তোর নামের রোদ্দুর২ পর্ব 22

0
1076

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা ‌মাশরেকা
পর্বঃ২২

শুদ্ধ এখনো একধ্যানে নিচদিক তাকিয়ে।এতোক্ষন যাবত তার ওমন পাথর হয়ে দাড়িয়ে থাকা দেখে আমার মনের ভেতরে ওঠা ঝড় বেড়েই চলেছে।অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে।আর পারছি না তাকে ওভাবে দেখতে।আর পারছি না তার মৌনতা মানতে।এগিয়ে গিয়ে ধীর গলায় বললাম,

-আ্ আপনি,এখানে,এভাবে….

….

-দ্ দীদুন কৌটোগুলো….

উনি চোখ তুলে তাকালেন আমার দিক।লাল হয়ে গেছে চোখজোড়া।ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো আমার।ওমন কেনো দেখাচ্ছে তাকে?কান্না করেছেন?নাকি করতে চলেছেন?শুদ্ধ সোজা হয়ে দাড়িয়ে এগোলেন আমার দিকে।হাতের কোটোদুটো নিয়ে ফ্লোরে রেখে দিলেন নিরবে।শান্ত গলায় বললেন,

-আবারো অপেক্ষা।

….

-আবারো সেই দুরে থাকার যন্ত্রনা।

…..

-আবারো সেই অপেক্ষার রোদ্দুর।

চোখ নামিয়ে নিলাম।আজও তাকে বলার কিছু নেই আমার কাছে।শুদ্ধ বললেন,

-ঠিক কতোবার আর জ্বলবো?কতোবার পুড়বো তোর নামের রোদ্দুরে বলতে পারিস?কতোবার তোর এতোটা কাছে এসেও দুরে সরে যেতে হবে আমাকে?কতোবার সিয়া?কতোবার?

দু হাত মুঠো করে নিলাম।এবার কষ্ট হচ্ছে আমার।বলতে ইচ্ছে করছে,”এসব বলে আমাকে দুর্বল করে দেবেন না প্লিজ শুদ্ধ।তারচেয়ে এটা বলুন না,খুব তাড়াতাড়ি এসে তোকে একদম নিজের করে নিয়ে যাবো সিয়া!”কিন্তু আপনি তো সেই অপেক্ষার রোদ্দুরের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন শুদ্ধ।ক্ষতবিক্ষত লাগছে আমার।

শুদ্ধ ধীর পায়ে এগিয়ে এসে আমার ওড়না ধরে মাথায় ঘোমটা তুলে দিলেন।আবারো পিছিয়ে দাড়িয়ে পা থেকে মাথা অবদি দেখে বললেন,

-তোর পিছনের কৃষ্ণচূড়ার সাজ দেখেছিস?রঙটা ফ্যাকাশে লাগছে ওটার।তোর ওড়নাটাই আরো বেশি লাল দেখাচ্ছে।মাথায় ঘোমটা দিয়ে একদম বউ বউ লাগছে তোকে!

এটুক বলে শুদ্ধ আমার ঘাড়ের চুলগুলো মুঠো করে ধরলেন।চোখ বন্ধ করে নিলাম।উনি আমার মাথা ঠেকালেন তার বুকের সাথে।অনেকটা শক্ত করে ধরে রেখেছেন।আর আমি নিজের জামা মুঠো করে ধরে রেখেছি।বেশ কিছুটা সময় পর উনি বললেন,

-কষ্ট হচ্ছে না তোর?

খুব কষ্ট হচ্ছে আমার শুদ্ধ!আপনাকে ছেড়ে থাকতে হবে সেটা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে-কথাটা চিৎকার করে বলতে পারলে ভালো লাগতো আমার।শান্তি পেতাম আমি।কিন্তু এখন আমার দুর্বল হওয়া চলবে না।আপনিও তাহলে আরো বেশি কষ্ট পাবেন।আস্তেধীরে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালাম।মুখেও উহুম আওয়াজ করেছি।আলগা হয়ে আসলো শুদ্ধের হাত।আমাকে ছেড়ে উনি পিছিয়ে দাড়ালেন।চোখ তুলে তাকালাম।শুদ্ধ তাচ্ছিল্যে হেসে বললেন,

-এটাই বলার ছিলো তোর?

বিস্ময়ে তাকিয়ে আমি।উনি চোখ সরিয়ে অন্যদিক তাকিয়ে বললেন,

-ভেবেছিলাম তুই বলবি কষ্ট হচ্ছে শুদ্ধ!আপনাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না!প্লিজ যাবেন না আমাকে ছেড়ে!আপনার থেকে দুরে থাকার কথা ভাবতেও প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে আমার!

-শুদ্ধ আমি….

-ভেবেছিলাম তোর কথাগুলো শুনে আমি কথা দেবো তোকে,আজ এটাই প্রথমবারের মতো,এটাই শেষবারের মতো ছিলো সিয়া।এরপর কোনোদিন আমার থেকে দুরে থাকার কষ্ট পেতে হবে না তোকে।আর কোনোদিন এ কষ্ট পেতে দেবো না তোকে!কোনোদিনও না!

একটু থামলেন শুদ্ধ।আবারো আমারদিক ফিরে দু পা এগিয়ে দুগাল ধরলেন আমার।কপালে কপাল ঠেকিয়ে অসহায়ের মতো বললেন,

-কিন্তু তুই তো উল্টোটাই বললি শ্যামাপাখি।তোর কষ্ট হচ্ছে না।আর আমার?তোকে ছেড়ে আরো কিছুদিন দুরে থাকতে হবে ভেবেই আমার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।দম বন্ধ লাগছে।মৃত্যুযন্ত্রনা অনুভব হচ্ছে আমার সিয়া!

-শ্….

-বিশ্বাস কর,আজ প্রথমবার তোর কষ্ট হচ্ছে শুনতে পেলে আমি খুশি হতাম সিয়া!বড্ড শান্তি পেতাম!

এটুক বলেই উনি আমার গাল ছেড়ে দরজা খুলে চলে গেলেন ছাদ থেকে।এবার টপটপ করে পানি পরতে লাগলো আমার।আর ধরে রাখতে পারি নি।নিচেই বসে নিরবে কাদতে লাগলাম।বলা কথা আর না বলা কথা!দুটোর ভাজেই আজ শুধু কষ্টটারই বিচরন।শুধুই দুরে সরে যাওয়ার যন্ত্রনা!

_____________

শেহনাজ মন্জিল পুরো শুনশান।কিন্তু তিনটেদিন আগেই সব্বাই মিলে কতো হৈ হুল্লোড়ে মেতে ছিলো এই বাসাতেই।যীনাত আপু,তাপসী আপুরা,সেজোমারা সবাই চলে গেছে।আজ সকালেই সিফাত ভাইয়া,সীমা ভাবি কক্সবাজারের জন্য বেরিয়ে গেছে।চুপচাপ লান্চ সেরে রুমে ঢুকলাম।ইরাম রুমে এসে বললো,

-অনন্যাদের বাসায় যাচ্ছি।এসাইনমেন্ট নিয়ে একটু ঝামেলায় পরেছি।আসতে দেরি হবে।

-আচ্ছা যা!

ও চলে গেলো।টেবিল থেকে ফিজিক্স বইটা নিয়ে বেডে এসে বসলাম।বই খুলতেই শুদ্ধর সেই‌ চিরকুট!যেটা উনি আয়নায় লাগিয়েছিলেন।ওটা দেখে টুপ করে দু ফোটা জল গাল বেয়ে পরলো।লোকটা অনেক নিষ্ঠুর একটা লোক।এতো ভালোবাসি ভালোবাসি করেও যাওয়ার দিন একটাবার তাকান নি পর্যন্ত আমার দিকে।আর এই তিনদিনে?একটা ফোন করেন নি।কোনো খোজ নেননি আমার।আদৌও বেচে আছি কি না!চোখ মুছে ওটা রেখে দিলাম আবারো।আমাকে মনে করে না যে,তাকে মনে করে কেনো কাদবো আমি?

অনেকক্ষন এটা ওটা করায় মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলাম।কিন্তু ভালো লাগছে না কিছুই।বেরিয়ে এলাম রুম থেকে।দুর থেকে দেখলাম,শুদ্ধর ঘরটা তালাবন্ধ।গুটিগুটি পায়ে ইমরোজ ভাইয়াদের ঘরের সামনে আসলাম।ইমরোজ ভাইয়া,তামিম ভাইয়া ওরা কেউ নেই বাসায়।ঘরে ঢুকে সারাঘরে চোখ বুলালাম একবার।ওয়াশরুমের দরজায় দিকে তাকাতেই হাসি পেলো।সেদিন ওই দরজাতেই শুদ্ধ সাবান মাখা গায়ে দাড়িয়ে ছিলেন।ফিক করে হেসে দিলাম আমি।বাস্তবতা মনে পরতেই চুপ করে গেলাম আবারো।টেবিলে রাখা হেলান দিয়ে রাখা গিটারটা নিয়ে চুপচাপ বেরিয়ে এলাম।

রুমে ফিরে এসে ব্যালকনির রেলিংয়ে উঠে গিটারটা কোলে নিয়ে বসলাম। এটা নিয়ে সেদিন গান গেয়েছিলেন শুদ্ধ।তার স্পর্শ এতে লেগে আছে।টুংটাং সুর তুলছিলাম চোখ বন্ধ করে।কান্নাও পাচ্ছিলো।কিন্তু ফোনের শব্দে স্বাভাবিক হলাম।যীনাত আপুর ফোন।তিনদিনে ওর ফোন কতোবার এসেছে তার হিসেব নেই।আলিফ মৌনতাও অনেকবার ফোন করেছে।কলটা রিসিভ করলাম।

-কিরে বুচি?এতো সময় লাগে ফোন রিসিভ করতে?কি করছিলি তুই?

-কিছু না।বলো কি বলবে?

-কি‌ বলবো মানে?কেমন আছিস?

-আধা ঘন্টা আগেই তো বললাম ভালো আছি।আর দিনের মধ্যে ছ বার ভালো আছি বলা হয়ে গেছে।

-আচ্ছা।এবার বল কি করছিলি?

-বসেছিলাম।

-বসে বসে কি করছিলি?

-কিছু না আপু।

-আচ্ছা বলবি না যখন,ফোন রাখছি।

-আরে,কল কেটো না।কথা বলি।

-তাহলে বল কি করছিলি?

-ব্যালকনির রেলিংয়ে তামিম ভাইয়ার গিটারটা নিয়ে বসে আছি।

-ওয়াও!ইনসু গিটার নিয়ে বসেছে।তাহলে এক কাজ কর,একটা গান শুনিয়ে দে!বোর লাগছে!

-আপু আমি গান গাওয়ার জন্য আনি নি গিটারটা।

-তাহলে?

-ক্ কিছু না।ইচ্ছে করছে না গাইতে।

-না।আমি শুনবোই!

-আপু….

-ইনসু!

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।জেদ করেছে শুনবে,শুনবেই।ফোনটা পাশে লাউডস্পিকারে রেখে গিটারটায় সুর তুলে গাইতে লাগলাম,

দুরে যে ছিলে,ভালোই তো ছিলে
প্রেমের চিঠি,পুরোনো খামে
আড়াল রাখি,আমি সামলে দু চোখে
লুকিয়ে রাখা,পুরোনো নামে…
দেখা হবে,ভাবি নি আগে
দুর…দুরে বহুদুরে,পথ গেছে সরে
কেনো এলে,তবে ফিরে,
অচেনা এ তীরে,স্মৃতিদের ভীড়ে
হারিয়ে গেছি কবে যে….(ii)

দুরে থেকেও ক্ষনিকের কাছে আসা
অবুঝ সময়,মুহুর্ত অজানা
ও,আগলে গেছি যেটুকো,আছি বেচে
বলবো কি করে,যেটুকো বলার আছে
দেখা হবে ভাবিনি আগে…
দুর,দুরে বহুদুরে……হারিয়ে গেছি কবে যে(ii)

-ওয়াও ওয়াও ওয়াও!

কাদছিলাম আমি।চোখ মুছে গিটারটা ছেড়ে নিচে নামলাম রেলিং থেকে।ফোনটা কানে ধরলাম।যীনাত আপু বললো,

-খুউউউউব সুন্দর ছিলো ইনসু!

….

-এই গানটা কেনো গাইলি তুই ইনসু?

-এ্ এমনি।ভালো লাগছিলো না তাই…

-কেনো?ভালো লাগছে না কেনো?

…..

-বল না!কেনো খারাপ লাগছে?

…..

-শুদ্ধর কথা মনে পরছে তাইনা?

কিছুটা কেপে উঠলাম।সত্যিই তাই।নিজের কাছে অস্বীকার করার কিছুই নেই।তার কথা খুব মনে পরছে আমার।খুব!যীনাত আপু বললো,

-এতো লুকোচুরির কি আছে বলতো?তোর হবু বর ও!দুরে আছিস,কষ্ট তো হবেই।ফোন করে কথা বল!এজ সিম্পল এজ দ্যাট!

কান্নাপ্রায় আওয়াজে বললাম,

-সে কেনো ফোন করলো না আপু?

-পাগল‌ী মেয়ে!তা বলে তুইও ফোন করবি না?এমনিতেও ও ব্যস্ত থাকে সেজোমামার সাথে অফিসে।আর তাছাড়া এমনটাও তো হতে পারে যে ওউ তোর ফোনের জন্য অপেক্ষা করে আছে।ফোন করিসনি,অভিমান করেছে হয়তো!

…..

-এবার এসব বাদ দিয়ে ফোনটা কর বুঝলি?রাখছি আমি!

আপু কেটে দিলো ফোন।কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থেকে কাপাকাপা হাতে ডায়াল করলাম শুদ্ধর নাম্বার।বুকের ভেতর ধুকধুক ধুকধুক করছে।কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে যেনো।দুবার রিং হতেই কলটা রিসিভ হলো।নিশ্বাসের শব্দ কানে আসলো আমার।হৃদয়জুড়ে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো ওই নিশ্বাসের শব্দে।কিছুক্ষন নিরবতা।চোখ বন্ধ করে ওপাশের মানুষটার সেই নিশ্বাসের শব্দই অনুভব করছি শুধু।

-কিছু বলবি?

চোখ মেললাম।এই স্বর!এ তিনদিনে কতোটা খুজেছি এই গলার আওয়াজটাকে তা নিজেও জানি না।কাপাকাপা গলায় বললাম,

-ক্ কেমন আছেন?

-এইতো।

-কাকু?সেজোমা?ওরা কেমন আছে?

-ওরা ভালোই আছে।ও বাসার সব?

-ভালো আছে।

….

-আমি কেমন আছি তা জানতে চাইবেন না?

-কেমন থাকবি তার আন্দাজ আছে,তাই জিজ্ঞাসা করিনি।

-আপনার আন্দাজ আপনাকে কি জানান দিলো শুদ্ধ?কেমন আছি আমি?

-তিনদিন আগে যেমন দেখে আর শুনে আসলাম।তেমনি।কষ্টে নেই,ভালোই আছিস।

-আমি ভালো নেই শুদ্ধ!

-এক কাজ কর,ফোনটা রেখে কাকু বা ছোটমাকে নিয়ে ডক্টরের কাছে চলে যা।নয়তো কাকুকে বল বাসায়ই ডক্টর নিয়ে আসতে।

-কেনো এমন করছেন শুদ্ধ?

-ভুলটা কি করলাম?নাকি এটুক উপদেশ দেওয়ার অধিকারও নেই?

এবার শব্দ করে কেদে দিলাম আমি।অনেকক্ষন হলো তার এতো কঠিন কঠিন কথা শুনছিলাম।ঠোট কামড়ে ধরে কান্নার আওয়াজ চেপে রেখেছিলাম।আর পারলাম না।কাদতে কাদতেই‌ বললাম,

-এমন করবেন না প্লিজ শুদ্ধ!আই মিস ইউ!আই মিস ইউ আ লট!

কলটা কেটে গেলো।কান্নার বেগ বাড়লো আমার।আরো কয়েকবার কল করলাম তার ফোনে।উনি রিসিভ করেন নি।ফোন বুকে জরিয়ে এবার চিৎকার করে কাদতে লাগলাম আমি।এর আগে কোনোদিন শুদ্ধের কোনো ব্যবহারে এতোটা কষ্ট হয়নি আমার।তার থেকে এই‌ তিন দিনের দুরুত্ব স্পষ্টভাবে আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে,এ দুরুত্ব ঠিক কতোটা জ্বালাচ্ছে আমাকে।অপেক্ষার রোদ্দুর ঠিক কতোটা পোড়াচ্ছে আমাকে।তার এই ইগ্নোরেন্স!খুব কষ্ট হচ্ছে।মনে হচ্ছে তার এই ব্যবহারে মরে যাচ্ছি আমি।বুকের ভেতরটায় কেউ যেনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত হানছে।

বিচ্ছেদের এই যন্ত্রনা!এ যে শুদ্ধর ভাষ্যমতে শুধু ভালোবাসাতেই হয়।একমাত্র ভালোবাসার জন্য অপেক্ষার রোদ্দুরই এভাবে পোড়ায়।ভালোবাসার মানুষটার থেকে পাওয়া একটু অবহেলাতেই যে এতোটা কষ্ট হয়।তবে আর সন্দেহ কোথায়?আমি যে ভালোবাসি আপনাকে শুদ্ধ।ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে।আপনার সিয়া ভালোবাসে আপনাকে।ফোনটা রিসিভ করুন শুদ্ধ!বলতে দিন আমাকে!কাছে ছিলেন,বুঝিনি।দুরে গিয়ে যে অসম্ভব এক যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে আমাকে পরিস্কার করে বুঝিয়ে দিলেন আপনি,আপনাকে ভালোবাসি শুদ্ধ!ভালোবাসি!

#চলবে…

[কালকের পর্বটার জন্য একটু মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবেন ?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here