#তোমার_সন্ধানে ♥️
#ফারজানা_আফরোজ
৬
দুতলা বাড়িটা আজ মানুষে ভর্তি। নিয়তি চুপচাপ বসে আছে। এখনো বর নামক মানুষটির নাম সে জানে না এমনকি দেখেনি পর্যন্ত। মনের ভিতর শুরু হলো তোলপাড়। বর মানুষটি কি তার মনের মত হবে? নাকি ভিলেন টাইপের হবে। ভাবতে নিলেই হাত পা অবশ হয়ে যায় তার। পরনে ভারী লেহেঙ্গা। ফ্যানের বাতাসের স্পর্শে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে সে,
বর এসেছে বর এসেছে……
শব্দটা কানে বাজতেই মিশুর হাত চেপে ধরে ঠান্ডা গলায় বলল,
–” একটু পানি দে।”
মিশু এক গ্লাস পানি দিতেই ঢকঢক করে পুরোটাই শেষ করে ফেলল সে। মিশু নিয়তির অস্বস্তি ভাবটা দূর করার জন্য বলল,
–” চিল ইয়ার, আজকেই ফুলসজ্জা তুল্ডয্যা কিছু হবে না। আরো চার বছর পর। সো রিল্যাক্স ইয়ার।”
নিয়তির এই মাত্র মনে পড়ল ফুলসজ্জা বিষয়ের কথা। এতক্ষণ ভালোভাবে থাকলেও এখন তার লজ্জা করছে প্রচুর লজ্জা। মিশু হঠাৎ এমন কেন বলল? নাহ বললে কি হতো না। খবিশ মহিলা বলে মনে মনে বকা দিলো নিয়তি।
মিশু ওয়াশ রুমে যাবে বলে নিয়তির রুম থেকে বের হলো। নিয়তির ওয়াশ রুমে কেউ একজন ঢুকে বসে আছে এখনও আসার নাম নাই। গেস্ট রুমের ওয়াশ রুমে গিয়ে চিল হয়ে যখন আয়নার সামনে নিজের সাজগোজ দেখছিল তখনই দরজার ওপাশ থেকে চোখ টিপ দিয়ে একজন প্রশ্ন করলো,
–” আজকে তো দেখছি শিশু সত্যিই বড় হয়ে গেছে। আপনার বিয়ে নাকি মিস মিশু?”
দরজার ওপাশে অভ্রকে দাঁড়িয়েয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো মিশু, পরবর্তীতে বিয়ে বাড়ি থাকায় অবাক হওয়াটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। মিষ্টি করে হেসে বলল,
–” নাহ আমার সাথে একজনকে দেখছিলেন না ওর বিয়ে আজকে, আপনি এইখানে কেন? ”
অভ্রের মন নিমিষেই আঁধার হয়ে গেল। গলা টেনে বলল,
–” কুইয়েন বিয়ে? আমি বরযাত্রী। বর স্বয়ং শুদ্ধ।”
শুদ্ধ যে বর কথাটা হজম হলো না মিশুর। সে এখনও বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। যেন অভ্র অবাক হওয়ার মতই কিছু বলেছে। মিশুর মুখ দেখে অভ্র হেসে আবারো বলল,
–” না বুঝার মত তো কিছু বলেনি। আর শুদ্ধ ব্যাপারটা জানতো না। গতকাল ও জেনেছে। আর আমি রাতে জেনেছি। আমার মনে হয় কুইন এবং শুদ্ধ কেউ জানতো না আজ তাদের বিয়ে। ওয়াও কি সুইট কাপল। এই আসুন আমরাও সুইট কাপল হয়ে যাই।”
–” বাজে না বকে কাজকর্ম করুন। কথা নেই বার্তা নেই তার মতো জলহস্তীকে নাকি আমি বিয়ে করব। পাগলা কুত্তা কামড় দিলেও না হুহ।”
মিশু চলে গেলো। অভ্র বুকে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ রুমে বসে থেকে বের হয়ে পড়ল।
গুধূলি আলোয় চারপাশ যখন সোনালী করে তুলেছে তখন নিয়তি শুদ্ধকে দেখা মাত্রই অতিরিক্ত অবাকে হিহাহিত জ্ঞান হারিয়েছে। বাসার লোকজন এখন বউয়ের জ্ঞান ফিরাতে ব্যাস্ত। শুদ্ধ রাগী চোখমুখ করে বসে আছে। এমনিতেই বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল না তার কিন্তু বাবার বাধ্য ছেলে থাকায় বিয়ে করতে এসেছে সে। আর যখনি তাকে পাত্রী দেখার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তখন বেচারি বরকে দেখেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে। শুদ্ধর সাথে এখন ভাবীরা হাসাহাসি করতেছে। তাদের ভাষ্যমতে, শুদ্ধর প্রতি নিয়তি আগে থেকেই ক্রাশড এখন সরাসরি বর সেই খুশিতেই মেয়ে খুশিতে অজ্ঞান।
নিয়তির হুস আসতেই সে তার বাবাকে খুঁজতে লাগলো। সে কিছুতেই এই বিয়ে করবে না। মরে যাবে কিন্তু বিয়ে করবে না। কিন্তু কোথাও বাবার চিহ্ন খুঁজে পেল না সে। অবশেষে পেপারে সই করলো, না চাওয়া সত্বেও রিং পড়তে হলো। শুদ্ধর অর্ধেক বউ এখন সে, ভাবতেই কষ্ট লাগছে তার। শুদ্ধরও রাগ হচ্ছে এই বাঁচাল মেয়ের সাথে তার বিয়ে হয়েছে বলে কিন্তু মুখ ফোটে বলতে পারছে না। হঠাৎ করেই সবকিছু হয়ে গেল।
খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছে শুদ্ধ। হঠাৎ করেই তার জীবনে ঝড় বয়ে গিয়েছে। যাকে এত ভালোবেসেছিল তার ধোঁকার পর পরেই জীবনের সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিতে সে গুরুত্ব দিতে পারেনি। মনের ভিতর তোলপাড় হচ্ছে, মন বারবার বলছে একজন মেয়েকে সে ঠকিয়েছে আবার বলছে মেয়েটা কেন বিয়ে করলো? সে তো আর মেয়ে মানুষের জালে পড়তে চায়নি তাহলে কেন পড়তে হলো। আজকের একাকী চাঁদের সাথে শুদ্ধও একা।
নিয়তি এবং মিশু দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দুজনের চিন্তা ভাবনা একই। কিছুদিন আগেও শুদ্ধ ছিল নিয়তির জীবন মরণের ক্রাশ। দুদিন আগে দেখা হওয়ার পর শত্রু আর এখন কিনা হওয়া না হওয়া অর্ধেক জামাই। ভাবতেই মিশুর হাসি পেলো, লজ্জা লাগছে নিয়তির। জীবনে প্রথম ক্রাশ কিনা এখন তার বর কিন্তু আবার কষ্টেও হচ্ছো বেটার ধমক ,বদমেজাজি,অহংকারী ভাব দেখে।
–” ওই নিয়ু একটা ফোন দে ত দুলাভাইকে।”
–” জীবনেও দিবো না।”
–” ওকে তোর দিতে হবে না আমিই দিচ্ছি।”
নিয়তির হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে ফোন দিল শুদ্ধর নাম্বারে। প্রথমে রিসিভ হলো না দ্বিতীয়তে রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে অভ্র ফোন ধরে বলল,
–” হ্যালো , শুদ্ধ ব…….”
–” কেমন আছেন মিস্টার গুমরা মুখো। বিয়ে করতে তো ঠিকই চলে আসছেন।”
মিশুর কণ্ঠ শোনে অভ্র ফোন ধরে কথা বলতে লাগলো,
–” আমি বিয়ে করতে চলে গেছি তাই না? তাহলে আপনি কি শুধু বসে ছিলেন। রিং পড়তে দেরি হয়ে গিয়েছিল সে কি কান্না। এমনকি বিয়ের খুশিতে আত্মহারা হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। এখন আমায় বলছে বিয়ে পাগলা।”
মিশু রাগান্বিত স্বরে বলল,
–” খবরদার আমার বান্ধুবিকে আরেকবার বাজে বললে ঠোঁট সিলাই করে দিবো।”
–” আপনিও আমার বন্ধুকে বাজে বললে চোখ ঠোঁট সব বিক্রি করে ফেলব। আমি অভ্র।”
মিশু চট করে ফোনটা কেটে পেটে হাত ধরে হাসতে লাগলো। নিয়তি হাসির কারণ বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করতেই মিশু বলল,
–” তোর বাসরের কথা ভেবে হাসছি। দুলাভাই কত রোমান্টিক হাহাহা।”
পরের দিন ভার্সিটি যাবে বলে বের হয়েছে দুই ফ্রেন্ড। ভার্সিটির গেইটের সামনে যেতেই নিয়তির ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো,
–” কালো গাড়িটা দেখতে পাচ্ছেন ওইটা বসে আছি তাড়াতাড়ি আসেন। গাড়ি থেকে নামলেই পাবলিক ভিড় দিবে। শুদ্ধ”
নিয়তি ঘাড় ঘুরিয়ে গাড়ি দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতে নিতেই ঝড়ের বেগে ছুটে আসলো শুদ্ধ। শক্ত হাতে নিয়তির হাত চেপে ধরতেই নিয়তি ব্যাথায় শব্দ করে উঠলো। হাতের মুঠোয় হালকা ছেড়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে রক্তিম চোখে বলল,
–” ঘাড় ত্যাড়ামী করতে ভীষণ ভালো লাগে তাই না। তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠেন। আর মিস মিশু আপনি বরং আজ একাই ক্লাস করুন, কজ আপনার ফ্রেন্ডের সাথে ইম্পর্টেন্ট কথা আছে।”
–” আচ্ছা ভাইয়া।”
মিশু চলে গেলো যাওয়ার আগে দুজনকে চোখ টিপ দিয়ে গেলো। মিশুর চোখ টিপ দেওয়া দেখে শুদ্ধ বোকা সেজে গেল কিন্তু প্রকাশ করলো না।
গাড়িতে দুজন বসে আছে। মৃদু বাতাসে নিয়তির ওড়না গিয়ে পড়ছে শুদ্ধর গায়ে। মিষ্টি সুভাষ ছড়াচ্ছে ওড়না থেকে। শুদ্ধ ফাঁকে ফাঁকে ওড়নার সুভাষ নিচ্ছে আর ভাবছে মিলির কাছ থেকে সে এমন সুঘ্রান পায়নি। তাহলে কি পবিত্র সম্পর্কের কারণে এই সুভাষ। শুদ্ধ কি তাহলে তার সন্ধানের কাউকে পেয়ে গেছে? যার ভালোবাসার সন্ধানে তার জীবনে আসবে প্রেমের বর্ষণ ।
–” কেন এনেছেন?”
–” প্রেম করতে। আমার ভাবী বলেছেন তোমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হতে তাই বের হয়েছি। সামনে পিহুর স্কুল ওকে নিয়ে যাবো । তা-নাহলে আমরা দুজনই বোরিং হবো। বাচ্চা মানুষ থাকলে ভালো হবে। ”
— ” হুম।”
পিহুকে গাড়িতে তুলল। পিহু নিয়তির গলা জড়িয়ে ধরে চকোলেট খাচ্ছে। নিয়তিকে নাকি তার খুব পছন্দ হয়েছে। নতুন মায়ের মত নাকি নিয়তি তাকে বকা দেয় না। পিহুর কথার ঝুড়ি নিয়ে বসেছে হঠাৎ পিহু বলল,
–” দা’ভাই আর বৌমনী। তোমরা দুজন চোখ বন্ধ করে আমার দু’গালে কিস দিবা। কেউ দেখবে না ।”
শুদ্ধ বারণ করলো না। প্রথমে দুজন চুমু দিল পিহুর গালে পরবর্তীতে পিহু আবারো বলল একই কথা। পিহুর গালে এইবার চুমু দিতে গিয়ে সরে পড়লো পিহু। মিলন ঘটলো শুদ্ধ এবং নিয়তির ঠোঁটজোড়া। পিহু হেসে কুটিকুটি , নিয়তি লজ্জায় মুখ বাহির পানে করে রেখেছে। কিন্তু শুদ্ধ সে তো ভাবছে। এই প্রথম কোনো নারীর স্পর্শে শুদ্ধর আলাদা এক অনুভূতি হয়েছে , এই অনুভূতি মিলির ক্ষেত্রে ছিল না। বৈধ সম্পর্কের সবকিছুতেই পবিত্র ভাব আছে সেই কারণে হয়তো।
চলবে,
বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।