিজেকে সামলাতে আরেকটু সময় লাগবে হয়তো!
অশোক নামের লোকটা বললেন,
-অনেক আগেই খোলার দরকার ছিলো স্যার!
তার কথা শেষে মাটিতে ছায়া দেখলাম কারো।সম্পুর্ন খোলা শার্টার দিয়ে গোডাউনের ভেতরে ঢুকছে সে।আয়ানের বিস্মিত কন্ঠে বেরোলো,
-শ্ শুদ্ধ?তুই এখানে?
আমি জলভরা চোখে নিচদিকেই তাকিয়ে ছিলাম।এটুক শুনেই কেপে উঠলাম।এই কথাটা যেনো সত্যি হয়।কোনোভাবে যেনো ভুল না শুনি আমি।পাশ ফেরার আগেই কেউ একজন ঝড়ের বেগে এসে আয়ানের গেন্জিটার ঘাড়ের দিকটা ধরে টেনে হিচড়ে চেয়ারে বসিয়ে দিলো তাকে।আরেকজন স্কচটেপে মুখ আটকেও দিয়েছে মুহুর্তেই।আরো একজন দৌড়ে এসে চেয়ারের পিছনে আয়ানের দুহাত বেধে দিয়েছে।কালো শার্ট পরিহিত সে মানুষটা চেচিয়ে বলে উঠলো,
-শুদ্ধ এখানে নেই আয়ান!হি ইজ ইন দ্যা হেল নাও!সেই জাহান্নামে বিশ্বাসঘাতকতার আগুনে জ্বলছে ও!এন্ড আই সোয়ার,তার থেকেও ভয়ংকর কোনো জাহান্নামে এভাবেই টেনে হিচড়ে পাঠাবো তোকে আমি আজ!
শ্বাস থামিয়ে বসেই ছিলাম।এটুক বলেই উনি পিছনদিক ফিরলেন।এটা শুদ্ধই!হাত মুঠো করে চোয়াল শক্ত করে দাড়িয়ে উনি।কালো শার্টের কলারের কাছের খোলা বোতামদুটো দিয়ে ফর্সা গলার রগগুলো সুস্পষ্ট।কিন্তু আমার দিকে শান্ত দৃষ্টি তার।উঠে দাড়িয়ে একছুটে গিয়ে জাপটে জরিয়ে ধরলাম তাকে।তার বুকে মুখ গুজে হুহু করে কেদে দিলাম আমি।ইন করা শার্টটার বুকের দিকে খামচে ধরে অস্ফুটভাবে বললাম,
-শ্ শুদ্ শুদ্ধ….
শুদ্ধ এতোক্ষনে মাথায় হাত রাখলেন আমার।আরো ফুপিয়ে কেদে উঠে মিশে যেতে লাগলাম তার বুকের মাঝে।এই আয়ান নামের লোকটাকে কিছুক্ষন আগে চড় লাগালেও শুদ্ধর উপস্থিতি আমার আসল অনুভুতি,ভয়টাকে বেরিয়ে আসার সুযোগ করে দিয়েছে।শুদ্ধ আমার ঘাড়ের চুল মুঠো করে নিয়ে আরেকহাতে জরিয়ে ধরলেন।শান্তভাবে বললেন,
-কাদিস না সিয়া।তোর কান্না সহ্য হয় না আমার।প্লিজ কাদিস না।
আমি কান্না থামাতে ব্যর্থ।ফোপাচ্ছিই।আড়চোখে তাকালাম আয়ানের দিকে।হাত পা বেধে মুখ আটকে দেওয়া হয়েছে তার।ওনাকে দিশেহারার মতো লাগছে।কিন্তু তবুও ওই ভয়ানক মানুষটার কথাগুলো মনে পরতেই চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম আমি।আবারো খামচে ধরলাম শুদ্ধের শার্ট।উনি বললেন,
-ভয় পাস না সিয়া।আমি এসে গেছি তো!
আমি এসে গেছি তো!নতুনভাবে দেহে প্রান ফিরে পেলাম এই কথায়।তবুও শক্ত করে ধরে আছি তাকে।অশোক বললেন,
-ম্যামের ভয়ের কারন এই আয়ান চৌধুরী স্যার!এই আয়ান চৌধুরী!আপনার আদেশ মানতে গিয়ে ম্যামকে এভাবে তুলে আনতে হয়েছে আমাকে,তাকে এই বদ্ধ জায়গাটায় আটকে দিতে হয়েছে আমাকে,মিস্টার চৌধুরীর হাতে ম্যামের চুল মুঠো করা দেখতে হয়েছে আমাকে,ম্যামকে কষ্ট পেতে দেখতে হয়েছে আমাকে স্যার!এবার আপনি এর সাথে ঠিক কি করবেন সবটাই আপনার ব্যাপার!
শুদ্ধর উষ্ণ নিশ্বাস!মাথা তুলে বললাম,
-শুদ্ধ…শুদ্ধ…আ্…আম্মু,মাহি….
-শান্ত হ।ওরা হসপিটালে ছোটমার কাছে আছে।কিছুই হয়নি ওদের।
অশোক বললেন,
-স্যার,এতোটা সময়….
-আম্মু ছাড়ছিলো না অশোক।মাহিকে সবটা বলতে নিষেধ করতে সময় না লাগলেও আম্মুকে বোঝাতে সময় লেগেছে।অনেক কষ্টে তাকে বুঝিয়েছি,কেউ তাকে টাকার জন্য কিডন্যাপ করেছিলো।চাইলেই সিয়াকে ওদের সাথেই ছাড়াতে পারতাম আমি।কিন্তু তাতে আম্মু আয়ানের আসল রুপটা জেনে যেতো,কষ্ট পেতো সে।কি করে আমার দুনিয়া,আমার পৃথিবীকে কষ্ট পেতে দেই বলো?তাই এতোক্ষন আমার আরেক পৃথিবীকে তোমার ভরসায় রেখেছিলাম।
আবারো ফুপিয়ে কেদে দিলাম আমি।শুদ্ধ হাত ধরতে যাচ্ছিলেন আমার,ব্যথায় কুকড়ে উঠলাম।ঠিক সেখানটাতেই আয়ান ধরে রেখেছিলেন।তার নখের আচড়ে জামার হাতার উপরেও ছোপ ছোপ দাগ হয়ে গেছে।শুদ্ধর চোখ রক্তবর্ন হয়ে গেলো তা দেখেই।অশোক বললেন,
-ম্যাম সাবধান করেছিলো মিস্টার চৌধুরীকে,তাকে স্পর্শ না করতে।শোনেন নি উনি স্যার!
শুদ্ধ দাতে দাত চেপে বললেন,
-সিয়াকে নিয়ে যাও অশোক!
অশোক এগোচ্ছিলেন।শুদ্ধকে আরো জাপটে ধরে জোরেসরে চেচিয়ে বললাম,
-কোথথাও যাবো না আমি!
উনি জোরে শ্বাস ফেললেন একটা।তারপর একহাতে আমার মাথা তার বুকে শক্তভাবে চেপে ধরলেন।বেশ কিছুটা সময় পর চাপা গোঙানির আওয়াজ শুনতে পেলাম আয়ানের।চোখ তুলে তাকাতেই খিচে বন্ধ করে নিলাম আবারো।আয়ানের ডানহাত বিভ্যৎষভাবে ঝলসে গেছে।ফুটন্ত পানি ঢালা হয়েছে তার হাতে।পাশেই অশোক ফ্লাক্স হাতে দাড়িয়ে আছেন।আয়ান শব্দ করতে পারছেন না,তবে তীব্র ব্যথায় গোঙরাচ্ছেন।শুদ্ধ বললেন,
-আজ তোর কষ্টে আমার এতোটুকো কষ্ট হচ্ছে না আয়ান!বিশ্বাস কর,যেটা কোনোদিন কল্পনাতেও ছিলো না আমার।তোর মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বেরোতে দেবো না আমি আজ।যে মুখের কথা এতোগুলো দিন শুধুমাত্র আমাকে কষ্ট দিয়েছে,তাকে ছাড় দিতাম।কিন্তু ওই মুখ দিয়ে উচ্চারন হওয়া শব্দ আজ সিয়াকে কাদিয়েছে,কি করে ওকে আর আওয়াজ করতে দেই আমি?ওই হাত শুধু আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে প্রমান তৈরীতে ব্যস্ত থাকলে,তাকে ছাড় দিতাম।কিন্তু ওই হাত আজ সিয়াকে আঘাত করেছে,ওকে কি করে ছাড় দেবো আমি?কি করে?
তুই না মানলেও,আগে থেকেই তোকে বেস্টফ্রেন্ড মানতাম আমি।ভালোই চলছিলো আমার বন্ধুত্ব।কিন্তু মাঝখানে চলে আসে মুনিয়া।বুঝেছিলাম,খুবই চঞ্চল স্বভাবের আর জেদী ও।অল্প সময়েই আমাদের মধ্যে একটা ভালো বন্ডিংও হয়ে যায়।কিন্তু আমার চোখে শুধু তা ভাইবোনেরই ছিলো।মাহি,ইরাম আর মুনিয়ার মধ্যে কোনো তফাৎ অনুভব করিনি কোনোদিন।বিদেশ থেকে কিছু অপসংস্কৃতি মাথায় বসে গিয়েছিলো ওর।টুকটাক শাসন করতাম।বড় ভাই হিসেবে।কিন্তু আমার এই কাজগুলো ওর মনে কোনো আলাদা অনুভুতির সৃষ্টি করবে,তা আমি ভাবতেও পারি নি।
একদিন আশ্চর্যজনকভাবে মুনিয়া প্রোপোজ করে বসে আমাকে।তখন তখন ওকে বলে বেরিয়ে আসি,অন্যকাউকে ভালোবাসি আমি।ওকে তো শুধুই বোনের চোখে দেখেছি।যাতায়াত কমিয়ে দেই ও বাসায়।তারপর এই বিয়েটা!বিয়ের পরেরদিন জানতে পারি মুন সুইসাইড এটেমপ্ট করেছে,যদিও সেটা তুই বলিস নি আমাকে আয়ান।প্রচন্ডভাবে দোষী মনে হতো নিজেকে।হয়তো আমার ব্যবহারেই মেয়েটা আকাশকুসুম ভাবতে শুরু করেছিলো।তাই তোকে ভালো রাখার চেষ্টা করতাম।ভাবতাম তুই ভালো থাকলেই তোর বোনকে ভালো রাখতে পারবি।
কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিলো আয়ান।তুই কাউকেই ভালো রাখতে চাসনি।বোনের প্রতিশোধ হিসেবে আমার আর সিয়ার সম্পর্কটা তোর টার্গেট হয়,সেটাও জানতাম আমি।সিয়াকে ভুল বোঝাতেই আমার পিসি থেকে অফিসে বসে ব্যাংকের একাউন্ট হ্যাক করে নিলি তুই।যাতে সবটা দায় আমার উপর আসে তাইনা?
তুই কি ভেবেছিলি?সিয়ার বিশ্বাস আর আমার ভালোবাসা এতোটাই ঠুনকো যে তোর এই নকল কাগজপত্র দেখে সিয়া আমাকে ভুল বুঝে চলে যাবে,আর আমি মুনকে গ্রহন করবো?দেন ইউ আর টোটালি রং আয়ান!কয়েকঘন্টা আগ অবদি আমার চেষ্টা ছিলো তোর কুকীর্তি লুকানো।যদিও তুই তার যোগ্য নস,তোর অসুস্থ্য বোন, যাকে নিজের বোনই ভাবি,তোর আম্মু,যাকে নিজের মা ভাবি,তাদের জন্য বাচাতে চেয়েছিলাম তোকে।কিন্তু আমার আম্মুকে এসবে জরিয়ে সবটা নষ্ট করে দিয়েছিস তুই!ভালোবাসার কোথায় কমতি রেখেছিলো সে তোকে আয়ান?নিজের ছেলের মতোই তো ভালোবাসতো তোকে!তাহলে?তোর মনুষত্যবোধ এতোটা লোপ পেয়ে গেলো তুই ছোটমার এক্সিডেন্ট করানোর মতো জঘন্য কাজটা করলি তুই?
শুদ্ধ আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে সামনে দাড় করিয়ে বললেন,
-এই কুৎসিত মুখোশধারী লোকটার জন্য তোকে কষ্ট পেতে হয়েছে সিয়া।আর ও আমার লাইফের অংশ হয়েই তোর লাইফে এসেছে।ক্ষমা করে দে আমাকে সিয়া।আমি….
-না শুদ্ধ!আপনি….
-কি কি বলে ভয় দেখিয়েছে ও তোকে?
শুদ্ধর সোজা প্রশ্ন!চুপ করে আস্তেধীরে আবারো মুখ গুজতে লাগলাম তার বুকে।তার পরিচয় নিয়ে কোনো কথা চাইনা আমি আর।উনি আমাকে একহাতে জরিয়ে আরেকহাতে আয়ানের মুখ খুলে দিতে যাচ্ছিলেন।অশোক বলে উঠলেন,
-স্যার,মিস্টার চৌধুরী ম্যামকে….
তাকে থামিয়ে দিতে তাড়াতাড়ি বললাম,
-আপনি শুদ্ধর লোক?
উনি মাথা উপরেনিচে নাড়ালেন।বললেন,
-দুবছর আগে আয়ান চৌধুরীর কাছে শুদ্ধ স্যারই পাঠিয়েছিলেন আমাকে।উনি সময় দিতে পারছিলেন না মিস্টার চৌধুরীকে,তাই আমাকে বলেছিলেন তার পাশে থাকতে।জাস্ট এজ আ হেল্পিং হ্যান্ড।কিন্তু বিশ্বস্ততার জোরে আয়ান চৌধুরী যেমন স্যারের অনেকটা জেনে গিয়েছিলেন,আমিও তার মটো জেনে গিয়েছিলাম।শুদ্ধ স্যারকে জানালে উনি বলেছিলেন উনি ঠিক সময়মতো শুধরে যাবেন।কিন্তু না,আয়ান চৌধুরী অন্য ধাচেরই মানুষ।বোনকে ভালো রাখতে গিয়ে হিতাহিত বোধ লোপ পেয়েছে তার।সবটা জানতাম,শুদ্ধ স্যারকেও জানাতাম,তবে এগুলো তার অগোচরেই ছিলো।আজ আপনাকে কিডন্যাপ করতে শুদ্ধ স্যারের কথাতেই এই গ্যাং হায়ার করি আমি।যেটা আয়ান চৌধুরীর জানামতে ভাড়াটে গুন্ডা নয়,শুদ্ধ স্যারের আজ্ঞাবহ,তার পার্ফেক্ট টুয়েল্ভ!
বিস্ময়ে তাকালাম চারপাশে।সত্যিই বারোজন ওনারা।সুন্দরমতো হাসছেন সবাই।শুদ্ধর দিকে তাকাতেই আশ্বাসের হাসি তার।তাচ্ছিল্য হলো আয়ানের উপর।বিয়ের পর শুদ্ধের অতীতকে নিয়ে ঘাটাঘাটি না করে বর্তমানকে যদি খেয়াল করে চলতেন,তাতে নিজেও বদলানোর সুযোগ পেতে পারতেন,তাকেও বুঝতে পারতেন,হয়তো সবটা অন্যরকমই হতো।শুদ্ধ ফোন বের করে কাউকে কল লাগিয়ে বললেন,
-ভেতরে আসুন আপনারা।
কয়েকজন পুলিশ ঢুকলেন ভেতরে।শুদ্ধ বললেন,
-হ্যাকিংয়ের সমস্ত প্রুভস্ গাড়িতে রাখা আছে অশোক।নিয়ে এসে হ্যান্ডওভার করো ওনাদের।আর হ্যাঁ,ছোটমার এক্সিডেন্ট কেইসও থাকবে ওর উপর!
অশোক বেরিয়ে গেলেন।আয়ান তখনো ওভাবেই ছটফট করছেন।শুদ্ধ এতোক্ষনে আমাকে ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলেন।আয়ানের চেয়ারের দু হাতলে হাত রেখে ঝুকে দাড়িয়ে বললেন,
-চিন্তা করিস না আয়ান!তোর জেলে যাওয়ার কথা মুনিয়া বা আন্টি কেউই জানবে না।মিস্টার রায়হানের সমস্ত টাকা আমি ফিরিয়ে দেবো তাকে।এই রোবারির কেইস নিয়ে দুনিয়া জানবে না আয়ান।আই উইল মেক শিওর অফ দ্যাট!আন্টি জানবে তুই বিদেশ আছিস।কাজের চাপে একবেলাই শুধু কল রিসিভ করবি তার।তোর গলা নকল করার জন্য আমার পার্ফেক্ট টুয়েল্ভ আছে!মুনিয়ার চিকিৎসারও কমতি থাকবে না।ওর উপর এখনও কোনো রাগ নেই আমার।আশা রাখি সুস্থ্য হলে নিজের ভুল বুঝতে পারবে ও।ওর সাথে আমার বিহেভিয়ার কেমন হবে তা ওর উপরই ডিপেন্ড করে।
আরো নড়াচড়া করতে লাগলেন আয়ান।শুদ্ধর হেরফের নেই কোনো।উঠে এসে আবারো জরিয়ে ধরলেন আমাকে।মুখ বাধা অবস্থাতেই আয়ানকে টানতে টানতে নিয়ে যায় পুলিশ।শেষ অবদি উপযুক্ত জায়গাটাতেই জায়গা হলো তার।চোখ বন্ধ করে মিশে রইলাম শুদ্ধর বুকের মাঝে।অনেকটা সময় পর শুদ্ধ বললেন,
-চল সিয়া,ছোটমা আমাদের দুজনকে দেখবে বলে অস্থির হয়ে আছে।আম্মুও টেনশন করছে!ইমরোজকে দিয়ে কোনোমতে বুঝিয়েছি সবাইকে,তোকে নিয়ে দরকারে বেরিয়েছি আমিই।
আস্তেধীরে মাথা তুললাম।শুদ্ধ যদি সবটা না জানতেন,আজ আরো ভয়ানক কিছু হতে পারতো।এই মানুষটা থেকে দুরে যেতে হতো আমাকে।শুদ্ধ কপালে ঠোট ছুইয়ে হাটার জন্য ইশারা করলেন।পা বাড়াচ্ছিলাম।পাশের টেবিল থেকে একটা কাগজ উড়ে এসে পরলো শুদ্ধর পায়ের কাছে।উনি তা হাতে নিয়ে দেখে বললেন,
-ওহ্!এই রোবারির কাগজ!আচ্ছা?ঠিক কি কি জাল কাগজ দেখিয়ে তোকে ভুল বোঝাতে যাচ্ছিলো আয়ান?আমিও তো দেখি!
শুদ্ধ এগোতে যাচ্ছিলেন কাগজগুলোর দিকে।শক্তকরে জরিয়ে ধরলাম তাকে আবারো।শুদ্ধ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-এখনও ভয় করছে?
মাথা উপরনিচে নাড়লাম।শুদ্ধর পিছন থেকে কোনোমতে এডপশনের পেপার,হসপিটালের রিপোর্টস্ গুলো সরিয়ে ফেলেছি।আমার ভালোবাসায় এর কোনো প্রভাব নেই।আর তার জীবনেও এই সত্যিটার কোনো জায়গা আমি হতে দেবো না।তৃতীয়বার এর মুখোমুখি হয়ে এতোটুকো আঘাত পেতে দেবো না তাকে।উনি আমার দুগাল ধরে বললেন,
-আমার উপর ভরসা ছিলো না?
-নিজের উপর ভরসা হারাচ্ছিলাম শুদ্ধ।
-এতোটা ভিতু তুই?জানতাম না তো!
চোখ বন্ধ করে একটা জোরে শ্বাস নিলাম।পিছনের হাতে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলেছি কাগজগুলো।গালে রাখা তার হাতে হাত আর চোখে চোখ রেখে বললাম,
-আমি আপনাকে ভালোবাসি শুদ্ধ!
শুদ্ধ আটকে গেলেন।চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে তার।এদিক ওদিক তাকিয়ে,দু আঙুলে কপালে স্লাইড করে,জিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে অতিকষ্টে সেই জলকনাকে আটকে দিলেন উনি।একটু সময় নিয়ে একটানে আমাকে বুকে জরিয়ে নিলেন শক্তভাবে।বললেন,
-এতোটা সাহসী তুই?আজই জানলাম!
কেদে দিলাম আমি।শুদ্ধর দুফোটা চোখের জলও কাধে পরেছে আমার।মাথা তুলে দেখি চোখে পানি নেই,তবে জনাব নাকচোখ লাল করে ফেলেছেন।তার গালে আলতোভাবে একহাত রেখে বললাম,
-আপনাকে ভালোবাসি শুদ্ধ!ভালোবাসি!অনেকটা!এই অনেকটা কথাটাকে বলে বুঝাতে গেলে সময় তার মতো চলে যাবে শুদ্ধ,অপেক্ষার রোদ্দুরের উত্তাপ রয়ে যাবে,চারপাশ নানারঙে বারংবার রদবদল করতে থাকবে,আমার ভাষায় শব্দ কম পরে যাবে,তবুও আমার এই অনেকটা প্রকাশে কমতি রয়ে যাবে শুদ্ধ!তাই এটুকোতেই গ্রহন করুন এই ভালোবাসাকে।কথা দিচ্ছি,এ ভালোবাসার রোদ্দুর আর কোনোদিন,এক মুহুর্তের জন্যও পোড়াবে না আপনাকে।যেভাবে চাইবেন,সেইরঙে এই রোদ্দুরের আভায় শুধু রাঙাবো আপনাকে আর বর্ননাতীত ভালোবাসাকে।কথা দিচ্ছি শুদ্ধ!কথা দিচ্ছি!
দুগাল ধরে সারা চোখেমুখে পাগলের মতো অজস্রবার ঠোট ছোয়ালেন উনি আমার।মিশিয়ে নিলেন নিজের বুকের মাঝে।চরম শান্তিতে চোখ বন্ধ করে জাপটে জরিয়ে রইলাম তাকে।কথা রাখবো আমি শুদ্ধ!কোনোদিন এতোটুকো কষ্টের আঁচকে আপনার ধারেকাছে ঘেষতে দেবো না আমি।আপনাকে দুনিয়ার সব সুখ দেওয়ার দায়িত্ব আমি নিলাম শুদ্ধ!ওই দগ্ধ হৃদয়ে সবটা সুখবর্ষনের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করলাম আমি!সে সব সুখ আপনি পাবেন,যেগুলো আপনি ডিসার্ভ করেন।কথা দিচ্ছি!
#চলবে…