#তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি
লেখক-এ রহমান
স্পেশাল পর্ব
–ইভান তুমি ঈশাকে বিয়ে করেছ?
–হোয়াট?
মেঘলার এমন আজব কথা শুনে ইভান চিৎকার করলো। মেঘলা বিস্ময় নিয়ে বলল
–এই পেপার তো সেটাই বলে। তুমি আর ঈশা লিগালি ম্যারিড কপোল। এটা তোমাদের ম্যারেজ রেজিস্ট্রি পেপার।
মেঘলার কথা সব ইভানের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। মেঘলার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে সেটাতে চোখ বুলাতেই বিস্ময়ে মুখ হা হয়ে গেলো ইভানের। বড় বড় চোখে সেটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ঈশার দিকে তাকাল। ঈশা স্বাভাবিক ভাবেই তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইভান এক হাতে কাগজটা নিয়ে আরেক হাতে ঈশাকে টেনে নিয়ে গেলো তার কেবিনে। ভিতরে ঢুকেই দরজা লক করে দিলো। ঈশা ইভানের আচরন বুঝতে চেষ্টা করলো। ইভান কাগজটা ঈশার সামনে ধরে দাতে দাত চেপে বলল
–এসব কি?
–যা লেখা আছে সেটাই।
ঈশার এমন কথায় ইভানের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ দমন করে বলল
–আমিও দেখতে পাচ্ছি কি লেখা আছে। কিন্তু এটা কিভাবে আসলো? তুই কোথায় পেলি? সবটা ক্লিয়ার কর। নাহলে আজ তোর কপালে দুঃখ আছে ঈশা।
ঈশা অবাক চোখে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। এই বিষয়ে ইভান এমনভাবে রিয়াক্ট করবে সেটা বুঝতে পারেনি সে। ঈশাকে এভাবে চুপ করে থাকতে দেখে ইভান ঈশার হাত শক্ত করে ধরে দাতে দাত চেপে বলল
–চুপ করে থাকতে এখানে আনিনি তোকে। আমি কিছু জানতে চাই। আর সেটা তুই জানাবি।
ঈশার হাতে প্রচণ্ড ব্যাথা লাগছিল। সে চোখ মুখ কুচকে বলল
–আমার লাগছে। ছাড়ো।
ঈশার কথায় ইভানের কোন হেলদোল প্রকাশ পেলো না। সে ওই অবস্থাতেই ঈশার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। ঈশা ইভানের এমন আচরনের কারন বুঝতে পারলো না। অবাক চোখে ইভানের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ইভান আবার বলল
–স্পিক আউট ঈশা।
ঈশা আঁতকে উঠলো ইভানের চোখ দেখে। সে ইভানের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ইভান এতো জোরে তার হাত ধরেছে যে ভেঙ্গে যাওয়ার মতো অবস্থা। কিন্তু এই মুহূর্তে ঈশার কোন অনুভুতিই হচ্ছে না। সে ইভানের চোখের দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলল
–এটা আমাদের ম্যরেজ রেজিস্ট্রি পেপার। আমরা এখন বিবাহিত।
–আমি এটা জানতে চাইনি। যা জানতে চেয়েছি সেটা বল।
ইভান দাতে দাত চেপে বলল। ঈশা তার দিকে তাকিয়ে খুব শান্ত সরে বলল
–তোমাকে না জানিয়েই এটাতে সাইন করিয়ে নিয়েছি। তোমাকে এসবের কিছু জানাতেও চাইনি। আজ বাধ্য হয়ে জানাতে হল।
ইভান নিজের রাগটাকে সামলাতে না পেরে ঈশাকে সজরে একটা থাপ্পড় মারে। ঈশা গালে হাত দিয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। থাপ্পড়ের আঘাত টা হয়তো ততটাও তীব্র না। কিন্তু মনের কষ্টটা তার থেকেও ভয়ানক। বুকটা ফেটে যাচ্ছে ঈশার। ইভানের এমন আচরন সহ্য করার মতো না। তার পরেও সহ্য করে নিয়েছে। কারন সে জানে ইভানের রাগ হলে সে কোনভাবেই নিজেকে আটকাতে পারেনা। কি করছে সেটা তার মাথায় থাকে না। ঈশা নিজেকে স্বাভাবিক করে খুব শান্ত ভাবে বলল
–তুমি এখন অনেক রেগে আছো। আমরা এটা নিয়ে পরে কথা বলবো। ঠাণ্ডা মাথায় তোমাকে সব বলবো।
ইভান ঈশাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। রাগে ইভানের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে সে। দাতে দাত চেপে বলল
–পরে কথা বলার মতো কিছুই বাকি রাখিস নি তুই। কি করেছিস সেটা যদি বুঝতে পারতিস তাহলে এতটা স্বাভাবিক থাকতে পারতিস না। তুই বুঝতে পারছিস কি করেছিস?
–আমি কোন অন্যায় করিনি। হ্যা! তোমাকে না জানিয়ে এরকম কিছু করা ঠিক হয়নি। কিন্তু এটা কোন ভুলও না। আমি মনে করি যা করেছি ঠিক করেছি।
ঈশা কথাটা বলতেই ইভান আরও জোরে চপে ধরল তাকে। ঈশা ব্যাথায় আহ শব্দ উচ্চারণ করলেও ইভানের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। সে রাগ করে বলল
–এটাকে ধোঁকা বলে ঈশা। আমি জানিনা তুই কেন করেছিস। কিন্তু এটা যদি বাড়িতে কেউ জানতে পারে তাহলে কি হবে ভেবেছিস?
ঈশার হাতটা সামনে উঁচু করে ধরে বলল
–সামান্য আংটি খোলা নিয়ে কতো কিছু হয়ে গেছে। এখন এটা জানতে পারলে কি হবে সেটা কি ধারনা আছে তোর? অনেক কিছু করে আমি তোকে পেয়েছি। এতটা সহজ ছিলোনা। তুই অন্য কারও হয়ে যাচ্ছিলি। সেটা তোর জন্য খারাপ ছিল তাই আমি সেখান থেকে তোকে বাচাতেই সেদিন জোর করে আংটি পরিয়েছিলাম। চাইলে সেদিন তোকে বিয়েও করতে পারতাম। কিন্তু করিনি কেন জানিস? কারন তোর এই সম্পর্কে কোন বিশ্বাস ছিল না। মতামত ছিল না। আমি তোর উপরে জোর করতে চাইনি। সাথে সবার কথা ভেবেছিলাম। সবার মতামত নিয়ে তোর ভালবাসা আদায় করে তবেই বিয়ে করবো। আমি সেটা করেছি। সবটা নিজের মনের মতো করেই করেছি। অনেক ঝামেলার পর আমরা এক হতে যাচ্ছিলাম। সবাই রাজি ছিল আমাদের বিয়ে নিয়ে। তোর ফাইনাল এক্সাম শেষ হলেই আমাদের বিয়ে দিত। কিন্তু মাঝ পথেই তুই বিষয়টাকে এলোমেলো করে দিলি। এই বিষয়টা সবাই যদি জানতে পারে তাহলে কতটা কষ্ট পাবে সেটা ভেবেছিস? আর তোর আব্বু কিভাবে রিয়াক্ট করবে? সব কিছু তোর কাছে ছেলে মানুষী মনে হয়? তুই এই বিষয়টাকে সহজ ভাবে নিচ্ছিস কিভাবে আমি সেটাই বুঝতে পারছি না।
ঈশাকে ছেড়ে দিলো। ইভানের এমন আচরন ঈশাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। চোখ বেয়ে অঝরে পানি পড়ছে। ঈশা ইভানের ঘাড়ে হাত রেখে বলল
–আমার কথাটা শোন প্লিজ। আমার এটা ছাড়া কোন উপায় ছিল না।
ইভান ঈশাকে এক ঝটকায় দূরে ঠেলে দিলো। উলটা দিকে ঘুরেই খুব শান্ত ভাবে বলল
–যেই কারনি থাক এখন আমি আর জানতে চাইনা। এরকম কিছু করার আগে তোর আমাকে জানানো উচিৎ ছিল। যখন জানানোর প্রয়োজন মনে করিস নি তখন এসব বলা অর্থহীন।
ঈশা ফিকরে ফিকরে বলল
–আমি তোমাকে সবটা বলবো। আমাকে ভুল বুঝিওনা প্লিজ। একটু ঠাণ্ডা মাথায় আমার কথা শোন। একটু সময় দাও আমাকে।
ইভান ঈশার দিকে ঘুরে তাকাল। তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল
–যে কোন সম্পর্কে বিশ্বাস টা সব থেকে বড়। তুই যদি আমাকে বিশ্বাস করতিস তাহলে আগেই কারণটা বলে দিতিস। আর কি বললি? এরকম পরিস্থিতি না আসলে আমাকে জানানোর প্রয়োজন হতো না। খুব সাহস তোর ঈশা। নিজেকে খুব বুদ্ধিমান ভাবিস তুই। সব কিছু তোর কাছে ছেলে খেলা মনে হয়। খুব সহজ কিছু। তুই তো আমাকে বিশ্বাস করিস না আবার তোর উপরে যে বিশ্বাস টা ছিল সেটাও ভেঙ্গে দিয়েছিস। আমাকে না জেনে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে নিয়েছিস। আবার দেখা যাবে কবে ডিভোর্স পেপারেও সাইন করে নিবি। কখন বিয়ে হল আর কখন ডিভোর্স হল কিছুই জানতে পারলাম না।
ঈশা কাঁদতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে বলল
–এরকম করনা প্লিজ। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। অনেক বিশ্বাস করি।
–দেখতেই পাচ্ছি তোর বিশ্বাসের নমুনা। এসব কথা বলে আমার কাঁটা ঘায়ে আর নুনের ছিটা দিস না। আমাকে মাফ করে দে। আমি আর নিতে পারছি না।
ইভানের কথ গুলো ঈশাকে ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিলো। ইভান কি বুঝতে পারছে না ঈশা বাধ্য হয়ে এরকম কিছু করেছে। কি কারন সেটাও তো জানতে চাইছে না সে। এতো নিষ্ঠুর কেন ইভান? ঈশা বুঝতে পারছে সে ইভান কে আগে থেকে সব কিছু না বলে অন্যায় করেছে। কিন্তু যা হওয়ার হয়েই তো গেছে এখন এমন করে তো কোন লাভ নেই। ঈশা অসহায়ের মতো বলল
–আমাকে কি কিছুই বলার সুযোগ দিবে না?
–তুই হারিয়ে ফেলেছিস। যখন সুযোগ ছিল তখন বলিস নি। এখন আমি আর শুনতে চাই না।
ঈশা ইভানের কাছে এসে তার কলার চেপে ধরে বলল
–কি পেয়েছ আমাকে? তোমার ইচ্ছা হবে নিজের সাথে জড়াতে জোর করবে আবার ইচ্ছা হবে এভাবে কষ্ট দিবে। কেন? আমি কি অপরাধ করেছি?
ইভান ঈশার হাত দুটো ধরে নিজের কলার ছাড়িয়ে নিয়ে কঠিন গলায় বলল
–আমি যা করেছি তুইও তাই করেছিস। কিন্তু আমি তোকে আগে সবটা বলেছি। তুই তখনও আমাকে বিশ্বাস করিস নি। আর আজ তুই আমাকে না জানিয়েই এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়েছিস। এখনো আমাকে বিশ্বাস করিস নি। আমার আফসোস থেকে যাবে ঈশা। এতো ভালবেসেও তোর বিশ্বাস অর্জন করতে পারিনি। আমি ব্যর্থ। সত্যিই ব্যর্থ। তুই আমার সামনে থেকে চলে যা। আমি তোর চেহারা দেখতে চাইনা। তুই আমার ইমোশন কে হার্ট করেছিস। আমি খারাপ কিছু করার আগেই এখান থেকে চলে যা। নাহলে যা কিছু হবে তার জন্য তুই দায়ি থাকবি।
ঈশা নিস্পলক ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টি অনুভুতি শুন্য। ইভান তার দিকে ঘুরেও তাকাল না। ঈশা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বুক ভরা আহাজারি নিয়ে বের হয়ে গেলো।
চলবে………
(যারা গেস করেছিলেন তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ। আপনারা যে অনেক মনোযোগ দিয়ে গল্পটা পড়েন ভেবেই আমার খুব ভালো লাগছে।)