#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি?
#পর্বঃ3
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা?
আমি নদীকে কিছু বলতে যাব তার আগেই আমাদের সামনে এসে উপস্থিত হয় মিলি। ওকে দেখেই আমার রাগ আগুনে ঘি ঢালার মত অবস্থা!এমনিতেই ওই নিহান চৌধুরীর উপর রেগে আছি তার ওপর আবার এ এসে জুটলো।এখন নিশ্চয়ই আমাকে পিন্চ মেরে কথা শুনাবে,কিন্তু আমিও মনে মনে প্রস্তুত এই পাজি মেয়েকে শিক্ষা দিতে।
আমার ভাবনার মাঝে মিলি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল__
‘ কিরে! এই বয়সেই প্রেম! প্রেম করছিস ভালো কথা এত প্রেমপত্র আদান-প্রদানের কি আছে?এখন বোঝ মজা সারা ক্লাস কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে কেমন লেগেছে?’
বলেই মিলি হাসা শুরু করে দিল ওর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওর সাঙ্গ পাঙ্গরাও হাসাহাসি শুরু করে দিল।সাথে ক্লাসের অনেকেও মজা নিচ্ছে আবার কেউ বিরক্ত হচ্ছে ওদের প্রতি।এতে আমার আরও মাথা গরম হয়ে যায় তাই আমিও ওর কথার উত্তরে বললাম___
‘ প্রথমত ওই চিঠিটা আমার না মিতুর,আর এই বয়সে প্রেম মানে কি? আর দুই মাস পর আমার আঠারো বছর হয়ে যাবে আমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে।আর তাছাড়া তোর আর আমার বয়স তো সেমিই তাহলে তুই যদি দিনে দশটা প্রেম করে পনেরো টা ব্রেকআপ করতে পারিস!হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই ন্যাকামি শুরু করতে পারিস,সে যেই হোক স্টুডেন্ট বা টিচার কিছুই না মেনে যদি চান্স নিতে যেতে পারিস! তাহলে আমি যদি ভুলেও একটা প্রেম করি তাহলে আমি কেন পারব না?’
আমার কথা শুনে নদী আর রহিম মুখ টিপে হাসছে।আর মিলির সাঙ্গ পাঙ্গদের মুখ বন্ধ হয়ে গেল আর মিলি অনেকটা রাগ দেখিয়ে বলল __
‘তুই কিন্তু অতিরিক্ত বলে ফেললি! তুই জানিস না আমি কে?আমার বাবা কে?
‘আমি অতিরিক্ত কিছুই বলিনি যা সত্যি তাই বলেছি। আর তুই কে? তোর বাবা কে?আমি জানি,তুই মিলি সরকার আর তোর বাবা পলিটিশিয়ান ইকবাল সরকার। তোর বাবা নেতা বলে তুই কি সারা দেশ কিনে রেখেছিস নাকি?যে শুধু তুই মানুষকে কথা শোনাতে পারবি আমরা তোকে কিছুই বলতে পারব না।আর তাছাড়া তুইও ভুলে যাস না আমি খান বাড়ির মেয়ে তোর বাবার মত কত নেতা আমার বাবা আর বড় বাবার (আমার জেঠু কে আমি বড় বাবা বলে ডাকি) পেছনে ঘুরঘুর করে!তাই অন্তত আমার সামনে পার্ট নিস না।’
‘ তুই অনেক বড় ভুল করে ফেললি নিশি! তুই এবার শুধু আমাকে না আমার বাবাকেও অপমান করলি এর ফল কিন্তু ভালো হবে না।’
‘প্রথমে কি আমি গেছি তোর কাছে?নাকি তুই এসেছিস আমার কাছে আমাকে অপমান করতে! ইট মারবি অথচ পাটকেল খাবি না তা কি করে হয়?আর রইল কথা তোর বাবাকে নিয়ে আমি কোথায় তোর বাবাকে অপমান করলাম?তুই তোর বাবার ক্ষমতার কথা বলেছিস আর আমি বলেছি আমার বাবা আর বড় বাবার ক্ষমতার কথা।এতে অপমানের কি হলো? আজব!’
‘ আজকে তুই যা করলি ঠিক করলি না তোকে আমি পরে দেখে নিব।’
এই বলে মিলি আর ওর সাঙ্গোপাঙ্গোরা চলে যায় আর আমি ওকে পেছন থেকে ডেকে বললাম__
‘ হুম,ভালো করে দেখে নিস এখন তো তোর চোখের ন্যাবা পড়েছে তাই এখন আমাকে তুই চোখে দেখতে পাস নি পড়ে দেখে নিবি।’
বিনিময়ে মিলি পেছন ফিরে চোখ গরম করে চলে যায়। মিলেরা যেতেই আমি নদী আর রুহি একসাথে হো হো করে হেসে দেই।নদী উৎসাহ নিয়ে বলল ___
‘ওরে দোস্ত,আয় তোরে একটা চুম্মা দেই!তোর জন্য আজকে আমার সেই লেভেলের গর্ব হচ্ছে।এক্কেবারে ঠিক আছে! আসছিল না বেশি পার্ট নিতে একেবারে দিয়েছিস মুখে ঝামা ঘষে।’
রুহি বলল __
‘নদী ঠিক বলেছি সব সময় বেশি বেশি না একেবারে ঠিক আছে।’
‘হুহ আসছিল এই নিশি খানের সাথে পাঙ্গা নিতে যেন আমি ওকে ভয় পাই!’
এই বলে আমরা তিনজন আবারো হেসে ফেললাম।
________
আইসিটি বিভাগের নিজের জন্য নির্ধারিত কেবিনে বসে আছেন নিহান আর মুখে তার বিশ্বজয়ের হাসি কারণ সে নিশিকে উচিত শিক্ষা দিতে পেরেছে।যে ভাবেই হোক নিশিকে শাস্তি তো দিতে পেরেছে!!
‘পাজি মেয়ে! আমার সাথে এই নিহান চৌধুরীর সাথে লাগা তাই না!প্রস্তুত থাকো এখন থেকে তোমার প্রত্যেকটা ছোট ছোট ভুলও এই নিহান চৌধুরী চোখের আড়াল হবে না আর তোমাকে এই নিহান চৌধুরী হাত থেকে কেউ বাঁচাতেও পারবেনা।আচ্ছা মেয়েটা তো বারবার বলছিল এই চিঠিটা ওর না।
এই বলে নিহান চিঠিটা খুলে পড়ে দেখে সত্যিই চিঠিটা নিশির না কারণ চিঠির শুরুতেই লিখা ছিল, প্রিয় মিতু যখন নিহান দেখলো সত্যি চিঠিটা নিশির না তখন নিহান বলল__
‘ মেয়েটা তো তাহলে সত্যিই বলেছিল। তবে যা হয়েছে বেশ হয়েছে জীবনে আর এই নিহানের সাথে লাগতে আসবে না।আচ্ছা এই চিঠিটা তো ওই মেয়ের না তাহলে কি আমার উচিত চিঠিটা যার তাকে ফিরিয়ে দেওয়া কিন্তু যার সে তো শুনলাম আজকে আসেনি।যাই চিঠিটা নিশি কে ফিরিয়ে দিয়ে আসি।এই ভাবে কারো জিনিস নেওয়া ঠিক না।’
এই বলে নিহান চিঠিটা যেভাবে ছিল ঠিক তেমনভাবে খামে রেখে চলল নিশিদের ক্লাস রুমের দিকে।যখন চিঠিটা ফেরত দিতে নিশিদের ক্লাসের সামনে আসে তখন নিশি আর মিলির মাঝে হওয়া সব কথাই নিহান ক্লাসের বাহির থেকে শুনে ফেলে।নিশিকে এইভাবে মুখের উপর উত্তর দিতে দেখে নিহান নিজে নিজেই হেসে ফেলে।
‘সত্যিই একটা পাজি মেয়ে!কি কনফিডেন্টলি সবাইকে মুখের উপর কথা শুনিয়ে দেয়।’
পরক্ষণে নিহান নিজেই নিজের কথায় অবাক হয়ে যায়! নিশির কথায় হাসছিল সে!তারপর নিহান কিছুটা গম্ভীর হয়ে ক্লাসে প্রবেশ করে।
‘এই হাসাহাসি বন্ধ করে চল ক্যান্টিন থেকে কিছু খেয়ে আসি। একটু পরে তো আবার ব্রেক টাইম শেষ হয়ে যাবে।আর ব্রেকের পরেই হিসাববিজ্ঞান ক্লাস লেট হলে টাকলা স্যার (ওনার সারা মাথা জুড়ে একটা চুলও নেই তাই সবাই উনাকে টাকলা স্যার বলেই ডাকে )ও পরে দেখবি কথা শোনাচ্ছে লেট করার জন্য।’
‘ হ্যাঁ চল ‘
যেই আমরা ক্যান্টিনের দিকে যেতে যাব ওমনি আমাদের সামনে এসে হাজির হয় নিহান স্যার।
‘এই নাও তোমার চিঠি।তোমার চিঠি রাখার কোন শখ বা ইচ্ছে কোনটাই আমার নেই। আর যাই করো পড়াশোনার জায়গায় এসব আর এনো না।’
এই কথা বলে আমাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আর এক মিনিটও না দাঁড়িয়ে উনি চলে যায়।
‘ দেখলি কি অ্যাটিটিউড! একটা কথা বলার পর্যন্ত সুযোগ দিল না।চিঠিটা তো সেই দিলিই শুধু শুধু আমাকে এতক্ষণ কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলি। বলেছিলাম না বজ্জাতটা আমাকে ওই দিনের সুদ নিয়েছে!দেখলি তো মিল্ল তো আমার কথা?’
আমার কথা শুনে নদী বলল__
‘ এই তুই সেই কখন থেকে স্যারের নামে শুধু বদনাম করেই যাচ্ছিস!এই যে চিঠিটা দিয়ে গেল একটু তো গুণ গান করতেই পারিস।’
‘ এই রুহি,তুই কি যাবি ক্যান্টিনে? আমার অনেক খিদে পেয়েছে ওর এইসব ফালতু কথা শোনার টাইম আমার নেই।’
এ বলে আমি চললাম ক্যান্টিনের দিকে।আর আমার পেছন পেছন নদী আর রুহিও চলল ক্যানটিনের দিকে।
#চলবে,
(আসসালামুআলাইকুম,কেমন আছেন সবাই?ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টি তে দেখবেন।আর সবাই কে ঈদ মোবারক ? সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা?