তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি লেখক-এ রহমান পর্ব ৩০

0
1038

#তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি
লেখক-এ রহমান
পর্ব ৩০

‘বিয়ে’ জীবনের এমন একটি ধাপ যেখানে মুহূর্তেই সব কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। কবুল বলার সাথে সাথেই নিজের উপরে অধিকার অর্ধেক হয়ে যায় আর দায়িত্ব হয় দিগুন। অনেক নতুন সম্পর্ক জুড়ে যায়। দুইটা মানুষ একে অপরের সব কিছু হয়ে উঠে। একে অপরের সাথে সারাজীবন কাটানোর অঙ্গীকারবদ্ধ হয়।

রুমা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল। ঈশা আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে। সাথে তার কাজিনরা আর এক পাশে মিরাকে সাজানো হচ্ছে। রুমা ঈশাকে ভালো করে পুরোটা দেখে নিলো। একটু হেসে বলল
–ইভান আর ঈশার কাবিনটা শেষ করে তারপর মিরা আর ইফতির আংটি পরানো হবে।

তারপর মিরার দিকে তাকিয়ে বলল
–রেডি হতে আর কতো সময়?

পার্লারের মেয়েটা বলল
–এই তো আপু হয়ে গেছে।

মিরাকে ছেড়ে সরে দাঁড়াল মেয়েটা। রুমা তাকে ভালো করে দেখে বলল
–বাহ! খুব সুন্দর লাগছে তো।

মিরা হাসল। ঈশাকে আজ একটু ভারি সাজ দেয়া হয়েছে। বউ বলে কথা। মিরাও সেজেছে তবে হালকা। মিরার মা ভিতরে ঢুকে বলল
–সব কিছু রেডি। একটু পরেই বিয়ে পড়াবে। এখানে কতদুর?

রুমা হেসে বলল
–সব রেডি মামি। চাইলে এখনি পড়াতে পারে।

মিরার মা বলল
–ঠিক আছে আমি বলছি।

তিনি ঘুরে দাড়াতেই দরজায় কেউ নক করলো। রুমা দরজার দিকে তাকাল। কাউকে ঢুকতে না দেখে নিজেই গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলেই চোখ মুখ কুচকে বলল
–তুমি এখানে?

–আমার বউকে নিতে এসেছি।

ইভানের গলা শুনে ঈশার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু বাকি সবাই অবাক হয়ে গেলো। ইভানের মামি একটু এগিয়ে গিয়ে বলল
–কি শুরু করেছ? সবাইকে কি বকা খাওয়াতে চাও? কাল হলুদ মাখান নিয়েই তোমার দাদি কতো রাগ করেছিলেন আর এখন তুমি এখানে এসেছ সেটা জানতে পারলে খুব রাগ করবে। আর তো একটু সময় বাবা। বিয়েটা পড়ানো হোক। তারপর যা ইচ্ছা করিও।

ইভান কোন উত্তর দিলো না। সে যে কারও কথাই শুনবে না সেটা ঠিক করে তবেই এসেছে। রুমা বলল
–বিয়ে পড়ানো পর্যন্ত তোমাকে অপেক্ষা করতেই হবে। এখন তুমি এখান থেকে যাও। কাজি সাহেব আসবে এখন।

ইভান হাত গুঁজে দাড়িয়ে কঠিন গলায় বলল
–কাজি সাহেব এখানে আসবে না। স্টেজে বিয়ে হবে। আর আমি এখান থেকে ঈশাকে নিয়ে যাবো নিজের সাথে।

ইভানের মামি অসহায়ের মতো বললেন
–বিয়ের আগে এভাবে বউকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি তোমার নাই। আমি আগে বাইরে যাই সবটা ভালো করে শুনে আসি। তারপর যদি নিয়েই যেতে হয় তাহলে আমরা নিয়ে যাবো। অযথা কথা বাড়ায়ও না।

ইভান তার মামিকে দুই হাতে ধরে পিছনে ঘুরিয়ে দিলেন। তারপর তাকে নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন
–ঈশাকে আমি নতুন দেখছিনা। সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি মামি। তাই আমি এখন দেখলেও কোন প্রবলেম নাই। আর বউ হওয়ার আগে ঈশা আমার হার্ট বিট! আমার নিঃশ্বাস! আমার অস্তিত্ব! আর আমার অস্তিত্বকে আমি নিজের সাথেই স্টেজ পর্যন্ত নিয়ে যাবো। তারপর সেখানে বিয়ে পড়ানো হবে।

ইভানের কথা শুনে তার মামি পিছনে ঘুরেই ইভানের গালে আলতো করে একটা থাপ্পড় মেরে বললেন
–আমার সামনে এসব কথা বলতে লজ্জা করেনা?

ইভান অতি বিস্ময় নিয়ে বলল
–লজ্জার কি আছে? বিয়ের সময়ে তুমি লজ্জা পেয়েছিলে বলে কি লজ্জার কারনে তোমার বিয়ে আটকে ছিল? সময় মতো তো ঠিকই বিয়ে করেছ।

ইভানের এমন উলটা পাল্টা কথা শুনে তার মামি মাথায় হাত দিয়ে বললেন
–কি নির্লজ্জ ছেলে রে বাবা। এখানে থাকলে আমার মান সম্মান সব চলে যাবে।

বলেই তিনি দ্রুত পায়ে বের হয়ে গেলেন। সবাই হেসে ফেলল। রুমা একটু হেসে বলল
–ইভান তুমি যাও আমি ঈশাকে নিয়ে আসছি।

ইভান ঈশার দিকে তাকিয়েই বলল
–যে যাই বলুক ঈশা তো আমার সাথেই যাবে।

বলেই ঈশার দিকে হাত বাড়াল। ঈশা হেসে ইভানের হাত ধরল। ইভান তাকে নিজের সাথে নিয়ে গেলো। স্টেজে সবাই অপেক্ষা করছে। ঈশা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমেই বুঝতে পারলো ইভান সবাইকে ম্যানেজ করে তবেই উপরে গিয়েছে। ঈশার পিছনে পিছনে ঘর থেকে সবাই নিচে চলে এসেছে। ইভান ঈশাকে তার পাশে বসিয়ে দিলো।

অবশেষে সেই বিশেষ মুহূর্ত এলো। ঈশার কবুল বলার পালা। কিন্তু এতক্ষন হাসি খুশি থাকলেও এখন মনে হচ্ছে গলায় কথা আটকে যাচ্ছে তার। হাত পা কাঁপছে। কাজি সাহেব কয়েকবার করে বলেছে কবুল বলতে। কিন্তু ঈশার গলায় কোথায় যেন জটলা পেকে আছে। ঢোক গিলে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে প্রস্তুতি নিলো কবুল বলার কিন্তু তবুও কেন জানি কথা বের হল না। আটকে থাকলো গলায়। ইভান ভ্রু কুচকে তাকাল ঈশার দিকে। চোখ বেয়ে অঝরে পানি পড়ছে। ঈশা আড় চোখে ইভানের দিকে তাকাল। ইভানের দৃষ্টি খুব শান্ত কিন্তু স্থির। ঈশা চোখ বন্ধ করে ফেলল। নিজের বুকে সাহস সঞ্চয় করে এক নিঃশ্বাসে বলল ‘আলহামদুলিল্লাহ কবুল’। সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। তারপর ইভান গড়গড় করে কবুল বলে দিলো। দুজনে সাইন করে নিলো কাবিন নামায়।

—————-
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো। বিয়ের যাবতীয় কাজ শেষ। এবার ইফতি আর মিরার আংটি পরানোর পালা। ইভানের মা ঈশার হাতে আংটির থালাটা দিয়ে মুচকি হেসে বলল
–এবার বড় ভাবির দায়িত্ব পালন করো।

ঈশা লাজুক ভঙ্গিতে হাসল। এগিয়ে গিয়ে ইফতি আর মিরাকে আংটি গুলো ধরিয়ে দিলো। ইফতি আর মিরা একে অপরকে আংটি পরানোর মধ্য দিয়ে শেষ হল অনুষ্ঠান। এখন প্রায় রাত হয়ে গেছে। সবাই সব কাজ শেষ করে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে নিলো। বিদায়ের কথা ভেবেই ঈশার মা মুখে আচল চেপে কাঁদতে শুরু করলেন। নিঃসন্দেহে ইভান ভালো ছেলে। আবার মেয়ে কাছাকাছিই থাকছে। তবুও জন্ম থেকে বড় করে মেয়েকে অন্যের অধিনে ছেড়ে দেয়াটা একজন মায়ের কাছে কি সহজ কথা? নিজের কলিজা ছিঁড়ে আরেকজনকে দিয়ে দেয়ার মতো এই নিয়ম অসহনীয়। তবুও মানতেই হবে। ইভানের মা এগিয়ে এসে ঈশার বাবাকে বললেন
–এবার যেতে হবে। নাহলে দেরি হয়ে যাবে।

ঈশার বাবা এগিয়ে এসে ইভানের হাতে ঈশাকে তুলে দিলেন। কিন্তু তিনি কোন কথা বলতে পারলেন না। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। এক মাত্র মেয়েটা আজ অন্যের বাড়ি চলে যাচ্ছে। তার কাধে দায়িত্ব পড়ে যাচ্ছে। এতক্ষনের নিরব কান্নাটা ঈশা আর সামলে রাখতে পারলো না। বাবার বুকে আছড়ে পড়ল। হুহু করে কেদে উঠলো। ঈশার এমন কান্না দেখে সবাই নিরবে চোখে পানি ফেলছে। ঈশাকে এভাবে কাঁদতে দেখে ইভানের খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তারই বা কি করার। কান্নাকাটির পালা শেষ করে ঈশাকে গাড়িতে তুলে দিলো সবাই। ইভান তার পাশে বসলো। ঈশা এখনো ফিকরে ফিকরে কাঁদছে। অনেকটা সময় কাদার ফলে শরীর ঝাকুনি দিয়ে হেচকি উঠছে। ইফতি ড্রাইভিং সিটে বসলো। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি চলল তাদের গন্তব্যে। তাদের গাড়ির পিছনে পিছনে ঈশার বাবা মায়েরাও চলে এসেছে। ইভান কোন কথা বলছে না। ঈশার অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছে। ঈশা জানালার কাচে মাথা ঠেকাল। ইভান একটু নড়েচড়ে বসে অভিমানি কণ্ঠে বলল
–আমি এখনো বেঁচে আছি। আর কাছেই আছি। এতো তাড়াতাড়ি আমাকে ভুলে গেলে হবে?

ইভানের কথার মানে ঈশা বুঝতে পেরে ইভানের ঘাড়ে মাথা রাখল। ইভান আলতো করে এক হাতে ঈশাকে জড়িয়ে ধরে বলল
–খারাপ লাগছে?

ঈশা কোন কথা বলল না। ইভান একটু বিরক্ত হয়ে বলল
–তোর আচরন দেখে মনে হচ্ছে আমি তোকে তুলে নিয়ে যাচ্ছি।

ঈশা বিরক্ত হল। এমনিতেই তার মন খারাপ তার উপরে মানুষটা এসব কথা বলছে। ইভান ঈশাকে চুপ করে থাকতে দেখে আবার বলল
–বিয়ে করার ইচ্ছা নেই আগে বললেই হতো।

ঈশা এবার খুব বিরক্ত হয়ে মাথা তুলে কঠিন দৃষ্টিতে তাকাল ইভানের দিকে। কঠিন ভাবে বলল
–কেন এরকম উলটা পাল্টা কথা বলছ?

ইভান ভ্রু কুচকে বলল
–আমি কোন উলটা পাল্টা কথা বলিনি। আর আমি সবটা দেখেছি। কবুল বলার সময় কি করেছিস সেটাও দেখেছি। বলতেই চাচ্ছিলি না। আর একটু হলে তো বলেই দিতিস আমি বিয়ে করবো না।

ঈশা এবার খুব রেগে গেলো। ইভানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–তুমি এসবের কি বুঝবে? মেয়েরা অনেক ইমোশনাল হয়। ওই সময়টাতে কেমন লাগে তুমি কিভাবে বুঝবে?

ইভান এবার তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল
–আচ্ছা? খুব ইমশন না? আমাকে ভালবাসার সময় কই থাকে এসব? তখন তো লজ্জায় মরে যাস।

ঈশা বিরক্ত হল ইভানের উপরে। ঘাড় ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলো। ইভান একটু হেসে তাকে দুই হাতে জড়িয়ে নিয়ে ঘাড়ে মুখ রেখে বলল
–সরি জান। দুষ্টুমি করছিলাম।

ঈশা হাসল। ইভান মুখটা ঘুরিয়ে বলল
–কেদে কেদে কি অবস্থা করেছসি বল তো? এভাবে কেউ কাদে। আমি কি তোকে সারাজীবনের জন্য আটকে রাখবো।

ঈশা ইভানের বুকে মাথা রাখল। ইভান তাকে জড়িয়ে নিয়ে বলল
–তুই কাদলে আমার খুব কষ্ট হয় জান।

ঈশা ইভান কে জড়িয়ে ধরে বলল
–সরি।

ইভান আরও শক্ত করে ঈশাকে জড়িয়ে ধরল।

—————–
গাড়ি বাড়ির সামনে এসে থামল। ইভান নেমে হাত বাড়িয়ে দিলো। ঈশা ইভানের হাত ধরে নেমে গেলো। বাড়ির সামনে সবাই দাড়িয়ে আছে নতুন বউকে বরন করে নিতে। সব রকম নিয়ম শেষ করে ঈশাকে ভিতরে নিয়ে গেলো। সোফায় কিছুক্ষন বসতে দিয়ে ইভানের মা এসে তার কাজিনদের উদ্দেশ্য করে বলল
–ওকে ঘরে নিয়ে যাও।

সবাই ঈশাকে ঘরে নিয়ে গেলো। ঘরে ঢুকেই ঈশা চারিদিকে ভালো করে দেখতে লাগলো। আসার পর ইভান হঠাৎ করেই কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। হয়তো বন্ধুদের সাথে আছে। ইভানের কাজিনরা ঈশার সাথে নানা রকম গল্পে মেতে উঠেছে। কিন্তু ঈশার প্রচণ্ড ক্লান্ত লাগছে। বিছানায় হেলে বসে আছে। একটু পর ইভানের মা এসে ঈশাকে খাইয়ে দিলো। কিছুক্ষন বসে গল্প করলো তার সাথে। তারপর ঈশাকে রেস্ট নিতে বলে চলে গেলো। অনেকটা সময় কেটে গেলো ইভান এখনো আসছে না। ক্লান্ত ঈশা পিঠের পিছনে বালিশ দিয়ে তাতে হেলানি দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। অনেক সময় পর ইভান আসলো। ঈশাকে এতক্ষন অপেক্ষা করানর জন্য তার মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করছে। ধির পায়ে এগিয়ে এসে দেখল ঈশা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। ইভান নিজের কাপড় নিয়ে সোজা ওয়াশ রুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এসেও ঈশাকে ওভাবেই থাকতে দেখে তার সামনে বসে পড়ল। ভালো করে দেখে বুঝে গেলো ঘুমিয়ে পরেছে। একটু বিরক্ত হল সে। বিরক্তিকর শব্দ করে ঈশার গায়ের গয়না গুলো অতি সাবধানে খুলতে খুলতে বলল
–এই মেয়ে নাকি হবে ডক্টর! এখনো নিজের খেয়াল রাখতেই শেখেনি। এতো টায়ার্ড রাখছিল চেঞ্জ করে নিলে কি হতো। এসব পরে কি ঘুমানো যায়? আর শাড়ি পরে এমনিতেই ঘুমানোর অভ্যাস নাই। তার উপরে এতো ভারি শাড়ি!

খুব সাবধানে গয়না গুলা খুলে ফেলল। ওড়নাটাও খুলে নিলো। তারপর সাবধানে করে কোলে তুলে ঠিক করে শুয়ে দিলো। এসিটা অন করে গায়ে পাতলা কম্বল টেনে দিলো। ঈশা একটু আরাম পেতেই ভালো করে কম্বল জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলো। ইভান মুচকি হেসে ঈশার কপালে একটা চুমু দিলো। নিজের কিছু কাজ শেষ করে নিজেও শুয়ে পড়ল।

————–
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ইভান খেয়াল করলো ঈশা কোথাও নেই। উঠে বসলো। ভাল করে এদিক সেদিক তাকাল। ঈশা ঘরে কোথাও নেই।তার মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেলো। ঘুম থেকে উঠার পর ঈশার চেহারা দেখবে সেটাই আশা করেছিলো সে। কিন্তু সেটা আর হল কই? উঠে ওয়াশ রুমে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে ঈশা চায়ের কাপ হাতে দাড়িয়ে আছে। ইভান ঈশাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে দেখছে। ভেজা চুল থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। ইভান হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে নিলো। বিছানায় বসে পড়ল। ঈশা ঘুরে আবার চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। ইভান ঈশার দিকে তাকাল। চুলের পানিতে পিছনের কোমর পর্যন্ত ভিজে গেছে। মাথায় ওড়না টেনে দেয়া থাকলেও চুলের নিচের অংশটা বের হয়ে আছে। ইভান চায়ে চুমুক দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল
–এতো সকালে উঠে গোসল করার মতো কিছুই হয়নি। তবুও কি করার দরকার ছিল?

ঈশা থেমে গেলো। তীক্ষ্ণ চোখে ইভানের দিকে তাকাল। ইভান নিজের হাসিটা চেপে রেখে গম্ভীর ভাব এনে বলল
–ঘরে এক রকম আর বাইরে আরেক রকম! সবার কাছে ভালো বউ হওয়ার প্রচেষ্টা আর ঘরে বরের কোন খেয়াল নেই। বরের সব ইচ্ছাতে এক বালতি পানি ঢেলে ঘুমিয়ে রাত পার করে এখন আদর্শ বউ হওয়ার অভিনয়ে ব্যস্ত।

ঈশার দৃষ্টি আরও তীক্ষ্ণ হল। ইভান নিজের মতো চায়ে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় দরজায় নক করতেই ঈশা শান্ত কণ্ঠে বলল
–খোলা আছে।

মিরা দৌড়ে এসে ঈশাকে জড়িয়ে ধরল। ঈশা হেসে মিরাকে জড়িয়ে ধরে বলল
–কখন এসেছ?

–একটু আগেই। তোমাদেরকে খুব মিস করছিলাম। তাই চলে এলাম।

ঈশা একটু দুষ্টুমির সুরে বলল
–আমাদেরকে মিস করছিলে?

মিরা তার কথার মানে বুঝতে পেরে লজ্জা পেলো। পরিস্থিতি সামলাতে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–ভাইয়া তুমি তো আমাদেরকে ভুলেই গেছো।

ইভান ভ্রু কুচকে বলল
–ভোলার মতো কিছু হলে না ভুলতাম। সেরকম তো কিছুই হল না। আর আমি ভুলতে না চাইলেও তোরা জোর করে ভুলিয়ে দিচ্ছিস।

ঈশা মিরা দুজনই ভ্রু কুচকে তাকাল। মিরা কথার মানে বুঝতে না পারলেও ঈশা ঠিকই বুঝতে পারলো। কিন্তু কোন উত্তর না দিয়ে মিরার সাথে বের হতে যাবে তখনই ইভান শান্ত কণ্ঠে ডাকল
–ঈশা।

ঈশা থেমে গেলো। মিরা একটু হেসে বাইরে চলে গেলো। ইভান উঠে এসে সামনে দাঁড়ালো। হাত বাড়িয়ে মাথার ওড়না ফেলে দিলো। আরও একটু কাছে এসে দাঁড়ালো। ইভানের ঠোট ঈশার কপাল ছুঁইছুঁই। ঈশা জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। ইভান মাথায় তোয়ালে টা ঘোমটার মতো রেখে বলল
–চুলটা ভালো করে মুছে নিস। ঠাণ্ডা লেগে যাবে।

বলেই ঠোট চেপে হেসে বের হয়ে গেলো। কিন্তু সেই হাসি ঈশার চোখে পড়ল না। ঈশা তীক্ষ্ণ চোখে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here