#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি?
#পর্বঃ28(সমাপ্ত পর্ব)
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?
‘স্যার,, ও স্যার! এবার তো মাফ করে দিন আর জীবনে ও আপনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলবো না প্রমিস। প্লিজ মাফ করে দিন।আর পারছি না পা ব্যথা করছে তো!’
কান ধরে উঠবস করতে করতে বলল নিশি।নিশির কথা শুনে নিহান বলল __
‘না কোন মাফ নেই পাঁচশ মানে পাঁচশ’
‘ দেখুন আপনি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছেন!আমার মত নিষ্পাপ একটা মেয়েকে দিয়ে পাঁচষ বার কান ধরিয়ে উঠবস করাচ্ছেন এটা কিন্তু ঠিক না।তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে পাঁচশ বার কান ধরে উঠবস করলে আমি কি বাঁচব?’
‘সেটাপ!কি উল্টাপাল্টা কথা বলছো?এতো কথা না বলে চুপচাপ কান ধরে উঠবস করতে থাকো।’
নিহানের কথা শুনে নিশি মনে মনে বলল__
‘ বজ্জাতের হাড্ডি,শ্যাওড়া গাছের পেত্নীর জামাই ও থুরি নিজেই নিজেকে বলছি! পেত্নীর জামাই না তুই নিজেই একটা ভূত,খচ্চর,গুন্ডা আমার মতো একটা নিরীহ মেয়েকে শাস্তি দিচ্ছিস! ইচ্ছা তো করছে তোর মাথাটা ফাটিয়ে দিই।আর সবচেয়ে বড় দোষ তো ওই পিচ্চি মেয়েটার ওই মেয়েকে পেলে যে আমি কি করবো আমি নিজেও জানিনা। শয়তান মাইয়া তোর জন্য আজ আমার এই হাল!’
কিছুক্ষণ আগে,,,,,,,
মেঘলাকে বধু বেশে সাজিয়ে, সাজিয়ে বললে ভুল হবে পার্লারের মেয়েরা সাজিয়েছে নিশি আর ওর কাজিনরা শুধু বসে বসে সাজ দেখছিল। মেঘলার সাজ কমপ্লিট হতেই সবাই রেডি হতে যার যার রুমে চলে যায়। নিশি আর আফরিন যখন রুমে যাচ্ছিল রেডি হতে তখনই ৮ থেকে ৯ বছর হবে এমন বয়সী একটা বাচ্চা মেয়ে এসে বলল __
‘আপু তোমাকে না তোমার আম্মু ওই যে( দক্ষিণ দিকের একটা ঘরকে দেখিয়ে )ওই রুমটাই ডাকছে!’
মেয়েটার কথা শুনে নিশি মেয়েটাকে বলল __
‘আমার আম্মু?’
‘ হ্যাঁ তোমার আম্মুই তো বলল!’
বাচ্চাটার কথা শুনে নিশি মনে মনে বলল __
‘হ্যাঁ তাইতো বাচ্চা মেয়েটা কেন শুধু শুধু আমাকে মিথ্যে বলতে যাবে?আম্মুর হয়তো কোন জরুরী কথা বলার আছে তাই আমাকে আলাদা করে ডাকছে।’
এইভাবে নিশি মেয়েটাকে বলল__
‘ আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাচ্ছি আমার আম্মুর সাথে দেখা করতে। আর তোমাকে ধন্যবাদ আমাকে এসে বলার জন্য।’
‘আচ্ছা আপু তাহলে আমি নিচে যাই?’
‘ হ্যাঁ অবশ্যই!’
নিশির কথা শুনেই বাচ্চা মেয়েটা ওখান থেকে চলে যায়।মেয়েটি যেতেই নিশি আফরিনকে উদ্দেশ্য করে বলল ___
‘তাহলে আফরিন তুমি একটা কাজ কর তুমি রুমে গিয়ে রেডি হও আমি আম্মু কি বলে তা শুনে এক্ষুনি আসছি।’
এই বলে নিশি চলে গেল মেয়েটির বলা ঘরটির দিকে। ঘটার সামনে এসে যেই নিশি ঘরের ভেতর প্রবেশ করল তখনই হঠাৎ কেউ ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিল। হঠাৎ দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ পেয়ে নিশি পেছন ফিরে দেখল নিহান বুকে দুই হাত গুজে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিহান কে দেখে নিশি শুকনো দুটো ঢোক দিলে মনে মনে বলল__
‘ হায় আল্লাহ! এই রাক্ষসটা এখানে কিভাবে এলো? এখন তো কাল রাতের জন্য আমাকে গিলে খাবে! ওই যে কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয় আমার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। কাল রাত থেকে কত কষ্ট করে এ পর্যন্ত পালিয়ে পালিয়ে বেঁচে আছি কিন্তু এখন আমার কি হবে?কিন্তু এই বজ্জাতটা জানলো কিভাবে আমি এখানে!তার মানে ওই মেয়েটা,,,,ও,,,,ওই পুচকি মেয়েটাও আমাকে বোকা বানিয়ে চলে গেল! নিশি তুই এত বোকা!’
‘কি নিশি সোনা,এমন স্ট্যাচু মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? আজকে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে না?আমাকে কষ্ট দিবে না!’
নিহানের কথা শুনে নিশি তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে বলল___
‘ হ্যাঁ! আরে কি বলছেন স্যার আমি কেন আপনাকে ফেলতে যাবো বলেন। যই হোক না কেন আপনি আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র সুইট, কিউট,হাসবেন্ড! আপনাকে কি আমি ফেলতে পারি?কালকে তোর জাস্ট মজা করে ধাক্কা দিয়েছিলাম! এতে এত সিরিয়াস হওয়ার কি আছে?’
এই বলে যেই নিশি ঘর থেকে পালাতে যাবে তখনই নিহান নিশিকে ধরে বলল__
‘ কোথায় যাচ্ছো নিশু পাখি? কাল রাতে তুমি আমাকে যে কষ্ট দিলে, এত সুন্দর ভাবে ফেলে দিয়ে ফ্রিতে কোমর ব্যথা উপহার দিলে এর জন্য রিটার্ন গিফ্ট নিয়ে তারপরে যাও।’
‘আমার কোন গিফ্ট লাগবে না।’
মেকি হাসি দিয়ে বলল নিশি।নিশির কথা শুনে নিহান বলল __
‘তোমার লাগবে না তো কি হয়েছে? আমার তো তোমাকে গিফট দিতে খুব মন চাচ্ছে। আর আমি এক্ষুনি তোমাকে গিফ্ট দেবোই না ও নিশি পাখি পাঁচশ বার কান ধরে উঠবস করা শুরু করে দাও।’
নিহানের কথা শুনে নিশি বলল __
‘দেখুন একটু পরেই বর যাত্রীরা চলে আসবে। আর আমি এখনও রেডি হতে পারিনি,আমাকে রেডিও হতে হবে।আমাকে যেতে দিন!’
‘তা কিভাবে হয় সোনা,তুমি আগে আমার গিফ্ট নেবে মানে পাঁচশ বার কান ধরে উঠবস করবে তারপর তুমি এখান থেকে যেতে পারবে। নাহলে তুমি আজ এখান থেকে যেতে পারবে না তুমি তোমার বোনের বিয়ে দেখার কথা ভুলে যাও।’
নিহানের কথা শুনে নিশি ইনোসেন্ট ফেস করে বলল__
‘ আপনি না আমাকে ভালোবাসেন! আপনি পারবেন আমাকে কষ্ট দিতে?’
‘হ্যাঁ,অবশ্যই পারবো তুমি যদি পারো তাহলে আমিও পারবো।এখন কথা না বলে চুপচাপ উঠবস করতে শুরু করো।না হলে আর বোনের বিয়ে দেখা হবে না নিয়ানের কথা শুনে নিশি মনে মনে বলল ___
‘চল নিশি শুরু হয়ে যা, না হলে আজ আর আপুর বিয়ে দেখতে হবে না।’
এই বলে মনে মনে নিহানকে হাজারো বকাঝকা দিতে দিতে উঠবস করা শুরু করে।
বর্তমানে,,,,,
‘স্যার এবার তো কান ছাড়ি, অনেকবার তো উঠবস করেছি!’
‘ কত হয়েছে?’
‘ ৮৩ বার কান ধরে উঠবস করা হয়েছে, এইবার আমি যাই?’
নিশির কথা শুনে নিহান বলল__
‘ হ্যাঁ ঠিক আছে, কিন্তু নেক্সট টাইম কিন্তু আর মাফ করবো না বলে দিলাম।’
নিহানের কথা শুনে নিশি কান ছেড়ে দৌড়ে গিয়ে নিহানকে জড়িয়ে বলল__
‘ আই লাভ ইউ জামাই! আপনাকে এতগুলা ধন্যবাদ আমাকে এত তাড়াতাড়ি মাফ করার জন্য। আমি আর কখনো আপনাকে কষ্ট দেওয়া তো দূর,কষ্ট পেতেও দেব না।প্রমিস!’
নিশির কথা শুনে নিহান নিশির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল __
‘আই লাভ ইউ টু,আমিও তোমাকে কখনো কোন কষ্ট পেতে দেবো না! আর তোমাকে আমি শাস্তিটা কিন্তু আমাকে ফেলে দেওয়ার জন্য দেইনি, দিয়েছি কাল ঐ ঘটনার পর থেকে আমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকার জন্য।আর যাই করো না কেন কখনো আমার কাছ থেকে ইচ্ছে করে দূরে থেকো না প্লিজ, আমি মেনে নিতে পারব না। যাও এবার গিয়ে তৈরি হয়ে নাও বরযাত্রী একটু পরেই চলে আসবে।’
এই বলে নিহান নিশির কপালে ভালবাসার পরশ একে দিল।বিনিময়ে নিশি মুচকি হেসে রুমে চলে গেল রেডি হতে।
_______________
মেরুন রঙের গর্জিয়াস লেহেঙ্গা আর সব সময়ের মতো হালকা সাজে সেজেছে নিশি।নিশি তৈরি হয়ে আফরিনকে বলল ____
‘আফরিন আমাকে কেমন লাগছে?’
নিশির কথা শুনে আফরিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিহান পেছন থেকে বলে উঠলো___
‘ আমাকে তোমার প্রতি আসক্ত করতে এতোটুকুই যথেষ্ট!’
নিহানের কথা শুনে নিশি ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে চোখ তুলে দেখে নিহান দাঁড়িয়ে আছে। নিশি ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিহানের প্রতিচ্ছবি দেখে আজও নিহান এর দিকে এক ধ্যানে চেয়ে আছে। এ দেখে আফরিন হালকা কেসে বলল___
‘ ভাইয়া আমি কিন্তু এখানো এই খানেই আছি আর ভাবি এখন অন্তত নিচে চলো পরে না হয় মন ভরে দেখে নিও ভাইয়া কে!’
আফরিনের কথায় নিশি নিহান দুজনেই লজ্জা পেয়ে একে অপরের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। আফরিনের কথা শুনে নিহান আফরিনকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিজ থেকে আওয়াজ আসে সবাই চিৎকার করে বলাবলি করছে বর এসেছে, বর এসেছে। সকলের চিৎকার শুনে নিশি আর আফরিন নিচে ছুটে গেল বরযাত্রীর গেইট ধরবে বলে।
_________________
‘ পঞ্চাশ হাজার টাকার এক টাকাও কম হবে না! যদি বিয়ে করতে চান তাহলে এক টাকাও কম হবে না। শুভ ভাইয়া আপনি এখন টাকা দিবেন কিনা তা বলেন!’
বিয়ে বাড়ির গেট আটকে দাঁড়িয়ে আছে নিশি, আফরিন আর নিশির কাজিনরা। তাদের দাবি পঞ্চাশ হাজার টাকা তাদের দিতে হবে।কিন্তু বরপক্ষ এত টাকায় রাজি না তখন এই কথাটা বলল নিশি। নিশির কথা শুনে শুভ বলল __
‘নিশি আমি তো তোমাকে বলেছি আমি টাকা দিব কিন্তু দেখছো তো ওরা মানছে না। টাকা তো সব ওদের কাছে! আরে ওদের কাছে বললেও ভুল হবে টাকা টা আমার ফুফাতো ভাই রবিনের কাছে ও এলেই আমি তোমাকে টাকা দিয়ে দেবো। আসলে ওর একটু কাজ থাকায় ও একটু লেট করে আসবে।’
শুভর কথা শুনে নিশি বলল__
‘বাকির কাজ ফাঁকি,এই নিশি বাকি কোন কাজ করে না। আগে টাকা তারপর আপনারা ভেতরে যেতে পারবেন।আপনি আপনার ভাইকে ফোন করুন কোথায় আছে জিজ্ঞেস করুন।’
নিশির কথা শুনে শুভ ওর অন্যান্য ভাই বন্ধুদের বলল,, রবিনকে ফোন দিতে।শুভর কথা শুনে যেই শুভর এক কাজিন রবিনকে ফোন করতে যাবে তখনই রবিন পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে এগিয়ে এসে বলল__
‘ তার আর কোন প্রয়োজন নেই,আমি এসে গেছি!’
রবিনকে দেখে শুভ বলল ___
‘ওহ,তুই এসেছিস দে এবার টাকা টা দে অনেকক্ষণ যাবৎ দাঁড়িয়ে আছি!’
শুভর কথা শুনে রবিন বলল __
‘আরে দাঁড়া দাঁড়া, এত পাগল হচ্ছিস কেন?তোর কোন শালিকা নাকি পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করেছে আর টাকা ছাড়া নাকি তোদের ভিতরে যেতে দিচ্ছে না কই সে?তার সাথে আমিও একটু দেখা-সাক্ষাৎ করি! আফটার অল আমার বিয়ানসাব বলে কথা!’
রবিনের কথা শুনে নিশি বললো__
‘ কিন্তু আমার তো আপনার সাথে কথা বলার কোন ইন্টারেস্ট নেই! দিন টাকা টা দিন তাহলেই তো আমরা গেট ছেড়ে দিচ্ছি। গেট ছেড়ে দিলেই তো সব প্রবলেম সলভ তাই না?’
নিশির কথা শুনে রবিন নিশির দিকে তাকিয়ে বলল__
‘ ওরে বাস!বিয়াইন দেখি আগুনের ফুলকি!কথার চেয়ে আগুন ঝরে বেশি! যাই হোক বিয়াইন কিন্তু বেশ সুন্দরী!’
রবিনের কথা শুনে নিশি বলল__
‘ হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন আমি আগুনের ফুলকি! চোখ দিতে যাইয়েন না ঝলসে যাবেন!’
নিশির কথা শুনে রবিন বলে__
‘ উফ,,বেয়াইন আপনার কথা শুনে আমি মুগ্ধ আপনাদের দাবি কৃত টাকা নিন!’
এই বলে রবিন নিশির হাতে টাকা দিয়ে দেয়। টাকা পেতেই নিশি আর নিশির বাকি কাজিনরা শুভকে মিষ্টি শরবত খাইয়ে গেট ছেড়ে দেয়।গেট ছাড়তেই বরযাত্রী ভেতরে যেতে শুরু করে।
টাকা আর ফুল মিষ্টির ডালা গুলো রেখে বাগানে প্যান্ডেলের দিকে যাচ্ছিল নিশি।হঠাতই রবিন এসে ওর পথ আটকে বলল__
‘ আরে বিয়াইন কোথায় যাচ্ছেন চলেন কোথাও একটা বসে কথা বলি!’
রবিনের কথা শুনে নিশি বিরক্ত হয়ে বলল__
‘ না আমার এখন কাজ আছে!’
এ বলে যেই নিশি যেতে যাবে তখনই রবিন ওর হাত ধরে বলল __
‘আরে বিয়াইন চলেন না!’
বরযাত্রীর বসা,খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ব্যস্ত ছিল নিহান হঠাৎই তার চোখ পরে বাগানে প্যান্ডেলের বাইরে নিশি আর রবিনের দিকে।কথা বলছিল হঠাৎ রবিন কে নিশির হাত ধরতে দেখে নিহান রাগকে মুষ্টিবদ্ধ করে নিশি আর রবিনের দিকে এগিয়ে গেল। রবিন হঠাৎ করে হাত ধরায় নিশির রেগে যেই কিছু বলতে যাবে তখনই কোথা থেকে যেন নিহান এসে ঝাড়ি মেরে রবিনের হাত থেকে নিশির হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রেগে রবিনকে বলল__
‘ হাউ ডিয়ার ইউ!আপনার এত সাহস হয় কি করে, ওর হাত ধরার?’
নিহানের কথা শুনে রবিন বলল,,
‘ আরে এত রেগে যাচ্ছেন কেন? উনি আমার বিয়াইন হয় তাই আর কি কথা বলছিলাম!’
‘ও(নিশিকে উদ্দেশ্য করে),আপনার বিয়াইন হয়?’
‘হ্যাঁ’
‘ ও,আপনার বিয়াইন হয় এইটা জানেন কিন্তু নিশি যে বিবাহিত এইটা জানেন না? ও আমার স্ত্রী মানে আমার আমানত আর আমার জিনিসে আপনি হাত দেওয়ার সাহস আপনি পেলেন কোথা থেকে?’
নিহানের কথা শুনে রবিন বলল__
‘ কিহ! সত্যি আপনি বিবাহিত(নিশিকে উদ্দেশ্য করে)’
রবিনের কথা শুনে নিশি বলল __
‘হ্যা!’
‘ওহ,তাহলে আই এম সো সরি আসলে সত্যিই আমার উচিত হয়নি ওনার গায়ে হাত দেওয়ার (নিহানকে উদ্দেশ্য করে)’
এই বলে রবিন দ্রুত ওখান থেকে কেটে পড়ে। রবিন ওখান থেকে চলে যেতেই নিশি হেসে বলল__
‘ আহারে বেচারা মনে হয় আমাকে পটাতে এসেছিল! কিন্তু এসে দেখে আমি বিবাহিত!!’
নিশির কথা শুনে নিহান রেগে বলল__
‘ তোমার হাসি পাচ্ছে?আমার তো মন চাচ্ছে এই ছেলেকে গিয়ে ধরে ইচ্ছে মতো পেটাই!ওর সাহস হলে কি করে আমার জিনিসে হাত দেওয়ার!’
নিহানের কথা শুনে নিশি বলল__
‘ধুর ছাড়ুনতো বিয়ে শুরু হয়ে যাবে এক্ষুনি চলুন।’
এই বলে নিশি নিহানকে টেনে স্টেজের সামনে চলে গেল যেখানে কাজী সাহেব মেঘলা আর শুভর বিয়ে পড়াচ্ছেন।যেহেতু গেট আটকে নিশিরা অনেক বড় একটা এমাউন্ডের টাকা নিয়েছে তাই ওরা ঠিক করল বরের জুতো আর লুকাবে না।তাই আর কোন ঝামেলা ছাড়াই মেঘলা আর শুভ বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলো।
বিয়ে পড়ানোর পর সবাই মেতে উঠল নতুন বর আর বউয়ের সাথে।কিন্তু সেই উল্লাস হঠাৎই থমকে গেছে! আনন্দ উৎসব হইচই সব যেন কান্নায় পরিণত হলো মেঘলার বিদায়ের সময়।আনন্দ উৎসবে মেতে থাকা বিয়ে বাড়ি পরনিত হয় থমথমে পরিবেশে।মেঘলা তো সেই কখন থেকেই বাবা-মাকে জড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে। একমাত্র মেয়েকে বিদায় দিতে গিয়ে মিস্টার চৌধুরীর মত শক্ত মানুষের চোখ দিয়ে গড়ে পড়ছে অজস্র জল বিন্দু।
সবার থেকে বিদায় নিয়ে যখন মেঘলা নিশিকে খুঁজছিল তখন সবাই খেয়াল করে বেশ খানিকক্ষণ নিশি এখানে নেই। বরযাত্রী বেরোতে লেট হবে বলে সবার জোরাজুরিতে মেঘলা নিশির সাথে দেখা না করেই শুভর সাথে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে। মেঘলারা বসতেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিল আর গাড়ি চলতে শুরু করল তার আপন গতিতে আর মেঘলা পা দিলেও তার নতুন জীবনে।
_______________
মেঘলার বিদায় হতেই নিহান বেরিয়ে পরে নিশিকে খুঁজতে। বাড়ির বাগান বাড়ির প্রত্যেকটা ঘর খুঁজতে খুঁজতে নিহান ছাদে গিয়ে দেখে নিশি ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। নিশিকে দেখে নিহান ওর পিছনে গিয়ে বলল __
‘কি ব্যাপার!তুমি এখানে একা একা দাঁড়িয়ে আছো কেন?মেঘলার বিদায়ের সময়ও তোমাকে দেখলাম না। জানো তোমাকে দেখতে না পেয়ে কত মন খারাপ করছিল।কত কান্নাকাটি করছিল!’
হঠাৎই নিহানের কথা শুনে নিশি পেছন ফিরে ওর বুকে মুখ গুজে কান্না করতে করতে বলল__
‘জানেন আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে,খুব!আমার না আপুর সাথে কাটানো দিনগুলোর কথা সব মনে পড়ে যাচ্ছে। জানেন এই বাড়িতে আমার সবচেয়ে ক্লোজ হলো আমার আপু।আর আজ সেই আপু আর আমি সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেলাম।’
নিশির কথা শুনে নিহান নিশির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল __
‘দেখো বিয়ের পর মেয়েরা স্বামীর বাড়ি যাবে এটাই তো এতদিন ধরে হয়ে আসছে তাই না। আর এর মাধ্যমেই তো মেয়েরা আরেকটি নতুন জীবনে পা রাখে আর মেঘলা তোমাদের থেকে আলাদা হবে কেন? তুমি কি বিয়ের পর তোমার ফ্যামিলি থেকে আলাদা হতে পেরেছো? আর না তুমি ভবিষ্যতে পারবে তেমনি মেঘলা ও তোমাদের থেকে দূরে থাকতে পারবেনা বরং বিয়ের পর আরেকটি ফ্যামিলি পাবে,ভালোবাসার মানুষ পাবে,একটা সুখী সংসার ও জীবন পাবে তাই মন খারাপ করো না!’
নিহানের কথা শুনে নিশি ওর চোখের পানি মুছে বলল__
‘ হ্যা আপনি ঠিকই বলেছেন বিয়ের পর আমি যেমন আরেকটা ফ্যামিলি পেয়েছি। পেয়েছি আমাকে এত ভালোবাসা দেওয়া আপনার মত একজন মানুষ।আপু ও আমার মত একটা ফ্যামিলি পাবে ভালো বাসার মানুষ পাবে সংসার পাবে তাই না?’
‘ হ্যাঁ এইতো বুঝেছ এবার চোখের পানি মুছ আর নিচে চলো!’
এই বলে নিহান নিশির চোখের পানিগুলো মুছে যেই নিচে যেতে নেবে তখনি নিশি পেছন থেকে নিহানের হাত ধরে বলল__
‘ শুনুন’
‘ হ্যাঁ বল!’
‘ আপনি আমাকে সারা জীবন এভাবেই ভালোবেসে যাবেন তো? এভাবেই আগলে রাখবেন তো?’
নিশির কথা শুনে নিহান নিশির দিকে ফিরে মুচকি হেসে ওর হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল__
‘ ভালোবাসা কি বলতো?কারো প্রতি খানিকের মোহ হলেও ওটাকে মানুষ ভালোবাসা বলে দাবি করতে পারে। আবার তাকে ভুলে ও থাকতে পারে তার থেকে দূরেও থাকতে পারে।কিন্তু কারো প্রতি মায়া পড়ে গেলে না তার থেকে দূরে থাকা যায়,আর না তাকে ভুলে থাকা যায়।মায়া থেকেই তো ভালোবাসার সৃষ্টি হয় তাই না? আর #তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি তো সেই কবেই হয়েছি।আর সে মায়ায় আবদ্ধ আমি আগেও ছিলাম, এখন আছি,আর ভবিষ্যতেও থাকবো,কথা দিলাম।’
নিহানের কথা শুনে নিশি নিহানের বুকে মাথা রেখে বলল __
‘আমিও যে কবে কিভাবে আপনাকে এত ভালবেসে ফেলেছি তা নিজেও জানিনা। শুধু জানি আপনি এভাবে সারা জীবন আমাকে এভাবে আপনার বুকের মাঝে আগলে রাখবেন।’
নিশির কথা শুনে নিহান মুচকি হেসে বলল__
‘ হ্যাঁ আমিও চাই তুমি এভাবেই আমার কাছে সারা জীবন থাকো আর আমিও তোমাকে এভাবেই সারা জীবন আগলে রাখি।’
এই কথা বলে নিহান নিশির কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিল।
সমাপ্ত,,,
(আসসামু আলাইকুম,কেমন আছেন সবাই লাস্ট পর্ব তাই সাজাতে একটু টাইম লেগেছে।তার জন্য সরি।তো কেমন ছিল গল্পটা আজকে অন্তত সবাই বলবেন।রিচেক করা হয়নি তাই ভুলত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টি তে দেখবেন।ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল ভালোবাসা।এভাবেই অটুট থাকুক পৃথিবীর সকল মায়ার বাধন। আবারও দেখা হবে নতুন গল্পে ততদিন সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।ধন্যবাদ?)