তোর নামের রোদ্দুর২ পর্ব 35

0
1226

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ৩৫

চেয়ারে হাত পা বেধে আটকে রাখা হয়েছে আমাকে।চোখ মেলার চেষ্টা করছি অনেকক্ষন হলো।পারছি না।চোখ বাধা আমার।মুখটাও বাধা বলে আওয়াজ বেরোচ্ছে না।কোথায় আছি,কেনো আছি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।হসপিটালে শুদ্ধর চিরকুট পরে ভয় হচ্ছিলো আমার।কল রিসিভ করছিলেন না উনি।আব্বুকেও ফোন লাগিয়েছি,উনিও রিসিভ করেন নি।চিন্তা বাড়লো আমার।আয়ান চৌধুরীর সবটা জানাতে হবে সবাইকে।যে করেই হোক!নইলে শুদ্ধরই…

ঠিক‌ করলাম ইমরোজ ভাইয়ার সাথে ঢাকায় ফিরবো।আম্মু খানিকটা সুস্থ্য তখন।আমার জোরাজুরিতে আমাকে ছাড়তে রাজি হয়ে গেলো সবাই।ইমরোজ ভাইয়া আসছিলো আমার সাথে।গাড়ি পার্কিং এরিয়া থেকে নিয়ে আসছিলো ও।আমি হসপিটালের গেইটেই দাড়িয়েছিলাম।হুট করেই একটা গাড়ি সামনে এসে দাড়ায় আমার।ভেতর থেকে দুজন লোক জোর করে টেনে তুলে নেয় আমাকে।জোরাজুরি করেছিলাম অনেক।লাভ হয়নি।মুখ আটকে ধরে তারা আমার।তারপর নিজেকে এভাবে আবিষ্কার করলাম।নড়াচড়া করে উঠতেই‌ কেউ বলে উঠলো,

-কেমন আছো ইনসিয়া?

সেই চেনা স্বর!দুবার কথা বলায় এই উক্তি চেনা হয়ে গেছে আমার।এটা আয়ান চৌধুরী।উনি কেনো এখানে?তবে কি উনিই আমাকে…

-উম্ ম উম্!

-ওপস্!ওয়েট!মুখ খুলে দেই তোমার!শুদ্ধর শ্যামাপাখির সুর বেরোচ্ছে না যে!

উনি মুখ খুলে দিলেন আমার।চোখটাও।চোখ মেলতে সামনেই আয়ান চৌধুরী।পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে বসে সে।চারপাশে তাকালাম।জায়গাটা বড়সর কোনো গোডাউন।কিন্তু আমি এখানে কেনো?চেচিয়ে বলে উঠলাম,

-আমাকে কেনো এনেছেন এখানে?

আয়ান হাসলেন।আবারো বললাম,

-এসব অসভ্যতামির মানে কি?এভাবে কেনো আনা হয়েছে আমাকে?

উনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালেন।বললেন,

-রিল্যাক্স!রিল্যাক্স ইনসিয়া!সবটা বলবো।আগে এটা শোনো তো!কেমন শোনা যায়?

-কোনো কিছুই শুনবো না আমি।ছেড়ে দিন আমাকে!যেত্….

উনি ঘাড় বাকিয়ে হেসে মুখের বাধন তুলে দিলেন আমার।আর শব্দ বেরোচ্ছিলো না।আয়ান হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলতে লাগলেন,

-বলো না,বলার কাজ আছে তোমার একটুপরেই।আগে শোনো!লাইভ নিউজ চলছে!তাতে বড়বড় হেডিংয়ে লেখা,”আজাদ গ্রুপের উত্তরসুরী ইরহাম আজাদ শুদ্ধ ব্যাংক রোবারিতে জড়িত।”সাংবাদিকেরা চেচিয়ে বলে চলেছে,”মিস্টার ইরহাম আজাদ শুদ্ধ ব্যাংক রোবারির মুখপাত্র।হ্যাক করে নিয়েছে বিশিষ্ট ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট মিস্টার রায়হানের ব্যাংক একাউন্টের ** কোটি টাকা।তার পারসোনাল পিসি থেকে সমস্ত প্রমান জোগার করতে ব্যস্ত পুলিশ।আসাদুজ্জামান আজাদের একমাত্র ছেলে,আজাদ গ্রুপের ভবিষ্যৎ ওনারের এতোবড় কুকীর্তি?টাকার লোভে অন্ধ হয়ে শেষে কিনা চুরি করলেন উনি?এতোবড় ডাকাতি?আরও ডট ডট ডট!কেমন ছিলো ইনসিয়া?এবার বলো!

উনি মুখ খুলে দিলেন আমার।বললাম,

-হাউ ডেয়ার ইউ?আপনি কি করে এইসব বলতে পারেন?শুদ্ধকে নিয়ে খবরদার যদি আরেকটা বাজে কথা বলেছেন তো আম্….

আয়ান অট্টহাসি হাসলেন খানিক।বললেন,

-লিসেন ইনসিয়া,এমনটাই নিউজ বেরোবে আজকের লাইভ খবরে!তোমার সো কলড্ বর,শুদ্ধ আসলে একটা চ্…

-শাট আপ!জাস্ট শাট ইউর মাউথ আপ মিস্টার আয়ান চৌধুরী!ছিহ্!এতোটা নিচ চিন্তাভাবনা আপনার?এতোটা নিচ আপনি?লজ্জা করে না?যে বন্ধু বলে আপনাকে এতোটা,এতোটা মানে,তাকে এসব মিথ্যে অপবাদ দিতে?এভাবে ফাস্…

-হেই?ওয়েট!কোনটা মিথ্যে?কোনো মিথ্যে নেই এতে!

-সবটা মিথ্যে!সবটা মিথ্যে বলছেন আপনি!আমি জানি আস্…

আয়ান উঠে দাড়ালেন শক্তভাবে।আমার হাত খুলে দিলেন উনি।এটাই চাইছিলাম।পায়ের বাধন খুলে আমিও দাড়ালাম চেয়ার ছেড়ে।সোজা হয়ে দাড়াতেই চোখের সামনে কিছু কাগজ তুলে ধরলেন উনি।বললেন,

-এইসব প্রমান আমার কাছে আছে ইনসিয়া!আর আমি চাইলেই শুদ্ধর পিসির সব প্রমান দু মিনিটে পুলিশের হাতেও চলে যাবে!

কাগজগুলোতে চোখ বুলালাম।ওগুলো দেখে শরীর কাপছে আমার।আয়ান কাগজ নামিয়ে নিচদিক তাকিয়ে তাচ্ছিল্যে হেসে বললেন,

-হোয়াট?বলেছিলাম না?শুদ্ধ একটা….

সজোরে চড় পরলো আয়ানের গালে।চড়টা আমিই দিয়েছি।সে লোকটা দুহাত পিছিয়ে গেছে।নিচদিক তাকিয়ে গাল ধরে থমকে আছে সে।পাশের দুটো লোক আমার দিকে এগোতে গেলেই আয়ান হাত দিয়ে থামিয়ে দিলেন ওদের।তারপর অগ্নিচক্ষু করে তাকালেন আমার দিকে।রাগে চোখ দিয়ে পানি পরছে আমার।উনি সোজা এসে আমার চুল মুঠো করে ধরলেন।ব্যথায় কুকড়ে বলে উঠলাম,

-আহ্!লাগছে আমার!ছ্ ছাড়ুন!ছাড়ুন আমাকে!

আয়ান চেচিয়ে বললেন,

-ছাড়বো?ছেড়ে দেবো তোমাকে?এই মুহুর্তে টুকরো টুকরো করে কেটে তোমাকে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে পারি আমি ইনসিয়া!কিন্তু তাতে শুদ্ধও মরে যাবে!আর সাথে আমার বোনও!এই একটাই দুর্বলতা আমার।তা বলে আয়ান চৌধুরীর গায়ে হাত তোলার সাহস কি করে হলো তোমার ইনসিয়া?হাউ?

সর্বশক্তিতে ঝাড়া মেরে ছাড়িয়ে দিলাম ওনার হাত।চেচিয়ে বললাম,

-সেভাবেই,যেভাবে আপনি নকল কাগজপত্র দেখিয়ে আমার কাছে শুদ্ধকে খারাপ প্রমান করার সাহস দেখিয়েছেন!

আয়ান আবারো তেড়ে এসে দুহাত চেপে ধরলেন আমার।বললেন,

-এই?বলেছি না তোমাকে?শুদ্ধ এই রোব্….

হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চড় লাগিয়ে দিলাম তার গালে।চেচিয়েই বললাম,

-আর একবার আপনার ওই নোংরা মুখে শুদ্ধর নাম নিলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না মিস্টার চৌধুরী!নিজের খারাপ কাজের দায় খবরদার শুদ্ধর ওপর চাপানোর চেষ্টা করবেন না!

রাগে কান্না করছি।হাত পা কাপছে আমার।ইচ্ছে করছে সামনের লোকটাকে খুন করে ফেলতে।আমাকে এভাবে দেখে,আমার কথা শুনে আয়ানও কিছুটা থমকে গেছেন।গালে হাত রেখেই একটু বিস্ময় নিয়ে বললেন,

-ম্ মানে?

-মানে বোঝেন নি এখনো আপনি?ফাইন!আমি বোঝাচ্ছি!এই সবগুলো কাগজ জাল!আমি জানি সবটাই!এই কাগজগুলোর যেখানে যেখানে শুদ্ধর নাম লেখা,সবখানে আসলে আপনার নাম মিস্টার আয়ান!

আয়ান মিস বিস্ফোরিত চোখে তাকালেন।বললেন,

-তুমি এসব….

-কি?আমি এসব কিভাবে জানি তাইতো?আমি সবটা জানি শুনে অবাক লাগছে?এটা তো আমার জানার কথা নয় তাইনা?সত্যিই,যার রক্ষক স্বয়ং শুদ্ধের মতো কেউ,তার কুকীর্তি সত্যিই আমার জানার কথা নয়।কিন্তু কি বলুনতো মিস্টার আয়ান চৌধুরী? সত্যিটা সত্যিই!হাজার মিথ্যের আড়ালেও তাকে চাপা দেওয়া যায় না।যেমনটা শুদ্ধও পারেন নি!আমি আজই আমাদের রুমে আপনার ইচ এন্ড এভরি ডিটেইলস্ খুজছিলাম।আপনার সবটা জেনে শুদ্ধকেও জানাবো বলে।তখনই এসবের মুল পেপারস্ হাতে আসে আমার!আর আমি জানি!সবটা আপনি করেছেন মিস্টার আয়ান চৌধুরী!সবটাই আপনি করেছেন!

-ক্ কি বলতে চাইছো তুমি?কিস্ কিসের মুল পেপারস্?

-এখনও বোঝেন নি?মুল পেপার্স মানে এই কাগজগুলোর আসল কপি।যেখানে স্পষ্ট লেখা,হ্যাকিংয়ের সমস্ত প্লানিং,ট্রেনিং আপনি,আপনিই কোথায় কিভাবে করেছেন,শুদ্ধর পিসিতে আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট,অফিসের স্টোররুমে বসে সবটা করার সিসিটিভির ফুটেজসহ সব প্রমান ছিলো ওতে।সবটা দেখে নিয়েছি আমি!

আয়ান মাথার চুলে উল্টে ধরে দিশেহারার মতো করতে লাগলেন।তারপর আমারদিক এসে বললেন,

-কোথায়?বলো সেসব কোথায়?সে ইট ইনসিয়া!বলো!

-বলবো না!রুমে ওগুলো শুদ্ধ নিজে লুকিয়ে রেখেছিলেন।অফিসের সিসিটিভি ফুটেজও উনি আব্বুর অগোচরে সরিয়ে ফেলেছিলেন।আমি জানতাম,শুদ্ধ কোনোদিনই আপনাকে দোষী সাব্যস্ত হতে দিতে চাইবেন না!তাই আমিই….

উনি হাত চেপে ধরলেন আমার।আরো জোরে চেচিয়ে বললেন,

-কোথায় আছে সেটা বলো!

-বলেছি তো বলবো না!বলবো না আমি!আর খবরদার ছোবেন না আমাকে।শুদ্ধ জানলে আপনার ওই হাত থাকবে না মিস্টার চৌধুরী!শরীর থেকে আলাদা করে দেবেন উনি ওই হাত!

উনি ছেড়ে দিলেন আমাকে।কি ভেবে বাকা হেসে বললেন,

-তুমি বেশ চালাক ইনসিয়া!

-মানে?

-মানে এটাই,আমাকে বাচাতে কোবো প্রুভ লুকানোর হলে শুদ্ধ সেটা তোমাদের রুমেই লুকোবে না।আর কোনো প্রুভ তোমার হাতে আসলে আমি এখনো জেলের বাইরে কি করে?এতোক্ষনে তো সেগুলো তোমার পুলিশের কাছে হ্যান্ডওভার করার কথা!রাইট?

-আ্ আমি আম্মুকে নিয়ে…

-ডোন্ট গিভ মি দিস বেসলেস লজিকস্!যদি সত্যিই পেপারস্ হাতে আসতো তোমার,ওটা আগে তুমি পুলিশকেই দিতে!

মাথা নিচু করে রইলাম।এটাই‌ ঘটেছে।না জেনে এতোবড় মিথ্যেটা বলেছি ঠিকই,কিন্তু সেটাই সত্যি হলো।কোনো পেপার্স দেখিনি।কিন্তু আমি জানতাম শুদ্ধ এমন কিছুই করবেন না।আর যেহেতু ঘটনাটা ঘটেছে,তারমানে তাকে ফাসানোর জন্যই কেউ এটা করেছে।মন বলছিলো,আয়ান চৌধুরীই সবটা করেছে।আয়ান চৌধুরীর এই অসহায়ত্ব দেখে এবার শিওর হয়েছিলাম আমি।আয়ান হাতে তালি বাজিয়ে আমার চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বললেন,

-ওয়াও!কি আন্দাজ তোমার!প্রশংসনীয়!একেবারে আউটস্ট্যান্ডিং যাকে বলে!

….

-তার থেকেও বেশি আমেজিং,শুদ্ধের প্রতি তোমার বিশ্বাস!এটারও তারিফ করতে হয়।এই বিশ্বাসের জোরেই এতোগুলো কথা এতো শক্তভাবে বলে দিলে তুমি।আর সেটাই সত্যি দাড়ালো!তোমার গলার জোর শুনে আমিও বোকার মতো স্বীকার করে নিলাম সবটা!

…..

-এনিওয়েজ,ভেবেছিলাম সোজা কথায় কাজ হবে।কি যে করো না তুমি!কি হতো আমার কথাগুলো,কাগজগুলো বিশ্বাস করলে?ইজিলি শুদ্ধকে বলতে পারলে ও একটা অপরাধী।আর ওউ তোমাকে…যাই হোক,আই হ্যাভ মাল্টিপল চয়েজ!

-দেখুন,আপনি কিন্তু…

-তুমি আগে এটা বলো,তোমার আম্মু কেমন আছেন?শুনলাম উনি হসপিটালাইজড্?

আটকে গেলাম।আয়ান ওভাবেই হেসে বললেন,

-চুপ‌ করে থেকো না ইনসিয়া!তোমাকে এখন শ্যামাপাখিইইইর মতো হাকডাক ছাড়তে হবে যে!

-আ্ আপনি…..

-ওয়েট!লেট মি শো ইউ সামথিং!

উনি পাশের ছোট টেবিলে রাখা একটা ট্যাবে কিছু অন করলেন।দেখার সাহস নেই আমার।আশপাশ দেখে পালানোর রাস্তা খুজছিলাম।কিন্তু দশ বারোজন লোক চারপাশ ঘিরে রেখেছদ আমার।গোডাউনের শার্টার নামিয়ে তালা ঝুলানো।উচু দেয়ালের একদম উপরে আলো আসছে সরু জানালাসদৃশ কিছু দিয়ে।আয়ান ট্যাবটা সামনে ধরলেন আমার।যা দেখলাম তাতে ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।আর্তনাতের মতো বলে উঠলাম,

-আম্মু!

-জ্বী না।এটা শুদ্ধের আম্মু!

শব্দ করে কেদে দিলাম আমি।আম্মুকেও আটকে রেখেছে এই লোক।পাশে মাহিও আছে।হাত,পা,চোখ,মুখ‌সব বাধা ওদের।ঘৃনার চোখে তাকালাম আয়ানের দিকে।যতোদুর জেনেছি,আম্মু,আব্বু কেউই আয়ানকে শুদ্ধের চেয়ে কম ভালোবাসতেন না।আর মাহিরও তো ওনার জন্য কিছুটা…

-আপনি ওদেরকেউ…..

-হ্যাঁ।মাহিকে কল করেছিলাম।বললো বাসায় শুদ্ধ নেই,ও আর মিসেস আজাদ একা।তাই….

-ওদের ছেড়ে দিন মিস্টার চৌধুরী! প্লিজ যেতে দিন ওদের!কেনো এমন করছেন?ওরা তো আপনাকে কতো ভালোবাসে!তবে কেনো….

-আই ডোন্ট কেয়ার!আই রিয়েলি ডোন্ট কেয়ার কে আমাকে ভালোবাসলো না বাসলো।অল আই নো ইজ,আমার বোন শুদ্ধকে ভালোবাসে।আর তাই শুদ্ধর পাশে আমার বোনকেই চাই!

-আপনি…..

-নেকামো ছাড়ো!নাও কাম টু দ্যা পয়েন্ট!আগেই‌ বলেছি,শুদ্ধকে কিছু করতে পারবো না,একইকারনে তোমাকেও কিছু করা সম্ভব না আমার।তাছাড়া তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কাজগুলো কে করে দেবে?তাই শুদ্ধর আরেক প্রানভোমরা আইমিন মিসেস আজাদকেও আনতে বাধ্য হলাম।এখন তুমিও আমার কথা মানতে বাধ্য।নইলে তোমার আম্মুর ক্ষেত্রে যে ট্রেইলরটা ছিলো,তারই পুরো পিকচার মিসেস আজাদের উপর হবে!

-ম্ মানে?

-যতোটা চালাক ভেবেছিলাম তোমাকে,ততটা তুমি নও।বলার পরেও মানে বোঝো না।শোনো,তোমার আম্মুর ওই ছোটখাট এক্সিডেন্টটা আমিই করিয়েছিলাম।জাস্ট একটু….

নির্বাক হয়ে গেলাম আমি।মানুষ কতোটা জঘন্য হলে এমনটা করতে পারে?তেড়ে এগোতে যাচ্ছিলাম তারদিকে।আয়ান হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

-হেই!ওয়েট!বলা শেষ হয়নি আমার!

কিছুই শুনি নি।এই লোকটার জন্য আমার আম্মু আজ মৃত্যুর পথযাত্রী হতে যাচ্ছিলো।কলার চেপে ধরলাম তার।চেচিয়ে বললাম,

-আজ আপনাকে শেষ করে ফেলবো আমি!

আয়ান গায়ের জোরে কলার ছাড়িয়ে‌ নিলেন নিজের।ইশারা করতেই দুটো লোক এসে আবারো জোর করে চেয়ারে বসিয়ে বেধে দিলো আমাকে।আমি চেচাচ্ছি,তবুও কারো কানে যাচ্ছে না তা।আয়ান তার নখ দেখতে দেখতে বললেন,

-এসব ফিল্মি ভঙিমা ছাড়ো।তোমার আম্মুকে মারার প্লান ছিলো না আমার।শুধু একটু….যাতে তোমার চোখে আমাকে নিয়ে ভয়টা থাকে।এটা বুঝতে কোনো সমস্যা না হয়,আমি আমার বোনের জন্য সব করতে পারি!মিসেস আজাদকে….

-না!কিছুই করবেন না আপনি আম্মুর!

-করবো!আলবাত করবো!অনেককিছু করবো!কিন্তু তারজন্যে দায়ী থাকবে তুমি!আর কারনটা হবে তোমার আমার কথা না মানা!

-না প্লিজ!আপনি…

-ওনাকে ছাড়ার একমাত্র শর্ত!আমি‌ যা চাই তাই করতে হবে তোমাকে।

-ক্ কি?কি চান আপনি?

উনি একদম মাসুম হেসে বললেন,

-দুটো জিনিস!শুদ্ধর জীবন থেকে তুমি চিরতরে সরে যাবে আর শুদ্ধ মুনকে বিয়ে করবে।দ্যাটস্ ইট!

কথাগুলো শুনে চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসতে লাগলো আমার।শুদ্ধর থেকে নিজেকে দুর,এটা তো কল্পনাও করতে পারবো না আমি!তবুও কোনোমতে নিজেকে সামলে বললাম,

-ক্ কিন্তু শুদ্ধ মুনিয়াকে ভালোবাসেন না!কোনোদিনও সুখী করতে পারবেন না উনি মুনিয়াকে।উনি তার শ্যামাপাখিকে ভালোবাসেন,আমাকে ভালোবাসেন!আর তাই উনি কোনোদিনও আম্….

-আবারো ফিল্মি ডায়লগ!শোনো ইনসিয়া,যখন তোমার প্রতি ঘৃনাটা এক আকাশসম হবে,তখন ও‌ মুনকেই ভালোবাসবে।তোমাকে ঘৃনার তীর ছুড়ে মুনকেই বিয়ের মালা পরাবে ও।ওর শ্যামাপাখির এ আসক্তি কাটিয়ে ঠিক চাদ সওদাগরের সওদা হওয়া মনকে দাম দেবে ও।ঠিক দেবে!আর তার ব্যবস্থা তুমি নিজে করবে ইনসিয়া!ইউ উইল ডু ইট!তোমাকে বলেছিলাম,আয়ান চৌধুরী এমন কিছু গিফট্ দেবে তোমাকে,যা আজীবন মনে রাখবে তুমি।সো আর ইউ রেডি ফর ইট?আমার দেওয়া উপহার গ্রহনের জন্য প্রস্তুত তুমি?

চোখ দিয়ে পানি পরছে আমার।ভয়টা সব সীমা পার করে যাচ্ছে।এই লোকটা এক আম্মুর এক্সিডেন্ট করিয়েছে,আরেক আম্মুকে ওভাবে আটকে রেখেছে,হ্যাকিংয়ের সবটা দায় শুদ্ধর উপর চাপাতে যাচ্ছিলো,আর কি বাকি আছে?সেটা কোনোভাবে আমার মৃত্যু হলেও তা মানতে পারবো আমি,কিন্তু শুদ্ধকে এতোটুকো কষ্ট দেওয়ার মতো কিছু সহ্য করতে পারবো না!পারবো না আমি!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here