#তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২৯
নিজের বিছানায় মাঝখানে বসে পুরো ঘরের চারিদিকে অস্থির দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে ঈশা। সবার উপরে খুব বিরক্ত সে। বিয়েটা তার সেটা যেন সবাই ভুলে গেছে। সেই জন্যই তো নিজেদের মধ্যে সাজগোজের প্রতিযোগিতায় মেতেছে। কে কতো সাজতে পারে। কাকে কতো সুন্দর লাগছে। এসব নিয়েই কথা বলতে ব্যস্ত। ঈশাকে এই মুহূর্তে কেউ দেখতেই পাচ্ছে না। সেই সন্ধ্যা বেলা হলুদ কিন্তু এই সকাল থেকেই সবার সাজগোজের আয়োজন। হবেই না বা কেন। যেখানে অনুষ্ঠানটা হবে সেটা বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে। তাড়াতাড়ি বের হতে হবে নাহলে দেরি হয়ে যাবে। আর ওদিকেও তো অনেক কাজ পড়ে আছে। যার কারনেই এতো তাড়া। ঈশা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। নিজের সাজ শেষ করে রুমা এসে মোটামুটি চিৎকার করে বলল
–ওমা! তুমি এখনো বসে আছো। গোসল করনি। রেডি হবে কখন? সবাই রেডি।
সবাই ঈশার দিকে ফিরে তাকাল। ঈশা দাত কেলিয়ে বলল
–আমার কথা মনে আছে তোমাদের?
ঈশার এমন প্রশ্ন শুনে সবাই যেন আকাশ থেকে পড়ল। একবার ঈশার দিকে তাকিয়ে তারপর নিজেদের দিকে তাকাল। বেশ কিছুক্ষন পিন পতন নিরবতা চলল। তারপর রুমা দাত কেলিয়ে বলল
–মজা করছ? তোমার এসব মজা দেখার মতো সময় আছে এখন?
ঈশা এবার রাগ করলো। মুখ ঘুরিয়ে নিলো। রুমা হাত ধরে টেনে উঠে দিলো তাকে। রাগি চোখে তাকিয়ে বলল
–এখনি ওয়াশ রুমে যাও। একদম দেরি করবে না। ওই বাড়িতেও সবাই রেডি ঈশা। আমরা একসাথে সবাই রওনা দিবো।
ঈশা দাড়িয়েই থাকলো। রুমা এবার রাগ করে ঈশাকে ধাক্কা দিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে দিলো। সবাই আবার নিজেদের মতো সাজতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। অনেকটা সময় নিয়ে ঈশা বের হয়ে এলো। কাঁচা হলুদ রঙের সবুজ পেড়ে একটা শাড়ি পরেছে। রঙটা ঈশাকে বেশ মানিয়েছে। ঈশা বের হতেই রুমা তাড়া দিয়ে বলল
–তাড়াতাড়ি চল। তোমার জন্য নিচে গাড়ি দাড়িয়ে আছে। তোমাকে ওখানে গিয়ে সাজাবে। পার্লার থেকে মেয়েরা সব ওখানেই যাবে।
বলেই আর অপেক্ষা করলো না। হাত ধরে টেনে নিচে নিয়ে এলো। ঈশা নিচে নামতেই মিরা দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরল। রুমা মিরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আজ সারাদিনের দায়িত্ব কিন্তু তোমার। মনে আছে?
মিরা হেসে ঈশার হাত ধরে বলল
–একদম। আমি আমার দায়িত্ব ভালো করে পালন করবো।
রুমা ঈশাকে বলল
–তুমি যাও। আমি একটু পরে আসছি। আমার আরও কাজ আছে।
ঈশাকে কোন কথা বলার সুযোগ দিলো না। মিরা টেনে গাড়িতে বসাল। ইফতি ড্রাইভ করছে। পিছনে মিরা আর ঈশা। ইফতি হাতে ঘড়িটা দেখে নিয়ে বলল
–এখন দোয়া কর সময় মতো পৌছাতে পারলেই হয়। নাহলে……।
কথাটা শেষ না করেই থেমে গেলো। ঈশা ভ্রু কুচকে বলল
–নাহলে কি হবে?
ইফতি ঘাড় বেকিয়ে পিছনে তাকিয়ে বলল
–তোর জল্লাদ যতক্ষণ বেশী সময় ধরে অপেক্ষা করবে সেই সময়টা আমার কাছ থেকে কিভাবে পুষিয়ে নিবে সেটা ধারনা করার ক্ষমতাও আমার নাই।
বলেই আবার ড্রাইভ করতে শুরু করলো। তার মানে ইভান চলে গেছে। ঈশা একটু অভিমানি কণ্ঠে বলল
–এতো আগে যাওয়ার কি দরকার ছিল? আগে গেলে তো অপেক্ষা করতেই হবে।
ঈশার কথা শুনে ইফতি আর মিরা দুজনেই মুচকি হাসল। ঈশা ভ্রু কুচকে একবার মিরার দিকে তাকাল তারপর সামনের আয়নায় ইফতির দিকে। কিছু বুঝতে না পেরে চুপ হয়ে গেলো। ঈশার এখন খুব বিরক্ত লাগছে। সবার উপরে সে খুব বিরক্ত। এতো অসস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে সেটা জানলে এভাবে বিয়েই করতো না। ইভান কে কোন ভাবে ম্যানেজ করে কাজি অফিস অব্দি নিয়ে যেত। তারপর সাধারন ভাবে বিয়ে করে নিত। কোন ঝামেলা হতোনা। এতো নিয়ম রীতি। কোনটাই ঈশার ভালো লাগছে না। অতিস্ট হয়ে উঠেছে সে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। কমিউনিটি সেন্টার টাও অনেক দূরে। ঈশার আর বসে থাকতেই ইচ্ছা হচ্ছে না। আর মাত্র দুইদিন। কিন্তু এই দুইদিন যেন ঈশার গলার কাঁটা হয়ে গেলো। উফ! সিটে মাথা এলিয়ে দিলো। আর ভাবতে পারছে না। মাথাটা প্রচণ্ড ব্যাথা করছে। চোখ বন্ধ করে থাকলো।
—————–
স্ট্যাচু হয়ে আয়নার সামনে বসে আছে ঈশা। দুইটা মেয়ে সেই কখন থেকে তাকে এদিক সেদিক ঘুরে ফিরে সাজাচ্ছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো। বাইরে অনেক সোরগোল শোনা যাচ্ছে। সবাই এসে গেছে মনে হয়। ঈশার খুব ইচ্ছা করছে সবার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিতে। খুব মজা করতে। কিন্তু এটা তো সম্ভব নয়। কারন বিয়েটা তো তার। এটা কেমন কথা নিজের বিয়ে বলে কি সে মজা করতে পারবে না। তার তো নিজের বিয়ে উপলক্ষে আরও বেশী করে মজা করা উচিৎ। সবার থেকে বেশী। চাপা কষ্টটা মনের মাঝে রেখেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সে। একজন মেয়ে বলল
–একবার দেখে নিন তো সব ঠিক আছে কিনা?
ঈশা চোখ তুলে আয়নায় দেখল। হালকা মেকাপ দিয়েছে। সারা গায়ে তাজা ফুলের গয়না। আশ্চর্যের বিষয় হল সব গুলোই ঈশার পছন্দের বেলি ফুলের তৈরি। সারা শরীরে ফুলের ঘ্রানে মৌ মৌ করছে। যেন আস্ত বেলি ফুলের গাছ। এই ঘ্রাণটা ঈশার বেশ লাগে। চোখ বন্ধ করে একবার বুক ভরে শ্বাস টেনে নিলো। ঘ্রাণটা নাকে লাগতেই অদ্ভুত ভালো লাগা ছড়িয়ে গেলো মনে। এতক্ষনের বিরক্তি ভাবটা কেটে গেলো। মিরা ঈশার ঘাড়ে হাত রেখে বলল
–বাহ! তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
ঈশা হেসে মিরার দিকে তাকাল। সেও হালকা করে সেজেছে। মিরার গালে আলতো করে হাত রেখে বলল
–তোমাকেও অনেক সুন্দর লাগছে।
মিরা বলল
–তুমি একটু বস। আমি দেখে আসি বাইরে সব রেডি হল কিনা?
ঈশা মাথা নাড়তেই সে বাইরে চলে গেলো। অনেকটা সময় পরে এসে বলল
–চল। সব রেডি। শুধু তোমার অপেক্ষা।
ঈশার বুকের ভিতরে ঢিপঢিপ শব্দটা যেন বেড়ে গেলো। মিরা হাত ধরে তাকে টেনে তুলল। তারপর হালকা টেনে বাইরে নিয়ে এলো। সিঁড়ির পাশে দাড়িয়ে ঈশা নিচে সবাইকে দেখে নিলো। সবাই নিজেদের মতো কাজে ব্যস্ত। ইভান স্টেজের এক পাশে দাড়িয়ে ঈশাকে দেখছে। এই হালকা সাজেও ঈশাকে যে এতো সুন্দর লাগবে সেটা তার ধারনাতেও ছিল না। ঈশা সিঁড়ি বেয়ে নামতেই ইভান একদম সিঁড়ির শেষ প্রান্তে এসে দাড়িয়ে গেলো। ঈশা শেষ সিঁড়িটা পার হতেই ইভান দুই হাতে ঈশার গাল চেপে ধরল। সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলল। ইভানের এমন কাজে মাঝে মাঝে ঈশা খুব অসস্তিতে পড়ে যায়। সবার সামনে এরকম কিছু করার মানেই হয়না। ইভানের স্পর্শ না পেয়ে ঈশা চোখ খুলে ফেলল। একটু দূরে ইভান দাড়িয়ে ঠোট টিপে হাসছে। ঈশা ইভানের হাসির কারন বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকে তাকাল। ইভানের দাদি এগিয়ে এসে তার কান ধরে টেনে রাগি গলায় বলল
–এটা কি করলি তুই? কেন ওকে আগে হলুদ মাখালি? সব কিছুর একটা নিয়ম আছে। বিয়ের নিয়ম এভাবে ভাংতে নেই।
ঈশা ওনার ঝাঝাল কথা শুনেই বুঝতে পারলো ইভান তাকে হলুদ মাখাতেই দুই গালে হাত রেখেছিলো। আর তার এমন কাজে তার দাদি যে খুব রেগে গেলো। তিনি নিয়ম রীতি এসবকে সব কিছুর আগে গুরুত্ত দেন। আর তার ধারনা ইভান আগেই ঈশাকে এভাবে হলুদ লাগিয়ে নিয়ম ভেঙ্গে ফেলেছে। এটা ঘোরতর অন্যায়। তিনি ইভানের কান ছেড়ে তীক্ষ্ণ চোখে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–এটা একদম ঠিক হল না। বিয়েটা অন্তত নিয়ম মতই হওয়া উচিৎ। এটা সারাজীবনের ব্যাপার। অনেক কিছু মেনে চলতে হয়।
ইভান তার রাগের কারণটা বুঝতে পেরে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল
–রিলাক্স দাদু। এতো টেনশনের কিছুই নাই। এসব শুধুই নিয়ম। জিবনের কিছুই এসব নিয়ম দিয়ে চলে না। বিয়ের মতো সম্পর্ক টিকে রাখতে হলে দুজনের স্বতঃস্ফূর্ত ভালবাসা আর মনের মিলটা থাকা প্রয়োজন। দুজনের মধ্যে ভালবাসা না থাকলে এসব নিয়ম কোন কাজেই আসবে না। কোন নিয়মই দুটো মানুষকে এক সাথে ধরে রাখতে পারেনা। আর না কোন নিয়ম দুজনকে আলাদা করতে পারে। তুমি একদম নিশ্চিন্তে থাকো। সব ঠিক থাকবে।
ইভানের কথায় তার দাদি কতোটুকু শান্ত হতে পারলো সেটা নিজেই ভালো জানেন। কোন কথা বললেন না তিনি। ইভান আবারো বলল
–এতো ভেবনা। এসব নিয়ম কোনভাবেই ম্যাটার করেনা। সব থেকে বড় যে বিষয়টা ম্যাটার করে সেটা হল তোমার দোয়া। তোমাদের সবার দোয়া আমাদের জিবনে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সুখের জন্য তোমরা মন থেকে দোয়া করো। আমরা অবশ্যই সুখী হবো।
ইভানের দাদি তার মাথায় হাত রাখল। তার চোখে পানি টলমল করছে। তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি বেশ ভয় পাচ্ছেন। ভয়টা কিসের তিনি নিজেও জানে না। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন
–তোমরা দুজন সারাজীবন একসাথে থাকো। আমি মন থেকে দোয়া করি। কখনও আলাদা হবে না।
ইভান একটু হেসে বলল
–ইভানের খাচা থেকে পাখি উড়ে যাওয়া এতো সহজ না। সেই ছোটবেলা থেকে অনেক মজবুত করে খাচা বানিয়েছি। এখান থেকে পাখি চাইলেও উড়তে পারবে না। আমি বেঁচে থাকতে তো পাখি কোনদিনই মুক্তি পাবে না। এই জনমে তো নয়ই।
ইভানের কথা শুনে সবাই ঠোট টিপে হাসতে লাগলো। থমথমে পরিবেশ আবার প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠলো,। ইভান ঈশার সামনে দাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো। ঈশা একবার হাতের দিকে তাকাল। তারপর আশে পাশে সবার দিকে তাকাল। কিছুক্ষন আগেই ইভানের নিয়ম ভাঙ্গা নিয়ে তার দাদি রাগ করেছিলো। আবার হাত দিলে যদি রাগ করে বসে। না জানি আরও কোন নিয়ম আছে কিনা? ঈশা হাতের দিকে তাকিয়ে ভাবছে। ইভান ভ্রু কুচকে বলল
–ধরবি নাকি অন্য কাউকে দিয়ে দিবো?
ইভানের কথা শুনেই ঈশা একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো। সবাই শব্দ করে হেসে ফেলল। ঈশা লজ্জায় মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। ইভান একটু হেসে তাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো স্টেজ পর্যন্ত। ঈশা ইভান পাশাপাশি বসে আছে। ইভান হালকা হলুদ রঙের একটা পাঞ্জাবী পরেছে। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে অনেক খুশি। সবাই একে একে দুজন কে হলুদ মাখাল। সব পর্ব শেষ করে এবার বাসায় ফেরার পালা। কাল আরও অনেক ব্যস্ততা। ইফতি মিরার এঙ্গেজমেন্ট আবার ইভান ঈশার বিয়ে। তাই সবাই এক এক করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। ঈশা ওয়াশ রুমে গিয়ে হালকা করে হলুদ গুলো মুছে ফেলল। বাড়ি যাওয়ার আগে ইভানের দাদি ঈশাকে কঠিন ভাবে আদেশ করে গিয়েছে নতুন বউ যাতে এভাবে হলুদ লাগিয়ে বেশিক্ষন বাইরে না থাকে। সোজা বাসায় চলে যায় আর গোসল করে তাড়াতাড়ি যেন হলুদ তুলে ফেলে। নাহলে নাকি ভুত চেপে ধরার সম্ভাবনা থাকে। এমন কথা শুনে ঈশা মনে মনে হেসেছে। রুমা ঈশাকে নিজের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিচে নামালে মিরা এসে বাধা দেয়। মুখে হাসি টেনে বলে
–বাড়ি পৌঁছে দেয়া অব্দি ঈশা আপুর দায়িত্ব আজ আমার।
রুমা একটু ভ্রু কুচকে তাকায়। কিন্তু কি ভেবে ঠোট টিপে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে
–দায়িত্বটা তাহলে ভালভাবে পালন করো। সময় মতো পৌঁছে দিও কেমন?
দুজনি হাসল। ঈশা দুজনের দিকেই তাকাল। রুমা চলে গেলো। মিরা ঈশাকে নিয়ে গেলো আরেকদিকে। পিছনের দরজা দিয়ে ঈশা বের হয়ে দেখে ইভান গাড়িতে হেলানি দিয়ে দাড়িয়ে আছে। মিরা ইভানের হাতে ঈশার হাত ধরিয়ে দিয়ে বলল
–ভাইয়া আমার দায়িত্ব আপাতত শেষ। আর হ্যা দাদি বলেছে হলুদ লাগানো অবস্থায় নতুন বউ যেন বাইরে না থাকে। ভুত ধরতে পারে।
ইভান শব্দ করে হেসে ফেলল। ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–ওর জিবনে আমার থেকে বড় ভুত আর নেই। আগে আমার অত্যাচারটাই সহ্য করুক তারপর বাকিটা ভাবা যাবে।
বলেই ঈশাকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। সবার দৃষ্টির অগোচরে গাড়ি নিয়ে একটা ফাকা জায়গায় থামাল। ঈশা এতক্ষন চুপ করে দেখছিল। এখন কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করেই বসলো
–আমরা এখানে কেন?
ইভান ঈশার কাছে এসে গালে হাত রেখে বলল
–তোকে অনেক মিস করছিলাম তো তাই।
ঈশা ভ্রু কুচকে ফেলল। মিস করার তো প্রশ্নই আসেনা। এতক্ষন একসাথেই ছিল। ঈশার এমন চাহুনি দেখে ইভান হেসে ফেলল। ঈশাকে নামতে বলে নিজেও নেমে গেলো। ঈশা নেমেই দেখল নদির পাড়ে দাড়িয়ে আছে। ইভান একটু এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো। একটা নৌকা এসে থেমে গেলো। ইভান নৌকায় উঠে ঈশার দিকে হাত বাড়াল। ঈশা কিছু না বুঝেও হাত বাড়িয়ে দিলো। ঈশাকে নৌকায় তুলে খুব যত্ন করে বসাল। এক হাতে জড়িয়ে সামনে তাকিয়ে বলল
“কোন এক শ্রাবনের রাতে চাঁদ ভাসবে আকাশে আর আমি ভাসব নদীতে। চাঁদের সাথে যেখানে পানি মিলেমিশে একাকার সেখানেই তোমার সাথে নিবিড় সান্নিধ্যে বসে জ্যোৎস্না স্নান করবো। দুজনের নিরব অনুভুতি সেদিনও মিলে যাবে গোপনে। চেনা শহর চেনা মানুষের কাছ থেকে হারিয়ে যাবো কিছু সময়ের জন্য দুজন। নিজেদের মতো কাটাবো কিছু মুহূর্ত। কিছু সময় পরে মেঘে ঢেকে যাবে চাঁদ। শুরু হবে প্রেমের বর্ষণ! ভালবাসাময় কিছু মুহূর্ত থমকে যাবে। আর সেই ভালাবাসার সাক্ষী হবে বৃষ্টির পবিত্র ফোটা।”
কথাটা বলেই থামল ইভান। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
–আজও সেদিনের মতো মিসিং থেকেই গেলো।
ঈশা ঘোরের মধ্যে আছে। সে এখনো বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে। ইভান এক হাত ঈশার গালে রাখতেই চমকে গেলো। ইভানের দিকে তাকাল করুন চোখে। ইভান অসহায়ের মতো বলল
–এখন বৃষ্টিটা হলে কি খুব ক্ষতি হতো? তোর এই ইচ্ছাটা অন্তত পুরোপুরি ভাবে পুরন হয়ে যেত। আমার খুব ভালো লাগত।
ঈশা কেদে ফেলল। ইভানের হাত চেপে ধরে বলল
–আমার চাইনা কিছুই। আমার শুধু তোমাকে চাই। আমার সব কিছু এই তুমিতেই।
ইভান হাসল। ঈশার চোখে পানি মুছে দিয়ে বলল
–আর এই তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি।
চলবে………
(আমার যে আর অন্য কোন থিম নিয়ে গল্পলেখা হয়ে উঠবে না সেটা ভালভাবেই বুঝে গেছি। আপনারা কি ইভান ঈশার উপরে বিরক্ত হন না? এবার কিন্তু ওরা দুজন আপনাদের উপরে বিরক্ত। আর আসতে চায়না তারা। আমি এই গল্পটা শেষ না করতেই আবার তাদের নিয়েই নতুন গল্পের এতো অনুরধ! ওদেরকে একটু শান্তিতে সংসার করতে দিন।)