#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ25
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?
মরিচ বাতির রং বে রঙের আলোতে সেজেছে পুরো খান বাড়ি। বিভিন্ন আর্টিফিশিয়াল ফুলে সাজানো হচ্ছে পুরো বাড়ি। বাড়ির বাগানে সাজানো হচ্ছে মেঘলার বিয়ের গায়ে হলুদের স্টেজ।আর ভেতরে সাজানো হচ্ছে আজকে মেহেন্দী সন্ধ্যার আসর।আর সেসব সাজানো ঠিকঠাক মতো হচ্ছে কিনা তা দেখছে নিলয়।এক কথায় সব মিলিয়ে খান বাড়িতে বিয়ে বাড়ির আমেজ পড়ে গেছে।দূরের আত্মীয়-স্বজন সব এসে গেছে চারপাশে মিউজিক বাজছে ছোট ছোট বাচ্চারা ছোটাছুটি করছে হৈচৈ করছে।খান বাড়ির গিন্নিরা ব্যস্ত মেহেদী বাটতে আর বাড়ির বয়স্ক আত্মীয় রা ধরেছেন বিয়ের গান।
সারা বাড়ি যেখানে বিয়ের আমেজে মেতে উঠেছে সেখানে নিশি একা ঘরে মন খারাপ করে বসে আছে।কারণ প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল একটু পরেই মেহেদির অনুষ্ঠান শুরু হবে মেঘলা আর নিশির সব আত্মীয় বোনেদের সাজ প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু নিশি এখনো রেডি হতে পারছে না কারণ এখনো পর্যন্ত নিহান খান বাড়িতে এসে পৌঁছায়নি। না নিহান এসেছে না নিশির জন্য কোন ড্রেস কারো হাতে পাঠিয়েছে এজন্য নিশির খুব মন খারাপ। মেঘলারা অনেক বলেছে অন্য কোন ড্রেস ট্রাই করতে কিন্তু নিশি বলে দিয়েছে নিহানের আনা ড্রেস ছাড়া অন্য কিছুই সে পড়বে না। অন্য ড্রেস পড়ার জন্য সবাই অনেক জোরাজুরি করছিল বলে নিশি রুমে এসে চুপ বসে আছে। একটু আগেও আফরিন এসে ডেকে গেছে কিন্তু নিশি তো নিশি একবার যখন বলেছেন নিহানের দেওয়া ড্রেস ছাড়া অন্য কোন ড্রেস পড়বে না তখন সে পড়বেই না। অনেক বলেও যখন আফরিন নিশিকে নিয়ে যেতে পারিনি তখন আফরিন ব্যর্থ হয়ে চলে যায়।
জানালার ধারে জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে বাগানের দিকে তাকিয়ে আছে নিশি। হঠাতই রুমের দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজ পেয়ে নিশি পেছন ফিরে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে নিহানের দিকে। সবুজের মধ্যে সোনালী সুতোর হালকা কাজ করা একটা পাঞ্জাবি পড়েছে নিহান চুলগুলো সবসময়ের মত সাজানো, হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ ব্যাস এতেই নিশির ক্রাশ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। নিহানকে এই প্রথম পাঞ্জাবীতে দেখছে নিশি।নিহান কে পাঞ্জাবিতে দেখে নিশি মনে মনে বলল__
‘ সত্যিই ছেলেদের পাঞ্জাবিতেই বেশ মানায়!’
ঘরে এসেছে পর থেকে নিহান দেখছে নিশি ওর দিকে কেমন ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে।নিশিকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে নিহান দুষ্টু হেসে বলল ___
‘কি! এভাবে কি দেখছো?জীবনে কি কোন ছেলে দেখনি!আর তুমি আমাকে এভাবে ড্যাব ড্যাব করে দেখছো কেন? আমাকে এভাবে দেখার একমাত্র অধিকার আমার বউয়েরই আছে!’
নিহানের কথা শুনে নিশি বলল__
‘ হাহ, আপনার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে আমার বয়েই গেছে। আর হ্যাঁ ছেলে দেখেছি কিন্তু নিজের জামাইকে এভাবে পাঞ্জাবিতে কোনদিন দেখিনি তো তাই এভাবে দেখছি।আপনার কোন সমস্যা? আর আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আমিই আপনার বউ আপনাকে দেখার অধিকার শুধু আমারই আছে। যত্তসব ফাউ কথা!’
‘হুম মহারানী,আপনি তো আপনার হাজব্যান্ড কে দেখেছেন এবার আমাকেও আমার বউকে দেখার সুযোগ দিন!’
নিহানের কথা শুনে নিশি ভ্রু কুচকে বলল __
‘কেন আমি কি আপনার চোখ দুটো বন্ধ করে রেখেছি! যে আমাকে দেখতে পারছেন না!’
‘ আরে আমার কথার মানে হলো তুমি এখন তাড়াতাড়ি এই ড্রেসটা পরে রেডি হয়ে নাও।তারপর আমিও তোমাকে দুচোখ ভরে দেখবো!’
‘এত ঢং করতে হবে না,আপনি এত লেট করে কেন এসেছেন?আমি এখন আর রেডি হতে পারবো নাএখন আমার মুড নেই!’
নিশির কথা শুনে নিহান মুচকি হেসে বলল___
‘ তাহলে তুমি কি চাও আমি তোমাকে রেডি করিয়ে দেই!!’
‘ এই একদম ফাও কথা বলবেন না,আমি কেন আপনাকে এসব কথা বলতে যাব? দিন ড্রেসগুলো দিন!’
এই বললে নিশি নিহানের কাছ থেকে শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে নিহানকে বলল__
‘ যান বাহিরে যান আমি রেডি হয়ে আসছি।’
‘কেন??আমি থাকি আমার সাম,,,’
নিশি নিহানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল___
‘ আপনি কিন্তু দিন দিন ভারী অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন! মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছেন!যান বের হন।’
এই বলে নিশি নিহান কে টেনে ঘর থেকে বের করে দিয়ে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। নিশি দরজা বন্ধ করতেই নিহান মুচকি হেসে বলল__
‘ পাগলি একটা, একটু কিছু হলেই রেগে বোম হয়ে যায়।যাই হোক ওকে রাগাতে কিন্তু বেশ মজাই লাগে!’
এই বলে নিহান হাসতে হাসতে নিচে চলে যায়।
____________
দরজা বন্ধ করে নিশি শপিং ব্যাগ থেকে ড্রেসগুলো বের করে দেখে সবুজ রঙের মধ্যে গোল্ডেন কাজ করা মানে নিহানের সাথে ম্যাচিং করার ড্রেস দিয়ে গেছে নিহান। সাথে একজোড়া ভারী ঝুমকা, ফুলের গাজরা আর তার সাথে একটা চিরকুট! সেখানে লেখা ___
‘ জীবনে কখনো মেয়েদের জন্য শপিং করিনি, তাই মেয়েদের ড্রেস আমার ধারণা ও কম।ড্রেসটা পছন্দ না হলেও আমার কথা ভেবে পড়ে নিও প্লিজ। অনেক যত্ন করে তোমার জন্য এনেছি।’
চিরকুটা পড়ে নেই নিশি মুচকি হেসে ড্রেসটা নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে।
ড্রেস চেঞ্জ করে নিশি ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে নিজেকে দেখে বলল__
‘ বাহ ড্রেসটা তো আমাকে ভালোই মানিয়েছে, ওনার পছন্দ আছে বলতে হবে!’
এই বলে নিশি ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে সাজতে শুরু করলো। হালকা মেকআপ,চোখে কাজল আর আই-লাইনার,ঠোঁটে ডার্ক রেড লিপস্টিক, কানে নিহানের দেওয়া ঝুমকো গুলো চুল গুলো বেনী করে মাথায় নিহানের দাও ফুলের গাজরা আর হাতে কিছু ডিজাইনার চুড়ি পড়ে রেডি নিশি।সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে নিশি নিজেকে আয়নায় দেখে বলল__
‘ হায় আমাকে আজ কত সুন্দর লাগছে!! নিহান স্যারের ভাগ্য কত ভালো আমার মত সুন্দরী একটা বউ পেয়েছে!!’
এই কথা বলে নিশি নিজে নিজেই হেসে নিচে চলে যায়। ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে নিলয়ের সাথে কথা বলছিল নিহান কথার মাঝে হঠাৎই নিলয় নিহান কে বলল__
‘ দোস্ত আজকে তো তুই শেষ!’
নিলয়ের কথা শুনে নিহান ভ্রু কুচকে বলল ___
‘কিহ, কি বলছিস তুই এসব আবোল, তাবোল পাগল হয়ে গেছিস নাকি?’
‘আমি পাগল হইনি কিন্তু তুই হবি মনে হচ্ছে!’
‘ এই তোর এই ফালতু কথা বন্ধ করবি? কি হয়েছে বলবি তো কি সব বলে যাচ্ছিস কখন থেকে এসবের মানে কি?’
‘মানে হলো পেছনে ফিরে দেখ আমার বোন আসছে!’
নিলয়ের কথা শুনে নিহান পিছন ফিরতেই দেখে নিশি উপর থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে। নিশিকে দেখে নিহনের চোখ যেন নিশিতেই থমকে গেছে। আশেপাশে কি হচ্ছে তাযেন নিহানের চোখে পড়ছেই না।ও তো এখন তার প্রেয়সি কে দেখতে ব্যস্ত।
সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় নিশির চোখ যায় নিহানের দিকে। নিহানকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিশির মুচকি হেসে নিহানের কাছে এসে বলল___
‘কি ব্যাপার স্যার, এভাবে কি দেখছেন? জীবনে কি কোন মেয়ে দেখেননি? আমাকে এভাবে দেখার অধিকার কিন্তু শুধু আমার হাজবেন্ডই আছে!’
নিশির কথা শুনে নিহান তার ধ্যান থেকে বেরিয়ে মুচকি হেসে বলল ___
‘আমার কথা আমাকেই ফেরত দিচ্ছ!’
‘দিচ্ছি তো,’
‘ কিছুই না চলো আমার সাথে!’
এই বলে নিহার নিশির হাত ধরে টেনে নিরব একটা জায়গায় নিয়ে আসে।এইভাবে সবার মাঝখান থেকে টেনে আনায় নিশি কোমরে দুই হাত দিয়ে নিহানকে উদ্দেশ্য করে বলল__
‘ এইটা কি করলেন আপনি? আমাকে এভাবে সবার সামনে থেকে কেন নিয়ে এলেন সবাই এখন কি ভাববে বলুন তো!’
নিশির কথা শুনে নিহান নিশির দিকে তাকিয়ে বলল __
‘কে কি ভাবলো আই ডোন্ট কেয়ার, ওকে!’
‘হয়েছে এখন,এখানে কেন এনেছেন এটা বলেন!’
নিশির কথা শুনে নিহান বলল__
মনেরই আকাশ জুড়ে
এক ফালি রোদ্দুর তুমি,
সূর্যাস্তের লাল কিরণ
জোছনা রাতের চন্দ্র বিলাসিনী!
তোমার মায়ায় মুগ্ধ আমি
মুগ্ধ চন্দ্র তারা,
ভালবাসি তোমায় আমি
এটাই ছিল বলা।
নিহানের বলা লাইন গুলো শুনে নিশি বলল__
‘বাহ দ্যা গ্রেট নিহান চৌধুরী দেখছি এখন কবিও হয়ে গেছে!’
‘শুধু কবি না তোমার প্রেমে পড়ে আমি দিওয়ানা হয়ে গেছি!’
#চলবে,,,
(আজকে লেট গল্প দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ দোষ কারেন্টের? ভেবেছিলাম আজকে গল্প দিব না কিন্তু পরশুও গল্প দেই নি তাই লেট হলেও আজকে গল্প দিলাম।সরি ফর লেট আর রিচেক দেয়া হয়নি তাই ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ?)