#তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি
লেখক-এ রহমান
শেষ পর্ব
ঘরের পরিবেশটা শ্বাস রুদ্ধকর হয়ে উঠেছে। বুকের ভিতরে একটা চাপা কষ্ট। আজ আবহাওয়াটা বেশ ঠাণ্ডা। বাইরে রোদ নেই। কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারিদিকে। তবুও বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো ঈশা। এখান থেকে তার সেই পরিচিত বারান্দা আর ঘরটা দেখা যাচ্ছে। কাপা কাপা হাত দুটো গ্রিলে রাখতেই মনে হল হাত গুলো জমে যাচ্ছে। হালকা হাওয়া এসে পুরো শরীরে শিরশির করে কাপন ধরিয়ে দিলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনে তাকাতেই কেন জানি বুকের ভিতরে আর্তনাদ করে উঠলো। কান্নার রেশটা দমিয়ে রাখতে পারলো না। কেদেই ফেলল। দরজায় নক করার আওয়াজ কানে আসলো। চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে নিয়ে চোখের পানিটা খুব যত্নে মুছে ফেলল। কাউকে দেখাতে চায়না সে। কিছুক্ষন পরেই ঘরে কারও উপস্থিতি পেয়ে ঘাড় বেকিয়ে তাকাল। ইফতি ঈশার পিছনে দাড়িয়ে বলল
–এখন কেমন আছিস?
ঈশা একটু ঝাঝাল গলায় বলল
–আমার কিছু হয়নি।
ইফতি এভাবে কথা বলার কারণটা বুঝতে পারলো না। তবুও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলল
–এখন তো ভালই আছিস। এখানে দাড়িয়ে কি করছিস? আজ যা ঠাণ্ডা পড়েছে বাইরে। আমি তো পুরোই জমে যাচ্ছিলাম।
ইফতি কথা শেষ করতেই ঈশা তার দিকে ঘুরল। ঈশার চোখ মুখ দেখে সে বুঝতে পারছে তার মন খারাপ। শান্ত গলায় বলল
–তোর কি মন খারাপ?
ঈশা মাথা নাড়িয়ে না বলে আবার সামনের দিকে তাকাল। শান্ত গলায় বলল
–বাইরে কি খুব ঠাণ্ডা? আমি যাবো।
–হুম। কিন্তু আমি তোকে নিয়ে যেতে পারব না। তোকে সামলানো আমার পক্ষে অসম্ভব।
–এটা আমাকে সামলাতে দাও। তুমি তোমার টা সামলাও।
ইভানের কথা শুনে ইফতি তার দিকে ফিরে তাকাল। ঈশা আড় চোখে তাকাল। কিন্তু পুরোটা ফিরল না। ইফতি বিরক্তিকর শ্বাস ছেড়ে বলল
–সামলাও। আমি চললাম।
বলেই বের হয়ে চলে গেলো। ইভান ঈশার পাশে এসে দাঁড়ালো। গ্রিলের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে নিচের দিকে দৃষ্টি স্থির করলো। হাত গুঁজে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শান্ত কণ্ঠে বলল
–এভাবে ঠাণ্ডার মধ্যে দাড়িয়ে আছিস কেন? ঠাণ্ডা লাগছে না? গায়ে কোন শীতের কাপড় নেই কেন?
ঈশা কোন কথা বলল না। সামনেই তাকিয়ে থাকলো। ইভান আর কোন কথা না বলে ঈশাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরে চলে গেলো। বিছানায় বসিয়ে দিয়ে গায়ে চাদর জড়িয়ে দিলো। কাছে বসে খুব শান্ত ভাবে বলল
–রাগ করেছিস?
ঈশা তবুও কোন কথা বলল না। মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলো। ইভান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
–কি শাস্তি দিলে আপনার রাগ কমবে ম্যাডাম?
ঈশা কঠিন দৃষ্টিতে তাকাল। ঝাঝাল গলায় বলল
–আসার কি দরকার ছিল থেকেই যেতে হসপিটালে।
ইভান ঈশার গালে হাত দিয়ে বলল
–এতটুকুতে কেউ কাদে বোকা মেয়ে। একটু দেরি করে ফেলেছি। দুপুরের জায়গায় বিকেল হয়ে গেছে। তাই বলে তুই এভাবে কেদে কেদে অস্থির হয়ে যাবি?
ঈশা কোন উত্তর দিলনা। ইভান উঠে দাড়িয়ে বলল
–দুপুরে খেয়েছিস।
ঈশা মাথা নাড়াল। ইভান ঔষধের কিছু স্ট্রিপ ঈশার দিকে বাড়িয়ে দিলো। ঈশা সেগুলো হাতে নিয়ে ভালো করে দেখছে। বুঝতে চেষ্টা করছে সেগুলা কিসের ঔষধ। ইভান পানির গ্লাস নিয়ে পাশে বসে বলল
–ম্যাডাম আপনার যে শরীরের অবস্থা ভালো না সেটা কি বুঝতে পারছেন? এখন ঔষধ গুলো এভাবে পর্যবেক্ষণ না করে খেয়ে নেন।
ঈশা মাথা তুলে ইভানের দিকে তাকাল। ভ্রু কুচকে বলল
–আমার কিছু হয়নি। শুধু শুধু আমাকে এতো গুলো টেস্ট করালে। আর কত কত ঔষধ খাওয়াচ্ছ। কই কিছু কি পেয়েছ সেরকম?
ইভান হাসল। ঈশার হাতে পানির গ্লাসটা ধরিয়ে দিয়ে বলল
–এখনো তো রিপোর্ট হাতে পাইনি। আগে পেয়ে নেই তারপর থাপ্পড় কাকে বলে বুঝতে পারবি। এক সপ্তাহে তিনবার প্রেসার ফল করা স্বাভাবিক কিছু না। অবশ্যই কোন প্রবলেম আছে।
ঈশা মুখ ফুলিয়ে বলল
–কোন প্রবলেম থাকলে সেটা তো আমার দোষ না। আমি ইচ্ছা করে তো আর করিনি।
ইভান ঔষধের স্ট্রিপ গুলা হাত থেকে নিলো। খুলে ঔষধ গুলো ঈশার হাতে দিয়ে চোখে দিয়ে ইশারা করে খেতে বলল। ঈশা ঔষধ মুখে দিলো। ইভান গম্ভীর কণ্ঠে বলল
–দুপুরের ঔষধ বিকেলে খাওয়া কি অনিয়ম নয়? নাকি ডক্টর হিসেবে এটা তোর বানানো নিয়ম।
ঈশা পানির গ্লাসটা রেখে ইভানের দিকে তাকাল। শান্ত কণ্ঠে বলল
–রাগ করেছিলাম। তাই তো খাইনি।
ইভান তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল। বলল
–আগে রিপোর্ট টা দেখি তারপর সব নখরা বের করবো।
ঈশা কিছু একটা ভেবে বলল
–আচ্ছা তোমার কি মনে হয় আমার কি হয়েছে?
ইভান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
–আমি এখনো সিওর না রিপোর্ট আসলেই সবটা বুঝতে পারব। তবে আমার ধারনা এনিমিয়া হতে পারে। যার কারনে অল্প স্ট্রেচেই প্রেসার ফল করছে। আবার সেদিন রাতে বুকে ব্যাথাও হয়েছিলো। এরকম কিছু হয়ে থাকলে সেটা তোর দোষ। কারন মেয়েদের এনিমিয়া হওয়াটা স্বাভাবিক তবে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করলে এটা তীব্র আকার ধারন করতে পারে।
কথা শেষ করে ঈশাকে বুকে টেনে নিয়ে শুয়ে পড়ল। কম্বল টেনে নিলো গলা পর্যন্ত। ঈশা ইভানের বুকে মাথা রেখেই বলল
–আমি ঘুমাব না।
ইভান ভ্রু কুচকে বলল
–কেন?
–আমি ঘুমালেই তুমি আবার চলে যাবে। আমি জানি। তাই জেগেই থাকবো।
ঈশার এমন বাচ্চাসুলভ আচরনে ইভান শব্দ করে হেসে ফেলল। কয়েকদিন ধরেই ঈশা এমন কিছু বলছে ইভান মাঝে মাঝেই বড় সমস্যায় পড়ে যাচ্ছে। কিছু করারও নেই তার। খুব শান্তভাবে বলল
–তোর রিপোর্ট আনতে যাবো। তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
–যেখানে খুশি যাও। আসতে না ইচ্ছা করলে থেকে যেও। আমার কোন যায় আসেনা।
ঈশা অভিমানি কণ্ঠে বলতেই ইভান আবার হেসে ফেলল। ঈশা ভ্রু কুচকে তাকাল। জিজ্ঞেস করলো
–হাসছ কেন?
ইভান শান্ত ভাবে বলল
–কিছু খাবি? আসার সময় কিছু আনব?
ঈশা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ইভান আবার বলল
–কি খেতে ইচ্ছা করছে?
ঈশা একটু নরম হল। ইভানের বুকে মাথা রাখল। নরম কণ্ঠে বলল
–খাবনা কিছু। যেতেই হবে তোমাকে?
ইভান মুচকি হেসে ঈশাকে জরিয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
–তুই ঘুমালে আমি তারপর যাবো। তুই ঘুম থেকে উঠেই দেখবি আমি চলে এসেছি।
ক্লান্ত ঈশা কোন কথা বলল না। চোখ বন্ধ করে ইভান কে জড়িয়ে ধরল। ইভানের সাথে মনে হয় একটু বেশিই খারাপ ব্যাবহার করে ফেলল। তাই ছোট্ট করে ‘সরি’ বলল। ইভান কথাটা শুনে একটু হেসে চুলের ভাজে চুমু খেয়ে বলল
–তোর এখন রেস্ট দরকার। আর একদম স্ট্রেচ নিবিনা ঠিক আছে?
ঈশা মাথা নাড়াল। তার মনে হল সে কয়েকদিন ধরেই অন্যায় আবদার করছে ইভানের সাথে। যা কিছু বলছে সব কিছুতেই বিপরিত কিছু করার জেদ চেপে বসছে। খুব দ্রুত মুড সুইং হচ্ছে। এর কারন হয়তো তার শারিরিক অসুস্থতা। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো। ইভান বুজতে পেরে উঠে বসলো। কপালে একটা চুমু দিয়ে রেডি হয়ে চলে গেলো।
—————–
আজানের শব্দ কানে আসতেই ঈশা চোখ মেলে তাকাল। ঘরটা অন্ধকার। সন্ধ্যা হয়ে গেছে মনে হয়। আশে পাশে তাকিয়ে দেখল কেউ নেই। তার মানে ইভান এখনো আসেনি। ঈশার খুব অভিমান হল। বলেছিল ঘুম থেকে উঠলেই চলে আসবে অথচ এখনো আসলো না। আজকাল ইভান তার কোন কথাই রাখেনা। সব সময় এমন করে। মুখ ফুলিয়ে হতাশ শ্বাস ছেড়ে ঈশা সময়টা দেখে নেয়ার জন্য ফোনটা হাতে নিলো। সময় দেখেই চমকে বসে পড়ল। ৮.৩০ বাজে। মানে এশার আজান দিচ্ছে। এতক্ষন ঘুমাল সে। সেই দুপুরে ঘুমিয়েছে। তড়িঘড়ি করে উঠে ওয়াশ রুমে গেলো। আজকাল খুব অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যায় সে। অনেকটা সময় ঘুমানোর কারনে মাথাটা ভার ভার লাগছে। চোখে মুখে জোরে জোরে কয়েকবার পানির ঝাপটা দিয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখল ঘরে আলো জালানো। সামনে তাকাতেই দেখল ইভান পকেটে হাত গুঁজে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আছে। মুখে চাপা হাসিটা স্পষ্ট। ঈশা কোন কথা বলল না। ইভান ওভাবেই দাড়িয়ে আছে। ঈশার এবার বিরক্ত লাগলো। কিন্তু কিছু বলল না। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে লাগলো। ইভান ধির পায়ে তার সামনে এসে দাঁড়ালো। একটা কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে পাশ কাটিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। ঈশা ভ্রু কুচকে কাগজটার দিকে একবার তাকাল। তারপর ইভানের দিকে। ওয়াশ রুমের দরজা খোলা। ইভান বেসিনের সামনে দাড়িয়ে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিচ্ছে জোরে জোরে। ঈশা কাগজটা খুলে দেখল। বড় বড় চোখে সেটার দিকে তাকিয়ে আছে। অনেক্ষন সেদিকে তাকিয়ে থেকে ইভানের দিকে তাকাল। বেসিনের উপরে দুই হাত ভর দিয়ে ঝুকে চোখ বন্ধ করে আছে। মুখ বেয়ে পানি গড়িয়ে শার্টের উপরের অংশ ভিজে যাচ্ছে। সামনের চুলের কিছু অংশ ভিজে পানি পড়ছে। ঈশা একটু এগিয়ে গিয়ে তোয়ালেটা এগিয়ে দিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল
–ভিজে জাচ্ছ তো।
ইভান চোখ খুলে একবার তাকাল। মুখ মুছল না। বের হয়ে সোফায় বসে মাথা নামিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকলো। ঈশা তার পাশে বসতেই আচমকা জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে চুপ করে আছে। পানির স্পর্শে ঈশার ঠাণ্ডা লাগছে কিন্তু তবুও সে কিছু বলল না।কারন বুঝতে পারছে ইভান কাঁদছে। কিছুক্ষন পরে মুখ তুলে ঈশার দিকে তাকিয়ে শক্ত কণ্ঠে বলল
-ইডিয়েট! তুই ডক্টর নামের কলঙ্ক। নিজের শরীরের অবস্থাই বুঝতে পারিস না আর মানুষের কিভাবে বুঝবি?
ঈশা মাথা নিচু করে বসে আছে। ইভান সোজা হয়ে বসে হেসে ফেলে বলল
–এটা যদি কেউ জানতে পারে যে তুই প্রেগন্যান্ট আর নিজেই সেটা বুঝতে পারিস নি তাহলে মান সম্মানের আর কিছুই বাকি থাকবে না।
ঈশা মাথা নিচু করে মিনমিনে কণ্ঠে বলল
–তুমিই তো বলছিলে এনিমিয়া………।
ইভান ধমক দিয়ে বলল
–আমি বললাম আর তুই সেটার উপরে অন্ধ বিশ্বাস করে বসে থাকলি? নিজের অবস্থাতাও বোঝার মতো ক্ষমতা নাই তোর। কোনটা কি কারনে হচ্ছে সেটা তোর ভাব উচিৎ ছিল। তুই তো সব কিছুই জানিস।
ঈশা কোন কথা না বলে ইভানের বুকে মাথা রাখল। ইভান ঈশাকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল
–তোকে অনেক সাবধানে থাকতে হবে জান। একটু কমপ্লিকেশন আছে। ঠিক মতো খেয়াল রাখলেই সেসব কিছুই না। তবে…।
ইভান থেমে গেলো। ঈশা মাথা তুলে সরু চোখে তাকাল। বলল
–তবে?
ইভান ঈশার দুই গালে হাত দিয়ে বলল
–আমি চাই তুই আর কোন হেয়ালি করবি না। নিজের শরীরের অবস্থা বুঝে সে অনুযায়ী সব কিছু করবি। আর দুই একদিনের মধ্যে রক্ত দিতে হবে। নাহলে এনিমিয়ার স্টেজ বেড়ে গেলে কমপ্লিকেশন বেড়ে যাবে। তুই নিজেই সবটা জানিস আর বুঝিস। তাই আমি তোর উপরে ভরসা করতে পারি কি?
ঈশা মাথা নাড়ল। ইভান আবার দাতে দাত চেপে বলল
–কমপ্লিকেশন যদি কোনভাবে বেড়ে যায় এর জন্য কিন্তু তুই দায়ি থাকবি। আর তোকে কোনদিন মাফ করবো না। মনে রাখিস।
ঈশা মুখ গোমড়া করে বলল
–এভাবে কেন বলছ?
ইভান হেসে ফেলল। ঈশাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলল
–থ্যাঙ্কস জান। আমাকে এরকম একটা গিফট দেয়ার জন্য।
ইভানের চোখের কোন বেয়ে এক ফোটা পানি পড়ল। খুব সাবধানে সে সেই পানি মুছে ফেলল। কাউকে তার চোখের পানি দেখাতে চায়না সে। ছেলেদের কাঁদতে নেই। খুব কষ্টেও ইভান কোনদিন কাদেনি। কিন্তু আজ তার এই অনাগত সন্তানের খবর চোখে পানি আনতে বাধ্য করলো। নিজেকে আটকাতে পারলো না সে। এই সুখের এতো ক্ষমতা? তাকেও কাঁদতে বাধ্য করছে। ভেবেই হাসল সে।
—————–
ইফতি নিজের বাসর ঘরে বসে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে। মিরা ফুলের সাজানো বিছানায় বসে সেই ফুল দিয়ে খেলছে। ঈশা ঝাঝাল কণ্ঠে বলল
–ইনায়া এবার কিন্তু বেশী বেশী হয়ে যাচ্ছে। আমার সাথে চল বলছি।
ইনায়া ঈশার দিকে ঘুরেও তাকাল না। মিরাকে আরও শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরল। ঈশা আবারো হাত বাড়িয়ে বলল
–মিরা মাম্মাম অনেক টায়ার্ড। এখন ঘুমাবে। তুমি আমার সাথে চল মা।
ইনায়া কথা বলতে না পারলেও বুঝতে পারলো তাকে নিয়ে যেতে চাইছে। সে মিরার কোলে ভালো করে শুয়ে পড়ল। ঈশা আড় চোখে একবার ইফতির দিকে তাকাল। তার চোখে মুখে অসহায়ত্ব। ঠোট টিপে হেসে বলল
–চল ইনায়া। নাহলে কিন্তু এবার মার খাবে।
ইফতি এবার তেড়ে উঠে বলল
–তোর সাহস তো কম না। আমার সামনে আমার ভাতিজিকে মারতে চাস।
ঈশা ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকাল। ইফতি ধমক দিয়ে বলল
–যা এখান থেকে। ঘুমালে আমি দিয়ে আসবো।
ঈশা ভ্রু কুচকে বলল
–তোর কি মনে হয় ও এতো সহজে ঘুমাবে?
আর কোন কথা বাড়ানোর আগেই ইভান ঢুকল ঘরে। সবাইকে এভাবে দেখে বলল
–কি হয়েছে তোরা সবাই এই ঘরে কি করছিস?
ঈশা বিরক্ত হয়ে বলল
–তোমার মেয়ে এখানেই থাকবে। মিরার সাথে খেলবে।
ইভান ইফতির দিকে তাকাল। সে মাথা নিচু করে বসে আছে। নিজের হাসিটা চেপে রেখে বলল
–চল মামনি আমরা আমাদের ঘরে খেলব।
ইনায়া মিরাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। তার মানে সে কিছুতেই যেতে চায়না। মিরা শান্ত কণ্ঠে বলল
–থাক ভাইয়া ঘুমালে ইফতি দিয়ে আসবে। জোর করে নিয়ে গেলে শুধু শুধু কাদবে।
ইভান ঈশা আর কোন কথা বলল না। বের হয়ে এলো ঘর থেকে। অনেক রাত হয়েছে। সবাই ইফতির বিয়ে নিয়ে খুব টায়ার্ড। তাই ঘুমিয়ে পড়েছে। তারা দুজনই নিজের ঘরে এসে ঢুকল। ইভান দরজা লক করতেই ঈশা পিছনে ঘুরে তাকাল। ইভান ঈশার দিকে এগিয়ে আসছে। ঈশা উলটা ঘুরে এগিয়ে যেতেই সে ঈশাকে ধরে ফেলল। পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল
–আমার কাছ থেকে পালান এতো সহজ? কখনও তো পারিস নি। তাহলে অযথা কেন চেষ্টা করিস?
ঈশা নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করতে করতে বলল
–কি করছ। ছাড়ো আমাকে। নিজের মেয়েকে ইফতির বাসর ঘরে রেখে এসে এখন নিজে রোমাঞ্চ করছ।
ইভান ঈশাকে আরও শক্ত করে ধরে বলল
–আমি রেখে আসিনি। এখন যদি ইফতির ভাগ্য খারাপ হয় তাহলে আমি কি করতে পারি। তবে আমার সুবিধা হয়েছে। সময়টা কাজে লাগাই।
কথা শেষ করে ঈশার গলায় দুই আঙ্গুলে স্লাইড করতে শুরু করলো। ঈশা বিরক্ত হয়ে বলল
–কেন বিরক্ত করছ? ছেড়ে দাও আমাকে আমি ঘুমাব। আর একটু পড়ে গিয়ে ইনায়াকে আনবে।
ইভান কানের কাছে ফিসফিস করে বলল
–থাক না আর একটু সময় সমস্যা কি?
কথা শেষ করতেই ইভানের ফোন বেজে উঠলো। ঈশাকে ছেড়ে দিলো। হসপিটাল থেকে ফোন। কয়েকদিন ইফতির বিয়ের জন্য ইভান হসপিটালে যায়নি। কিন্তু মাঝরাতে ফোন আসায় একটু চিন্তিত হল। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে জানিয়ে দিলো একজন এমারজেন্সি পেশেন্ট এসেছে আর এই মুহূর্তে ইভান কেই লাগবে। কোন সিনিওর ডক্টর নেই। ইভান ফোনটা রেখে বলল
–বিশ্বাস কর আমি আগে যদি কোনভাবে এসব বুঝতে পারতাম তাহলে কোনদিনও ডক্টর হতাম না। অসহ্যকর পরিস্থিতি। কোন শান্তি নেই। বউয়ের সাথে বসে দুই মিনিট কথা বলারও সুযোগ নেই আর রোমাঞ্চ তো দুরের কথা।
ঈশা একটু হেসে এগিয়ে এসে ইভানের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল
–ডক্টর সাহেব! আগে আপনার ডিউটি তারপর বউ। আর বউ তো কোথাও পালিয়ে যাচ্ছে না। সেটা আপনারই আছে। আর আপনারই থাকবে।
দরজায় আওয়াজ হতেই সেদিকে ঘুরে তাকাল। ইভান দরজা খুলে দিতেই ইনায়াকে কোলে দিলো ইফতি। ইভান তাকে কোলে নিয়ে ইফতির সাথে একটু কথা বলে তাকে বিদায় দিলো। কোলে নিয়ে ঘরে এসে বিছানায় বসে বলল
–মাম্মাম তুমি এখন ঘুমাবে কেমন? বাবার একটু কাজ আছে। তুমি ঘুম থেকে উঠার আগেই চলে আসবে।
ইনায়া ইভানের গলা জড়িয়ে ধরল। সে যেতে দিতে চায়না। ইভান ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মেয়েটাকে খুব একটা বেশী সময় সে দিতে পারেনা। তাই যেটুকু সময় মেয়েটা তাকে কাছে পায় ছাড়তেই চায়না। ঈশা পাশে বসে ইভানের ঘাড়ে মাথা রাখল। খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
–মন খারাপ করনা। দায়িত্বটা তো সব কিছুর আগে। বাকি সব কিছু আমি সামলে নিবো। একদম নিশ্চিন্তে থাকো। ভরসা নেই আমার উপরে?
ইভান হেসে ঈশাকে জড়িয়ে ধরে বলল
–আমার পুরো জীবনটাই তো এই তুমিতেই আটকে আছে।
ঈশা ইভানের গালে আলতো করে ঠোট ছুয়ে দিয়ে বলল
–আর এই তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি লুকিয়ে আছে।
সমাপ্ত
(যারা গল্পটা পড়েছেন সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। অনেক ভালবাসা পেয়েছি। এদের আর কোন ধারাবাহিক গল্প আসবে না। তবে ছোট ছোট কিছু অনুগল্প আসবে। গতানুগতি্ক ধারা থেকে একদম ভিন্ন রকমের হবে সেগুলো। প্রচণ্ড ব্যস্ততার মাঝে রিচেক করার সময় পাইনি। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ধন্যবাদ সবাইকে)