তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি লেখক-এ রহমান পর্ব ২৭

0
895

#তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২৭

চারিদিকে এতো সোরগোল। অস্থির হয়ে উঠেছে পরিবেশ। নিকটাত্মীয় আসতে শুরু করেছে দুই বাড়িতেই। ৪ দিন পর বিয়ে। সময় হাতে বশি নেই। অনেক আয়োজন এখনো বাকি। তবে অনেকটাই সামলে এসেছে। সবাই খুব ব্যস্ত। নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগ করে নিয়েছে। এতো সোরগোল কোন কালেই ঈশার পছন্দ ছিল না। এক প্রকার বিরক্ত হয়েই বারান্দায় বসে কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনছে ঈশা। এর মাঝেই কেউ একজন কান থেকে টান মেরে সেটা খুলে ফেলতেই বিরক্তি নিয়ে সেদিকে তাকায় সে। তার বড় ফুপু দাড়িয়ে আছে রাগি চোখে তাকিয়ে। ঈশা ভালো করে তার দিকে তাকাতেই তিনি বাজখাই কণ্ঠে বললেন
–দেখ মেয়ের কাণ্ড। এখনো এভাবে বসে আছিস কেন? রেডি হবি কখন? হাতে বেশী সময় নেই।

ঈশা ভ্রু কুচকে ফেলল। বিরক্তি মুখে বলল
–রেডি হয়ে আবার কোথায় যাবো ফুপু?

তার ফুপু মাথায় হাত দিয়ে চেচামেচি শুরু করলেন। তার চেচামেচি শুনে ফুপুত বোন নিলা চলে এলো দৌড়ে। তার মাকে থামিয়ে দিয়ে বলল
–কি হয়েছে? এভাবে কেন চেচাচ্ছ?

তার মা বলল
–দেখ এখনো বসে আছে। একটু পরেই ওর শশুর বাড়ি থেকে লোকজন চলে আসবে।

নিলা ঈশাকে দেখে নিয়ে তার মাকে বলল
–তুমি যাও মা। অন্য কাজ করো আমি ওকে রেডি করাচ্ছি।

ঈশার ফুপু আর কথা বাড়াল না। নিজের কাজে চলে গেলো। ঈশা উঠে দাঁড়ালো। নিলাকে জিজ্ঞেস করলো
–ওরা কেন আসবে আপু?

নিলা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
–বিয়ের আগে মেয়েকে ছেলের বাড়ি থেকে আংটি অথবা চেন কিছু একটা পরিয়ে দেয়। সেটা যদিও বা ইভান ভাইয়া একবার পরিয়ে দিয়েছে। তবুও তোর দাদি শাশুড়ি এটা নিয়ে একটু আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি নিজে তার নাতবউ কে কিছু একটা পরিয়ে দিতে চান আয়োজন করে। তাই তারা একটু পর আসছে। তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।

ঈশা অতি বিস্ময় নিয়ে বলল
–এতো কিছু হচ্ছে অথচ আমাকে কেউ কিছুই বলছে না। কেন? ফুপু না বললে তো আমি জানতামই না।

নিলা হাসল। ঈশাকে হাত ধরে ঘরে এনে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বিছানায় পড়ে থাকা একটা প্যাকেট হাতে দিয়ে বলল
–এই শাড়ীটা পরে নে। খুব দ্রুত। সবার অনেক কাজ বাকি রে।

ঈশা একটা শ্বাস ছেড়ে ওয়াশ রুমে গেলো। কিন্তু একা একা পরতে পারলো না। এর আগেও তো সে নিজে নিজে পরেছে। তাহলে আজ সব কিছু এমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে কেন? মাথাটাও ঠিক মতো কাজ করছে না। কেমন একটা অসস্তি কাজ করছে তার মধ্যে। কোন রকমে শাড়ীটা পেচিয়ে বের হয়ে এলো। সামনে নিলাকে দেখতে পেয়ে অসহায়ের মতো বলল
–পারছি না আপু।

নিলা শব্দ করে হেসে বলল
–জানি তো পারবি না। এই জন্যই বসে আছি।

বলেই ঈশাকে শাড়ি পরিয়ে দিলো। কিন্তু শেষ হওয়ার আগেই বাইরে থেকে ডাক পড়লো। সবাই এসে গেছে। ডাক কানে আসার সাথে সাথেই ঈশা কেমন লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেলো। ঠিক যেমনটা ইভানের প্রথম স্পর্শে হয়েছিলো। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে সবার সামনে জেতেও তার তেমনি লজ্জা লাগছে। নিলা তাড়াতাড়ি করে শাড়ীটা পরে দিয়ে ঝটপট কিভাবে যেন সাজিয়ে দিলো। আহা মরি তেমন সাজ না। তবে কমও না। আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিলো। কেমন লাগছে সেটা বুঝতে পারছে না। শুধু অসস্তি হচ্ছে বেশ। নিলা একবার ভালো করে দেখে নিয়ে বলল
–চল।

বলেই টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। ঈশা কয়েক কদম বাড়িয়ে আবার থেমে গেলো। নিলা ভ্রু কুচকে পিছনে তাকাল। বলল
–কি হল? থামলি কেন?

ঈশা ভিত কণ্ঠে বলল
–কে কে এসেছে আপু?

নিলা বিরক্ত হল। হাত ছেড়ে দিয়ে ভালো করে দাঁড়ালো। একটু ঝাঝাল কণ্ঠে বলল
–আমি কি দেখেছি? তোর সাথেই তো ছিলাম। আর এমন ভাবে ভয় পাচ্ছিস যেন অপরিচিত কেউ। যেই আসুক না সবাই তো তোর পরিচিত। তাড়াতাড়ি আয়।

বলেই সে পা বাড়াল। কিন্তু ঈশার পা যেন আটকে গেলো। ভারি হয়ে উঠছে। বুকের ঢিপঢিপ শব্দটা বেড়ে গেলো। শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বেড়ে গেলো। ঘামতে লাগলো। এমন কেন লাগছে তার? ইভান কি এসেছে? ভাবতেই গলা শুকিয়ে এলো। নিলা ঈশাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কঠিন গলায় বলল
–বিয়েটা কি আদৌ করার ইচ্ছা আছে?

ঈশা চোখ বন্ধ করে ফেলল। একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়েও কিছুদুর পরে আবার থেমে গেলো। ইভান কে সোফায় বসে থাকতে দেখেই তার সমস্ত শরীর যেন শক্তি হারিয়ে ফেলল। হালকা গোলাপি রঙের একটা পাঞ্জাবী পরেছে। হাতা কনুই পর্যন্ত গুটানো। চুলগুলো এখনো ভেজা। মনে হয় কিছুক্ষন আগেই গোসল করেছে। ইফতির সাথে বসে কথা বলছে। কি নিয়ে যেন হাসাহাসি করছে। ইভান তার দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়লো। ঈশা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো। ইভান ক্ষীণ হাসল। এমন তো আগে হয়নি? তাহলে আজ কেন? এতো লজ্জা কেন পাচ্ছে সে ইভানের সামনে যেতে? নিলা এবার বিরক্ত হয়ে এক প্রকার টেনেই নিয়ে গেলো ঈশাকে। নিয়ে গিয়ে ইভানের পাশে বসিয়ে দিলো। ইভানের শরীর তার সাথে ছুঁইছুঁই হতেই হালকা কেঁপে উঠলো সে। ইভান বুঝতে পেরে ভ্রু কুচকে তাকাল। ঈশার রক্তিম চেহারা লালাভ নাকের ডগা তার লজ্জার মাত্রাটা ঠিক ঠাক বুঝিয়ে দিচ্ছে। ইভান মুচকি হাসল। তার দাদি ঈশাকে দেখে নিয়ে বলল
–খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে।

ঈশা চোখ নামিয়েই ক্ষীণ হাসল। তিনি একটা চেন বের করে ইভানের উদ্দেশ্যে বললেন
–দাদু ভাই এটা পরিয়ে দাও।

ইভান চেনটা হাতে নিলো। ঈশার মাথায় শাড়ির আচল টেনে দেয়ায় সেটা পরাতে অনেকটা কাছে যেতে হবে। ইভান ভালো করে দেখে নিলো ঈশাকে। গালের পাশ দিয়ে হাত বাড়িয়ে শাড়ির আচলটা সরিয়ে দিলো। ঈশা হালকা ভাবে নিচের ঠোট কামড়ে ধরল। ইভান মুখটা একদম কানের কাছাকাছি আনতেই ঈশা চোখ বন্ধ করে ফেলল। অতিরিক্ত লজ্জা আর ভয়ের কারনে গা ঘেমে গেছে। গলা বেয়ে ঘাম ঝরছে। ইভান চেনের হুকটা লাগিয়ে দিয়েও সরল না। ঈশা চোখ বন্ধ করে ঠোট কামড়ে ধরেই বসে আছে। গলায় জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম এক আঙ্গুলে মুছে দিয়ে কানে ফিসফিস করে দুষ্টুমির সুরে বলল
–এতটুকুতেই ঘেমে আইস্ক্রিমের মতো গলে যাচ্ছিস। বিয়ের পর তোর কি হবে সেটা ভেবেই আমার খুব টেনশন হচ্ছে। ভয়েই আবার দম আটকে মরেই না যাস। তখন আমার কি হবে বল।

ঈশা শুকনো ঢোক গিলে ফেলল। ইভান সরে গেলো। সবাই নিজেদের মতো গল্পে ব্যস্ত হয়ে গেলো। এতক্ষন সবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি গুলো ঈশার উপরে থাকলেও এখন নেই। একটু হলেও অস্বস্তিটা কমেছে তার। ইভান পাশ থেকে টিস্যু নিয়ে ঈশার দিকে এগিয়ে দিলো। ঈশা সেদিকে তাকিয়ে প্রথমে একটু বিরক্ত হলেও কি মনে করে সেটা নিয়ে নিলো। মুখের ঘামটা মুছে আচলটা টেনে দিলো। ইভানের মা নিজদের কথা শেষ করে সবার উদ্দেশ্যে বললেন
–আমরা চাইছি দুই বাড়ির অনুষ্ঠান সব একসাথেই হোক। আর বাকি অনুষ্ঠান গুলো সব কমিউনিটি সেন্টারে হবে। আপনাদের কোন আপত্তি নেই তো?

ঈশার মা হেসে বললেন
–আপত্তি থাকার কি আছে? এটা তো ভালো কথা। সবাই তাহলে সবার অনুষ্ঠানেই মজা করতে পারবে। কারও আফসোস থাকবে না যে ইভানের আর ঈশার বিয়েতে আলাদা করে মজা করতে পারেনি।

ঈশার মায়ের কথা শুনে সবাই বেশ মজা পেলেন। পুরো ঘরে হাসির রোল পড়ে গেলো। কিন্তু ঈশার অসস্তি বেড়েই যাচ্ছে। সে অনেক জোরে একটা শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। কিছুক্ষন পরেই নিলা এসে ঈশার হাত ধরে তাকে উঠালো। ঈশা উঠে দাড়াতেই ইভান নিলার দিকে তাকাল। নিলা দাত কেলিয়ে বলল
–বিয়ের আগে বউকে এতো দেখতে হয় না। বিয়ের পরেই দেখ মন ভরে।

ইভান খুব শান্ত ভাবে বলল
–ছোট বেলা থেকেই আমার বউকে আমি মন ভরে দেখে এসেছি। ভবিষ্যতেও তাই দেখবো। তোকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না।

ঈশা তাদের এমন লাগাম ছাড়া কথা শুনে চারিদিকে তাকাল। সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত। কেউ তাদের কথা শুনতে পায়নি। নিলা ঈশাকে ঘরে এনে তাড়াতাড়ি শাড়ি চেঞ্জ করতে বলল। ঈশার আসলেই শাড়ীটা পরে বিরক্ত লাগছিল। সেও সুযোগ পেয়ে তাড়াতাড়ি শাড়ি ছেড়ে নিজের মতো জামা পরে নিলো। ইভানরা আচার অনুষ্ঠান নিয়ে আরও কিছুক্ষন কথা বলে চলে গেলো। এর মাঝে ঈশা একবারও ঘর থেকে বের হল না। ইভান যতক্ষণ বাড়িতে ছিল ততক্ষন তার মধ্যে এক রকম অসস্তি কাজ করছিলো। কোন কিছু করেই শান্তি পাচ্ছিল না। এরকম হওয়ার কারণটা ঈশার কাছে কোন ভাবেই স্পষ্ট না।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here