#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ5
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?
‘হোয়াট!ময়মনসিংহ! নো ওয়ে নিলয়,আমি এসব গ্রামে যেতে পারবো না, তুই একাই যা।’
‘এমন করছিস কেন নেহান?অনেক মজা হবে দেখিস।আর দেখ ইউকে থেকে আসার পর আমার আগের ফ্রেন্ডগুলোকে খুঁজেই পাচ্ছিনা কে কোথায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কে জানে? শুধু আছে আশিক আর মেহেদী এতদিন যোগাযোগ না থাকায় ওরাও কেমন একটা হয়ে গেছে!এখন রইলি শুধু তুই।তুইও যদি এমন করিস তাহলে কিভাবে হবে বল!’
‘ আরে তুই কেন বুঝতে পারছিস না? আমি মাত্র একদিন হলো কলেজে জয়েন করেছি,আমি কি এখন ছুটি পাব?’
‘ওহ! হ্যাঁ,তোকে তো আমার এই কথাটা জিজ্ঞেস করাই হয়নি।’
‘ কি’
নিলয় ভ্রু কুচকে চেয়ে বলল__
‘ তুই ব্যবসা ছেড়ে কলেজ কেন জয়েন করলি?আর করলি তো করলি নিশির কলেজেই কেন জয়েন করলি?’
‘ তুই ভুলে যাস না নিলয় ওই কলেজ আমরাও পড়েছি তাই আমি ওই কলেজে জয়েন করেছি।’
‘আচ্ছা! তা না হয় মানলাম কিন্তু তুই আঙ্কেলের এত বড় বিসনেস রেখে কেন কলেজ জয়েন করলি?’
‘ তোর ওই পাজি বোনকে শায়েস্তা করার জন্য! এই নিহানকে অপমান করে কেউ কোনদিন পার পায়নি আর সেখানে তোর বোন আমাকে দেখলেই কথা শুনায়। তাই ও তো আরো আগে আমার হাত থেকে রেহাই পাবে না।’
মনে মনে এসব ভেবে নিহান মুচকি হেসে বলল__
‘ আরে! এমনি করেছি,ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল একজন টিচার হওয়ার। বাবার থেকে কয়েক মাসের সময় নিয়েছি যে কয়েক মাস পর অফিস জয়েন করব।বাবাও রাজি হল তাই আমিও নিজের ইচ্ছা পূরণ করে নিলাম, সিম্পল!’
নিলয় ভ্রু নাচিয়ে বলল__
‘ সত্যি বলছিস তো’
‘ হ্যাঁ,নয়তো কি!’
‘আচ্ছা ঠিক আছে,এসব কথা বাদ।এখন তুই যাচ্ছিস মানে যাচ্ছিস এটাই ফাইনাল।’
‘দেখ আমি সবে একদিন হলে জয়েন করেছি।’
‘আরে!চাপ নিস না প্রয়োজনে আমি গিয়ে প্রিন্সিপাল স্যার থেকে ছুটি নিয়ে আসব।’
হাতেগোনা এই কয়েকজন মানুষ আছে যাদের কথা নিহান একেবারেই ফেলতে পারে না। বাবা-মা, ছোট্ট মিষ্টি বোন আফরিন আর প্রাণপ্রিয় বন্ধু নিলয় এদের কারো কথাই নিহান কখনোই ফেলতে পারে না।তাই আর কি করার এইবারও নিহান নিলয়ের কথা মত রাজি হয়ে যায়।
‘ আচ্ছা, ঠিক আছে আমি যাব।আর শুন ছুটি আনতে তোর যাওয়া লাগবে না,আমি বললেই হবে।’
‘ আচ্ছা,তাহলে রেডি থাকিস কাল বিকেল পাঁচটার দিকে রওনা দিব আমরা।তাহলে রাত দশটার মধ্যে পৌঁছে যাব।ঠিক আছে?’
‘ আচ্ছা,ঠিক আছে।’
___________
‘কিহ! দাদুর বাসায় যাব আমরা সবাই মিলে? সত্যি বলছো মেঘলা আপু?(আমার চাচাতো বোন আর ওরই সেদিন এনগেজমেন্ট ছিল )’
‘তুই তো জানিসই দাদু কতটা অসুস্থ তাই দাদিও আসবে না বিয়েতে বলে দিয়েছে। দেখলি না এইজন্য সেদিন এঙ্গেজমেন্টেও এলো না। আমার কিন্তু অনেক খারাপ লেগেছে দাদুরা না আসায়। দাদুরা আসতে পারবে না বলে দাদু বলেছেন আমরা সব ভাই-বোনরা যেন গ্রাম থেকে ঘুরে আসি। বাবা, চাচ্চু মা আর ছোট মা (আমি যেমন জেঠিকে বড়মা বলে ডাকি তেমনি আপুরাও আমার মাকে ছোট মা বলে ডাকে) ওনারা বাসায় থাকবে বিয়ের আয়োজন এর জন্য। শুধু আমরা সব ভাই বোনেরা আর শুভ (আপুর হবু হাসবেন্ড) যাবো গ্রামে।’
‘ ইয়াহু!আপু আমার তো অনেক মজা লাগছে। গ্রামে গেলেই আমার মন ভাল হয় হয়ে যায়। মনে হয় যেন প্রকৃতির মাঝে মিশে যাই। কিন্তু দাদু আর দাদির উপর আমার মাঝে মাঝে অনেক রাগ হয়। এখনো কেন এই অসুস্থ শরীর নিয়ে ওখানে পড়ে আছে? সারভেন্টরা কি সবসময় দেখাশোনা করতে পারে?তারপর গ্রাম বলে কথা ঠিকঠাক চিকিৎসাও তো পায় না!’
‘তুই তো জানিসই দাদুরা এখানে আসতে চায় না ওনারি ওখানেই থাকতে চায়।কিন্তু চিকিৎসা নিয়ে আমাদের কোন চিন্তা নেই কারণ বাবা ওনাদের জন্য ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করে রেখেছে।’
আমাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নেত্রকোনা শহরের একটু শেষের দিকে আমার দাদু আর দাদি দুজন গ্রামের বাড়িতেই থাকে আর আমরা সবাই ঢাকাতেই থাকি। দাদু আর দাদিকে অনেক বলেছি আমরা সবাই এখানে আসতে কিন্তু দাদুরা এখানে আসে না।দাদুর এক কথা আমি আমার বাবার বাড়ি ছেড়ে কোথায়ও যাবো না তাই দাদিও এখানে আসে না। তাই আমরাই বছরের দুইবার গ্রামে যাই আর মাঝে মাঝে দাদু আর দাদি ও এখানে আসে।
‘ হুম!জানি তো, দাদু আর দাদীর এখানে আসতে চায় না।আমারও তো গ্রামে গেলে মনে চায় না আমি বাড়ি আসি ওই বাড়ির ছাদ থেকেই কি সুন্দর চিনামাটির পাহাড় গুলো দেখা যায়।উফ! আমার তো আর সইছে না,কখন বের হব আমরা?’
‘কাল বিকেলে’
‘ ওওও আল্লাহ!তাহলে তো আর বেশি সময় নেই! আমাকে তো আমার সব কিছু প্যাকিং করতে হবে। সর সর পরে কথা হবে।’
‘ এই! তোর নাকি মন খারাপ ছিল?এখন আবার নাচানাচি শুরু করে দিয়েছিস?’
অপুর কথায় আমার সকালের কথা মনে পড়ে গেল।
‘ মন খারাপ না,ওইটাকে রাগ বলে আপু। আমি একজনের উপর খুবই রেগে ছিলাম!কিন্তু এখন তোমার কথায় আমার মন ভালো হয়ে গেছে!এখন দেখি সর রাত দশটা অলরেডি বেজে গেছে আমার এখনো গোছগাছ বাকি আছে। আবার কাল কলেজ থেকেও ছুটি আনতে হবে! আপু তুমি যাবে আমার সাথে? তোমাকে দেখলে স্যার আর না করতে পারবে না’
একদমেই কথাগুলো বললাম আমি। আপু মুচকি হেসে বলল __
‘পাগলী!আস্তে আস্তে বল আর ঠিক আছে আমি কাল তোর সাথে গিয়ে ছুটি নিয়ে আসব কেমন।’
এই বলে আপু যেই চলে যেতে যাবে তখনি আমি পিছন থেকে ডেকে বললাম__
‘আপু শুনো!’
আপু পেছন ফিরে বলল__
‘কি’
‘আপু আমি কি রহি,নদী আর মিতুকে আমাদের সাথে যেতে বলতে পারি?’
‘হ্যা,অবশ্যই ওরা যদি যেতে চায় তাহলে ওদের বলিস কাল বিকেল পাঁচটায় এই বাড়িতে চলে আসতে।’
আমি দৌড়ে গিয়ে আপুকে জড়িয়ে ধরে বললাম__
‘থ্যাংক ইউ আপু।’
আপু আমার গালে হাত রেখে বলল __
‘পাগলি একটা!যা তোর না অনেক কাজ আছে।এই কথা শুনে আমি আপুকে ছেড়ে তারা দিয়ে বললাম__
‘ ওহ! হ্যাঁ,আমার তো এখন অনেক কাজ মিতুদের গ্রামে যাওয়ার কথা বলতে হবে, কলেজে ছুটির জন্য এপ্লিকেশন লিখতে হবে আবার আমার সবকিছু প্যাকিংও করতে হবে!’
‘হ্যাঁ তোর তো আবার প্যাকিং করতেই রাত পার হয়ে যাবে’
‘ ধুর আপু কি যে বলো না?যাও তোমার ওতো প্যাকিং বাকি আছে।’
‘হ্যা!যাচ্ছি আর ওদের মনে করে বলে দিস’
এই বলে আপু চলে যায় তার রুমে। আর আমি আমার রুমের বেডসাইট টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে নদীর, রূহি আর মিতুকে গ্রুপ কল করলাম ওদের গ্রামের যাওয়ার কথা বলার জন্য।
দুই বার রিং হতেই আগে নদী কল রিসিভ করল তারপর রুহি আর মিতুও কল রিসিভ করল। ওরা কল রিসিভ করতেই আমি বললাম __
‘এমনিতে তো আমি রুহি বাদে তোদের দুজনের উপরই রেগে আছি।কিন্তু আজ আমার মন ভালো হওয়ায় আমি তোদের মাফ করে দিলাম।’
আমার কথা শুনে নদী বলল__
‘ সত্যি!দোস্ত থ্যাংকু আর সকালে আমার জন্য বকা খেয়েছিস তার জন্য সরি রে।’
মিতু কিছুটা অপরাধী সুরে বলল__
‘আমিও সরি রে,আমার জন্য নাকি তুই আজ সারা ক্লাস কান ধরেছে দাঁড়িয়ে ছিলি। আমি নদী থেকে শুনেছি।’
আমি বললাম__
‘ ওসব এখন রাখ এখন ব্রেকিং নিউজ শুন!’
আমার কথা শুনে তিনজনে একসাথে বলল__
‘ কি’
‘ আমরা কাল দাদুর বাসায় যাচ্ছি আপুর বিয়ে উপলক্ষে দাদুরা এখানে আসতে পারবে না তাই আমরা সবাই যাচ্ছি।গ্রামে বেড়াতে, তোরা কি যাবি আমাদের সাথে।’
মিতু কিছুটা মন খারাপ করে বলল___
‘ না রে আমার তো যাওয়া হবে না আম্মুর শরীরটা তেমন ভালো না, তাই তো আজ কলেজে আসতে পারিনি তাই আমার যাওয়া হবে না।’
নদী উৎসাহ নিয়ে বলল__
‘তোদের গ্রাম! তার মানে তো ওখানে গিয়ে আমরা পাহাড় ও ঘুরতে পারবো তাইনা? আচ্ছা আমি আম্মুকে বলে দেখছি যদি যেতে দেয় তাহলে আমি যাব।’
রুহি ও সেম কথা বলল।
‘আচ্ছা তাহলে কাল সকালে সবার সাথে কলেজে দেখা হবে।যদি তোরা যাস তাহলে একেবারে ছুটির জন্য এপ্লিকেশন নিয়ে যাস ঠিক আছে। ‘
এই বলেই আমি ফোন কেটে আমার প্যাকিং শুরু করলাম।
#চলবে,
(আসসালামু আলাইকুম,কেমন আছেন সবাই? নানুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছি, সকল ভাই বোনের মাঝে আছি তাই কেমন লিখেছি নিজেও জানিনা।রিচেক দেওয়া হয়নি তাই কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ?)