তোর নামের রোদ্দুর২ পর্ব 17

0
1305

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ১৭

“জানি,ভালোবাসো।জানি,মনে মনে আমাকেই ডেকে চলেছো অনবরত।জানি,একলা অবসরে আমার অনুপস্থিতে আমাকেই অনুভবের চেষ্টা করো।জানি।সবটাই জানি।আর তাই এবার শুধু তোমাকে জানানোর পালা।তোমার এই সুপ্ত অনুভুতিগুলোকে প্রকাশ্যে আনার পালা।তৈরী থেকো।”
-ইতি
শুধু তোমারই
ইমরোজ

-ইমরোজ?

যীনাত আপুর চিরকুটটা পড়া শেষ হতেই তাপসী আপু চরম অবিশ্বাসের স্বরে বলে উঠলো।বাকিসবও কম বিস্মিত হয়নি ঘটনায়।এতোক্ষন অবদি তো লজ্জায় নুইয়ে ছিলাম এটা ভেবে নিশ্চিত সেদিনের মতো শুদ্ধই লিখেছে এই চিরকুট।ওটা যীনাত আপু পেয়েছে,ইমরোজ ভাইয়ার রুমের জানালার বাইরে।যেহেতু শুদ্ধও ওখানে যায়,তাই এটা শুদ্ধর ভেবে ওরা আমাকে একপ্রকার দাড় করিয়ে পড়ে শুনাচ্ছিলো।কিন্তু না,এতে তো ইমরোজ ভাইয়ার নাম লেখা।বাকা হেসে বললাম,

-তাপসী আপু?তোমার ভাই ফেসেছে।খুব তো সিঙ্গেল সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজে।এবার কি হলো?

তাপসী আপু খিচে উঠে বললো,

-তুই চুপ থাক!ওর মতো আহম্মকরে কেউ ভালোবাসতো না!যীনাত?দে তো আমিও দেখি কার হ্যান্ডরাইটিং ওটা?

আপু কেড়ে নিয়ে দেখলো চিঠিটা।চুপ মেরে গেলো তারপরই।সত্যিই ওটা ইমরোজ ভাইয়ার হাতের লেখা।অসহায়ের মতো বললো,

-হায় রে!কোন মেয়ের যে কপাল পুড়লো!

সবাই জোরে হেসে দিলাম।সীমা ভাবি মিনমিনে গলায় বললো,

-ওভাবে কেনো বলছেন আপু?মেয়েটা কে খোজ লাগান।একসাথে বাসার সবগুলোকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া যাবে।

বিয়ের কথা শুনে আবারো চুপসে গেলাম।ইরাম লাফিয়ে উঠে বললো,

-ঠিক বলেছো ভাবী!উম…খোজ লাগাতে হচ্ছে!

যীনাত আপু বললো,

-তাহলে দের কিস বাত কি?চলো গার্লস!মিশন ইমরোজ’স গার্লফ্রেন্ড!

-চলোহ্!

বলেই এক্সাইটমেন্ট নিয়ে পা বাড়াতে যাচ্ছিলাম।ইমরোজ ভাইয়ার গফ তল্লাশি হবে আজ।কিন্তু পরপরই মনে পরলো রুমটাতে শুদ্ধও থাকেন মাঝেমধ্যে।যদি এখনো ওখানে থাকেন তবে?সাথেসাথে দাড়িয়ে গেলাম।তাপসী আপু ঠোট টিপে হেসে ব্যস্ততা দেখিয়ে বললো,

-কি হলো ইনসু?চল যাই?ইমরোজের রুম সার্চ করতে হবে তো!

-ইয়ে মানে,ত্ তোমরা যাও।আমি সবে গোসল করেছি তো,চুল শুকাবো হেয়ার ড্রায়ারে।প্ পরে আসছি।যাও তোমরা।

-তা আর হচ্ছে না বাছাধন!ইমরোজ বাইরে গেছে।এই সুযোগ!সবাই মিলে হাত লাগালে সোজা হবে ব্যাপারটা!

-কিন্তু….

যীনাত আপু হাক ছেড়ে বললো,

-ইরু?গিয়ে দেখতো শুদ্ধ আবার ওই রুমে কি না?ও থাকলে তো আর সম্ভব না।আগে তুই‌ দেখে আয় ও রুমে আছে নাকি নেই।

ইরাম দৌড় লাগালো।আমি শ্বাস নিলাম।ইরাম একটুপরেই ফিরে এসে বললো,

-পুরো মাঠ ফাকা গাইস!শুধু গোল দিবো!চলো চলো!

যীনাত আপু টানতে টানতে নিয়ে আসলো আমাকে।পিছনে তাপসী আপু,সীমা ভাবি,ইরামও।ওরা রুমে ঢুকে পরলো হুড়মুড়িয়ে।আর আমি দরজার কাছে এসে উকিঝুকি দিলাম।নাহ্!কেউ নেই।নিশ্চিন্তে এটা ওটাতে খোজাখুজি শুরু করলাম।ওরাও ঘর উল্টেপাল্টে দিচ্ছে একদম।বিছানার চাদর,ওয়ারড্রোবের উপরের দিকটা,কিছুই ঠিক নেই।টেবিলের বইখাতাগুলো আমি আর তাপসী আপু ছড়িয়েছিটিয়ে দেখছি।নাহ্!কিছুই নেই।টেবিল ছেড়ে আলমারীর দিকে যাবো,হুট করে ওয়াশরুমের দরজা খুলে কেউ সামনে দাড়ালো আমার।

মাথা মুখসহ সারা গা ভর্তি সাবানের ফেনা লেগে থাকা মানুষটাকে দেখে ভুত দেখার মতোই চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।নিজের কানে হাত দিয়েই আআআআ বলে চেচিয়ে উঠেছি।মেয়েরা সবাই আটকে গেছে।চেচানো শেষে চোখ পিটপিট করে খুললাম আমি।মানুষটা চোখ আর কপালের সাবান সরিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললো,

-হোয়াট?ভুত দেখেছিস নাকি?রুমে ডাকাত পরেছে,চেচানোর কথা তো আমার।তুই চেচাচ্ছিস কেনো?

শুদ্ধ!আমি আপাদমস্তক তাকালাম তার দিকে।আধভেজা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট,সাদা চিকন হাতার স্লিভস গেন্জি গায়ে।সে এই ওয়াশরুমে কেনো?অর্ধনগ্ন হয়ে এভাবে বাইরে বেরিয়েছে কেনো?প্রশ্নগুলো মস্তিষ্ক পেরিয়ে গেলো।চোখ আবারো তার সারাগায়ে লেগে থাকা ফেনাকে তাক করলো।ফিক করে হেসে দিলাম আমি।ভাবি,আপুরাও হাসছে শব্দ করে।ওদের হাসির আওয়াজ শুনে আমি আরো জোরে পেট ধরে হাসতে লাগলাম।শুদ্ধ বললেন,

-হাসছিস কেনো এভাবে?

…..

-হাসছিস কেনো?বলবি তো!

….

-এভাবে হাসতে থাকলে অঘটন ঘটিয়ে ফেলবো আমি সিয়া!

আমি চুপ করে গেলাম।সরে দাড়িয়েছি অনেকটাই।আপুরা তখনও হাসছে।এখান থেকে কেটে পরাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।যেইনা দৌড় লাগাতে যাবো,শুদ্ধ আমার হাত ধরে ফেললেন।অসহায়ভাবে তারদিক তাকিয়ে হাত মোচড়াতে লাগলাম আমি।উনি আমার চাওনিকে এতোটোকো পাত্তা না দিয়ে আপুদের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-হলোটা কি তোমাদের?এভাবে হাসতে রুমে এসেছো?

তাপসী আপু হাসতে হাসতেই বললো,

-আগে তুই‌ বল তুই ইমরোজের ওয়াশরুমে কেনো?আর গোসল শেষ না করে এভাবে গা ভর্তি সাবানের ফেনা নিয়ে বেরিয়ে এলি কেনো?

-আমার রুমের শাওয়ারে প্রবলেম হয়েছে তাই এখানে এসেছি।আর ওয়াশরুম থেকে ঠুকঠাক আওয়াজ পেলাম,ভাবলাম চোরডাকাত এসেছে রুমে,তাই আর দেরি করিনি!

যীনাত আপু হাসতে হাসতে ইরামের মাথায় চড় মেরে বললো,

-এই দেখে গিয়েছিস তুই?শুদ্ধ এ রুমে নেই?

ও মাথায় হাত বুলিয়ে কাদোকাদোভাবে বললো,

-রুমে তো ছিলোই না।বেরোলো তো ওয়াশরুম থেকে।

শুদ্ধ মুখ খুললেন এবার।বললেন,

-হয়েছে থাক।দোষ করেছো,শাস্তি ভোগ করো।

সীমা ভাবি বললো,

-আমাদের শাস্তি দেবেন ভাইয়া?

-না না।তা কেনো আমার সুইট নতুনভাবী?কোনো শাস্তি নেই তোমাদের!

দম নিলাম।হাত ছাড়লেই বাচি এবার।শুদ্ধ আমার দিক তাকিয়ে একটা টেডিস্মাইল দিয়ে বললেন,

-শাস্তি তো এটাকে দেবো।তোমরা উল্টোপাশ ঘোরো!

চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম আমার।ওরা চটপট উল্টোদিক ঘুরলো।ইরামকে যীনাত আপু ধরে রেখেছে।শুদ্ধ একটানে তার কাছে টেনে নিলেন আমাকে।উনি আমার দুহাতের কব্জি ধরে রেখেছেন দুহাতে।মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে নিলাম আমি।কানে গোজা চুলগুলো ছাড়িয়ে উনি ফিসফিসিয়ে বললেন,

-এভাবে ভেজা চুল নিয়ে আমার সামনে না আসলেও পারতি!

কেপে উঠলাম।উনি মুখটা একদম আমার কানের কাছে এনে বললেন,

-রুমটার দশা দেখেছিস?তোর হাসিতে এরচেয়ে বড়সড় তান্ডব বয়ে গেছে মন জুড়ে আমার!

শ্বাস দ্রুত চলতে লাগলো।ঢিপঢাপ,ঢিপঢাপ শব্দটার তীব্রতা বেড়েছে।শুদ্ধ তার চোখেমুখে লেগে থাকা সাবানের ফেনা ছাড়িয়ে আমার গালে ছুইয়ে বললেন,

-শাস্তি!

এটুক বলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে সরে দাড়ালেন উনি।আপুরা পিছন ফিরেছে।গালে হাত ছুয়ে ফেনা দেখে রাগ উঠলো আমার।একপলক সবার দিকে অগ্নিদৃষ্টি ছুড়ে দিলাম।শুদ্ধর দিক তাকিয়ে মাটিতে পা ছুড়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে।আসার সময় সবগুলোর অট্টহাসি কানে বাজলো শুধু।রাগ নিয়ে গাল ডলতে ডলতে ড্রয়িংরুমে আসলাম।আম্মু ডাক লাগিয়ে বললো,

-তোকে নিয়ে আমি পাগল হয়ে যাবো!

-কি করলাম আবার?দেখো বেহুদা দোষারোপ করবা না।সকাল থেকে কারো কোনো কাজ বিগড়াইনি আমি আজ!

-গোসলটাও ঠিকমতো করতে পারো না?এখনো হাতে সাবান লেগে আছে দেখ!

কব্জিতে সাবানের ফেনা!ওটা মুছে গাল ফুলিয়ে সোফায় বসলাম।তখনই কলিং বেলটা বেজে উঠলো।আম্মু নজর তাক করেই আছে।দরজাটা খোল ইনসু।চরম বিরক্তি নিয়ে গেলাম দরজা খুলতে।বাইরের ব্যক্তিকে দেখে অবাকই হলাম।সিফাত ভাইয়ার বড় মামার আগমন।কাজের জন্য যে বিয়েতে আসেনি,সে আজ এ‌ বাসায় কেনো?দু হাতে দুটো মিষ্টির হাড়ি নিয়ে ঠোটে ইয়া বড় হাসি ঝুলিয়ে দাড়িয়ে আছেন উনি।আমাকে দেখে আরো বড় করে হাসলেন।আমিও হেসে সালাম দিয়ে দরজা থেকে সরে দাড়ালা‌ম।উনি সালামের উত্তর নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন।হাড়িদুটো হাতে দিয়ে বললেন,

-কেমন আছো ইনসিয়া?কতো বড় হয়ে গেছো তুমি!সেই কবে দেখেছিলাম তোমাকে।সিফাতের বিয়েতে ধানের কারবারের জন্য আসতে পারলাম না।তোমার মামী এসে দেখে গিয়ে আমাকে বললো তোমার কথা।আমাদের কথা মনে পরে না বুঝি তোমার?যাওনা কেনো?শুনলাম তোমার নাকি আংটিবদল হয়ে গেছে?সেজো ভাইজানের ছেলে শুদ্ধর সাথে নাকি?ও ছেলেটাকে তো এখনও দেখলাম না।কোথায় সে?

উনি একদমে এতোগুলো কথা বলে ফেলেছেন যে ঠিক কোনটার কোনটার উত্তর দেবো বুঝে উঠতে পারলাম না।এভাবে আমার কাছে এসেই শুদ্ধর কথা জিজ্ঞাসা করছে,ইতস্তত লাগছে প্রচন্ড।কথা ঘোরাতে জোর করে হেসে বললাম,

-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি মামা।আপনি কেমন আছেন?

-আল্লাহ অনেক ভালো রেখেছে।বোঝোই তো,একবার কাজ লাগলে সময় করে উঠতে পারি না।আমাদের তো আবার….

সবাই বেরিয়ে এলো এরমধ্যে।মামা সবার সাথে কুশল বিনিময় করলেন।এখন কথা চলছে তাদের বাড়িতে যাওয়া নিয়ে।তাদের ওখানে এখন নাকি নতুন ধান ঘরে তোলার পর পার্বন চলছে।অনুষ্ঠানের আমেজ সবখানে।তাই সবাইকে নিয়ে যেতে এসেছেন উনি।এমনিতেও সবাই তো যেতোই।উনি আসাতে আরো খুশি হয়ে গেলো সবাই।মেজোমা এসে বললো,

-জানো বড়ভাই?ইয়াদ ভাই বলেছে ইনসিয়াকে যেতে দেবে না তোমাদের বাড়ি।

মামা বললেন,

-তাই নাকি?তা কেনো?

আমি মাঝখান থেকে বললাম,

-যেতে দেবে না কখন বললো মেজোমা?বলছে তো আমার পড়াশোনার কথা।তুমি তো জানোই আমার…

-থাক!আর বলতে হবে না।কোথায় ছোট ভাইজান?আমি কথা বলবো তার সাথে।সবাইকে নিয়ে যেতে আসলাম,তুমিই যাবে না?তোমার মামী‌ পইপই করে বলে দিয়েছে,সীমা আর ইনসিয়া সহ সবাইকে মাথায় করে নিয়ে এসো।বজ্জাত রিফাত সিফাত দুটো না আসলেও চলবে!

আমি ফিক করে হেসে দিলাম।সিফাত ভাইয়া মুখ কালো করে বললো,

-সীমাটা কি আকাশ থেকে টপকেছে?এই বজ্জাত সিফাত না থাকলে সীমা কোথথেকে পেতো মামী?ভালাই কা তো যামানাই নেহি রাহা!

সবাই হেসে দিলো।এরমধ্যে আব্বু বেরিয়েছেন রুম থেকে।মামা ওনার সাথে হেসে কথা বললেন কিছুক্ষন।আব্বুও।কিন্তু আমার যাওয়া নিয়ে বলতেই আব্বু কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেলেন।একটু চুপ থেকে মাথা নাড়লেন উনি।মানে যেতে বলেছেন আমাকে।তারপর মামাকে সৌজন্যের হাসি উপহার দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।মন ভালো হয়ে গেলো আমার।হাসি ফুটলো বাকি সবার মুখেও।এরমধ্যে শুদ্ধ ভেজা চুল নাড়তে নাড়তে ড্রয়িংরুমে হাজির।মামা ওনাকে দেখে হেসে বললেন,

-কেমন আছো বাবাজীবন?

শুদ্ধ ভরকে গেছেন কিছুটা।আমি কপাল কুচকে তাকালাম।বাবাজীবন?উনিই তো বললেন দেখেনই নি ওনাকে।তাহলে?শুদ্ধ জোর করে হেসে বললেন,

-আরে?আপনি সিফাত ভাইয়ার বড়মামা না?আপনার ছবি দেখেছি সিফাতের ফোনে!

মামা কিছুটা থতমত খেয়ে বললেন,

-হ্ হ্যাঁ,তোমাকেও তো ছবিতে দেখেছি।ত্ তুমি শুদ্ধ না?সেজো ভাইজানের ছেলে?

শুদ্ধ ভাইয়া দাতে দাত চেপে ভ্রু নাচিয়ে বললেন,

-হ্যাঁ,আমিই শুদ্ধ!এতোক্ষনে চিনেছেন?মামাআআআআ?

-ইয়ে হ্যাঁ।এ্ এখনই চিনলাম তোমাকে।এই এখনই!

এটুক বলেই মামা মেজোমাকে ডাক লাগিয়ে বললেন,

-আমাকে একটু ঠান্ডা কিছু খেতে দাও তো!গলা শুকিয়ে গেছে।আর দুপুরের খাওয়াটা খেয়েই রেডি হয়ে নাও সবাই।বেরোতেও তো হবে তাইনা?

উনি ফ্রেশ হতে চলে গেলেন।আমি সরু চোখে শুদ্ধকে দেখছি।মামা শুদ্ধর সাথে ওভাবে কথা বললেন কেনো?শুদ্ধ একপলক আমার দিকে তাকিয়ে হুইস্টলিং করতে করতে পা বাড়াচ্ছিলেন রুমের দিকে।যীনাত আপু তার পথ আগলে দাড়িয়ে বললো,

-হঠাৎ বড়মামা সবকাজ ফেলে দাওয়াত করতে চলে এলো কেনো বলতো শুদ্ধ?

উনি লাজুক হাসলেন।ঘাড়টা চুলকে আমারদিক তাকিয়ে বললেন,

-কেনো বলতো যীনাত আপু?

ইরাম বাদে ওরা সবাই হেসে দিলো।হাসির কারন কিছু না বুঝে পা বাড়ালাম রুমের দিকে।সবার সাথে যাওয়াটা হচ্ছে,আব্বু যেতে বলেছেন।আপাতত সেই খুশিতেই মনটা ভরে আছে।

_______________

লান্চ শেষে রুমে এসে অডিও স্পিকার অন করে দিয়েছি।এটা আমার বরাবরের অভ্যস।প্যাকিংয়ের সময় গান শুনতে শুনতে প্যাকিং করি।সবে গানের টিউন শুরু হয়েছে আর আমি ব্যাগটা নামিয়েছি,কেউ একজন গান বন্ধ করে দিলো।পিছন ফিরে দেখি যীনাত আপু,তাপসী আপু,সীমা ভাবি দাড়িয়ে।মুচকি হেসে যীনাত আপু পিছনে দুহাত দিয়ে এগুতে এগুতে গাইতে লাগলো,
Ye ladka hai Allah kaisa hai deewana

তাপসী আপু এসে কপাল চাপড়ে ওর কাধে হাত রেখে গাইলো,
Kitna muskil hai tauba isko samjhana

এবার ইরাম কোথথেকে রুমে টপকে গাইলো,
Ke dheere dheere dill,bekarar hota hai

সবগুলো একসাথে বাকা হেসে আমারদিক এগোতে এগোতে গাইলো,
Hote hote hote,payaar hota hai

ওরা ওদের মতোই নাচছে গাইছে।কান না দিয়ে আমি নিজের কাজে মন দিলাম।বিছানায় রাখা জামাগুলো ব্যাগে ভরছি,তাপসী আপু পাশে ঝুকে গাইলো,
Humne to itna dekha

পাশ থেকে যীনাত আপুও ওভাবে ঝুকে গাইলো,
Humne to itna seekha

ইরাম লাফিয়ে বেডে উঠে শাহরুখ স্টাইলে হাত ছরিয়ে গাচ্ছে,
Dill ka sauda hota hai,sauda jindegi ka

একটানে আমাকে মাঝে দাড় করিয়ে হাত ধরে গোল করে দাড়িয়ে তিনজন একসাথে আবারো এ অন্তরাটাই গাইলো।বুকে হাত গুজে বিরক্তি নিয়ে দাড়িয়ে আমি।ওরা শেষ করলে কোমড়ে হাত রেখে এবার আমিও গাইলাম,
Miltehi kaise koi hota hai deewana

যীনাত আপু আমার সামনের চুলে টান মেরে গাইলো,
Kitna mushkil hai tauba isko samjhana

আমি মাথায় হাত বুলাচ্ছি।সীমা ভাবি এগিয়ে এসে ওদের দেখে চোখ রাঙালো।তারপর আমার থুতনি উচু করে ধরে গেয়ে উঠলো,
Ke dheere dheere dill,bekarar hota hai

একটুখানি লজ্জা লাগছিলো।ঠোট কামড়ে,মাথাটা চুলকে পিছতে পিছতে গাইলাম,
Hote hote hote,pa….

দরজার বাইরে কারো বুকের সাথে পিঠ ঠেকতেই থেমে গেলাম আমি।সে মানুষটা পিছন থেকেই কানের চুলগুলো সরিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

-প্যায়ার হোতা হ্যায়?

শুদ্ধর গলা শুনে একদন্ড দেরী না দৌড়ে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম।আপুরা,ভাবী জোরে জোরে হাসছে।আমি এককোনে দাড়িয়ে হাত কচলাচ্ছি।কেমন যেনো হাত পা কাপছে।হার্টবিট দ্রুত চলছে ওই প্রশ্ন শুনে।লোকটা সবসময় আমাকে এভাবে অস্বস্তিতে ফেলে আমাকে।কেনো করে সে এমন?কি পায় এমন করে সে?

#চলবে…

[রি চেইক হয়নি।ভুলত্রুটি মাফ করবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here